Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বাংলাদেশে ডিজিটাল কৃষির প্রবর্তন

বাংলাদেশে ডিজিটাল কৃষির প্রবর্তন কাজটি কয়েক দশক  আগেই শুরু হয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহের আলোকে একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ডিজিটাল কৃষি পদ্ধতি প্রচলনের জন্য যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষার ক্ষেত্রেও আইটি বিষয় প্রবর্তনের জন্য  প্রচন্ড চাপ রয়েছে।  প্রাসংগিক এসব কারণে কৃষিবিদ হিসাবে আমার আগ্রহ সৃষ্টি হলে আমি টিভিসহ স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি কোর্সসমূহের ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য দশকব্যাপী সংগৃহিত ও নিজের তৈরি আইটি সামগ্রী বিশ্লেষণ করার প্রয়াশ নেই। দেশের প্রায় ৮-১০টি টেলিভিশন চ্যানেলের ১৫-২০ মাসের বিভিন্ন প্রোগ্রাম  প্রায় ৭ হাজার গিগাবাইট চিএ ও ভিডিও তথ্য বিশ্লেষণ করে  যে চিত্র পাওয়া গেছে তাতে  বলা যায়   কৃষি অনুষ্ঠান প্রচারে সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রাধান্য রয়েছে। পাশাপাশি পর্যায়ে রয়েছে চ্যানেল আই। কৃষি অনুষ্ঠান স্পন্সরের অভাবে বেসরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচার কম বলে জানা গেছে টেলিভিশনভিত্তিক প্রাপ্ত  বিশ্লেষিত তথ্য (চিএ ১ ও ২) পর্যালোচনাতে। দেশের কৃষির উন্ন্য়নের সম্ভাবনা ও সমস্যা নিয়ে এই নিবন্ধে উল্লেখ করা হলো।


বাংলাদেশের কৃষির প্রধান প্রধান চালিকা প্রতিষ্ঠান হলো কৃষি সম্প্রসারণ, উন্নয়ন ও গবেষণা অধিদপ্তরসমূহ। এর মধ্যে বিগত প্রায় অর্ধদশকে দেশের প্রায় ৮-১০টিভি চ্যানেলে যে সব প্রোগ্রাম করা হয়েছে তার কৃষি বিভাগ-অঞ্চলভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক তথ্য ২টি পাইগ্রাফ চিত্রে উপস্থাপন করা হলো। প্রথম চিত্রে দেখা যাবে যে সবচেয়ে বেশি টেলিভিশন প্রোগ্রাম হয়েছে ঢাকা অঞ্চলে (২৫%), দ্বিতীয় যশোর (১৮%)। এর কারণ বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে তা কিন্তু কৃষির জন্য তেমন আশাপ্রদ নয়।


ঢাকায় টেলিভিশন প্রোগ্রাম বেশি হওয়ার কারণ রাজধানীভিত্তিক সরকারি-বেসরকারী নন-টেকনিক্যাল প্রদর্শনীমূলক প্রোগ্রাম, টেলিভিশন টিম ঢাকার বাইরে যেতে চায় না। তাই যা এদের অধিকংশ প্রোগ্রামই কৃষকের সরাসরি  তেমন কাজে আসে না।


