Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ইঁদুর নিধনের মাধ্যমে বাঁধ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ

ইঁদুর নিধনের মাধ্যমে বাঁধ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ

ড. সন্তোষ কুমার সরকার
বন্যা দ্ইু রকমের হয়।  পানির বন্যা ও ইঁদুর বন্যা । পানি বেশি হলে অর্থাৎ বর্ষার  সময় অতিরিক্ত পানিতে যখন ফসলের মাঠ, রাস্তাঘাট, তলিয়ে যায়, ঘরবাড়িতে পানি ওঠে তখন বন্যা বলা হয়। সময় ও তীব্রতা ভেদে বন্যার নামকরণ করা হয়। আগাম বন্যা, বিলম্বিত বন্যা, ভয়াবহ বন্যা ইত্যাদি। যখন কোনো এলাকায়  বিপুল সংখ্যক ইঁদুরের উপস্থিতি হয় এবং রাতারাতি ফসল ও সম্পদের বিপুল ক্ষতি করে তখন ইঁদুর বন্যা হিসাবে অভিহিত   করা হয়। বাংলাদেশে রাঙ্গামাটি, বান্দবান জেলায় ২০-২৫ বছর পর ইঁদুর বন্যা হয়। এ অঞ্চলে যে বছর মলি বাঁশে ফুল ও ফল হয় সেই বছর ইঁদুর বন্যা হয়। মলি বাঁশে ২০-২৫ বছর পরপর  ফুল ও ফল হয়। সব পাহাড়ে বাঁশে ফুল এক সময়ে আসে না। এক পাহাড়ে বাঁশে ফুল ও ফল হওয়া শুরু হয়, এর বেশ কিছু দিন পড়ে  পাশের পাহাড়ে ফুল ও ফল হয়, যা ইঁদুরের  পর্যাপ্ত খাদ্য অনেক দিন ধরে বিদ্যমান থাকে। ইঁদুরের বংশ বিস্তার ঘটাতে পারে। বাঁশের ফুল ও ফল ইঁদুরের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রয়েছে। যে বছর ইঁদুর বন্যা হয় সে বছর ঝুম ফসল ও সম্পদের পঙ্গপালের মতো ক্ষতি (৩০-৪০%) করে। বর্ষাকালে বাংলাদেশে প্রতি বছর কমবেশি বন্যা হয়ে থাকে। বর্ষার পানি যখন মাঠের ফসল  ক্ষেতে প্রবেশ করে তখন ইঁদুর বাঁধে, উঁচু জায়গায়, কচুরীপানার দলে, গাছে  এবং   ঘরবাড়িতে আশ্রয় নিয়ে থাকে। এ বছরও অনেকগুলো জেলায় বন্যা হয়েছে।
বাংলাদেশে দুই ধরনের ইঁদুরের  সংখ্যা মাঠে বেশি। মাঠের বড় কালো ইঁদুর ও মাঠের কালো ইঁদুর। এরা উভয়ে গর্তে বাস করে। গর্তের মুখের আকার দেখে কোন ইঁদুরের উপস্থিতি রয়েছে তা সহজেই বুঝা যায়। মাঠের বড় কালো ইঁদুরে গর্তের মুখের আকার বড় এবং মাঠের কালো ইঁদুরের গর্তের মুখের আকার অপেক্ষাকৃত ছোট। মাঠের কালো ইঁদুর সাধারণত ঘরবাড়িতে যায় না। এরা বাঁধ, বেড়িবাঁধ, মাঠের উঁচু পতিত ভিটা, উঁচু স্থান, কচুরিপানার দলে, পুকুরের পাড়ে আশ্রয় নিয়ে থাকে। জোয়ারভাটার এলাকার জোয়ারে সময় গাছে উঁচু ভূমিতে আশ্রয় নিয়ে থাকে। বন্যা হলে বাঁধে, সড়ক-মহাসড়কে আশ্রয় গ্রহণ করে। পানি না কমা পর্যন্ত বাঁধে থাকে। মাঠের বড় কালো ইঁদুর যেখানে অবস্থান করে বা আশ্রয় নিয়ে থাকে সেখানে মাঠের কালো ইঁদুর থাকে না। কারণ মাঠে বড় কালো ইঁদুর মাঠের কালো ইঁদুরকে মেরে খেয়ে ফেলে।
