Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ডিমের খোসার ব্যবহার

ডিমের খোসার ব্যবহার
মোঃ আকতার হোসেন
ডিমকে বলা হয় সুপার ফুড। আমাদের দেশে ডিমের বাৎসরিক প্রাপ্যতা মাথাপিছু ১৩৬ টি। বর্তমানে দেশে ডিমের বাৎসরিক চাহিদা এক হাজার ৮০৬ কোটি পিস আর ডিমের বার্ষিক উৎপাদন দুই হাজার ৩৩৭ কোটি পিস। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতিটি মানুষের বছরে ন্যূনতম ১০৪ টি ডিম খাওয়া প্রয়োজন। 
ডিমের পুষ্টির পাশাপাশি ডিমের খোসার পাউডার প্রাকৃতিক ক্যালসিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এই ডিমের খোসাতে ৬.১৭ গ্রামের মধ্যে ক্যালসিয়াম থাকে ২.২৮ গ্রাম এবং ফসফরাস ০.০০৬ গ্রাম। ডিমের খোসাতে ২% পানি এবং ৯৮% শুষ্ক পদার্থ থাকে। এই ৯৮ ভাগ ড্রাই মেটারের মধ্যে ৫% থাকে ক্রুড প্রোটিন এবং ৯৩% অ্যাশ। সাধারণভাবে আমরা বলতে পারি ডিমের খোসাতে প্রায় ৪০% ক্যালসিয়াম থাকে আর এটা থাকে মূলত ক্যালসিয়াম কার্বোনেট হিসেবে। একজন মানুষের জন্য দৈনিক ক্যালসিয়াম প্রয়োজন হয় প্রায় ১ গ্রাম। আর ১টি ডিমের খোসা হতে পাওয়া যায় ২ গ্রামের এরও বেশি ক্যালসিয়াম। 
ব্রয়লার ব্রিডার হতে প্রাপ্ত ভাল মানের ডিমের খোসায় ২-২.২ গ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট ক্রিস্টাল আকারে। আদর্শ ডিমের খোসাতে প্রায় ০.৩% ফসফরাস, ০.৩% ম্যাগনেসিয়াম এবং সামান্য পরিমাণে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন ও কপার থাকে। ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের জন্যই ডিমের খোসা শক্ত অনুভূত হয়ে থাকে। বিশুদ্ধ ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের তুলনায় ডিমের খোসা হতে প্রাপ্ত ক্যালসিয়াম দেহে অধিক হারে শোষিত হয়। পশুপাখির খাদ্যে ডিমের খোসা ব্যবহার করা যায়(Oliveira,D.A.et al.(2013) A literature review on adding value to solid residues: egg shells. Journal of Cleaner Production, Amsterdam, v.46, p.42-47, 2013.)| 
ডিমের খোসার গুঁড়া ডিম সিদ্ধ করার পর ছাড়ানো খোসা হতে তৈরি করা হয়। এটি গাছে ক্যালসিয়াম সরবরাহের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। ডিমের খোসার গুঁড়া দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের সাথে মাটিতে পিএইচ বাড়ায়। ছাদবাগান থেকে শামুক তাড়াতে ডিমের খোসা কার্যকর। অর্ধেক করে ভাঙ্গা ডিমের খোসা গাছের টবে রেখে দিলে তাতে করে শামুক আহত হয়ে টব ত্যাগ করে। টবের তলায় ডিমের খোসা দেয়া হলে পানি নিষ্কাশনের কাজ সহজ হয়। ৫০% মাটি, ২৫% ভার্মি কম্পোস্ট ও ২৫% ডিমের খোসা দিয়ে টবের মাটি তৈরি করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। টবের গাছের গোড়া মালচিং করতে ডিমের খোসা কার্যকর উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ৫ মিলিলিটার ভিনেগার, ৫ গ্রাম ডিমের খোসার পাউডার এর সাথে মিশিয়ে আধা ঘণ্টা রেখে দিয়ে সেই পানি দুই লিটার পানির সাথে মিশিয়ে গাছে প্রয়োগ করলে গাছ পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাবে। 