দ্বিতীয়ত: যশোর অঞ্চলে টেলিভিশন প্রোগ্রাম বেশি (১৮%) হওয়ার কারণ এলাকাটি অনেক বড়, ৭টি জেলা। এর মধ্যে ঝিনাইদা ও মেহেরপুর এই ২টি জেলাতেই প্রায়  ১১%, অন্যান্য  ৫ জেলা মিলে মাত্র ৭%। অঞ্চল ভিত্তিতে টেলিভিশন প্রোগ্রাম সবচেয়ে কম  ২% করে সিলেট, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও  রাংগামাটি। বিগত ২-৩ দশকে ডিজিটাল কৃষির জন্য যে পরিমাণ কর্মসূচি-ব্যয় আগ্রহ দেখানো ও প্রচার করা হয়েছে তার বিপরীতে এই  প্রাপ্তি যথেষ্ট নয়। এ জন্য টিভি অনুষ্ঠান বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। প্রতিটি কৃষি অঞ্চলে প্রতিটি বড় চ্যানেলের কৃষি সম্প্রসারণ ইউনিট থাকতে হবে। বিশেষ করে ফসলের রোগ-পোকা দমন বিষয়ে সঠিক টেকনিক্যাল ও কারিগরি দিকসমূহ  বিবেচনায় রেখে অব্যাহত রিপোর্টিং করতে হবে। বর্তমানে অঞ্চলভিত্তিক রিপোর্টিং এ বিশেষ করে পেষ্টিসাইড  প্রেসক্রিপশনে নন-কৃষি গ্রাজুয়েট ব্যাক্তিকেও অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় যা দেশের বর্তমান পেষ্টিসাইড আইনের অনুক‚লে নয়।
উপস্থাপক কৃষিবিদ হলে তিনি প্রকৃত সমস্যা উল্লেখ করে প্রশ-উত্তর ব্যাখ্যা করতে পারেন। দেশের অনেক গ্রামীণ অঞ্চলে বলতে শুনা যায যে ‘ব্যাপক পোকার আক্রমণ, অথচ রোগের ঔষধ ছিটিয়ে কোন কাজ হচ্ছে না বা কৃষি বিভাগ উদ্যোগ নিচ্ছে না। ইত্যাদি গয়রহ ভাষা তো আছেই। এখানে উল্লেখ করা যায় যে এলাকাভেদে যেমন খুলনা অঞ্চলে উপপরিচলকগণ এবং রাংগামাটিতে কৃষি তথ্য সার্ভিসের আঞ্চলিক কৃষিবিদ অফিসারের টেলিভিশন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ বেশ সন্তোষজনক।
এখানে প্রদত্ত দ্বিতীয় পাইগ্রাফটিতে টেলিভিশন প্রোগ্রামের বিষয়ভিত্তিক প্রচারণার ধারা দেখানো হয়েছে। দেশের প্রায় ৮টি চ্যানেলের ২০ মাসের বিভিন্ন প্রোগ্রাম তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অনুষ্ঠান ছাড়াও রয়েছে কৃষি সংবাদ ও টক শো। টেলিভিশন প্রোগ্রামের বিষয়ভিত্তিক প্রচারণার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে সমন্বিত মিশ্র খামার ফসল (২৫%)। সবচেয়ে কম হচ্ছে ধানসহ দানা ফসল (১০%)। দ্বিতীয় বেশি প্রোগ্রাম হচ্ছে উদ্যান ফসল (২২%)। উপকরণের মধ্যে অন্যান্য উপকরণসহ পেষ্টিসাইডের প্রোগ্রাম হচ্ছে প্রায় ১৭%। নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তার জন্য পেষ্টিসাইড অনুষ্ঠান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তেল-ডাল সহ মাঠ ফসলের অনুষ্ঠান কম, প্রায় ১১%। তবে আাগের মতই প্রদর্শণী ও  সভা-সম্মেলনের অনুষ্ঠান বেশি, প্রায় ১৫%।
দেশে কৃষি ফসলের গুরুত্বের নিরিখে টৈলিভিশন অনুষ্ঠানের অনুপাত বেশ বৈষম্যপূর্ণ। যেমন দেশে ধান-দানা ফসল চাষের ব্যাপকতা প্রায় ৮০% অথচ অনুষ্ঠান মাএ ১০%। অপরদিকে সমন্বিত মিশ্র খামার ফসল এলাকা ৫% এর বেশি হবে না অথচ এর অনুষ্ঠান প্রায় ২৫%। দেশের প্রায় সব ফসলের, পরিবেশের ও জনস্বাস্থ্যের  জন্য পেষ্টিসাইড ব্যবহার একটি বড় ইসু। অথচ পেষ্টিসাইড অনুষ্ঠান অন্যান্য প্রধান প্রধান উপকরণ সহ মাত্র ১৭%। অনুষ্ঠানের এ অসম অনুপাতের জন্য একটি অন্যতম কারণ হতে পারে যে মিশ্র খামারজাতীয় ফসলের রিপোর্টিং এর চেয়ে উচ্চ প্রযুক্তির আধুনিক ধান বা পেষ্টিসাইডের অনুষ্ঠান অধিক জ্ঞান ও দক্ষতা সাপেক্ষ। দ্বিতীয় কারণ হিসাবে রয়েছে সরকারি অগ্রাধিকার ও দেশের কৃষি পরিস্থিতি।
