চৈত্র মাসের কৃষি
(১৫ মার্চ-১৩ এপ্রিল)
কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম
চৈত্র মাস। ১৪৩০ বঙ্গাব্দের শেষ মাস। এ সময় বসন্ত ঋতু নতুন করে সাজিয়ে দেয় প্রকৃতিকে। চৈতালী হাওয়া জানান দেয় গ্রীষ্মের আগমন। এ মাসে রবি ফসল ও গ্রীষ্মকালীন ফসলের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম একসাথে করতে হয় বলে কৃষকের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন আসুন আমরা জেনে নেই এ মাসের কৃষিতে আমাদের করণীয় কাজগুলো।
বোরো ধান
যারা শীতের কারণে দেরিতে চারা রোপণ করেছেন তাদের ধানের চারার বয়স ৫০-৫৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের শেষ কিস্তি উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। সার দেয়ার আগে জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে। জমিতে যদি সালফার ও দস্তা সারের অভাব থাকে এবং জমি তৈরির সময় এ সারগুলো না দেয়া হয়ে থাকে তবে ফসলে পুষ্টির অভাবজনিত লক্ষণ পরীক্ষা করে শতাংশপ্রতি ২৫০ গ্রাম জিপসাম ও ৪০ গ্রাম দস্তা সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। ধানের কাইচ থোড় আসা থেকে শুরু করে ধানের দুধ আসা পর্যন্ত ক্ষেতে ৩-৪ ইঞ্চি পানি ধরে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে ধান উৎপাদনে সেচের পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি (অডউ) ব্যবহার করা যেতে পারে। পোকা দমনের জন্য নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শন করতে হবে এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আলোর ফাঁদ পেতে, পোকা ধরার জাল ব্যবহার করে, ক্ষতিকর পোকার ডিমের গাদা নষ্ট করে, উপকারী পোকা সংরক্ষণ করে, ক্ষেতে ডাল-পালা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ধানক্ষেত বালাইমুক্ত করতে পারেন।
এসব পন্থায় রোগ ও পোকার আক্রমণ প্রতিহত করা না গেলে শেষ উপায় হিসেবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া নিচু এলাকায় আউশ ও বোনা আমন চাষের এটি উপযুক্ত সময়।
ভুট্টা (রবি)
জমিতে শতকরা ৭০-৮০ ভাগ গাছের মোচা খড়ের রঙ ধারণ করলে এবং পাতার রঙ কিছুটা হলদে হলে মোচা সংগ্রহ করতে হবে। বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে শুকনো আবহাওয়ায় মোচা সংগ্রহ করে ফেলতে হবে। সংগ্রহ করা মোচা ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। মোচা সংগ্রহের পর উঠানে পাটি বিছিয়ে তার উপর শুকানো যায় অথবা জোড়া জোড়া বেঁধে দড়ি বা বাঁশের সাথে অথবা টিনের চাল বা ঘরের বারান্দায় ঝুলিয়ে শুকানোর কাজটি করা যায়। মোচা থেকে দানা সংগ্রহ করতে প্রয়োজনে ভুট্টা মাড়াইযন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে।
ভুট্টা (খরিফ)
গ্রীষ্মকালীন ভুট্টা চাষ করতে চাইলে এ মাসে বীজ বপন করতে হবে। খরিফ মৌসুমের জন্য ভুট্টার উন্নত জাতগুলো হলো বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৪, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৫, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৭ প্রভৃতি। শতাংশপ্রতি বীজ লাগবে ১০০-১২০ গ্রাম।
পাট
