Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

দেশীয় শোল মাছের অধিক লাভজনক চাষ পদ্ধতি

দেশীয় শোল মাছের অধিক
লাভজনক চাষ পদ্ধতি
মো: তোফাজউদ্দীন আহমেদ
বাংলাদেশ স্বাদু পানির মাছ চাষে পৃথিবীর অন্যতম অগ্রসরমান (চৎড়মৎবংংরাব) দেশ। দীর্ঘদিন ধরে মাছের উৎপাদন একটি স্থিতিশীল অবস্থায় বিরাজ করছে। এ জন্য মাছের বাজার দর অন্যান্য কৃষি পণ্যের তুলনায় অনেকটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছে। আবার অনেক প্রজাতির মাছের দর বিগত দিনের তুলনায় বেশ কমে গেছে যেমন শিং, পাবদা, গুলশা, ট্যাংরা ইত্যাদি। বাণিজ্যিক কয়েকটা প্রজাতির মাছের দর এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, চাষি সে সব মাছের (বিশেষ করে তেলাপিয়া এবং পাংগাশ) চাষ থেকে বিকল্প প্রজাতির মাছচাষে ঝুঁকছে। অপরদিকে সাধারণভাবে প্রচলিত মাছের প্রজাতি (রুই, কাতল, সিলভার-বিগহেড ইত্যাদি) সমূহের বাজারদর গতানুগতিক হওয়ায়, কোন কোন সময় চাষি মাছচাষ থেকে লাভবান হন আবার অনেক ক্ষেত্রে সেভাবে লাভবান হতে পারেন না। এ জন্য দেশের অনেক মাছচাষি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেন বিকল্প প্রজাতির মাছ চাষের, যা থেকে সে অধিক লাভবান হতে পারেন। প্রান্তিক চাষিদের ভাগ্য বদলের এ নিরন্তর প্রচেষ্টার হাত ধরে নতুন নতুন প্রজাতির মাছের চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে আমাদের দেশে। পাবদা-গুলশা, শিং-মাগুরের চাষের পাশাপাশি শোলমাছের চাষ এভাবে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। এ ধরনের মাছ চাষে সমস্যা সম্ভাবনা দুটি আছে। সবচেয়ে বড় বিষয় এ সব মাছের বাজার দর বেশ বেশি। বাজারে মাছের বৈচিত্র্যময় সরবরাহ ক্রেতাকে যথেষ্ট আকৃষ্ট করে। সে জন্য  দাম একটু বেশি হলেও এ ধরনের মাছ যথেষ্ট বিক্রি হতে দেখা যায়।
শোল মাছের খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাস
শোল মাছ একটি আমিষভোজী ও রাক্ষুসে প্রকৃতির শিকারি মাছ, এ মাছটি মাংসাশী ( ঈধৎহরাড়ৎড়ঁং ) হিসেবে বিবেচিত হয়। এরা পুকুরের অন্যান্য ছোট ছোট মাছকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে অভ্যস্থ। শোল মাছের খাদ্য তালিকায় রয়েছে ক্রাস্টেসিয়ান, মোলাস্কস এবং ছোট মাছ। কিশোর শোল মাছের খাবার হলো ছোট রেণু বা জীবন্ত ছোট মাছ এবং টিউবিফেক্স। এরা রাক্ষুসে স্বভাবের ফলে এরা ছোট প্রায় সকল মাছের ধানি পোনা খেয়ে ফেলে। কিছুটা স্বজাতীভোজী স্বভাবের হওয়ায় এরা নিজস্ব প্রজাতির ছোটমাছও খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। রেণুপর্যায়ে শোল মাছ জুপ্লাংকটন, শেওলা (অষমধব), ডায়াটমসহ নানা জৈব পদার্থ খেয়ে থাকে।
শোল মাছচাষের সুবিধা