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার  উৎপাদন হার বাড়িয়ে ধান চাষ আরও লাভজনক করতে টেলিভিশন অনুষ্ঠানের কোন বিকল্প নাই। পেষ্টিসাইড বিষয়ক অনুষ্ঠানের একটি বড় সমস্যা হলো এর জেনেরিক নাম বলা। জেনেরিক নামে পেষ্টিসাইড সুপারিশ করলে ডিলার কোয়ালিটি ব্যতিরেকে তার সবচেয়ে বেশি লাভালাভের পণ্যগুলো কৃষককে দিয়ে দেয়, অথচ তার কাছে  আরও ভালো পণ্য ছিলো। পেষ্টিসাইড প্রদানে টেলিভিশন অনুষ্ঠানে ট্রেড বা সঠিক পণ্যনামে প্রেসক্রিপশন দিয়ে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। যেমন বিগত কয়েক বছর ধরে ধানের বøাষ্ট রোগ দমনের জন্য টেলিভিশনে বিশেষজ্ঞ কর্তৃক ট্রুপার নামে প্রেসক্রিপশন দিয়ে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক অবদান  রাখতে সক্ষম হয়েছে, জেনেরিক নাম (ট্রাইস্ইাক্লাজোল) বলে তা সম্ভব ছিলো না। কারণ ট্রাইস্ইাক্লাজোলএর আরও কম কার্যকর অথচ কমিশন বেশি এমন পণ্য থাকতে পারে।  একইভাবে পেঁয়াজ ও সরিষার মহামারি রোগ দমনকারী ছত্রাকনাশক জেনেরিক নামের ইপ্রোডিয়ন এর চেয়ে রোভরাল নাম জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তবে জেনেরিক নামের বদলে ট্রেড নামে বিশেষ করে ইলেকট্রোনিক মাস মিডিয়ায় পরামর্শ দিতে বেশ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। এতে অসুবিধা হয়না কারণ একাধিক কোম্পানীর পণ্যে একই ট্রেড নাম থাকার উদাহরণ রয়েছে। যেটা প্রয়োজন সেটা হল যিনি প্রেসক্রিপশন দিবেন তাকে বিভিন্ন পণ্যেও অত্যাবশ্যক গুণাবলী ও পরিস্থিতি ভিত্তিক উপযোগিতা জানতে হবে।
এলাকাভেদে  সকল পর্যায়ে বিশেষ করে  উপজেলা পর্র্যায়ে মহিলা কৃষিবিদ এবং উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণের অংশগ্রহণ ও তথ্যপ্রদান  ও কৃষকসংলাপ বেশ সন্তোষজনক, যদিও ঢাকা রিজিয়ন ভিত্তিক বেশি। এখানে বলা দরকার যে বর্তমান লেখাটি ২০১৫-১৭ বছরের তথ্যভিত্তিতে প্রণীত।  ২০১৭-১৯ বছরের তথ্যভিত্তিক লেখাটি সামনে আসছে যেখানে আরও প্রগ্রেসিভ ফলাফলের আভাস রয়েছে।
ডিজিটাল কৃষির টেলিভিশন অনুষ্ঠান প্রচারের মধ্যে সরকারি মাধ্যমগুলো ব্যাপ্তিতে বেশি হলেও এর একটি বড় সমস্যা হলো এর প্রচার সময় ঠিক থাকে না। সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে বিভিন্ন সময় যা মনে রেখে রেখে অনুষ্ঠান দেখা স¤ভব হয় না। তাই অনুষ্ঠান ঠিকই হয় তবে সে কার্য সুফলতা পায় না। কৃষকের উপযুক্ত বা অবসর সময়টি বিবেচনা করে অনুষ্ঠান সাজাতে হবে। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ও বিশেষজ্ঞের একজন কৃষিবিদ হতে হবে। এভাবে সুপারিশকৃত পদ্ধতিতে টিভি অনুষ্ঠান প্রচার করা হলে কৃষি শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, সম্প্রসারণ, উন্নয়ন ও গবেষণা কাজ অনেক সাবলীলভাবে সহজে ও কম ব্যয়ে কৃষক-কৃষি উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। দেশে কম্পিউটার পদ্ধতির এ্যাপস, কল সেন্টার, প্ল্যন্ট ডক্টর কার্যক্রম, কৃষক মাঠ স্কুল কার্যক্রম সুচারুভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব। প্রতিবেশি দেশসমূহের কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন প্রোগ্রামসমূহ এভাবে এগিয়ে গিয়ে কৃষককে সহায়তা করতে পেরেছে। সুযোগ পেলে আমরাও পারবো, এ আশা রাখি।
দেশের বর্তমান কৃষি উন্নয়ন হার অব্যাহত রাখতে ডিজিটাল পদ্ধতি অবদান রেখে যাচ্ছে। উপরে বর্ণিত সমস্যা সমাধান করে  বিষয়বস্তু, সময়, উপস্থাপক ও বিশেষজ্ঞের (মাঠে কর্মরত) সুসমন্বয় করে আরও অধিক সুফল অর্জন সম্ভব।

