Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

দেশের অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় মৎস্যখাত

দেশের অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় মৎস্যখাত 
খঃ মাহব্বুুল হক
বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্বপ্নপূরণের ধারাবাহিকতায় তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং গতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়নের পথে অগ্রসর হয়েছে। অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় মৎস্যখাতও একটি অংশীদার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা প্রতিপালন এবং অভ্যন্তরীণ এবং সামুদ্রিক জলাশয়ের উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার জন্য সময়োপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। 
মৎস্য অধিদপ্তরের রূপকল্প, অভিলক্ষ্য, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
রূপকল্প : মৎস্যজাত উৎস হতে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ, দারিদ্র্য বিমোচন ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি।
অভিলক্ষ্য : মৎস্য ও চিংড়িসহ অন্যান্য জলজসম্পদের স্থায়িত্বশীল উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং অভীষ্ট জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে উন্মুক্ত জলাশয়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ ক্ষেত্র হতে প্রাপ্ত সুফলের মাধ্যমে দরিদ্র মৎস্যজীবী ও মৎস্যচাষি তথা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধন।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : আধুনিক মৎস্যচাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ এবং টেকসই সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মৎস্যসম্পদের উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি; প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ; পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, জলজ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ; মানব সম্পদ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি; মৎস্য রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ; মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্যের মাননিয়ন্ত্রণ ও রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও মৎস্যজীবীদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন।
মৎস্য খাতে উল্লেখযোগ্য অর্জন : সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন, রূপকল্প ২০২১ ‍ও ২০৪১, এসডিজি এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উল্লিখিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তর নানাবিধ কর্মসূচি ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। মৎস্যখাতে সরকার কর্তৃক গৃহীত সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের সফল বাস্তবায়নের ফলে এখাতে নিম্নরূপ উল্লেখযোগ্য অর্জন সাধিত হয়েছে।
মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন : মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা ও অগ্রগতিশীল    নেতৃত্বে ২০১৬-১৭ সালে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা (৪০.৫০ লাখ মে.টন)-এর বিপরীতে ৪১.৩৪ লাখ মে.টন মাছ উৎপাদিত হয়। ফলে স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। বিগত ৫০ বছরে মাছের উৎপাদন বেড়েছে সাড়ে পাঁচ গুণেরও বেশি। মৎস্য খাতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬.১০%। দেশের জিডিপির ৩.৫০% এবং  কৃষিজ জিডিপির ২৬.৫০% মৎস্য উপখাতের অবদান। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৪ লাখ নারীসহ ১৯৫ লাখ বা ১২ শতাংশের অধিক লোক এখাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে মৎস্য উৎপাদন হয়েছে ৪৬.২১ লাখ মে.টন; যা ২০০৮-০৯ সালের মোট উৎপাদনের (২৭.০১ লাখ মে.টন) চেয়ে ৭১.০৮% বেশি। