প্রশ্নোত্তর
কৃষিবিদ মোঃ আবু জাফর আল মুনছুর
মো. আবদুল গুফুর, গ্রাম: যাদবপুর, উপজেলা: আলমডাঙ্গা, জেলা: চুয়াডাঙ্গা
প্রশ্ন : ধানক্ষেতে শ্যাওলা হচ্ছে। করণীয় কি?
উত্তর : জ্যৈষ্ঠমাসে বিঘাপ্রতি ৪ কেজি ধৈঞ্চা বীজ বুনে চারা ৪০-৪৫ দিন বয়সে চাষ দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া। ৩ কেজি/বিঘা তুত অল্প করে কাপড়ে বেধে লাঠির আগায় ঝুলে ধান গাছের সারির মধ্যে টেনে শ্যাওলা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
মো. আকবর হোসেন, গ্রাম: বেদেরপুকুর, উপজেলা: কাহারোল, জেলা: দিনাজপুর
প্রশ্ন : ধান গাছের পাতা সাদা হয়ে যাচ্ছে ও গোড়া কেটে দিচ্ছে। সমাধান কি?
উত্তর : ক্ষেতে ডাল পুতে পাখি বসার ব্যবস্থা করা। মেহগনির বীজ পানিতে ভিজিয়ে যে কষ হয় তাহা ৬/৭ গুণ পানি মিশিয়ে স্প্রে করা। কারটাপ গ্রুপের ঔষধ (কীটনাশক) স্প্রে করা।
মো. রবিউল ইসলাম, গ্রাম: তাহেরপুর, উপজেলা: বাগমারা, জেলা: রাজশাহী
প্রশ্ন : কুমড়া ছোট অবস্থায় পচে যাচ্ছে। কেন?
উত্তর : মাছি পোকার আক্রমণে হয় পঁচা কুমড়া/ লাউ ছোট অবস্থায় সংগ্রহ করে মাটিতে পুতে ফেলা। ফেরোমেন ফাঁদ ব্যবহার। সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি করে মিশিয়ে স্প্রে করা।
মো. রাশেদুল হাসান, গ্রাম: পাঠানতলা, উপজেলা: সিলেট সদর, জেলা: সিলেট
প্রশ্ন : পেয়াজের পাতা লাল হয়ে পুড়ে যাচ্ছে। করণীয় কি?
উত্তর : এটা পার্পল ব্লচ রোগ। আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলা। ইপ্রোজিয়ন (রোভরাল) ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর স্প্রে করা।
মো. আসাদুজ্জামান, গ্রাম: লাউযুতি, উপজেলা: ঠাকুরগাঁও সদর, জেলা: ঠাকুরগাঁও
প্রশ্ন : আমের মুকুল আসছে। পরিচর্যা কিভাবে করব?
উত্তর : আমের মুকুল আসছে কিন্তু ফুল ফোটেনি এমতাবস্থায় একবার, গুটি আসা অবস্থায় একবার ও তার ১ মাস পর আর একবার ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক ও সাইপারমেশ্রিন গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করা।
সুমন মজুমদার, গ্রাম : নারায়ণপুর, উপজেলা : কেশবপুর, জেলা: যশোর
প্রশ্ন : আম গাছের পানি ব্যবস্থাপনা কি?
উত্তর : গাছে ফুল সম্পূর্ণভাবে ফোটার ১৫ দিন পর পর মোট চারবার সেচ দিতে হবে।
মোঃ নূর আলম, গ্রাম : তাম্বুলখানা, উপজেলা : ফরিদপুর সদর, জেলা : ফরিদপুর
প্রশ্ন : পানের পাতা পঁচে গেলে করণীয় কি?
উত্তর : পঁচা পাতা তুলে সংগ্রহ করে পুতে ফেলা। কপার অক্সিক্লোরাইড (সানভিট)/ম্যানকোজেব (ডাইথেন এম-৪৫) ১০ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করা।
মোঃ সাইফুল ইসলাম, গ্রাম : লক্ষ্মীরপাড়, উপজেলা : বিশ^ম্ভপুর, জেলা : সুনামগঞ্জ
প্রশ্ন : শসা গাছে পাতা কুকড়ে গেলে সমাধান কি?
উত্তর : জাবপোকা থাকলে কুকড়ে যাওয়া গাছ তুলে নেয়া এবং ইমিডাক্লোরপিড (ইমিটাক/টিডো) ১০ দিন পরে পরে প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করা। মাকড় থাকলে তা খালি চোখে দেখা যায় না। এমতাবস্থায় সালফার (কুমুলাস পাউডার) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে মাসে ৩ বার ব্যবহার করা।
মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ, গ্রাম : পূর্বভীষণদই, উপজেলা : হাতিবান্ধা, জেলা : লালমনিরহাট
প্রশ্ন : বলসুন্দরী (বাউকুল) জাত কেমন?
উত্তর : এটি বাউকুল ও আপেলকুল এর সংকরায়নে সৃষ্টি। প্রতি গাছে প্রায় ২৫ কেজি কুল হয়। প্রতি ফলের ওজন ১০০ গ্রাম। অত্যন্ত জনপ্রিয় জাত। চারা রোপণের ৮ মাসে ফুল/ফল আসে। মোটামোটি সারা বছর রোপন করা যায়।
সাইদুর রহমান, গ্রাম+ পো: নজরগাছ, উপজেলা : চিলিমাড়ি, জেলা: কুড়িগ্রাম
প্রশ্ন : গবাদি পশুর টিকা সমন্ধে জানতে চাই?
উত্তর : গবাদি পশুর বিভিন্ন টিকার নাম ও প্রয়োগবিধি সারণি দ্রষ্টব্য।
গরুর জীবাণুঘটিত মারাত্মক রোগ থেকে পশুকে রক্ষা করতে টিকা প্রদানের কোন বিকল্প নেই। উপরোক্ত রোগের টিকা সরকারি প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে সরবরাহ পাওয়া যায়। সময়মতো টিকা প্রয়োগ করলে অনেক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।
মো: হাবিবুর রহমান, গ্রাম : কালীপুর, পো: কালীপুর, উপজেলা: বাশখালী, চট্টগ্রাম
প্রশ্ন : চিংড়ি নার্সারীতে কিভাবে পোনা মজুদ করতে হবে?
