Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন ও আগামীর করণীয়

টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন ও আগামীর করণীয়
মোঃ সায়েদুল ইসলাম
বাংলাদেশ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় (এফএও) ১৯৭৩ সালে যোগদানের পর এই প্রথমবারের মতো এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক খাদ্যনিরাপত্তা সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সঙ্গে যৌথভাবে ৩৬তম ওই সম্মেলনে বিশ্বের ৪৬টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নেবেন। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে বেশির ভাগ অংশগ্রহণকারী ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে এতে যোগ দেবেন। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক সম্মেলনের ৩৬তম অধিবেশনটি অত্যন্ত অর্থবহ। কারণ সদস্য দেশ ও আঞ্চলিক পর্যায়ে অগ্রাধিকার নির্ধারণের পাশাপাশি এ অঞ্চলের কৃষির অবস্থা, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম। বৈশ্বিক করোনা অতিমারির প্রেক্ষাপটে এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে অংশীদারিত্ব, উদ্ভাবন এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির উদাহরণকে তুলে ধরার একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিকভাবে খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টি উন্নয়নে অবদান রাখবে। 

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রগাঢ়ভাবে উপলব্ধি করেছিলেন কৃষি উন্নয়ন ব্যতীত বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই তিনি স্বাধীনতা-উত্তর দেশ পুনর্গঠনে গভীরভাবে মনোযোগী হয়েছিলেন বাংলার কৃষি উন্নয়নে। এ কারণেই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে ‘সবুজ বিপ্লবের’ ডাক দিয়ে কালজয়ী সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কৃষি উন্নয়নের এ ধারা বজায় রেখেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা কৃষকবান্ধব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা অতিমারির প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও আপনার সুদক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেশের উন্নয়ন অভিযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। আপনার দূরদর্শী নীতি ও পরিকল্পনায় মাননীয় কৃষিমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসরণে টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের কৃষি উন্নয়ন অগ্রযাত্রা বিশ্বব্যাপী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বর্তমান সরকার কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সারসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণের মূল্য হ্রাস ও সহজলভ্যকরণ, কৃষকদের উন্নয়ন সহায়তা প্রদান, গবেষণা কার্যক্রম  জোরদারকরণ, উন্নত জাত ও কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বিস্তৃতকরণ, ই-কৃষির প্রচলন, কৃষি বিপণন ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন, ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ ও অন্যান্য নীতিমালা প্রণয়নসহ বহুমুখী কৃষি কল্যাণমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। এরই ফলশ্রুতিতে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন ধান উৎপাদনে তৃতীয়, শাকসবজি উৎপাদন বৃৃৃৃদ্ধির হারে তৃতীয়, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয় ও কাঁচা পাট রপ্তানিতে প্রথম, আম ও আলু উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম। সম্প্রতি পেঁয়াজ উৎপাদনেও বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে। শুধু খাদ্যশস্যই নয় বৃহত্তর কৃষির আঙিনায় মাছ, মাংস, দুধ, ডিম এসবেরও উৎপাদন বেড়েছে বহুগুণ। 

খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি জনগণের পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য আমরা কাজ করছি। মুজিব শতবর্ষে অনাবাদি পতিত, বসতবাড়ির আঙিনাসহ প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় নিয়ে এসে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীরও পুষ্টি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পুষ্টি চাহিদা পূরণে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে আরও কয়েকটি প্রকল্প। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে এসডিজির  লক্ষ্যমাত্রা পূরণ এবং রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে। খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং কফি, কাজুবাদামসহ রপ্তানির সম্ভাবনাময় উচ্চমূল্যের ফসল/প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণে কৃষি মন্ত্রণালয় সচেষ্ট রয়েছে।

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে অনেক প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিষয়ে সাদৃশ্য বিদ্যমান। সদস্য দেশগুলোর পারস্পরিক যোগাযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে টেকসই খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে যৌথ কার্যক্রম গ্রহণের পাশাপাশি সুষম ও টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনায় পদক্ষেপ প্রয়োজন। স্বল্প উপকরণ ব্যবহারে অধিক খাদ্য উৎপাদন কৌশল বের করতে হবে। উন্নত বিভিন্ন প্রযুক্তি যেমন- তথ্য প্রযুক্তি, ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা, প্রিসিশন এগ্রিকালচার, জৈবপ্রযুক্তি, দক্ষ সেচব্যবস্থা, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, উন্নত কৃষিযন্ত্রপাতি ইত্যাদি বিষয়ে সদস্য দেশগুলো যৌথ কার্যক্রম গ্রহণ করে পারস্পরিক লাভবান হতে পারে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, শস্য উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যায়ে অপচয় হ্রাস, বিশেষ করে ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার বিষয়েও পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আগামীতে আরও প্রসারিত করতে হবে। এছাড়া ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের ধারণা বাস্তবায়নে কৃষিকে ভবিষ্যতে অটোমেশনে আনায়নের প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন চলমান রয়েছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)তে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ এবারই প্রথম অচজঈ এর এই সম্মেলন আয়োজন করার সুযোগ লাভ করল। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কৃষি মন্ত্রণালয় এই আয়োজন করতে পেরে আন্তরিকভাবে আনন্দিত ও গর্বিত। আমি মনে করি বর্তমান সরকারের কৃষি উন্নয়নের সাফল্যের পাতায় এটিও স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। পরিশেষে, এ আয়োজনের সাথে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছেন, সকলকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ও সম্মেলনের সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।

লেখক : সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা