Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কৃষি কথা

বঙ্গবন্ধু, কৃষি ও কৃষি তথ্য সার্ভিস

কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী

মুজিব শতবর্ষে মহান বিজয়ের এ মাসে সবাইকে শুভেচ্ছা। এখন থেকে প্রায় ৫ দশক আগে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহŸানে সাড়া দিয়ে এদেশের সূর্যসন্তানরা তাঁদের জীবন দিয়ে অর্জন করেছিল বাংলার স্বাধীনতা। তাঁদের উৎসর্গের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি বিশ্ব মানচিত্রে ‘বাংলাদেশ’ নামে এক নতুন ভূখণ্ড-স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার পূর্ণঅধিকার। তাই অবনত চিত্তে কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের মহান স্বাধীনতা অর্জনে যারা প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তাঁদের সবাইকে।


কৃষি প্রধান এদেশে স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়া যাবে তখনই যখন আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য খেতে পারব খাদ্য নিরাপত্তার বলয়ে। হাজার বছরের অবহেলিত ও শোষিত এ বাংলার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ও সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুধাবন করেছিলেন কৃষির উন্নতিই হচ্ছে কৃষকের অর্থনৈতিক মুক্তি। কৃষকের অর্থনৈতিক মুক্তি মানেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য হবে আরো প্রজ¦লিত। বর্তমান কৃষিতে দেশের যে অনন্য সাফল্য তা বঙ্গবন্ধুরই চিন্তা ও কর্মপরিকল্পনার ধারাবাহিকতা। সফলতার সাথে কৃষি ও কৃষকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমাদের উর্বর জমি, আমাদের অবারিত প্রাকৃতিক সম্পদ, আমাদের পরিশ্রমী মানুষ, আমাদের গবেষণা সম্প্রসারণ কাজে সমন্বয় করে আমরা খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জন করব।’


কৃষি ও কৃষকের অকৃত্রিম বন্ধু রাখাল রাজা বঙ্গবন্ধুর কাছে যুদ্ধপরবর্তী বিধ্বস্ত অর্থনীতির দেশের কৃষি ও অর্থনীতির রূপ পরিবর্তন করা ছিল নতুন চ্যালেঞ্জ। কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে দীপ্ত মনোবল নিয়ে যুগান্তকারী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের কৃষি, বন, সমবায়মন্ত্রী হয়ে পাকিস্তান গণপরিষদে জমিদারদের উদ্ধৃত জমি কৃষকের মাঝে বণ্টনের প্রস্তাব উত্থাপন, দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির দাবিতে ১৯৬৬ সালে দিলেন ৬ দফা। যা পরবর্তীতে রূপ নেয় ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে। ১৯৭০-এর নির্বাচনে জনগণের বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগের নজিরবিহীন বিজয় অর্জিত হয়। পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে কালক্ষেপণ করলে  বাংলার মুক্তিকামী জনতা স্বাধিকারের জন্য ফুঁসে উঠে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে এদেশের সাধারণ মানুষের ওপর অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি হায়নার দল। বাংলার কৃষকও বঙ্গবন্ধুর ডাকে, লাঙল ফেলে হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। অবশেষে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলার মানুষ পেল স্বাধীনতার লাল সূর্য, পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম মাতৃভ‚মির লাল-সবুজের নতুন পতাকা।


বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশের পুনর্গঠনে প্রথমেই গুরুত্ব দেন কৃষি উন্নয়নের কাজে। ডাক দেন সবুজ বিপ্লবের। তিনি বলেছিলেন, ‘কৃষক ভাইদের প্রতি আমার অনুরোধ, কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে সবুজ বিপ্লব সফল করে তুলুন। বাংলাদেশকে খাদ্যে আত্মনির্ভর করে তুলুন।’ বঙ্গবন্ধু গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন, কৃষির উন্নতি ছাড়া এদেশের মানুষের মুক্তি আসতে পারে না। এজন্য কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। ভ‚মিস্বত্ব আইন জারি করে পরিবার প্রতি ভ‚মি মালিকানা ৩৭৫ একর থেকে কমিয়ে সর্বোচ্চ ১০০ বিঘা সিলিং আরোপ করেন। গরিব কৃষকের ২৫ বিঘা পর্যন্ত খাজনা মওকুফ করে দেন। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে কৃষকের মাঝে খাসজমি বিতরণ, কৃষির উৎপাদন খরচ কমাতে ভর্র্তুকি মূল্যে সার, কীটনাশক, উন্নত বীজ, সেচ ও অন্যান্য কৃষি-উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করেন। কৃষকের মাঝে খাসজমি বিতরণ ও সেচ পাম্পের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয় তিনগুণ। 

ধ্বংসপ্রাপ্ত কৃষি-অবকাঠামো পুনর্নিমাণের পাশাপাশি শোষক আমলের ১০ লাখ সার্টিফিকেট মামলা থেকে কৃষকের মুক্তি দেন ও তাদের সব ঋণ মওকুফ করেন। মেধাবী শিক্ষার্থীদের কৃষিশিক্ষায় আকৃষ্ট করার জন্য ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রæয়ারি কৃষিবিদদের চাকরি ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা ঘোষণা করেন। যা ছিল কৃষি উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।


বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য দেশের এক ইঞ্চি পরিমাণ জমি যাতে পড়ে না থাকে এবং জমির ফলন যাতে বৃদ্ধি পায়, তার জন্য দেশের কৃষক সমাজকেই সচেষ্ট হতে হবে।’  উদ্যোগ  নেওয়া হয় তথ্য প্রযুক্তি ও আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষিব্যবস্থার। জাতির পিতার প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করেই  ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করেছে বর্তমান সরকার। কৃষি উন্নয়নে বাস্তবমুখী বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ফলে বাংলার কৃষি এখন বিশ্বের অনন্য দৃষ্টান্ত। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর সদয় নির্দেশ প্রতিপালন ও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখার জন্য কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্ট সবার কাছে জনসচেতনতামূলক উপযোগী কৃষি তথ্য তাৎক্ষণিক পৌঁছে দিচ্ছে কৃষি তথ্য সার্ভিস।


কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তি বিস্তারে নিয়োজিত কৃষি তথ্য সার্ভিস গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি স্বতন্ত্র সংস্থা। বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত  আধুনিক লাগসই কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তি সহজ, সরল ও সাবলীলভাবে অভীষ্ট দলের বোধগম্য আকারে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাহায্যে বিভিন্ন আঙ্গিক ও কৌশলে উপস্থাপন করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্বুদ্ধ করাই হচ্ছে কৃষি তথ্য সার্ভিসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। ১৯৬১ সালে সংস্থাটির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮৫ সালে কৃষি তথ্য সার্ভিস দ্বিধা বিভক্ত হয়ে এক-তৃতীয়াংশ জনবল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চলে যায়। ২০০৮ সালের পূর্বে সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, পাবনা, ময়মনসিংহ ৬টি আঞ্চলিক অফিস এবং ঠাকুরগাঁও ও কক্সবাজার  লিয়াজোঁ অফিস ছিল। বর্তমানে বরিশাল, রংপুর, ঢাকা, কুমিল্লা ও রাঙ্গামাটিতে পাঁচটি আঞ্চলিক অফিসসহ ১১টি আঞ্চলিক অফিস ও ২টি লিয়াজোঁ অফিস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কৃষি তথ্য সার্ভিসের মিডিয়াভিত্তিক কার্যক্রম সুচারুভাবে চলছে। প্রচারই প্রসার এ সত্যকে ধারণ করে কৃষি তথ্য সার্ভিস প্রিন্ট বেতার, টেলিভিশন, প্রোডাকশন ও প্রজেকশন, আইসিটি এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষি তথ্যপ্রযুক্তি বিস্তারে নিরলসভাবে কাজ করছে।


বাংলাদেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন ফার্ম ম্যাগাজিন মাসিক ‘কৃষিকথা’ প্রকাশ এবং নামমাত্র মূল্যে বিতরণ করা হয়। বর্তমান কৃষিকথার গ্রাহক সংখ্যা ৭০ হাজারেরও বেশি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিলিয়ে এর পাঠকের সংখ্যা ১৫ লাখেরও বেশি। মাসিক বিভাগীয় নিউজ বুলেটিন সম্প্রসারণ বার্তা চার রঙে মুদ্রণ ও উপজেলা পর্যায়ে বিতরণ করা হয়। এছাড়াও কৃষি তথ্য সার্ভিস কৃষক ও কৃষিকর্মী এবং আগ্রহীদের চলমান চাহিদামাফিক সময়ে প্রযুক্তিনির্ভর মুদ্রণসামগ্রী প্রকাশ ও বিনামূল্যে বিতরণের মাধ্যমে প্রযুক্তি বিস্তারে বিশেষ ভ‚মিকা পালন করে।


কৃষি তথ্য সার্ভিসের সার্বিক তত্ত্বাবধান এবং সহায়তায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠান সপ্তাহে ৫ দিন সম্প্রচারিত হচ্ছে। এছাড়া ২০১৪ সাল থেকে বিটিভিতে প্রতিদিনের কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘বাংলার কৃষি’ প্রতিদিন সকাল ৮টার বাংলা সংবাদের পর এবং পরবর্তী দিন সকাল ১১.৪০ মিনিটে পুনঃপ্রচার হয়। বাংলাদেশ বেতারের জাতীয় ও আঞ্চলিক কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান নির্মাণে কৃতসা সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে। প্রতিদিন জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের বেতার কেন্দ্র থেকে প্রায় সাড়ে ১৪ ঘণ্টা অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়। ‘আমার রেডিও আমার কথা বলে’ এ স্লোগানকে ধারণ করে বরগুনা জেলার আমতলীতে স্থাপিত কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে কৃষি রেডিও এফএম ৯৮.৮ নামে বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার ১২টি উপজেলায় গ্রামীণ কল্যাণ ও চাহিদাভিত্তিক কৃষিসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান দৈনিক ৮ ঘণ্টা সম্প্রচারিত হয়। পাশাপাশি সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি প্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন ভিডিও, ডকুমেন্টারি, ফিল্ম, ফিলার, নাটক, টকশো নির্মাণ এবং গণমাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়। এ ভিডিওগুলো গ্রামীণ পর্যায়ে মোবাইল সিনেমা ভ্যানের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়ে থাকে।


ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে গ্রামপর্যায়ে কৃষকের কাছে তথ্যপ্রযুক্তি পৌঁছে দিতে কৃষি তথ্য সার্ভিসই প্রথম  দেশব্যাপী ৪৯৯টি কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র (এআইসিসি) স্থাপন করেছে। এসব কেন্দ্রে ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, ইন্টারনেট মডেম, মাল্টিমিডিয়া সামগ্রী ইত্যাদি প্রদান করে ব্যবহার বিষয়ে প্রশিক্ষণ  দেয়া হয়েছে। সরাসরি কৃষি বিশেষজ্ঞদের (কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) সঙ্গে কথা বলে তাৎক্ষণিকভাবে কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিতে ২০১৪ সালে কৃষি ক্ষেত্রে দেশের একমাত্র সরকারি  কৃষি কল সেন্টার-১৬১২৩ যাত্রা শুরু করে। যেকোনো অপারেটরের মোবাইল থেকে মাত্র ২৫ পয়সা/মিনিট হারে কল করে গ্রাহকরা শুক্রবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন ছাড়া সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এ সেবাটি গ্রহণ করছে।


কৃষি বিষয়ক আধুনিক তথ্য চিত্র আর্কাইভের জন্য এআইএসটিউব ডিজিটাল ওয়েবপোর্টাল নির্মাণ করা হয়েছে। এখান থেকে উপকারভোগীরা সহজেই তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিতে পারবে। কৃষির বিভিন্ন প্রযুক্তিগত তথ্য সংবলিত একটি সুবিশাল ওয়েবপোর্টাল িি.িধরং.মড়া.নফ নির্মাণ ও নিয়মিত হালনাগাদ করা হয়ে থাকে। এ ছাড়াও কৃষিকথা ও কৃষি তথ্য সার্ভিস নামে দুটি মোবাইল অ্যাপস নির্মাণ করা হয়েছে।
মুজিববর্ষে কৃষি তথ্য সার্ভিসের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছে ১৭ মার্চ ২০২০ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন চ্যানেলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার্বিক নির্দেশনায় কৃষি তথ্য সার্ভিস কর্তৃক কৃষিভিত্তিক একটি নতুন অনুষ্ঠান ‘মাটির সাথে মানুষের সাথে’ উদ্বোধন করেন মাননীয় কৃষিমন্ত্রী। অনুষ্ঠানটিতে কৃষিভিত্তিক আধুনিক প্রযুক্তি, সফলতা, কৃষিতে সরকারের উন্নয়ন পদক্ষেপ ইত্যাদি সম্প্রচারিত হয়।  


