তিলের ফলন বৃদ্ধিতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা
ড. মো. হোসেন আলী১ পার্থ বিশ্বাস২
বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনে তেল ফসল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিল বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম ভোজ্যতেল ফসল। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই তিলের চাষ হয়। আমাদের দেশে সাধারণত কালো ও খয়েরি রঙের বীজের তিলের চাষ বেশি হয়। তিলের বীজে ৪২-৪৫% তেল এবং ২০% আমিষ থাকে। বাংলাদেশে প্রায় ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে তিল চাষ হয় এবং মোট উৎপাদন প্রায় ২৯ হাজার মে. টন। কৃষি পরিসংখ্যান বর্ষগ্রন্থ (২০০৫-২০১৭) অনুযায়ী তিলের জাতীয় গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৮৪০ কেজি যা, ২০০৫ সালের পূর্বে ছিল ৫০০-৬২০ কেজি। বাংলাদেশে খরিফ এবং রবি উভয় মৌসুমেই তিলের চাষ করা হয়। তবে বর্তমানে দুই-তৃতীয়াংশ তিলের আবাদ খরিফ মৌসুমে হয়। খরিফ মৌসুমে ভালো ফলনের অন্যতম অন্তরায় অতি বৃষ্টি ও আকস্মিক ঝড় এবং জমিতে সঠিক নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব। সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তিলের ফলন বাড়ানো সম্ভব।
স্থানীয় চাষাবাদ পদ্ধতিতে সমস্যা : সাধারণত কৃষকরা সমতল জমিতে ছিটিয়ে তিল ফসল বপন করেন। অধিকাংশ বপনকৃত জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা তথা বেড নালা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না। খরিফ মৌসুমে ফুল আসা পর্যায়ে এবং ফল ধারণপর্যায়ে ঝড় ও অতি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ঝড় হলে গাছ হেলে পড়ে এবং অতি বৃষ্টির ফলে অধিক সময় জলাবদ্ধতা থাকলে পরবর্তীতে রৌদ্রউজ্জ্বল আবহাওয়ায় তিল গাছ ঢলে পড়ে। ফলে তিলের স্বাভাবিক ফলন ব্যাহত হয় এবং বহুলাংশে হ্রাস পায়।
প্রযুক্তির বর্ণনা : ১.৫ মিটার চওড়া বেড ও পর পর দু’টি বেডের মধ্যবর্তী ৩০ সেন্টিমিটার নালা করে নির্দেশনা অনুযায়ী সঠিক মাত্রার সার (প্রতি হেক্টরে ইউরিয়া-১৪০ কেজি, টিএসপি-১৪৫ কেজি, এমওপি-৬৫ কেজি, জিপসাম-১১২ কেজি, জিংক সালফেট-৫ কেজি এবং বোরিক এসিড-৯ কেজি) প্রয়োগসহ সারিতে বীজ বপন করতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী অনান্য পরিচর্যা করতে হবে যেমন- বপনের ১৫-২০ দিনের মধ্যে পাতলাকরণ ও আগাছা মুক্ত করা, নির্দিষ্ট মাত্রায় ১০ দিন ব্যবধানে দুবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করা। প্রয়োজন হলে দুটি বেডের নালা সংস্কার করে দিতে হবে এবং জমির নালাগুলোর মুখ থেকে পানি নির্গমনের (নিচের দিকে) ব্যবস্থা রাখতে হবে।
টেবিল: বিভিন্ন ব্যবস্থাপনায় ফলন, প্রকৃত আয়, বিসিআর এবং ফলন বৃদ্ধি।
বি. দ্র.: তিন বছরের (২০২০, ২০২১ ও ২০২২) গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ।
ব্যবহৃত জাত : বিনাতিল-২, বিনাতিল-৩, বিনাতিল-৪, বারিতিল-৩ এবং বারিতিল-৪
প্রযুক্তির ব্যবহারিক প্রয়োগ : ময়মনসিংহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া এবং ঈশ্বরদী অঞ্চল।
প্রযুক্তি থেকে লাভ : গতানুগতিক সমতল জমিতে তিল চাষাবাদের পরিবর্তে উন্নত জাত এবং ১.৫ মিটার চওড়া বেড ও দুই বেডের মাঝে ৩০ সেন্টিমিটার নালা পদ্ধতিতে তিলের ফলন গড়ে প্রায় ৪৫-৬৭ শতাংশ বৃদ্ধি এবং হেক্টরপ্রতি প্রকৃত আয় প্রায় ২.৫ গুণ বৃদ্ধি পায় (টেবিল)।
লেখক: ১মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা২, কৃষি প্রকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), ময়মনসিংহ; ফোন-০১৭২৭৬৫৬২১৬, ই-মেইল: parthi.biswas@gmail.com