Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

টিস্যু কালচারের মাধ্যমে গ্লাডিওলাসের করমেল উৎপাদন প্রযুক্তি

টিস্যু কালচারের মাধ্যমে গ্লাডিওলাসের
করমেল উৎপাদন প্রযুক্তি
ড. মো. খালিদ জামিল
গ্লাডিওলাস একটি খুবই জনপ্রিয় ফুল। এই ফুলের আকর্ষণীয় গঠন এবং দীর্ঘ সময় সজীব থাকার জন্য সকলের কাছে এই ফুলটি কদর বেশী। প্রধানত ল্যটিন ভাষায় ‘গ্লাডিওলাস ’ মানে তলোয়ার। এই ফুলের পাতার চেহারা অনেকটা তলোয়ারের মতো। সুন্দর পুষ্পদ- ও আকর্ষণীয় রঙিন ফুল, প্রায় সকলেরই নজর কাড়ে। গ্লাডিওলাস ফুলের বাজার চাহিদা আকাশছোঁয়া হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ বেশ লাভজনক। বাহারি বর্ণের ফুল ও আকর্ষণীয় পুষ্পদ-ের জন্য গ্লাডিওলাস বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। ইহা একটি কন্দজাতীয় ফুল, যা সাধারণভাবে সোর্ড লিলি নামে পরিচিত। ফুলদানিতে এই ফুলের জীবনকাল ৮-৯ দিন ফলে কাট ফ্লাওয়ার  হিসেবে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়।
সারা বছর এ ফুলের চাষ করা যায় তবে অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস চাষের জন্য উত্তম সময়। বাংলাদেশের সব এলাকাতেই এ ফুলের চাষ করা সম্ভব তবে যশোর, ঝিনাইদহ, সাভার, পঞ্চগড়, গাজীপুর ও কক্সবাজার এলাকায় ব্যাপকভাবে এ ফুলের চাষ করা হয়। বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস চাষের ক্ষেত্রে করম ও করমেল ব্যবহার করা হয়। সাধারণত একটি মাতৃ করম থেকে একটি অপাত্য (Daughter) করম এবং গুচ্ছাকারে কিছু করমেল উৎপন্ন হয়। জাত ও মৌসুম ভেদে এই করমেল উৎপাদনে তারতম্য দেখা যায়। গ্লাডিওলাস উচ্চমাত্রার হেটারোজাইগাস ) প্রকৃতির ফুল। তাই বীজ থেকে উৎপন্ন চারা অবিকল মাতৃগাছের মতো হয় না। বীজ থেকে চারা উৎপাদন বেশ সময় সাপেক্ষ এবং কষ্টসাধ্য। অল্প সময়ে অধিক পরিমাণ রোগমুক্ত করমেল উৎপন্ন করে গ্লাডিওলাসের বংশবিস্তার করার জন্য টিস্যু কালচার  একটি উত্তম পন্থা। এ ছাড়া গ্লাডিওলাসের যে সমস্ত জাত স্বাভাবিকভাবে পর্যাপ্ত করমেল উৎপাদনে অক্ষম সেক্ষেত্রে টিস্যু কালচার পদ্ধতি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের জীব প্রযুক্তি বিভাগের গবেষণাগারে গ্লাডিওলাস ফুলের করমেল উৎপাদনের লক্ষ্যে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। টিস্যুকালচার পদ্ধতিতে প্রচুর পরিমাণে করমেল উৎপাদন করা সম্ভব।
টিস্যুকালচার বা আবাদ মাধ্যমে গ্লাডিওলাসের করমেল উৎপাদন প্রযুক্তি : টিস্যুকালচারের মাধ্যমে গ্লাডিওলাসের করমেল উৎপাদনের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে বারি গ্লাডিওলাস-৪ এর সবল ও রোগমুক্ত গাছ থেকে করম ও অপ্রস্ফুটিত পুষ্পদ- সংগ্রহ করা হয়। তারপর জীবাণুনাশক দ্রবণে সেগুলো জীবাণুমুক্ত করা হয়। জীবাণুুমুক্ত পরিবেশে অর্থাৎ লেমিনার এয়ার ফ্লো কেবিনেটের মধ্যে এক্সপ্লান্ট তৈরি করার পর সেগুলো স্যুট ইনিসিয়েশন  মিডিয়ায় স্থাপন করা হয়। স্যুট ইনিসিয়েশন শুরু হলে সেগুলোকে পুনরায় হরমোন সমৃদ্ধ স্যুট মাল্টিপ্লিকেশন মিডিয়ায় কালচার করা হয়। এই মিডিয়ায় একটি স্যুট  থেকে অনেকগুলো স্যুট  এর সৃষ্টি হয়। এই স্যুটের  সংখ্যা আরো বৃদ্ধির জন্য তিন থেকে চার সপ্তাহ পর পর