Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

অর্থকরী ফসল তুলার শস্যবিন্যাস

অর্থকরী ফসল তুলার শস্যবিন্যাস
অসীম চন্দ্র শিকদার
ফসল হলো পাট। বর্তমানে হাইব্রিড জাতের তুলা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে আর হাইব্রিড জাতের তুলা আগাম চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাই তুলার পরে আর একটি লাভজনক ফসল চাষ করতে হলে আগাম জাতের তুলা চাষ করা প্রয়োজন। তবে সব জমিতে পাট চাষ করা যায় না। তাই অঞ্চলভেদে তুলার পর পাট ছাড়াও গ্রীষ্মকালিন মুগ, গ্রীষ্মকালিন তিল, নাবী জাতের গম, আলু, ভুট্টা প্রভৃতি রবি ফসল চাষ করা যায়। তাই তুলা ফসলের সাথে শস্যবিন্যাসে তুলা ফসলকে মূল ফসল ধরে নি¤েœ তিনটি লাভজনক ফসল নিয়ে আলোচনা করা হলো।                      
তুলা-পাট শস্যবিন্যাস : জৈব সার যুক্ত দো-আঁশ বেলে দো-আঁশ মাটিতে তুলা যেমন ভালো হয় তেমনি পাটও ভালো হয়। এছাড়া উভয় ফসল চাষে জমির উর্বরতা বজায় থাকে। তাই তুলা ফসলের পর পাট চাষ একটি লাভজনক শস্যবিন্যাস। তুলা চাষের পর পাট চাষ করতে হলে আগাম জাতে তুলা যেমন সিবি-১৪, সিবি-১৫,এম-১ আর হাইব্রিড রূপালী-১, ডিএম-২ ইত্যাদি জাতের তুলা চাষ করা যেতে পারে। আর তুলা বপন করতে হবে মৌসুমের শুরুর দিকে অর্থাৎ শ্রাবণ মাসের অর্ধেকের মধ্যে (জুলাই মাসে) করতে পারলে ভালো হয়। এতে পাট বপনের পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাবে।                                                                  
পাটের অনেক ধরনের জাত আমাদের দেশে চাষ করা হয়ে থাকে। তবে বিজেআরআই-এর দেশী পাট-৫, দেশী পাট-৬, দেশী পাট-৭ এবং বিনা দেশী পাট-২ তুলা ফসলের শস্যবিন্যাসের জন্য উপযুক্ত (এ গুলোকে তোষা পাট বা মিঠা পাটও বলা হয়ে থাকে)। কারণ এ জাতের পাটে সময় লাগে ৯৫ থেকে ১১৫ দিন। এ জাতের পাটের গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৩ টন (৮২.৫মন) অর্থাৎ বিঘাপ্রতি গড় ফলন ১১ মনের মত। আর এ জাতের পাট আষাঢ়ের মধ্যেই কাঁটা সম্ভব হয়। ফলে তুলা চাষের পর্যাপ্ত সময় থাকে। চাষিপর্র্যায়ে এ পাটের প্রতি ৪০ কেজির মূল্য বর্তমানে ৩২০০ টাকা থেকে ৩৬০০ টাকার মতো। অর্থাৎ একজন তুলা চাষি তুলার পর পাট চাষ করে বিঘা প্রতি ৩৫,২০০.০০ টাকা থেকে ৩৯৬০০ টাকার মতো পেতে পারেন। ফলে তার বাৎসরিক আয় হবে উন্নত জাতের তুলা ফসলসহ ৭৮,২০০ টাকা থেকে ৯৩,৬০০ টাকা এবং হাইব্রিড জাতের তুলা ফসলসহ ৮৯২০০ টাকা থেকে ১,১১,৬০০ টাকা পর্যন্ত। পাট চাষের সময় হলো ফাল্গুনের শেষ থেকে আষাঢ়ের শেষ পর্যন্ত। অর্থাৎ তুলা ফসল উঠানোর পরই পাট চাষ করা যায়। তুলা ফসল উঠার পরই যদি জমিতে রসের অভাব থাকে তবে হালকা সেচ দিয়ে জমি তৈরি করে নিতে হবে। কেন না চৈত্র মাসের মধ্যে পাট বপন না করলে ফসল উঠতে বিলম্ব হবে এবং সময় মতো তুলা চাষের বিঘœ সৃষ্টি হবে।                                                 
তুলা-মুগ শস্যবিন্যাস : শ্রাবণ মাসের মধ্যে তুলা বপন করে তুলা উঠার পর সহজেই গ্রীষ্মকালীন মুগডালের চাষ করা যায়। সিবি-১৪, সিবি-১৫, এম-১ এবং হাইব্রিড রূপালী-১, সৌরভ, ডিএম-২ জাতের তুলা চাষ করে পরবর্তীতে গ্রীষ্মকালীন মুগডালের চাষ করা যায়। তবে মুগডালের চাষ করতে হলে তুলা আগাম চাষ করাই ভালো অর্থাৎ শ্রাবণের ১৫ তারিখের মধ্যে। এতে ফাল্গুন মাসে সহজেই গ্রীষ্মকালীন মুগডালের চাষ করা যাবে।
গ্রীষ্মকালীন মুগডাল ফাল্গুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চৈত্রের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে বপন করতে হয় (ইংরেজি ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে মার্চের শেষ সপ্তাহ)। আগাম বীজ বপন করলে আষাঢ়ের অর্থাৎ বর্ষার আগেই ফসল সংগ্রহ করা যায়। বেলে এবং বেলে দো-আঁশ মাটি মুগ চাষের জন্য উপযুক্ত। বীজের পরিমাণ একরে ১০ থেকে ১২ কেজি। বপনের সময় জমিতে রস না থাকলে হালকা সেচ দিয়ে মাটি উপযুক্ত করে নিলে ভাল হয় এবং সময় মতো বীজ বপন করা যায়।