উত্তর : পোনার জন্য খেজুরের পাতা দ্বারা আশ্রয়স্থল স্থাপন করতে হবে; সুস্থ-সবল পোনা ছাড়তে হবে; পোনাকে ভালোভাবে খাপ খাওয়ানোর পর নার্সারীতে মজুদ করতে হবে। চিংড়ি নার্সারীতে সার প্রয়োগ করতে হবে ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগের ৪-৫ দিন পর প্রতি শতাংশে চিটাগুড় ২০০ গ্রাম, রাইচ পলিশ ২০০ গ্রাম, ইষ্ট ৫ গ্রাম। এক সাথে ভিজানোর পর ২৪ ঘণ্টা রাখার পর ঘেরে প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের পর প্রতিদিন ৬-৭ বার পানি ঘোলা করতে হবে।
মোঃ আব্দুর রহিম, গ্রাম : আনুলিয়া, উপজেলা : আসাসুনি, জেলা : সাতক্ষীরা
প্রশ্ন : পটলের কা- থেকে সাদা কষ কষ/আঠা বেরোচ্ছে ও গাছ ঢলে পড়া সমস্যার সমাধান কি?
উত্তর : আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলা। বর্দোপেস্ট (১০০ গ্রাম তুত+১০০ গ্রাম চুন+১ লিটার পানি) মিশিয়ে আক্রান্ত কা-ে ভাল করে স্প্রে করা। রোগমুক্ত গাছ থেকে কাটিং সংগ্রহ করা।
(মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক প্রশ্ন কৃষি কল সেন্টার হতে প্রাপ্ত)
কৃষির যে কোন প্রশ্নের উত্তর বা সমাধান পেতে বাংলাদেশের যে কোন জায়গা থেকে যে কোনো মোবাইল থেকে কল করতে পারেন আমাদের কৃষি কল সেন্টারের ১৬১২৩ নাম্বারে।
লেখক : তথ্য অফিসার (পিপি), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫। মোবাইল : ০১৭১৪১০৪৮৫৩; ই-মেইল : রড়ঢ়ঢ়@ধরং.মড়া.নফ
শ্যামলী মণ্ডল, গ্রাম : ঝুটিহারা, থানা : দাকোপ, জেলা : খুলনা
প্রশ্ন : বেগুন গাছে পোকা ফল ছিদ্র করে নষ্ট করছে। প্রতিকার কী?
উত্তর : বেগুন গাছের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা সাধারণত চারা রোপণের ৪/৫ সপ্তাহের মধ্যেই আক্রমণ শুরু করে। পোকার কীড়া কচি ডগায়, ফুলে এবং ফলে আক্রমণ করে এবং এর ভেতরে খেতে থাকে। আক্রমণ হলে সপ্তাহে অন্তত একবার পোকা আক্রান্ত ডগা ও ফল বাছাই করে বিনষ্ট করতে হবে। চারা রোপণের ২/৩ সপ্তাহের মধ্যেই প্রতি শতাংশ জমিতে ১টি ফেরোমন ফাঁদ পাততে হবে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে কারটাপ গ্রুপের কীটনাশক যেমন- সানটাপ ২.৪ গ্রাম/ লিটার হারে বা সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক যেমন- রিপকর্ড বা ফেনকর্ড ০.৫ মিলি./লি হারে বা এ পোকার জন্য অন্যান্য অনুমোদিত রাসায়নিক কীটনাশক ১০-১২ দিন পর পর ৪-৫ বার স্প্রের করতে হবে। স্প্রে করার ১৫ দিনের মধ্যে সেই সবজি খাওয়া বা বিক্রি করা ঠিক নয়। আগাম বীজ বপন, সুষম সার ব্যবহার ও সঠিক দূরত্বে চারা রোপণ করে পোকার আক্রমণ কমানো যায়।
অমিত দত্ত, গ্রাম : মুন্সেফপুর, থানা : যশোর সদর, জেলা : যশোর
প্রশ্ন : পান পাতা পচে যাচ্ছে। কী করব?
উত্তর : পানের পাতা পচা রোগ ফসলের বৃদ্ধির যে কোনো পর্যায়ে হতে পারে। প্রথমে মাটির কাছাকাছি পাতাগুলোতে পাতার প্রান্তের দিকে পানি ভেজা দাগ দেখা দেয়। পরে তা বেড়ে গিয়ে পাতার অধিকাংশ জায়গা বা পুরো পাতাতেই ছড়িয়ে যায় এবং পাতা পচে যায়। এ রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে আক্রান্ত লতা তুলে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক ২ গ্রাম/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ¯েপ্র করতে হবে। রোগ প্রতিরোধের জন্য রোগমুক্ত লতা বীজ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। বরজ ও এর আশপাশের জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে। বর্ষাকালে বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি জমিতে যেন জমে না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
শামসুল আলম, গ্রাম : বলরামপুর, উপাজেলা : হরিনাকুণ্ডু, জেলা : ঝিনাইদহ
প্রশ্ন : আমার ৬ মাস বয়সী ছাগলের জ্বর হয়েছে কী চিকিৎসা করব?
উত্তর : ছাগলকে একটি ফাস্ট ভেট অথবা পাইরোভেট বোলাস চারভাগ করে দিনে তিনবার তিন ভাগ খাওয়াতে হবে। এভাবে দুইদিনে দুটি বোলাস ব্যবহার করতে হবে। সাথে একটি ডিলারজেন বোলাস চার ভাগ করে একভাগ দিনে একবার করে তিন দিনে একটি বোলাস খাওয়াতে হবে অথবা এস্টাভেট ইনজেকশন ১ মিলিলিটার করে প্রতিদিন একবার মাংসে ইনজেকশন দিতে হবে। এভাবে ওই ইনজেকশন তিন দিন ব্যবহার করতে হবে।
জোবায়ের উদ্দিন, গ্রাম : পূর্ব ফিরুজ শাহ কলোনি, উপাজেলা : আকবর শাহ, জেলা : চট্টগ্রাম
প্রশ্ন : আমার বেশ কিছু দেশি মুরগি আছে, এগুলো কম ডিম দিচ্ছে, মুরগিগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। আমি কী করব?