এ মাছ ছোট বড় সকল পুকুরে চাষ করা যায়; বাড়ির পাশে ছায়াযুক্ত (২-৫ শতক) পুকুরেও চাষ করা যায়, সাধারণত এ ধরনের পুকুরে অন্যান্য মাছ তেমন ভাল হয় না; দেশের উপকূলীয় এলাকার কিছুটা লবণাক্ত পানিতেও এ মাছচাষ করা যায়; এ মাছ বিস্তৃত পরিবশের তারতম্য সহ্য করতে পারে; এ মাছ পুকুরের পানির দূষণ, অনাকাক্সিক্ষত গ্যাসের প্রাচুর্যতা এমনকি অক্সিজেন স্বল্পতাও এ মাছচাষে সমস্যা সৃষ্টি করে না; পুকুরে অধিক ঘনত্বে তথা স্বল্প জায়গায় অনেক বেশি শোল মাছ উৎপাদন করা যায়; শোল মাছ দ্রুত বর্ধনশীল মাছ এবং প্রতি ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে প্রতিটির ওজন ৫০০ গ্রাম থেকে ২ কেজি পর্যন্ত হয়; শোল মাছ অত্যন্ত জনপ্রিয় কারণ মাছটি বেশ সুস্বাদু, আকারে বেশ বড় হয়; মাংসে বাড়তি কাটা নাই; বাজারে অন্যান্য মাছের তুলনায় এ মাছের দাম তুলনামূলক বেশি; পানির বাইরে দীর্ঘ সময় ধরে জীবিত থাকে ফলে সজীব অবস্থায় বাজারজাত করা যায়; চাষের পুকুরে এ মাছের তেমন কোন রোগব্যাধি দেখা দেয় না। শোল মাছ রাক্ষুসে প্রকৃতির হওয়ায় যে কোন মাছের পোনা এবং জীবন্ত/মৃত ছোট মাছ ও গুঁড়া চিংড়ি খাইয়ে লালন করা যায়।   
চাষের পুকুর প্রস্তুতি
কার্পজাতীয় মাছ অথবা অন্যান্য প্রজাতির মাছ চাষের জন্য যেভাবে পুকুর প্রস্তুত করতে হয় সেভাবে শোল  মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুত করতে হবে। পুকুরের তলদেশে অধিক কাদা থাকলে তা অপসারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে পুকুরের পাড়ে যেন কোন সুড়ং বা গর্ত না থাকে। বাজারের পাথুরে চুন (ক্যালসিয়াস অক্সাইড) ব্যবহার করায় ভাল। চুন প্রয়োগের সময় কাদার সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। চুন দেবার পরে পুকুরে পানি প্রবেশ করাতে হবে। পুকুরে পানির গভীরতা ৫ ফুটের বেশি রাখার চেষ্টা করতে হবে।
পুকুরে বেস্টনি স্থাপন
শোলমাছ পুকুর থেকে বের হওয়ার প্রবণতা আছে, এ জন্য পুকুরের চারিদিকে ৬-৭ ফুট উঁচু করে নাইলনের নেট দ্বারা বেস্টনি স্থাপন করতে হবে। বেস্টনির নেটের তলা ভালভাবে পাড়ের মাটির ৮-৯ ইঞ্চি গভীরে আটকাতে হবে যাতে কোনভাবে শোল মাছ বের হতে না পারে। শোল মাছ বের হওয়া আটকাতে অনেক চাষিকে পুকুরের উপর দিয়েও নেট দিতে দেখা যায়। নেটের পরিবর্তে বাঁশের বানা দিয়েও বেস্টনি দেয়া যায় তবে খেয়াল রাখতে হবে বেস্টনির উচ্চতা যেন ৬-৭ ফুটের কম না হয়।
মাছের আশ্রয় স্থল
শোল মাছ আলো তেমন পছন্দ করে না বা নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চায়। এ জন্য পুকুরের কিনারের দিকে আগাছা (কলমিলতা, কচুরি পানা, টোপাপানা, ক্ষুদিপানা ইত্যাদি) জন্মাতে দেয়া যেতে পারে। পুকুরের পানির গভীরতা বেশি হলে আগাছা না থাকলেও অসুবিধা হয় না।
