Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কথকথা : ইঁদুর

কথকথা : ইঁদুর
কৃষিবিদ আবু হেনা ইকবাল আহমেদ
[ বাইরে কবিরের হাঁকডাক। ঘরের ভিতরে  রাশু চৌকিতে আধ শোয়া অবস্থায়]
কবির : রাশুভাই, ও রাশুভাই, বাড়ি আছো নাকি ?
রাশু: আছি। শরীরটা ভাল নাই। কেনো ডাকাডাকি?
  [কবিরের ঘরে প্রবেশ। রাশুর সাথে হাত মিলানো শেষে বসে কথপোকথন]
      বও। কোনখানে এই বিকাল বেলায় যাও?
      কও দেখি, দেশ গেরামের এখন কি ভাও?
কবির : চলছে এক রকম। কৃষিক্লাবে দাওয়াত, পাও নাই?
রাশু:  পাইছি। তয় একলা যামু কি না ভাবতাছিলাম তা ই।
কবির:  বাইরে দারুণ আবহাওয়ার যে দাপট
        ওঠো ঝটপট।
       যদি শুইয়া থাকো খাদায়
        ভুগবা বাতে-ব্যথায়।
রাশু:  ঠিকই কইছ। সঙ্গী যখন পাইছি তোমারে
      বাইরে যাইতে এইবার আঁটকায় কে আমারে!
       গত বারে যাইনাই ক্লাবে
       কি কথা হইছে, তা কওছে হাবে-ভাবে।
কবির: গতবারে যা কথা হইছে
       মাথার ভিতর এখনো এর রেশ বইছে।
রাশু : ওই বিষয়ে কিছু কও দেখি
      জানা না অজনা সে কি।
কবির: আন্ধার রাইতে গর্তের ভিতর
        শুইয়া বইসা একটা ইতর
        কটর মটর চিবায়
        নিদ নাই, ত-ঝিমায়।
           [ একটু সময় নিয়ে]
       কইলাম ধান্ধা আর কি।
       জবাব তার কি ?
রাশু:  শিয়াল। উত্তর সোজাসুজি।
কবির :  হয় নাই, বাবুজি।
         উত্তরযে বহুদূর
         আসলে তা ইন্দুর ।
রাশু:   বেজি, ছুঁচা আর গুইসাপওতো থাকে খাদায়
        সাপেও  সেখানে থাইকা চোখ পাকায়।                               

