Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ইঁদুরের লাজুকতা

(নজরুলের চা স্টলে মালেক মেম্বরের প্রবেশ, ডান হাতে চা বিস্কুট খাচ্ছে, বাম হাতে খবরের কাগজ নিয়ে পড়ছেন)।
মালেক মেম্বর:-কৃষকরা আর কী করবে? বছরের বৈরী জলবায়ু, অসময়ে ঝড়, বৃষ্টি, বন্য, খরা, লেগেই আছে, কিভাবে ফসল ফলাবে? কী খেয়ে বাঁচবে?
হাফিজ (কৃষক ):- (ইঁদুরে কাটা ধান গাছ হাতে নিয়ে) আমার ধান গাছ সব ইঁদুরে কেটে ফেলেছে, এই ধানগুলোই আমার সম্বল, সারা বছরের খাবার জোগায় এই জমি থেকে, এ বছর আমি কি খেয়ে বাঁচবো? বউ বাচ্চারে কি খাওয়াবো? হাই হাই রে আমি এখন কি করবো? ইঁদুরকে আমি কিভাবে মারব? (মাথা থাপড়াতে থাপড়াতে বসবে)।
মালেক মেম্বর:-বসেন ভাই বসেন, চা খান (হাতের ইশারা করবে)।
রাজ্জাক (কৃষক):-(ইঁদুরে খাওয়া নারিকেল নিয়ে) আমার বাগানের সব নারিকেল ইঁদুর খেয়ে ফেলেছে, আমার সংসার চলে নারিকেল বেচে, আমি ছেলের পড়ার খরচ কি করে জোগাবো? শালার বেটা ইঁদুর, ধরতে পারলে তোকে আমি ভত্তা বানাবো ভত্তা (বসবে)।
মালেক মেম্বর:-থামেন চাচা, বসেন। (হাতের ইশারা করবে)
আয়সা (কিষানি):-(লাউয়ের ডগা নিয়ে) আমার স্বাদের লাউ গাছ ইঁদুর কেটে ফেলেছে, মেয়ের বাড়ি থেকে বিচি এনে লাগাইচি, লকলক করে বেড়ে উঠছে, কেবলে ফুল ফুটতে শুরু করেছে,্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্ এখন দেখি লাউ গাছের ডগা মরা, ছোট ছেলে লাউ ভাজি দিয়ে পেট ভরে ভাত খায়, ছেলেকে আমি এখন কি খাওয়াবো, কি খাওয়াবো (বসবে)?
মালেক মেম্বর:- বসেন ভাবি, ব্যবস্থা একটা করতেই হবে। (হাতের ইশারা করবে)
শিখন (ছাত্র):-মেম্বর চাচা, ইঁদুর আমার বই কেটে কুটিকুটি করেছে? আবার কারেন্টের তার কেটেছে, বাল্ব জ্বলছে না। আমি এখন কিভাবে পড়ালেখা করবো? (হাত দিয়ে দেখিয়ে) এইটা আমার নাটকের বই, এইটা আমার গল্পের বই, এইটা কবিতার বই, এইটা ইংরেজি বই, সব কেটে ফেলেছে। ইঁদুর তোকে আমি খুন করবো খুন! (বসবে)।
মালেক মেম্বর:-বস বাবা বস, নজরুল একটা বিস্কুট দে।                                                                            
নাজিবুল (ব্যবসায়ী):- ইঁদুর আমার গুদাম ঘরে ঢুকে বস্তা কেটে গম, ছোলা, বাদাম খেয়েছে, শুধু খেয়েই ক্ষান্ত হয়নি ছিটাইছে, প্রসাব করেছে, পায়খানা করেছে, লোম ঝেড়েছে, সবকিছু নষ্ট করেছে, মেম্বর সাব, ইঁদুর আমাদের শেষ করে ফেলেছে, কিভাবে ইদুর মারবো একটা ব্যবস্থা করেন (বসবে)।
 নজরুল:- (চা বিস্কুট খেতে দিবে) ভাই, গরম গরম চা খান, আর মাথা ঠা-া করেন।
মালেক মেম্বর:- আপনারা থামেন, থামেন, আপনাদের সমস্যা আমি বুঝতে পারছি, তবে শুনুন, একটু পরেই      উপসহকারী কৃষি অফিসার আসবে তাকে বললে ভা..আ..লো...একটা পরামর্শ পাওয়া যাবে।
(হাতে ডাইরি, কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ইমদাদের প্রবেশ)
ইমদাদ (উপসহকারী কৃষি অফিসার):- (আসতে না আসতেই অভিযোগ)
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা:- স্যার, ইঁদুর আমার ধান কেটেছে, আমার নারিকেল খেয়েছে, আমার লাউয়ের ডগা কেটেছে, আমার গুদামের মাল কেটেকুটে নষ্ট করেছে, স্যার, ইঁদুর আমার বই কেটেছে ।
ইমদাদ:- থামুন, থামুন, আপনারা থামুন! আমার কথা মনোযোগ সহকারে শুনুন। ইঁদুর খুব চালাক প্রাণী তাকে দমন করতে হলে সবাই মিলে সমন্বিতভাবে এদের দমন করতে হবে। যেমন- ধরুন (১) লোহার কেঁচিকল কাঠের বাক্স টোপ (খাদ্য) দিয়ে ইঁদুর ধরে মারা যায়। (২) ইঁদুরের গর্তে পানি ঢেলে বা শুকনো মরিচ পুড়িয়ে ধোঁয়া দিয়ে ইঁদুর মারা যায়।(৩) ইঁদুর চলার পথে তালের তাড়ি রাখলে ইঁদুর খেয়ে পাগল হয়ে যায় তখন লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারা যায়। (৪) আবার টিনের ১ বর্গফুট বোর্ডের মাঝ খানে ইঁদুরের পছন্দের খাবার রেখে চারদিকে সুপারগ্লু আঠা লাগিয়ে রেখে ইঁদুর মারা যায়।
রাজ্জাক :- স্যার ইঁদুরের পছন্দের খাবার কি?
