Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বসতবাড়িতে সবজি বাগান ব্যবস্থাপনা

বসতবাড়িতে সবজি বাগান ব্যবস্থাপনা
কৃষিবিদ মো: আনিছুর রহমান
বর্তমান সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে   কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান বৈশি^ক পরিস্থিতির খাদ্য নিরাপত্তার মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ‘এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না। আর এ জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে কৃষির প্রতিটি সুযোগ নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। বসতবাড়ির আঙ্গিনায় বা আশেপাশের জমিতে সারা বছর ধরে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ধরনের যে শাকসবজি চাষ করা হয় তাকে বসতবাড়ির সবজি বাগান বলে। বসতবাড়ির সবজি বাগান থেকে পরিবারের সদস্যদের সবজি খাবারের ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করাসহ বাড়তি সবজি বিক্রি করে আয় করা যায়।
বসতবাড়িতে সবজি চাষের গুরুত্ব : সারা বছর বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষ করা যায়। সারা বছর টাটকা ও বিষমুক্ত শাকসবজি খাওয়া যায়। পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়। পুষ্টির দিক থেকে প্রায় সকল শাকসবজি উন্নত মানসম্পন্ন হয়ে থাকে। বাড়ির কিশোর-কিশোরীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। পতিত জমির সর্বত্তোম ব্যবহার হয়। বস্তা পদ্ধতিতে অল্প জায়গায় সারা বছর ধরে সবজি চাষ করা যায়। বাড়তি শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। উৎপাদন সহজ ও তুলনামূলকভাবে খরচ কম। প্রয়োজন মতো সবজি পাওয়া যায় এবং ক্রয় করার দরকার হবে না।
বসতবাড়িতে সবজি চাষের সুযোগ ও সম্ভাবনা : বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি বসতবাড়িতেই ফসলের উপযোগী ইকো-সিস্টেম রয়েছে। বাংলাদেশে আনুমানিক ১৭.৫ মিলিয়ন বসতবাড়ি রয়েছে যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসবজি ও ফল উৎপাদন করে সংশ্লিষ্ট পরিবারের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এর মধ্যে মাত্র ১৩ ভাগ গৃহচত্বর সবজি চাষের আওতায় এসেছে। বসতবাড়িতে পরিকল্পিত লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবজির বাগান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পারিবারিক খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন, পারিবারিক পুষ্টি পূরণ করা সম্ভব। পরিবারের সকল সদস্যের শ্রম, সময় উৎপাদন কাজে লাগিয়ে স্ব-স্ব কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার সম্ভাবনাও আছে। এমনকি বসতবাড়ির সবজি বাগানের মাধ্যমে বিদ্যমান সম্পদের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহার করে পরিবেশ সংরক্ষণেরও অসীম সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান সরকার একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমেও পুষ্টি চাহিদা পূরণে কাজ করছে। এ ছাড়াও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ইউনিয়ন পর্যায়ে সবজি বাগান সৃজনের প্রকল্প চলমান রয়েছে।
বছরব্যাপী সবজি চাষের মডেল
আমাদের দেশের কৃষক ও কৃষিবিদগণ বসতবাড়িতে বছরব্যাপী সবজি উৎপাদনের বহু মডেল আবিষ্কার করেছেন। যেমন-কালিকাপুর মডেল, গয়েশপুর সবজি উৎপাদন মডেল, সৈয়দপুর মডেল, রংপুর, লেবুখালী মডেল, পটুয়াখালী, পালিমা মডেল, টাঙ্গাইল, ঈশান গোপালপুর মডেল, ফরিদপুর, বরেন্দ্র মডেল, রাজশাহী, গোলাপগঞ্জ মডেল, খাগড়াছড়ি মডেল, নারিকেলি মডেল ইত্যাদি। প্রতিটি মডেলেই বাড়ির যথাস্থানে সবজি চাষ করে জমির সুষ্ঠু ব্যবহার করা সম্ভব।
কালিকাপুর মডেলে সবজি বিন্যাস সবজি বাগানের পাঁচ খ- জমিতে বা বেডে যে পাঁচটি সবজি সারা বছর বিন্যাস অনুসরণ করা হয়, এখানে সেগুলোর একটি তালিকা দেওয়া হলোঃ
১. প্রথম খ-ের বিন্যাস    :    মুলা/টমেটো/লালশাক/ লালশাক-ঢেঁড়স
২. ২য় খ-ের বিন্যাস    :    লালশাক + বেগুন- লালশাক-ঢেঁড়স
৩. তৃতীয় খ-ের বিন্যাস    :    পালংশাক-রসুন/লালশাক-উাঁটা- লালশাক
৪. চতুর্থ খ-ের বিন্যাস    :     বাটিশাক-পেঁয়াজ/গাজর-কলমিশাক, লালশাক
৫. পঞ্চম খ-ে বিন্যাস    :     বাঁধাকপি- লালশাক-করলা- লালশাক
তবে কালিকাপুর সবজি মডেলে শুধু বসতবাড়ির উন্মুক্ত স্থানের কথা বলা হয়েছে। বসতবাড়ির অন্যান্য স্থানগুলো পতিত থাকে। এ সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে পরবর্তীতে সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, বিএআরআই, পাবনার বিজ্ঞানীরা বসতবাড়ি ৯টি উৎপাদন একক বিবেচনা করে সারা বছর ৩৩ রকমের সবজি ও ফল উৎপাদনের মডেল উদ্ভাবন করেন যা বর্তমানে গয়েশপুর সবজি উৎপাদন মডেল হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। এই মডেলটিই বর্তমানে প্রচলিত। গয়েশপুর সবজি উৎপাদন মডেল সারণি-১ দ্রষ্টব্য।
এই মডেলের সাথে আরো কিছু যোগ করা যেতে পারে। যেমন কোন বসতবাড়িতে উল্লেখিত স্থানগুলো না থাকলে অতি স্বল্প স্থানেও একটির উপরে আরেকটি সবজি অর্থাৎ ভার্টিক্যাল সবজী