উত্তর : মুরগিকে বাড়ির খাবারের পাশাপাশি লেয়ার ফিড, সাথে ঝিনুক ভাঙা, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনের মিশ্রণ খাওয়াতে হবে। প্রতি ২ লিটার পানির সাথে ১ মিলি ক্যালপ্লেক্স লিকুইড অথবা রেনাক্যাল পি লিকুইড মিশিয়ে ৭ দিন খাওয়াতে হবে। প্রতি ৪ লিটার পানির সাথে ১ মিলি এস্কাভিট এডিই সল্যুশন প্রতিদিন খাওয়াতে হবে।
মো. পারভেজ, গ্রাম : বারইখালি, উপজেলা : মাগুরা, জেলা : মাগুরা
প্রশ্ন : মাছ বড় হচ্ছে না কী করা যায়?
উত্তর : হ্যাচারি বা যে কোনো উৎস থেকে অপরিপক্ব বা পুষ্টিহীন বা খারাপ মানের পোনা আনলে বা পুকুরে মাছের পোনা বেশি ঘনত্বে ছাড়লে এ সমস্যা হতে পারে। তাই পোনা সংগ্রহের আগে পোনার গুণগত মান সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে বিশ্বস্ত কোন হ্যাচারি থেকে সংগ্রহ করতে হয়। তবে দৈনিক সম্পূরক খাদ্য অর্থাৎ মানস¤পন্ন খাবার দিলে, সার প্রয়োগ করলে এবং পানি ব্যবস্থাপনা ঠিকমতো করতে পারলে এ সমস্যার নিরসন হয়। মাছের ঘনত্ব বেশি থাকলে কমিয়ে দিতে হবে। শতকপ্রতি ৪০-৫০টি মাছ (মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে সিলভারকার্প, কাতল/বিগহেড শতকপ্রতি ২০টি; রুই ১২টি; মৃগেল/মিররকার্প/কার্পিও ১০টি; গ্রাসকার্প ২টি, সরপুঁটি ৬টি) থাকা ভালো। পুকুরে মাছের মোট ওজনের ৩-৫ শতাংশ হারে সম্পূরক সুষম খাদ্য প্রতিদিন প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরের পানি ঘোলা হলে শতকপ্রতি চুন ০.৫ কেজি এবং ইউরিয়া সার শতকপ্রতি ১০০ গ্রাম হারে দিতে হবে।
মো. ফারাবি, গ্রাম : উত্তর চরটিটিইয়া, উপজেলা : বোরহানুদ্দিন, জেলা : ভোলা
প্রশ্ন : পুকুরে পাঙ্গাস মাছ হঠাৎ মারা যাচ্ছে, কী করব?
উত্তর : সাধারণত গ্যাস ও ব্যাক্টেরিয়াজনিত কারণে মাছ মারা যায়। পুকুরে মাছের ঘনত্ব কমিয়ে দিতে হবে কারণ অনেক সময় ঘনত্ব বেশি হলে অক্সিজেনের স¦ল্পতার কারণেও মাছ মারা যায়। হররা টেনে দিতে হবে। সম্ভব হলে পানি প্রবেশ করাতে হবে। জিওলাইট ২৫০ গ্রাম-শতক হারে দিতে হবে। অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ১০ মিলিগ্রাম এক কেজি খাবারের সাথে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর ৩ বার দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। পুকুরের পাড়ে যদি বড় গাছ থাকে তাহলে গাছের ডাল ছেঁটে দিতে হবে যাতে পাতা পুকুরে না পড়ে। তাছাড়া পুকুরের চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। পুকুরে যাতে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
শাহাদাত হোসেন, গ্রাম : পলাশবাড়ি, উপজেলা : কুড়িগ্রাম সদর, জেলা : কুড়িগ্রাম
প্রশ্ন : ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করতে চাই। কেমন করে করব?
উত্তর : দেশের জলাবদ্ধ ও নি¤œাঞ্চলে কচুরিপানা ব্যবহার করে ভাসমান সবজি উৎপাদন একটি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি। ভাসমান বেড কোথাও কোথাও ধাপ নামেও পরিচিত। ধাপ পদ্ধতিতে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও মসলা জাতীয় ফসলের চাষ করা যায়। এর মাধ্যমে প্রতিকূল পরিবেশে অব্যবহৃত জমিতে ফসল উৎপাদন করা যায়। সাধারণত আষাঢ়-শ্রাবণ (জুন-জুলাই) মাসে ভাসমান বেড তৈরি করা হয়। এলাকা ভেদে জ্যৈষ্ঠ-কার্তিক (জুন-নভেম্বর) মাস পর্যন্ত বেড তৈরি করা হয়। সাধারণত আয়তাকার ধাপ ১০-২০ মিটার দৈর্ঘ্য, ২ মিটার প্রস্থ এবং ১ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট এবং বর্গাকার ধাপ ৫-১০ মিটার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ এবং ১ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট হয়ে থাকে। ধাপ তৈরির জন্য নির্ধারিত জায়গার ওপর ২-৩ টি বাঁশের খ- বা লম্বা ডাল ফেলতে হবে। প্রখমে নিচের দিকে বড় আকারের কচুরিপানা এবং ওপরের দিকে ছোট আকারের কচুরিপানা জড়ো করে স্তূপ তৈরি করতে হবে। প্রাথমিকভাবে ১ বর্গমিটারের একটি ছোট ধাপ তৈরি করতে হবে। পরে চারপাশ থেকে আরও কচুরিপানা টেনে টেনে এ স্তূপের ওপর এবং পাশে ফেলতে হবে। ধাপ তৈরির শেষের দিকে কচুরিপানাগুলোর শিকড় ওপরের দিকে এবং কা-গুলো নিচের দিকে করে আস্তে আস্তে প্রস্থ থেকে দৈর্ঘ্য বরাবর সাজাতে হবে এবং লক্ষ্য রাখতে হবে এর ভেতরে যেন কোনো কলমি, মালঞ্চ ও দুর্বা না থাকে। ধাপের উপরিভাগ হাত বা কাঠি দিয়ে সমতল করে নিতে হবে। ভাসমান বেড বা ধাপ তৈরি করার পর আবাদ উপযোগী থেকে ১৫-২০ দিন সময় লাগে। এর মধ্যে পর্যাপ্ত জৈব সার থাকে। ভাসমান পদ্ধতিতে লালশাক, ধনেপাতা, ফুলকপি, পুঁইশাক, বরবটি, করলা, শসা, পানিকচু, বাধাকপি, গাজর, মুলা, ঢেঁড়শ, পালংশাক, মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, রসুন এসব চাষ করা যায়।