চৈত্রের শেষ পর্যন্ত পাটের বীজ বপন করা যায়। বপন উপযোগী পাটের ভালো জাতগুলো হলো সিসি-৪৫, বিজেআরআই দেশী পাটশাক-১ (বিজেসি-৩৯০), ফাল্গুনী তোষা (ও-৯৮৯৭), বিজেআরআই তোষা পাট-৪ (ও-৭২), বিজেআরআই তোষা পাট-৯, বিজেআরআই তোষা পাট-৬, বিজেআরআই তোষা পাট-৭, বিজেআরআই তোষা পাট-৮, বিজেআরআই তোষা পাট-৯। পাট চাষের জন্য উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করে আড়াআড়িভাবে ৫-৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। সারিতে বুনলে প্রতি শতাংশে ২৫ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। তবে ছিটিয়ে বুনলে আরেকটু বেশি অর্থাৎ ৩০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। পাটের জমিতে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেন্টিমিটার (প্রায় ১ ফুট) এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৭ সেন্টিমিটার (প্রায় ৩ ইঞ্চি) রাখা ভালো। ভালো ফলনের জন্য প্রতি একরে ৭০ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি টিএসপি, ১২ কেজি এমওপি, ১৮ কেজি জিপসাম এবং প্রায় ৪.৫ কেজি জিংকসালফেট সার প্রয়োগ করতে হবে।
অন্যান্য মাঠ ফসল
রবি ফসলের মধ্যে চিনা, কাউন, আলু, মিষ্টিআলু, চীনাবাদাম, পেঁয়াজ, রসুন যদি এখনো মাঠে থাকে তবে দেরি না করে সাবধানে তুলে ফেলতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে এ সময়ে বা সামান্য পরে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য পচনশীল ফসল তাড়াতাড়ি কেটে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে।
শাকসবজি
এ মাসেই গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির বীজ বপন বা চারা রোপণ শুরু করা প্রয়োজন। এ সময় গ্রীষ্মকালীন টমেটো, ঢেঁড়স, বেগুন, করলা, ঝিঙা, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা, শসা, ওলকচু, পটোল, কাঁকরোল, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, লালশাক, পুঁইশাক এসব সবজি চাষ করতে পারেন। ধৈঞ্চা, শন, বরবটি, মাষকলাই, অড়হর, ছোলা এসবের গাছ দিয়ে সবুজ সার তৈরি করা যেতে পারে। সবজি চাষে পর্যাপ্ত জৈবসার ব্যবহার করতে হবে। পরিকল্পিতভাবে জৈবসার ব্যবহার করলে সবজি ক্ষেতে রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। নিরাপদ সবজি উৎপাদনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা ও উত্তম কৃষি চর্চা মেনে শাকসবজি আবাদ করতে হবে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক সম্প্রতি উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল জাতসমূহ বারি ডাটা-৪, বারি হাইব্রিড ধুন্দুল-২, বারি হাইব্রিড শঁসা-১, বারি লাউ-৬ প্রভৃতি।
গাছপালা
এ সময় বৃষ্টির অভাবে মাটিতে রসের পরিমাণ কমে আসে। আম গাছে হপার পোকার আক্রমণ হলে অনুমোদিত কীটনাশক যেমন- সিমবুস/ফেনম/ডেসিস/ফাইটার ২.৫ ইসি প্রভৃতি প্রয়োগ করে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে। আম গাছে মুকুল আসার ১০ দিনের মধ্যে কিন্তু ফুল ফোটার আগেই একবার এবং এর একমাস পর আর একবার প্রতি লিটার পানির সাথে ১.০ মিলি সিমবুস/ফেনম/ডেসিস/ফাইটার ২.৫ ইসি মিশিয়ে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপাল ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করা প্রয়োজন। এ সময় আমে পাউডারি মিলডিউ ও এ্যান্থ্রাকনোজ রোগ দেখা দিতে পারে। টিল্ট, রিডোমিল গোল্ড, কানজা বা ডায়থেন এম ৪৫ অনুমোদিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
কাঁঠালের ফল পচা বা মুচি ঝরা সমস্যা এখন দেখা দিতে পারে। কাঁঠাল গাছ এবং নিচের জমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আক্রান্ত ফল ভেজা বস্তা জড়িয়ে তুলে মাটিতে পুঁতে ধ্বংস করতে হবে। মুচি ধরার আগে ও পরে ১০ দিন পর পর ২/৩ বার বোর্দো মিশ্রণ বা মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
গ্রাফটিং পদ্ধতিতে বরই গাছের কলম করতে পারেন। এজন্য প্রথমে বরই গাছ ছাঁটাই করতে হবে এবং পরে উন্নত বরই গাছের বাডিং বা চোখ দেশি জাতের গাছে সংযোজন করতে হবে।
কলা গাছের পার্শ্ব চারা, মরা পাতা কেটে দিতে হবে। পেঁপের চারা রোপণ করতে পারেন এ মাসে। এসময় থেকে ফলগাছে নিয়মিত কীটনাশক, ছত্রাকনাশক ও মাকড়নাশক স্প্রে করতে হবে। বাঁশঝাড়ে এ সময় নতুন চারা গজাবে। তাই বাঁশঝাড়ের গোড়ায় মাটি এবং গোবর বা আবর্জনা পচা সার দেওয়া প্রয়োজন।
