Wellcome to National Portal
  • 2025-03-12-16-25-15c95fd3ae0d740427f19c779208b30b
  • 2025-03-12-16-16-b41688fcb8ac3df55c13eb5c82b62083
  • 2025-01-05-17-19-232bbb16275acb0da535d705c9b6f6d8
  • 2024-12-15-10-13-de23faa6fead7deef93b5973ae193323
  • 2023-12-28-06-44-fad1b3dffb04c90c1f14863ef06978d5
  • ICT Ebook
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সবুজশক্তি বায়োডাইজেস্টার

2021-02-16-11-15-45a95e34d9cfd65dab762706d18e9903

শুভাশিষ ভৌমিক
সবুজশক্তি বিশ্বাস করে কৃষক বাঁচলে বাঁচবে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশে সম্ভাব্য ৪০ লক্ষ কৃষি পরিবার প্রচলিত জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা থকে বঞ্চিত। পাশাপাশি কৃষি জমিতে রাসায়নিক সারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ব্যাপকহারে ভুক্তভোগী। এই রাসায়নিক সারের ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশে এখন প্রায় ৬২% জমি কৃষিকাজে অনুপযোগী। এই ৪০ লক্ষ পরিবার যাদের ২-৩ টি গবাদি পশু রয়েছে তারা সরাসরি সবুজশক্তি বায়োডাইজেস্টারের সুফলভোগী হতে পারে। শুধু তাই নয়, কাঠ সংগ্রহ বাবদ বাঁচাতে পারে বছরে ১০৯৫ ঘণ্টা। সবুজশক্তির বায়োগ্যাস কালো ধোঁয়া থেকে বাঁচায় যা ৮০% শারীরিক ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং শ্বাস-  প্রশ্বাসজনিত রোগব্যধি থেকে ফুসফুসকে রক্ষা করে। এছাড়া জ্বালানি এবং সার বাবদে বছরে সাশ্রয় হয় প্রায় ২৪,০০০ টাকারও অধিক।


পরিবেশ রক্ষায় সবুজশক্তির অবদান অনন্য। প্রতিটি বায়োডাইজেস্টার সিস্টেম ২৫ বছরে ১১২ টন কার্বন নিঃসরণ করে। এর থেকে উৎপাদিত জৈবসার মাটির গুণগত মান বৃদ্ধি করে অধিক ফলনে ভুমিকা রাখে।


বাংলাদেশে অস্ট্রলিয়ান প্রযুক্তির সবুজশক্তি বায়োডাইজেস্টার  
অস্ট্রেলিয়ান সোস্যাল এন্টারপ্রাইজ
ATEC* (Appropriate Technology) ২০২০ সালে বায়োডাইজেস্টার ব্র্যান্ড ‘সবুজশক্তি’ সূচনার মাধ্যমে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে। অঞঊঈ* ২০১৫ সাল হতে গ্রামীণ কৃষক পরিবারের জন্য বায়োডাইজেস্টার প্রস্তুত করে আসছে যা বিনামূল্যে বায়োগ্যাস এবং জৈবসার সরবরাহ করে। এটি অস্ট্রেলিয়ান মানদণ্ডের প্রস্তুতকৃত বিশ্বের এক অভাবনীয় উদ্ভাবন যা ইতোমধ্যে কম্বোডিয়ায় ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছে। কম্বোডিয়ায় গত ৫ বছরে ১৫০০ এরও অধিক সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে যার প্রতিটি সমান কার্যক্ষম। ATEC* এর লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৫ টি দেশে এর কার্যক্রম সম্প্রসারিত করা এবং ১ মিলিয়ন বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করা।


গতানুগতিক ইট-সিমেন্ট দ্বারা প্রস্তুতকৃত বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের তুলনায় সবুজশক্তি বায়োডাইজেস্টার অত্যান্ত কার্যকর যা বৃষ্টি বা বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। এটি মাত্র ২-৩ ঘণ্টায় যে কোন স্থানে, এমনকি বর্ষা মৌসুম এবং বন্যাপ্রবণ এলাকায় স্থাপনযোগ্য।


সবুজশক্তি বায়োডাইজেস্টারের টেকসই ডিজাইন নিশ্চিত করে ২৫ বছরের বেশি স্থায়িত্ব, ফলে একবার বিনিয়োগের মাধ্যমে ২৫ বছরের বেশি নিশ্চিন্ত থাকা যাবে। এর রয়েছে ইউভি প্রতিরোধক LLDPE (Linear Low Density Poly Ethylene) উপাদান যা গতানুগতিক প্লাস্টিক ম্যাটেরিয়ালের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত। সাথে থাকছে ৩ বছরের রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি।


কেবল জীবনযাত্রার পরিবর্তন নয়, সর্বোচ্চ বিক্রয় পরবর্তী সেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ক্রেতার সন্তুষ্টি অর্জন সবুজশক্তির অন্যতম লক্ষ্য। এর ধারাবাহিকতায় সবুজশক্তি নিয়ে এলো ফ্রি হটলাইন সার্ভিস যার মাধ্যমে একজন ক্রেতা বিনাখরচে সেবা গ্রহণ করতে পারবে। এ ছাড়াও রয়েছে দক্ষ ও অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান দ্বারা বিক্রয়োত্তর দ্রুততম সময়ে সেবা প্রদানের নিশ্চয়তা।


