Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কৃষি পণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা

কৃষি পণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা
কৃষিবিদ মোঃ শাহজাহান আলী বিশ্বাস

বাংলাদেশের কৃষি বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের সহায়তায় খোরপোশের কৃষি থেকে বাণিজ্যিক কৃষিতে যাত্রা শুরু করেছে। এজন্য সরকার কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছে পাশাপাশি আধুনিক জাত সম্প্রসারণ উচ্চমূল্যের ফসলের আবাদ বৃদ্ধি, যান্ত্রিকীকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ, কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন, প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপনসহ বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এসব উদ্যোগের সুবিধা গ্রহণ করে কৃষিকে লাভজনক করতে হলে বিদ্যমান বাজারব্যবস্থায় কৃষকের অংশগ্রহণ সময়ের দাবি। এ বিষয়ে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সম্প্রতি ‘সদাই’ নামক একটি অ্যাপস চালু করা হয়েছে। যার সুবিধা উৎপাদক থেকে ভোক্ত পর্যায় সকলে গ্রহণ করতে পারে। তবে আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ কৃষক এসব বিষয়ে অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে।


বর্তমান বাজারব্যবস্থায় কৃষক তার পণ্য নিকটস্থ বাজারে নিয়ে এসে মধ্যস্বত্বভোগীদের খপ্পরে পড়ে খুব নিম্নমূল্যে পণ্য বিক্রয় করতে বাধ্য হয় । অথচ ঐ পণ্যটি কয়েক জন মধ্যস্বত্বভোগীর হাত ঘুরে খুচরা বাজার যখন আসে তখন একজন ভোক্তা ক্ষেত্রবিশেষে ৫/৬ গুণ অধিক মূল্যে পণ্য ক্রয় করতে বাধ্য হয়। পচনশীল ফল-ফসল, মৌসুমি সবজি এর অন্যতম উদাহরণ। এসব বৈরী ব্যবস্থা আমাদের বাজারব্যবস্থায় বিদ্যমান। এ অবস্থা কমিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য হ্রাস করে পণ্যের ন্যায্যমূল্যের প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাজারব্যবস্থায় কৃষক সংগঠনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।


* প্রতিটি বাজারকেন্দ্রিক কৃষকদের একটি সংগঠন থাকতে পারে। উক্ত সংগঠনটি কৃষকদের নিকট হতে তাদের কৃষি পণ্য সংগ্রহ করে নিকটস্থ পাইকারি বাজার অথবা ঢাকায় মোকামে সরবরাহ করবে।


* পাইকারি বাজারের কৃষি পণ্যের প্রতিদিনের মূল্যতালিকা সংগ্রহ এবং তা স্থানীয় বাজারে প্রদর্শিত হবে।


* পাইকারি বাজারে পণ্য সরবরাহের জন্য কৃষক তার পণ্যটি স্থানীয় বাজারের সংগঠনের কাছে সরবরাহ করে চলে যাবে। পণ্যটি বিকেলের মধ্যে পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়ে স্থানীয় বাজারের সংগঠনের কাছে টাকা আসবে। পরের দিন একইভাবে কৃষক তার পণ্য সংগঠনের কাছে সরবরাহ করে আগের দিনের প্রাপ্য টাকা নিয়ে যাবে। কৃষকের সাথে আলাপ করে পরিবহন খরচ ও এ কাজের পারিশ্রমিক বাবদ একটা অংশ সংগঠন রেখে বাকি অর্থ কৃষক পাবে।


* কোনো কারণে যদি পচনশীল পণ্য পাইকারি বাজারে সরবরাহ করা না যায় তবে বাজারপর্যায় সংরক্ষণের জন্য প্রতিটি বাজারকেন্দ্রিক ক্ষুদ্র একটি সংরক্ষণাগার থাকবে যেখানে পণ্যটি সাময়িকভাবে রাখার সুযোগ থাকবে।


* কৃষককে কৃষি পণ্য উৎপাদনের জন্য সহজ শর্তে এবং স্বল্পসুদে ঋণের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
এভাবে যদি প্রতিটি বাজারকেন্দ্রিক একটি কৃষক সংগঠনের মাধ্যমে কৃষি পণ্য স্থানীয়পর্যায় থেকে পাইকারি বাজারে সরবরাহের/বিক্রয়ের বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় তবে কৃষক তার পণ্যের ন্যায্যমূল্য যেমন পাবে পাশাপাশি মধ্যস্বত্ব ভোগীদের দৌরাত্ম্য কমবে এবং এ ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত কৃষকদের একটি অংশের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে এবং ভোক্তাপর্যায়ে অপেক্ষাকৃত কমমূল্যে পণ্য সংগ্রহ করতে পারবে।


* এ ব্যবস্থায় কৃষক জানতে পারবে তার পণ্যটি পাইকারি বাজারে কত টাকায় বিক্রি হলো, পরিবহন এবং সেবার জন্য কত টাকা রাখা হলো এবং কত টাকা সে নিজে পাবে। উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক মানিকগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার গোলরা বাজারে একজন কৃষক ঢেঁড়স বিক্রি করতে এসেছেন। বর্তমান বাজারব্যবস্থায় সে হয়তো  ১০ টাকা কেজি ঢেঁড়স বিক্রি করছেন, যা ঢাকায় কাওরান বাজারে ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে এবং খুচরা দোকানে ভোক্তাপর্যায়ে ৫০ টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে।


আলোচ্য বাজারব্যবস্থায় এখন সে জানতে পারবে ঢেঁড়স কাওরান বাজারে ৩০ টাকায় বিক্রি হবে, যা গোলরা বাজারে প্রদর্শিত হবে। পরিবহন এবং সেবা কাজের জন্য নিয়োজিত কর্মীর পারিশ্রমিক বাবদ ১০ টাকা খরচ হবে এবং কৃষক ২০ টাকা হিসাবে দাম পাবে, ফলে কৃষক অধিক লাভবান হবে।


উপরে উল্লিখিত প্রস্তাবনাটি একান্ত আমার নিজস্ব চিন্তাভাবনাপ্রসূত। এটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা হতে পারে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে বা বাজার ব্যবস্থাপনায় বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা বিষয়টি ভেবে দেখতে পারেন। পাশাপাশি সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে বিষয়টি ভেবে দেখতে পারেন। মূলত যে কোনোভাবে হোক বাজার ব্যবস্থাপনায় কৃষকের নিজস্ব অংশগ্রহণের মাধ্যমে তার ন্যায্যমূল্যের প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

লেখক : পরিচালক, কৃষি তথ্য সার্ভিস। টেলিফোন : ৫৫০২৮২৬০, ই-মেইল : dirais@ais.gov.bd