সুপ্রিয় পাঠক, কৃষিকথায় প্রতি বাংলা মাসে কৃষি কাজে অনুসরণীয় কাজগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়। আরও বিস্তারিত ও তথ্য জানার জন্য আপনার নিকটস্থ কৃষি বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে জেনে নিতে পারেন। এ ছাড়াও কৃষি তথ্য সার্ভিসের কৃষি কল সেন্টার ১৬১২৩ নম্বরে কল করে জেনে নিতে পারেন। আমাদের সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা কৃষিকে নিয়ে যাবে সাফল্যের শীর্ষে। আপনাদের সবার জন্য শুভ কামনা।
লেখক : সম্পাদক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা, টেলিফোন: ০২৫৫০২৮৪০৪, মেইল: editor@ais.gov.bd
চৈত্র মাসের কৃষি
(১৫ মার্চ-১৩ এপ্রিল)
কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম
চৈত্র বঙ্গাব্দের শেষ মাস। এ মাসে বসন্ত ঋতু নতুন করে সাজিয়ে দেয় প্রকৃতিকে। চৈতালী হাওয়ায় জানান দেয় গ্রীষ্মের আগমন। রবি ফসল ও গ্রীষ্মকালীন ফসলের প্রয়োজনীয় কাজ করতে বেড়ে যায় কৃষকের ব্যস্ততা। সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন আসুন আমরা জেনে নেই এ মাসের কৃষিতে আমাদের করণীয় কাজগুলো।
বোরো ধান
যারা শীতের কারণে দেরিতে চারা রোপণ করেছেন তাদের ধানের চারার বয়স ৫০-৫৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের শেষ কিস্তি উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। ক্ষেতে গুটি ইউরিয়া দিয়ে থাকলে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ করতে হবে না। সার দেয়ার আগে জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে। এলাকার জমিতে যদি সালফার ও দস্তা সারের অভাব থাকে এবং জমি তৈরির সময় এ সারগুলো না দেয়া হয়ে থাকে তবে ফসলে পুষ্টির অভাবজনিত লক্ষণ পরীক্ষা করে শতাংশপ্রতি ২৫০ গ্রাম জিপসাম ও ৪০ গ্রাম দস্তা সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। ধানের কাইচ থোড় আসা থেকে শুরু করে ধানের দুধ আসা পর্যন্ত ক্ষেতে ৩/৪ ইঞ্চি পানি ধরে রাখতে হবে। পোকা দমনের জন্য নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শন করতে হবে এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আলোর ফাঁদ পেতে, পোকা ধরার জাল ব্যবহার করে, ক্ষতিকর পোকার ডিমের গাদা নষ্ট করে, উপকারী পোকা সংরক্ষণ করে, ক্ষেতে ডাল-পালা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ধানক্ষেত বালাই মুক্ত করতে পারেন। এসব পন্থায় রোগ ও পোকার আক্রমণ প্রতিহত করা না গেলে শেষ উপায় হিসেবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
ভুট্টা (রবি)
জমিতে শতকরা ৭০-৮০ ভাগ গাছের মোচা খড়ের রঙ ধারণ করলে এবং পাতার রং কিছুটা হলদে হলে মোচা সংগ্রহ করতে হবে। বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে শুকনো আবহাওয়ায় মোচা সংগ্রহ করতে হবে। মোচা থেকে দানা সংগ্রহ করতে প্রয়োজনে ভুট্টা মারাই যন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। সংগ্রহ করা মোচা ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।
ভুট্টা (খরিফ)
গ্রীষ্মকালীন ভুট্টা চাষ করতে চাইলে এ মাসে বীজ বপন করতে হবে। খরিফ মৌসুমের জন্য ভুট্টার উন্নত জাতগুলো হলো বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৪, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৫, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৭ প্রভৃতি। শতাংশপ্রতি বীজ লাগবে ১০০-১২০ গ্রাম। প্রতি শতাংশ জমিতে ইউরিয়া ৩৬৫ গ্রাম, টিএসপি ২২২ গ্রাম, এমওপি ১২০ গ্রাম, জিপসাম ১৬০ গ্রাম এবং দস্তা সার ১৬ গ্রাম সার দিতে হবে ।
