Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পাট-আঁশের-মান-উন্নয়নে-পলিথিন-ব্যবহার-প্রযুক্তি

পাট আঁশের মান উন্নয়নে পলিথিন ব্যবহার প্রযুক্তি
ড. মোঃ আবুল ফজল মোল্লা
পলিথিন কাগজ ব্যবহারে পাটের পচন প্রযুক্তি তুলনামূলক সময় কম লাগে। কাটিংস মুক্ত উন্নতমানের পাট আঁশ পাওয়া যায়। জাকের পানি দ্রুত বেশি পচবে না বা কলুষিত করবে না। পাট মৌসুমে (মে-সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের সকল অহ্চলের জন্য প্রযোজ্য। পাট গাছের বয়স ১০০-১২০ দিনের মধ্যে হলে কর্তন হবে। পাট কর্তনের পর ৩-৪ দিন জমির উপর স্তূপ করে রেখে পাতা ঝরিয়ে নিতে হবে। পাট গাছগুলোর ৮-১০ কেজি ওজনের আঁটি বাঁধতে হবে। পাটের আঁটিগুলোকে প্রথম সারিতে লম্বালম্বি, দ্বিতীয় সারিতে আড়াআড়ি এবং তৃতীয় সারিতে আবার লম্বালম্বিভাবে সাজিয়ে বা পাটের বান্ডিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে সামনের দিক থেকে পিছনের দিক হয়ে সজ্জিত করে জাক তৈরি করতে হবে যাতে পানি ও পচন জীবাণু জাকের মধ্যে সহজে চলাফেরা করতে পারে। ফলে পাট পচন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। যথাসম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও অল্প স্রোত যুক্ত খাল, বিল, পুকুর বা ডোবার পানিতে জাক দিয়ে পলিথিন কাগজ দ্বারা ঢেকে দিতে হবে। জাকে ভার হিসাবে মাটি/ইটের খোয়া ভর্তি প্লাস্টিকের বস্তা বা কনক্রিটের স্লাব ব্যবহার করতে হবে। বদ্ধ পুকুর বা ডোবায় পাট পচানোর সময় ইউরিয়া সার ব্যবহার করলে পাটের পচন তুলনামূলক তাড়াতাড়ি হয় এবং আঁশের রং ভাল হয়। প্রতি ১ টন বা ১০০০ কেজি পাট গাছের জন্য প্রায় ১০০-১৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার পাত্রে গুলে পানিতে মিশিয়ে অথবা সরাসরি জাকের আঁটির সারিতে ছিটিয়ে দিলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৪-৫ দিন আগেই পচন সম্পন্ন হয়।
পাট পচনের শেষ সময় নির্ণয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পাটের পচন কম হলে আঁশের গায়ে ছালের শক্ত অংশ লেগে থাকে বা কাটিংস এর পরিমান বৃদ্ধি পায়। আবার বেশি পচলে ধৌত করার সময় আঁশগুলো ছিঁড়ে যায়, ফলে ফলন কমে যায়। কাজেই পাট পচনের সমাপ্তি নির্ণয় খুবই জরুরি। পাট জাক দেওয়ার ৮-৯ দিন পর থেকে জাক পরীক্ষা করা উচিত। ২-৩টি পচা পাট গাছ জাক থেকে বের করে ধুয়ে আঁশ পরীক্ষা করলে পচনের শেষ সময় নির্ণয় করা যায়। পচা পাটের মধ্যাংশ থেকে ১ ইঞ্চি বা ২.৫ সেন্টিমিটার পরিমাণ ছাল কেটে কাচের গ্লাসের ভেতর পানি দিয়ে ঝাঁকানোর পর পানি ফেলে আবার পরিষ্কার পানি দিয়ে ঝাঁকিয়ে যদি দেখা যায় যে আঁশগুলো পরস্পর পৃথক হয়ে গেছে তখন বুঝতে হবে যে পচন শেষ হয়েছে। পচন সম্পন্ন হলে আঁশগুলোকে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে যেন কোন রকম পচা ছাল, ভাঙ্গা পাট খড়ি, অন্য কোন ময়লা, কাঁদা ইত্যাদি আঁশের গায়ে লেগে না থাকে। কারণ এতে পাটের আঁশ নিম্নমানের হওয়ায় আর্থিক মূল্য কমে যায়। 
ভেজা পাট আঁশ মাটিতে না শুকিয়ে বাঁশের আড়ায় বা ঘরের চালে বা গাছের ডালে বা ব্রিজের রেলিংয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হয়। লক্ষ্য রাখতে হবে, আঁশে যেন ময়লা/ধুলাবালু লেগে না থাকে। আঁশ ভালোভাবে শুকিয়ে গুদামজাত বা বাজারজাত করা উচিত অন্যথায় আঁশের মান নষ্ট হয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের মান ক্ষণœœ হয়। উন্নতমানের পাট আঁশ উৎপাদনের মাধ্যমে অধিক অর্থ উপার্জনসহ উন্নত পাট ও পাটজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। 
এই পদ্ধতিতে পাট পচনে তুলনামূলক সময় কম লাগে; কাটিংস মুক্ত উন্নতমানের পাট আঁশ পাওয়া যায়; জাকের পানি দ্রুত বেশি পচবে না বা কলুষিত করবে না। পাট মৌসুমে (মে-সেপ্টেম্বর) পানি সহজলভ্য অবস্থায় বাংলাদেশের পাট উৎপাদনকারী সকল ইকোলজিক্যাল অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য।
প্রযুক্তি ব্যবহারের পূর্বে প্রচলিত পাট পচন পদ্ধতিতে প্রাপ্ত পাটের বিক্রয় মূল্য ২৮০০-৩০০০/- হয়। অনুরূপভাবে প্রযুক্তি ব্যবহারের পরে প্রাপ্ত পাটের বিক্রয় মূল্য ৩২০০-৩৫০০/- হয়।

লেখক : চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার, ফাইবার কোয়ালিটি ইম্প্রূভমেন্ট বিভাগ, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১৮৬১৬০৩৫। ই-মেইল :abulfazalmollah83@gmail.com