Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মাছের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

মাছের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা
রোমানা ইয়াসমিন১ মেজবাবুল আলম২ মোঃ হাসিবুর রহমান৩
ঐতিহ্যগতভাবে ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ নদী মাতৃক বাংলাদেশের চিরাচরিত প্রবাদ। মানব ইতিহাসের একেবারে আদিকালেও মাছ মানুষের খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয় ছিল। প্রায় চার শতের অধিক নদী, অসংখ্য খাল, বিল, হাওর, বাঁওড়, ডোবা, নালার বাংলাদেশে পাওয়া যায় নানা রং ও স্বাদের মাছ। আকার আকৃতিতে ও এরা যেমন বিচিত্র, নামগুলোও তেমনি নান্দনিক। এ সব মাছ সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য। মাছের দিক দিয়ে বাংলাদেশ খুব সমৃদ্ধ। মাছ উৎপাদনেও বাংলাদেশ সামনের কাতারে অবস্থান করছে। মৎস্য অধিদপ্তর (২০১৯) এর তথ্যানুসারে বাংলাদেশে জনপ্রতি বার্ষিক মাছ গ্রহণের পরিমাণ ২২.৮৪ কেজি, মাছের বার্ষিক চাহিদা ৪২.৩৮ লক্ষ মেট্রিক টন, জনপ্রতি মাছের বার্ষিক চাহিদা ২১.৯০ কেজি, জনপ্রতি মাছের দৈনিক চাহিদা ৬০ গ্রাম। বাংলাদেশে মাছের মোট উৎপাদন ৪২ লক্ষ ৭৬ হাজার ৬৪১ মেট্রিক টন। যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয় (আহরিত) থেকে আসে ১২,১৬,৫৩৯ মেট্রিক টন, অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয় (চাষকৃত) থেকে আসে ২৪,০৫,৪১৫ মেট্রিক টন এবং সমুদ্র থেকে আসে ৬,৫৪,৬৮৭ মেট্রিক টন। জাতীয় অর্থনীতিতে মৎস্য খাত এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। স্থুলজাতীয় উৎপাদনে এ খাতের অবদান শতকরা প্রায় ৩.৫ ভাগ এবং কৃষির উৎপাদনে শতকরা ২৫.৭১ ভাগ। জাতীয় রপ্তানি আয়ে মৎস্য খাতের শরিকানা শতকরা প্রায় ১.৫ ভাগ। আমাদের নিত্যদিনের খাদ্য তালিকায় প্রাণিজ আমিষের শতকরা ৬০ ভাগ সরবরাহ আসে মাছ থেকে। এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকা-ে প্রায় ১৩ লাখ শ্রমিক সার্বক্ষণিকভাবে এবং ১ কোটি ২৫ লাখ শ্রমিক খ-কালীনভাবে নিয়োজিত আছে। সুস্থ ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর জাতীয় উন্নয়নের পূর্বশর্ত ও শারীরিক সুস্থতার জন্য অন্যতম প্রধান শর্ত পরিমিত পরিমাণ সুষম খাদ্য গ্রহণ।
বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পুষ্টিগুণ
মাছ প্রাণিজ আমিষের প্রধান উৎস। আমিষ সরবরাহের পাশাপাশি মাছ বিভিন্ন খনিজ ও ভিটামিন সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমরা দৈনন্দিন যেসব খাবার গ্রহণ করি সেসব খাবার খাদ্য উপাদান অনুযায়ী যে ৬ ভাগে ভাগ করা যায় এর মধ্যে কিছু অ্যামাইনো এসিড ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ আমাদের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যক মাছের। মাছের পেশিকলায় বা আমিষে ৬০-৮২% পানি, ১৩-২০% প্রোটিন এবং কম বেশি চর্বি থাকে (স্মারণি-১)। এগুলির জন্যই মাছ উপাদেয় খাদ্য এবং কেবল বাংলাদেশের মানুষেরই নয়, পৃথিবীর বহু জাতির কাছেও। উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরা যেন এক ধরনের শিকার। বাস্তবিকই, মাছ ধরা কৃষি কাজের চেয়েও পুরনো এবং মাছ সর্বদাই মানুষকে সুস্বাদু ও উচ্চমানের প্রোটিন সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সুষম প্রাণিজ খাদ্য হিসেবে মাছে শর্করা, আমিষ, ¯েœহ, ভস্মসহ (খনিজ)  প্রচুর পরিমাণ শক্তি বিদ্যমান। প্রতি ১০০ গ্রাম মাছ থেকে ২৫০-১০৫০ কি.জু. শক্তি ১২.৩-১৮.৯ গ্রাম আমিষ ও ২০-১৮.৫ গ্রাম ¯েœহ পাওয়া যায়। যার মধ্যে সবচেয়ে কম কাঁচকি ও সবচেয়ে বেশি ইলিশ মাছ বিদ্যমান। প্রতি ১০০ গ্রাম মাছ থেকে প্রায় ০.৫-৪.২ গ্রাম ভস্ম (খনিজ) পাওয়া যায়। তন্মধ্যে, সবচেয়ে কম কাজুলী এবং সবচেয়ে বেশি খলিশা মাছ এ বিদ্যমান।
খাদ্য হিসেবে মাছের স্বাস্থ্য উপকারিতা
মাছকে বলা হয়ে থাকে নিরাপদ প্রোটিনের উৎস ও সহজে হজমযোগ্য। দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে মাংসের চেয়ে মাছের ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি মাছের রয়েছে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, নিয়মিত খেলে হার্ট, লিভার কিডনি ভালো থাকে ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এক জরিপে দেখা যায় ৬৫ বছরের বেশি বয়সী নারীরা ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড গ্রহণের ফলে তাদের পেশিশক্তি প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড থাকে, এ ছাড়াও এতে রয়েছে আয়রন, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, আয়োডিন, সেলেনিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি খনিজদ্রব্য ও ভিটামিন এ, ডি, ই এবং বি কমপ্লেক্স যা রোগ প্রতিরোধে মানুষের দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে নানা রোগ থেকে রক্ষা এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে (স্মারণি-২)।
বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে পুষ্টি চাহিদা পূরণে ও অপুষ্টি নিরসনে মানুষের খাদ্য তালিকায় মাছ অপরিহার্য ও নিরাপদ প্রোটিনের উৎস। মাছ সুষম পুষ্টি জোগানের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও এতে বিদ্যমান বিভিন্ন অ্যামাইনো এসিড, ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান সরবরাহ করে রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে সর্বোপরি, এ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে, কর্মসংস্থানে, দারিদ্র্য বিমোচনে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়ন কল্পে, অপুষ্টি নিরসনে, মৎস্য সম্পদের সঠিক ব্যবহার এবং প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি দূরীকরণে মৎস্য খাতের অবদান অনস্বীকার্য।

লেখক : ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদীকেন্দ্র, চাঁদপুর, মোবাইল : ০১৭১৭১১৫৫৫১, ই-মেইল : rumanabiva@yahoo.com