কৃষি তথ্য সার্ভিস কৃষির অগ্রযাত্রার গৌরবোজ্জ্বল অংশীদার। সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে কৃষি তথ্য সার্ভিস অর্জন করেছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক (স্বর্ণপদক), সম্প্রতি ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০২০-এ আইসিটি ব্যবহারে সেরা প্রতিষ্ঠান, জাতীয় ডিজিটাল উদ্ভাবনী পদকসহ নানা স্বীকৃতি। এছাড়াও ডিজিটাল কৃষি তথ্য বিস্তারে উদ্ভাবনের স্বীকৃতিস্বরূপ কৃষি তথ্য সার্ভিস ভারতের ম্যান্থন পুরস্কার ভ‚ষিত হয়। বর্তমান সরকারের কৃষি উন্নয়নের অব্যাহত ধারায় এআইএস কৃষি তথ্য বিস্তারে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করছে। সেবার মান সময় উপযোগী, আধুনিক, সহজলভ্য ও গ্রহণ উপযোগী  করা হচ্ছে। বহুবিধ সীমাবদ্ধতা ও প্রতিক‚লতার মধ্য দিয়েও কৃষির উন্নয়নের জন্য কৃষি তথ্য সার্ভিস নিরলস কাজ করছে। কৃষির জয়যাত্রা অব্যাহত থাকুক, কৃষিতে সাফল্যের মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হোক- এ প্রত্যাশাই সবার।

পরিচালক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫, ফোন : ০২৫৫০২৮২৬০, ই- মেইল :dirais@ais.gov.bd

 