চাষের পুকুর প্রস্তুতের পর পুকুরে শোল মাছের পোনা ছাড়ার আগেই স্থানীয় তেলাপিয়া মাছের কিছু বড় মাছ/পোনা ছেড়ে দিতে হবে যাতে এরা বংশ বিস্তার করবে যা শোল মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করবে। সাধারণত তেলাপিয়া দ্রুত বাচ্চা দেয় এবং সারা বছর বাচ্চা দেয়। তেলাপিয়ার পোনা শোল মাছের উপাদেয় খাবার। শোল মাছের সাথে কার্পজাতীয় মাছও ছাড়া যেতে পারে এ ক্ষেত্রে কিছুটা বড় আকারের পোনা (১০০ গ্রামের বড়) মজুদ করতে হবে।
শোল মাছের পোনা সংগ্রহ
দেশে দুই ধরনের শোল মাছ চাষ হচ্ছে। ভিয়েতনামী শোল যার গায়ের রং কিছুটা বাদামি (লালাভ অনেকে মেটে রং বলেন) এবং আমাদের স্থানীয় শোল যার গায়ের রং কালাচে। মাছের স্বাদে তেমন পার্থক্য না থাকলেও সাধারণ মানুষ দেশীয় শোল মাছ বেশি পছন্দ করে। চাষের পুকুরে একই আকারের পোনা মজুদ করা ভাল কারণ বড়রা ছোটদের ধরে খাবার অভ্যাস আছে। দেশীয় শোল মাছের পোনা সাধারণত দুভাবে সংগ্রহ করা যায়।
া    নিজস্ব ব্রুড মাছ থেকে : দেশীয় শোল মাছের পোনা হ্যাচারিতে প্রনোদিত প্রজননের (ওহফঁপব ইৎববফরহম) মাধ্যমে উৎপাদন হয় না। এ ক্ষেত্রে চাষের পুকুর প্রস্তুত করে ঠিক বর্ষা মৌসুূমের আগে ২-৩ জোড়া পরিপক্ব শোল মাছ (স্ত্রী ও পুরুষ) জোগাড় করে পুকুরে মজুদ করতে হবে এবং নিয়মিত খাবার দিতে হবে। এ মা মাছ প্রাকৃতিক জলাশয়, মাছ বাজার অথবা অন্য কারো চাষের পুকুর থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে। পুকুরে ১-২ মাস রাখলে এ মাছে বাচ্চা দিবে এবং বাচ্চার ঝাঁক সহজেই চিহ্নিত করা যায়। বাচ্চা দেবার পরে মা মাছ অপসারণ করতে হবে।
া    প্রাকৃতিক উৎস থেকে : পুকুর বা প্রাকৃতিক জলাশয়, খাল-বিলে শোলমাছ বর্ষা মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে বাচ্চা দেয় সেখান থেকে সহজেই এ মাছের ঝাঁক সংগ্রহ করা যায়। একটি ঝাকে ৩-৪ হাজার বাচ্চা থাকে।  
শোল মাছের বাচ্চা প্রতিপালন
সংগৃহীত ছোট পোনা আগে থেকে প্রস্তুত করা ছোট একটি পুকুরে মজুদের পর কয়েক দিন হাঁস অথবা মুরগির ডিম খাওয়াতে হবে। ডিম একটি বাটিতে ভেঙে নিয়ে চামচ দিয়ে ভালভাবে ফেটে নিতে হবে। সকালে এবং বিকালে এ ফাটানো ডিম পোনার ঝাঁকের মাঝে অল্প অল্প করে দিতে হবে। ২-৩ দিন পরে তেলাপিয়া বা অন্য কোন কম দামের মাছ সিদ্ধ করে একটি শাক ধোয়া ডালার ভেতরে রেখে পুকুরের পানিতে ঝুলিয়ে দিতে হবে। অথবা সিদ্ধ মাছ পেস্ট করে ঝাঁকের মাঝে অল্প অল্প করে কয়েকদিন দিলে পোনা খাবারে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। এ ছাড়াও মাছের হ্যাচারি থেকে কম দামের যে কোন প্রজাতির মাছের রেণু সংগ্রহ করে পুকুরে ছাড়তে পারলে তা খেয়ে শোল মাছের পোনা বড় হয়ে থাকে। আবার ছোট আকারের চিংড়ি শুটকি গুড়া দিয়েও শোল মাছের ছোট পোনা প্রতিপালন করা যায়। এভাবে ১ মাস পালন করলে পোনা ৪-৫ ইঞ্চি আকারের হয় এবং চাষের পুকুরে ছাড়ার উপযুক্ত হয়।
