Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ছাদে ছাগল পালন সাথে হাইড্রোপনিক ঘাস চাষ

ছাদে ছাগল পালন সাথে হাইড্রোপনিক ঘাস চাষ
ডা: মনোজিৎ কুমার সরকার

শহরে ছাগল পালনের জন্য বাসার ছাদকে ব্যবহার করা সম্ভব। ছাদ বাগানের জন্য প্রচুর পরিমাণে জৈবসার প্রয়োজন, যা ছাগলের মল থেকে সহজেই পাওয়া সম্ভব। ছাদ বাগানের লতাপাতা, বাসার উচ্ছিষ্ট খাদ্য, ছাগলের খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। উচ্চতা ছাগল পালনের জন্য কোন সমস্যা হবে না।
ছাগল শুধু গরিবের গাভী নয় ধনীদেরও গাভী। ছাগল উৎপাদন করে গ্রামের দরিদ্র মানুষ আর ভোগ করে শহরের বিত্তশালী মানুষ। ছাগলের মাংসের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে মূল্য ৭০০-৮০০ টাকা কেজি। দেশে ছাগলের মাংসের চাহিদা পূরণ করতে হলে শহরের ছাদকে আমরা ব্যবহার করতে পারি।
ছাগল পালন করা খুবই সহজ কাজ, খাদ্য খরচ কম, রোগ বালাই কম, বংশবৃদ্ধির হার বেশি, ছাগল ছোট প্রাণী হওয়ায় ছাদে উঠানো ও নামানো সহজ হবে।
ছাদে ঘর তৈরি
প্রতিটি ছাগলের জন্য ৫-৬ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন। ছাগলের সংখ্যা ও ছাদের আকার অনুযায়ী ঘর তৈরি করতে হবে। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় ও ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করে আরামদায়ক পরিবেশ প্রদান করতে হবে। ছাগলের  সংখ্যা অনুযায়ী কম খরচে মাচা তৈরি করতে হবে। ছাদের নিরাপত্তা প্রাচীর ৩-৪ ফুট উঁচু করে বানাতে হবে, যাতে লাফিয়ে পড়ে না যায়। প্রয়োজনে প্লাস্টিক নেট ব্যবহার করা যাবে। ছাদে ঘর তৈরির জন্য সিমেন্ট সিট ব্যবহার করা ভাল, ঘর ঠাণ্ডা থাকবে, প্রয়োজনে ককসিট দিয়ে ছাদ দিতে হবে। ঘর দোচালা করাই ভাল।
উপযুক্ত জাত
ছাদে পালনের জন্য ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলই উপযুক্ত, আকারে মাঝারি, কষ্টসহিষ্ণু খাদ্য গ্রহণে বাদ-বিচার করে না, রোগবালাই কম, বছরে ২ বার বাচ্চা দেয়। দেশি ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের রং কালো, সাদা-কালো, খয়েরি হতে পারে। শিং ও কান ছোট, ওলান বড়। ২০০-৩০০ মিলি. দুধ দেয়। ২-৩ মাস পর্যন্ত দুধ দেয়। প্রথমবার ছাগী ১টি পরে ২-৩টি পর্যন্ত বাচ্চা দেয়। ছাগল জবাই করার পর ৪৫-৪৭% মাংস পাওয়া যায়। ছাগী গরম হলে প্রজনন করানোর জন্য সঙ্গে ১টি পাঠা পালন করা যেতে পারে অথবা পাঠা পালনকারীর মোবাইল নং রাখতে হবে। প্রজননের ঝামেলা এড়াতে শুধু খাসি সংগ্রহ করে পালন করা যেতে পারে।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা
প্রতিটি ছাগলের জন্য দৈনিক ৩০০-৫০০ গ্রাম দানাদার খাদ্য মিশ্রণ, ১-২ কেজি কাঁচা ঘাস বা লতাপাতা ও ১-১.৫ লিটার পানি সরবরাহ করতে হবে। দানাদার খাদ্য মিশ্রণ ফরমুলা সারণি-১ দ্রষ্টব্য।
