Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কৃষি উন্নয়ন ও সাফল্যের ১৫ বছর

কৃষি উন্নয়ন ও সাফল্যের ১৫ বছর
কৃষিবিদ কাজী আব্দুর রায়হান
কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং জনগণের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। জিডিপি’তে কৃষি খাতের অবদান ১১.২০%। কৃষিতে নিয়োজিত জনশক্তি ৪৬.৬৬% (শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২, বিবিএস)। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির গুরুত্ব বিবেচনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  কৃষিতে সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন এবং বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদ কৌশল প্রবর্তনের মাধ্যমে টেকসই কৃষির যাত্রার সূচনা করেছিলেন। ২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকার কর্তৃক দেশের কৃষির উন্নয়নে নানাবিধ যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এতে কৃষি ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়। আধুনিক, লাভজনক ও যান্ত্রিক কৃষি ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়। ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। কোভিড-১৯ অভিঘাত ও বৈশ্বিক সংকট সত্ত্বেও  কৃষি উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রেখে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির ভিত্তিকে সুদৃঢ় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
খাদ্যশস্য ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনে ধারাবাহিক সাফল্য : খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। ২০০৮-০৯ সালে যেখানে মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ২৮ লক্ষ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন, সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে ৪ কোটি ৬৬ লক্ষ ৮৭ হাজার মেট্রিক টন হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে (বিস্তারিত সারণি-১)। বাংলাদেশের ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে; যেমন, ধান উৎপাদনে ৩য়, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে ৩য়, পাট উৎপাদনে ২য়, চা উৎপাদনে ৪র্থ, জাম জাতীয় ফল উৎপাদনে ৪র্থ, গ্রীষ্মম-লীয় ফল (কাঁঠাল, লিচু) উৎপাদনে ৬ষ্ঠ এবং আলু ও আম উৎপাদনে ৭ম।
জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন : গবেষণা খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি, উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, গবেষণা অবকাঠামোর উন্নয়ন, গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি এবং দেশে বিদেশে বিজ্ঞানীদের উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিগত ১৫ বছরে বৈরী পরিবেশ সহনশীল জাতসহ মোট ৬৯৯টি উন্নত/উচ্চফলনশীল জাতের ফসল উদ্ভাবন ও ৭০৮টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
সার ব্যবস্থাপনা সংস্কার : জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে সার ব্যবস্থাপনা সংস্কারের সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা ২০০৯’ প্রণয়ন করা হয়। প্রতিটি ইউনিয়নে একজন সার ডিলার ও ৯ জন খুচরা সার বিক্রেতা নিয়োগ করা হয়েছে। ফলে সার প্রাপ্তিতে কৃষকের ভোগান্তি দূর হয়।
বীজ সরবরাহ : মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করে কৃষকের হাতে তুলে দিতে বিএডিসি কর্তৃক ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বীজ বিতরণের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ লক্ষ মে.টন যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১ লক্ষ ৫২ হাজার মে.টন।
উন্নয়ন সহায়তা (ভর্তুকি) :  কৃষকের উৎপাদন খরচ নিম্নপর্যায়ে রাখতে সরকার সার, সেচকাজে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ও ইক্ষু চাষে উন্নয়ন সহায়তা (ভর্তুকি) প্রদানের নীতি গ্রহণ করে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় ছিল প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে উন্নয়ন সহায়তা বাবদ প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
প্রণোদনা/কৃষি পুনর্বাসন : বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ও কাক্সিক্ষত ফসল/জাত চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে ৬ লক্ষ ৪৩ হাজার কৃষককে ৪৭.৮১ কোটি টাকা প্রণোদনা প্রদান করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৭ লক্ষ ৭৩ হাজার কৃষককে ৫০০ কোটি টাকা প্রণোদনা প্রদান করা হয়। এতে উপকারভোগী কৃষকের সংখ্যা।