বাগান করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, বস্তায় সবজি চারা রোপণ করে পাকা বসতবাড়ির বারান্দায় এমনকি টয়লেটের স্লাবের উপর রেখে বস্তায় সবজি চাষ করা যেতে পারে। একে বস্তা পদ্ধতি বলে।
সবজি চাষে জায়গা নির্বাচন
সবজি রোপণ বা বপণের জন্য বসতবাড়ির বিভিন্ন স্থান নির্বাচনকে হোমস্টেড স্পেস প্লানিং বা বসতবাড়ি স্থান পরিকল্পনা বলে। বসতবাড়িতে সবজি চাষের জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো কোন স্থানে কোন সবজিটি করতে হবে। জায়গা নির্বাচনের জন্য কতকগুলো বিবেচ্য বিষয় আছে। সবজি চাষের জন্য এই বিষয়গুলো অবলম্বন করতে হবে। যেমন- বসতবাড়ির উঁচু জায়গা (যেখানে বৃষ্টি/বন্যার পানি দাঁড়ায় না এবং নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা আছে)। জমিতে পানি সেচ দেওয়ার জন্য ও নিষ্কাশনের সুবিধা থাকতে হবে। সারাদিনই কমবেশি সূর্যের আলো পড়ে এমন জমি সবজি চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। বড় গাছ বা বাড়ির ঘরের ছায়া যাতে জমিতে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সবজি চাষের জন্য এঁটেল দো-আঁশ ও বেঁলে  দো-আঁশ মাটি নির্বাচন করতে হবে। বস্তা এমন জায়গায় স্থাপন করতে হবে যেখানে সূর্যের আলো পড়ে।
দেশের ৬৮ হাজার গ্রামে যে বসতবাড়ি আছে সেই বসতভিটার সম্ভাব্য সকল স্থানে সবজি বপন ও রোপণ করলে আমরা নিজেদের পুষ্টির প্রয়োজন মেটাতে পারি, তদুপরি অতিরিক্ত সবজি বিক্রি করে আয় করতে পারি। টেকসই খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় বসতবাড়িতে সবজি বাগান ব্যবস্থাপনার ক্ষুদ্র প্রয়াস।

লেখক : টেকনিক্যাল এডভাইজার (সবজি ও ফল বিশেষজ্ঞ), সহযোগী সংস্থা, মোবাইল : ০১৭৩০০৭৩৩১২, ই-মেইল : anisurbd07@yahoo.com