পোনা মজুদ ঘনত্ব
শোল মাছের পোনা পুকুরে কি পরিমাণ ছাড়া যাবে তা অনেকাংশে নির্ভর করে পুকুরের ব্যবস্থাপনা ও খাবার সরবরাহের ওপর। সাধারণত প্রতি শতকে ৪-৫ ইঞ্চি আকারের ৫০০-১০০০টি পোনা মজুদ করা যেতে পারে। সাথে তেলাপিয়া অথবা কিছু রুইজাতীয় (বড় আকারের পোনা) মাছের পোনা ছাড়া যেতে পারে।
শোল মাছের খাদ্য ব্যবস্থাপনা
দেশীয় শোল মাছ তিন ধরনের খাবার দিয়ে চাষ করা যায়। ক) জীবন্ত ছোট মাছ, খ) কম দামের যে কোন প্রজাতির মরা মাছ এবং গ) সম্পূরক খাবার। তবে উল্লেখিত তিন ধরনের খাবারের সমন্বয়েও চাষ করা যেতে পারে।
জীবন্ত মাছ দিয়ে শোল মাছচাষ : শোল মাছ রাক্ষুসে প্রজাতির মাছ এরা স্বভাবজাতভাবে তার থেকে ছোট যে কোন মাছ শিকার করে খেতে পছন্দ করে। শোল মাছচাষের জন্য কয়েকভাবে জীবন্ত মাছের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
া    পৃথক নার্সারি পুকুরে কম দামের রুইজাতীয় মাছের রেণু যেমন, সিলভার, মৃগেল, বাটা মাছের পোনা প্রতিপালন করে শোল  মাছের চাহিদা অনুযায়ী আকারের (১.৫-২.০ ইঞ্চি) পোনা ধরে চাষের পুকুরে ছাড়া যেতে পারে। প্রতি দিন এভাবে পোনা দেয়া যেতে পারে। তবে ৬ থেকে ৭ দিন পরপর নার্সারি পুকুর থেকে পরিমাণ মত পোনা ধরে চাষের পুকুরে ছেড়ে দিয়েও চাষ করা যায়। এতে উৎপাদন খরচ কিছুটা বেশি পড়ে। তবে এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে চাষের পুকুরে কিছু পোনা আকারে বড় হয়ে যায় যা শোল মাছে আর ধরে খেতে পারে না। এ বড় আকারের পোনা বা মাছ বিক্রয় করে বাড়তি আয় হয়ে থাকে।
া    শোল মাছের পুকুরে দেশি তেলাপিয়া, টিতপুঁটি, চোখকুনি, দাড়কানি, মলা, কানপোনা, গাপ্পি প্রভৃতি ছোট প্রজাতির কিছু মা মাছ চাষের পুকুরে মজুদ করলে পুকুরে এসব প্রজাতির মাছ দ্রুত বংশবিস্তার করে যা শোল মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। ছোট প্রজাতির এ সব মাছের দ্রুত বৃদ্ধি ও বংশবিস্তারের জন্য অটোকুড়া বা পাউডার জাতীয় খাবার দিতে হয়।
া    চাষের পুকুরটি যদি এমন হয় যে, পুকুরের এক পাশের কাটা পাড় নদী-খাল কিংবা বিলের সাথে যুক্ত এবং কাটা অংশে মজবুতভাবে পাটাবাঁধ বা নেটের বেড়া দেয়া আছে তা হলে উক্ত নেটের ফাক দিয়ে অনেক ছোট প্রজাতির মাছের পোনা বা ডিম চাষের পুকুরে প্রবেশ করে যা থেকে শোল মাছ খাবার পেতে পারে। গ্রামে এ ধরনের অনেক পুকুর আছে যারা শোল মাছ তথা রাক্ষুসে প্রজাতির মাছচাষের এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন।