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে অভ্যন্তরীণ মুক্তজলাশয়ে মাছ আহরণে বাংলাদেশ ৩য়; বিগত ১০ বছরের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির হারে ২য় এবং বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম স্থানে রয়েছে। বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১ম; তেলাপিয়া উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে ৪র্থ এবং এশিয়ায় ৩য় স্থানে রয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মৎস্য অধিদপ্তর বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার ১৪২৩-এ স্বর্ণপদক প্রাপ্ত হয়েছে।
ইলিশ ব্যবস্থাপনায় বিশ্বে রোল মডেল : ‘বাংলাদেশ ইলিশ’ নামীয় জিআই সনদপ্রাপ্ত ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ রোল মডেল। দেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১%-এর অধিক। একক প্রজাতি হিসেবে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫.৬৫ লাখ মে.টন ইলিশের উৎপাদন হয়েছে; যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদনের (২.৯৯ লাখ মে.টন) চেয়ে ৮৫.৯৫% বেশি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৎস্যবান্ধব সরকার প্রান্তিক জেলে সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে দেশ কিছু যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তন্মধ্যে প্রকৃত জেলেদের শনাক্তকরণে আইডি কার্ড প্রদান, নিহত/আহত জেলেদের আর্থিক সহায়তার জন্য কোড সৃষ্টি, জেলেদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন অন্যতম। চলমান কার্যক্রমের আওতায় ১৬.৮০ লাখ জন জেলের নিবন্ধন এবং ১৪.২০ লাখ জন জেলের পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকালীন বিগত ১২ বছরে ৪,১১,৪০৭.৪৮ মে.টন এবং মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালীন বিগত ছয় বছরে ৫৬৫৪৭.৭০ মে.টন ভিজিএফ খাদ্যসহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
ব্লু-ইকোনমি এবং সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে বঙ্গোপসাগরে ১,১৮,৮১৩ বর্গকিমি. এলাকায় মৎস্য আহরণে আইনগত ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। হাতিয়া উপজেলাধীন নিঝুম দ্বীপ ও তৎসংলগ্ন ৩,১৮৮ বর্গ কিমি. এলাকাকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা এবং এর ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রক্রিয়াধীন। ‘গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মাছ আহরণে পাইলট’ শীর্ষক প্রকল্পটি মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছে, যা সুনীল অর্থনীতিতে নবদিগন্ত উন্মোচিত হবে। 
মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি এবং স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ মাছ সরবরাহ : নিরাপদ ও মানসম্পন্ন মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের উৎপাদন এবং মাননিশ্চিত করা মৎস্য অধিদপ্তরের অন্যতম ম্যান্ডেট। এ লক্ষ্যে দেশে চিংড়ি উৎপাদনের সকল স্তরে উত্তম মৎস্যচাষ অনুশীলন (এঅচ), এসওপি ম্যানুয়াল, প্রটোকল/গাইডলাইন্স ও হ্যাসাপভিত্তিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি কার্যকর করা হচ্ছে। বিশ্ববাজারে আর্থিক মন্দাবস্থা থাকা সত্ত্বেও ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫০টিরও বেশি দেশে ৭৬,৫৯১.৬৯ মে.টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৪০৮৮.৯৬ কোটি টাকা।
বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে এবং টেকসই ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ‘হালদা নদীর  প্রাকৃতিক  মৎস্য প্রজননক্ষেত্র উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’ অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