সতর্কতা : ছাগলকে বেশি পরিমাণে ভাত, পোলাও, চাল, গম, আলু খাওয়ালে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়বে। নবজাত বাচ্চাকে প্রতিটি ৩০০-৫০০ মিলি. দুুধ খাওয়াতে হবে। প্রয়োজনে মিল্ক রিপ্লেসার খাওয়াতে হবে। দুধ ছাড়ানোর পর পরিমাণ মতো দানাদার খাদ্য খাওয়ালে গড়ে দৈনিক ৫০-৬০ গ্রাম করে ওজন বৃদ্ধি পাবে। এক বছরের মধ্যে ১৮-২০ কেজি ওজনের হতে পারে। পাঠাকে দানাদার ও ঘাসের পাশাপাশি দৈনিক ২০ গ্রাম অংকুরিত ছোলা দেয়া উচিত। খাদ্য খাওয়ানোর সময় সারণি-২ দ্রষ্টব্য।
খাবার পাত্র দৈনিক পরিষ্কার করতে হবে। সকালে-বিকেলে ছাগলের আচরণ পরীক্ষা করতে হবে।
ছাদে ছাগল পালনে সবুজ ঘাসের চাহিদা পূরণ করতে খুব সহজেই হাইড্রোপনিক ঘাসের চাষ করা যায়।
হাইড্রোপনিক ঘাস চাষ পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে মাটি ও জমি ছাড়াই ঘাস উৎপাদন করা হয়, সব ধরনের খামারি এ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। উৎপাদিত ঘাসে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে। উৎপাদন খরচও খুব কম, প্রতি কেজি   ২-৩ টাকা। ঘরের ছাদে, ঘরের ভেতরে, বারান্দায়, মাটির পাতিল, পানির বোতল ইত্যাদি উপযুক্ত জায়গায় উপযুক্ত বীজ যেমন : ভুট্টা, গম, ছোলা, সয়াবিন, খেসারি, মাসকলাই এবং বার্লি প্রভৃতি বপন করা যেতে পারে।
উৎপাদন পদ্ধতি
বীজ ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর পানি ঝরিয়ে ভেজা চটের বস্তা বা কালো কাপড়ে বেঁধে ২৪ ঘণ্টা অকারে রাখতে হবে। নির্ধারিত টিন, প্লাস্টিক বা কাঠের তৈরি ট্রেতে বীজ বিছিয়ে দিয়ে ২ দিন কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে, যেন আলো বাতাস না লাগে, কাপড় সর্বদা ভিজা রাখতে হবে। তৃতীয় দিন কাপড় সরিয়ে আধা ঘণ্টা পরপর পানি ছিটাতে হবে। বাঁশ বা কাঠ দিয়ে তাক বানিয়ে ট্রেগুলো সাজিয়ে রাখা যায়। ৯ দিন পর ৭-৮ কেজি কাঁচা ঘাস পাওয়া যাবে। ৫ বিঘা জমিতে যে পরিমাণ ঘাস উৎপাদন হয়, মাত্র ৩০০ বর্গফুট টিন শেডে সমপরিমাণ ঘাস উৎপাদন সম্ভব।

ছাগলে রোগবালাই
ছাগলের রোগবালাই কম, ছাদে পালন করলে রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আরও কম। পিপিআর, বসন্ত একথিওমা, ক্ষুরারোগ, ওলান পাকা রোগ, চর্মরোগ, কৃমি, উকুন, সর্দিকাশি, আমাশয়, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি রোগ হয়ে থাকে।
বছরে ১ বার পিপিআর ও ২ বার ক্ষুরা রোগের টিকা দিতে হবে। ৪ মাস পরপর কৃমিনাশক বড়ি খাওয়াতে হবে।
দেশের সকল উপজেলায় ব্ল্যাকবেঙ্গল জাতের ছাগল উন্নয়ন প্রকল্প উন্নতমানের পাঠা সরবরাহ নিশ্চিত করেছে। যে কোনো সমস্যায় নিকটস্থ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে। য়
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, কাউনিয়া, রংপুর। মোবাইল : ০১৭১৫২৭১০২৬, ই-মেইল : drmonojit66@gmail.com