Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ফল রপ্তানিতে করণীয়

মো. মনজুরুল হান্নান
বাংলাদেশ উপ-উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের দেশ। উর্বর জমি ও উপযোগী আবহাওয়া এ দেশে ফল চাষের জন্য উত্তম। কাজেই ফল উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আর্থসামাজিক ও পুষ্টি নিরাপত্তাসহ জীবনযাত্রারমান উন্নয়ন করা সম্ভব। বাংলাদেশে প্রায় ৭০-৮০ রকমের প্রচলিত এবং অপ্রচলিত ফল উৎপাদন হয়ে থাকে। বর্তমানে দেশে ২ লক্ষ ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৪৫.২ লক্ষ মেট্রিক টন ফল উৎপাদন হয়। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, মাথাপিছু দৈনিক ফলের ন্যূনতম চাহিদা ১১৫ গ্রাম কিন্তু বর্তমানে প্রাপ্যতা ৭৮ গ্রাম। আন্তর্জাতিক ফল বাজারে বাংলাদেশের ফল রপ্তানির পরিমাণ তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। তবু প্রতি বছর পৃথিবীর ৪০টি দেশে বাংলাদেশের ফল রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানিকৃত উল্লেখযোগ্য ফলগুলোর মধ্যে কাঁঠাল, আম, আনারস, জারা লেবু, এলাচি লেবু, আমড়া, জলপাই, সাতকরা, তৈকর, কদবেল, আমলকী, তেঁতুল, বেল, কামরাঙ্গা ও চালতা উল্লেখযোগ্য। এ উপমহাদেশের অভিবাসীদের মাঝে বাংলাদেশী ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো থেকে  ফল রপ্তানি করে বছরভিত্তিক বাংলাদেশের আয় নিম্নরূপ-
ফল রপ্তানির ক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যা সমূহ : চাহিদা সৃষ্টির লক্ষ্যে সঠিক পরিকল্পনা না থাকা। আমদানিকারক দেশের আমদানি শর্ত পূরণ করতে না পারা। উত্তম কৃষি পদ্ধতি ও কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে রপ্তানিযোগ্য ফল আবাদ না করা। রপ্তানিযোগ্য ফলের জাতের অভাব। রপ্তানিযোগ্য ফল উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারগণের দক্ষতা ও সমন্বয়ের অভাব। বালাইমুক্ত ও নিরাপদ ফল উৎপাদনকে গুরুত্ব না দেওয়া। ফল সংগ্রহ কৌশল ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার অভাব।
সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনার জন্য হিমাগার, প্যাকিং হাউজ, সঠিক পরিবহন ব্যবস্থার অভাব।
পরিবহনের জন্য অন্য দেশের তুলনায় এ দেশের অধিক বিমান ভাড়া। অ্যাক্রিডেটেড ল্যাবরেটরি, ঞৎধপবধনরষরঃু ব্যবস্থা অনুসরণ এবং উত্তম কৃষি পদ্ধতি সনদ প্রদানে সক্ষমতা না থাকা।
আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান অনুসরণ করে ফল উৎপাদন ও রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনায় রপ্তানিকারকদের মন-মানসিকতা  তৈরি না হওয়া। রপ্তানি কাজে সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ও সক্ষমতার অভাব।
বাংলাদেশের ফলের মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় রপ্তানিযোগ্য ফল হলো আম। আম উৎপাদনে বাংলাদেশ পৃথিবীর শীর্ষ ১০টি আম উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে অষ্টম স্থান অধিকারী দেশ। কিন্তু রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান নেই। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩২৫ মে:টন আম রপ্তানি করা হলেও আম আমদানি করা হয়েছে ৮০৬৫ মে:টন। ২০১৪-১৫ সালে আম মৌসুমে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে রপ্তানিকৃত আমের ১৫টি ঘড়হ ঈড়সঢ়ষরধহপব পাওয়া যায়। ফলের মাছি পোকা এবং মাত্রাতিরিক্ত গজখ-এর উপস্থিতির জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে আম রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। বাংলাদেশের আর একটি অন্যতম ফল হলো কাঁঠাল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ ফলের উৎপাদন হয়েছে ১৬৯৪২০৯ মে:টন (ডিএই এর তথ্য)। তাজা কাঁঠালের চাইতে