Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ইঁদুরের উপদ্রব : মৎস্যচাষে

ড. এস এম আতিকুল্লাহ

বলা হয় পরিবেশে সকল উদ্ভিদ ও প্রাণী পারস্পরিক দেয়া নেয়ার মাধ্যমে একটি জটিল এবং যুতসই খাদ্য শৃঙ্খল তৈরি করে। ইঁদুর নামক প্রাণীটি তার ব্যতিক্রম। দেয়ার চেয়ে ক্ষতি করে অনেক বেশি। এটি পরিবেশবান্ধব সুবিধাজনক প্রাণী নয় বরং বিশট্লি, বদমাশ। এটি প্রাণীকুল তথা মানুষের এবং কৃষির সর্বাধিক ক্ষতি করে। প্রজন্মের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এর বংশ বিস্তারের পথগুলো বন্ধ এবং যথাসম্ভব নিধন করা দরকার। আমার এক কৃষি বিজ্ঞানী বন্ধু এরশাদের সামরিক শাসন আমলে জনৈক সামরিক কর্মকর্তা তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, বলেন তো কৃষির প্রধান সমস্যা কী? উত্তরে বললেন স্যার কৃষির প্রধান সমস্যা ইঁদুর। বলেন কী? তিনি হতবাক হলেন! স্যার, ইঁদুর যে পরিমাণ ধান খায় ও নষ্ট করে তা দ্বারা দেশের খাদ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব। তখন মৌখিক পরীক্ষা শেষে যারা বের হতো তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করতাম কি কি প্রশ্ন করা হয়েছে? বন্ধুর এই রসাত্মক প্রশ্নোত্তর শুনে সকলেই হাসির খোরাক জুগিয়েছিলাম। বিষয়টি বাস্তব এবং প্রশ্নবোধক। পাশাপাশি, ইঁদুরের মাধ্যমে নানা রকমের মহামারী যেমন “প্লেগ”রোগ পৃথিবীতে সংক্রমিত ও বিস্তার লাভ করে। জানা যায় ভূমধ্যসাগরের উপক‚লে ইউরোপের নদী বন্দর থেকে জাহাজ এক বন্দর থেকে অন্য বন্দরে নোঙর করত সাথে ইঁদুরও পরিবাহিত হতো। এভাবে ইঁদুর এক জাহাজ থেকে অন্য জাহাজে ইউরোপসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। “প্লেগ” রোগ ইঁদুরের মাধ্যমে মানবদেহে সংক্রমিত হয়েছিল। পৃথিবীতে মানুষের অকাল মৃত্যুর কারণ হয়েছিল যা আজও ইতিহাসকে আলোড়িত করে তাড়িয়ে বেরায় প্লেগের ভয়াবহতা। এমনকি জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বন্যপ্রাণীর সুরক্ষা ও পরিবেশ সংরক্ষণ না করলে পরিবেশ ও কৃষির বিশেষ ক্ষতি হবে বলে সতর্ক করেছেন। প্রকৃতিতে ইঁদুর এটি ঘাতক। তাই এটির নিধন এবং পরিবেশ সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২০ যথাযথ এবং ফলপ্রসূ কর্মসূচি।


ইঁদুর কৃষি ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি সম্ভাবনাময় রুপালি মাছও  বেশ ক্ষতি করে। মাছের ঘেড়ের বিশেষ ক্ষতি করে। মাছ চাষের উত্তম সময়ে মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত ঘেরের চারদিকে গর্ত করে এবং গর্ত পর্যায়ক্রমে বড় হয়ে নদী-খাল বা অন্য জলাধারের সাথে সংযোগ তৈরি করে। এতে ঘেরে পানি কমে যায়, ঘেরের পাড় ভেঙে যায় এবং কৃষকের জন্য বাড়তি ঝামেলাও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এমনকি ঘেরে মাছের খাদ্য খায় এবং মাছের খাদ্য নষ্ট করে। বর্ষকালে দরিদ্র কৃষক বাঁধের ধারে বিদ্যমান বড়ো-পিটে মাছ চাষ করে সাময়িক অর্থ রোজগার করে। সেখানে ইঁদুর চেলা/গর্ত তৈরি করে স্বল্পসময়ের জন্য তেলাপিয়া, পাংগাশ ও পুঁটি চাষ বিঘ্নিত করে।  


পুকুরের পাড়সমূহে গর্ত তৈরি করে। গর্ত পানির উঠানামায় বড় হতে থাকে এবং পুকুরপাড় ভেঙে যায়। পুরানো পুকুরের মাছ চাষ বেশি বিঘ্নিত হয়। বিশেষ করে প্রান্তিক কৃষক যাদের একমাত্র সম্বল একটি ছোট ডোবা বা পুকুর তারা ইঁদুরের নির্যাতনে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ১৯৮৩ সাল থেকে অদ্যাবিধ ইঁদুর নিধনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন। এই কর্মসূচির চলমান গতানুগতিক ধারার সাথে নতুন মাত্রা যোগ করে আরও নতুন নতুন কৌশল ও কর্মপন্থা বের করা দরকার। কৃষিতে ইঁদুর নিধন কর্মসূূচি একটি দীর্ঘমেয়াদি সংবেদনশীল বিষয়। এজন্য স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যতিক্রমধর্মী পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
ইঁদুরের সমস্যা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের একার নয়। এই সমস্যা কৃষি, মৎস, পশুসম্পদ,পরিবেশ, পাট ও খাদ্য ও প্রকৃতিক দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সমস্যা। তাই সকলে মিলে উপজেলাভিত্তিক সমন্বয় ও পদক্ষেপ  নেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।
তবে সরকারি গবেষণার পাশাপাশি বেসরকারি গবেষণায় মৎস্য ও পশুসম্পদের ক্ষতির পরিমাণ এবং এর ব্যাপকতা নিয়ে নানা পেশার কৃষকের সমন্বয়ে গবেষণা কাজ হাতে নেয়া বিশেষ দরকার।


ইঁদুর সম্পর্কিত শেখ সাদীর একটি উপমা, ‘‘কোন দেশের শাসনব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে যদি কুকুর হয় তার প্রধান মন্ত্রদাতা, আর ইঁদুর হয় দেশের খাজাঞ্জি তবে দেশের অবস্থা কি কল্পনা করে নাও”। সুতরাং ইঁদুুরের কাছে বাংলার বিশাল শস্যভাÐার জমা রাখা ঠিক নয়। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তায় ভোগান্তি আনে, নতুন প্রজন্মের শিশুদের রোগাক্রান্ত করে। এ পর্যন্ত গবেষণায় দেখা যায় সমন্বিত ইঁদুর নিধন বেশ কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব। সুতরাং, পাড়া প্রতিবেশী, ছাত্র, শিক্ষক, খামারি, গুদাম ব্যবস্থাপকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর (পাট, খাদ্য),সবাইকে সম্মিলিত ইঁদুর নিধন অভিযানে যোগ দিতে হবে, ইঁদুর নিধন করতে হবে । দেখা মাত্রই ইঁদুর ধরতে হবে এবং মারতে হবে।

এগ্রিকালচার স্পেশালিস্ট, জাতীয় ভূমি জোনিং প্রকল্প (পরিকল্পনাধীন), ভ‚মি ভবন কমপ্লেক্স, কাটাবন, ঢাকা, mdatikullah@yahoo.com,   মোবাইল : ০১৭১২ ৮৮৯৯২৭