Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

গবাদিপশুর-জাত-উন্নয়নে-কৃত্রিম-প্রজননের-গুরুত্ব

গবাদিপশুর জাত উন্নয়নে কৃত্রিম 
প্রজননের গুরুত্ব
ডা: মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ
বংশবিস্তারের মাধ্যম হলো প্রজনন। প্রজননে গাভীর গর্ভে তার ডিম্বাণুর সাথে ষাঁড়ের শুক্রাণুর মিলনের ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উদ্ভব হয়। ভাল জাতের বীজ বপন করলে যেমন ভালো জাতের ফসল হয় তেমনি ভালো জাতের ষাঁড়ের সিমেন (বীর্য) ভাল জাতের বাছুর উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গবাদিপশুর দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জাত উন্নয়ন অপরিহার্র্য। এজন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রজনন কার্যক্রম পরিচালনা ও প্রজনন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন। সাধারণত গবাদিপশুর প্রজননের জন্য দু’টি পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়।
প্রাকৃতিক প্রজনন 
এই পদ্ধতিতে কোন ষাঁড়ের দ্বারা সরাসরি গাভীকে প্রজনন করানো হয়।
কৃত্রিম প্রজনন 
ষাঁড়ের সিমেন বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে তা গরম হওয়া (ইস্ট্রাস অবস্থা) গাভীর জরায়ুতে প্রয়োগ করে গর্ভ সঞ্চারণের পদ্ধতিকে          কৃত্রিম প্রজনন বলা হয়। অর্থাৎ কৃত্রিম প্রজনন হচ্ছে এমন একটি কৌশল যার মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে ষাঁড় থেকে বীর্য সংগ্রহ করা হয়, সংগৃহীত বীর্যের গুণাগুণ পরীক্ষা করা হয়, বীর্যকে তরল করা হয় এবং যান্ত্রিক উপায়ে স্ত্রী জননতন্ত্রের নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট পরিমাণ বীর্য প্রবেশ করানো হয়। কৃত্রিম প্রজননে দুই ধরনের সিমেন/বীর্য ব্যবহার করা হয়। যথা-
তরল সিমেন : এই সিমেনের প্রতি মাত্রা থাকে এক মিলি যাতে ২০-৩০ মিলিয়ন শুক্রাণু থাকে। ৩-৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় এই সিমেন ২-৩ দিন সংরক্ষণ করা যায়।
হিমায়িত সিমেন : এই সিমেন ধারণের জন্য ব্যবহৃত নলে ০.২৫ মিলিলিটার সিমেন থাকে। যাতে ২০-৩০ মিলিয়ন শুক্রাণু থাকে। এই সিমেন ১৯৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় তরল নাইট্রোজেনে ২০-২৫ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
কৃত্রিম প্রজননের গুরুত্ব : গবাদিপশুর কৌলিকমান (জেনেটিক ভ্যালু) উন্নয়নের জন্য কৃত্রিম প্রজনন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। বর্তমানে সারা বিশে^ গবাদিপশুর জাত উন্নয়নের জন্য এ পদ্ধতি বহুলভাবে প্রচলিত। বর্তমানে আমাদের  দেশেও এ পদ্ধতি চালু আছে। এক্ষেত্রে অধিক উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো ষাঁড় ব্যবহার করে বহুসংখ্যক গাভীকে পাল দেওয়ানোর জন্য কৃত্রিম প্রজনন কৌশলটি ব্যবহার করা হয়। বংশগত কারণে গাভী বা বলদ যথাক্রমে নির্দিষ্ট মাত্রায় দুধ উৎপাদন করে এবং আকারে বড় হয়। পশুর জাত উন্নয়ন ছাড়া তার উৎপাদন বৃদ্ধি ও গুণগতমান পরিবর্তন সম্ভব হয় না। তবে কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিতে অধিক উৎপাদনশীল জাতের ষাঁড়ের সিমেন সংগ্রহ করে গাভীকে প্রজনন করানো হলে উন্নত গুণাবলি তার বাচ্চার দেহে সঞ্চালিত হয়। তাই উন্নত ষাঁড়ের পরিবর্তে উন্নত জাতের ষাঁড়ের সিমেন সংগ্রহ করে এদেশের গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন করার একমাত্র মাধ্যম কৃত্রিম প্রজনন। 
কৃত্রিম প্রজননের সুবিধা 
উন্নত জাতের ষাঁড়ের সিমেন দ্বারা অতিদ্রুত এবং ব্যাপক ভিত্তিতে উন্নত জাতের গবাদিপশু উৎপাদন সম্ভব। যার ফলে গাভী অধিক দুধ ও মাংস উৎপাদন করতে পারে। 
