Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযানে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ

জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযানে
জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ
বাদল চন্দ্র বিশ^াস
কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। বর্তমান সরকারও কৃষিবান্ধব সরকার। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং জমি হ্রাসের প্রেক্ষাপটে মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধানের জন্য ইতোমধ্যে বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে দানাজাতীয় শস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি খাদ্যশস্য রপ্তানিও করা হচ্ছে। বাংলাদেশে ভৌগোলিকভাবেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, খরা, রোগবালাই ও পোকামাকড়ের উপদ্রব বেশি। তবে এত প্রতিকূলতার মাঝেও কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার কৃষিবিদ তথা কৃষি বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব হয়েছে। কিন্তু দেখা যায় প্রতি বছর কৃষকের উৎপাদিত ফসলের একটি বড় অংশ ইঁদুর দ্বারা নষ্ট হয়। ইঁদুর মাঠ থেকে শুরু করে ফসল কর্তনের পরেও গুদামজাত অবস্থায় বা গোলায় তোলার পরও ক্ষতি করে। সুতরাং ইঁদুর আমাদের ফসলের এমন একটি অনিষ্টকারী বালাই যা সর্বাবস্থায় কৃষির ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। ইঁদুর শুধু  ফসল নয় মানুষের স্বাস্থ্য, পরিবেশ, সম্পদেরও ক্ষতি করে এবং রোগজীবাণুর বাহক হিসাবে কাজ করে।
ইঁদুর একটি চতুর ও নীরব ধ্বংসকারী স্তন্যপায়ী প্রাণী। ইঁদুর প্রাণীটি  ছোট  হলেও  ক্ষতির  ব্যাপকতা  অনেক। এরা  যে  কোন  খাদ্য  খেয়ে  বাঁচতে  পারে।  যে  কোন  পরিবেশে  মানিয়ে  নিতে  পারে। অল্প  বয়সে  বাচ্চা  দিতে  পারে। ফসলের জন্য ক্ষতিকর স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে ইঁদুর প্রধান শত্রু। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে ইঁদুর অন্যতম একটি সমস্যা। বাংলাদেশে প্রায় ৫-৭ শতাংশ ধান ও ৪-১২ শতাংশ গম ইঁদুর নষ্ট করে । ইঁদুর যতটা না খায় তার চেয়ে ৪ থেকে ৫ গুণ নষ্ট করে। প্রতি বছর দেশে ইঁদুরের কারণে গড়ে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়ে থাকে। তাছাড়া ইঁদুর মুরগীর খামারে গর্ত করে, খাবার খেয়ে, ডিম ও বাচ্চা খেয়ে বছরে প্রায় খামার প্রতি ১৮০০০ টাকার ক্ষতি করে।
বেশির ভাগ ইঁদুর গর্তে বাস করে বলে সম্পূর্ণভাবে দমন বা নির্মূল করা সম্ভব হয় না। ইঁদুরের সমস্যা দীর্ঘদিনের। এ সমস্যা পূর্বেও যেমন ছিল, বর্তমানেও রয়েছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং অংশগ্রহণ। এককভাবে ইঁদুর নিধন করার পাশাপাশি অন্যদেরকেও ইঁদুর নিধনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। এককভাবে ইঁদুর নিধন করলে সাময়িকভাবে এ সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়, তবে অল্প কিছুদিন পরেই আবার নতুন করে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। ইঁদুর নিধন অভিযানের সফলতা নির্ভর করে সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ওপর। ঘরবাড়ি, গুদাম, হাঁস-মুরগির খামার, অফিস ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রতিনিয়ত ইঁদুরের উপস্থিতি যাচাই করে জৈবিক দমন ব্যবস্থাপনাসহ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অন্যান্য ব্যবস্থাপনায় ইঁদুর নিধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আমি জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২৩ এর সার্বিক সাফল্য কামনা করি।

লেখক : মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ওয়েবসাইট:www.dae.gov.bd