Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সবজি দিয়েই মিষ্টিমুখ

খাদ্য তালিকায় সবজি রাখেন না এমন মানুষ খুজে পাওয়া দায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিদিন একজন সুস্থ সবল মানুষের ২২০ গ্রাম সবজি গ্রহণ করা উচিত। তবে বর্তমানে আমাদের দেশে মাথাপিছু  দৈনিক সবজি খাওয়ার পরিমাণ ৭০ গ্রাম। দেশের প্রেক্ষাপটে  সবজি কাঁচা ও রান্না উভয়ভাবেই খাওয়া হয়। সবজি দিয়ে বৈচিত্র্য আইটেম তৈরি করা গেলে একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে তেমনি অর্থনীতিতে রাখবে উল্লেখযোগ্য অবদান। আজকালকার যুগে শিশুরা প্রায় সবজি খেতে চায় না বললেই চলে, তবে মিষ্টি তাদের খুব পছন্দ। শিশুসহ সবার পুষ্টির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যেই সবজি দিয়ে তৈরি কয়েকটি মিষ্টি খাবারের প্রস্তুত প্রণালী উপস্থাপন করলাম। রেসিপিগুলো আপনারা অতিথি আপ্যায়ন কিংবা নিজেদের খাওয়ার জন্য ঘরে বসে অনায়াসে তৈরি করতে পারেন।
 

ক. লাউয়ের পায়েশ
উপকরণ : কচি লাউ-৫০০ গ্রাম, দুধ-১ কেজি, চিনি-৩০০ গ্রাম, বাদাম- ২৫ গ্রাম, গাজর-১ চা চামচ, ঘি- ৫০ গ্রাম, সুজি- ১০০ গ্রাম, এলাচ, তেজপাতা, কিশমিশ, কাজুবাদাম।
প্রস্তুত প্রণালী : সুজি হালকা করে ভেজে নিতে হবে। বাদাম গরম পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে লাল অংশ তুলে ফেলে পেষ্ট করে নিতে হবে। কচি লাউয়ের খোসা ছাড়িয়ে ভেতরের নরম সাদা অংশ ফেলে দিয়ে বাকি অংশ মিহি  কুচি করে নিতে হবে। গাজর মিহি কুচি করে নিতে হবে। ঘি দিয়ে অল্প আঁচে তেজপাতা, এলাচ ভেজে নিয়ে এর মধ্যে লাউ এবং গাজর ভেজে নিতে হবে। চুলায় দুধ জাল করে যখন ফুটতে শুরু করবে তখন এর মধ্যে লাউ এবং গাজর কুচি দিতে হবে। লাউ এবং গাজর অর্ধসিদ্ধ হলে সুজি এবং বাদাম বাটা দিয়ে চুলার আঁচ অল্প করে অনবরত নাড়তে হবে। সম্পূর্ণ সিদ্ধ হয়ে ঘন হয়ে এলে এর মধ্যে চিনি এবং কিশমিশ, কাজুবাদাম দিয়ে অল্প কিছুক্ষণ ঢেকে রেখে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে মজাদার লাউয়ের পায়েশ।
 

খ. চাল কুমড়ার মোরব্বা
উপকরণ : চাল কুমড়া-২ কেজি, চিনি- ৪ কাপ।
প্রস্তুত প্রণালী : বয়স্ক চাল কুমড়ার খোসা ছাড়িয়ে বীজসহ ভেতরের নরম অংশ কেটে ফেলে দিয়ে শক্ত অংশ ছোট ছোট টুকরো করে (১-১.৫ ইঞ্চি) কেটে নিতে হবে। টুকরোগুলো কাঁটা চামচ দিয়ে ভালোভাবে খুচিয়ে নিতে হবে। পরিমাণমতো পানি নিয়ে তাতে ২ চা চামচ চুন দিয়ে সেই পানিতে চাল কুমড়ার টুকরোগুলো সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। ভেজানো টুকরোগুলো পানি থেকে তুলে ভালোভাবে কয়েকবার ধুয়ে নিতে হবে যেন চুনের দ্রবণ সম্পূর্ণ চলে যায়। এবার টুকরো গুলো ফুটন্ত গরম পানিতে ৩০ মিনিট ফুটাতে হবে (পানি বেশি করে দিতে হবে যেন টুকরোগুলো সম্পূর্ণরূপে পানিতে ডুবে থাকে)। এরপর  টুকরোগুলো পানি থেকে তুলে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। চুলায় প্যান বসিয়ে তাতে ৪ কাপ পানি এবং ৪ কাপ চিনি দিয়ে অল্প আচে জ¦াল দিয়ে ফুটতে শুরু করলে এর মধ্যে চাল কুমড়ার টুকরোগুলো দিয়ে অল্প আচে জ¦াল দিতে হবে যতক্ষণ না সিরাপ ঘন সিরায় পরিণত হয়। এরপর চুলা বন্ধ করে টুকরোগুলো ওভাবেই সিরার মধ্যে ১০-১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। ১০-১২ ঘণ্টা পর টুকরোসহ সিরা পুনরায় ১০ মিনিট জ¦াল দিয়ে টুকরোগুলো তুলে একটি ছাকনির মত পাত্রে রেখে বাতাসে ঠাণ্ডা করে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে চাল কুমড়ার মোরব্বা।