তুলার সাথে শস্যবিন্যাসের উপযুক্ত জাতগুলো হলো: বারিমুগ-৬, বিনামুগ-৫, বিনামুগ-৭, বিনামুগ-৮ এবং বিইউ মুগ-৪। গড় ফলন হেক্টর প্রতি ১.৮টন বা বিঘাপ্রতি ২৪০ কেজি বা ৪০ কেজি মণে ৬ মণ যার বাজার গড় মূল্য ৪০কেজি মণে ৩৫০০ টাকা ধরে ২১০০০ টাকার মতো। ফলে কৃষকের বার্ষিক আয় হবে বিঘাপ্রতি উন্নত জাতের তুলার ফসলসহ ৬৪,২০০ টাকা থেকে ৭৫,০০০ টাকা এবং হাইব্রিড জাতের তুলার ফসলসহ ৭৫,০০০ টাকা থেকে ৯৩,০০০ টাকা পর্যন্ত।
ডালজাতীয় ফসলে ইউরিয়া সার প্রয়োগের তেমন প্রয়োজন হয় না। এরা বায়ুমন্ডল থেকে শিকড়ের সাহায্যে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করতে পারে। আর তুলাচাষের পর মুগডাল চাষ করলে রাসায়নিক সার তেমন ব্যবহারও করতে হয় না। এ-ছাড়া ডাল জাতীয় ফসল চাষ করলে জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়।                                                                                                                           
তুলা-তিল শস্যবিন্যাস ঃ তুলা চাষের পরে গ্রীষ্মকালীন তিল চাষ কৃষকদের নিকট আর একটি লাভজনক ফসল। এছাড়া উভয় ফসল চাষে জমির উর্বরতা বজায় থাকে। শ্রাবণ মাসের মধ্যে তুলা বপন করে তুলা উঠার পর সহজেই গ্রীষ্মকালীন তিল চাষ করা যায়। সিবি-১৪, সিবি-১৫, এম-১ এবং হাইব্রিড রূপালী-১, সৌরভ, ডিএম-২ জাতের তুলা ফাল্গুন মাসের মধ্যেই উঠে যায়। ফলে ফাল্গুন মাসেই তিল বপন করা যায় এবং আষাঢ়ের অর্থাৎ বর্ষার আগেই কাটা যায়।
তুলা চাষের পর বারি তিল-৩, বারি তিল-৪, বিনা তিল-৪ খুবই উপযোগী জাত। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে তিল বপন করা উত্তম। মাটিতে রসের অভাব হলে হালকা সেচ দিয়ে জমি তৈরি করে নিয়ে সময় মতো তিল চাষ করতে হবে। বিঘাপ্রতি ১ থেকে ১.১৫০ কেজি বীজের দরকার হয়। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১২০০ কেজি থেকে ১৫০০ কেজি বা বিঘাপ্রতি ১৬০ থেকে ২০০ কেজি বা ফলন ৪ থেকে ৫ মন (৪০কেজি মনে)। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রতি ৪০ কেজি ৩২০০ টাকা থেকে ৩৬০০ টাকা ধরে ১২,৮০০ টাকা থেকে ১৮,০০০ টাকা পর্যন্ত। ফলে কৃষকের বার্ষিক আয় হবে বিঘাপ্রতি উন্নত জাতের তুলা ফসলসহ ৫৬,০০০ টাকা থেকে ৭২,০০০ টাকা এবং হাইব্রিড জাতের তুলা ফসলসহ ৬৪,০০০ টাকা থেকে ৯০,০০০ টাকা পর্যন্ত।
আষাঢ় মসের মধ্যে ফসল উঠে যাবে। তখন তুলা বপনের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়।
ফসলের শস্য বিন্যাস নির্ভর করে চাষিদের ইচ্ছার উপর আর উপযুক্ত জমি এবং অঞ্চলভিত্তিক প্রচলিত ফসলের উপর। বর্তমানে তুলা ফসলের জনপ্রিয় শস্যবিন্যাস হলো: তুলা-পাট, তুলা-গ্রীষ্মকালীন মুগ এবং তুলা-গ্রীষ্মকালীন তিল চাষ। আবার কিছু কিছু ফসল তুলা ফসলের সাথে রিলে চাষ করা যেতে পারে। যেমন গম, ভুট্টা ইত্যাদি। তবে কৃষকদের তুলা ফসলের উপরই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে; কেননা, তুলা বর্তমানে যথেষ্ট লাভজনক ফসল। এক বিঘা জমিতে উন্নজাতের বীজতুলা ১২ থেকে ১৫ মণ উৎপাদিত হয় যার বর্তমান বাজারমূল্য ৪৩,২০০.০০ টাকা থেকে ৫৪,০০০.০০ টাকা এবং হাইব্রিড জাতের বীজতুলা ১৫ থেকে ২০ মন পর্যন্ত উৎপাদন সম্ভব যার বর্তমান বাজারমূল্য ৫৪,০০০.০০ টাকা থেকে ৭২,০০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি মণ (৪০ কেজি) ৩৬০০০ টাকা ধরে ; যা প্রচলিত যে কোন মাঠ ফসলের তুলনায় অনেক বেশি লাভজনক। তাই কৃষক ভাইদের প্রতি পরামর্শ, শস্যবিন্যাসে তুলা ফসলের পর কোন ফসল চাষ করবেন তা সঠিকভাবে নির্বাচন করুন এবং বেশি লাভবান হোন।                                                            

লেখক : কটন ইউনিট অফিসার (অব:), তুলা উন্নয়ন বোর্ড, মোবাইল : ০১৫৫২-৩৬২৯০১