অন্যান্য মাঠ ফসল
রবি ফসলের মধ্যে চিনা, কাউন, আলু, মিষ্টি আলু, চিনাবাদাম, পেয়াজ, রসুন যদি এখনো মাঠে থাকে তবে দেরি না করে সাবধানে তুলে ফেলতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে এ সময়ে বা সামান্য পরে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য পচনশীল ফসল তাড়াতাড়ি কেটে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে।
শাকসবজি
গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি চাষ করতে চাইলে এ মাসেই বীজ বপন বা চারা রোপণ শুরু করা প্রয়োজন। সবজি চাষে পর্যাপ্ত জৈবসার ব্যবহার করতে হবে। এ সময় গ্রীষ্মকালীন টমেটো, ঢেঁড়স, বেগুন, করলা, ঝিঙা, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা, শসা, ওলকচু, পটোল, কাঁকরোল, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, লালশাক, পুঁইশাক এসব সবজি চাষ করতে পারেন ।
গাছপালা
এ সময় বৃষ্টির অভাবে মাটিতে রসের পরিমাণ কমে আসে। এ অবস্থায় গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি দেয়ার ব্যবস্থা করা যায়। আম গাছে হপার পোকার আক্রমণ হলে অনুমোদিত কীটনাশক যেমন- সিমবুস/ফেনম/ডেসিস/ফাইটার ২.৫ ইসি প্রভৃতি প্রয়োগ করে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে। আম গাছে মুকুল আসার ১০ দিনের মধ্যে কিন্তু ফুল ফোটার পূর্বেই একবার এবং এর একমাস পর আর একবার প্রতি লিটার পানির সাথে ১.০ মিলি সিমবুস/ফেনম/ডেসিস/ ফাইটার ২.৫ ইসি মিশিয়ে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপাল ভালোভাবে ভিজিয়ে ¯েপ্র করা প্রয়োজন। এ সময় আমে পাউডারি মিলডিউ ও এ্যান্থ্রাকনোজ রোগ দেখা দিতে পারে। টিল্ট, রিডোমিল গোল্ড, কানজা বা ডায়থেন এম ৪৫ অনুমোদিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। কলা বাগানের পার্শ্ব চারা, মরা পাতা কেটে দিতে হবে। পেঁপের চারা রোপণ করতে পারেন এ মাসে। নার্সারিতে চারা উৎপাদনের জন্য বনজ গাছের বীজ বপন করতে পারেন। যাদের বাঁশ ঝাড় আছে তারা বাঁশ ঝাড়ের গোড়ায় মাটি ও জৈবসার প্রয়োগ করা ভালো।
লেখক : সম্পাদক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা, টেলিফোন : ০২৫৫০২৮৪০৪, মেইল:editor@ais.gov.bd
চৈত্র মাসের কৃষি
(১৫ মার্চ-১৩ এপ্রিল)
ফেরদৌসী ইয়াসমিন
আমরা ১৪৩০ বঙ্গাব্দের শেষ মাসে চলে এসেছি। চৈত্র মাসে বসন্ত ঋতু নতুন করে সাজিয়ে দেয় প্রকৃতিকে। চৈতালী হাওয়ায় জানান দেয় গ্রীষ্মের আগমন। এ মাসে রবি ফসল ও গ্রীষ্মকালীন ফসলের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম একসাথে করতে হয় বলে কৃষকের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন আসুন আমরা জেনে নেই এ মাসের কৃষিতে আমাদের করণীয় কাজগুলো।
বোরো ধান যারা শীতের কারণে দেরিতে চারা রোপণ করেছেন তাদের ধানের চারার বয়স ৫০-৫৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের শেষ কিস্তি উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। সার দেয়ার আগে জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে। এলাকার জমিতে যদি সালফার ও দস্তা সারের অভাব থাকে এবং জমি তৈরির সময় এ সারগুলো না দেয়া হয়ে থাকে তবে ফসলে পুষ্টির অভাবজনিত লক্ষণ পরীক্ষা করে শতাংশপ্রতি ২৫০ গ্রাম জিপসাম ও ৪০ গ্রাম দস্তা সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। ধানের কাইচ থোড় আসা থেকে শুরু করে ধানের দুধ আসা পর্যন্ত ক্ষেতে ৩-৪ ইঞ্চি পানি ধরে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে ধান উৎপাদনে সেচের পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি (অডউ) ব্যবহার করা যেতে পারে। পোকা দমনের জন্য নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শন করতে হবে এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আলোর ফাঁদ পেতে, পোকা ধরার জাল ব্যবহার করে, ক্ষতিকর পোকার ডিমের গাদা নষ্ট করে, উপকারী পোকা সংরক্ষণ করে, ক্ষেতে ডাল-পালা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ধানক্ষেত বালাইমুক্ত করতে পারেন।