কবির: তা ঠিক। তয় কাটুস কুটুস! ইন্দুরের নিজস্ব স্বভাব
       আমাগর সম্পদ নষ্টকরণে তার লাভ।
       হাজার হাজার রকমের ইন্দুরের একটাই  কাম
       চোয়ালের জোড়া দাঁত শানানো অবিরাম।
       ওই দাঁত বাড়লে মুখ বিগরাইবো, আর শির শির তাড়নায়
       বাইচ্চারাতো দাঁত ওঠাকালে যা- ই পায় তাই কামড়ায়।
রাশু:  তাই  সারাক্ষণ ধইরা
       কাটায় কাটাছাঁটা কইরা।   
কবির:  যতো না খায়, কাইট্টা কুইট্টা সময় করে পার
         কারণ, ছেদন দাঁত চাই ছোট রাখা আর ধার।
         তোমার মতন বলা যায় তারে ভোজন রসিক
         রোজ যত খায়, তার বহুগুণ নষ্ট করা আরেক বাতিক।
রাশু : ওরে বাবা। একটাই এতোটা চাবায়
       পালে পালে থাকলে তার কি উপায়!
কবির: জন্মের মাস দুয়েক পরে একসাথে দুই হালির মতন ছানা   
        প্রসব করে তিন কি চার সপ্তাহ পরপর; ক’দিন রয় কানা।
        জুটি বছরে বারো শ’ পঞ্চাশটা বাচ্চা জন্ম দিতে পারে
        অনাহারে রোগা বাচ্চা খাইয়া বসতবাড়ি ছাড়ে।
        খাবার না থাকলে পেটে একদম
        ডিম্বাণু জন্মায় কম।  
রাশু : এ দুষ্টুর কথা আর কইয়ো না ভাই
       এর স্বাভাব কেবল খাই আর খাই।
কবির : যা না খায় তার বহুগুণ কাইট্টা কুইট্টা করে নাশ
      পুরাণ গর্তে না, নতুন মাটি খোঁড়া গর্তে করে বাস।
      এক এক গর্তে একটাই  বড় ইন্দুর থাকে
      খাবার দাবার কতকিছু তাতে জমা রাখে।
      তয় ওরা এলাকায় চলে
      মিলেমিশে দলে দলে।
রাশু : ইন্দুরের ভাই কি  ছুঁচায়.. .. ..
কবির: খান্দান, স্বভাবে কি জাতে ইন্দুরে ছুঁচার উঁচায়।
       দেখতে ছুঁচার মতো। তয়, এক জাতের না
       গায়ে গন্ধ ছুঁচার কি মারাত্বক, ইন্দুরে ময়লা চাটে না।          
রাশু:  ইন্দুরে নষ্ট করে ঘরে বাইরে, খেতে, নগরে -বন্দরে
       লতানো সবজি গাছ, নারিকেল, সুপারি গাছেও চড়ে।                            
কবির: খাবারের খোঁজে পানিতেও তৈরি করে ভাসমান ঘর
       ঢোলকলমি, কচুরিপানা, বোনাআমনের খড়কুটা করে ভর।
      এরা  ভয়ানক প্লেগসহ নানা  রোগবালাই ছড়ায়।
       যুদ্ধের চাইতে বেশিলোক ওসব অসুখে মারা যায়।

রাশু: ইন্দুর আছে বুঝি কেমনে?
কবির: অনেক কিছুই আছে তা জাননে।
      চেচামেচি, লোম, মল, দেয়ালে পাশে চলার পথ পরিষ্কার
       মাটি তোলা নয়া গর্ত,পায়ের ছাপসহ নানা কারবার.. ...
রাশু:  আমার ঘরে আর খেতে ছোট্ট-বড় ইন্দুরের বড্ড উৎপাত
কবির: নেংটি, গেছো, মাঠের বাদমি ইন্দুুরসহ  আছে নানা জাত।
       আমেরিকা, ইংলেন্ড, জার্মানি, ফ্রান্সসহ যারা বিশিষ্ট
       আফ্রিকা ও  মরুর সবে ইন্দুরের অত্যাচরে অতিষ্ঠ।
       খাবারের খোঁজে অতি বরফ শীতল স্থল কুমেরু ছাড়া
        সর্বস্থলে দলেবলে কখনো সাঁতরে সফরে যায় তারা।
       আইল- সড়ক-ঘর- বন -পাহাড় -পর্বত
       সবখানে এ যমের গতায়ত।
       প্রচুর খাবার যখন যেখানে থাকে
       সেখানেই বংশ বাড়ানোয় ব্যস্ত দেখা যায় তাকে।
রাশু: দেয়াল, সিলিং বা মেঝতে পাইলে কোনো ছোট ফাঁকফোকর                                                                                                                
     নরম শরীর নিয়া সহজে ঢুকে তার ভিতর।
কবির:  বিজলি তার বা পাতার ওপর চলে ছরছর করে
        তয়, ঘরের ভিতর চলে একপাশ ধরে।
রাশু:   পথ চিনলাম যখন
        চাই দুষ্টুরে দমন
কবির : ঠিক, ভাই।
        চলাপথে বিষ, আঠা, ফাঁদ দিবে বুঝেশুনে যা যা, তা -ই।
রাশু : শুনেছি চালাক ইন্দুরের আছে নানান বায়না
       বিষের গন্ধ টের পাইলে খায় না।
কবির : এরও আছে কিছু ব্যবস্থা
        অর্জন করা লাগবে ইন্দুরের আস্থা।
        নতুন জিনিসে আছে তার খুঁতখুঁতে ভাব তামাশা দেখার
        তারে কাজে লাগালে আছে আশা ইন্দুর মারার।
রাশু : কেমন?
কবির : এই যেমন-
        চলার পথে কোণা কাঞ্চিতে বিষ ছাড়াই দিতে হবে টোপ
        প্রিয় শুঁটকি, বিস্কুট, নারকেল এইসব নানারূপ।
        ইন্দুর ভাববে নতুন এইটা যেন কি!
        একটু কামড় দিয়া দেখি।
        কয়েক দিন পর মিশাবে
        ঠিকভাবে;
        শতকরা দুইভাগ জিঙ্ক ফসফাইড  সেই খাবারে
        রাইতে দিয়া, দিনে তুইলা নিবা তারে।                                  
                                                                
