Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

গবাদিপশু-ও-হাঁস-মুরগির-রোগ-প্রতিরোধে-টিকাদানের-নিয়মাবলি

গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির রোগ প্রতিরোধে 
টিকাদানের নিয়মাবলি
ডা. মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ
টিকা বা ভ্যাকসিন রোগ প্রতিরোধের একটি উপায়। টিকার মাধ্যমে দেহে রোগ প্রতিষেধক বীজ প্রয়োগ করা হয়। এই বীজ সুনির্দিষ্ট রোগের নিষ্ক্রিয় জীবাণু, যা দেহে প্রবেশ করে বিশেষ উপায়ে সেই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। এ প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম উপায়ে শরীরে প্রত্যক্ষ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলাকেই টিকাদান বা ভ্যাকসিনেশন বলে।
কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সাধারণত যে রোগের বিরুদ্ধে টিকা দেওয়া হয় ঐ রোগের জীবাণু দিয়েই টিকা তৈরি করা হয়। তবে জীবাণুগুলো বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নিস্তেজ করা, মারা বা কিছুটা দুর্বল করা হয়। এরূপ হলে তাদের আর  রোগ সৃষ্টি করার কোনো প্রকার ক্ষমতা থাকে না। টিকা তৈরি হতে পারে জীবিত জীবাণু দিয়ে, হতে পারে মৃত বা নিষ্ক্রিয় জীবাণু দিয়ে অথবা জীবাণুর এন্টিজেন অংশ দিয়ে। 
 “চৎবাবহঃরড়হ রং নবঃঃবৎ ঃযধহ পঁৎব” “প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম”। অর্থাৎ, রোগের চিকিৎসা করার চেয়ে প্রতিরোধ করাই উত্তম। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতির ফলে অধিকাংশ প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগের কার্যকরী প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। তাই খামারে গবাদিপশু এবং পোল্ট্রিকে রোগব্যাধির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলে ঘাতক ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখা হয়, যা আধুনিক খামার ব্যবস্থাপনার অপরিহার্য অংশ হিসেবে বিবেচিত।
টিকা (ভ্যাকসিন) এর প্রকারভেদ
টিকা প্রধানত দুই প্রকার। যথা-
জীবন্ত টিকা (খরাব ঠধপপরহব) : বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোগের জীবাণুকে দুর্বল করে জীবন্ত টিকা তৈরি করা হয়। এই টিকা দেহে দ্রুত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। সাধারণত খাবার পানি, চোখে বা নাকে ফোঁটা, স্প্রে, মুখে ড্রপ এবং কখনো কখনো ইনজেকশনের মাধ্যমে এই টিকা প্রয়োগ করা হয়।
নিষ্ক্রিয়কৃত টিকা (ওহধপঃরাধঃবফ ঠধপপরহব) : জীবাণুকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় মেরে ফেলে এই টিকা প্রস্তুত করা হয়। জীবাণুর রোগ তৈরির ক্ষমতা নষ্ট করে তার এন্টিজেনিক গুণাগুণ অক্ষুণœ রেখে এই টিকা তৈরি করা হয়। এই ধরনের টিকা প্রদানে দেহে উন্নতমানের দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। সাধারণত ইনজেকশনের মাধ্যমে দেহে নিষ্ক্রিয়কৃত টিকা প্রয়োগ করা হয়। 
টিকা পরিবহন, সংরক্ষণ এবং প্রয়োগের নিয়মাবলি
সঠিকভাবে টিকা পরিবহন, সংরক্ষণ এবং সময়মতো প্রয়োগ না করা টিকা অকার্যকর হওয়ার অন্যতম কারণ। টিকা পরিবহন, সংরক্ষণ ও প্রয়োগের নিয়মাবলি সারণি দ্রষ্টব্য।
এছাড়াও প্রতিষেধক টিকা সবসময়ই সুস্থ পশু-পাখিকে প্রয়োগ করতে হবে। অসুস্থ পশু-পাখিকে টিকা দেওয়া যাবে না; কৃমিতে আক্রান্ত পশু-পাখিকে টিকা প্রয়োগ করা উচিত নয়। তাতে কাক্সিক্ষত মাত্রায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয় না; টিকা বীজ অথবা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রস্তুতকৃত তরল টিকা কোন অবস্থাতেই সূর্যের আলোতে আনা উচিত নয়; টিকা বীজ সবসময় ঠা-া অবস্থায় (যথাযথ তাপমাত্রায়) সংরক্ষণ করতে হবে; তরল টিকাসমূহ রেফ্রিজারেটরে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। এই টিকা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচের তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যাবে