প্রফেসর ড. মো. সদরুল আমিন

কৃষি বিশেষজ্ঞ, সাবেক হা মো. দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিনাজপুর, ই-মেইল :sadrulamin47@gmail.com, মোবা : ০১৭১৫০৫৭৫০৬

বাংলাদেশে ডিজিটাল কৃষির প্রবর্তন

বাংলাদেশে ডিজিটাল কৃষির প্রবর্তন কাজটি কয়েক দশক  আগেই শুরু হয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহের আলোকে একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ডিজিটাল কৃষি পদ্ধতি প্রচলনের জন্য যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষার ক্ষেত্রেও আইটি বিষয় প্রবর্তনের জন্য  প্রচন্ড চাপ রয়েছে।  প্রাসংগিক এসব কারণে কৃষিবিদ হিসাবে আমার আগ্রহ সৃষ্টি হলে আমি টিভিসহ স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি কোর্সসমূহের ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য দশকব্যাপী সংগৃহিত ও নিজের তৈরি আইটি সামগ্রী বিশ্লেষণ করার প্রয়াশ নেই। দেশের প্রায় ৮-১০টি টেলিভিশন চ্যানেলের ১৫-২০ মাসের বিভিন্ন প্রোগ্রাম  প্রায় ৭ হাজার গিগাবাইট চিএ ও ভিডিও তথ্য বিশ্লেষণ করে  যে চিত্র পাওয়া গেছে তাতে  বলা যায়   কৃষি অনুষ্ঠান প্রচারে সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রাধান্য রয়েছে। পাশাপাশি পর্যায়ে রয়েছে চ্যানেল আই। কৃষি অনুষ্ঠান স্পন্সরের অভাবে বেসরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচার কম বলে জানা গেছে টেলিভিশনভিত্তিক প্রাপ্ত  বিশ্লেষিত তথ্য (চিএ ১ ও ২) পর্যালোচনাতে। দেশের কৃষির উন্ন্য়নের সম্ভাবনা ও সমস্যা নিয়ে এই নিবন্ধে উল্লেখ করা হলো।


