Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

শিশুর পুষ্টি

শিশুর পুষ্টি
তাসনীমা মাহজাবীন
১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস ২০২৪ যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় উদযাপন করা হয়। এ দিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে আগামী দিনের কর্ণধার শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনায় শিশুর পুষ্টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 
একটি দেশের পুষ্টি পরিস্থিতি পরিমাপের অন্যতম সূচক হলো শিশুর পুষ্টিগত অবস্থা। শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে হলে যত্ন শুরু করতে হবে তার জন্মের আগে থেকেই অর্থাৎ মা যখন গর্ভবতী হবেন তখন থেকেই। এই সময়কালকে বলা হয়ে থাকে সোনালী ১০০০ দিন। মায়ের গর্ভকালীন সময়ে শিশুর ২৭০ দিন এবং তার দুই বছর বয়স পর্যন্ত ৭৩০ দিনকে স্বাস্থ্য ও পুষ্টির হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে গণনা করা হয়। 
গর্ভকালীন সময়ে মায়ের সুষম খাবার, বিশ্রাম ও স্বাস্থ্যগত যত্ন নিলে শিশু সঠিক ওজন (ন্যূনতম ২.৫ কেজি) নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এই দুই বছরে শিশুর মস্তিষ্কের বৃদ্ধি খুব দ্রুত হয়। শিশুর জন্মের সাথে সাথে মায়ের বুকের শালদুধ খাওয়াতে হবে এতে শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির পাশাপাশি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। মায়ের দুধ এর বিকল্প আর কিছুই নাই তাই শিশুর ৬ মাস বয়স পর্যন্ত  মায়ের দুধ খাওয়ানোর উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নবজাতকের বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি পরিমাণ মতো মায়ের দুধে বিদ্যমান থাকে। এরপর শিশুর ৬ মাস বয়সের পর থেকে আস্তে আস্তে অন্যান্য সহজপাচ্য খাবারে অভ্যস্ত করাতে হবে। প্রথম দিকে পাকা কলা বা পাকা পেঁপে জাতীয় খাবার চটকে খাওয়াতে হবে এবং অবশ্যই প্রতিদিনের ঘরে তৈরি খাবার অভ্যস্ত করতে হবে। খুব বেশি ব্লেন্ডারে পেস্ট করা খাবার না দিয়ে ঘরের স্বাভবিক খাবার খাওয়ালে শিশুর চাবানোর ক্ষমতা ও মাংসপেশির স্বাভাবিক কাজ করার ক্ষমতা ঠিক থাকে। এছাড়া এসময়ে শিশুর অনুপুষ্টি নিশ্চিত করতে ন্যূনতম খাদ্য বৈচিত্র বা (গরহরসঁস ফরবঃধৎু ফরাবৎংরঃু ভড়ৎ পযরষফৎবহ) অনুযায়ী খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। 
শিশুকে প্রতিদিন নিম্নলিখিত ৮টি খাবারের তালিকা থেকে মায়ের দুধসহ কমপক্ষে ৫টি শ্রেণীর খাদ্য খাওয়াতে হবে। উল্লিখিত ৮টি খাদ্য শ্রেণি হলো: (১) মায়ের দুধ; (২) শস্য ও শস্যজাত খাবার, মূল এবং কন্দ; (৩) ডাল, বীজ ও বাদামজাতীয় খাবার; (৪) দুধ ও দুধজাতীয় খাবার যেমন- দই, পনির ইত্যাদি); (৫) মাছ-মাংসজাতীয় খাবার; (৬) ডিম; (৭) ভিটামিন এ জাতীয় ফল ও সবজি (যেমন: গাজর, মিষ্টিকুমড়া); (৮) অন্যান্য ফল ও সবজি। এতে তার দৈনন্দিন ভিটামিন ও খনিজলবণের চাহিদা পূরণ হবে। এছাড়া শিশুর পযাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। (ঋঅঙ. ২০২১. গরহরসঁস ফরবঃধৎু ফরাবৎংরঃু ভড়ৎ ড়িসবহ. জড়সব. যঃঃঢ়ং://ফড়র.ড়ৎম/১০.৪০৬০/পন৩৪৩৪বহ)
শিুশুর স্বাভাকি ওজন ও উচ্চতা থেকে তার পুষ্টি অবস্থা নির্ণয় করা হয়। শিশুর বয়স অনুযায়ী নির্দিষ্ট উচ্চতার কম হলে খর্বকায় (ঝঃঁহঃরহম) বলা হয়ে থাকে। অপরদিকে বয়সের তুলনায় কম ওজন সম্পন্ন শিশুকে কৃষকায় বা (ধিংঃরহম) বলা হয়ে থাকে। এধরনের শিশু একটি পরিবারের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার অভাবকেও চিহ্নিত করে। বর্তমানে বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০২২ অনুযায়ী খর্বকায় (ংঃঁহঃরহম)  শিশুর সংখ্যা ২৪% ও কৃশকায় (ধিংঃরহম) শিশু ১১% এবং কম ওজন (ঁহফবৎ বিরমযঃ) সম্পন্ন শিশু ২২%। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (ঝউএ) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে খর্বকায় শিশুর সংখ্যা ১৫% নামিয়ে আনতে হবে। বিগত বছরের  তুলনায় যদিও বাংলাদেশে পুষ্টি পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে কিন্তু শিশুর পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বিষয়ে আরও যত্নবান হতে হবে কারণ শিশুর  বুদ্ধি বৃত্তি, মানসিক বিকাশ ও শারিরিক বিকাশ এর জন্য সঠিক খাদ্যাভাস এর কোন বিকল্প নেই। 

লেখক : প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফলিতপুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান)। মোবাইল : ০১৭৮১৮৮৭৮৮৫