Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বাচ্চা-ফোটানোর-উপযোগী-ডিম-নির্বাচন-ও-ডিমের-যত্ন

বাচ্চা ফোটানোর উপযোগী ডিম 
নির্বাচন ও ডিমের যত্ন
ডা: মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ
মোরগের সাথে মুরগির মিলনের পর যেসব ডিম হয়, কেবল ঐ ডিমগুলোতে ভ্রƒণ থাকে। এরূপ ডিমকে বলা হয় নিষিক্ত ডিম। এ ধরনের ডিমের সঠিক গঠন ও আকারের উপর নির্ভর করে ডিমের স্ফুটন ক্ষমতা। এজন্য ফোটানোর জন্য ডিম বাছাই করা একান্ত অপরিহার্য। 
ডিম বাছাই করার সময় নি¤েœর বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ রাখতে হবে -
ডিমের আকার : ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদনের জন্য মাঝারি আকারের ডিম ভালো। বেশি বড় বা বেশি ছোট আকারের ডিম বাদ দেয়া উচিত। অস্বাভাবিক আকৃতির ও পাতলা খোসার ডিম নেয়া যাবে না। কেবল মসৃণ, মোটা ও শক্ত খোসা বিশিষ্ট ডিম বাছাই করতে হবে। দুই কুসুমযুক্ত বা ডিমের ভেতর ডিম হলে সেসব ডিম বাদ দিতে হবে। কারণ এসব ডিম থেকে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
ডিমের আকৃতি : ফোটানোর জন্য ডিমের আকৃতি স্বাভাবিক হওয়া উচিত। অর্থাৎ ডিম্বাকৃতির ডিম হতে হবে। অস্বাভাবিক ডিম (যেমন- আঁকা-বাঁকা ডিম, বেশি লম্বা, সরু প্রান্ত ও চওড়া প্রান্ত সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায় না এমন ডিম) ফোটানোর জন্য নির্বাচন করা উচিত নয়। 
ডিমের খোসার রঙ : মুরগি জাতভেদে বিভিন্ন রঙের ডিম দেয়। ডিমের খোসার রঙ সাদা, বাদামি, কালো বা কালচে হতে পারে। যে জাত যে রঙের ডিম দেয় সে অনুযায়ী ডিম বাছাই করতে হবে। যে জাত বা উপজাতের মুরগি সাধারণত সাদা ডিম পাড়ে, ঐ জাতের মুরগি মাঝেমধ্যে বাদামি রঙের ডিমও পাড়তে পারে। ফোটানোর জন্য কেবল ঐ ডিমগুলো থেকে সাদা খোসাবিশিষ্ট ডিমগুলো বাছাই করা উচিত। যে জাত বা উপজাতের মুরগি বাদামি খোসার ডিম পাড়ে, ঐ জাতের মুরগি মাঝেমধ্যে সাদা ডিমও পাড়তে পারে। ফোটানোর জন্য কেবল বাদামি খোসাবিশিষ্ট ডিমগুলো বাছাই করে ইনকিউবেটরে বসানো উচিত।
ডিমের খোসার মসৃণতা : ডিমের খোসার গঠনের সাথে স্ফুটন ক্ষমতার সম্পর্ক রয়েছে। ডিম পাড়া মুরগির খাদ্যে যদি ক্যালসিয়াম অথবা ভিটামিন ডি-এর অভাব হয় তবে ডিমের খোসা পাতলা ও নরম হয়। এ পাতলা খোসার ডিম ফোটার হার অনেক কম। তাই পাতলা খোসাসম্পন্ন ডিম ফোটানোর জন্য বাছাই করা উচিত নয়। শক্ত খোসা ও মসৃণ এরূপ ডিম ফোটানোর জন্য নির্বাচন করা উচিত। 
ফাটা বা ভাঙা ডিম : ফাটা বা ভাঙা ডিম ফোটানোর জন্য মোটেই বিবেচনা করা যাবে না। কারণ ফাটা ডিম ফোটে না। ডিম ফাটা কি না পরীক্ষার জন্য দুটি ডিমকে একত্রে নিয়ে পরস্পরকে আস্তে আস্তে আঘাত করলে ডিম ফাটা কি না তা শব্দ হতে বোঝা যায়। আলোর সাহায্যে পরীক্ষা করলে ডিম ফাটা কি না তা শনাক্ত করা যায়।
ডিমের ভেতরের বৈশিষ্ট্য : ডিমের ভেতর স্বচ্ছ হলে এবং কুসুম ডিমের মাঝখানে থাকলে সেই ডিম ফোটানোর জন্য উত্তম। আলোর সাহায্যে ডিমের ভেতরের অংশ সহজে পরীক্ষা করা যায়। যদি নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ ধরা পড়ে তবে ঐ ডিম ফোটানোর জন্য নির্বাচন করা উচিত নয়-
া পচা ডিম, যা ডিমের মধ্যে বুদ বুদ দেখে বোঝা যাবে।
া বায়ু কোষবিহীন
া অস্থায়ী বায়ুকোষ বা ডিমের মোটা অংশ ব্যতীত মধ্যখানে অবস্থিত বায়ুকোষ বা বড় বায়ুকোষ। বায়ুকোষ বড় থাকলে বুঝতে হবে যে ডিমের ভেতরের আর্দ্রতা কমে গেছে। 
া মাংসের দাগ বা রক্তের দাগ।
ময়লাযুক্ত ডিম : ডিম বাছাই করার সময় ডিম পরিষ্কার কি না তা লক্ষ রাখতে হবে। অতিরিক্ত ময়লাযুক্ত ডিম ফোটানোর জন্য নির্বাচন করা যাবে না। অল্প ময়লাযুক্ত ডিম পরিষ্কার কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে ফোটানোর জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে। তবে ডিম পানিতে ধোয়া যাবে না। 