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন : বিগত ১৫ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে গড় অগ্রগতির হার ৯৭.১৫%। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৬৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ৭০৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩৪১৯.৯৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
কৃষি যান্ত্রিকীকরণ : সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য হাওর ও উপকূলীয় এলাকায় ৭০% ও অন্যান্য এলাকায় ৫০% উন্নয়ন সহায়তার মাধ্যমে কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০১০ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ ৩৩ হাজারটি  কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় ৩০২০.০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১২ ক্যাটাগরিতে ৫১,৩০০টি কৃষিযন্ত্র বিতরণের কার্যক্রম চলমান আছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে জুন/২০২৩ পর্যন্ত মোট ৩০,৫৮২টি কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়। ফলে কৃষি শ্রমিকের অপ্রতুলতা মোকাবিলা এবং উৎপাদন ব্যয় হ্রাস হয়েছে।
সমলয় চাষাবাদ : ২০২০-২১ অর্থবছর হতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ কার্যকর করে ফসল ঘরে তুলতে সমলয় (ঝুহপযৎড়হরুব) চাষাবাদ শুরু করা হয়। উক্ত বছরে ৬১ জেলায় ৫০ একর করে ৬১টি ব্লকে সমলয় পদ্ধতিতে বোরো চাষ হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি করে ১৬২টি ব্লকে বোরোর পাশাপাশি আমনেও সমলয় চাষাবাদ করা হয়েছে।
সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ : বিএডিসি ও বিএমডিএ কর্তৃক মোট সেচকৃত এলাকা প্রায় ১২.৫৯ লক্ষ হেক্টর। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সম্প্রসারিত সেচ এলাকা প্রায় ৪.৯৯ লক্ষ হেক্টর।
কৃষিঋণ : প্রচলিত ব্যাংকিং চ্যানেলে সুবিধাবঞ্চিত বর্গাচাষিদের দোরগোড়ায় সময়মতো, স্বল্পসুদে, জামানতবিহীন কৃষি ঋণ সুবিধা পৌঁছে দিতে সরকার ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ‘বর্গাচাষিদের জন্য কৃষিঋণ’ কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষিঋণ প্রদান করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা’ এর আওতায় ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১৭.২৯ লক্ষ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ৪,৭৬৫ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৭.৩৬ লক্ষ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ২২,৪০২ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছেন।
কৃষি উপকরণ কার্ড ও ১০ টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট : কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ডধারী কৃষকের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি এবং কৃষি উপকরণ কার্ডের মাধ্যমে খোলা ১০ টাকার সচল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংখ্যা প্রায় ১ কোটি। যার মাধ্যমে কৃষকগণ ফসল উৎপাদনের ঋণ এবং কৃষি উপকরণ সহায়তা পেয়ে থাকেন।
কৃষি বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন : উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহিত করার জন্য কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কর্তৃক ৪ তলাবিশিষ্ট ১৪,০০০ বর্গফুট করে ৫টি জেলায় ৫টি অফিস কাম ট্রেনিং অ্যান্ড প্রসেসিং সেন্টার, গাবতলীতে ফুলের ১টি সেন্ট্রাল মার্কেট, ২১টি পাইকারি বাজার, ৭২টি কৃষকের বাজার ও ২৩টি এসেম্বল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
জিনোম সিকুয়েন্সিং উদ্ভাবন : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে কৃষি গবেষণায় জীবপ্রযুক্তি ব্যবহারের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মাকসুদুল আলম ও তাঁর দল সফলভাবে বিশ্বে সর্বপ্রথম তোষা পাটের জীবন রহস্য উন্মোচন করেন (১৬ জুন ২০১০)। পরবর্তীতে পাটসহ পাঁচ শতাধিক উদ্ভিদের রোগের জন্য দায়ী ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচন করা হয় (২০১২) এবং দেশি পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন হয় (২০১৩)। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ধইঞ্চের জীবনরহস্যও উন্মোচন করা হয়েছে।
পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন : করোনা পরবর্তীকালীন সময়ে খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখা ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা প্রদান করেন যে, ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে’। সে লক্ষ্যে ৪৩৮.৪৭ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ‘অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে জুন/২০২৩ পর্যন্ত স্থাপিত মোট পারিবারিক পুষ্টি বাগানের সংখ্যা ২,৫২,০৯৬টি।
পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা : পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরের পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধি হয়েছে ৩৬.৪১ লক্ষ মে.টন এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪.৫৬ লক্ষ মে.টন, যেখানে ২০০৯ সালে পেঁয়াজ উৎপাদন ছিল ১৪.২৩ লক্ষ মে.টন।
ভোজ্যতেলে ৪০% স্বয়ংসম্পূর্ণতা : তিন বছরের মধ্যে ভোজ্যতেলের আমদানি হ্রাসপূর্বক ৪০% স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে (২০২২-২৩ হতে ২০২৪-২৫)। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরিষার উৎপাদন হয়েছে ১১.৬১ লক্ষ মে.টন, যা বিগত বছরের তুলনায় ৩.৩৭ লক্ষ মে.টন বেশি। উল্লেখ্য, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সরিষার উৎপাদন ছিল মাত্র ২.০৩ লক্ষ মে.টন। বর্তমানে উৎপাদিত ১১.৬১ লক্ষ মে.টন সরিষা হতে ৩.৮৭ লক্ষ টন  তেল উৎপাদন হবে।
বছরব্যাপী ফল উৎপাদন এবং অপ্রচলিত ফসলের প্রচলন : বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের পাশাপাশি দেশে চাষ উপযোগী বিদেশি ফল যেমন- ড্রাগন, অ্যাভোক্যাডো, স্ট্রবেরি, আরবি খেজুর, রাম্বুটান, পার্সিমনের চাষ বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে বছরব্যাপী বিভিন্ন ধরনের ফল পাওয়া যাচ্ছে।
উচ্চমূল্য ফসল কফি ও কাজুবাদাম চাষ : পাহাড়ি এলাকায় কফি, কাজুবাদাম চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পাঁচ বছরমেয়াদি (২০২১-২০২৫) ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় হবে ২১১.৮৫ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮.৫ লক্ষ কাজুবাদাম ও কফির চারা বিতরণ করা হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে প্রায় ২৫০০ হেক্টর জমিতে নতুন করে কাজুবাদাম ও কফি চাষের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
জৈব কৃষি ও উত্তম কৃষি চর্চা : পরিবেশবান্ধব জৈব কৃষি কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে ‘জাতীয় জৈব কৃষি নীতি-২০১৭’ এবং ‘বালাইনাশক আইন ২০১৮’ অনুমোদন করা হয় এবং ‘বাংলাদেশ উত্তম কৃষি চর্চা নীতিমালা-২০২০’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ কার্যক্রমের আওতায় ১০০০টি নিরাপদ সবজি উৎপাদন গ্রাম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেসাথে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (ওচগ) ও সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা (ওঋগঈ) চর্চার জন্য ৩,৬০০টি কৃষকগ্রুপ তৈরি করা হচ্ছে।
অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব : কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানির জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নিরাপদ কৃষিপণ্য রপ্তানির উদ্দেশ্যে ঢাকার শ্যামপুর কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজে একটি অ্যাক্রিডিটেড ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। পূর্বাচলে একটি কেন্দ্রীয় ল্যাব স্থাপনের জন্য এরই মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুই একর জায়গা প্রদান করেছেন এবং ল্যাব স্থাপনের জন্য প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে।
উপকূলীয় এলাকায় কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ : উপকূলীয় এলাকার উপযোগী কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণে ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ সম্প্রসারণ, সর্জান, পিরামিড এবং ঘের পদ্ধতি অবলম্বনে ফল, সবজি, ধান ও মাছ চাষ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ফসলের লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহনশীল জাত সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।
বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি : ভাসমান বেডে চাষাবাদ পদ্ধতিটিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা থেকে ২০১৫ সালে কৃষিতে বাংলাদেশের বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি : বিগত ১৫ বছরে কৃষি মন্ত্রণালয় ও দপ্তর-সংস্থার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বীজ প্রত্যায়ন এজেন্সী, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেইসাথে নারায়ণগঞ্জে বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান) এবং দিনাজপুরের নশিপুরে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয় ।
কানাডায় বঙ্গবন্ধু চেয়ার এবং ‘বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্র’ স্থাপন: কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কানাডার সাস্কাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ্লোবাল ইনস্টিটিউট ফর ফুড সিকিউরিটি’-তে বঙ্গবন্ধু চেয়ার স্থাপন করা হয়েছে। উক্ত ইনস্টিটিউটের কারিগরি সহায়তায় ‘বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্র’ স্থাপন করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রটি ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ উদ্বোধন করেন।
কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) ২০২০ সম্মাননা : কৃষিখাতে অবদানের জন্য গত ২৭ জুলাই ২০২২ কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রথমবারের মতো ১৩ জন ব্যক্তিকে ‘কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) ২০২০’ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরষ্কার : কৃষিতে অন্যান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতি বছর ১০টি ক্যাটাগরিতে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’ প্রদান করা হয়ে থাকে। সর্বশেষ ১২ অক্টোবর ২০২২ তারিখে ৪৪ জন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৫ এবং ১৪২৬ প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার আঞ্চলিক সম্মেলন আয়োজন : ঢাকাস্থ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল এবং বিআইসিসিতে জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (ঋঅঙ) জবমরড়হধষ ঈড়হভবৎবহপব ভড়ৎ অংরধ ধহফ চধপরভরপ (অচজঈ) এর ৩৬তম সম্মেলন ৮-১১ মার্চ ২০২২ অনুষ্ঠিত হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন। ওই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের মাননীয় মন্ত্রী, প্রতিনিধি, এফএওর ডাইরেক্টর জেনারেলসহ বিশ্বের ৪৬টি দেশের অতিথিগণ অংশগ্রহণ করেন।
নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সিবিশনে অংশগ্রহণ : নেদারল্যান্ডসের আলমিরাতে এপ্রিল’২২ থেকে নভেম্বর’২২ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৭ম আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সিবিশনে (ঋষড়ৎরধফব বীঢ়ড়-২০২২) বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে। এক্সিবিশনে বাংলাদেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে কৃষির সাফল্য ও রপ্তানিযোগ্য কৃষি পণ্যের (প্রদর্শনী) ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
কৃষিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার : কৃষি সেবাকে সহজে কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য ‘কৃষি বাতায়ন’, ৪৯৯টি কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র (এআইসিসি), কৃষি কল সেন্টার (নম্বর ১৬১২৩), কৃষি কমিউনিটি রেডিও, কৃষক বন্ধু ফোন-৩৩৩১, অনলাইন সার সুপারিশ, রাইস নলেজ ব্যাংক ইত্যাদির মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এলাকা উপযোগী শস্য আবাদের লক্ষ্যে ‘ঈৎড়ঢ় তড়হরহম ডবনংরঃব’ এবং ‘খামারি’ মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) : কৃষি মন্ত্রণালয় বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) বাস্তবায়নে ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ পরপর দুইবার ৫১টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ২য় শ্রেষ্ঠ স্থান অর্জন করে। পরবর্তীতে ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ এ কৃষি মন্ত্রণালয় ৩য় স্থান অর্জন করে।
কোভিড-১৯ এর অভিঘাত মোকাবিলা : ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাওর ও অন্যান্য শ্রমিক সংকট এলাকায় শ্রমিক ও কৃষিযন্ত্র এনে বোরো ধান কাটার ব্যবস্থা করা হয়। বিএডিসির সেচ যন্ত্রসমূহের চার্জ ৫০% হ্রাস করা হয়েছে এবং সেচকাজে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিলে ২০% হারে রিবেট প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ৪% রেয়াতি সুদে ৮,৮৬,৮১৭ জন গ্রাহককে ৯১৭৫.৮৫ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়।
কৃষিপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি : কৃষিপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বর্তমানে ৭০টির বেশি সবজি ও ফল বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। ইতোমধ্যে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ ১০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের মাইলফলক ছাড়িয়েছে।
সময়োচিত নীতি, কৌশল এবং কার্যকর কর্মকা-ের মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষিতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় দেশের কৃষিখাত অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে কৃষি মন্ত্রণালয় সচেষ্ট রয়েছে। সরকারের কৃষিবান্ধব নীতিসমূহ বাস্তবায়নে মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে সংকল্পে পদে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
(‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় কৃষি ২০০৯-২০২৩’ থেকে সংকলিত)

লেখক : উপসচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়। মোবাইল : ০১৭১১৯৩৬৪২৭,  ই-মেইল :qarayhan@gmail.com