বাংলাদেশের কৃষির প্রধান প্রধান চালিকা প্রতিষ্ঠান হলো কৃষি সম্প্রসারণ, উন্নয়ন ও গবেষণা অধিদপ্তরসমূহ। এর মধ্যে বিগত প্রায় অর্ধদশকে দেশের প্রায় ৮-১০টিভি চ্যানেলে যে সব প্রোগ্রাম করা হয়েছে তার কৃষি বিভাগ-অঞ্চলভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক তথ্য ২টি পাইগ্রাফ চিত্রে উপস্থাপন করা হলো। প্রথম চিত্রে দেখা যাবে যে সবচেয়ে বেশি টেলিভিশন প্রোগ্রাম হয়েছে ঢাকা অঞ্চলে (২৫%), দ্বিতীয় যশোর (১৮%)। এর কারণ বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে তা কিন্তু কৃষির জন্য তেমন আশাপ্রদ নয়।


ঢাকায় টেলিভিশন প্রোগ্রাম বেশি হওয়ার কারণ রাজধানীভিত্তিক সরকারি-বেসরকারী নন-টেকনিক্যাল প্রদর্শনীমূলক প্রোগ্রাম, টেলিভিশন টিম ঢাকার বাইরে যেতে চায় না। তাই যা এদের অধিকংশ প্রোগ্রামই কৃষকের সরাসরি  তেমন কাজে আসে না।


দ্বিতীয়ত: যশোর অঞ্চলে টেলিভিশন প্রোগ্রাম বেশি (১৮%) হওয়ার কারণ এলাকাটি অনেক বড়, ৭টি জেলা। এর মধ্যে ঝিনাইদা ও মেহেরপুর এই ২টি জেলাতেই প্রায়  ১১%, অন্যান্য  ৫ জেলা মিলে মাত্র ৭%। অঞ্চল ভিত্তিতে টেলিভিশন প্রোগ্রাম সবচেয়ে কম  ২% করে সিলেট, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও রাংগামাটি। বিগত ২-৩ দশকে ডিজিটাল কৃষির জন্য যে পরিমাণ কর্মসূচি-ব্যয় আগ্রহ দেখানো ও প্রচার করা হয়েছে তার বিপরীতে এই  প্রাপ্তি যথেষ্ট নয়। এ জন্য টিভি অনুষ্ঠান বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। প্রতিটি কৃষি অঞ্চলে প্রতিটি বড় চ্যানেলের কৃষি সম্প্রসারণ ইউনিট থাকতে হবে। বিশেষ করে ফসলের রোগ-পোকা দমন বিষয়ে সঠিক টেকনিক্যাল ও কারিগরি দিকসমূহ  বিবেচনায় রেখে অব্যাহত রিপোর্টিং করতে হবে। বর্তমানে অঞ্চলভিত্তিক রিপোর্টিং এ বিশেষ করে পেষ্টিসাইড  প্রেসক্রিপশনে নন-কৃষি গ্রাজুয়েট ব্যাক্তিকেও অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় যা দেশের বর্তমান পেষ্টিসাইড আইনের অনুক‚লে নয়।
উপস্থাপক কৃষিবিদ হলে তিনি প্রকৃত সমস্যা উল্লেখ করে প্রশ-উত্তর ব্যাখ্যা করতে পারেন। দেশের অনেক গ্রামীণ অঞ্চলে বলতে শুনা যায যে ‘ব্যাপক পোকার আক্রমণ, অথচ রোগের ঔষধ ছিটিয়ে কোন কাজ হচ্ছে না বা কৃষি বিভাগ উদ্যোগ নিচ্ছে না। ইত্যাদি গয়রহ ভাষা তো আছেই। এখানে উল্লেখ করা যায় যে এলাকাভেদে যেমন খুলনা অঞ্চলে উপপরিচলকগণ এবং রাংগামাটিতে কৃষি তথ্য সার্ভিসের আঞ্চলিক কৃষিবিদ অফিসারের টেলিভিশন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ বেশ সন্তোষজনক।