সুপ্রিয় পাঠক বৃহত্তর কৃষির যে কোনো প্রশ্নের উত্তর বা সমাধান পেতে বাংলাদেশের যে কোনো জায়গা থেকে যে কোনো মোবাইল থেকে কল করতে পারেন আমাদের কল সেন্টার এর ১৬১২৩ এ নাম্বারে। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির ব্যতিত যে কোনো দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে। তাছাড়া কৃষিকথার গ্রাহক হতে বার্ষিক ডাক মাশুলসহ ৫০ টাকা মানি অর্ডারের মাধ্যমে পরিচালক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৬ এ ঠিকানায় পাঠিয়ে ১ বছরের জন্য গ্রাহক হতে পারেন। প্রতি বাংলা মাসের প্রথম দিকে কৃষিকথা পৌঁছে যাবে আপনার ঠিকানায়।
কৃষিবিদ ঊর্মি আহসান*
*উপজেলা কৃষি অফিসার (এলআর), সংযুক্ত কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫
প্রশ্নোত্তর
কৃষিবিদ মোঃ আবু জাফর আল মুনছুর
কৃষি বিষয়ক
নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য আপনার ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ও রোগ দমনে সমন্বিত বালাইব্যবস্থাপনা অনুসরণ করুন।
১। নাম : চন্দন, উপজেলা : সখিপুর, জেলা : টাংগাইল
প্রশ্ন : শসার ঢলে পড়া রোগ হলে করণীয় কী?
উত্তর : আক্রান্ত গাছ তুলে নষ্ট বা পুড়ে ফেলা। যে জমিতে এ রোগ হয় একই ফসল ২/৩ বছর চাষ করা যাবে না। আক্রান্ত গাছের গোড়ায় ১% বর্দোমিকচার বা ৪০ গ্রাম অক্রিবিট ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা বা ২ গ্রাম ব্যাকটল/ব্যাকট্রোবান ১ লি: পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
২। নাম : আমিনুল ইসলাম, উপজেলা : যশোর সদর, জেলা : যশোর
প্রশ্ন : ধান বীজে বা দানায় দাগ হলে করণীয় কী?
উত্তর : আক্রমণ বেশি হলে ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে প্রোপিকোনাজল গ্রুপের যেমন- টিল্ট ২৫০ ইসি/কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রতি ৭ দিন পর পর বিকেলে স্প্রে করতে হবে ২/৩ বার। জমিতে ইউরিয়া সার ব্যবহার কমাতে হবে।
৩। নাম : শাহীন, উপজেলা : মান্দা, জেলা : নওগাঁ
প্রশ্ন : আমের ব্লাইট বা পোড়া রোগ হলে করণীয় কী?
উত্তর : আক্রান্ত গাছে ১% বর্দোমিকচার বা ৪ গ্রাম কপারব্লু/প্রাউড ১ মিলি/২ গ্রাম মেটারিল প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। আক্রান্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলা। রোগ প্রতিরোধ জাত ব্যবহার করা।
৪। নাম : জুয়েল গাজী, আমতলী, জেলা : বরগুনা
প্রশ্ন : ধান গাছের পাতার উপরের অংশ শুকিয়ে যায় করণীয় কী?
উত্তর : ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইটের জন্য এ সমস্যা হয়ে থাকে। পটাশ সার দিতে হবে এবং চ্যাপিয়ন নামক ছত্রাকনাশক দিতে হবে।
৫। নাম : শরিফুল ইসলাম, বেলাবো, জেলা : নরসিংদী
প্রশ্ন : ধানের কা-ের ভেতর থেকে মাঝ পাতা ও শীষের গোড়া কেটে দেয়, করণীয় কী?
উত্তর : ধানের সাকারা পোকার আক্রমণ হলে এমন হয়। সমন্বিত উপায়ে পোকা দমন করতে হবে। যেমন-কঞ্চি পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করা এবং কার্বোসালফান গ্রুপের ওষুধের ব্যবহার করতে হবে।
৬। নাম : রশিদুল, উপজেলা : কটিয়াদী, জেলা : নওগাঁ
প্রশ্ন : লিচুর ফল ছিদ্রকারী পোকা আক্রমণ করণীয় কী?
উত্তর : আক্রমণ বেশি হলে ট্রেসার-০.৪ মিলি, সাইপারমেথ্রিন ১ মিলি বা ২ মিলি সুমিথিয়ন বা ডায়াজিনন ৬০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়া নিমতেল বা বাইকাও ২ মিলি/লি: পানিতে গুলে স্প্রে করতে হবে।
৭। নাম : নওফেল, দুর্গাপুর, জেলা : রাজশাহী
প্রশ্ন : বেগুনের ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ, করণীয় কী?
উত্তর : জমিতে ফেরোমন ফাঁদের ব্যবহার করতে হবে চারা রোপণের ২/৩ সপ্তাহের মধ্যে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে জৈব বালাইনাশক স্পেনোসেড ট্রেসার ৪ সি.লি/১০ লিটার) স্প্রে করতে হবে। গাছের ফুল আসার পর হতে প্রতি ২ সপ্তাহ অন্তর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।
প্রাণী বিষয়ক
১। নাম : মো: আল মামুন, গ্রাম : চিথুলিয়া, পো:+উপজেলা : সাঘাটা, জেলা : গাইবান্ধা
প্রশ্ন : ভেড়ার খামারে সংক্রামক রোগের প্রতিরোধ করার উপায় কী কী হতে পারে?