মরা মাছ দিয়ে শোল মাছচাষ : শোল মাছ সাধারণত মরা মাছ খাইয়ে চাষ করা হয়। অনুকূল সময়ে ছোট আকারের মরা মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি তৈরি করে মজুদ করেও অনেকে শোল মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করেন। এটি বহুল প্রচলিত পদ্ধতি। পর্যাপ্ত প্রাপ্তির সময় ছোট মাছ সংগ্রহ করে শুকিয়ে বায়ু প্রতিরোধী ব্যাগে ভরে মজুদ করে রাখতে হবে। শুঁটকি মাছ পুকুরে খাবার হিসেবে দেবার ৪-৫ ঘণ্টা আগে কিছুটা গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। মাছ নরম হলে মরা মাছের অনুরূপে একইভাবে শোল মাছকে খাবার হিসেবে দেয়া যায়। শোল মাছের ছোট বাচ্চা প্রতি পালনেও এ শুঁটকির গুঁড়া খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।  
বাজারে অনেক সময় কম দামে ছোট আকারের (২০০-৩০০  গ্রাম ওজনের) সিলভারকার্প মাছ পাওয়া যায়। অনেকে সে মাছ সংগ্রহ করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করেন এবং প্রয়োগের সময় ধারালো ছুরি দ্বারা কুচিয়ে শোল মাছের পুকুরে প্রয়োগ করেন। অনেক সময় এ কাজটি ছোট আকারের (৩০-১০০ গ্রামের) তেলাপিয়া বা অন্য যে কোন কম দামের মাছের জন্যও প্রযোজ্য হতে পারে। এ ধরনের কম দামের মাছ সংগ্রহ করে বড় আকারের ডিপফ্রিজে সংরক্ষণ করেও শোল মাছচাষে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সম্পূরক খাবার দিয়ে শোল মাছচাষ : দেশীয় শোল মাছ সম্পূরক খাবার দিয়েও চাষ করা যায়। এ জন্য পোনা সংগ্রহের পর পৃথক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পোনাকে সম্পূরক খাবার ধরাতে হয়। সংগৃহীত পোনা একটি ড্রামের পাত্রে অথবা চৌবাচ্চার মধ্যে ছাড়তে হবে। প্রতি দিন অল্প পরিমাণে বাজারের ভাসমান (১-২ এম এম আকারের) খাবার (৩৫-৪০% আমিষ সমৃদ্ধ) দিতে হবে। এ সময় অন্য কোন খাবার দেয়া যাবে না। এভাবে কয়েকদিন চেষ্টা করলে দেশীয় শোল মাছের পোনা সম্পূরক খাবার গ্রহণ শুরু করবে। এর পরে পোনাগুলো প্রস্তুতকৃত চাষের পুকুরে ছাড়তে হবে। ছাড়ার পরে নিয়মিত ২-৩ বার ঐ একই ভাসমান খাবার প্রয়োগ করতে হবে। তবে ভারত বা অন্যান্য দেশে শোল মাছের জন্য তৈরি নির্দিষ্ট খাবার পাওয়া যায় সে খাবার খাওয়াতে পারলে মাছের বেশ ভাল বর্ধন হয়। আমাদের দেশের পাবদা-গুলশার খাবার দিয়ে চাষ করা যায় তবে বর্ধন হার কিছুটা কম হয়।  
শোল মাছচাষের অন্যান্য পরিচর্যা
মাছের চাষ নিরাপদ রাখার জন্য মাছচাষ চলাকালে নিয়মিত মাছের খাবার প্রদান ছাড়াও কিছু কাজ করা প্রয়োজন। এ ধরনের কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নি¤েœ উল্লেখ করা হলো :
পুকুরে পানি সরবরাহ : যেহেতু পুকুরে অধিক ঘনত্বে শোল মাছ থাকে এ জন্য পুকুরের পানির গভীরতা বজায় রাখার জন্য পানি সরবরাহের প্রয়োজন হলে তার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় মাছ পিড়ন অবস্থার সম্মুখীন হতে পারে।
