Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

অনলাইনে কোরবানির জন্য সঠিক গরু কেনার কৌশল

অনলাইনে কোরবানির জন্য সঠিক গরু কেনার কৌশল
ডা: সুচয়ন চৌধুরী
কোরবানির এ সময়ে প্রতি বছর গরুর বাজারগুলো থাকে জমজমাট। কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর অনলাইন বাজার থেকে পশু ক্রয়ের প্রবণতা বেড়েছে অনেক। ক্রেতারা অনলাইনেই অনেকে পছন্দ করে কিনে নিচ্ছেন তাদের পছন্দের পশুটি। খামারিরাও দিনের পর দিন যত্ন করে তৈরি করা গরুটি সঠিক মূল্যে তুলে দিচ্ছে ক্রেতার হাতে। তবে এই ব্যবস্থায় গরু ক্রয়ের ক্ষেত্রে সঠিক সুস্থ গরুটি যাচাই-বাছাই করে ক্রয় করা খুব জরুরি। সুস্থ গরু যাচাই-বাছায়ের কিছু বিষয় জানা থাকলে অনলাইনে কেনাকেটা করে প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে। তাই সেই বিষয়ে আপনাদের কিছু কৌশল নিয়ে আজকে আলোচনা করব।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনলাইনে ছবি দেখেই পছন্দ করেন আপনার কোরবানির গরুটি। অনেক বিক্রতা ভিডিও দিয়েও ক্রেতাকে             আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন। ক্রেতাকে শুধুমাত্র ছবি দেখে বা ভিডিও দেখে গরু ক্রয় করা উচিত নয়। অনলাইনে ছবি দেখে পছন্দ হলে ক্রেতার সাথে কথা বলে গরুটি স্বচক্ষে দেখে নেয়া উচিত। ছবি/ভিডিও এবং সরাসরি গরু দেখে নি¤েœাক্তভাবে গরুর সুস্থতা নিশ্চিত হওয়া যায়।
ছবিতে বা ভিডিও দেখে প্রথমে উপযুক্ত গরু নির্বাচন করতে হবে। চেষ্টা করতে হবে সব দিকের ছবি দেখে কিনতে। বিশেষ করে সামনের পেছনের ডানের বামের সম্পূর্ণ ছবি অবশ্যই থাকতে হবে। খুব ভালো করে খেয়াল করে দেখতে হবে যে, গরুটি তার চার পায়ের উপর সমানভাবে ভর করে দাঁড়িয়েছে কিনা। যদি তার কোন পায়ে সমস্যা থাকে বা ব্যথা থাকে তাহলে গরুটি ঐ পায়ের উপর কম ভর দিবে এবং অন্যান্য পায়ের উপর বেশি ভর দিয়ে দাঁড়াবে।
ছবি জুম করে প্রতিটি পা এবং পায়ের ক্ষুর আলাদা আলাদাভাবে চেক করে নিতে হবে। অসুস্থ গরুর মূলত পায়ের ক্ষুরের মাঝখানে ঘাঁ বা ক্ষত থাকতে পারে।
সুস্থ গরুর একটি লক্ষণ হলো নাকের উপরে (গুুঁধষব) বিন্দু বিন্দু ঘামের মতো ফোঁটা থাকে অথবা সেটা কিছুটা আর্দ্র থাকে। যদি পশুর শরীরে জ্বর বা অন্য কোন অসুস্থতা থাকে তাহলে এই স্থানে শুষ্ক হয়ে যায়।
সুস্থ গরুর চোখগুলো হবে উজ্জ্বল। চোখের পাতা থাকবে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রসারিত। চোখের আশপাশে কোন ধরনের ক্ষত বা পানির ধারার চিহ্ন থাকবে না। চোখে কোন ধরনের ঝিমুনি ভাব থাকবে না। গরুর চোখের মনির চার পাশের অংশটি হালকা গোলাপী বর্ণের হয় । তবে সেটা যদি লাল দেখা যায় তাহলে ধরে নিতে হবে চোখে কোন ধরনের প্রদাহ আছে। যা অসুস্থতার লক্ষণ।
গায়ের পশম যদি উস্কখুসকো হয় তাহলে এই গরুটিকে শতভাগ পছন্দের তালিকায় রাখা ঠিক হবে না। এই সময় গরু লেজের আগায় পশম নেই অথবা লেজে ক্ষত রয়েছে ভালোভাবে খেয়াল করে দেখতে হবে।
গরু বাছাইয়ের সময় সামনের দুই পায়ের মাঝখানে বুকের নিচের অংশটি খেয়াল করতে হবে। এই স্থান কোন অস্বাভাবিক ফোলা আছে কি না। আর সামনের পা দুইটি অধিক প্রসারিত আছে কিনা। যদি বুকে কোন ধরনের ব্যথা বা সমস্যা থাকে তাহলে গরু তার সামনের পা দুটি একটু বাহিরমুখি করে রাখার চেষ্টা করবে।
