Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বাংলাদেশে মাশরুম বিপণন

বাংলাদেশে মাশরুম অমিত সম্ভাবনাময় একটি ফসল। জনসংখ্যার আধিক্যপূর্ণ এদেশের উর্বর জমি ব্যবহার না করে শুধুমাত্র ফেলনা কৃষিজ বা বনজ বর্জ্য যেমন ধানের খড়, কাঠের গুঁড়া, গমের ভুসি ইত্যাদি ব্যবহার করে উৎপাদন করা যায় পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন একটি সবজি, মাশরুম। এ ফসলটি চাষ করার জন্য কোনো  বালাইনাশক, এমনকি কোনো রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না; তাই মাশরুম চাষ একটি পবিবেশবান্ধব কাজ। তাছাড়াও মাশরুম চাষ একটি শ্রমঘন (খধনড়ঁৎ রহঃবহংরাব) কাজ এবং এতে অল্প জায়গায় অধিক সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করা যায় এবং মৌলিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ফেলনা বর্জ্যকে মূল্যবান খাবারে পরিবর্তন করা যায়। এ প্রেক্ষিতেই অল্প সময়ের ব্যবধানে দেশে মাশরুমের চাষ বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বৃদ্ধির হার আরও বেগবান করার জন্য মাশরুমের ব্যবহার আরও বাড়ানো প্রয়োজন। মাশরুম উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন। সাম্প্রতিক দেশে মাশরুম বিপণনের চ্যানেল গড়ে উঠেছে, যা প্রাথমিক পর্যায়ের। বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য সাধারণ উৎপাদক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা যাতে মাশরুম বিপণন করতে পারে সে লক্ষ্যেই এ লেখা।  
যেকোন পণ্য বাজারজাত করতে হলে দেশে তার চাহিদা থাকতে হয়। সাধারণভাবে বলতে গেলে বাংলাদেশে মাশরুমের চাহিদাই নেই। কেননা দেশের কোনো বাজারে এক কেজি মাশরুম পাওয়া না গেলেও রাজধানীসহ কোথাও কোনো মিছিল হবে না। তাহলে কেন আমরা মাশরুম নিয়ে কথা বলব? কেনইবা মাশরুমের চাষ ও বিপণন কাজে নিয়োজিত হতে মানুষদেরকে পরামর্শ দেব? প্রশ্নটির উত্তর হলো মাশরুম যে একটি পুুষ্টিকর, সুস্বাদু ঔষধি গুণসম্পন্ন সবজি তা সাধারণ মানুষ এখনো জানেন না। যদি জানতে পারেন এবং হাতের কাছে পান তাহলে অবশ্যই তারা মাশরুম খাবেন। এদেশে ১৬ কোটি মানুষ প্রতিদিন মাত্র ২৫ গ্রাম করে মাশরুম খেলেও বছরে ১৪৬০০০০ মে. টন মাশরুমের প্রয়োজন হবে। আর ১০% মানুষও যদি মাশরুম খান তাহলে প্রতিদিন ৪০০ মে. টন মাশরুম প্রয়োজন হবে। বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মাশরুম টিউমার নিরাময় করে, উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। শুধুমাত্র এসব রোগীরাই যদি নিয়মিত ৫০ গ্রাম করে মাশরুম খান তাহলেও বিপুল পরিমাণ মাশরুম প্রয়োজন হবে। সেই মাশরুমের জোগান দেয়ার  মতো উৎপাদন আমাদের দেশে নেই। তাহলে দেখা যাচ্ছে মাশরুমের চাহিদা থাকা সত্তে¡ও মাশরুম বিপণন একটি সমস্যা হিসেবেই চাষিদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধানে কতিপয় পরামর্শ এখানে সন্নিবেশিত হলো।