ইমদাদ:- এই ধরুন শুঁটকি মাছ, নারিকেল, চিনাবাদাম, ভুট্টা, বিস্কুট, চানাচুর আর ও অনেক কিছু। আরো শুনুন ভাই বাড়ির আশেপাশে ঝোপঝাড় পরিষ্কার রাখতে হবে। বাড়িতে বিড়াল, কুকুর, পেচা এরা বাস করলে ইঁদুর ভয়ে পালায়। শুনুন ভাই আপনার গোড়া থেকে ২ ফুট উপরে ১ ফুট চওড়া টিনের পাত লাগান তাহলে ইঁদুর ওঠতে পারবে না।
হাফিজ :- আর কি পদ্ধতি আছে স্যার?
ইমদাদ :- ভাই শুনুন ইঁদুরের গর্তে গ্যাস বড়ি (ফসটক্সিন ট্যাবলেট) দিয়ে মারা যায়। এছাড়াও  জিংকফসফাইড,  রোমা, ব্রমাপয়েন্ট, ল্যানির‌্যাট, র‌্যাটকিল এসব রাসায়নিক বিষটোপ ব্যবহার করে আমরা সহজেই ইঁদুর দমন করতে পারি। হাফিজ ভাই আরো একটা কথা শুনুন, ফাঁদ দিয়ে তাজা ইঁদুর ধরে তার মলদ্বার সেলাই করে ছেড়ে দিলে বাড়ির সকল ইঁদুরকে কামড়িয়ে ঘরছাড়া করবে। ঘরের মধ্যে গোলমরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে রাখলে ইঁদুর ঘরে থাকে না। এজন্য বর্ষকালে ঘরের ইঁদুর মারা সহজ হয়। আর ১টি পদ্ধতি আছে তাহলো লম্বা টিনের কৌটার মধ্যে ইঁদুরের পছন্দের খাবার রেখে মাটি থেকে হেলানোভাবে কাঠের বাটাম কৌটার মাথায় সংযোগ করে রাখলে ইঁদুর বাটাম বেয়ে উপরে উঠে কৌটার ভেতর লাফ দেবে কিন্তু উঠতে পারবে না। এভাবেও অনেক ইঁদুর দমন করা যায়।
ক্ষতিগ্রস্তরা:-ঠিক আছে স্যার, ধন্যবাদ স্যার, আজকেই ইঁদুর মারা শুরু করবো, চল্ চল্ আমরা বাড়ি যাই।
“দ্বিতীয় দৃশ্য”
হাফিজ :-ইঁদুর চলার পথে বিস্কুট, চানাচুর, বাদাম, নারিকেল, ছোলা, মাছ ভাজা, এগুলো দিয়ে রাখি , দেখি ইঁদুর কেমন করে খায়?
ইঁদুর:- (লান্টু, বন্টু, ফটা, শন্টু, পন্টু, কনা ও চখা ৬-৮ বছরের ছেলে মেয়ে ইঁদুরের চরিত্রে অভিনয়)
লাল্টু:- আমাদের পথে এত সুন্দর সুন্দর খাবার কে রেখেছে রে, ভা..রি মজার খাবার ।
বল্টু:- খাবার দেখে জিবায় পানি আসছে, একটু খাই।
কটা:- আহ্ কি সুন্দর গন্ধ, কত দিন এমন খাবার খাই না।
শন্টু:- এই খাস না, খাস না, পেট ব্যথা হতে পারে।
পল্টু:- নতুন খাবার, বিষ দেওয়া থাকতে পারে।
কণা:- নতুন খাবার দেখলে নতুন বউয়ের মতো খেতে আমার লজ্জা করে।
চখা:- এই শোন শোন, খাবারটা পরীক্ষা করা দরকার। চল্ চল্ আজকে যাই, কালকে ডাক্তার ভাইকে সাথে নিয়ে আসব।
হাফিজ :-(পরের দিন একই ভাবে খাবার দিয়ে রাখবে)। আজকে একইভাবে খাবার দিয়ে রাখলাম, দেখি ইঁদুর বেটা কি  করে ?