বিস্তারিত
কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

কৃষিবিদ সুবোধ চন্দ

যে জাতি হাজার বছর ধরে পরাধীনতার গøানি লালন-পালন ও বহন করে আসছিল। সেই জাতিকে সুসংগঠিত করে একখÐ স্বাধীন ভ‚মি উপহার দেন- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গর্বের আত্মপরিচয় হিসেবে জাতি লাভ করে, লালসবুজ পতাকা- জাতীয় সঙ্গীত-রণ সঙ্গীত। সেই মহানায়ক পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১০ জানুয়ারি, ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে পা রাখেন। স্বাভাবিকভাবেই দেশ শাসনের ভার জাতি তাঁর ওপর অর্পণ করে। সদ্য স্বাধীন রক্তঝরা, মুক্তিযুদ্ধে বিধ্বস্ত একটি দেশ। হাজারো সমস্যা, আর্থিক  দৈন্যতা, নেই মূলধন, নেই বৈদেশিক মুদ্রা। অপরদিকে পরাজিত শক্তির উৎকট ঝামেলা, দেশ-বিদেশের গভীর ষড়যন্ত্র। সকল প্রতিহিংসা, প্রতিক‚লতাকে উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২-৭৩ আর্থিক বছর প্রথম বাংলাদেশের বাজেট পেশ করেন। বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা উন্নয়ন খাতের মধ্যে ১০১ কোটি টাকা রাখেন কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে। সেই বাজেট কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের মাইলফলক।
 অতঃপর কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু সবুজ বিপ্লবের ডাক দেন। হাওড়-বাঁওড়-চর-পাহাড়-গড় ও সমতল ভ‚মির কৃষকের উপযোগিতার ভিত্তিতে কৃষি উন্নয়নে নাড়া দেন। তিনি জাতিকে স্মরণ করিয়ে দেন, এখন আর ঘরে বসে থাকার সময় নয়, এখন লাঙল জোয়াল কোদাল কাঁস্তে নিয়ে মাঠে নামার সময়। এ জন্য তাঁর সরকার কৃষি উন্নত দেশ থেকে বাংলার মাটি, জলবায়ু ও কৃষকের উপযোগী বিজ্ঞানসম্মত উন্নত প্রযুক্তি সংগ্রহে নেমে পড়েন। ব্যক্তি মুজিবের ভাবমূর্তি কাজে লাগিয়ে দেশ অনেকদূর এগিয়ে যায়। সেদিনকার পূর্ব জার্মানি থেকে ৩৮ হাজার সেচযন্ত্র, সোভিয়েত ইউনিয়নের ইউক্রেন থেকে বর্টারে ট্রাক্টর এবং ফিলিপাইন থেকে আইআর-৮ উচ্চফলনশীল জাতের ধান আমদানি করেন। উক্ত আমদানিকৃত বীজ ও কীটনাশক উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করে। বাংলাদেশ    কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কৃষি উপকরণ যথা সার, সেচযন্ত্র, ডিজেল ও উন্নত জাতের বীজ সরকারি ভর্তুকি মূল্যে সহজলভ্যে কৃষকদের হাতে তুলে দেয়। এমনকি বঙ্গবন্ধু ভারতের ফারাক্কা থেকে শুকনো মৌসুমে পদ্মা নদীতে ৫৪ হাজার কিউসেক পানির নিশ্চয়তা আদায় করেন। এ ছাড়া ১৯৭৩ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প পূর্ণোদ্যমে চালুর যথাযথ ব্যবস্থা নেন।
 ঘোষিত সবুজ বিপ্লব পূর্ণবাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু  কৃষকদের হাতে উপকরণ ক্রয়ে নগদ অর্থ জোগানের ওপর জোর দেন। এ লক্ষ্যে দৃঢ় মনোবলের আলোকে কিছু যুগান্তকারী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যার সূচনালগ্নে পাকিস্তান আমলের বিভিন্ন ব্যাংকের বকেয়া দশ লাখ কৃষকের সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার করে নেন। কৃষকদের খাজনার হয়রানি ও ব্যতিব্যস্ত জীবন থেকে রেহাই দিতে পঁচিশ বিঘা পর্যন্ত ভ‚মি খাজনা মওকুফ করে দেন। ভ‚মি মালিকানা প্রকৃত কৃষকের হাতে তুলে দেয়ার সুদূরপ্রসারী চিন্তাধারায় ভ‚মি মালিকানা সর্বোচ্চ সিলিং একশত বিঘা পর্যন্ত ধার্য করেন। বাড়তি বা খাসজমি ভ‚মিহীন কৃষকদের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। অতঃপর কৃষিঋণ পাওয়াতে হয়রানি রোধে ১৯৭৩ সালে কৃষকদের  দোড়গড়ার ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া জাতীয়করণকৃত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রায় ৩০ কোটি টাকা সহজলভ্য কৃষিঋণ বিতরণ করেন।
বঙ্গবন্ধু দেশের সীমিত জমি সর্বোচ্চ ব্যহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বসতবাড়ির আনাচে-কানাচে, সড়ক-জনপথ, স্কুল কলেজ, মসজিদ, মন্দির, মাদরাসার পতিত জমিতে বৃক্ষ রোপণের আহŸান জানান। চাষযোগ্য জমি যাতে এক ইঞ্চিও অব্যবহৃত না থাকে সে ব্যাপারে সব মহলকে সজাগ করে তুলেন। তাঁর আহŸানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও সেনাবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে সেনানিবাসের পতিত জায়গা চাষাবাদের অধীনে আনেন। অর্থাৎ সমগ্র জাতি যার যার অবস্থান থেকে উৎপাদনমুখী হওয়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। একাধারে মুক্তিযুদ্ধে হাতে গড়া দেশ অন্যধারে দেশ গড়ার অদম্য স্পৃহা জাতিকে সৃজনশীলতায় নিয়ে যায়। তরুণ ও যুবসমাজ দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত হয়ে শহর ছেড়ে গ্রামমুখী হতে থাকে। দেশীয় লাঙল ছেড়ে পাওয়ারটিলারে জমিচাষে কৃষকগণ ঝুঁকে পড়ে। দলগত এবং সমবায়ের ভিত্তিতে সেচকার্যে গভীর-অগভীর ও পাওয়ার পাম্প ব্যবহার শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধের শিক্ষা হাতে হাত ধরা আবার মাঠে ময়দানে দেখা দেয়।
বঙ্গবন্ধু উৎপাদনমুখী জাতীয় জোয়ারকে ধরে রাখতে কৃষিকে লাভজনক খাত হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা নেন। এ লক্ষ্যে অর্থকরি ফসল হিসেবে পাট, ইক্ষু, চা ও তুলা চাষ ব্যাপক সম্প্রসারণের কর্মসূচি গ্রহণ করেন। পাটচাষিদের পাট চাষের প্রতি আরো উৎসাহ ও উদ্দীপনা বজায় রাখার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাস্তবসম্মত প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর মধ্যে কৃষকগণ যাতে পাটের ন্যায্যমূল্য পায় সে জন্য ১৯৭২ সালে পাটের মণপ্রতি সর্বনি¤œ মূল্য ১০০ টাকা ধার্য করেন। এই প্রথম কৃষকসমাজ রাষ্ট্রের কাছ থেকে উৎপাদিত ফসলের গ্যারান্টি অর্জন করে। উন্নতমানের পাট উৎপাদনে কৃষি মন্ত্রণালয়ে আলাদা অধিদপ্তর হিসেবে ‘পাট সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ১৯৭৫’ চালু করেন। উক্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে শক্তিশালী পাটচাষি সমিতি গড়ে তুলেন। যাতে পাটচাষিরা নিজেদের স্বার্থ নিজেরাই যাচাই-বাছাই করে নিতে পারে। সমিতির মাধ্যমে ঋণ দেয়া উপকরণ বিতরণ এবং বাজারজাতকরণে অধিকতর অধিকার প্রদান করেন। এ ছাড়া পাট গবেষণা কেন্দ্রকে গতিশীল, টেকসই ও চাহিদামাফিক যুগোপযোগী করতে জুট অ্যাক্ট, ১৯৭৪ এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট’ নামকরণ করেন। এ ছাড়া কৃষক ও জাতীয় উৎপাদনের স্বার্থে পাট মিলগুলোকে জাতীয়করণ করেন। বাংলার অপর আরেকটি অর্থনৈতিক ফসল ইক্ষু চাষকে আধুনিকীকরণের মাধ্যমে অধিক এলাকা চাষের আওতায় আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এ লক্ষ্যে চিনি শিল্পের উন্নয়নে ‘নিবিড় ইক্ষু উন্নয়ন প্রকল্প’ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রকল্প ও ‘খামার আধুনিকীকরণ প্রকল্প’ হাতে নেন। বিদ্যমান কয়েকটি চিনিকলের যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন ও আধুনিকীকরণের ব্যবস্থা নেন। ইক্ষুচাষিদের আগ্রহী গড়ে তোলার প্রয়াসে উন্নত জাত ও অধিক ফলনের ওপর জোর দেন এবং কৃষক ও জাতির উদ্দেশ্যে চিনিকলগুলোকে জাতীয়করণ করেন। এ ছাড়া পাহাড়ি উপনিবেশিক অর্থকরী প্রতিযোগিতামূলক ফসল চা আধুনিকীকরণে বিভিন্নমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সংশ্লিষ্ট ফসলের সাথে প্রায় ৩ লাখ শ্রমিক সরাসরি জড়িত যাদের মধ্যে ৭৫ ভাগই নারী ও উপজাতি। এই বৃহৎ অঙ্কের শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজারে টিকে থাকায় উন্নত জাত ও মানসম্পন্ন চা উৎপাদনের কার্যক্রম গ্রহণ করেন। এ জন্য পূর্ণাঙ্গ গবেষণা নির্ভর ‘বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট’ ১৯৭৩, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, সিলেট স্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধু বাংলার আদি ঐতিহ্যবাহী গর্বের হারিয়ে যাওয়া অর্থকরী ফসল তুলা চাষ পুনরায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ১৯৭২ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘তুলা উন্নয়ন বোর্ড’ গঠন করেন। বোর্ডকে এ দেশের উপযোগী জাত বাছাই, গবেষণা ও চাষযোগ্য এলাকা চিহ্নিতকরণসহ ব্যাপক চাষের কর্মসূচি প্রদান করেন।