মাশরুম গুণাগুণ প্রচার করা  : যিনিই মাশরুম ব্যবসায়ী হবেন তিনি অবশ্যই মাশরুমের গুণাগুণ প্রচার করবেন। এজন্য অবশ্যই তার মাশরুমের গুণাগুণ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। মাশরুমের গুণাগুণ প্রচারের জন্য ব্যবসায়ীকে গুণাগুণ সংবলিত লিফলেট বা প্রচারপত্র প্রকাশ করতে হবে অথবা সরকারিভাবে প্রকাশিত প্রচারপত্র মানুষের গোচরে আনতে হবে।
মাশরুমের মান ভালো করা : যেকোনো ভালো পণ্য নিজেই নিজের বিজ্ঞাপন। মাশরুমের মান ভালো হলে ভোক্তারা প্রথমত দেখেই আকৃষ্ট হবেন। তারপর খাওয়ার সময় যখন ভালো লাগবে এবং যখন তিনি উপকৃত হবেন তখন তিনি পরবর্তীতে অবশ্যই মাশরুম খোঁজ করবেন ও মাশরুম খাবেন।
মাশরুমের উপস্থিতি নিশ্চিত করা : মাশরুমকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হবে। অনেক মানুষ আছেন যিনি মাশরুম সম্পর্কে জানেন এবং খেতে চান কিন্তু হাতের কাছে না পাওয়ার কারণে কিনতে পারেন না। সেক্ষেত্রে সর্বত্র মাশরুমের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
মাশরুম দিয়ে মুখরোচক খাবার তৈরি করা : শুধুমাত্র মাশরুম উৎপাদন ও বিপণন করলেই হবে না। মাশরুমকে ভ্যালু এডেড প্রডাক্টে রূপান্তর করতে হবে। কারণ মাশরুম একটি দ্রæত    পচনশীল পণ্য। কোনো কারণে যদি তাজা মাশরুম বিক্রি না হয় তবে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আর যদি ভ্যালু এডেড প্রডাক্টে রূপান্তর করা যায় তাহলে মাশরুম একদিকে নষ্টের হাত থেকে রক্ষা পাবে, অন্যদিকে মানুষ বিকল্প খাবার পাবে। মাশরুমের তৈরি জ্যাম, আচার, বিস্কুট, কাটলেট, চপ, ফ্রাই ইত্যাদি খুবই সুস্বাদু খাবার। এগুলো  তৈরি করে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। বিকল্প খাবার পাওয়াতে পণ্যের কাটতিও বেড়ে যাবে।
মানুষের দৃষ্টিগোচরে আনা : মাশরুমের উপস্থিতি জানান দেয়ার জন্য ‘এখানে মাশরুম পাওয়া যায়’ লেখা ছোট  প্ল্যাকার্ড  তৈরি এবং দুটো  প্ল্যাকার্ড একত্র করে লেমিনেটিং করে ঝুলিয়ে দিলে উভয় দিক থেকে দেখা যাবে এবং মানুষ বুঝতে পারবে যে এখানে মাশরুম পাওয়া যাবে। তবে সাবধান, যে দোকান বা স্থানে এ প্ল্যাকার্ড ঝোলানো থাকবে সেখানে অবশ্যই মাশরুমের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। অল্প পরিমাণে হলেও সেখানে প্রতিদিন মাশরুম পৌঁছাতে হবে যাতে কেউ মাশরুম চাইলে মাশরুম পেতে পারেন অন্যথায় পরের দিন মাশরুম  পাওয়ার জন্য অর্ডার দিতে পারেন।
দোকান ভিজিট : সাধারণত দুপুরবেলা দোকানগুলোতে ক্রেতার ভিড় কম থাকে। এ সময়ে দোকানিরা অনেকটা অলস সময় কাটান অথচ দোকান ছেড়ে যেতেও পারেন না। এ সময়ে যদি কোনো মাশরুম ও মাশরুমজাত পণ্য বিক্রেতা দোকান ভিজিট করেন এবং দোকানিদের কাছে মাশরুমের গুণাগুণ সংবলিত কাগজপত্রসহ মাশরুম উপস্থাপন করেন তাহলে ওইসব দোকানি নিজেদের খাবারের জন্য মাশরুম কিনবেন এমনকি তাদের দোকানে বিক্রির জন্যও মাশরুম রাখবেন।
প্রাতঃভ্রমণকারীদের নিকট মাশরুম বিক্রি : স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণ করেন। তাছাড়া দেশের একটি বিরাট সংখ্যক মানুষ ডায়াবেটিস আক্রান্ত; তারাও প্রাতঃভ্রমণ করেন। এ মানুষদের কাছে মাশরুম পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করলে     মাশরুম বিক্রি বেড়ে যাবে।
