স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি ফল গাছের স্মার্ট সার প্রযুক্তি
ড. মো. সদরুল আমিন
সার প্রয়োগ ও সমন্বিত মাটি-ফসলের সমস্যা ব্যবস্থাপনায় সম্পর্কিত সকল উপকরণ ব্যালেন্স করে ব্যবহার করা, প্রয়োজন প্রতি একক জমিতে ফলন বাড়ানো এবং ফলনের মান বাড়ানোর জন্য স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি ফল গাছের স্মার্ট সার প্রযুক্তি অবলম্বন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রধান প্রধান করণীয় হলো- মাঠ, গাছ, পাতা ফুল-ফলে সমস্যা নিরূপণ করে সুষম সারদ্রব্য তৈরি ও প্রয়োগের সমন্বিত সম্প্রসারণ সুপারিশ দ্বারা কাক্সিক্ষত ফলন অর্জন।
হাইব্রিড ফসলের পুষ্টি চাহিদা বেশি বলে জমিতে সার প্রয়োগ বাড়াতে হচ্ছে। দুই দশক আগে যেখানে ৭-৮টি সার দিয়ে চাষাবাদ হতো, মাটি দুর্বল হওয়ার কারণে মাইক্রোসারসহ প্রায় ১৫-২০ ধরনের সার দিতে হচ্ছে। এতে অধিক দক্ষতার কৃষক লাগছে, ব্যয় বাড়ছে কিন্তু সেই অনুপাতে আয় বাড়ছে না। এখন সার ছাড়া ফসলই হচ্ছে না।
সার প্রয়োগের জরুরি বিষয় : সার প্রয়োগের পর তা মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। জমিতে ছিপছিপে পানি থাকা অবস্থায় ইউরিয়া দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিলে এ সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। জৈবসার ফসল রোপণের ৭-৮ দিন পূর্বে জমিতে প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ফসলের বর্ধনশীল অবস্থায় গৌণ পুষ্টির অভাব দেখা দিলে তা স্প্রে করাই উত্তম। এফএও-এর তথ্য মতে।
সঠিকভাবে ব্যবহার করা না হলে প্রয়োগকৃত ইউরিয়া সারের ৬০-৭০% অপচয় হতে পারে। বছরে বর্ষার অগে পরে ২-৩ বার অণুসার, পিজিআর মিরাকুলান প্রয়োজনমতো স্প্রে করতে হবে।
বয়সভিত্তিতে সারপ্রয়োগের সুপারিশ
বয়সভিত্তিতে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি ফল আম, লিচু, পেয়ারা, সাইট্রাস, কুল, সফেদা, কাঁঠাল প্রধানত কলমের গাছ হয়ে থাকে। এসব গাছের বয়স অনুযায়ী সার প্রয়োগের সুপারিশ সারণি দ্রষ্টব্য।
সার বছরে মার্চ, জুলাই, অক্টোবরে ২-৩ বারে দিতে হবে। তৈরি যৌগিক সার দিলে লিটারেচার মানতে হবে। স্মার্ট সার (সলুবোর, লিবলের জিংক) বছরে ১ বার ও সাবধানে ন্যানো সার দিতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে এনপিকে সারের পরই ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, দস্তা ও বোরন সারের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে গেছে। ক্যালসিয়াম ঘাটতি সম্পন্ন সম্ভাব্য মাটি : অম্লীয় মাটি, লাল মাটি, বেলে মাটি, চুনহীন ও বাদামি পাহাড়ি মাটি।
ক্যালসিয়ামের অপুষ্টি লক্ষণ হচ্ছে-গাছের পাতা কুঁকড়ে বা কুঁচকে যায়। পাতা দুই পাশ থেকে মুড়ে হয়ে নৌকার মতো বাঁকা হয়ে যায়;
ম্যাগনেসিয়াম গাছের ক্লোরোফিলের মূল পরমাণু হিসেবে কাজ করে; ম্যাগনেসিয়াম সার গাছের পাতার আকার বাড়ায়; ফসলের গুণগত মান বৃদ্ধি করে ।
ম্যাগনেসিয়াম সার/চুন ব্যবহার করলে এর অভাব দূর হয়। জমিতে প্রতি হেক্টরে ৪০০-৬০০ কেজি ডলোচুন জমি তৈরির সময় দিতে হয়। ম্যাগনেসিয়াম পাতায় ক্লোরোফিল অণু তৈরি করে। পাতায় আন্তঃশিরা ক্লেরোসিস লক্ষণ দেখা যায়।
উপস্থিত মাটি পরীক্ষা করেও সারের প্রকার ও পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। বর্ণিত স্মার্ট পদ্ধতিতে জৈব ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করে অন্তত ২০% ফলন বেশি পাওয়া যাবে এবং সার্বিক সার ব্যয় সমহারে কমে যাবে।
লেখক: প্রফেসর (সাবেক), হাজী দানেশ মোহাম্মদ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, দিনাজপুর। মোবাইল : ০১৩২১২১৬১১৩