ডা: ছক্কা (ইঁদুর) :-কই রে, কোন খাবার,  কোথায় পরীক্ষা করতে হবে?
বল্টু:-আসেন ডা: ভাই, এইযে এইযে, খাবার। পরীক্ষা করে দেখেন  তো বিষ টিষ আছে নাকি?
ডা: ছক্কা:-(কাঁচের পাত্রে খাবার নিয়ে পানি ঢালবে, কাঠি দিয়ে নাড়বে) খাবারে বিষ টিষ তো দেখছি না নিঃসন্দেহে খাওয়া যাবে, তোরা কই গেলি এই শন্টু এই পল্টু তাড়াতাড়ি খা, পাটি দে, নাচো, গাও, আনন্দ করো।
লাল্টু:- এই কটা, এই চখা বেশি করে খা, ফুরে গেলে পাবি না।
কণা:- তোমরা নাচো গাও, মজা করে খাও। আর ড্যান্স করো (সবাই আনন্দ ফুর্তি করবে)।
“তৃতীয় দৃশ্য”
হাফিজ :-(পূর্বের দুই দিনের মতো তৃতীয় দিনেও একই রকম টাটকা খাবারের সাথে  জিংকফসফাইড ২% মেশানো থাকবে)
আজ খাবারে বিষ মিশিয়ে দিয়েছি, দেখি ইঁদুর মরে কি না? একদিকে ইঁদুরের জ্বালা অন্যদিকে বউয়ের ঘনঘনানি, বলুন তো ভাই সব, আমি এখন কি করি?
শন্টু:- কি মজা! কি মজা! আজ পেট ভরে খাব, ক্ষুধা লাগিচে।
কণা:-আজ লজ্জাও নাই ভয়ও নাই মন ভরে খাব, আহ্ কি সুন্দর গন্ধ!
পল্টু:-এই বল্টু, তাড়াতাড়ি খা, গৃহস্থ চলে আসতে পারে।
বল্টু:-খাচ্ছিই তো, কত খাবো?
চখা:-আহ্ কি স্বাদ, কোন দিন খাইনি।
লাল্টু:-এই কটা, কিছু রাখ, দাদির জন্যে নিয়ে যাবনি।
কটা:-রাখ তোর দাদি, আমার ই হচ্ছে না।
(সকল ইঁদুর কাড়াকাড়ি করে খাবে, নাচবে, গান গাইবে,....খাবার শেষ না হতেই)
বল্টু:-আমার পেট ব্যথা করছে, বমি আসছে, (বমির ভাব করবে)।
পল্টু:-ও বাবা আমার মাথা ঘুরছে, পড়ে গেলাম, পড়ে গেলাম, আমাকে ধরো (পড়ে যাবে)।
কণা:- চোখে দেখতে পাচ্ছি না, ঝাপসা লাগছে, কে কোথায় আছো, বাঁচাও.বাঁচাও.. বাঁচাও.. (অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবে)।
চখা:-আমার বুক জ্বলছে, পানি দাও, পানি.পানি..পানি...(্্্্্উল্টে পড়ে যাবে)।
কটা:-(হাত, পা কাঁপাবে) আমার হাত পা ঝিনঝিন করছে, বল পাচ্ছি না আ.আ..আ...        (মরে যাবে)।
লাল্টু:-ওমা, মাগো, আমার গলা জ্বলছে, বাতাস দাও, বাতাস.বাতাস..(শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবে)।
শন্টু:-আমার মুখ পুড়ে গেল, ডাক্তার সাহেব, আমার চিকিৎসা করেন, আমি মরিতে চাহি না এই সুন্দর ভুবনে, মানবের তরে আমি বাঁচিবারে চাই ..চাই..চা.ই (মরে যাবে)।
(মৃত ইঁদুরের লাশগুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে থাকবে, খাবারগুলো ছড়ানো ছিটানো থাকবে, হাফিজের প্রবেশ)।
 হাফিজ:- কেমন লাগছে ইঁদুর ছা, আমার ধান খাইছিস, পাট কেটেছিস, ফল খাইছিস, খা খা জনমের মতো খা। তোরে চৌদ্দ গোষ্ঠী মেরে শেষ করে ফেলবো (ইমদাদের প্রবেশ)।
 ইমদাদ:- দেখলেন তো হাফিজ ভাই, ইঁদুর মারা কত কষ্ট, ইঁদুর খুব চালাক প্রাণী, তাই এদের দমন করতে বেশি কৌশলী হতে হয়। এখন মাটিতে গর্ত করে মরা ইঁদুর আর উচ্ছিষ্ট খাবার পুঁতে ফেলুন। হাঁস-মুরগি মরবে না, পরিবেশ ও রক্ষা পাবে।  ‘সমাপ্ত’

  মোঃ মাজেদুল ইসলাম (মিন্টু)
উপসহকারী কৃষি অফিসার, উপজেলা কৃষি অফিস, পাবনা সদর, পাবনা, মুঠোফোন:-০১৭১৭৪৬৬৯৯৮, ই-মেইল :
Pubna@ais.gov.bd