একই হরমোন সমৃদ্ধ নতুন তৈরি মিডিয়ায় সাবকালচার  করা হয়। এভাবে কয়েকবার সাবকালচার  করলে প্রচুর পরিমাণে অনুচারা পাওয়া যায়। তারপর করমেল উৎপাদনের জন্য স্যুট গুলোকে নতুন হরমোন সমৃদ্ধ করমেল উৎপাদন মিডিয়ায় স্থাপন করা হয়। এই মিডিয়ায় ৩০-৪৫ দিনের মধ্যেই করমেল উৎপাদন শুরু হয়। তারপর কয়েকবার সাব কালচার করে করমেল কিছুটা শক্ত ও বাদামী বর্ণ  ধারণ করলে সেগুলো কালচার ভেসেল থেকে সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত করমেল কিছুদিন নিম্ন তাপমাত্রায় (৪ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড) সংরক্ষণ করা হয়। তারপর সেগুলো জীবাণুমুক্ত মাধ্যমে ছোট ছোট টবে লাগিয়ে চারা উৎপাদনের জন্য গ্রিনহাউজে রাখা হয়। ২-৩ মাসের মধ্যেই করমেল থেকে নতুন চারা উৎপন্ন হয়। পরবর্তীতে করমেলের আকার বৃদ্ধি পায়। এভাবে উৎপন্ন করমেল থেকে ৩-৪ বছর পর যে গাছ উৎপন্ন হয় তাতে মাতৃগাছের অনুরূপ পুষ্পদ- দেখা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, কন্দের চেয়ে পুষ্পদ-ের গিট বা নোড ব্যবহার করে অধিক পরিমাণে চারা ও করমেল উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।  
গ্লাডিওলাস চাষের জন্য প্রথমে জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে জমি তৈরি করতে হবে। তারপর সেখানে করমেল থেকে উৎপন্ন চারা মাটির ৫-৬ সেমি. গভীরে এমনভাবে রোপণ করতে হবে যাতে সারি থেকে সারি ২০ সেমি. এবং গাছ থেকে গাছ ১৫ সেমি. দূরত্বে থাকে। গ্লাডিওলাস চাষে হেক্টরপ্রতি ১০ টন পচা গোবর, ২০০ কেজি ইউরিয়া, ২২৫ কেজি টিএসপি এবং ১৯০ কেজি এমওপি দিতে হবে। শেষ চাষের সময় গোবর, টিএসপি ও এমওপি মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সারের অর্ধেক রোপণের ২০-২৫ দিন পর এবং বাকি অর্ধেক পুষ্পদ- বের হওয়ার পর উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।
গ্লাডিওলাসের প্রয়োজনীয় পরিচর্যা হচ্ছে মাটি উঠানো। গাছের ৩-৫ পাতা পর্যায়ে একবার এবং প্রয়োজনবোধে ৭ পাতা বের হওয়ার পর অর্থাৎ স্পাইক বের হওয়ার সময় গাছের গোড়ার দুইপাশ থেকে মাটি তুলে দিতে হবে। মাটি তুলে দিলে জমিতে পর্যাপ্ত রস থাকে এবং বাতাসে গাছ পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। সেচ দেয়ার পর করম মাটির উপরে উঠে এলে পাশ থেকে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
বর্ষাকালে বৃষ্টিতে পড়ে যাওয়া থেকে গাছ রক্ষার জন্য স্টেকিং প্রয়োজন। সারিতে ২ মিটার দূরে দূরে বাঁশের কাঠি পুঁতে দিতে হবে। এ ছাড়াও বাতাসে গাছ হেলে পড়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য ছোট ছোট খুটি বা প্লাস্টিকের রশি টেনে দেয়া প্রয়োজন।
সাধারণত স্পাইকের নিচ থেকে ১-২টি পাপড়ি ফুটলে ফুল সংগ্রহ করতে হয়। ফুল সংগ্রহের পরপরই বালতি ভর্তি পানিতে সোজা করে ডুবিয়ে রেখে পরে নিম্ন তাপমাত্রায় (৬-৭ ডিগ্রি) সংরক্ষণ করা উত্তম। স্পাইক কাটার সময় গাছের গোড়ায় ৪-৫টি পাতা রাখতে হবে তাহলে করম পুষ্ট হবে।

লেখক : প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ফল বিভাগ, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউট, জয়দেবপুর, গাজীপুর। মোবাইল নং ০১৭২১৬৩০৮০১, ই-মেইল :hre@yahoo.com