বঙ্গবন্ধু সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলার আদি-অন্তকালের শ্যামলিমার নৈশ^র্গিক সৌন্দর্য ধরে রাখার প্রয়াসে বৃক্ষ রোপণকে  বৈচিত্র্যমুখী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ লক্ষ্যে ফুলফল শাকসবজি ও শৌখিন গাছগাছড়ার চারা উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে উদ্যান উন্নয়ন বোর্ড স্থাপন করেন। এ ছাড়া চারা উৎপাদনকারী সমমনা বিভাগ ও সংস্থা যথা বনায়ন, বিএডিসি, এনজিও এবং ব্যক্তিপর্যায় চারা উৎপাদনকারীদের মধ্যে অবাধ সৃষ্টিশীল প্রতিযোগিতা মনোভাব গড়ে তোলার প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর ফলে কৃষকদের চারা প্রাপ্তি সহজ হয় এবং গ্রাম-গ্রামান্তরে বৃক্ষরোপণের মানসিকতা গড়ে ওঠে।
বঙ্গবন্ধু কৃষিতে নতুন নতুন প্রযুক্তি স্থায়ী ও টেকসই করায় সমন্বিত গবেষণার ওপর জোর দেন। এ জন্য কৃষির সাথে জড়িত সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার গবেষণাগার এক ছাতার নিচে আনার উদ্যোগ নেন। সে লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল’, খামারবাড়ি রোড, ঢাকা প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া গবেষণাগারের উদ্ভাবিত জাত ও বীজের মান কৃষকপর্যায়ে যথাযথ বজায় রাখার ওপর জোর দেন। যাতে বীজ ক্রয়ের ক্ষেত্রে কৃষককুল কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এ ব্যাপারে সরকারি- বেসরকারি উৎপাদিত খামারের বীজ বাজারজাতকরণের মান নিয়ন্ত্রণে সরকারি স্বায়ত্তশাসিত এজেন্সি হিসেবে ‘বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি’ ২২ জানুয়ারি, ১৯৭৪,  গাজীপুর স্থাপন করেন। এ ছাড়া গবেষণাগারের উদ্ভাবিত নতুন নতুন প্রযুক্তি ও জাত ত্বরিত গতিতে সঠিক তথ্যসহ করণীয় কৃষকদের হাতে পোঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগকে চৌকস দক্ষ কারিগরি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সম্প্রসারণ রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (সার্ডি) ১৯৭৫, বাংলাদেশ জাপান সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্বাক্ষরে গাজীপুর, ঢাকা স্থাপন করেন। যা উন্নত বিশে^র সমকক্ষ              আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর যুগোপযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠে।
বঙ্গবন্ধু কৃষি সংশ্লিষ্ট মৎস্য ও পশুসম্পদ বিভাগকে গতিশীল ও যুগোপযোগী করার বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেন। তিনি বিশ^াস করতেন মাছ হবে দ্বিতীয় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদের দেশÑ বাংলাদেশ। তিনি মৎস্যজীবী সম্প্রদায়কে মহাজনী শোষণ থেকে রক্ষার জন্য ‘জাল যার জলা তার’ নীতি ঘোষণা দেন। স্বায়ত্তশাসিত সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘বাংলাদেশ মাৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)’, মতিঝিল, ঢাকা ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। উক্ত কর্পোরেশনের মাধ্যমে সরকারি জলাশয়ে মাছ আহরণ, বিক্রয়, বাজারজাত, সমুদ্রগামী মাছধরার নৌকা-জাহাজ তৈরি- আমদানি, মাছের পোতাশ্রয়-বন্দর, কোল্ডস্টোরেজ, নিলাম বিক্রয় ও সংরক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করেন ও তদারকির দায়িত্ব দেন। উক্ত সংস্থার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ‘বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ একাডেমি (বিএমফএ)’, ১৯৭৩ স্থাপন করেন। একাডেমি স্থাপনে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা সে দিনের ইউএসএসআরের (সোভিয়েত ইউনিয়ন) তত্ত¡াবধানে তাদের মেরিন বিশেষজ্ঞ এবং কলাকৌশলীদের দিয়ে সম্পন্ন করেন। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে উৎপাদিত দুধ ক্রয়ে সমবায়ী প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটা, ঢাকা, ১৯৭৪ চালু করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে ১ লাখ ৫০ হাজার গাভী বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। গ্রামীণ উন্নয়নের সাথে জড়িত সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিবর্গকে কৃষি, উদ্যান, টিসু কালচার, মৎস্য, পশুসম্পদের ওপরে হাতেকলমে প্রশিক্ষিত করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৭৪ সালে গবেষণাধর্মী ‘পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ)’, বগুড়া।
বঙ্গবন্ধু বাংলা ও বাঙালির নাড়ির স্পন্দন খুব সহজে বুঝতে পারতেন। তাঁর পক্ষেই উন্নয়নে সিদ্ধান্ত নিতে একবারের স্থলে দুইবার ভাবতে হতো না। স্বাধীনতার পর ভারত ফেরত এক কোটি শরণার্থী সম্মানের সাথে পুনর্বাসন করাটা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি গ্রামীণ জীবনকে এনে দাঁড় করায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু দেশের আপামর জনগণ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি ও ৪টি আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থা যথাÑ কেয়ার, কারিতাস, এমসিসি, আরডিআরএস এবং একটি দেশীয় এনজিও ব্র্যাককে সাথে নিয়ে অতি অল্প সময়ের মধ্যে পুনর্বাসনের কাজ সুসম্পন্ন করে। পুনর্বাসনের পরপরই সমান্তরালভাবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাবার পানি, শিশুদের পুষ্টিযুক্ত খাবার, যোগাযোগ, বাসস্থান, কৃষি, নারীর ক্ষমতায়ন, ঋণ প্রদান, কর্মসংস্থান জাতীয় আর্থসামাজিক উন্নয়নে এনজিওদের সংগঠনভিত্তিক গ্রামীণ চাহিদা মোতাবেক কার্যক্রম গ্রহণে সম্পৃক্ত করেন।
বঙ্গবন্ধু কৃষি, মৎস্য, পশুসম্পদে ব্যতিক্রমধর্মী কর্মকাÐে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ ২৯/১৯৭৩ এর মাধ্যমে ‘বঙ্গবন্ধু পুরস্কার তহবিল’ গঠনপূর্বক পুরস্কার প্রদানের রেওয়াজ প্রচলন করেন। বঙ্গবন্ধু গভীরভাবে উপলব্ধি করতেন কৃষি এবং কৃষকের উন্নয়নে মেধাভিত্তিক তারুণ্যের সমাবেশ জরুরি। সে লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে ১৩ ফেব্রæয়ারি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে হিমালয় পর্বতের মতো দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেন, কৃষি গ্রাজুয়েটদের সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণীতে উন্নত করা হলো। সাথে সাথে কৃষিবিদদের উপদেশ দেন, কোট-প্যান্ট ছেড়ে গ্রামে গ্রামে কৃষকদের পাশে থেকে উৎপাদন পরিকল্পনার নেতৃত্ব দেয়ার।
বঙ্গবন্ধুর সেই সাড়ে তিন বছরের সংক্ষিপ্ত সময়কালের চিন্তাভাবনা, কর্মপরিকল্পনা, কর্মসূচি, বিবর্তন ও পরিবর্তন আজকের বাংলাদেশ। যারা এতদিন বাংলাদেশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগময় মানুষে মানুষে ঠাসা গরিব এবং দারিদ্র্যতম দেশ হিসেবে বিবেচনা করত। তারাই আজ অবলীলায় বলে, বাংলাদেশ বিশে^র উন্নয়নের ‘রোল মডেল’। সে দিনের বঙ্গবন্ধুর দিক নির্দেশিত সবুজ বিপ্লবের পথ ধরেই আজ এতটুকু আসা। যা আর বলার অপেক্ষায় থাকে না, দেশ-বিদেশের রেকর্ড দৃষ্টে তা স্পষ্ট-উজ্জ্বল ও ভাসমান। লোকসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ কিন্তু খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে চার-গুণ। খাদ্য ঘাটতির দেশ আজ খাদ্যে উদ্বৃত্ত এবং একটি রফতানিকারক দেশ। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে এমন কোনো খাত নেই যেখানে বঙ্গবন্ধুর হাতের ছোঁয়া পড়ে নাই। বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের রোপিত চারা আজ   মহীরুহ হয়ে ছায়া-বায়ু-পুষ্টি দিয়ে বাঙালি জাতিকে হৃষ্টপুষ্ট করে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নত করেছে। য়