ফ্রাইশপে মাশরুম বিক্রি :  ফ্রাইশপ বর্তমান সময়ের একটি পরিচিত নাম ও সাধারণ মানুষের হালকা খাবার গ্রহণের একটি উত্তম জায়গা। মাশরুম যে একটি সুস্বাদু সবজি একথা বোঝানোর জন্য ফ্রাইশপের চেয়ে ভালো জায়গা আর নেই। তাই ফ্রাইশপগুলোতে নিয়মিত মাশরুম সরবরাহ করলে এবং এ শপগুলোকে মাশরুমের গুণাগুণ সংবলিত পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সাজিয়ে দিলে মাশরুম বিক্রি বেড়ে যাবে।
ছোট রেস্তোরাঁয় মাশরুম বিক্রি : ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় মাশরুমের গুণাগুণ প্রচারিত হওয়ায় সাধারণ মানুষ মাশরুম খেতে চাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে ছোট রেস্তোরাঁগুলোতে মাশরুমের খাবার তৈরি করলে তা অবশ্যই বিক্রি হবে। তবে এজন্য  রেস্তোরাঁ মালিক এবং বাবুর্চিকে মাশরুম সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা দিতে হবে এবং রেস্তোরাঁটি মাশরুমের গুণাগুণ সংবলিত পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সাজিয়ে দিতে হবে।
প্রতিবেশীর কাছে মাশরুম বিক্রি : মাশরুম একটি অনন্য সবজি-কথাটি প্রতিবেশীর কাছে বলতে হবে। প্রতিবেশীদের মধ্যে কেউ রোগী হলে তার রোগ নিরাময়ে কোন মাশরুম ভ‚মিকা রাখতে পারে তা বিস্তারিত জেনে তাকে সাহায্য করতে হবে। ওই প্রতিবেশী যদি উপকৃত হন তবে তিনি মাশরুম খাবেন এবং অন্যদেরও মাশরুম খেতে পরামর্শ দেবেন। এতে মাশরুমের বাজার বেড়ে যাবে।
বাসস্ট্যান্ড ও গলির মুখে মাশরুম বিক্রি : ঢাকা শহরের একটি বড় সংখ্যক মানুষকে বড় রাস্তার বাস, টেক্সি বা ম্যাক্সি থেকে নেমে হেঁটে নিজ বাসস্থানে পৌঁছাতে হয়। এ মানুষদের অনেকেই বড় যান থেকে নেমে বাসস্ট্যান্ডের বা গলির মুখের দোকান থেকে কেনাকাটা করেন। এসব স্থানের যেসব দোকানে ফ্রিজ আছে তাদেরকে বলে যদি মাশরুম বিক্রি করানো যায় তবে অবশ্যই মাশরুম বিক্রি বৃদ্ধি পাবে। এসব দোকানে ‘এখানে মাশরুম পাওয়া যায়’ প্ল্যাকার্ড  ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
কাঁচাবাজারে মাশরুম বিক্রি : কাঁচাবাজারে শাকসবজির সাথে মাশরুম রাখলে বিক্রি হবে। এসব দোকানে প্রথম দিকে অল্প পরিমাণে মাশরুম সরবরাহ করতে হবে এবং পরবর্তীতে চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে।  


সর্বোপরি কথা, উদ্যোগ নিয়ে মাশরুম চাষ ও বিপণন শুরু করতে হবে। যেহেতু এ সবজিটির কোনো অপকার নেই বরং রয়েছে অনন্য পুষ্টি ঔষধিগুণ। তাই এ সবজির উৎপাদন ও বিপণন অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে এবং মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে ভ‚মিকা রাখবে।

 

ড. নিরদ চন্দ্র সরকার

উপপরিচালক, মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, ডিএই, সাভার, ঢাকা, মোবা: ০১৫৫২৪০৮১৫২, ই-মেইল : nirod_chandra@yahoo.com