Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

লোনা মাটিতে ধান চাষ প্রযুক্তি

লোনা মাটিতে ধান চাষ প্রযুক্তি
মৃত্যুঞ্জয় রায়
ধান বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফসল। উপকূলীয় অঞ্চলসহ সারাদেশেই বিভিন্ন পরিবেশে নানা জাতের ধান চাষ করা হয়। এ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের আয়তন বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় ২০ শতাংশ এবং এ অঞ্চলে রয়েছে দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ আবাদি জমি। এ জমিতে প্রধানত আমন ধানের চাষ করা হয়। আমন মৌসুমে সাধারণত বৃষ্টির কারণে লবণাক্ততা দেখা যায় না, লবণাক্ততা দেখা যায় বোরো মৌসুমে।
সমস্যা হলো, অন্যান্য রবি ফসলের তুলনায় বোরো ধান চাষে পানি বেশি লাগে। শুষ্ক মৌসুমে উপকূলীয় অঞ্চলের অনেক জমি স্বাদু পানির অভাবে পতিত পড়ে থাকে। এ মৌসুমে নদ-নদী ও খালের পানিও লবণাক্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে বোরো ধানের লবণাক্ততা সহনশীলতার মাত্রাকেও অনেক সময় ছাড়িয়ে যায় (>৪ ডিএস/মিটার)। তাছাড়া সব জাত লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে না। গবেষণায় বোরো ধানে লবণাক্ততাজনিত কারণে ফলন ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে প্রায় ২৩%।
এসব কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে বোরো ধান চাষ করা ঝুঁকিপূর্ণ। এর পরিপ্রেক্ষিতে লবণাক্ততা পরিস্থিতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে বিবেচনা করে উপকূলীয় অঞ্চলে বোরো ধান চাষ সম্প্রসারণের জন্য কিছু বিশেষ কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে, যেমন-(১) লবণাক্ততা সহনশীল জাতের চাষ, (২) বীজ বোনার সময় পরিবর্তন, (৩) স্বাদু বা স্বল্প লবণাক্ত পানি দ্বারা সেচের ব্যবস্থা করা। উপকূলীয় জমিতে এই তিনটি কৌশল অবলম্বন করে বোরো ধানের চাষ ও উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
লবণাক্ততা সহনশীল জাতের চাষ
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) কয়েকটি লবণাক্ততা সহনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে যেগুলো বোরো মৌসুমে উপকূলীয় লবণাক্ততাপ্রবণ এলাকায় চাষ করা যায়।
উপকূলীয় খুলনা অঞ্চলে বর্তমানে বোরো মৌসুম ব্রি ধান৬৭, ব্রি ধান৯৭, ব্রি ধান৯৯, বিনা ধান-৮, বিনা ধান-১০, বিনা ধান-২৪ ইত্যাদি এবং আমন মৌসুম ব্রি ধান৪১, ব্রি ধান২৩, ব্রি ধান৭৩, ব্রি ধান৭৮ ইত্যাদি জাতের চাষ হচ্ছে। অধিকাংশ জমিতে এখন এসএল-৮, শক্তি-২, সিনজেনটা-১২০১, সিনজেনটা-১২০৩, হীরা-১৯, এসিআই-৬, তেজগোল্ড, ছক্কা ইত্যাদি হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করা হচ্ছে।  
সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরিশালসহ বন্যাপ্রবণ এলাকার কৃষকদের অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনতে এ জাতগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বীজ বোনার সময় পরিবর্তন