 

গ. গাজরের হালুয়া
উপকরণ : গাজর-৫০০ গ্রাম, দুধ-১ কেজি, চিনি-২৫০ গ্রাম, গুড়-৫০ গ্রাম, বাদাম-২৫ গ্রাম, ঘি-৫০ গ্রাম, এলাচ, তেজপাতা, কিশমিশ, কাজুবাদাম।
প্রস্তুত প্রণালী : গাজর সিদ্ধ করে পেস্ট করে নিতে হবে। ঘি দিয়ে অল্প আচে তেজপাতা, এলাচ ভেজে নিয়ে এর মধ্যে গাজর এবং দুধ দিয়ে নাড়তে হবে। মিশ্রণটি ঘন হয়ে এলে এর মধ্যে চিনি, গুঁড়, কিশমিশ, কাজুবাদাম দিয়ে অল্প কিছুক্ষণ ঢেকে রেখে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে মজাদার গাজরের হালুয়া।
 

ঘ. বাঁধাকপির পায়েশ
উপকরণ : বাঁধাকপি-১ কাপ, দুধ-১ কেজি, চিনি-২৫০ গ্রাম, বাদাম ২৫ গ্রাম, গাজর-১ চা চামচ, এলাচ, তেজপাতা,      কিশমিশ, কাজুবাদাম, সুজি- ১০০ গ্রাম।
প্রস্তুত প্রণালী : সুজি হালকা করে ভেজে নিতে হবে। বাদাম গরম পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে লাল অংশ তুলে ফেলে পেষ্ট করে নিতে হবে। বাঁধাকপি মিহি  কুচি করে নিতে হবে। গাজর মিহি কুচি করে নিতে হবে। ঘি দিয়ে অল্প আচে বাঁধাকপি এবং গাজর ভেজে নিতে হবে। চুলায় দুধ জ¦াল করে যখন ফুটতে শুরু করবে তখন এর মধ্যে বাঁধাকপি এবং গাজর কুচি দিতে হবে। বাঁধাকপি এবং গাজর অর্ধসিদ্ধ হলে সুজি দিয়ে চুলার আঁচ অল্প করে অনবরত নাড়তে হবে। সম্পূর্ণ সিদ্ধ হয়ে ঘন হয়ে এলে এর মধ্যে চিনি এবং কিশমিশ, কাজুবাদাম দিয়ে অল্প কিছুক্ষণ ঢেকে রেখে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে মজাদার বাঁধাকপির পায়েশ।
 

ঙ. কাঁচা পেঁপের জর্দা
উপকরণ : কাঁচা পেঁপে-৫০০ গ্রাম, চিনি-৩০০ গ্রাম, ঘি-৫০ গ্রাম, ফুড কালার (সবুজ)- ০.৫ চা চামচ, এলাচ, তেজপাতা, কিশমিশ, কাজুবাদাম।
প্রস্তুত প্রণালী : পেঁপে খোসা ছাড়িয়ে মিহি কুচি করে নিতে হবে। ঘি দিয়ে অল্প আঁচে কাজুবাদাম এবং কিশমিশ ভেজে তুলে নিতে হবে। পুনরায় ঘি দিয়ে তেজপাতা, এলাচ ভেজে নিয়ে এর মধ্যে পেঁপে দিয়ে নাড়তে হবে। ১৫-২০ মিনিট অল্প আঁচে ভাজার পর  এর মধ্যে চিনি, কিশমিশ, কাজুবাদাম এবং  ফুড কালার দিয়ে অল্প কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে মজাদার পেঁপের জর্দা।
 

চ. মিষ্টিআলুর হালুয়া
উপকরণ : মিষ্টিআলু-৫০০ গ্রাম, দুধ-১ কেজি, চিনি-২০০ গ্রাম,
ঘি-৫০ গ্রাম, ফুড কালার (কমলা/লাল)-০.৫ চা চামচ, এলাচ, তেজপাতা, কিশমিশ, কাজুবাদাম।
প্রস্তুত প্রণালী : মিষ্টিআলু সিদ্ধ করে পেস্ট করে নিতে হবে। ঘি দিয়ে অল্প আচে তেজপাতা, এলাচ ভেজে নিয়ে এর মধ্যে মিষ্টিআলু এবং দুধ দিয়ে নাড়তে হবে। মিশ্রণটি ঘন হয়ে এলে এর মধ্যে চিনি, কিশমিশ, কাজুবাদাম এবং ফুড কালার দিয়ে অল্প কিছুক্ষণ ঢেকে রেখে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে মজাদার মিষ্টিআলুর হালুয়া।
 