বাংলাদশের সবুজশক্তি বায়োডাইজেস্টার সফলতা
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের একটি কৃষক পরিবারের প্রধান বিপ্লব হোসেন। পরিবারের সদস্য সংখ্যা মোট ৮ জন। কৃষিকাজের জন্য বর্তমানে তার রয়েছে ৫টি গরু। প্রতিদিন ৮ জন সদস্যের ৩ বেলা রান্নার পেছনে লাকড়ি বাবদ প্রতি মাসে বাড়তি প্রায় ৮০০-১০০০ টাকা ব্যয় বিপ্লব হোসেনের জন্য ছিল একটি বড় ধরনের বোঝা। আসমা আক্তার, যিনি বিপ্লব হোসেনের সহধর্মিণী, রান্নার পেছনে তার সীমাহীন কষ্ট বিপ্লব হোসেনের কপালে চিন্তার রেখা ফেলেছিল। লাকড়ি চুলার পেছনে রান্না বাবদে প্রতিদিন অতিরিক্ত প্রায় তিন ঘণ্টা বাড়তি সময় ব্যয় হতো। আসমা আক্তারের ২ সন্তানকে বঞ্চিত রাখতো তাদের যত্নআত্তির ব্যাপারে তদারকি করার থেকে। শুধু তাই নয়, আসমা আক্তার ভুগতেন নানা শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যায় যার মূলে ছিল লাকড়ি চুলা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া। মাঝেমধ্যে সময়মতো লাকড়ির যোগান না হলে আসমা আক্তারকে ছুটতে হতো লাকড়ি সন্ধানে যার জন্য ব্যয় হতো বাড়তি সময়। বিপত্তি আরো বাড়ত যখন সময়টা থাকত বর্ষাকাল, লাকড়ি শুকানোর প্রতিক‚লতা প্রতিদিনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে আরো ব্যাহত করত। বিপ্লব হোসেন সবমিলিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে, আশংকায় থাকেন তার সন্তানদের মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে।


এমন অবস্থায় ইডকলের ((IDCOL- Infrastructure Development company Limited) পক্ষ থেকে তার সাথে যোগাযোগ করা হয় একটি বায়োডাইজেস্টার সিস্টেম (যা বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট নামে বহুল পরিচিত) বসানোর ব্যাপারে। বিপ্লব হোসেন তখনো জানতেন না কি আমূল পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে তার এবং তার পরিবারের জীবনযাপনে। ATEC Australia- International Ltd এর প্রতিনিধিগণ IDCOL এর বায়োগ্যাস কর্মসূচির অন্তর্ভুক্তকরণ প্রক্রিয়ার একটি অংশ হিসেবে বগুড়ায় বিপ্লবের বাড়িতে একটি বায়োডাইজেস্টার সিস্টেম স্থাপন করেন। এরপর থেকেই রান্নার জ্বালানি বিপ্লব হোসেনের জন্যে আর কোন বড় সমস্যা হয়ে বাধা পড়েনি। তার সহধর্মিণী আসমা আক্তার এখন অনেকটাই নির্ভর। ৮ জন সদস্যের প্রতিদিনের রান্নার জন্যে যে পরিমাণ গ্যাস দরকার হয় তার পর্যাপ্ত সরবরাহ পান ATEC* এর স্থাপন করা বায়োডাইজেস্টার থেকে যা গরুর গোবরকে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় বায়োগ্যাস এবং জৈবসারে রূপান্তর করে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস এবং ব্যয়বহুল এলপি গ্যাসের সরবরাহ থেকে বঞ্চিত বিপ্লব হোসেনের পরিবার এখন সমৃদ্ধ আগামীর স্বপ্ন দেখে।


প্রাকৃতিক গ্যাস এবং আমদানিনির্ভর ব্যয়বহুল এলপি গ্যাসের সরবরাহ থেকে বিপ্লব হোসেনের মতো আরো কোটি পরিবার বঞ্চিত, যার অধিকাংশই কৃষি পরিবার।  নানা সীমাবদ্ধতার কারণে বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বর্তমানে মাত্র প্রায় ১৫% পরিবার প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের আওতাধীন যার অধিকাংশই শহরের বাসিন্দা। অন্যদিকে এলপি গ্যাসের বাজার মাত্র প্রায় ১২%। দামের বিষয় বিবেচনায় কৃষিনির্ভর পরিবারের জন্য এটি অত্যন্ত খরচ সাপেক্ষ  সমাধান। দুঃখজনকভাবে, গ্রামীণ পরিবারগুলোর একটি বড় অংশ এখনো লাকড়ির ওপর নির্ভরশীল যা প্রতি বছর ৩.৩% হারে বন উজারকরণে উল্লেখযোগ্যভাবে দায়ী।


বর্তমানে বাংলাদেশের জ্বালানির সার্বিক পরিস্থিতি হতে উত্তরণের একমাত্র উপায় বিকল্প নির্ভরযোগ্য জ্বালানির সন্ধান করা। কৃষি প্রধান যে দেশে গবাদিপশুই  কৃষি কাজের প্রধান হাতিয়ার, সে গবাদিপশুর বর্জ্য থেকে ATEC* এর সবুজশক্তি বায়োডাইজেস্টারের মাধ্যমে উৎপন্ন বায়োগ্যাস হতে পারে জ্বালানির নির্ভরযোগ্য বিকল্প সমাধান।

কান্ট্রি ডিরেক্টর, এটিইসি অস্ট্রেলিয়া ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, হট লাইন : ০৯৬১২২০০৫০০, ই-মেইল : sbhowmick@atecbio.com