ধান উৎপাদনে সেচের পানিসাশ্রয়ী
প্রযুক্তি (AWD)
ড. সুরজিত সাহা রায়
ধান উৎপাদনে পানি বা সেচ প্রদান আবশ্যক। সেচের পানির আধিক্যে ফসলের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং রোগ পোকার আক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া সেচ দেয়ার জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় কেনা জ¦ালানির প্রয়োজন হয়। জলাবদ্ধ জমি থেকে ধান গাছ দস্তা ও জিপসাম সার গ্রহণ করতে পারে না। দস্তা গ্রহণ করতে না পারলে ধানে বাদামি দাগ রোগ দেখা দেয়। জলাবদ্ধ জমিতে বাদামি গাছ ফড়িং, চুঙ্গি পোকার আক্রমণ বৃদ্ধি পায়। জমিতে পানি আটকে থাকলে ধান গাছে কুশি উৎপাদন ব্যাহত হয়। জলাবদ্ধ জমিতে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা যায়না এবং মিথেন গ্যাস উৎপাদন হয়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে বায়ু দূষণ করে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে এডব্লিউডি খুবই লাগসই পানিসাশ্রয়ী একটি প্রযুক্তি।
এডব্লিউডি পরিচিতি
এডব্লিউডি প্রযুক্তি হলো জমিকে পর্যায়ক্রমে ভিজানো ও শুকানোর মাধ্যমে ধানক্ষেতে প্রয়োজনমত নিয়ন্ত্রিত সেচ দেয়া। এ পদ্ধতিতে সেচ দিলে ধানক্ষেতে ২৮% পানি সাশ্রয় করা সম্ভব।
সেচের পানি সাশ্রয়ী পাইপ পদ্ধতি
ধানক্ষেতে একটি ছিদ্রযুক্ত প্লাস্টিক বা বাঁশের পাইপ বসিয়ে মাটির ভেতরের পানির স্তর পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনমতো সেচ দেয়াই হলো এ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য।
ব্যবহার পদ্ধতি
২৫ সেন্টিমিটার লম্বা ও ৭-১০ সেমি. ব্যাসের বাঁশ বা প্লাস্টিকের পাইপের উপরের ১০ সেমি. বাদ দিয়ে বাকি ১৫ সেমি. পাইপে ৫ সেমি. পরপর ৩ সুতি ব্যাসের ড্রিল বিট দিয়ে ছিদ্র করতে হবে। এক একর পরিমাণ একটি সমতল ধানক্ষেতে ২-৩টি পাইপ বসাতে হবে।
পাইপটি এমনভাবে ধানক্ষেতে বসাতে হবে যেন এটির ছিদ্রহীন ১০ সেমি. মাটির উপরে থাকে। ছিদ্রযুক্ত ১৫ সেমি. মাটির নিচে থাকবে, যাতে করে মাটির ভেতরের পানি ছিদ্র দিয়ে পাইপে সহজে প্রবেশ করতে বা পাইপ থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর্যন্ত জমিতে ২-৪ সেমি. দাঁড়ানো পানি ধরে রাখতে হবে। এরপর সাশ্রয়ী পাইপ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়।
এ পদ্ধতিতে প্রতিবার সেচের সময় এমন পরিমাণ পানি দিতে হবে যাতে জমির ৫ সেমি. গভীরতায় পানি থাকে। অতঃপর পানির স্তর কমতে কমতে পানির গভীরতা যখন পাইপের ভেতর ১৫ সেমি. নেমে যাবে অর্থাৎ পাইপের তলার মাটি দেখা যাবে তখন আবার সেচ দিতে হবে। এ অবস্থায় মাটিভেদে ৫-৮ দিন সময় লাগে। এভাবে ফুল আসা পর্যন্ত সেচ দিয়ে যেতে হবে।
ফুল আসার পর ২ সপ্তাহ পর্যন্ত জমিতে সবসময় ২-৪ সেমি. পানি ধরে রাখতে হবে।
অতঃপর ধান কাটার ২ সপ্তাহ আগে সেচ বন্ধ করে দিতে হবে।
এ পদ্ধতিতে ফলনের কোন তারতম্য হয় না, উপরন্তু পানি ও জ¦ালানি (বিদ্যুৎ, ডিজেল ইত্যাদি) সাশ্রয় হয় অর্থাৎ কম খরচে বেশি লাভ। সর্বোপরি এটি একটি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি। তথ্যসূত্র : বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট।
লেখক : পরিচালক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১১৯৬৯৩১৮, ই-মেইল :www.ais.gov.bd