এখানে প্রদত্ত দ্বিতীয় পাইগ্রাফটিতে টেলিভিশন প্রোগ্রামের বিষয়ভিত্তিক প্রচারণার ধারা দেখানো হয়েছে। দেশের প্রায় ৮টি চ্যানেলের ২০ মাসের বিভিন্ন প্রোগ্রাম তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অনুষ্ঠান ছাড়াও রয়েছে কৃষি সংবাদ ও টক শো। টেলিভিশন প্রোগ্রামের বিষয়ভিত্তিক প্রচারণার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে সমন্বিত মিশ্র খামার ফসল (২৫%)। সবচেয়ে কম হচ্ছে ধানসহ দানা ফসল (১০%)। দ্বিতীয় বেশি প্রোগ্রাম হচ্ছে উদ্যান ফসল (২২%)। উপকরণের মধ্যে অন্যান্য উপকরণসহ পেষ্টিসাইডের প্রোগ্রাম হচ্ছে প্রায় ১৭%। নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তার জন্য পেষ্টিসাইড অনুষ্ঠান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তেল-ডাল সহ মাঠ ফসলের অনুষ্ঠান কম, প্রায় ১১%। তবে আাগের মতই প্রদর্শণী ও  সভা-সম্মেলনের অনুষ্ঠান বেশি, প্রায় ১৫%।


দেশে কৃষি ফসলের গুরুত্বের নিরিখে টৈলিভিশন অনুষ্ঠানের অনুপাত বেশ বৈষম্যপূর্ণ। যেমন দেশে ধান-দানা ফসল চাষের ব্যাপকতা প্রায় ৮০% অথচ অনুষ্ঠান মাএ ১০%। অপরদিকে সমন্বিত মিশ্র খামার ফসল এলাকা ৫% এর বেশি হবে না অথচ এর অনুষ্ঠান প্রায় ২৫%। দেশের প্রায় সব ফসলের, পরিবেশের ও জনস্বাস্থ্যের  জন্য পেষ্টিসাইড ব্যবহার একটি বড় ইসু। অথচ পেষ্টিসাইড অনুষ্ঠান অন্যান্য প্রধান প্রধান উপকরণ সহ মাত্র ১৭%। অনুষ্ঠানের এ অসম অনুপাতের জন্য একটি অন্যতম কারণ হতে পারে যে মিশ্র খামারজাতীয় ফসলের রিপোর্টিং এর চেয়ে উচ্চ প্রযুক্তির আধুনিক ধান বা পেষ্টিসাইডের অনুষ্ঠান অধিক জ্ঞান ও দক্ষতা সাপেক্ষ। দ্বিতীয় কারণ হিসাবে রয়েছে সরকারি অগ্রাধিকার ও দেশের কৃষি পরিস্থিতি।


আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার  উৎপাদন হার বাড়িয়ে ধান চাষ আরও লাভজনক করতে টেলিভিশন অনুষ্ঠানের কোন বিকল্প নাই। পেষ্টিসাইড বিষয়ক অনুষ্ঠানের একটি বড় সমস্যা হলো এর জেনেরিক নাম বলা। জেনেরিক নামে পেষ্টিসাইড সুপারিশ করলে ডিলার কোয়ালিটি ব্যতিরেকে তার সবচেয়ে বেশি লাভালাভের পণ্যগুলো কৃষককে দিয়ে দেয়, অথচ তার কাছে  আরও ভালো পণ্য ছিলো। পেষ্টিসাইড প্রদানে টেলিভিশন অনুষ্ঠানে ট্রেড বা সঠিক পণ্যনামে প্রেসক্রিপশন দিয়ে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। যেমন বিগত কয়েক বছর ধরে ধানের বøাষ্ট রোগ দমনের জন্য টেলিভিশনে বিশেষজ্ঞ কর্তৃক ট্রুপার নামে প্রেসক্রিপশন দিয়ে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক অবদান  রাখতে সক্ষম হয়েছে, জেনেরিক নাম (ট্রাইস্ইাক্লাজোল) বলে তা সম্ভব ছিলো না। কারণ ট্রাইস্ইাক্লাজোলএর আরও কম কার্যকর অথচ কমিশন বেশি এমন পণ্য থাকতে পারে।  একইভাবে পেঁয়াজ ও সরিষার মহামারি রোগ দমনকারী ছত্রাকনাশক জেনেরিক নামের ইপ্রোডিয়ন এর চেয়ে রোভরাল নাম জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তবে জেনেরিক নামের বদলে ট্রেড নামে বিশেষ করে ইলেকট্রোনিক মাস মিডিয়ায় পরামর্শ দিতে বেশ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। এতে অসুবিধা হয়না কারণ একাধিক কোম্পানীর পণ্যে একই ট্রেড নাম থাকার উদাহরণ রয়েছে। যেটা প্রয়োজন সেটা হল যিনি প্রেসক্রিপশন দিবেন তাকে বিভিন্ন পণ্যেও অত্যাবশ্যক গুণাবলী ও পরিস্থিতি ভিত্তিক উপযোগিতা জানতে হবে।