কাঁঠাল জাত খাদ্য অর্থাৎ প্রক্রিয়াজাত করে যদি কাঁঠাল রপ্তানি করা যায় তাহলে এ ফল থেকে আমরা বিরাট অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারব। কাঁচা কাঁঠাল সবজি হিসেবে প্রক্রিয়াজাত করা যেতে পারে। আমাদের দেশ থেকে খুবই অল্প পরিমাণে প্রক্রিয়াজাতকৃত ফল বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এর মধ্যে ক্যানডপাইন আপেল (আনারস) অন্যতম। তাজা ফল রপ্তানির পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাতকৃত ফল রপ্তানির দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। এখানে উল্লেখ করা যায়, বাংলাদেশ ড্রাইডফুড রপ্তানি করে হাজার কোটি টাকা আয় করছে এবং ড্রাইডফুডের দেশে এবং বিদেশের বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। মূলত ময়দায় তৈরি শুকনো খাবার ক্যাটাগরিতে এমন উচ্চ প্রবৃদ্ধি লক্ষ করা যাচ্ছে। ঠিক একইভাবে ফলের জুস, ক্যানড ফল, ড্রাইড ফল ইত্যাদির রয়েছে বিশ্বজুড়ে বিরাট বাজার। আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, আনারস, কলা, পেঁপে ও তরমুজ এর প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্য দেশে এবং বিদেশে প্রচুর চাহিদা। আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় দশ হাজার মেট্রিক টন টমেটো কেচাপ ব্যবহার হয়। এর সিংহভাগ আসে বিদেশ থেকে। কাজেই বিকশিত করতে হবে ফল প্রক্রিয়াজাত শিল্পকে। এজন্য দরকার উদ্যোক্তা, লাগসই প্রযুক্তি এবং বিনিয়োগ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর তথ্য অনুযায়ী বিগত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে উৎপাদিত প্রধান প্রধান ফলের উৎপাদন ছিল নি¤œরূপÑ
দেশি ফলের পাশাপাশি বিদেশি ফল যেমন ড্রাগন ফ্রুট উৎপাদন ও রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। কৃষি মন্ত্রণালয় নিরাপদ ফল উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে ফল উৎপাদনে ইতিবাচক ধারার সূচনা হয়েছে। তাজা ও প্রক্রিয়াজাতকৃত ফল রপ্তানি তথা নিজ দেশে নিজ দেশের ফল নির্ভর বাজার সৃষ্টি করা এখন খুবই জরুরি। এজন্য নি¤েœর বিষয়গুলোর উপর চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে : মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকনির্দেশনা বাস্তবায়নে জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করে সকল “স্টেক হোল্ডার” সমন্বিত করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা।
উত্তম কৃষি পদ্ধতি (এঅচ) যথার্থভাবে বাস্তবায়ন করা। এজন্য “সার্টিফিকেশনবডি” প্রতিষ্ঠা করা।
অ্যাক্রিডেটেড ল্যাব প্রতিষ্ঠা করাসহ দক্ষ জনবল সৃষ্টি করা।
উৎপাদন অঞ্চল নির্বাচন করে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এর মাধ্যমে রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্য উৎপাদন করা।
উৎপাদন ও সংগ্রহোত্তর পর্যায়ে সকল কার্যক্রম রেকর্ড করা এবং তা সংরক্ষণ করা।
আধুনিক সুযোগ-সুবিধা যেমন ঠধঢ়ড়ৎ ঐবধঃ ঞৎবধঃসবহঃ, ঐড়ঃ ধিঃবৎ ঞৎবধঃসবহঃ, ঈড়ড়ষরহম ঝুংঃবস, ঝড়ৎঃবৎ, এৎধফবৎ সংবলিত আঞ্চলিক প্যাকিং হাউজ প্রতিষ্ঠা করা। উদ্ভিদ সংগনিরোধ কার্যক্রমকে আরও দক্ষ ও স্বচ্ছ করা। হার্ভেস্টিং ইকুইপমেন্ট ব্যবহার বৃদ্ধি করা।
জৈব বালাইনাশক ব্যবহারে ফল উৎপাদনকারীদের উৎসাহিত করা।
উদ্যোক্তা এবং রপ্তানিকারকদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। উৎপাদন ও ফল প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ সহজলভ্য করা। ঐঅঈঈচ নীতিমালা অনুসরণ করা।
নিবিড় তদারকির মাধ্যমে রপ্তানিকারক দেশসমূহের ঈড়সঢ়ষরধহপব নিশ্চিত করা।
বৈদেশিক বাজার অনুসন্ধান কাজে বাংলাদেশ দূতাবাসের সংশ্লিষ্টতা বৃদ্ধি করা।
কৃষি পণ্য রপ্তানি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা। য়