কোভিডকালীন চিংড়ি চাষি ও মৎস্য চাষিদেরকে প্রণোদনা প্রদান : ভ্রাম্যমাণ মাছ বিক্রয়কেন্দ্র/গ্রোথ সেন্টারের মাধ্যমে ৩৭৩০২.৭১৪ মে.টন মাছ বিক্রয় (বাজারমূল্য ৮৩০.৩০ কোটি টাকা); অনলাইনে মাছ বাজারজাতকরণের মাধ্যমে ৪০৪.৫৭৩ মে.টন মাছ বিক্রয় (বাজারমূল্য ৭.৫২ কোটি টাকা); ৪৭৫২ জন দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে ৬১৬৮ কেজি মাছ ত্রাণের সাথে বিতরণ করা হয়েছে। মৎস্য সেক্টরে কোভিড-১৯ এর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে এসসিএমএফ প্রকল্প থেকে ৭৭৮২৬ জন খামারিকে ৯৯.৭০ কোটি টাকা প্রণোদনা প্রদান এবং সরকার ঘোষিত ৫০০০ কোটি টাকা প্রণোদনার মধ্যে মৎস্যখাতে ৬৪৩৮ জন মৎস্যচাষিকে ১৫৩.৭২ কোটি টাকা প্রণোদনা (৪% সুদসহ ঋণ) প্রদান করা হয়েছে।
মৎস্যখাতের উন্নয়নে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা : নদীমার্তৃক বাংলাদেশ বিশাল জলসম্পদেসমৃদ্ধ এবং জলজ জীববৈচিত্র্যম-িত। দেশের জলজসম্পদ হলো অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়, যা নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর, কাপ্তাই লেক, প্লাবনভূমি, সুন্দরবন, উপকূলীয় মোহনা অন্তর্ভুক্ত এবং বদ্ধ জলাশয়ের মধ্যে আছে- পুকুর, দীঘি, বাঁওড়, চিংড়ি ঘেরের পাশাপাশি রয়েছে দক্ষিণে বিশাল সামুদ্রিক এলাকা- বঙ্গোপসাগর। সম্ভাবনাময় এ সেক্টরের সার্বিক উন্নয়নে নিম্নরূপ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। 
অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয় ব্যবস্থাপনা
সার্বিক পরিকল্পনা : ১) বিল ও অনুরূপ জলাশয়ের মাঝে কানেকটিভিটি উন্নয়ন, মাছের আবাসস্থল, নার্সারিক্ষেত্র, প্রজননক্ষেত্র, বিচরণক্ষেত্র, মাছের মাইগ্রেটরি রুট সংরক্ষণ ও সুরক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণ। ২) নির্দিষ্ট এলাকায় মাছের প্রজনন নির্বিঘœ করতে প্রজনন মৌসুমে মাছ আহরণ বন্ধ রাখা। ৩) বাস্তুসংবেদনশীল এলাকা জুড়ে মৎস্য ও জলজ অভয়াশ্রম স্থাপন; দেশি জাতের মাছের বংশবৃদ্ধি ও সংরক্ষণ নিশ্চিতকরণ। ৪) মার্কেট চেইন ডেভেলপমেন্টের জন্য বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তিন ক্যাটাগরির মডেল ফিস মার্কেট স্থাপন। মডেল ফিস মার্কেট স্থাপন ও মার্কেট চেইনের মাছের সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য সার্টিফাইড ফিস সাপ্লাইয়ার তৈরি। ৫) উপকূলীয় এলাকায় মৎস্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বাগদা চিংড়ি, হরিণা চিংড়ি, চাকা চিংড়ি, কুচিয়া ও কাঁকড়া চাষ সম্প্রসারণে উদ্যোগ গ্রহণ। ৬) সুন্দরবন এলাকায়            প্রাকৃতিক মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণে মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় সুন্দরবন সার্ভিলেন্স ও ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। ৭) সামুদ্রিক মৎস্য ব্যবস্থাপনায় জয়েন্ট ফিসারিজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার কার্যকরণ। ৮) দেশীয় বাজারে ভ্যালু অ্যাডেড ফিস প্রোডাক্ট তৈরির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাইলট প্রকল্প গ্রহণসহ সুপারসপ ও বিভিন্ন চেইনসপে ভ্যালু অ্যাডেড ফিস প্রোডাক্ট বিক্রয়ের জন্য উদ্বুদ্ধকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ। ৯) মাছ আহরণ নিষিদ্ধকালীন মৎস্যজীবীদের বিকল্প জীবিকায়নের ব্যবস্থাকরণ। ১০) কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জেলেদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ।
হাওর এলাকায় পরিকল্পনা : ১) হাওর এলাকার দেশীয় মৎস্য সংরক্ষণের জন্য ফিস কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। ২) হাওর এলাকায় প্রাক-যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে অন্যান্য সংস্থার সাথে সমন্বয়পূর্বক উপযুক্ত স্থানে খনন পরিকল্পনা গ্রহণের সহায়তা প্রদান। ভূমি পুনরুদ্ধার, ফিস পাস, ফিস ফ্রেন্ডলি অবকাঠামো তৈরি, মৎস্য অভয়াশ্রম তৈরি এবং মাছ সংরক্ষণের আওতায় আনয়নে উদ্যোগ গ্রহণ। ৩) হাওর এলাকায় দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে ইন-সিটো কনজারভেশনের ব্যবস্থা গ্রহণ। হাওর বেসিনে উপযুক্ত সংখ্যক হ্যাচারি স্থাপন এবং সার্টিফাইড মাছের পোনা অবমুক্তকরণ। ৪) ইকো ট্যুরিজমের অংশ হিসেবে হাওর ও সোয়াম্প এলাকায় ফিস ট্যুরিজমের প্রচলন। ৫) হাওর এলাকায় তিন মাস (বৈশাখ হতে আষাঢ়) পর্যন্ত মাছধরা নিষিদ্ধকরণ এবং মাছধরা হতে বিরত জেলেদের ভিজিএফ সহায়তা প্রদান। ৬) হাওর অঞ্চলে মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে সমাজভিত্তিক সহব্যবস্থাপনা জোরদারকরণ।