উত্তর : জন্মের সাথে সাথে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের তেমন কোন ক্ষমতা থাকে না। তাই মায়ের উৎপাদিত শাল দুধ বাচ্চাকে এন্টিবডির মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান করতে পারে। ভেড়ার বাচ্চার অন্ত্রে ১২ ঘণ্টার পর থেকে শাল দুধে বিদ্যমান এন্টিবডি শোষণের হার কমতে থাকে। এ কারণে জন্মের পর ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত বাচ্চাকে শাল দুধ খাওয়াতেই হবে। মায়ের শাল দুধের প্রদত্ত রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি দিন স্থায়ী হয় না। ভেড়ার বাচ্চার ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানার সাথে রক্তও আসতে পারে। এমতাবস্থায় বাচ্চাকে দিনে বারবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে এবং দুর্বল বাচ্চাকে বোতলের মাধ্যমে দুধ না খাইয়ে ফিডারে দুধ খাওয়াতে হবে।
২। নাম : রেজভীব সুলতানা, গ্রাম : গুপ্তপাড়া, উপজেলা : মিঠাপুকুর, জেলা : রংপুর
প্রশ্ন : মুরগীর ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিকের প্রত্যাহারকাল এ বিষয়ে জানতে চাই।
উত্তর : আপনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করছেন। এর উত্তর সারণি দ্রষ্টব্য।
৩। নাম : মোছলেউদ্দিন, গ্রাম : দড়িনারিচা, পো:+উপজেলা : ঈশ্বরদী, জেলা : পাবনা
প্রশ্ন : ব্রয়লার খামারে মুরগির শারীরিক বৃদ্ধি ঠিক রাখতে করণীয় কী?
উত্তর : ব্রয়লার মুরগির খামার স্থাপনের সময় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে খামার স্থাপন করতে হবে। খামারে যাতে আলো ও বাতাস ঠিকমতো চলাচল করতে পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
খামারে পালন করা ব্রয়লারকে খাদ্য প্রদানের সময় ভালোভাবে খেয়াল করতে হবে খাদ্যে যেন কোন প্রকার ময়লা কিংবা রোগের জীবাণু না থাকে। আর খাদ্য প্রদানের পাত্র নিয়মিতভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
খামারে ব্রয়লার মুরগির জন্য যেসব খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করা হবে সেগুলো যেন মুরগির পরিপাকে কোন বাধার সৃষ্টি না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এমন সমস্যায় মুরগির শারীরিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
ব্রয়লার মুরগির খামারকে নিয়মিত জীবাণুমুক্ত ও পরিষ্কার রাখতে হবে। এতে করে খামারের মুরগিগুলো সহজেই কোন রোগের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারবে না। ফলে শারীরিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক হবে।
ব্রয়লার মুরগির খামারের জন্য যে ওষুধ ব্যবহার করা হবে সেই ওষুধের গুণগত মান পরীক্ষা করাতে হবে। তারপরেই সেই ওষুধকে ব্রয়লার মুরগির খামারে ব্যবহার করতে হবে।
(প্রাণী বিষয়ক প্রশ্ন উত্তর কৃষি তথ্য সার্ভিস কল সেন্টার থেকে প্রাপ্ত)
এ ছাড়া যে কোনো পরামর্শের জন্য নিকটস্থ কৃষি, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ অফিসারের সাথে যোগাযোগ করুন ও কৃষি কল সেন্টার ১৬১২৩ নম্বরে কল করুন।
লেখক : তথ্য অফিসার (পিপি), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫। মোবাইল : ০১৭১৪১০৪৮৫৩; ই-মেইল : রড়ঢ়ঢ়@ধরং.মড়া.নফ
প্রশ্নোত্তর
কৃষিবিদ মোঃ আবু জাফর আল মুনছুর
নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের জন্য আপনার ফসল, মৎস্য ও প্রাণীর ক্ষতিকারক পোকা ও রোগ দমনে সমন্বিত বালাইব্যবস্থাপনা অনুসরণ করুণ।
মো: গণি মিয়া, গ্রাম: ইমাদপুর, পো: মিঠাপুকুর, উপজেলা: মিঠাপুকুর, জেলা: রংপুর।
প্রশ্ন : আমার একটি আলু খেত আছে। কিছুদিন হল আলুর গাছের গোড়ায় লম্বা লালচে বর্ণের দাগ বা ক্ষত হচ্ছে করণীয় কী?
উত্তর : ছত্রাকের আক্রমণের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। আলুর স্টেফ ক্যাংকার স্কাম রোগ বলে। আগাম প্রতিরোধ হিসেবে বীজ আলুকে ভালোভাবে অঙকুরিত হতে হবে এবং বেশি গভীরে আলু রোপণ পরিহার করতে হবে। বীজ আলুটা ৩% বোরিক এসিড দিয়ে শোধন করে নিতে হবে। জমিতে এ লক্ষণ দেখা দিলে ১ লিটার পানিতে ১ গ্রাম ব্যাভিস্টিন বা ২ গ্রাম ব্রিটক্স বা ২ গ্রাম কমপ্যানিয়ন বা ১ মিলি এমিস্কার টপ গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হবে।
মো: আফজাল হোসেন, গ্রাম: আইচগাতি, পো: রুপসা, উপজেলা: রুপসা, জেলা: খুলনা।
প্রশ্ন: লিচুর পাতায় মখমলের মতো রঙ ধারণ করা এবং পাতা কোকড়ানোর জন্য করণীয় কী?