এলাকাভেদে  সকল পর্যায়ে বিশেষ করে  উপজেলা পর্র্যায়ে মহিলা কৃষিবিদ এবং উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণের অংশগ্রহণ ও তথ্যপ্রদান  ও কৃষকসংলাপ বেশ সন্তোষজনক, যদিও ঢাকা রিজিয়ন ভিত্তিক বেশি। এখানে বলা দরকার যে বর্তমান লেখাটি ২০১৫-১৭ বছরের তথ্যভিত্তিতে প্রণীত।  ২০১৭-১৯ বছরের তথ্যভিত্তিক লেখাটি সামনে আসছে যেখানে আরও প্রগ্রেসিভ ফলাফলের আভাস রয়েছে।


ডিজিটাল কৃষির টেলিভিশন অনুষ্ঠান প্রচারের মধ্যে সরকারি মাধ্যমগুলো ব্যাপ্তিতে বেশি হলেও এর একটি বড় সমস্যা হলো এর প্রচার সময় ঠিক থাকে না। সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে বিভিন্ন সময় যা মনে রেখে রেখে অনুষ্ঠান দেখা স¤ভব হয় না। তাই অনুষ্ঠান ঠিকই হয় তবে সে কার্য সুফলতা পায় না। কৃষকের উপযুক্ত বা অবসর সময়টি বিবেচনা করে অনুষ্ঠান সাজাতে হবে। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ও বিশেষজ্ঞের একজন কৃষিবিদ হতে হবে। এভাবে সুপারিশকৃত পদ্ধতিতে টিভি অনুষ্ঠান প্রচার করা হলে কৃষি শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, সম্প্রসারণ, উন্নয়ন ও গবেষণা কাজ অনেক সাবলীলভাবে সহজে ও কম ব্যয়ে কৃষক-কৃষি উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। দেশে কম্পিউটার পদ্ধতির এ্যাপস, কল সেন্টার, প্ল্যন্ট ডক্টর কার্যক্রম, কৃষক মাঠ স্কুল কার্যক্রম সুচারুভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব। প্রতিবেশি দেশসমূহের কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন প্রোগ্রামসমূহ এভাবে এগিয়ে গিয়ে কৃষককে সহায়তা করতে পেরেছে। সুযোগ পেলে আমরাও পারবো, এ আশা রাখি।


দেশের বর্তমান কৃষি উন্নয়ন হার অব্যাহত রাখতে ডিজিটাল পদ্ধতি অবদান রেখে যাচ্ছে। উপরে বর্ণিত সমস্যা সমাধান করে  বিষয়বস্তু, সময়, উপস্থাপক ও বিশেষজ্ঞের (মাঠে কর্মরত) সুসমন্বয় করে আরও অধিক সুফল অর্জন সম্ভব।

 

প্রফেসর ড. মো. সদরুল আমিন

কৃষি বিশেষজ্ঞ, সাবেক হা মো. দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিনাজপুর, ই-মেইল : sadrulamin47@gmail.com, মোবা : ০১৭১৫০৫৭৫০৬