নদী এলাকায় পরিকল্পনা : ১) নদী এলাকায় দেশীয় মৎস্য সংরক্ষণে ফিস কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। ২) নদী এলাকায় প্রাক-যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে অন্যান্য সংস্থার সাথে সমন্বয়পূর্বক উপযুক্ত স্থানে খনন পরিকল্পনা গ্রহণ, ভূমি পুনরুদ্ধার, মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপন ও উন্মুক্ত জলাশয়ে সার্বিক ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণ। ৩) প্রজাতিভিত্তিক মাছগুলোর প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণ ও সংরক্ষণ।
সামুদ্রিক এলাকায় পরিকল্পনা : ১) সামুদ্রিক মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ব্যবস্থাপনায় যুগোপযোগী কার্যক্রম গ্রহণ এবং মাছের নার্সারি গ্রাউন্ডের সংরক্ষণ নিশ্চিতকরণ। ২) ভেটকি, মুলেট ও অন্যান্য উপকূলীয় চাষযোগ্য প্রজাতির চাষ প্রবর্তনে হ্যাচারি স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ। ৩) সামুদ্রিক শৈবাল, ওয়েস্টার ইত্যাদি চাষ সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণের ব্যবস্থা গ্রহণ। ৪) গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় মাছের ব্যবস্থাপনা ও আহরণ জোরদারকরণে ব্যবস্থা গ্রহণ। ৫) সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদকে গ্লোবাল অ্যাসেট হিসেবে পরিণতকরণে আন্তর্জাতিক মহলে গবেষণা কার্যক্রম ও যোগাযোগ বৃদ্ধিকরণ। ৬) ওটট ফিসিং রোধকরণে মেরিন সার্ভিলেন্স সেন্টার স্থাপন ও মনিটরিং বৃদ্ধিকরণ। ৭) সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের মজুদ নিরূপণ করে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন না করে অপটিমাম ফিসিং নিশ্চিতকরণ। ৮) বঙ্গোপসাগরে পর্যবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ।
অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয়ে মৎস্যচাষ : ১) মৎস্য খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকরণ এবং মৎস্যস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। ২) চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের আওতায় মৎস্যচাষে আইওটি ও এআই প্রবর্তনসহ আইপিআরএস, বটম ক্লিন সিস্টেম চালুকরণ। ৩) মৎস্যচাষে আইসিটি, সিআইএস, অ্যাপস উন্নয়ন ও ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান। ৪) উন্নত চাষ প্রযুক্তি গ্রহণে উৎসাহিত করার জন্য চাষি/উদ্যোক্তাদের জন্য উদ্দীপনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ। ৫) বেকার যুবক ও যুবমহিলাদের জন্য অধিকতর কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মৎস্যচাষে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ। ৬) দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদার নিরিখে মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের মাননিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদারকরণ। ৭) মাছ/চিংড়ি উৎপাদনের সকল স্তরে উত্তম মৎস্যচাষ অনুশীলন (এঅচ) ও হ্যাসাপভিত্তিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি কার্যকরকরণ। ৮) মাছ আহরণ পরবর্তী অপচয় কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ।
রপকল্প ২০৪১-এ সুখীসমৃদ্ধ উন্নত সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে এবং সুস্থ-সবল ও মেধাসম্পন্ন জাতি গঠনে সকলের ঐকান্তিক অংশগ্রহণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও দিকনির্দেশনায় মৎস্য অধিদপ্তর নিরলসভাবে কাজ করে যাবে- এটা মৎস্যষ্ট সবার দৃঢ়অঙ্গীকার।

লেখক : মহাপরিচালক, মৎস্য অধিদপ্তর, ঢাকা। ফোন : ২২৩৩৮২৮৬১, ই- মেইল : bfdc-64@yahoo.com