প্রজননের পূর্বে শুক্রাণুর গুণাগুণ পরীক্ষা করে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে উন্নত ষাঁড় নির্বাচন করা যায়। ফলে অনুন্নত ষাঁড় ও অপ্রয়োজনীয় ষাঁড় ছাঁটাই করতে সুবিধা হয়।
একটি ষাঁড় থেকে একবার সংগৃহীত সিমেন দ্বারা ১০০-৪০০ গাভী প্রজনন করানো যায়। ফলে ষাঁড়ের ব্যবহার যোগ্যতা বৃদ্ধি পায় এবং খামার লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
ষাঁড়ের কিছু জন্মগত ও বংশগত রোগ থাকতে পারে। এ পদ্ধতিতে তা প্রজনন প্রক্রিয়ার পূর্বে যাচাই-বাছাই করা সম্ভব হয়। ফলে ষাঁড়ের রোগের বিস্তার প্রতিরোধ সম্ভব হয় এবং সুস্থ বাছুর পাওয়া যায়।
প্রাকৃতিক উপায়ে প্রজননের সময় বিভিন্ন মারাত্মক যৌনরোগ যেমন- ব্রুসেলোসিস, ভিব্রিওসিস, ট্রাইকোমনিয়াসিস ইত্যাদি ষাঁড়ের মাধ্যমে আক্রান্ত গাভী থেকে অন্য গাভীর মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। কিন্তু কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এসব যৌনরোগের সংক্রমণ ও বিস্তার সহজেই রোধ করা যায়।  
কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিতে কম খরচে অনেক বেশি গাভীকে পাল দেওয়া যায়, যেহেতু প্রজনন কাজে ব্যবহারের জন্য বাড়তি ষাঁড় পালনের প্রয়োজন হয় না। 
নির্বাচিত ষাঁড়ের সিমেন সংরক্ষণ করা যায় এবং প্রয়োজনমতো যে কোন সময় ব্যবহার করা যায়। প্রয়োজন হলে বিদেশ থেকে উন্নত জাতের ষাঁড়ের পরিবর্তে অল্প খরচে তার সিমেন আমদানি করা যায়।
ষাঁড় ও গাভীর দৈহিক অসামঞ্জস্যতার কারণে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়ানো যায় এবং সংগমে অক্ষম উন্নত জাতের ষাঁড়ের সিমেন সংগ্রহ করে তা ব্যবহার করা যায়। যে সমস্ত গাভী ষাঁড়কে উপরে উঠতে দেওয়া পছন্দ করে না সে সমস্ত গাভীকে কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিতে পাল দেওয়া যায়।
উন্নত পালন পদ্ধতি অনুসরণ করে সঠিক প্রজনন রেকর্ড রাখা সম্ভব হয় এবং ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির গবাদিপশুর মধ্যে প্রজনন ঘটিয়ে সংকর জাত সৃষ্টি করা যায়। 
কৃত্রিম প্রজননের সীমাবদ্ধতা
কৃত্রিম প্রজননের কাজে সিমেন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ব্যবহারের জন্য দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হয়। খামার মালিককে কৃত্রিম প্রজনন টেকনিশিয়ানের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে গাভীর উত্তেজনাকাল সুষ্ঠুভাবে নির্ণয় করে কৃত্রিম প্রজনন করতে হয়। 
প্রজননের জন্য রক্ষিত ষাঁড়ের বিশেষ পরিচর্যা প্রয়োজন হয়। ঠিকঠাক পরিচর্যা না করা হলে ষাঁড় অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
কৃত্রিম প্রজনন কাজের জন্য সহায়ক গবেষণাগারে বিশেষ ধরনের যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় এবং সেখানে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মূল্য তুলনামূলকভাবে বেশি।
স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রজনন না হলে গর্ভসঞ্চারের হার হ্রাস পায়।
সুষ্ঠু প্রজনন নিবন্ধনের (এআই রেকর্ড) প্রয়োজন হয়। 
কৃত্রিম প্রজনন ফলপ্রসূ না হওয়ার কারণ
কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম ফলপ্রসূ না হওয়ার পিছনে প্রজননকারী, গাভী, গাভীর মালিক, সিমেন এবং সিমেন স্ট্র দায়ী হতে পারে (সারণি দ্রষ্টব্য)।

সূত্র : Kamal MM. 2020. Pranisampad O Unnayan (Livestock and Development), Third Edition, Bangla Prokashon, Saghata, Gaibandha. P-147-148, 150)

টেরিনারি সার্জন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, কৃষি খামার সড়ক, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫, মোবাইল: ০১৮১১-৯৮৬৬০৫

ইমেইল:smmohibullah@gmail.com