পেটের নিচের অংশটিও খেয়াল করতে হবে। যদি এটি অস্বাভাবিক ভাবে ঝুলে থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে এই গরুর শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি হবে। একইভাবে পেছনের দিকে লেজের নিচের অংশে যেখানে অধিক মাংস থাকে সেখানে যদি বেশি ঝুলে থাকে তাহলেও এই গরুর শরীরে অধিক চর্বি থাকবে।
গরুর শ্বাস প্রশ্বাস লক্ষ্য করতে হবে। যদি শ্বাস গ্রহণ ও নিঃশ্বাস ত্যাগ ছন্দময় হয় তাহলে এটি পশুর সুস্থতার ইঙ্গিত দেয়। তবে শ্বাস-প্রশ্বাস যদি খুব দ্রুত বা খুব ধীরে হয় তাহলে এটি পশুর অসুস্থতা নির্দেশ করে। যদি সরাসরি দেখেন তাহলে খেয়াল করতে হবে শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় যে বাতাস ত্যাগ করছে তা খুব গরম কিনা? শরীরে জ্বর থাকলে             শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় গরম হাওয়া বের হবে।
পশুর পাকস্থলী তথা পেটের আকার শরীরে সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। পেট খুব বড় হলে ভুঁড়ির কারণে লাইভ ওয়েটে পাওয়ার ওজনের তুলনায় প্রকৃত ভক্ষণযোগ্য মাংসের পরিমাণ অনেক কম হবে।তাছাড়া পেটে গ্যাস জমে যদি পেট ফুলে সেটি পশুর অসুস্থতা নির্দেশ করে।
শরীর খুব বেশি বড় ও নাদুশ-নুদুশ থলথলে হলে সেই পশু থেকে ভালো মাংস পাওয়া সম্ভব না। ঐ পশুর শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকবে। তাছাড়া কেউ যদি অসাধু উপায়ে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ দিয়ে পশু মোটাতাজাকরণ করে থাকে তাহলে ঐ পশুটি প্রাণবন্ত হয় না। অর্থাৎ আপনি পশুটির ভিডিও দেখলেই তা বুঝে যাবেন।
পশুটির কান জোড়া খেয়াল করতে হবে। কানে কোন ধরনের কাটা ছেড়া, ফাটা আছে কি না, তবে এই ক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষণীয় তা হলো সুস্থ পশুর কানগুলো থাকবে খাড়া এবং পরিবেশের যে কোন শব্দে সে সাড়া দেবে। আর যদি অসুস্থ পশু হয় তাহলে তার কান নিস্তেজ হয়ে ঝুলে পড়তে পারে। আর অসুস্থ পশুটি কান নাড়াতে অনীহা প্রকাশ করবে।
গরুর বয়স সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য পশুটির দাঁতের ছবি প্রয়োজন। নিচের পাটিতে মাঝ বরাবর দুইটি বড় দাঁত থাকে (চবৎসধহধহঃ ওহপরংংড়ৎ ঞববঃয) তাহলে পশুটি দুই বছর পার করেছে। দুই থেকে তিন বছরের গরু মোটামুটি মাংসের গুণগত মান ভাল থাকে। তাছাড়া এই বয়সে শরীরে চর্বির পরিমাণও কম থাকে।
খেয়াল করতে হবে নাক, মুখ পরিষ্কার আছে কিনা? নাকে সর্দি থাকলে সেটা পশুর অসুস্থতা নির্দেশ করে। তাছাড়া মুখে অস্বাভাবিকভাবে লালা ঝরলে ধরে নেয়া যায় মুখে কোন ধরনের ঘাঁ বা অন্য কোন ধরনের সমস্যা আছে।
পশুর শরীরে কোন ক্ষত আছে কিনা তা পশুর বিভিন্ন দিক থেকে তোলা ছবি জুম করে দেখে নিশ্চিত হতে হবে। তবে কেনার পরও কিছু বিষয়ে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। অনলাইনে গরু কেনার পর ডেলিভারি দেওয়ার সময় বিক্রেতা যাতে কোন ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিতে না পারে সে জন্য আপনি যে পশুটি পছন্দ করেছেন তার রঙ, বুকের বেড়, দৈর্ঘ্য, উচ্চতা এবং নির্দিষ্ট কোন শনাক্তকরণ চিহ্ন যা পশুর দেহে বিদ্যমান তা নির্দিষ্ট করে রাখতে হবে।
তাই সঠিক নিয়ম জেনে কোরবানির পশু ক্রয় ও জবাই করা উচিত। এতে করে দেশের প্রকৃত খামারিরা উপকৃত হবে এবং চারপাশের পরিবেশ থাকবে দুর্গন্ধ ও দূষণ মুক্ত।

লেখক : উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল, মানিকছড়ি, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা। মোবাইল : ০১৭১৮৬৩০২৬৮, ই-মেইল : ঁষড়.সধহরশপযধৎর.ফষং@মসধরষ.পড়স