উপপরিচালক (অব:), ডিএই, খামারবাড়ি, ফ্ল্যাট এ/৪ প্রেজো, ৬৮৯/বি, বড় মগবাজার, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১৫২৪৭৮৫৭  ইমেল-  subodh301@gmail.com&

 

বিস্তারিত
দেশি খেজুর গাছের চাষ ও রস প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রযুক্তি

কৃষিবিদ ড. মোঃ আবুল কালাম আল আজাদ
দেশি খেজুর গাছ (
Phoenix sylvestris) বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ রস ও ফল সংগ্রহের আবহমান পদ্ধতি। যাহা ব্যবহার করা হয় রস সংগ্রহ, ফল সংগ্রহ, ঘরের চাহনী ও জ¦ালানি কাঠ হিসেবে। গাছের রস দিয়ে উন্নত মানের সিরাপ তৈরি করা হয়। তাই ইহা একটি পুরাতন গাছ ফসল (Fayadul and Al showiman, 1990). বাংলাদেশে সাধারণত দেশি খেজুর সব জেলাতে উৎপন্ন হয়। তবে দেশের যশোর ফরিদপুর, নাটোর, মাগুরা, খুলনা ও চরাঞ্চলসহ দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে উৎপন্ন হয়। ইহার স্ত্রী গাছ ও পুরুষ গাছ আলাদা হয়। স্ত্রী গাছ ও পুরুষ গাছ হতে রস আহরণ করা হয় এবং স্ত্রী গাছ হতে ফলও উৎপন্ন হয়। ইদানীং দেশের কিছু প্রগতিশীল চাষি আরবীয় খেজুরের চাষ করে যাহা এখনও আমাদের দেশে পরীক্ষাধীন অবস্থায় আছে। আরবীয় খেজুর গাছ হতে শুধুমাত্র আরবীয় খেজুর ফল সংগ্রহ করা হয়। সাধারণত স্ত্রী গাছের টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত চারা প্রায় স্ত্রী গাছ হয় এবং ফল ধরে। এক্ষেত্রে স্ত্রী গাছের বাগানে পুরুষ গাছও থাকতে হয় যাতে পরাগায়ন হতে পারে। তাই স্ত্রী গাছের টিস্যু কালচারের মাধ্যমে এর বিস্তার ব্যাপক হারে ঘটানো সম্ভব।


দেশি খেজুরের চারা উৎপাদন ও রোপণ পদ্ধতি
সাধারণত দেশি খেজুরের বীজ বীজতলায় বপন করে তৈরি করা যায়। বীজতলার মাটি বেলে মিশ্রিত ভিটা মাটি হলে ভালো হয়। তাহলে চারা গজাতে সুবিধা হয়। তবে পলিব্যাগে ও চারা উৎপাদন করা যায়। ভালো গুণাগণ সম্পন্ন মাটি দিয়ে পলিব্যাগ তৈরি করে খেজুরের বীজ উলম্বভাবে ১.৫ সেমি.-২ সেমি. পলিব্যাগের ভেতরে বপন করলে ১.৫- ২ মাসের মধ্যে বীজ হতে চারা গজানো হয়। তবে অঙ্কুরোদগম হার বৃদ্ধি করার জন্য বীজকে খালি পাত্রে ২ দিন ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং এই ২ দিনে প্রতিদিন ১বার করে বীজগুলোকে পানিতে নেড়ে চেড়ে পুরাতন পানি ফেলে দিয়ে নতুন পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তার পর বীজগুলোকে পলিব্যাগে বা বীজতলায় বসিয়ে দিতে হবে। অঙ্কুরিত চারার বয়স যখন ১ বছর হবে তখন চারা রোপণের উপযোগী হবে। সাধারণত জুন জুলাই হতে আগস্ট সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চারা রোপণ করা যায়। চারা রোপণের জন্য মূল জমিতে র্২ ঢ র্২ ঢ র্২ গর্ত ১০ ফুট ঢ ১০ ফুট দূরে দূরে করতে হবে। প্রতিটি গর্ত ৩-৪ ইঞ্চি গভীর হতে হবে। প্রতিটি গর্তে ১০ কেজি গোবর ২০০ গ্রাম টিএসপি ও ২০০ গ্রাম পটাশ সার মিশ্রিত করে গর্তের মাটি গোবর ও রাসায়নিক সার ভালো করে মিশিয়ে গর্তটিকে ঢেকে দিতে হবে। এতে মিশ্রিত সার ও গোবর পচন ক্রিয়া সম্পন্ন হবে। প্রায় ১৫-২০ দিন পর উপরের মাটি সরিয়ে পলিব্যাগ থেকে চারা মাটিসহ আলগা করে গর্তে বসিয়ে দিয়ে গাছের গোড়ায় পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে যাতে পলিব্যাগের মাটি ভালোভাবে ভিজে যায় এবং গর্তের মাটির সাথে মিশে যায়।


সার প্রয়োগ
উংপাদনক্ষম খেজুর গাছের গোড়া থেকে ৭৫ সেমি. দূরে  গোলাকৃতি করে ১০-১৫ সেমি. গভীর গর্ত খুড়ে প্রতি বছর অক্টোবর ও মে মাসে প্রতি বারে ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৬০০ গ্রাম টিএসপি, ৩০০ গ্রাম এমওপি ও ২০ কেজি পচা গোবর সার ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। দেশি খেজুর গাছে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়। তবে মাঝে মাঝে কোন কোন গাছে বিটলজাতীয় পোকা দেখা যায়।


স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খেজুর গাছের রস সংগ্রহ
গাছ সাধারণত নির্বাচন করা হয় ৫-৭ বছর বয়সের। যে সকল গাছ দেখতে সুস্থ সবল, সেসব গাছ নির্বাচন করলে অধিক রস আহরিত হয়। খেজুর গাছের রস সংগ্রহের জন্য গাছ নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খেজুরের রস সংগ্রহ গাছ কাটার ওপর নির্ভর করে কারণ রস সংগ্রহের জন্য প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে রস সংগ্রহ করা অতীব জরুরি। এজন্য প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দক্ষ গাছি দিয়ে গাছ কাটলে ও রস আহরণের হার ও গাছের স্থায়িত্ব উভয়ই বৃদ্ধি পাবে।


খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য কিভাবে গাছ কাটতে হবে গাছের কোন অংশে কতটুকু কাটতে হবে, কোন সময়ে বেশি পরিমাণ রস, সর্বোপরি গাছটি কিভাবে কাটলে অধিক রস সংগৃহীত হবে এবং গাছটি দীর্ঘস্থায়ী হবে তাহা গাছীর সম্যক ধারণা থাকতে হবে। এই সব ধারণা ও জ্ঞান থাকলে গাছটি সহজে মরবে না। আর এই জন্য গাছীকে অবশ্যই প্রশিক্ষিত হতে হবে। কারণ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ১টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ এবং তাহা থেকে সিরাপ, গুড়, পিঠা, পায়েস ইত্যাদি মুখরোচক খাবার তৈরি করার জন্য অধিক পরিমাণে রস আহরণ করতে পারবে। গবেষণায় দেখা গেছে গাছের বেডের  অংশ লম্বা ও ৭.৫-১০ সেমি. গাছ কাটলে বেশি পরিমাণ রস পাওয়া যায়।
 

রস সংগ্রহ পদ্ধতি
অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি অর্থাৎ কার্তিক মাসের প্রথম দিকে গাছ পরিষ্কারের কাজ শুরু করতে হয়। গাছ পরিষ্কার করার পর ১৫-২০ দিন পর গাছ কাটা শুরু করতে হয়। এরপর ছাটা অংশের যেখানে রস নিঃসরণ শুরু করা হয় সেখানে ট আকৃতির চিকন প্রায় ৭-৮ ইঞ্চি লম্বা বাশের কঞ্চি আধা ইঞ্চি পরিমাণ গাছে ঢুকিয়ে দিতে হয়। ট আকৃতির কাঠির মধ্যে দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় গাছের রস ঝুলন্ত হাঁড়িতে জমতে থাকে।


গাছ একবার ছাটলে ৩-৪ দিন রস সংগ্রহ করা হয় এবং পরবর্তীতে ৩ দিন শুকাতে হয়। এইভাবে কাটলে গাছের রস সুমিষ্ট হয়। রস সাধরণত নভেম্বর- ডিসেম্বর হতে মার্চ মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করতে হয়। রস সংগ্রহের পর হাঁড়ি পরিষ্কার করে রৌদ্রে শুকাতে হয় অথবা আগুনে ছেকে নিতে হয়। এতে সংগৃহীত রসে গাঁজন (Fermentation)) বন্ধ হয়।


রস সংগ্রহের জন্য ধারালো দা, মাটির পাত্র বা হাঁড়ি, নেট বা জাল লোহার বা স্টিলের কড়াই, চুলা, জ¦ালানি, ছাকনি, কাঁচের বোতল ও বোতলের কর্ক ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
 

ফলাফল
২০১৯-২০ ক্রপ মৌসুমে আঞ্চলিক সুগারক্রপ গবেষণা কেন্দ্র, গাজীপুরে একটি খেজুর বাগানে বর্ণিত পদ্ধতিতে রস সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত রস দিয়ে সিরাপ, পায়েস ইত্যাদি তৈরি করা হয়। সাধারণত খেজুর গাছের সংগৃহিত রসের বিক্স  ৮-১২% পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে এবং সিরাপের বিক্স ৭০-৭৮% পর্যন্ত পাওয়া যায়। বর্ণিত মৌসুমে ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রæয়ারি ও মার্চ মাসে রস সংগৃহীত হয়। উক্ত মাসগুলোর ৬টি দিনের রসের হাঁড়ির রস মাপা হয়।
ফলাফলে দেখা যায় যে গাছ কাটার প্রথম দিকে রসের পরিমাণ কম; পরবর্তী মাসে গাছের রসের পরিমাণ বাড়তে থাকে অর্থাৎ জানুয়ারি, ফেব্রæয়ারি মাসে রসের পরিমাণ বেশি সংগৃহীত হয়েছে। ডিসেম্বর ও মার্চ মাসে রসের পরিমাণ কমতে থাকে যাহা তাপমাত্রার সাথে সম্পর্কিত।


খেজুর রসের সিরাপ উৎপাদন
গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে ছাঁকনি দিয়ে ছেকে সংগৃহীত রস কড়াইতে বা পাতিলে ঢেলে চুলায় জ¦াল দিতে হয়। রস জ¦াল দেয়ার প্রথম অবস্থায় রসের উপরিভাগে গাদ বা ফেনা ভেসে উঠে। উক্ত গাদ বা ফেনা যত দ্রæত সম্ভব ছাঁকনি দিয়ে ফেলে দিতে হবে। ফলে গুণগত মানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত গুড় হবে। রস ঘনীভূত হলে দেখা যাবে রস আঠালো হয়েছে কি না। ঘনীভূত রস আঠালো সিরাপের মতো হলে রস চুলা থেকে নামিয়ে সিরাপ তৈরি করতে হবে এবং উক্ত সিরাপের ঘনত্ব (বিক্স %) ৭০-৭৮ হলে ভালো হয়। ফলে উক্ত সিরাপ তৈরি করলে সিরাপ দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং গুণগত মানসম্পন্ন হয়।          

 

খেজুরের গুড় প্রস্তুতকরণ
খেজুরের সিরাপ কড়াইয়ের মধ্যে রেখে জ্বাল দিতে হবে। ফুটন্ত ঘনীভূত রস হাতলের সাহায্যে লাগাতার নাড়তে হবে এবং চুলার তাপমাত্রা দ্রæত কমিয়ে আনতে হবে। চুলা থেকে গুড় নামানোর সময় মিশ্রিত করতে চাইলে হাতলের সাহায্যে গুড় অর্থাৎ এক চিমটি পরিমাণ গুড় ২০০ মিলি লিটার পানিতে ছেড়ে দিতে হবে। পানিতে গুড় দ্রæত জমাটবদ্ধ হলে বুঝতে হবে গুড় চুলা থেকে নামানোর উপযোগী হয়ে গেছে এবং চুলা থেকে গুড়সহ কড়াই দ্রæত নামিয়ে ঠাÐা করতে হবে এবং ছাঁচে ঢালতে হবে।


খেজুর গাছের ফল উৎপাদন
সাধারণত জুলাই আগস্ট মাসে দেশীখেজুর স্ত্রী গাছের ফল সংগৃহীত হয়। খেজুরের ঝারের ফল যখন গাড়ো হলুদ বর্ণ হয় তখন পাকা শুরু করে। পাকা ফল যখন শালিক পাখি খেতে দেখা যায় তখন উক্ত খেজুরের ঝার কেটে পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ১-২ দিনের মধ্যে সমস্ত খেজুর পেকে যায়। তখন পাকা ফল সংগ্রহ করে খাওয়ার উপযোগী হয় বা বাজারজাত করা হয়।
অধিক খেজুর গাছ লাগানোর জন্য আমাদের কৃষকদের উৎসাহিত করতে হবে এবং তাদের জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থিক উন্নতি সাধন সম্ভব হবে। সিরাপ, পাটালী গুড় ও খেজুরের ফল উৎপাদন কুটির শিল্প হিসাবে চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করা সম্ভব হবে। য়