        যখন দেখবা  সবই রইছে তার             
       বুঝবা, পালাইছে বা সমূলে বংশ সাবাড়।
     বাড়িতে থাকলে একটা বিড়াল
       সীমানা ছাড়বে ইন্দুরের পাল।                   
রাশু:  মাঠেতো সম্ভব নয় তা
        এ বিষয়ে কি সে কথা।
 
কবির: এরা কোনাকুনি করে লতাপাতা, ধানগাছ কাটে
       তাইতে বুঝবা কার কাজ মাঠে।
       ইঁন্দুুর ভাদ্রমাসের শেষে
       বাসা বানায় আইল ঘেষে।
       গর্তে ফসটকসিন, ধোঁয়া, পানি দিয়া বা খুঁইড়া দলেবলে
       মারণ লাগবো অকুস্থলে।                                                
       অথবা মারতে তারে
       নানান ফাঁন্দ বা বিষটোপ দেওন লাগতে পারে।
       মাঠে কলাগাছ পুঁতলে রইতে বাজ-প্যাঁচা রাখবো নজরে
       শিয়াল, বিড়াল, সাপও সুযোগ মতো ইন্দুর শিকার করে।
   [ রাশু  চৌাকি থেকে ওঠে, ফতুয়া পড়ে এবং গামছা কোমরে বেঁধে নেয়।
উভয়ে ঘর থেকে বের হতে হতে কথপোকথন চলবে]
রাশু : চলো ক্লাবে যাই।

কবির: চলো।  বেলা বেশি নাই।
              [উভয়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে]
      শোন, কৃষি ক্লাবে যাইতে যাইতে সার কথা বলি
      ইঁন্দুুর নিয়া  শোনা  কবিতার কয়েক কলি-
“ইঁদুর বড়ই      চালাক চতুর প্রাণী
ছুঁচোর থেকেও   খুব বেশি খানদানি।
ছুঁচোর মতন      বাঁচাতে প্রাণ ভোমরা
ইঁদুর কখনো     ঘাটে না পচা কি নোংরা।
কাটুস কুটুস      কাটাকুটি আমরণ
ছেদন দাঁতকে    বশে আনার কারণ।
ছড়ায় সে রোগ   তার চেয়ে অতিশয়
কেটে করে নানা  সম্পদের অপচয়।
ঘর, মাঠ, গাছ,   মরু, বন  কি পাহাড়ে
খাবার জুটলে     পালে পালে বংশে বাড়ে।
নতুন খোঁড়ানো   গর্তে এরা থাকে একা
ধোঁয়া-পানি দিলে বের হয়ে দেয় দেখা।
পেঁচা, কাক, চিল, শিয়াল, বিড়াল, বিষ
কিংবা ফাঁদ পেতে  সদলে করো ফিনিস।”
                       [উভয়ে ঘর হতে প্রস্থান]

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক . বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সী, কৃষি মন্ত্রণালায়। সেল :০১৬১ ৪৪৪ ৬১১১। ই-মেইল :ahiqbal.ahmed@yahoo.com