মুরগির ডিমের খোসার রাসায়নিক গঠনের সাথে অর্ডিনারি পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের মিল রয়েছে। ভারতের গুজরাট প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের সিভিল প্রকৌশল বিভাগের গবেষণায় নির্মাণ শিল্পে ব্যবহৃত সিমেন্টের কাঁচামাল হিসেবে ১০% পর্যন্ত ডিমের খোসার পাউডার ব্যবহারের সুপারিশ করেছে। সয়েল স্টেবিলাইজেশনের কাজেও ডিমের খোসার পাউডার ব্যবহার করা যায়। দেয়ালের টাইলস তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ভারত ও ব্রাজিলে ডিমের খোসার পাউডার ব্যবহার করার কাজ চলছে। সয়েল স্টেবিলাইজার হিসেবে ৩% পর্যন্ত ডিমের খোসার পাউডার টাইলসের কাঁচামালের সাথে ব্যবহার করা যায়। টুথ পেস্টেও এটা ব্যবহার করা যায়। (Gajera, et.al.2015. A review of utilization of Egg Shell Waste In Concrete and Soil Stabilization. INDIAN JOURNAL OF APPLIED RESEARCH,3(1):67-69, ISSN - 2249-555X)|
মানুষের খাবার হিসেবে স্যুপ, তরল পানীয়, বিস্কুটে ডিমের খোসার পাউডার ব্যবহার করা হয়। মিসরের কৃষি গবেষণা সেন্টারের সুপারিশ অনুসারে বিস্কুট প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত কাঁচামাল ময়দার সাথে ৬% পর্যন্ত ডিমের খোসার পাউডার ব্যবহার করা হলে এর স্বাদ, গন্ধের কোন তারতম্য হয় না অধিকন্তু ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায়। চকোলেট কেকের সাথেও এটা ব্যবহার করা যায়। হাইড্রক্সি এপাটাইট এর মতো গুরত্বপূর্ণ উপাদান ডিমের খোসা হতে সিনথেসিসের মতো গবেষণা ব্রাজিলে চলমান রয়েছে। হাইড্রক্সিএপাটাইট হলো ক্যালসিয়াম এপাটাইটের একটি  প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন খনিজ ফর্ম। ক্যালসিয়াম ফসফেট মিনারেল বা হাইড্রক্সিএপাটাইট বা হ্যাপ এর সাথে মানুষের হাঁড় ও হার্ড টিস্যুর উপাদানের মিল রয়েছে।
ডিমের খোসার ভিতরের দিকের সাদা মেমব্রেন পৃথক করে ডিমের খোসা ফুটন্ত পানিতে ২০ মিনিট ফুটিয়ে ৩ দিন রোদে পুরোপুরি শুকিয়ে পাউডার করে বিউটি পার্লারে ফেইস প্যাক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। একটি ডিমের সাদা অংশ তার সাথে ৩ গ্রাম ডিমের খোসার পাউডার ও এক চা চামচ মধু বা গোলাপজল এই তিনটি উপাদান মিশিয়ে ফেইস প্যাক তৈরি করা হয়। বাণিজ্যিকভাবে ডিমের খোসার পাউডার প্রস্তুত করার জন্য ১০ লিটার পানিতে ৫০ মিলিলিটার ভিনেগার মিশিয়ে সেই পানিতে ১০ মিনিট ডিমের খোসা চুবিয়ে রাখতে হবে। তারপর ২০ মিনিটের জন্য ফুটন্ত পানিতে রাখতে হবে। তারপর সেখান থেকে ডিমের খোসা নিয়ে রোদে পূর্ণরূপে শুকিয়ে তারপর পাউডার করতে হবে। 
উল্লেখ্য, পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের তথ্য অনুসারে ২০২৩ সালে সাধারণভাবে প্রতিদিনের ডিমের চাহিদা ৪ কোটি আর উৎপাদন হয় ৫ কোটি অর্থাৎ দেশে ডিমের কোনো সংকট নেই। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০ বাস্তবায়নে জনপ্রতি ডিমের প্রাপ্যতা বছরে ১৬৫ টি নির্ধারণ করা হয়েছে আর আমাদের রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে ২০৮টি ডিম/বছর/জন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। 
সুতরাং ডিমের উৎপাদনের পাশাপাশি ডিমের খোসার পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে (যেহেতু ডিমের খোসার ওজন ডিমের ওজনের ১১ শতাংশ)। তাছাড়া ডিমের খোসার বৈচিত্র্যময় উপযোগিতা ও বহুমুখী ব্যবহার পরিবেশ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই ডিমের খোসাকে আবর্জনার স্তূপে না ফেলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগানো যেতে পারে।

লেখক : প্রশিক্ষক (প্রাণিসম্পদ), ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭৬৩৬৩২৪৬৬, ই-মেইল :3800sb@gmail.com