ছ. পেঁপের হালুয়া
উপকরণ : অর্ধপাকা পেঁপে-৫০০ গ্রাম, দুধ-১ কেজি, চিনি-৩০০, গ্রাম, ঘি-৫০ গ্রাম, ফুড কালার (কমলা)-০.৫ চা চামচ, এলাচ, তেজপাতা, কিশমিশ, কাজুবাদাম।
প্রস্তুত প্রণালী : পেঁপে খোসা ছাড়িয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। প্রেসার কুকারে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে পেঁপে সিদ্ধ করে পেস্ট করে নিতে হবে। ঘি দিয়ে অল্প আচে তেজপাতা, এলাচ ভেজে নিয়ে এর মধ্যে পেঁপে এবং দুধ দিয়ে নাড়তে হবে। মিশ্রণটি ঘন হয়ে এলে এর মধ্যে চিনি, কিশমিশ, কাজুবাদাম এবং ফুড কালার দিয়ে অল্প কিছুক্ষণ ঢেকে রেখে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে মজাদার পেঁপের হালুয়া।
 

জ. গাজরের জর্দা
উপকরণ : গাজর-৫০০ গ্রাম, গুঁড়া দুধ-২৫০ গ্রাম, চিনি-২০০ গ্রাম, গুড়-৫০ গ্রাম, ঘি-৫০ গ্রাম, এলাচ, তেজপাতা, কিশমিশ, কাজুবাদাম।
প্রস্তুত প্রণালী : গাজর মিহি কুচি করে সিদ্ধ করে নিতে হবে। ঘি দিয়ে অল্প আঁচে কাজুবাদাম এবং কিশমিশ ভেজে তুলে নিতে হবে। পুনরায় ঘি দিয়ে তেজপাতা, এলাচ ভেজে নিয়ে এর মধ্যে গাজর দিয়ে ভাজতে হবে। গাজর মোটামুটি ঝরঝরে হয়ে গেলে এর মধ্যে গুঁড়া দুধ, চিনি, গুড়, কিশমিশ, কাজুবাদাম দিয়ে অল্প আচে বারবার নাড়তে হবে। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে মজাদার গাজরের জর্দা।
 

ঝ. গোলআলুর হালুয়া
উপকরণ : গোলআলু-৫০০ গ্রাম, দুধ-১ কেজি, চিনি-৩৫০ গ্রাম, ঘি-৫০ গ্রাম, ফুড কালার (কমলা/লাল)- ০.৫ চা চামচ, এলাচ, তেজপাতা, কিশমিশ, কাজুবাদাম।
প্রস্তুত প্রণালী : গোলআলুর খোসা ছাড়িয়ে ভালোভাবে ধুয়ে টুকরো টুকরো করে নিতে হবে। চুলায় দুধ দিয়ে এর মধ্যে আলুর টুকরোগুলো দিয়ে সিদ্ধ করে নিতে হবে। একদম ঘন হয়ে এলে দুধসহ সিদ্ধ করা আলু ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ঘি দিয়ে অল্প আঁচে তেজপাতা, এলাচ ভেজে নিয়ে এর মধ্যে ব্লেন্ড করা আলু দিয়ে নাড়তে হবে। কিছুক্ষণ পর এর মধ্যে চিনি, কিশমিশ, কাজুবাদাম এবং শেষে ফুড কালার দিয়ে অল্প কিছুক্ষণ ঢেকে রেখে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে মজাদার গোলআলুর হালুয়া।
 

ঞ. কাঁচা পেঁপে/পাকা পেঁপের বরফি
উপকরণ : কাঁচা পেঁপে/ অর্ধপাকা পেঁপে-৫০০ গ্রাম, গুঁড়া দুধ-২৫০ গ্রাম, চিনি-৩০০ গ্রাম, ঘি-৭০ গ্রাম, ফুড কালার (কমলা/সবুজ)- ০.৫ চা চামচ, এলাচ, তেজপাতা, কিশমিশ, কাজুবাদাম।
প্রস্তুত প্রণালী : পেঁপে খোসা ছাড়িয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। প্রেসার কুকারে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে পেঁপে সিদ্ধ করে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ঘি দিয়ে অল্প আচে কাজুবাদাম কুচি এবং কিশমিশ ভেজে তুলে নিতে হবে। পুনরায় ঘি দিয়ে তেজপাতা, এলাচ ভেজে নিয়ে এর মধ্যে বেলণ্ড করা পেঁপে দিয়ে নাড়তে হবে। ১৫-২০ মিনিট অল্প আঁচে ভাজার পর এর মধ্যে চিনি দিয়ে আবার ভাজতে হবে। গুড়া দুধ দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়ার পর কিশমিশ, কাজুবাদাম এবং ফুড কালার ( কাচাঁ পেঁপে হলে সবুজ, অর্ধপাকা পেঁপে হলে কমলা) দিয়ে অল্প কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে নামিয়ে নিতে হবে। একটি পাত্রে অল্প কিছু ঘি মেখে এর মধ্যে পেঁপের মিশ্রণটি রেখে ঠাণ্ডা করে নিয়ে পছন্দ মতো বরফির আকারে কেটে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে মজাদার পেঁপের বরফি।

 

সুমাইয়া শারমিন

পাবলিকেশন অফিসার, জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমি (নাটা), গাজীপুর-১৭০১, মোবাইল:০১৭৩৮১৩৫২০৪, sumayabau@gmail.com,