Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বারি পেয়ারা-৪ বীজমুক্ত পেয়ারার উন্নত জাত

পেয়ারা বাংলাদেশের ফল না হলেও এদেশের ফলের বাজারে নিজের ঠাঁই করে নিয়েছে। বহুবিধ গুণাগুণের সমন্বয়ের জন্য পেয়ারাকে নিরক্ষীয় অঞ্চলের আপেল বলা হয়ে থাকে। পেয়ারা এমন একটি ফল যা প্রচুর পুষ্টি সম্ভারে ভরপুর। বাংলাদেশে যত প্রকার ফল আছে তার মধ্যে একমাত্র আমলকী ছাড়া অন্য কোনো ফলে ভিটামিন “সি” এর পরিমাণ পেয়ারার চেয়ে বেশি নেই। ফলটি স্বাদে মধুর, ভিটামিন “সি” ও শর্করা তথা পেকটিনে সমৃদ্ধ। খুব অল্প যতেœ এ গাছটি জন্মাতে পারে এবং তাড়াতাড়ি বেড়ে ফল দিতে পারে। দেশের প্রায় সব গৃহস্থের বাড়িতেই দু-একটি পেয়ারা গাছ রয়েছে। তবে ইতোপূর্বে পেয়ারার বাণিজ্যিক চাষ পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি, চট্টগ্রাম জেলার কাঞ্চন নগর, ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার মুকুন্দপুরসহ প্রভৃতি এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে উন্নত জাত যেমন- কাজী পেয়ারা, বারি পেয়ারা-২, ৩ উদ্ভাবিত হবার পর দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারার চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, রাইখালী একটি চমকপ্রদ পেয়ারার জাত উদ্ভাবন করেছে, যা সম্পূর্ণ বীজমুক্ত, খেতে সুস্বাদু, মিষ্টি (টি.এস.এস. ৮.৫%), কচকচে ও নাবি জাত। বারি পেয়ারা-৪ নামে এই জাতটি ২০১৭ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক নিবন্ধিত হয়েছে। পেয়ারার জগতে এটি একটি আশ্চর্যজনক সংযোজন। এ জাতটি জুন-জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় তিন ধাপে ফল দেয়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের পেয়ারাগুলো আকারে বড় ও খেতে অত্যধিক মিষ্টি হয়।


পেয়ারার উৎপত্তি ও বিস্তার : আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন উষ্ণ অঞ্চল, বিশেষ করে মেক্সিকো হতে পেরুর যে কোনো স্থান পেয়ারার আদি নিবাস। ২০০০ বছরের পূর্বে এটি চাষাবাদের আওতায় আসে এবং পরবর্তীতে স্প্যানিশ ও পর্তুগিজদের মাধ্যমে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ সমূহে ব্যাপক হারে পেয়ারার চাষ হচ্ছে। প্রাকৃতিক তারতম্যের জন্য বিভিন্ন জায়গায় নানান জাতের পেয়ারার চাষ হতে দেখা যায়।
 

বাংলাদেশে পেয়ারা চাষ : বাংলাদেশে পেয়ারা চাষ বর্তমানে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। পেয়ারা চষে ব্যবহৃত জমি ও উৎপাদনের পরিমাণ ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে ছিল যথাক্রমে ৬৪৫০ একর ও ৯১৪৬ মেট্রিক টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৮৭৯৪ একর ও ২,১৪,৩০৮ মেট্রিক টন। পেয়ারা উৎপাদনের দিক দিয়ে ২০১১ সালের তথ্য মতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৮ম। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর পেয়ারার জাতগুলো বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বত্র চাষ হচ্ছে। বীজবিহীন পেয়ারার নতুন জাত “বারি পেয়ারা-৪” সমতল ভূূমি ছাড়াও পাহাড়ের জন্য বিশেষ উপযোগী।


পেয়ারার উদ্ভিদতত্ত্ব : পেয়ারা Myrtiflorae বিভাগের Myrtaceae পরিবারের সদস্য। Myrtiflorae বিভাগে আরও ১২টি পরিবার রয়েছে। এই ১২টি পরিবারের ৭৩টি গণের মধ্যে Psidium (সিজিয়াম) গণে পেয়ারার অবস্থান। Psidium (সিজিয়াম) গণে পেয়ারার প্রায় ১৫০টি প্রজাতি রয়েছে।


পেয়ারার পুষ্টি মূল্য ও ব্যবহার : পেয়ারা ভিটামিন “সি” ও পেকটিনের একটি ভালো উৎস।
প্রতি ১১ গ্রামে ২৬০ মিলিগ্রাম ভিটামিন “সি” রয়েছে।
ফলে ৮২.৫০ ভাগ পানি, ২.৪৫ ভাগ অম্ল, ১১.২ ভাগ শ্বেতসার থাকে। ভক্ষণযোগ্য অংশের প্রতি ১০০ গ্রামে পেকটিন রয়েছে ০.৯৯ ভাগ, খনিজ পদার্থ ০.৬৬ ভাগ, আঁশ ৩.৮ ভাগ, ভিটামিন “এ” ২৫০ আইইউ, থায়ামিন ০.০৫ মিলিগ্রাম, রাইবোফ্লাবিন ০.০৩ মিলিগ্রাম, নায়াসিন ১.১৮ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৭ ভাগ এবং ৫০ কিলোক্যালরি বিদ্যমান।
প্রচুর পরিমাণ পেকটিন থাকার কারণে পেয়ারা জেলি তৈরির জন্য উপযোগী।

 