না। হিমশুষ্ক টিকাসমূহ শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচের তাপমাত্রায় বা বরফপাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে; তরল ও হিমশুষ্ক উভয় প্রকার টিকা পরিবহনের ক্ষেত্রে কুল চেইন বা ঠা-া অবস্থায় পরিবহন নিশ্চিত করতে হবে; তাপ প্রতিরোধক কুল-ভ্যান/কন্টেনার/ফ্লাস্কের মধ্যে বরফ দিয়ে টিকা পরিবহন করতে হয়। বরফ গলে গেলে পুনরায় বরফ দিতে হবে; হিমশুষ্ক টিকাসমূহ সরবরাহকৃত ডাইল্যুয়েন্ট (টিকার দ্রবণ) এবং যে সকল টিকার সাথে ডাইল্যুয়েন্ট সরবরাহ করা হয় নাই সেগুলোর ক্ষেত্রে বাজারে প্রাপ্ত পরি¯্রুত পানি (উরংঃরষষবফ ডধঃবৎ) ব্যবহার করতে হবে; পরি¯্রুত পানি (উরংঃরষষবফ ডধঃবৎ) না থাকলে কলের পানি ২০ মিনিট গরম করার পর ঠা-া করে ব্যবহার করতে হবে; হিমশুষ্ক টিকাসমূহ একবার ডাইল্যুয়েন্ট বা ডিস্টিল্ড ওয়াটারে মিশ্রিত করার পর ২ ঘণ্টার মধ্যে সম্পূর্ণ টিকা ব্যবহার শেষ করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ না হলে তা সংরক্ষণ না করে মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে। ভায়ালে অব্যবহৃত টিকা সংরক্ষণ করে পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না; টিকা ব্যবহারের তারিখ ও সংরক্ষণের মেয়াদ গত হয়ে গেলে এবং টিকার সাধারণ রং পরিবর্তিত হয়ে গেলে কোনক্রমেই সে টিকা ব্যবহার করা যাবে না; ব্যবহারের সময় মিশ্রণ ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে পাত্র, সিরিঞ্জ, নিডেল, ডাইল্যুশনের জন্য ব্যবহৃত তরল পদার্থ, টিকা ব্যবহারকারীর হাত ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত হওয়া প্রয়োজন। টিকা প্রয়োগের পূর্বে সিরিঞ্জ, নিডেল ও আনুষঙ্গিক পাত্রগুলো যথাযথভাবে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে; টিকা প্রয়োগের পর টিকার অব্যবহৃত অংশ, ভায়াল, ক্যাপ, রাবার স্টপার, একবার ব্যবহার উপযোগী নিডেল (সুচ) মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে; জীবাণুমুক্তকরণের জন্য রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা উচিত নয়; তরল টিকা ব্যবহারের পর অবশিষ্ট থাকলে ফ্রিজে রেখে তা পরে ব্যবহার করা যায়; ব্যবহারের সময় টিকা মিশ্রণের পাত্র ছায়াযুক্ত স্থানে বরফ দেয়া বড় পাত্রের মধ্যে রাখতে হবে; লক্ষ্য রাখতে হবে যেন বয়স্ক পশু-পাখির টিকা ভুলবশত বাড়ন্ত বাচ্চাকে না দেয়া হয়। এতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে; টিকার ভায়াল/এম্পুল কখনোও হাতে বা পকেটে করে নেয়া উচিত নয়। কারণ দেহের তাপে টিকার কার্যকারিতা নষ্ট হতে পারে; গ্রামাঞ্চলে টিকা প্রদানের পূর্বে সমস্ত মোরগ-মুরগিকে একত্র করার পর টিকা গুলানো এবং ব্যবহার করা উচিত। কারণ মুরগী আনতে আনতে বিলম্বের কারণে টিকার গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। গুলানো টিকা নিয়ে বাড়ি-বাড়ি বা গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ঘোরাফেরা করা উচিত নয়; টিকা প্রয়োগের জন্য ব্যবহৃত সিরিঞ্জ এবং নিডেল কোনো প্রকার জীবাণুনাশক পদার্থ দ্বারা পরিষ্কার করা উচিত নয়। কারণ সিরিঞ্জ এবং নিডেল পরিষ্কার করার পর যে জীবাণুনাশক পদার্থ লেগে থাকবে তা টিকার ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসকে মেরে ফেলে টিকার কার্যকারিতা নষ্ট করে দিতে পারে। (সূত্র: প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মহাখালী, ঢাকা এর বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২৩)


বি.দ্র. উল্লিখিত নিয়মাবলি মেনে সঠিকভাবে কর্মসম্পাদন না করলে টিকাদান ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

লেখক : ভেটেরিনারি সার্জন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, কৃষি খামার সড়ক, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫, মোবাইল: ০১৮১১-৯৮৬৬০৫, ইমেইল :smmohibullah@gmail.com