উত্তর : সাধারণত পূর্ণ বয়স্ক ও বাচ্চা মাকড় কচি পাতায় আক্রমণ করে ও পাতায় রস চুষে খাওয়ার কারনে এটি হয়। ফলে পাতায় মখমলের মতো এক ধরনের আবরণ তৈরি হয় এবং পাতা কুঁকড়িয়ে যায়। প্রতিকার হিসেবে আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুতে ফেলতে হবে। জৈব বালাইনাশক হিসেবে বাইকাও বা নিমবিসাইডিন ব্যবহার করতে হবে (১ লিটার পানিতে ২ গ্রাম)। এ ছাড়া ভাদ্র-কার্তিক মাস এবং মাঘ মাসের শেষ থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত গাছে ২/৩ বার মামড়নাশক হিসেবে ওসাইট ২ মিলি বা ২ গ্রাম থিওভিট বা ভাটিমেক ১.২৫ মিলি ১ লিটার পানিতে ব্যবহার করতে হবে।
প্রশান্ত কুমার, গ্রাম: রাগন, পো: ত্রিশাল, উপজেলা: ত্রিশাল, জেলা: ময়মনসিংহ
প্রশ্ন: আমার রসুনের জমি আছে। রসুনের পাতায় পানি ভেজা বা কালচে দাগ দেখা যাচ্ছে পরামর্শ চাই।
উত্তর : সাধারণত ছত্রাকের আক্রমণের কারণে এ রোগ হয়। রসুনের লিফ ব্রাইট বলা হয় এ রোগকে। আগাম প্রতিরোধ হিসেবে রসুন কশকে ১ লিটার পানিতে ২ গ্রাম ব্যাভিটিন বা ২.৫ গ্রাম প্রোভেক্স ২০০ গ্রাম দ্বারা শোধন করা। আর এ রোগ দেখা দিলে ১ লিটার পানিতে ২ গ্রাম ইপ্রোডিয়ন (ইভারাল, রোভবান) একক ভাবে বা ২ গ্রাম রিভোনিল গোল্ড একসাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
মো: সুরাদুল ইসলাম, গ্রাম: রামচন্দ্রপুর, পো: পবা, উপজেলা: পবা, জেলা: রাজশাহী।
প্রশ্ন : আমার ভুট্টার ক্ষেত্রে মরা মাইজ দেখা দিচ্ছে এবং পাতার হাকলা টান দিলে সহজে উঠে আছে। এ ক্ষেত্রে করণীয় কী?
উত্তর : ভুট্টার ক্ষেত্রে মাজরা পোকার আক্রমণে মরা মাইজ দেখা যায় এবং মধ্য পাতা হালকাভাবে টান দিলে সহজেই উঠে আসে। আক্রমণ বেশি হলে অনুমোদিত বালাইনাশক হিসেবে ডায়াজিনন, মার্শাল সুমিথিয়ন ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে।
মাহিনুর রহমান, গ্রাম: মাইজগাও, পো: মাইজাগাও, উপজেলা: ফেঞ্চুগঞ্জ, জেলা: সিলেট।
প্রশ্ন: মাছের পেট ফোলা রোগে করণীয় সমন্ধে জানতে চাই।
উত্তর : আপনাকে প্রথমে খালি সিরিঞ্জ দিয়ে মাছের পেটের পানি বের করে নিতে হবে। অত:পর প্রতি কেজি মাছের জন্য ২৫ মিলিগ্রাম হারে ক্লোরেম ফেনিকল ইনজেকশন দিতে হবে অথবা প্রতি কেজি সম্পূরক খাবারের সাথে ২০০ মিলিগ্রাম ক্লোরেম ফেনিকল পাউডার মিশিয়ে মাছকে খাওয়াতে হবে। এ ছাড়া পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনসহ মাছকে নিয়মিত সুষম খাদ্য প্রদানের বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।
মো: আব্দুলাহেল কাফি, গ্রাম : কালির তোলা, উপজেলা : বোদা, জেলা : পঞ্চগড়।
প্রশ্ন : ফাউল পক্স রোগ সম্বন্ধে জানতে চাই।
উত্তর : ফাউল পক্স একটি তুলনামূলকভাবে ধীরে ধীরে সংক্রমিত ভাইরাসঘটিত সংক্রমণ যা বেশির ভাগ পাখির প্রজাতিকে আক্রান্ত করে। ফাউল পক্স আভিপক্স ভাইরাস নামক একটি ভাইরাসের কারণে ঘটে যা পক্সভিরিডা গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এ রোগটি মানুষের গুটিবসন্ত রোগের মতো। এটি মুরগি জাতীয় পাখির একটি বিশ^ব্যাপী রোগ। এই রোগের কয়েকটি সম্ভাব্য হোস্ট (সংক্রমিত পাখি)-মুরগি, টার্কি, কোয়েল, ক্যানারি, পায়রা এবং আরও অনেক প্রজাতির পাখি।
লেখক : তথ্য অফিসার (পিপি), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫। মোবাইল : ০১৭১৪১০৪৮৫৩; ই-মেইল :iopp@ais.gov.bd
প্রশ্নোত্তর
কৃষিবিদ মোঃ আবু জাফর আল মুনছুর
নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য আপনার ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ও রোগ দমনে সমন্বিত বালাইব্যবস্থাপনা অনুসরণ করুন।
মো: ইসমাইল হোসেন, উপজেলা : চারঘাট, জেলা : রাজশাহী।
প্রশ্ন : কলাগাছ ফুলে ফেটে যাচ্ছে। ভেতরে পানি। করণীয় কী?
উত্তর : আপনার এ সমস্যা দু’টি কারণে হতে পারে। কলাগাছে যদি কেঁচোর আক্রমণ থাকে সেক্ষেত্রে চারিদিকে রিং করে মাটি কুপিয়ে কার্বোফুরান (ফুরাডান-১) কেজি/বিঘায় দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে। অন্যথায় এটা পানামা রোগ। সেক্ষেত্রে আক্রান্ত জমিতে পরবর্তীতে চারা রোপণের চারমাস আগ পর্যন্ত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত আক্রান্ত চারা গোড়াসহ তুলে ফেলতে হবে। চারা লাগানোর পূর্বে গর্তে ১% ফরমালিন ও ৫০ ভাগ পানি দ্বারা ভিজিয়ে দেয়া এবং ১০ দিন পর চারা রোপণ করতে হবে।
মো: জব্বার, উপজেলা : ঠাকুরগাঁ, জেলা : ঠাকুরগাঁ।
প্রশ্ন : ধান গাছের গোড়ায় বাদামি গাছফড়িং দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। রস চুষে খায় এবং ধানের পাতা শুকিয়ে খড়ের মতো হয়ে যাচ্ছে। করণীয় কী?
