Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পরিবেশ সুরক্ষায় সুন্দরবনের ব্লু কার্বন

পরিবেশ সুরক্ষায় সুন্দরবনের ব্লু কার্বন

ড. আসম হেলাল উদ্দীন আহম্মেদ সিদ্দীকি
সুন্দরবন হচ্ছে অক্সিজেনের কারখানা। যা মানবদেহের ফুসফুসের ন্যায় কাজ করে। বায়ুমÐলে কার্বন ডাই-অক্সাইড গাছ গ্রহণ করে বিশুদ্ধ অক্সিজেন ত্যাগ করে। পৃথিবীর বায়ুমÐলকে গ্রহণ উপযোগী করে তোলে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা উষ্ণায়ন প্রশমন করে থাকে। বায়ুমÐলের কার্বন- ডাই-অক্সাইড পরিবর্তিত করে পাতার মাধ্যমে সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় জৈব যৌগে রূপান্তরের পদ্ধতিই হলো কার্বনের আত্মীকরণ। অন্য কথায় সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অন্ধকার দশার পরিবেশ থেকে গৃহীত কার্বন ডাই-অক্সাইড উদ্ভিদ কোষে অবস্থিত রাইবুলোজ ডাই ফসফেট এর সঙ্গে বিক্রিয়া করে ফসফোগিøসারিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে; যা পরপর কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে। এভাবে সবুজ উদ্ভিদ কোষে ঈঙ২ এর কার্বন কোষসহ যৌগ অঙ্গীভূত হওয়াকে কার্বন আত্মীকরণ বুঝায়।
প্রতিনিয়ত বায়ুমÐলে ঈঙ২ এর পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। সুন্দরবনের বিশাল আয়তনের বনভূমির গাছপালা, প্রকৃতির সবুজ বৃক্ষ, সায়ানো ব্যাকটেরিয়া এবং বøু গ্রিন এ্যালজি বাতাসে ঈঙ২ এর আত্মীকরণের মাধ্যমে শর্করা উৎপাদন করে কার্বন আত্মীকরণ করে থাকে। যা বনভ‚মি তথা গাছপালা এবং পরিবেশ সুরক্ষায় সহায়ক। কার্বন আত্মীকরণ বিশ্লেষণে জানা যায় মূলের মোট ওজনের ৪৩-৪৫ শতাংশ, কাÐের মোট ওজনের     ৪২.৪-৪৩.০৫ শতাংশ এবং পাতার মোট ওজনের ৪২.০৯-৪২.৫ শতাংশ কার্বন থাকে। নিচে সারণি-১ এ  কার্বন আত্মীকরণ বিশ্লেষণের তথ্য প্রদর্শিত হয়েছে। সুন্দরবনের মাটিতে জৈব কার্বন প্রিমনসুনে ০.৫১% এবং বর্ষার পর মৌসুমে ০.৬৫%। এক গবেষণা তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায় সুন্দরবনে মাটির উপর ৩৬.২৪ ঞম (ঞবৎধমৎধস) কার্বন এবং মাটির নিচে ৫৪.৯০ ঞম কার্বন সব মিলে ৯১.১৯ ঞম কার্বন সঞ্চিত আছে।
সুন্দরবনের কম লবণাক্ত অঞ্চলের মিঠা পানির বনে সুন্দরী গাছ বেশি পরিমাণে কার্বন আত্মীকরণ করে থাকে। যার মাত্রা ৫৪.৬০ ঞম কার্বন। অপর পক্ষে তীব্র লবণাক্ত অঞ্চলের বনের কার্বনের পরিমাণ খুবই কম মাত্র ১৯.৯০ ঞম কার্বন । ধারণা করা হচ্ছে আগামী ১০০ বছরের মধ্যে মিঠাপানি এলাকার বনভূমির কার্বন আত্মীকরণের পরিমাণ ২২.৪২ ঞম কমে যাবে এবং লবণাক্ত এলাকায় ৮.২০ ঞম কার্বন বৃদ্ধি পাবে।
এ বিষয়ে আরো তথ্য পাওয়া গেছে যে আগামী ২১১৫ সালের মধ্যে সুন্দরবনের কম এবং তীব্র লবণাক্ত এলাকায় ৫১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার কার্বন হারিয়ে যাবে এবং ৫৮.২৮ ঞম কার্বন হাওয়া হয়ে যাবে।
