Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণে সফল একজন কৃষকের গল্প

কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণে সফল একজন কৃষকের গল্প
মোহাঃ নুরে আলম
জীবন গল্পের সাথে হার না মানা একজন কৃষক, যার নাম মোঃ মুসা আহমেদ অপু, পিতা: সৈয়দ আহমেদ, গ্রাম: এক্তারপুর, পো: বিজয় হরষপুর, হরষপুর, বিজয়নগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ২০২০ সাল সারা বিশ্বে করোনা মহামারী তুঙ্গে। সবকিছু যেন স্থবির হয়ে আছে। ৭ সদস্যবিশিষ্ট পরিবার নিয়ে দিশেহারা। করোনা মহামারীর আগে তিনি সিলেটের ভোলাগঞ্জে পাথরের ব্যবসা করে কোনমতে পরিবার নিয়ে দিনাতিপাত করতেন। করোনার থাবায় তাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কি করবে ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছিলেন না। ঠিক এমন সময় দেখা হয় কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জনাব সবুজ হুসাইন এর সাথে। তিনি (কৃষক) তাকে পরিবারের সকল অভাব অনটনের কথা খোলামেলাভাবে বললেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জনাব সবুজ হুসাইন তার সবকিছু মনোযোগ সহকারে শুনলেন এবং পরামর্শ দেন কৃষি বিভাগ থেকে ভর্তুকীর আওতায় একটি কম্বাইন হারভেস্টর ক্রয় করার জন্য। তার আগে বলে নেই করোনার থাবায় সবকিছু বন্ধ হলেও কৃষি বিভাগ বন্ধ হয় নাই। কৃষি বিভাগের কার্যক্রম দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। জনাব মুছা আহমেদ অপুর অভাবের কথা শুনে এগিয়ে আসলেন আবেদীন ইকুইপমেন্টস লিঃ কোম্পানিও। তিনি সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প এর আওতায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিজয়নগর এর সহতায় আবেদীন ইকুইপমেন্টস লিঃ হতে কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে ২০২১-২২ অর্থবছরে বোরো মৌসুমে একটি কম্বাইন হারভেস্টার ক্রয় করেন।
কৃষিযন্ত্র গ্রহণের পর কৃষকের অর্থনৈতিক অবস্থা :  কৃষি যন্ত্র তথা কম্বাইন হারভেস্টরটি ক্রয় করার পর জনাব মুছা আহমেদ অপুকে আর পেছনের দিকে তাকাতে হয়নি। তিনি কম্বাইন হারভেস্টরের মাধ্যমে এলাকার অনেক কৃষকের ধান কাটতে শুরু করেন। করোনা কালীন সময়ে তখন শ্রমিক পাওয়াও কষ্টকর ছিল। সবাই মেশিনের সহায্যে বিঘাপ্রতি ১,৮০০/- টাকা দরে ধান কাটতে শুরু করেন। এত করে একদিকে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। কারণ কম্বাইন হারভেস্টার এর সাহায্যে এক সাথে ধানকাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দী করে কৃষক ধান ঘরে তুলতে পারছেন।
জনাব মুছা আহমেদ অপু অদ্য বধি ১,১০০ বিঘা জমির ধান ১,৮০০/- টাকা করে কর্তন করে মোট ১৯,৮০,০০০/- টাকা আয় করেন। তাহার সকল খরচ বাদ দিয়ে নিট আয় করেন ১৩,২০,০০০/- টাকা। এতে করে অভাব আর তার পিছু তাড়া করতে পারছে না। তিনি এখন একজন  কৃষিনির্ভর কর্মব্যস্ত মানুষ। তিনি তাহার পরিবারের সকলকে নিয়ে খুব হাসিখুশিভাবে দিনযাপন করছেন। তার এই গল্প অনেকের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
মেশিন না হলে ধান কাটাই যেতনা, আগে ধান কাটতে খুব কষ্ট করতে হতো। শ্রমিকের অভাবে ধান কাটা যেতনা। অনেক ধান জমিতে নষ্ট হতো। শ্রমিকের মাধ্যমে ধান কাটতে গেলে খরচ হতো বিঘাপ্রতি ৫,০০০-৬,০০০/- টাকা। কিন্তু মেশিনের মাধ্যমে ধান কর্তন, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দীসহ মোট খরচ হচ্ছে মাত্র ২,০০০/- টাকা। কম্বাইন হারভেস্টর এর মাধ্যমে এখন প্রায় ৭০ ভাগ ধান, গম, ভুট্টা কর্তন, মাড়াই ও ঝাড়াই এর কাজ সম্পাদন করছেন কৃষকেরা।

লেখক : উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার, বিজয়নগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। মোবাইল : ০১৮১৯৯২৬৩৪৭