পরিণত পেয়ারা কাঁচা বা পাকা উভয় অবস্থায় খাওয়া যায়। এছাড়া সালাদ, পুডিং, শরবত, আইসক্রিম প্রভৃতি সুস্বাদু খাবার তৈরি করে খাওয়া যায়।
আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শাস্ত্রে পেয়ারাকে বলকারক, স্নিগ্ধকর, তৃষ্ণা ও দাহনাশকরূপে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পেয়ারা গাছের কচি পাতা ভালোভাবে সিদ্ধ করে তা দিয়ে সপ্তাহ খানেক কুলি করলে পায়োরিয়া ও দাঁতের অন্যান্য রোগের উপশম হয়।


বারি পেয়ারা-৪ এর বৈশিষ্ট্য : এটি উচ্চ ফলনশীল এবং পেয়ারার একটি অমৌসুমি নাবি জাত। গাছ ঝোপালো এবং প্রচুর সবুজ পাতা বিদ্যমান যা অধিক ফলনে সহায়তা করে। ফল সম্পূর্ণ বীজমুক্ত, কচকচে ও মিষ্টি এবং আকৃতি লম্বাটে। ফলের আকার ৭.১৪ থেকে ১০.১৪ সেমি। গড় ওজন ২৫০ গ্রাম, টি.এস.এস. ৯.৫-১০%। ফলের গাত্র অমসৃণ, পাকা অবস্থায় হলুদাভ সবুজ, পেটের দিকে বাঁকানো, শাঁস সাদা এবং খেতে সুস্বাদু। কম বেশি সারা বছর ফল পওয়া যায় তবে সর্বাধিক ফল আহরণ করা হয় সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ্যানথ্রাকনোজ ও ঢোলে পড়া রোগের প্রতি সংবেদনশীল নয়। দেশের সর্বত্র চাষ করা যায়। ফলটি সাধারণ তাপমাত্রায় ৮-১০ দিন সংরক্ষণ করা যায়।
 

মাটি : বারি পেয়ারা-৪ গাছটি বেশ সহনশীল তাই মোটামুটিভাবে সব রকম মাটিতেই চাষ করা যেতে পারে। তবে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো-আঁশ মাটি থেকে ভারী এঁটেল মাটি যেখানে পানি নিষ্কাশনের বিশেষ সুবিধা আছে সেখানে বারি পেয়ারা-৪ ভালো জন্মে। পেয়ারার শিকড় বেশির ভাগ মাটির ০-২০ সেন্টিমিটার গভীরে থাকে তাই মাটির উপরিস্তর উর্বর থাকা বাঞ্ছনীয়। মাটির pH ৪.৫-৮.২ হলে পেয়ারা চাষের জন্য উপযুক্ত। পেয়ারা কিছু মাত্রার (৮-৯ ds.m-2) লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। তুলনামূলক বিচারে সাদা পেয়ারার তুলনায় লাল পেয়ারার লবণাক্ততা সহ্য ক্ষমতা বেশি। তবে লবণাক্ত মাটিতে পেয়ারার আকার, ওজন ও ভিটামিন ‘সি’ কমে যেতে পারে।


জলবায়ু : উষ্ণ ও আর্দ্র  জলবায়ু পেয়ারা চাষের জন্য উপযুক্ত যা আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে খুবই মিলে যায়। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ৫০০০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত পেয়ারার চাষ করা যেতে পারে। পেয়ারা চাষের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা ২৩০-২৮০সেঃ। একটি নির্দিষ্ট  শীতের ঋতু পেয়ারার গুণগতমান উন্নয়ন করে। তবে তুষারপাতে পেয়ারা গাছ ডাইব্যাক রোগে মারা যেতে পারে। গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১০০-২০০ মিলিমিটার আদর্শ।   


ফসল সংগ্রহ : চারা গাছে সাধারণত ৪-৫ বছরের মধ্যেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে বারি পেয়ারা-৪ যেহেতু কলমের গাছ তাই চারা রোপণের পরের বছর থেকেই গাছে ফল ধরবে। তবে গাছের অঙ্গজ বৃদ্ধি সঠিক রাখতে প্রথম বছর ফল না রাখাই ভালো, দ্বিতীয় বছর অল্প সংখ্যক ফল রাখা যেতে পারে। এভাবে পর্যায়ক্রমে গাছের অবস্থা বিবেচনা করে ফল রাখতে হবে। এপ্রিল-মে  এবং জুন-জুলাই মাসে বারি পেয়ারা-৪ এর গাছে ফুল আসে। এছাড়া অক্টোবর-নভেম্বর মাসেও কিছু অমৌসুমি ফুল আসে। ফুল আসার তিন-চার মাসের মধ্যেই ফল সংগ্রহ করা যায়। বারি পেয়ারা-৪ যখন সবুজ থেকে হলদে সবুজ রং ধারণ করে তখন ফল আহরণ করা হয়। পুরোপুরি পাকা ফলের চাইতে পোক্ত বা অর্ধ-পাকা ফল খেতে বেশি সুস্বাদু। পরিপক্ব পেয়ারা বোঁটা বা দু-একটি পাতাসহ কেটে বাজারে আনা হলে বেশি মূল্যে বিক্রি করা যায়। বৃষ্টির সময় পেয়ারা সংগ্রহ করা ঠিক নয় এসময় ফলের মিষ্টতা কিছুটা কমে যায়।


ফলন : তিন বছরের একটি কলমের গাছে ৭০ থেকে ৮০ কেজি ফল পাওয়া যায়। সে হিসেবে হেক্টরপ্রতি ফলন ৪০-৫০ টন। তবে গাছের বৃদ্ধির সাথে সাথে ফলন বাড়তে থাকে।

 

১এসও, মোবাইল : ০১৯১৮৫৪৫৪১৪, ই-মেইল:- mohidul@bari.gov.bd ২এসও, ৩পিএসও, পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, রাইখালী, কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা