প্রশ্নোত্তর
কৃষিবিদ মো. তৌফিক আরেফীন
কৃষি বিষয়ক
নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য আপনার ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ও রোগ দমনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা
অনুসরণ করুন।
মো. তাহেরুল হক, গ্রাম: তাহেরপুর, উপজেলা: বাগমারা, জেলা: রাজশাহী
প্রশ্ন: লাউ গাছের কাÐ ফেটে আঠা বের হচ্ছে, কী করব?
উত্তর: লাউ গাছের কাÐ ফেটে গিয়ে আঠা বের হওয়া এ রোগকে গ্যামোসিস বা আঠাঝরা রোগ বলে। এ রোগ দমনে বোর্দোমিকশ্চার ব্যবহার করলে সুফল মিলে। এটি তৈরির জন্য ১০ গ্রাম তুঁতে, ১০ গ্রাম চুন ও ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে তৈরি করতে হয়। এ মিকশ্চারটি তৈরির পদ্ধতিটি হচ্ছে। প্রথমে মাটি বা প্লাস্টিকের একটি পাত্রে ১০ গ্রাম চুন ভালোভাবে গুড়ো করে নিতে হবে। এরপর আরেকটি পাত্রে ১০ গ্রাম তুঁতে ভালোভাবে গুড়ো করে নিতে হবে। তারপর প্রত্যেকটি পাত্রে ৫০০ মিলি পানি মিশিয়ে ভালো করে দ্রবণ তৈরি করতে হবে। তারপর দুটো পাত্রের দ্রবণটিকে আরেকটি পাত্রে ঢেলে একটা কাঠের কাঠি দিয়ে ভালো করে নাড়াচাড়া করে বিকেল বেলায় নিয়মমাফিক স্প্রে করতে হয়। বোর্দোমিকশ্চার তৈরির ১২ ঘন্টার
মধ্যে ব্যবহার করতে হয়। নাহলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না। বোর্দোমিকশ্চার ব্যবহার করা ছাড়াও আপনি সানভিট/ বিøটক্স প্রতি লিটার পানিতে ৪ গ্রাম ভালোভাবে মিশিয়ে রোগাক্রান্ত লাউ গাছে সঠিক নিয়মে স্প্রে করতে পারেন। তবেই আপনি কাক্সিক্ষত পানের ফলন পাবেন।
মো: সাইফুল হোসেন, গ্রাম: খাটুরিয়া, উপজেলা: গোবিন্দগঞ্জ, জেলা: গাইবান্ধা
প্রশ্ন: বেগুন গাছের ফল ও কাÐ পচে যাচ্ছে। কী করবো?
উত্তর: বেগুন গাছে এ ধরনের সমস্যাটি ফমোপসিস নামক প্রজাতির ছত্রাকের আক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। এ রোগে বেগুন গাছ আক্রান্ত হলে বেগুন গাছের কাÐ পচে যায় এবং ফলে কালো ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং ফল পচে যায়। এ রোগ প্রতিরোধে কার্বেনডাজিম গ্রæপের ছত্রাকনাশক ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে বেগুন গাছে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া বেগুন ক্ষেত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং একই জমিতে প্রতি বছর বেগুন চাষ না করা। এসব বিষয় মেনে চললে আপনি লাভবান হবেন।
মো. আলআমিন মৃধা, গ্রাম: তাম্বুলখানা, উপজেলা: ফরিদপুর সদর, জেলা: ফরিদপুর
প্রশ্ন: নতুন লিচু গাছ লাগালে অনেকে বলে পুরাতন গাছের নিচের মাটি এনে নতুন গাছের গোড়ায় দিতে। এর কি কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে?
উত্তর: নতুন লিচু কলমের চারা লাগালে পুরাতন গাছের গোড়া থেকে মাটি এনে নতুন গাছের গোড়াতে দিলে উপকার হয়। কারণ পুরাতন লিচু গাছের গোড়ার মাটিতে মাইকোরাইজা নামে এক ধরনের ছত্রাক থাকে। এরা লিচু গাছের শিকড়ের সাথে যুক্ত হয়ে মিথোজীবিতার মাধ্যমে মাটি থেকে পুষ্টি উপাদান
সংগ্রহ করে শিকড়ের মাধ্যমে লিচু গাছে সরবরাহ করে। মাটিতে মাইকোরাইজা থাকলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়। এসব বৈজ্ঞানিক কারণেই পুরাতন গাছের গোড়ার মাটি নতুন লাগানো লিচু গাছের গোড়াতে দিতে হয়।
মোঃ আকরাম হোসেন, গ্রাম: তিনিশপুর, উপজেলা: নরসিংদী সদর, জেলা: নরসিংদী
প্রশ্ন: ভুট্টার কাÐ পচারোধে কী করতে হবে?
উত্তর: খরিফ মৌসুমে এ রোগ বেশী হয়। এছাড়া জমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেশি ও পটাশের পরিমাণ কম হলে এ রোগের সম্ভাবনা বাড়ে। এ রোগে কাÐের নিচের দিকে নরম ও পানি ভেজা দাগ পড়ে পাশাপাশি রোগের আক্রমণে গাছের কাÐ পচে যায় এবং গাছ মাটিতে ভেঙে পড়ে। সুস্থ ও সবল বীজ বপন এবং সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করতে হবে। আক্রমণ মাত্রা বাড়লে কার্বেন্ডাজিম গ্রæপের ছত্রাকনাশক যেমন
অটোস্টিন অথবা কার্বোক্সিন ও থিরাম গ্রæপের প্রোভ্যাক্স ২০০ ডবিøউপি প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করলে এ রোগ দমন করা যায়। এছাড়া ডাইফেনোকোনাজল গ্রæপের স্কোর ২৫০ ইসি এক লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করলে আপনি সুফল পাবেন।
মোঃ রবিউল ইসলাম, গ্রাম: পাটগা মুন্সিপাড়া, উপজেলা: রানীশংঙ্কৈর, জেলা: ঠাকুরগাঁও
প্রশ্ন: পানিকচু গাছের করম পচে যায়। এ সমস্যায় করণীয় কী?
উত্তর: পানি কচু গাছের করম পচে গেলে গাছের পাতা হলুদ এবং গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। এছাড়া এক রকম কোনো ধরনের ফলন পাওয়া যায় না বললেই চলে। এ রোগ দমনে রোগমুক্ত এলাকা হতে চারা বা করম সংগ্রহ করতে হবে। পরিষ্কার চাষাবাদ ও শস্যাবর্তন করার পাশাপাশি ফসল কাটার পর ফসলের অবশিষ্টাংশ ধ্বংস করে ফেলতে হবে। আক্রমণের মাত্রা বেশি মনে হলে মেনকোজেব ও মেটালেক্সিল গ্রæপের যেকোন ছত্রাকনাশক যেমন রিডোমিল গোল্ড ২ গ্রাম লিটারপ্রতি ভালোভাবে মিশিয়ে স্প্রে করা হলে সুফল পাওয়া যায়। খেয়াল
রাখতে হবে উল্লিখিত ছত্রাকনাশকটি যেন ফসলের গোড়ার মাটি ভালোভাবে ভিজিয়ে দেয়। তবে মাটি ভিজানোর ১ দিন পর আবার পানি দেয়া যাবে। আরেকটি কথা মনে রাখতে হবে সেটি হলো ছত্রাকনাশক ছিটানোর সময় ডিটারজেন্ট যেমন সার্ফ বা হুইল পাউডার ৫ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে
স্প্রে করতে হবে নাহলে ছিটানো ছত্রাকনাশক পাতা থেকে গড়িয়ে পড়ে যাবে। এতে করে ছত্রাকনাশক ছিটানোর কাক্সিক্ষত সফলতা পাওয়া যাবে না। এসব ব্যবস্থা নিলে আপনার উপকার হবে।
মোঃ চান মিয়া, গ্রাম: করোলিয়া, উপজেলা: তেরখাদা, জেলা: খুলনা
প্রশ্ন: করলা গাছের কচি পাতায় এক ধরনের পোকা পাতার রস চুষে খায়। ফলে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়। কী করবো?
উত্তর: সাধারণত করলার জাব/জ্যাসিড পোকার আক্রমণ হলে এ সমস্যা হয়ে থাকে। এ পোকা দমনের জন্য জৈব বালাইনাশক যেমন বাইকাও ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া পোকার আক্রমণ বেশি হলে ইমিডাক্লোরপ্রিড গ্রæপের এমিটাফ বা টিডো বা এডমায়ার ০.৫ মিলি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে সঠিক নিয়মে স্প্রে করলে উপকার পাবেন।
মৎস্য বিষয়ক
মোঃ মাহবুবুর রহমান, গ্রাম: ফুলবাড়ি, উপজেলা: গোবিন্দগঞ্জ, জেলা: গাইবান্ধা
প্রশ্ন: কাতলা মাছের ফুলকার উপর বাদামি গুঁটি দেখা যাচ্ছে ও ফুলকা পচে যাচ্ছে। কিছু মাছ মারাও যাচ্ছে। কী করবো?
উত্তর: এ রোগের নাম মিক্সোবলিয়াসিস। মিক্সোবলাস প্রজাতির এক ধরনের এককোষী প্রাণী রুইজাতীয় মাছের বিশেষ করে কাতলা মাছের ফুলকার উপর সাদা বাদামি গুঁটি তৈরি করে। এতে করে ঐ গুঁটির প্রভাবে ফুলকায় ঘা দেখা যায় ও ফুলকা খসে পড়ে। শ^াস-প্রশ^াসের ব্যাঘাত ঘটার কারণে মাছ অস্থিরভাবে ঘোরাফেরা করে ও শেষ রাতের দিকে ব্যাপক মড়ক দেখা যায়। অদ্যাবধি এ রোগের কোন চিকিৎসা সরাসরি
আবিষ্কৃত হয় নি। তারপরও শতকপ্রতি ১ কেজি হারে চুন দিলে পানির অ¤øত্ব দূর হয়ে পরজীবীগুলো অদৃশ্য হয়ে যায় ও মাছ নিষ্কৃতি লাভ করে।
মোঃ আতাউর রহমান, গ্রাম: লখাইডাঙ্গা, উপজেলা: মণিরামপুর, জেলা: যশোর
প্রশ্ন: রুই মাছে সাদা দাগ রোগ হয়েছে। কী করলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবো?
উত্তর: এ রোগে মাছের পাখনা, কানকো ও দেহের উপর সাদা দাগ দেখা যায়। মাছের ক্ষুধামন্দা এবং দেহের স্বাভাবিক পিচ্ছিলতা লোপ পেয়ে খসখসে হয়ে যায়। ইকথায়োপথেরিয়াস প্রজাতি এ রোগের কারণ। এ রোগ প্রতিকারে ১ পিপিএম তুঁতে পানিতে গোসল দেয়া কিংবা শতকরা ২.৫ ভাগ লবণ পানিতে কয়েক মিনিটের জন্য রাখা যতক্ষণ পর্যন্ত মাছ লাফিয়ে না পড়ে। এছাড়া এ ধরনের রোগ যাতে না হয় সেজন্য শামুকজাতীয় প্রাণী পুকুর থেকে সরিয়ে ফেলা। শতকরা ২.৫ ভাগ লবণ পানিতে ৫-৭ মিনিট গোসল দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে পোনা মজুদ করতে হয়। তাছাড়া রোদে শুকনা জাল পুকুরে ব্যবহার করাও দরকার। আরেকটি বিষয় অনুসরণীয় সেটি হলো মাছের স্বাভাবিক সংখ্যা বজায় রেখে অতিরিক্ত মাছ সরিয়ে নেয়া।
প্রাণিসম্পদ বিষয়ক
সাধন কুমার সরকার গ্রাম: কেওয়াপূর্বখÐ, উপজেলা: উল্লাপাড়া, জেলা: সিরাজগঞ্জ
প্রশ্ন: আমার ছাগলের বয়স আড়াই বছর। বিভিন্ন জায়গার মাংস শক্ত হয়ে গেছে। দাঁতে কপাট লাগে এবং খিঁচুনি দেখা দেয়। কোন শব্দ শুনলে চমকে উঠে। এমতাবস্থায় কি করণীয়?
উত্তর: সাধারণত এ রোগের চিকিৎসায় তেমন ফল হয় না। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করতে পারলে ক্ষতস্থান অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে এবং মাংসে এটিএম ইনজেকশন দিতে হবে। এছাড়া উচ্চমাত্রায় পেনিসিলিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। মাংসপেশি শিথিল করার জন্য ক্লোরাল হাইড্রেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ইনজেকশন দিতে হবে। খাসি করানো বা অন্য কোন অস্ত্রোপচারের আগে ধনুষ্টংকার রোগের টিকা দিতে হবে। তাছাড়া স্বাস্থ্যসম্মতভাবে যে কোন অস্ত্রোপচার করতে হবে।
সেজুতি রাণী, গ্রাম: সুরগ্রাম, উপজেলা: গোপালগঞ্জ সদর, জেলা: গোপালগঞ্জ
প্রশ্ন: আমার বাছুরের বয়স ২ মাস। মুখ ফুলে গেছে। কিছু খেতে চাচ্ছে না। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। কিছু চাবাতে পারছে না। কী করণীয়?
উত্তর: আক্রান্ত বাছুরকে দ্রæত আলাদা ঘরে সরিয়ে ফেলতে হবে। বাছুরের খাবারপাত্র, পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। বাছুরের মুখে কোন কাটাছেঁড়া আছে কিনা দেখতে হবে। কোট্টিম ভেট বোলাস খাওয়াতে হবে অথবা জেন্টামাইসিন অথবা অক্সিটেট সাইক্লন গ্রæপের ইনজেকশন দিতে হবে পাশাপাশি এন্টিহিস্টামিনিক ইনজেকশন দিতে হবে। আশা করি আপনি উপকৃত হবেন। য়
(মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক প্রশ্ন কৃষি কল সেন্টার হতে প্রাপ্ত)
উপপ্রধান তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫, ফোন নং: ০২-৫৫০২৮৪০০, ই-মেইল:taufiquedae25@gmail.com