বাঁধ, বেড়িবাঁধ, সড়ক, মহাসড়কে কমবেশি সারা বছরই ইঁদুরের কিছু পপুলেশন থাকে। কিন্তু পপুলেশন সংখ্যা কত এ বিষয়ে কোন গবেষণা তথ্য নেই। তবে জরিপ করে দেখা গেছে বর্ষার সময় প্রতি কিমি. সড়কে ১৫০ সক্রিয় গর্ত আছে। বেড়িবাঁধে ২০০ ইঁদুরের গর্ত রয়েছে। দশমিনা বীজ বর্ধন খামারে খালের পাড়ে উঁচু রাস্তায় দুই পাশে হাফ কিমি. মধ্যে ২৫০ ইঁদুরের সক্রিয় গর্ত জরিপ করে পাওয়া গেছে।
উভয় প্রজাতির ইঁদুর একটি গর্তে একটি থাকে। বাঁধ, সড়কে গর্ত খুঁড়ার ফলে সহজে বাঁধ, সড়কের ভেতর পানি প্রবেশ করে থাকে। বন্যা হলে বাঁধ, সড়ক সহজে ভেঙে যায়। এতে কোটি কোটি টাকার বাঁধ, সড়ক নষ্ট হয়ে যায়। বর্ষার পানিতে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণ হিসাবে ইঁদুরকে দোষারোপ করা হয়েছিল। কিন্তু বাঁধ ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রাপ্ত বিভাগের ইঁদুর দমনের কোনো কর্মসূচি নেই। বাঁধের বর্ষার বা বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে ও ইঁদুরের গর্তে মাটি দিয়ে বন্ধ করে দিয়ে থাকে। সরকারি বাঁধ ও সড়ক বলে কৃষকগণও এসব স্থানের ইঁদুর মারে না। বর্ষা চলে গেলে এসব স্থানের ইঁদুর আমন ফসলের ক্ষতি করে থাকে। বাঁধ ও মহাসড়কে ইঁদুর দমনের কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন। এতে প্রতি বছর কোটিকোটি টাকার বাঁধ ও মহাসড়ক  বন্যার কারণে ক্ষয়ক্ষতি কম থাকবে।
ইঁদুরের তিনটি মৌলিক চাহিদা আছে যথা- বাসস্থান, খাদ্য ও পানি। বন্যার সময় এদের উত্তম বাসস্থান হচ্ছে বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক। মাঠে যখন পানি আসে  ইঁদুর প্রথমে বাঁধের দুই পাশে নিচের অংশে গর্ত খুঁড়ে বাস করে। মাঠে পানি বেশি হলে গর্ত খুঁড়ে  উপরের অংশে যায়। দিনের বেলায় সাধারণত গর্তের মুখ বন্ধ রাখে। মাঠের বড় কালো ইঁদুর পানিতে ডুব দিয়ে নানা রকম খাদ্য যেমন- বিভিন্ন  মাছ, শামুক, পোকামাকড়, কাঁকড়া, জলজ উদ্ভিদ (শাপলা, শালুক)  সংগ্রহ করে। কাজেই খাদ্যের অভাব হয় না। মাঠের কালো ইঁদুরও পানি থেকে ও সড়কের পোকামাকড়, কেঁচো খেয়ে বেঁচে থাকে। এসময় বংশ বিস্তার কম করে। বন্যা বা বর্ষাকাল ইঁদুরের জন্য খুবই খারাপ সময়। কারণ এ সময় প্রাকৃতিকভাবে অনেক ইঁদুর মারা পড়ে।