ডিমের ওজন : উন্নত জাতের মুরগির ডিমের ওজন ৫০-৬০ গ্রাম হতে হবে।
ডিমের বয়স : ফোটানোর উপযোগী ডিমের বয়স গ্রীষ্মকালে ৩-৫ দিন এবং শীতকালে ৭-১০ দিনের বেশি হওয়া উচিত নয়। 
বাচ্চা ফোটানোর জন্য নির্বাচিত ডিমের যত্ন
ফোটানোর জন্য নির্বাচিত ডিমকে ইনকিউবেটরে বসানোর পূর্ব পর্যন্ত যত্ন করা একান্ত প্রয়োজন। ডিম ফোটার হার ডিমের পরিচর্যার উপর নির্ভরশীল। ডিম বসানোর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত নি¤েœাক্ত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করতে হবে-
তাপমাত্রা : ফোটানোর জন্য বাছাইকৃত ডিম কোনো সময়ই অতিরিক্ত ঠা-া কিংবা অতিরিক্ত গরম পরিবেশে রাখা ঠিক নয়। ডিম সর্বদা ঠা-া এবং আর্দ্রতাসম্পন্ন এবং ছায়াযুক্ত স্থানে সংরক্ষণ করা উচিত। ফোটানোর জন্য বাছাইকৃত ডিম সংরক্ষণের আদর্শ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। ডিম ০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করলে ডিমের ভেতর ভ্রƒণ মারা যাবে। আবার ২৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা ততোধিক তাপমাত্রায় ডিম সংরক্ষণ করলে ভ্রƒণের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটবে। সঠিকভাবে ডিম সংরক্ষণের জন্য তাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ বা হিমাগার ব্যবহার করা যেতে পারে।
আর্দ্রতা : সাধারণত ৬৫% থেকে ৭০% আপেক্ষিক আর্দ্রতায় ডিম সংরক্ষণ করলে ফোটার হার সবচেয়ে বেশি হয়। তাই ৬৫% থেকে ৭০% আর্দ্রতায় ফোটানোর জন্য ডিম সংরক্ষণ করা উচিত। ঘরের মধ্যে পানি ছিটিয়ে আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কক্ষে আর্দ্রতা কম থাকলে অধিক বাষ্পায়ন হয় এবং ডিমের বায়ুকোষের আকার বড়  হয়। ফলে ডিম ফোটার হার কমে যায়।
ডিম নাড়াচাড়া করা : ফোটানোর জন্য বাছাইকৃত ডিমের সরুপ্রান্ত নিচে এবং মোটা প্রান্ত উপরে রেখে ট্রেতে সাজিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। মোটা প্রান্তের দিকে বায়ুকোষ থাকে। যদি মোটা প্রান্ত নিচের দিকে রাখা হয় তবে ঘুরন্ত বায়ুকোষের উপস্থিতি বৃদ্ধি পায় এবং এতে ডিম ফোটার হার কমে যায়। অনিয়মিতভাবে ডিম নাড়াচাড়া করলে ডিম খোসা ফেটে বা ভেঙে যেতে পারে। 
ডিমের বয়স বা সংরক্ষণ সময় : ডিম সংরক্ষণের সময় তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে। মুরগির ডিম ১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ১৫.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ৭ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। সদ্যপাড়া ডিম ফোটার হার ১ থেকে ৪ দিন বয়সের ডিমের ফোটার হার অপেক্ষা কম হয়। 
ডিম পরিষ্কার করা : মাটি মাখা বা ময়লাযুক্ত ডিম অপেক্ষা পরিষ্কার ডিম অনেক বেশি ফোটে। ফোটানোর জন্য বাছাইকৃত ডিম সাথে সাথে পরিষ্কার কাপড় অথবা সিরিস কাগজ দিয়ে পরিষ্কার করে রাখা উচিত। ডিম ময়লাযুক্ত হলে ঠিকমতো অক্সিজেন ডিমের ভেতর প্রবেশ করতে পারে না এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ডিমের ভেতর থেকে বের হতে পারে না। ফলে ডিমের ভেতর ভ্রƒণের মৃত্যু ঘটে। সর্বদা লক্ষ রাখা উচিত যে, ডিম কখনো যেন পানি দিয়ে ধোয়া না হয়। কারণ পানির মাধ্যমে ডিমের খোসার সূক্ষ¥ ছিদ্রগুলো বড় হয়ে যায়। ফলে বিভিন্ন জীবাণু ডিমের মধ্যে প্রবেশ করে এবং এতে ডিম ফোটার হার কমে যেতে পারে। 
 
লেখক : ভেটেরিনারি সার্জন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, কৃষি খামার সড়ক, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫, মোবাইল : ০১৮১১-৯৮৬৬০৫; ইমেইল-ংsmmohibullah@gmail.com