Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কৃষিতে প্রোবায়টিক ব্যাক্টেরিয়া ব্যবহারে সম্ভাবনা

কৃষিতে প্রোবায়টিক ব্যাক্টেরিয়া ব্যবহারে সম্ভাবনা
ড. মুহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন
ক্টেরিয়া কিংবা জীবাণুর নাম শুনলেই মানুষ আগে ভয় পেতো। এখন আর ভয় নয়, বন্ধু হিসেবে উপকারী ব্যাক্টেরিয়াকে গ্রহণ করা যাবে। ব্যাক্টেরিয়ার সাথে প্রাণীকুলের মধ্যে মানুষের সবচেয়ে বেশি মিল, যা শতকরা ৩৭ ভাগ, যেখানে বানরের সাথে মাত্র ৬ ভাগ। এই মিলের সাদৃশ্যকে কেন্দ্র করে উপকারী ব্যাক্টেরিয়া নিয়ে আমাদের দেশে ইতোমধ্যেই গবেষণার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আবার এই মিলের সাদৃশ্যকে বিবেচনায় এনে প্রকৃতি হতে উপকারী ব্যাক্টেরিয়া সংগ্রহ করাও সম্ভব। বিশ্বের উল্লেখযোগ্য দামী এন্টিবায়োটিক দ্রব্যগুলো যেমন এজিথ্রোমাইসিন, স্ট্রেপটোমাইসিন, ভেলেডিমাইসিন, রাইফাম্পাসিন, কানামাইসিন ব্যাক্টেরিয়া হতেই উৎপাদিত, যা জনস্বাস্থ্যে ব্যবহার হচ্ছে। যত্রতত্র নিয়মবহির্ভূত রাসায়নিক বালাইনাশকের ব্যবহারের জন্য জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যা বহু গবেষণায় উঠে এসেছে। আবার উন্নত দেশে রাসায়নিক বালাইনাশকের বিকল্প হিসেবে রাসায়নিক ব্যবহারকে কমিয়ে এনে ব্যাক্টেরিয়াল ফরমুলেশান জৈব পণ্য ব্যবহার হচ্ছে। উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশের কৃষিতে রাসায়নিক বালাইনাশকের পরিবর্তে ব্যাক্টেরিয়ার উৎপাদিত ফরমুলেশান পণ্য ব্যবহার  হতে পারে দৃষ্টান্ত।
কৃষিতে উপকারী বেসিলাস এর ব্যবহার কৃষি বন্ধব যা একটি ভালো উদ্যোগ। উন্নত দেশের ন্যায় আমাদের দেশে ক্ষুদ্র আকারে গবেষণাগারে শুরু হয়েছে। মূলত ব্যাক্টেরিয়াগুলো শক্তিশালি পেপ্টাইডোগ্লাইকোন এর মাধ্যমে প্রতিকূল অবস্থায় গাছকে খাদ্যরস গ্রহণে সহয়তা করে বিভিন্ন হরমোন প্রবৃত্ত করে শক্তিশালি করে এবং ক্ষতিকর জীবাণুর এন্টাগনাস্টিক হিসেবে কাজ করে যার ফলে জীবাণুরা অবস্থান করতে পারে না। ফলে গাছ আর রোগাক্রান্ত হয় না। বেসিলাস নামক ব্যাক্টেরিয়ার ব্যবহার এবং প্রয়োগ একটি নতুন বিষয় যার উপর ইতোমধ্যেই চট্টগ্রাম এর হাটহাজারীস্থ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ২০১৫ সাল হতে অনেকটা পথ এগিয়েছে। বর্তমানে গবেষণার মাধ্যমে পরিবেশ বান্ধব উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার উপর জোর দেয়া হচ্ছে। দেশব্যাপী এই প্রযুক্তি কৃষকের কাছে সহজভাবে পৌঁছে দেয়া যায় তা নিয়ে গবেষণা চলছে।  উপকারী ব্যাক্টেরিয়া ব্যবহার করে বেগুনের ঢলে পড়া রোগ ইতোমধ্যেই দমন করা সম্ভব হয়েছে যা বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া হতে জানা যায় ।
প্রোবায়োটিক ব্যাক্টেরিয়ার গুরুত্ব
জীবিত অণুজীব পোষকের (প্রাণী/ উদ্ভিদ/ অন্য জীব) দেহে ও পরিবেশে উপস্থিত থেকে পোষককে ক্ষতিকর রোগ জীবাণু থেকে সুরক্ষা দেয় ও পোষকের দৈহিক বৃদ্ধি ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে সেসব উপকারী অণুজীবকেই প্রোবায়োটিক বলা হয়। সহজ কথায় প্রোবায়োটিক হচ্ছে উপকারী/বন্ধু অণুজীব ব্যাক্টেরিয়া যাদের উপস্থিতিতে ক্ষতিকর অণুজীব দমন করা যায়। ফলে চাষযোগ্য ফসলকে বিভিন্ন রোগব্যাধি হতে বাঁচিয়ে এবং পরিবেশবান্ধব চাষ ব্যবস্থাপনার আওতায় ফসলের সার্বিক উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়। আজকাল বিভিন্ন গৃহপালিত প্রাণী এমনকি মানুষকেও নির্ধারিত প্রোবায়োটিক খাওয়ানো হচ্ছে তাদের পেটের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য। এতে করে পেটের ভেতরের ক্ষতিকর অণুজীবের সংখ্যা কমে যায়, উপকারী অণুজীবের সংখ্যা বেড়ে যায় এবং ক্ষতিকর অণুজীবের ক্ষতি করার ক্ষমতা অনেকাংশেই কমে যাওয়ায় সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যায়। আমাদের দেশে উদ্ভিদের জন্য বেসিলাস প্রোবায়োটিক ব্যাক্টেরিয়ার প্রয়োগ সবে মাত্র শুরু হয়েছে যার ফলে গাছে বা ফসলে ক্ষতিকর জীবাণুর পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। এই জন্য প্রোবায়োটিক বেসিলাস কৃষির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মরণব্যধী রাসায়নিক বালাইনাশকের বিকল্প হিসেবে উক্ত উপকারী বেসিলাস ব্যাক্টেরিয়া এবং তাদের উৎপাদিত পণ্য জীব-বালাইনাশক হিসেবে ব্যবহার করা আজ সময়ের দাবি। দেশে বড় আকারে বায়োসেন্টার করে এ ধরনের কাজকে অগ্রাধিকার দেবার জন্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন। তবেই উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশের কৃষিতে প্রোবায়োটিক ব্যাক্টেরিয়ার ব্যবহার  হতে পারে। রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের দেশে এখনও কোন বড় আকারের বায়োফারমেনটার বিশিষ্ট বায়োসেন্টার গড়ে ওঠেনি। ফলে উন্নত দেশের মতো বেসিলাস, মাইকোরাইজা, ট্রাইকোডার্মার কোন ফরমুলেশান পণ্য ব্যাপকভাবে উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ল্যাবরেটরি নির্ভর স্বল্প আকারে গবেষণাভিত্তিক উপকারী জীবাণুর কালচার, ফরমোলেশানের কাজ আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে। স্বাধীনতা-উত্তর দেশের বালাইনাশক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘বালাইনাশক অধ্যাদেশ-১৯৭১’, বালাইনাশক রুলস ১৯৮৫, বালাইনাশক সংশোধনী অধ্যাদেশ, ২০০৭, সংশোধনী আইন ২০০৯, বালাইনাশক আইন ২০১৮ প্রণয়ন করা হলেও বিধিমালায় স্থানীয় পর্যায়ে বালাইনাশক উৎপাদন (ফর্মুলেশন) শিল্পসহায়ক কোনো নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত নেই। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের জন্য বালাইনাশকের নিরাপদ ব্যবহার অপরিহার্য। দেশের বালাইনাশক কোম্পানিগুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত অতি উচ্চমাত্রা (শ্রেণি-১এ), উচ্চমাত্রা (শ্রেণি-১বি) ও মাঝারি মাত্রার (শ্রেণি-২) বিষক্রিয়ার শ্রেণিভুক্ত বালাইনাশক আমদানি করে থাকে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে এসব ঝুঁকিপূর্ণ বালাইনাশক ব্যবহারে মাটি, পানি, বাতাস ও ফসলে বিষক্রিয়ার অবশিষ্টাংশ থাকার সুযোগ থাকে। অন্যদিকে জৈব বালাইনাশক কিংবা অপেক্ষাকৃত অধিক নিরাপদ শ্রেণি-৩ ভুক্ত বালাইনাশকের স্থানীয় উৎপাদনে সরকারি নীতিগত সহযোগিতা অপরিহার্য। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ প্রাকৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এই খাতে দেশীয় উদ্যোক্তাদের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসতে হবে।
 
লেখক : ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম। মোবাইল : ০১৮৭৩৪৮৮৭৩৩, ই-মেইল :thronybari@gmil.com