বাঁধের ক্ষয়ক্ষতি রোধ করার জন্য সারা বছরই ইঁদুর মারা কার্যক্রম চালু রাখা প্রয়োজন। কারণ যখন অল্প সংখ্যক ইঁদুর ও গর্ত থাকে, এ সময় বাঁধের  ইঁদুর মারা হলে বৃষ্টির পানি ইঁদুরের গর্তে প্রবেশ করে বাঁধ বা সড়কের ক্ষয়ক্ষতি কম  হবে। বাঁধে ইঁদুর দমনের উত্তম সময় হচ্ছে মাঠে পানি আসার সময়। তবে বর্ষার সময় সব মাসই সপ্তাহে একদিন ইঁদুর মারতে হবে, যে পর্যন্ত মাঠের পানি কমে না যায়।
বাঁধের এত বড় এলাকা ফাঁদ ও গর্ত খুঁড়ে বাস্তবে  ইঁদুর দমন করা সম্ভব হবে না। বিষটোপ এবং গ্যাসবড়ি প্রয়োগ করে ইঁদুর মারতে হবে। জিংক ফসফাইডেরে  ২% বিষটোপ প্রয়োগ করতে হবে। এটির পরীক্ষামূলক উদাহারণ হচ্ছে-বিএডিসির দশমিনা বীজবর্ধন খামারে ২% জিংক ফসফাইড চিংড়ি মাছের সাথে মিশিয়ে প্রতি গর্তে একটি করে বিষ মিশ্রিত চিংড়ি প্রয়োগে  ৮০% ইঁদুর দমন করা হয়েছিল। বিষটোপ প্রয়োগের পরদিন সকালে শতশত কাক ইঁদুর খেয়েছিল। ইঁদুর খেয়ে কাক মারা যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বাস্তবে একটি কাকও মারা যাই নাই। কারণ কাক ইঁদুর খাওয়ার সময় প্রথমে পেটের নাড়িভূড়ি বেড় করে খেয়েছে। ইঁদুরের পেট ছিদ্র করার পর ফসফিন গ্যাস বেড় হয়ে বাতাসের সাথে মিশে গিয়েছিল। শামুকে  ও কাঁকড়ায় জিংক ফসফাইড মিশিয়ে প্রতি গর্তে একটি করে প্রয়োগের অনেক ইঁদুর দমন করা হয়েছিল। চাউল ও গমের সাথে ২% জিংক ফসফাইড প্রয়োগে ২০-৩০% ইঁদুর দমন করা হয়েছে। প্রতিগর্তে একটি করে অ্যালমুনিয়াম  ফসফাইড গ্যাস বড়ি প্রয়োগে ৯০% ইঁদুর দমন সম্ভব হয়েছে।  সক্রিয় ইঁদুরের গর্তে একটি গ্যাসবড়ি প্রয়োগ করে গর্তের মুখ ভালোভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। অর্থাৎ যেকোনো স্থানের গর্তের ইঁদুর মারা কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে গ্যাসবড়ি প্রয়োগ করা। গ্যাসবড়ি প্রয়োগের সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
বাঁধ, বেড়িবাঁধ, সড়ক, মহাসড়কের ইঁদুরের পপুলেশন ও ক্ষয়ক্ষতি এবং দমন ব্যবস্থার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন।  বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে ও সড়ক ও জনপথ বিভাগে ইঁদুর দমন কর্মসূচি থাকা প্রয়োজন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাঁধ ও মহাসড়কের পাশের কৃষকদের ইঁদুর নিধনে উদ্বুদ্ধ ও প্রশিক্ষণ প্রদানের কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন। এতে ইঁদুর উপদ্রবে বাঁধ ও আমন ফসলের ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে। য়

রূƒপায়নলোটাস ৬বি, ১৩ তোপখানা রোড, ঢাকা, মোবাইল : ০১৭১৪২২২১৫৭, ই-মেইল : santoshsarker10@gmail.com