Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

অনুপুষ্টির চাহিদা পূরণে ন্যূনতম খাদ্য বৈচিত্র্য

অনুপুষ্টির চাহিদা পূরণে ন্যূনতম
খাদ্য বৈচিত্র্য
তাসনীমা মাহজাবীন
আমাদের জীবনের বিভিন্ন বয়সে পুষ্টির চাহিদা বিভিন্ন রকম হয়। শিশুর জন্মের পর তার পুষ্টি চাহিদা একধরনের থাকে এরপর  যখন সে বাড়তে থাকে তখন তার চাহিদার পরিবর্তন হয়। শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণে প্রতিদিনের খাদ্য গ্রহণ বৈচিত্র্যপূর্ণ হতে হবে এতে আমাদের শরীরের প্রতিদিনের অনুপুষ্টির (গরপৎড়হঁঃৎরবহঃ) চাহিদা পূরণ হয়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ঋঅঙ), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ)  এই অনুপুষ্টি গ্রহণের মাত্রা পরিমাপের জন্য মহিলা এবং শিশুদের ন্যূনতম খাদ্য বৈচিত্র্য বা  গরহরসঁস উরবঃধৎু উরাবৎংরঃু (গউউ)’ স্কোর সুপারিশ করেছে।
মহিলাদের  ন্যূনতম খাদ্য বৈচিত্র্য
মহিলাদের ন্যূনতম খাদ্যবৈচিত্র (গউউ ভড়ৎ ড়িসবহ) বলতে বোঝানো  হয়েছে  নারীদের, বিশেষ করে একজন ১৫-৪৯ বছর বয়সের (জবঢ়ৎড়ফঁপঃরাব ধমব) নারীকে প্রতিদিন খাবারে নি¤েœালিখিত ১০ ধরনের খাদ্য শ্রেণি থেকে অন্তত ৫ ধরনের খাদ্য কমপক্ষে ১৫ গ্রাম পরিমান খেতে হবে। এতে তার প্রতিদিনের অনুপষ্টি চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হবে।  খাদ্য শ্রেণিগুলো হলো: সব ধরনের শর্করা বহুল প্রধান খাদ্য (যেমন: ভাত, গম, ভুট্টা, রুটি); ডালজাতীয় খাদ্য (যেমন: ছোলা, সব ধরনের ডাল); বাদাম ও বীজ (যেমন: চীনাবাদাম, তিল, নারকেল); দুধ ও দুধজাতীয় খাদ্য; আমিষ জাতীয় খাদ্য (যেমন: মাছ এবং মাংস); ডিম; গাঢ় সবুজ পাতা জাতীয় শাকসবজি (সবুজশাক ও লালশাক); অন্যান্য ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ শাকসবজি ও ফল (যেমন: গাজর, মিষ্টিকুমড়া); অন্যান্য শাকসবজি (যেমন: বেগুন, লাউ); অন্যান্য ফল (যেমন: কলা, পেয়ারা, আমড়া, আমলকী)।
গউউ স্কোর নির্ণয় : আমরা খুব সহজেই নিজেদের গউউ স্কোর নির্নয় করতে পারি, যদি আমরা এই প্রতিটি শ্রেণী থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১টি খাবার খেয়ে থাকি তাহলে প্রতিটি খাদ্য শ্রেণির অনুকূল নির্দিষ্ট নম্বর প্রাপ্ত হবো (যেমন সব ধরনের শর্করা শ্রেণিতে ভাত বা রুটি খেলে প্রাপ্ত নম্বর হবে ১ (এক) আর  না খেলে ০ (শূন্য) )। এভাবে যদি সর্বমোট স্কোর ১০ এর মধ্যে ৫ এর নিচে হয় তাহলে খাদ্য বৈচিত্র্য  প্রতিদিনের অনুপুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট না, ৫ হতে যতো বেশি স্কোর হবে ততটাই খাদ্য গ্রহণের বৈচিত্র্যতা নির্দেশ করবে।
শিশুদের ন্যূনতম খাদ্য বৈচিত্র্য : একজন শিশু জন্ম গ্রহণের পর পরবর্তী দুই (২) বছর মাতৃদুধের পাশাপাশি প্রয়োজন অনুযায়ী সুষম খাদ্য দিতে হবে। এই ধারাবাহিক খাদ্যাভাসকে  এককথায় ওহভধহঃ ধহফ ণড়ঁহম পযরষফ ভববফরহম (ওণঈঋ) বলা হয়ে থাকে। জন্মের প্রথম একঘণ্টার মধ্যে  মাতৃস্তন থেকে প্রথমাবস্থায় যে আঠালো ঘন হলুদ বর্ণের দুধ (শাল দুধ) বের হয় তা অবশ্যই শিশুকে  খেতে দিতে হবে। এরপর প্রথম ছয় মাস শিশুকে  যথানিয়মে শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে,  পরবর্তীতে ৬ মাসের পর থেকে তার শারীরিক, মানসিক  বৃদ্ধি ও  প্রয়োজনীয় বাড়তি পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য মায়ের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার (পরিপূরক খাবার)  দিতে হবে। সেখানে নিন্মোলিখিত ৮টি খাদ্য শ্রেণির মধ্যে কমপক্ষে ৫টি বা তার বেশি খাদ্য শ্রেণি (মায়ের দুধ ও অন্য চারটি খাদ্য শ্রেণি) থেকে খাদ্যগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। একে বলা হয় শিশুদের ন্যূনতম খাদ্য বৈচিত্র্য বা গরহরসঁস উরবঃধৎু উরাবৎংরঃু ভড়ৎ পযরষফৎবহ।
উল্লিখিত ৮টি খাদ্যশ্রেণি নিরূপণ
(১) মায়ের দুধ; (২) শস্য ও শস্যজাত খাবার, মূল এবং কন্দ; (৩) ডাল, বীজ ও বাদামজাতীয় খাবার; (৪) দুধ ও দুধজাতীয় খাবার যেমন- দৈ, পনির ইত্যাদি); (৫) মাছ-মাংসজাতীয় খাবার; (৬) ডিম; (৭) ভিটামিন এ জাতীয় ফল ও সবজি (যেমন: গাজর, মিষ্টিকুমড়া); (৮) অন্যান্য ফল ও সবজি।
বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও জনমিতি জরিপ (ইউঐঝ) ২০২২ এর তথ্য অনুযায়ী মাত্র ৩৯% শিশু ন্যূনতম খাদ্য বৈচিত্র্য অনুযায়ী দৈনন্দিন খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। তাই শিশুর  প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সামর্থ্য অনুযায়ী দেশীয় সহজলভ্য বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্য হতে প্রাপ্ত উৎস দিয়ে পুষ্টি চাহিদা পূরণের ব্যাপরে সচেষ্ট হতে হবে।

লেখক : প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, প্রধান কার্যালয়, বাংলাদেশ ফলিতপুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান)। মোবাইল : ০১৭৮১৮৮৭৮৮৫, ই-মেইল : mahjabin_79@yahoo.com