বোরো ধানের বীজ বোনার সময় পরিবর্তন করে লবণাক্ততার প্রভাব কিছুটা কমানো যায়। খুলনার দাকোপ উপজেলায় এ বিষযে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গবেষণায় ১৫ অক্টোবর থেকে ৩০ ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে ১৫ দিন পর পর তিনটি জাতের (ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান৬৭ ও বিনা ধান-১০) বীজ ৬ বারে বপন করে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় ৪৫ দিন বয়সের চারা ২০ সেন্টিমিটার ী ২০ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারি করে রোপণ করা হয়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সুপারিশকৃত সারের মাত্রা অনুযায়ী সার প্রয়োগ করা হয়। গবেষণায় ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে বপন করা বীজ থেকে তুলনামূলকভাবে ভালো ফলন পাওয়া যায়, ৩০ নভেম্বরে বোনা বীজ থেকে সবচেয়ে বেশি ফলন পাওয়া যায়। উল্লেখ্য ব্রি ধান ২৮ ও ব্রি ধান৬৭ জাতের জন্য ব্রি সুপারিশকৃত বীজ বোনার সময় যথাক্রমে ১৫-২৯ নভেম্বর ও ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর। গবেষকদের অভিমত হলো, এ সময়ে বোরো ধানের বীজ বুনে এই তিনটি জাতের হেক্টর প্রতি ফলন ৬ টনের কাছাকাছি পাওয়া গেছে। কিন্তু দেরি করে বীজ বুনলে বোরো ফসল অধিক লবণাক্ততার ঝুঁকিতে পড়ে ও ফলন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
স্বাদু বা স্বল্প লবণাক্ত পানি দ্বারা সেচের ব্যবস্থা করাঅঈলোনা মাটিতে ধান চাষ প্রযুক্তি
মৃত্যুঞ্জয় রায়
ধান বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফসল। উপকূলীয় অঞ্চলসহ সারাদেশেই বিভিন্ন পরিবেশে নানা জাতের ধান চাষ করা হয়। এ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের আয়তন বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় ২০ শতাংশ এবং এ অঞ্চলে রয়েছে দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ আবাদি জমি। এ জমিতে প্রধানত আমন ধানের চাষ করা হয়। আমন মৌসুমে সাধারণত বৃষ্টির কারণে লবণাক্ততা দেখা যায় না, লবণাক্ততা দেখা যায় বোরো মৌসুমে।
সমস্যা হলো, অন্যান্য রবি ফসলের তুলনায় বোরো ধান চাষে পানি বেশি লাগে। শুষ্ক মৌসুমে উপকূলীয় অঞ্চলের অনেক জমি স্বাদু পানির অভাবে পতিত পড়ে থাকে। এ মৌসুমে নদ-নদী ও খালের পানিও লবণাক্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে বোরো ধানের লবণাক্ততা সহনশীলতার মাত্রাকেও অনেক সময় ছাড়িয়ে যায় (>৪ ডিএস/মিটার)। তাছাড়া সব জাত লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে না। গবেষণায় বোরো ধানে লবণাক্ততাজনিত কারণে ফলন ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে প্রায় ২৩%।
এসব কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে বোরো ধান চাষ করা ঝুঁকিপূর্ণ। এর পরিপ্রেক্ষিতে লবণাক্ততা পরিস্থিতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে বিবেচনা করে উপকূলীয় অঞ্চলে বোরো ধান চাষ সম্প্রসারণের জন্য কিছু বিশেষ কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে, যেমন-(১) লবণাক্ততা সহনশীল জাতের চাষ, (২) বীজ বোনার সময় পরিবর্তন, (৩) স্বাদু বা স্বল্প লবণাক্ত পানি দ্বারা সেচের ব্যবস্থা করা। উপকূলীয় জমিতে এই তিনটি কৌশল অবলম্বন করে বোরো ধানের চাষ ও উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
লবণাক্ততা সহনশীল জাতের চাষ
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) কয়েকটি লবণাক্ততা সহনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে যেগুলো বোরো মৌসুমে উপকূলীয় লবণাক্ততাপ্রবণ এলাকায় চাষ করা যায়।
উপকূলীয় খুলনা অঞ্চলে বর্তমানে বোরো মৌসুম ব্রি ধান৬৭, ব্রি ধান৯৭, ব্রি ধান৯৯, বিনা ধান-৮, বিনা ধান-১০, বিনা ধান-২৪ ইত্যাদি এবং আমন মৌসুম ব্রি ধান৪১, ব্রি ধান২৩, ব্রি ধান৭৩, ব্রি ধান৭৮ ইত্যাদি জাতের চাষ হচ্ছে। অধিকাংশ জমিতে এখন এসএল-৮, শক্তি-২, সিনজেনটা-১২০১, সিনজেনটা-১২০৩, হীরা-১৯, এসিআই-৬, তেজগোল্ড, ছক্কা ইত্যাদি হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করা হচ্ছে।  
সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরিশালসহ বন্যাপ্রবণ এলাকার কৃষকদের অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনতে এ জাতগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বীজ বোনার সময় পরিবর্তন
বোরো ধানের বীজ বোনার সময় পরিবর্তন করে লবণাক্ততার প্রভাব কিছুটা কমানো যায়। খুলনার দাকোপ উপজেলায় এ বিষযে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গবেষণায় ১৫ অক্টোবর থেকে ৩০ ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে ১৫ দিন পর পর তিনটি জাতের (ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান৬৭ ও বিনা ধান-১০) বীজ ৬ বারে বপন করে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় ৪৫ দিন বয়সের চারা ২০ সেন্টিমিটার ী ২০ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারি করে রোপণ করা হয়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সুপারিশকৃত সারের মাত্রা অনুযায়ী সার প্রয়োগ করা হয়। গবেষণায় ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে বপন করা বীজ থেকে তুলনামূলকভাবে ভালো ফলন পাওয়া যায়, ৩০ নভেম্বরে বোনা বীজ থেকে সবচেয়ে বেশি ফলন পাওয়া যায়। উল্লেখ্য ব্রি ধান ২৮ ও ব্রি ধান৬৭ জাতের জন্য ব্রি সুপারিশকৃত বীজ বোনার সময় যথাক্রমে ১৫-২৯ নভেম্বর ও ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর। গবেষকদের অভিমত হলো, এ সময়ে বোরো ধানের বীজ বুনে এই তিনটি জাতের হেক্টর প্রতি ফলন ৬ টনের কাছাকাছি পাওয়া গেছে। কিন্তু দেরি করে বীজ বুনলে বোরো ফসল অধিক লবণাক্ততার ঝুঁকিতে পড়ে ও ফলন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
স্বাদু বা স্বল্প লবণাক্ত পানি দ্বারা সেচের ব্যবস্থা করা
উপকূলীয় অঞ্চলে বোরো ধান চাষে একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো এ মৌসুমে সেচের উৎস নদ-নদী ও খালের পানি লবণাক্ত হয়ে পড়া। এমনকি মাটি ও নলকূপের পানিও লবণাক্ত হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত শুষ্কতা, তাপমাত্রা, কড়া রোদ ও বৃষ্টিবিহীন অবস্থার কারণে মাটিতে থাকা পানি অধিক হারে বাষ্প হয়ে উড়ে যাওয়ায় লবণাক্ততা বেড়ে যায়, অনেক সময় এতে মাটির উপরেও লবণের দানা বা স্তর দেখা যায়। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাগরের লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশের ফলে দিন দিন লবণাক্ত জমির পরিমাণ বাড়ছে। এ অবস্থায় জমিতে পানি ধরে রেখে বা সেচের মাধ্যমে বোরো ধানের চাষ করলে লবণাক্ততা কমে। সেক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে খাল সংস্কার করে সেসব খালে বৃষ্টির পানি মজুদ করে তা দিয়ে বোরো ধানে সেচের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে লবণাক্ততা সহনশীল জাতের চাষ করলে এসব এলাকার খাল বা নদীর পানিতে অথবা নলকূপের পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা সহনীয় থাকে সেসব এলাকায় লবণাক্ততা সহনশীল জাতের চাষ করে সেচ দিয়ে বোরো ধানের চাষ করা যায়। লবণাক্ততা সহনশীল নির্বাচিত জাতের বোরো ধান চাষ প্রযুক্তি সারণি দ্রষ্টব্য।লেখক : অতিরিক্ত পরিচালক (অব:), ডিএই, খামারবাড়ি, ঢাকা। মোবাইল- ০১৭১৮২০৯১০৭, ই মেইল-kbdmrityun @gmail.com