উত্তর : এ রোগের জন্য ধানক্ষেতে ২-৩ হাত পরপর বিলি কেটে আলো বাতাসের ব্যবস্থা করা; ইউরিয়া ব্যবহার বন্ধ করা; পোকা দেখার সাথে সাথে পাইমেট্রোজিন (পাইরাজিন) গ্রুপের ওষুধ স্প্রে করা; আক্রান্ত ক্ষেতের ধান কাটার পর পুড়ে ফেলা।
কৃষ্ণচন্দ্র রয়, নীলফামারী সদর, নীলফামারী।
প্রশ্ন : লিচু গাছের পাতা মোটা ভেলভেটের মতো হয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে করণীয় কী?
উত্তর : এ সমস্যা মাকড়ের কারণে হয়। এজন্য লিচু গাছের পাতা সংগ্রহ করে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। তারপর ভার্টিমেক/থিওভিট/কুমলাস পাউডার প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
মর্জিনা আকতার, উপজেলা : ফরিদগঞ্জ, জেলা : চাঁদপুর।
প্রশ্ন : মরিচ গাছের গোড়া পচে যাচ্ছে। করণীয় কী?
উত্তর : মরিচ গাছের গোড়ায় পানি জমতে দেয়া যাবে না। এরপর কপার অক্সিফ্লোরাইড গ্রুপের ছত্রাকনাশক (সানভিট) প্রতি লিটারে ৪ গ্রাম হারে স্প্রে করতে হবে ৭ দিন পর পর একবার।
মো: মতিউর রহমান, উপজেলা : আত্রাই, জেলা : নওগাঁ।
প্রশ্ন : পোকার কীড়া ফলের শাঁস খায় এবং পেয়ারা কাটলে তার মধ্যে অনেক পোকা দেখা যায়। করণীয় কী?
উত্তর : পোকাযুক্ত ফল মাটিতে গর্ত করে পুঁতে ফেলা, গাছের গোড়া পরিষ্কার করে ও কুপিয়ে উল্টে পাল্টে দিতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি সনিক্রণ বা ১ মিলি ইমিজাক্লোরপ্রিড, ১ মিলি সাইপারমেথ্রিন মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
বিকাশ রায়, উপজেলা : খোকসা, জেলা : কুষ্টিয়া।
প্রশ্ন : নারিকেলের পাতায় দাগ পড়ে এবং আক্রান্ত পাতার ধূসর বর্ণের বেষ্টনি থাকে, করণীয় কী?
উত্তর : আক্রান্ত পাতা কেটে নষ্ট বা পুড়ে ফেলতে হবে। সুষম সার ব্যবহার করতে হবে। আক্রান্ত গাছে রিডোমিল গোল্ড ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
মো: কবির, উপজেলা : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, জেলা : ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
প্রশ্ন : বেগুন গাছের ডগা ঢলে পড়ে এবং শুকিয়ে যাচ্ছে, করণীয় কী?
উত্তর : বেগুনের ক্ষেত পরিষ্কার রাখতে হবে। সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ ব্যবহার করে পুরুষ মথ নষ্ট করা। পটাশ সার বেশি পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে। শেষ ব্যবস্থা হিসেবে আক্রান্ত গাছে সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের ওষুধ প্রতি লিটারে ১ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
মো: জজ মিয়া (কৃষক), উপজেলা : কটিয়াদী, জেলা : কিশোরগঞ্জ।
প্রশ্ন : কবুতরের বাচ্চা অবস্থায় পায়খানার দরজায় আস্তে আস্তে ফুলে যায়। খাবার খাওয়া ঠিক থাকে, বাচ্চা যখন উড়াল শিখে খাদ্য নালিতে ঘা হয় এবং বোমি হয়, কিছু দিন পর মারা যায়। এ অবস্থায় করণীয় কী?
প্রশ্ন : বয়স্ক কবুতর ঘাড় বেঁকে যায়। এর সমাধান কী?
উত্তর : আপনার ১ম সমস্যাটি হলো কবুতরের ক্যনকার। এর জন্য র্যানামাইসিন ও মেট্রোনিডাজল গ্রুপের ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। ১০০টি কবুতরের জন্য ৪টি র্যানামাইসিন প্রতিদিন ও মেট্রোনিডাজল ২ বেলা করে সকালে ও বিকেলে ১০ দিন দিতে হবে। পরবর্তী সমস্যাটি হলো রানীক্ষেত রোগ। এই রোগের চিকিৎসা করে খুব একটা লাভ হবে না। এটা প্রতিরোধ করা উত্তম। এর জন্য ২ মাস বা তার বেশি বয়সী সকল কবুতরকে ১ম ডোজ টিকা দিতে হবে। এরপর প্রতি ৪-৬ মাস পরপর এই ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দিতে হবে। এরপরও আক্রান্ত সিপ্রোফ্লক/সিপ্রো-১০/রেনাফক্স ইত্যাদির যে কোন একটি ব্যবহার করলে কিছুটা লাভ পাওয়া যায়।
লেখক : কৃষিবিদ মো: আবু জাফর আল মুনছুর, তথ্য অফিসার (উদ্ভিদ সংরক্ষণ), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১৪১০৪৮৫৩; ই-মেইল : রড়ঢ়ঢ়@ধরং.মড়া.নফ
প্রশ্নোত্তর
কৃষিবিদ মোঃ আবু জাফর আল মুনছুর
কৃষি বিষয়ক
নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য আপনার ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ও রোগ দমনে সমন্বিত বালাইব্যবস্থাপনা অনুসরণ করুন।
মো: আরাফাত হোসেন, উপজেলা : ফরিদগঞ্জ, জেলা : চাঁদপুর
প্রশ্ন: শিমের গায়ে ও পাতায় কালো কালো দাগ এবং এর ফলে কচি শিমের আকার ছোট হয়। এখন করণীয় কী?