জৈব কার্বন ম্যানগ্রোভ এবং জলাভূমিতে নিপতিত থেকে বøু কার্বন ভাÐার নামে বৈষ্ণিক কার্বন আত্মীকরণের মাধ্যমে উপক‚লীয় বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ করছে। ফলে বন ধ্বংস ও উজাড় করণের কিছুটা হলেও নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে। জৈব কার্বন ডাই অক্সাইড, বাই কার্বনেট প্রভৃতি আকারে সঞ্চিত হয়ে সামুদ্রিক বায়ুমÐলের ভারসাম্যতা আনায়নে সহযোগিতা করে থাকে। বায়ুমÐল হতে কার্বন আত্মীকরণের মাধ্যমে বনভূমিতে এবং বনভূমি হতে পাতা ও শিকড়ের মাটিতে নিপতিত হয় আবার বনভূমি  হতে কিছু পরিমাণ কার্বন পুনরায় বায়ুমÐলে ফিরে যায় চক্রাকারে।
সুন্দরবনসহ বনভূমির বাতাস কার্বন আত্মীকরণের বিশাল আধার। সুন্দরবনের বনভূমির কম লবণাক্ত অঞ্চলে সুন্দরী বৃক্ষ সমৃদ্ধ এলাকায় আত্মীকরণকৃত কার্বনের পরিমাণ ৪৫.৬০ ঞম এবং মৃদু লবণাক্ত অঞ্চলের সুন্দরী, বাইন ও কাঁকড়া সমৃদ্ধ এলাকায় আত্মীকরণকৃত কার্বনের পরিমাণ ৩০.৬৯ ঞম এবং তীব্র লবণাক্ত অঞ্চলের গেওয়া-গরান সমৃদ্ধ এলাকায় আত্মীকরণকৃত কার্বনের পরিমাণ ১৪.৯০ ঞম । সারণি-২ এ সুন্দরবনের আত্মীকরণকৃত মোট কার্বনের পরিমাণের তথ্য প্রদর্শিত হয়েছে।
সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের এক গবেষণা তথ্যে জানা যায় বিভিন্ন অবস্থানে বিভিন্ন প্রজাতির ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের মাটির উপর, মাটির নিচে কার্বনের শতকরা মোট অবদানের ব্যপক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। মোট কার্বন পার হেক্টরে  বিভিন্ন অবস্থানে বিভিন্ন ম্যানগ্রোভ প্রজাতির মধ্যে তারতম্য ঘটে। এখানে উল্লেখ্য সুন্দরবনের কম লবণাক্ত এলাকার উদ্ভিদরাজি তুলনামূলকভাবে অন্য এলাকার চেয়ে বেশি কার্বন আত্মীকরণ করে থাকে। বৈষ্ণিক অর্থনীতিতে সুন্দরবনের বøু কার্বন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ সুন্দরবন হতে বায়ুমÐলীয় কার্বন আত্মীকরণের মূল্য ২.২৬ বিলিয়ন ইউ এস ডলার প্রতি বছর। সুন্দরবনের মাটির উপর, মাটির নিচে এবং মোট বøু কার্বন স্টক ৯১.১৯ ঞম । যা কম লবণাক্ত এলাকার বনভূমিতেই সর্বাধিক। গাছ ও কাঠের মধ্যে কার্বন সংগৃহীত থাকে যা বায়ুমÐলের উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। সুতরাং কার্বন আত্মীকরণে বনভূমি তথা গাছ-পালার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ আলোচনা হতে স্বভাবতই বলা চলে সুন্দরবনের বøু কার্বন বাংলাদেশ তথা বিশ্ববাসীর এক অমূল্য সম্পদ।য়

বিভাগীয় কর্মকর্তা, ম্যানগ্রোভ সিলভিকালচার বিভাগ, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, খুলনা, মোবাইল : ০১৭১৮৫০৩৪৪৯     
ই-মেইল : dhelalrobfri@yahoo.com