এসব পন্থায় রোগ ও পোকার আক্রমণ প্রতিহত করা না গেলে শেষ উপায় হিসেবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া নিচু এলাকায় আউশ ও বোনা আমন চাষের এটি উপযুক্ত সময়। ভুট্টা (রবি) জমিতে শতকরা ৭০-৮০ ভাগ গাছের মোচা খড়ের রঙ ধারণ করলে ও বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে শুকনো আবহাওয়ায় মোচা সংগ্রহ করে ফেলতে হবে।
ভুট্টা (খরিফ) গ্রীষ্মকালীন ভুট্টা চাষ করতে চাইলে এ মাসে বীজ বপন করতে হবে। খরিফ মৌসুমের জন্য ভুট্টার উন্নত জাতগুলো হলো বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৪, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৫, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৭ প্রভৃতি। শতাংশপ্রতি বীজ লাগবে ১০০-১২০ গ্রাম। উর্বর বেলে দো-আঁশ মাটি দেশী জাতের পাট চাষের জন্য উপযুক্ত। দেশী পাটের অত্যন্ত জনপ্রিয় জাত হচ্ছে ডি-১৫৪। এ জাতটি ছাড়াও সিভিএল-১, সিভিই-৩ এবং সিসি-৪৫ জাতের চাষ করা যেতে পারে।
অন্যান্য মাঠ ফসল রবি ফসলের মধ্যে চিনা, কাউন, আলু, মিষ্টিআলু, চীনাবাদাম, পেঁয়াজ, রসুন যদি এখনো মাঠে থাকে তবে দেরি না করে সাবধানে তুলে ফেলতে হবে।
খেয়াল রাখতে হবে এ সময়ে বা সামান্য পরে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য পচনশীল ফসল তাড়াতাড়ি কেটে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে।
শাকসবজি গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি চাষ করতে চাইলে এ মাসেই বীজ বপন বা চারা রোপণ শুরু করা প্রয়োজন। সবজি চাষে পর্যাপ্ত জৈবসার ব্যবহার করতে হবে। এ সময় গ্রীষ্মকালীন টমেটো, ঢেঁড়স, বেগুন, করলা, ঝিঙা, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা, শসা, ওলকচু, পটোল, কাঁকরোল, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, লালশাক, পুঁইশাক এসব সবজি চাষ করতে পারেন। ধৈঞ্চা, শন, বরবটি, মাষকলাই, অড়হর, ছোলা এসবের গাছ দিয়ে সবুজ সার তৈরি করা যেতে পারে। গাছপালা এ সময় বৃষ্টির অভাবে মাটিতে রসের পরিমাণ কমে আসে। আম গাছে হপার পোকার আক্রমণ হলে অনুমোদিত কীটনাশক যেমন- সিমবুস/ফেনম/ ডেসিস/ফাইটার ২.৫ ইসি প্রভৃতি প্রয়োগ করে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে। আম গাছে মুকুল আসার ১০ দিনের মধ্যে কিন্তু ফুল ফোটার আগেই একবার এবং এর একমাস পর আর একবার প্রতি লিটার পানির সাথে ১.০ মিলি সিমবুস/ফেনম/ডেসিস /ফাইটার ২.৫ ইসি মিশিয়ে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপাল ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করা প্রয়োজন। এ সময় আমে পাউডারি মিলডিউ ও এ্যান্থ্রাকনোজ রোগ দেখা দিতে পারে। টিল্ট, রিডোমিল গোল্ড, কানজা বা ডায়থেন এম ৪৫ অনুমোদিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। কলা বাগানের পার্শ্ব চারা, মরা পাতা কেটে দিতে হবে। পেঁপের চারা রোপণ করতে পারেন এ মাসে। এসময় থেকে ফলগাছে নিয়মিত কীটনাশক, ছত্রাকনাশক ও মাকড়নাশক স্প্রে করতে হবে। বাঁশঝাড়ে এ সময় নতুন চারা গজাবে। তাই বাঁশঝাড়ের গোড়ায় মাটি এবং গোবর বা আবর্জনা পচা সার দেওয়া প্রয়োজন।
লেখক: উপপরিচালক (গণযোগাযোগ), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা, টেলিফোন: ০২৫৫০২৮২২৭, মেইল: ddmc@ais.gov.bd