উত্তর: এটা একটি ছত্রাকজনিত রোগ। এ রোগে আক্রান্ত গাছ হতে বীজ সংগ্রহ করা যাবে না। জমি পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বারবার একই জমিতে একই ফসল চাষ করা যাবে না। শুকনো আবহাওয়ায় বীজ বপন করতে হবে। বীজ বোনার আগে প্রোভেক্স দ্বারা বীজ শোধন করতে হবে। গাছে রোগের লক্ষণ দেখা গেলে টিল্ট ২৫০ ইসি ০.৫ মিলি বা ডাইথেন-এম ৪৫ ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
আবু বক্কর, উপজেলা : মধুখালী, জেলা : ফরিদপুর
প্রশ্ন: সরিষা ফুলে কালো ছোট ছোট পোকার উপদ্রব হওয়ার জন্য সরিষা হচ্ছে না। প্রতিকার কী?
উত্তর: জাবপোকা সরিষার পাতা, পুষ্পমঞ্জরী, ফুল ও ফল থেকে রস চুষে খায়। ফলে গাছ দুর্বল হয়ে বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। সাধারণত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে ফুল ও ফল আসার সময় আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। আক্রমণ দেখা মাত্র ৫০ গ্রাম নিমবীজ ভেঙে ১ লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে ২-৩ গ্রাম গুঁড়া সাবান মিশিয়ে ছেঁকে ৭ দিন অন্তর ২ বার ছিটাতে হবে। স্বল্পমেয়াদি জাতে (বারি সরিষা-১৪, ১৫ ও ১৭) নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বপন করলে পোকার আক্রমণ কম হয়। পোকার আক্রমণ বেশি হলে ম্যালথিয়ন ৫৭ ইসি বা এডমায়ার ২০০ এম এল ০.৫ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে বিকেল ৩ টার পর ১০ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।
মো : শিহাব ম-ল, থানা : আত্রাই, জেলা: নওগাঁ
প্রশ্ন: লাউ গাছ ফেটে রসের মতো বের হয়। লাল লাল আঠার মতো রস বের হচ্ছে। করণীয় কী?
উত্তর : এ রোগ হলে সাধারণত পানি ভেজা দাগ দেখা যায়, কা- ফেঁটে লালচে রঙের আঠার মতো বের হয়। এটা ছত্রাকজনিত একটা রোগ। একে লাউয়ের গামি স্টেম ব্লাটইট বা গ্যামোসিস রোগ বলে। এর প্রতিকার হলো : ক্ষেত থেকে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হবে। রোগমুক্ত বীজ বা চারা ব্যবহার করতে হবে। আক্রান্ত জমি থেকে বীজ রাখবেন না। রোগের আক্রমণ বেশি হলে কপার জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন-সানভিট/ব্লিটক্স/হেমক্সি প্রতি লিটারে ২-৩ গ্রাম মিশিয়ে ৭-১০ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়াও মেনকোজেব+মেটালক্সিল জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন-রিডোমিল গোল্ড/মেটারিল/নিউবেন একই নিয়মে ব্যবহার করতে পারেন।
মৎস্য বিষয়ক
মো: নজরুল ইসলাম, গ্রাম: লাউথুতি, উপজেলা: ঠাকুরগাঁও, জেলা: ঠাকুরগাঁও
প্রশ্ন: পুকুরের পানির রঙ সবুজ হয়ে গিয়েছে; কী করব?
উত্তর : সাধারণত পুকুরের পানির রঙ সবুজ হয় অতিরিক্ত খাদ্য বা সার প্রয়োগের কারণে। খাদ্যে অতিরিক্ত আমিষ, ফসফরাস থাকলেও হতে পারে। অতিরিক্ত শেওলার জন্য পানির রঙ ঘন সবুজ হয়ে যায়। ফলে রাতের বেলায় পিএইচ মান বেড়ে যায়। অতিরিক্ত অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে ভোর রাতে মাছ পানির ওপর ভেসে উঠে এবং বেশি সময় ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলে মাছ মারা যায়। এ সমস্যা সমাধানে : মাছ খাবি খেলে তাৎক্ষণিকভাবে পুকুরের পানি সরবরাহ করতে হবে। সেই সাথে পুকুরের খাদ্য ও সার প্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে। প্রতি শতকে ৫-৮ গ্রাম গ্রানুলার অক্সিজেন প্রয়োগ করতে হবে। সম্ভব হলে ঘাসের দড়ি দিয়ে চাপিয়ে নিয়ে উঠিয়ে ফেলতে হবে। অথবা সবুজ স্তরের জন্য প্রতি শতকে ১৫ গ্রাম (৩-৫ গভীরতায় তুঁতে পাতলা কাপড়ে ছোট ছোট পুঁটলায় বেঁধে পানি পৃষ্ঠের আধা ফুট নিচে খুঁটির মাধ্যমে বেধে দিতে হবে। তুঁতে প্রয়োগের ৩ দিন পর পুকুরে ২০ কেজি/একর হারে জিওলাইট অথবা প্রতি শতকে ৫০০ গ্রাম পাথুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
প্রাণী বিষয়ক
রীতা রানি মন্ডল, গ্রাম : ভরতখালী সাঘাটা, জেলা : গাইবান্ধা
প্রশ্ন : আমার একটি ক্রস বকনা বাছুর আছে। বয়স ২ বছর। কম খাবার খায় কিন্তু দুর্বল ও পেট অনেক মোটা। এ থেকে প্রতিকার কী?
উত্তর : আপনার বকনা বাছুরের কৃমি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে। কৃমিনাশক হিসেবে নাইট্রাক্রিনিল গ্রুপের ইনজেকশন প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ ছাড়া রুচি বৃদ্ধির জন্য প্রোবায়োটিক (বায়োগাট/বায়োলাক্স পাউডার ইত্যাদি) সঙ্গে জাইমোভেট পাউডার/ডিজিমিক্স পাউডার খাওয়া যেতে পারে।
কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিবিষয়ক প্রশ্ন কৃষি কল সেন্টার হতে প্রাপ্ত)
কৃষির যে কোন প্রশ্নের উত্তর বা সমাধান পেতে বাংলাদেশের যে কোন জায়গা থেকে যে কোনো মোবাইল থেকে কল করতে পারেন কৃষি তথ্য সার্ভিসের কৃষি কল সেন্টার ১৬১২৩ নাম্বারে।
লেখক : তথ্য অফিসার (পিপি), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫। মোবাইল : ০১৭১৪১০৪৮৫৩; ই-মেইল : iopp@ais.gov.bd