চুন প্রয়োগ : শোল মাছে শীতের সময় ক্ষত রোগ হতে দেখা যায়। যাতে মাছে এ রোগ না হয় সে জন্য পুকুরে শীতের শুরুতে শতক প্রতি ০.৫ -১.০ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি মাঝে মধ্যে ভোরে গভীর নলকূপের পানি দিতে হবে।
জিওলাইট প্রয়োগ : যেহেতু শোল মাছ, মাছ খেয়ে বড় হয় সে জন্য পুুকুরে গ্যাসের আধিক্য দেখা দিতে পারে। গ্যাসের ক্ষতি কর প্রভাব কমানোর জন্য ১-২ মাস পরপর শতকে ১০০ গ্রাম হারে জিওলাইট ব্যবহার করা যেতে পারে।
সম্পূরক খাবার দিয়ে শোল মাছচাষ করলে অবশ্যই মাঝে মধ্যে ছোট মাছ খেতে দিতে হবে, অন্যথায় মাছ অপুষ্টির শিকার হবে এবং মাছে রোগ দেখা দিতে পারে।
মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণ
উপরে বর্ণিত পদ্ধতিতে নিয়মিত খাদ্য এবং পরিচর্যা চালিয়ে গেলে মোটামুটি ৭-৮ মাস চাষ করলে শোল মাছ বাজারে বিক্রয় উপযোগী হয় তবে যেহেতু এ মাছ রাক্ষুসে প্রজাতির সে জন্য সকল মাছে সমভাবে খাবার গ্রহণ করতে পারে না এ জন্য উৎপাদিত মাছের মধ্যে কিছুটা ছোট বড় হতে দেখা যায়। একই সময়ে কিছু মাছ ১.৫-২.০ কেজি আকারের হয় আবার কিছু কিছু ৭০০-৮০০ গ্রামের হতে দেখা যায়। শোল মাছ জীবন্ত অবস্থায় বাজারে বিক্রয় হয় এ জন্য মাছ পরিবহনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বেড় জাল দিয়ে সহজেয় এ মাছ পুকুর থেকে ধরা যায়, তবে সব মাছ ধরতে পুকুর সেচ দেবার প্রয়োজন হয়। এ মাছ পানির বাহিরে অনেক সময় ধরে জীবিত থাকে ফলে অধিক ঘনত্বে পরিবহন করা যায়। তবে মাছ ধরা বা পরিবহনের সময় মাছ যাতে আঘাত প্রাপ্ত না হয় সে দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। কারণ আঘাতপ্রাপ্ত মাছ বেশি সময় সজীবতা থাকে না এবং এ সব মাছের বাজার দরও কম পাওয়া যায়।
শোল মাছচাষ বেশ লাভজনক তবে যারা এ মাছের খাবার সরবরাহ করতে পারবেন না তাঁরা এ মাছচাষ না করায় উত্তম। খাবার হিসেবে ব্যবহৃত মাছের প্রতি কেজির গড় মূল্য ৫০ টাকার মধ্যে থাকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে তা হলে এ মাছচাষে লাভবান হওয়া যাবে। চাষির ভাগ্য পরিবর্তন করতে হলে গতানুগতিক মাছচাষ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। নতুন নতুন মাছের প্রজাতি চাষে মনোযোগী হতে হবে। মনে রাখতে হবে, যে মাছের চাষ ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয় সে মাছের সরবরাহ বাড়ার কারণে বাজার দর কমে যায় এবং সে মাছচাষে আর আগের মতো লাভবান হওয়া যায় না।  

লেখক : উপপরিচালক (অব.), মৎস্য অধিদপ্তর। বাড়ি ১৭৩/১, ফ্ল্যাট : ৫/এ শাপলা হাউজিং পশ্চিম আগারগাঁও, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭৫১৯৩৯৯৩২, ই-মেইল :tofaz2010@gmail.com