প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আরএসআরএস, গাজীপুর, মোবাইল : ০১৭১৯০৭৯৫৯১, ই-মেইল :kalambsri@gmail.com

 

বিস্তারিত
বছরব্যাপী পিয়াজ সরবরাহে বারি পাতা পিয়াজ-১

ড. মো: আলাউদ্দিন খান১ মো: মুশফিকুর রহমান২
পাতা পিয়াজ (
Allium fistulosum L.) একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মসলা জাতীয় ফসল। ইহা Japanese bunch ing onion নামেও পরিচিত। এ প্রজাতির গাছের মূলত দুইটি অংশ-সবুজ পাতা ও সাদা মোটা সিউডোস্টেম (Blanched pseudostem)। এ জাতীয় পিয়াজে সাধারণ বাল্ব পিয়াজের (Allium cepa L) মত বাল্ব উৎপাদন হয় না। তবে সাদা সিউডোস্টেমের গোড়ায় বাল্বের মত বৃদ্ধি  (Bulb enlargement) পরিলক্ষিত হয়। এ প্রজাতির গাছ বহুবর্ষজীবী। বীজ সংগ্রহের পর পুনরায় কুশি উৎপাদনের মাধ্যমে রেটুন ফসল (Ratoon crop) হিসেবে চাষ করা যায়। ফলে একবার কোন জমিতে এ ফসল চাষ করলে নতুন করে ঐ জমিতে বীজ বপন বা চারা রোপণ করার প্রয়োজন হয় না। কেবলমাত্র পুরাতন গাছ উঠিয়ে এবং আগাছা নিড়িয়ে ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে বছরের পর বছর রেটুন ফসল চাষ করা সম্ভব।


বীজ বা কুশির মাধ্যমে পাতা পিয়াজের বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। এ ফসলটির কুঁশি উৎপাদনের প্রবণতা খুবই বেশি। এ প্রজাতিটি পার্পল বøচসহ বিভিন্ন রোগ সহিঞ্চু/প্রতিরোধী (Tolerant/ resistant)। এর পাতা ও ফুলের দণ্ড (Scape) ফাঁপা। এলাইল প্রোপাইল ডাইসালফাইড থাকার কারণে এর স্বাদ ও গন্ধ সাধারণ পিয়াজের মতো। এ মসলাটি রন্ধনশালায় (Culinary) ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর মূল বা হলুদ পাতা ছাড়া ফুলের দণ্ডসহ সমস্ত অংশই বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যকে রুচিকর ও সুগন্ধপূর্ণ করে তোলে। ইহা সালাদ হিসেবে কাঁচা অথবা বিভিন্ন তরকারি/অন্যান্য খাবারের সাথে সিদ্ধ করে খাওয়া হয়ে থাকে। ইহা ভর্তা হিসাবেও খাওয়া যায়। সাধরণত মোটা সাদা সিউডোস্টেম মাংস বা অন্যান্য তরকারিতে এবং সবুজ পাতা সালাদ হিসেবে অথবা সুপ, নুডুলস, স্যান্ডউইজ ইত্যাদি খাবারকে সুগন্ধ করার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। ইহার যথেষ্ট পুষ্টিগুণ রয়েছে। পাতা পিয়াজের প্রতি ১০০গ্রাম ভক্ষণযোগ্য অংশে আর্দ্রতা (৭৮.৯%), আমিষ  (১.৮%)চর্বি (০.১%), খনিজ পদার্থ (০.৭%), শর্করা (১৭.২%), ক্যালসিয়াম (০.০৫%), ফসফরাস (০.০৭%), লোহা (২.৩ মি.গ্রাম),  ভিটামিন-এ (৩০ আইইউ), ভিটামিন-বি১ (০.২৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-সি (১১ মিলিগ্রাম) ও এনার্জি (৩৪ কিলোক্যালরি) আছে। এর অনেক ঔষধি গুণাবলিও রয়েছে। ইহা পরিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। মাথাব্যথা, বাতের ব্যথা ও ঠাণ্ডাজতি রোগ থেকে উপশমে    সহায়তা করে। হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি এ পিয়াজ খেলে রোগ থেকে উপশম পেয়ে থাকেন। সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবে গোছা (ঈষঁসঢ়) আকারে পাতা পিয়াজের যথেষ্ট আকর্ষণ রয়েছে। নিচে এ জাতের পিয়াজের উৎপাদন কলাকৌশল বর্ণনা করা হলো।


মাটি ও আবহাওয়া
পাতা পিয়াজ সকল ধরনের মাটিতে জন্মে থাকে তবে বেলে দো-আঁশ ও পলি-দো-আঁশ মাটিতে ভালো ফলন দিয়ে থাকে। তবে উচ্চ এসিড ও ক্ষার মাটিতে ভাল জন্মে না। গাছ সুন্দরভাবে বৃদ্ধির জন্য মাটি ঢ়ঐ৫.৮-৬.৫ থাকা ভালো। প্রচুর পরিমাণে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটিই উত্তম। পাতা পিয়াজের জমিতে সুনিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। ইহা ঠাণ্ডা ও গরম উভয় তাপমাত্রায় জন্মাতে পারে। অন্যান্য
Allium spp. প্রজাতির তুলায় এ প্রজাতির পিয়াজের গাছ ভারী বৃষ্টির প্রতি অনেক সহিঞ্চু। জমিতে প্রতিষ্ঠিত পাতা পিয়াজের গাছ খরার প্রতিও সহিঞ্চু। দিবা দৈর্ঘ্য বেশি হলেও এ পিয়াজের গাছের বৃদ্ধি হতে থাকে অর্থাৎ আমাদের দেশে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালেও এ পিয়াজের চাষ উপযোগী। এ প্রজাতির পিয়াজে নিম্ন তাপমাত্রায় ও ছোট দিনে ফুল আসে।


বীজ বপন ও চারা উত্তোলন
ফেব্রæয়ারি-এপ্রিল মাসের মধ্যে বীজতলায় বীজ বপন করা হয়। তবে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বীজ বপন করলে কিছুদিন পরেই ফুল আসা শুরু হয়। সারি পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রতি হেক্টর জমির জন্য ৪-৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। তবে ছিটিয়ে বপন করলে হেক্টর প্রতি ৮-১০ কেজি বীজের দরকার হয়। বীজ ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে পরে ১২ ঘণ্টা শুকনা পাতলা কাপড়ে বেঁধে রেখে দিলে বীজের অংকুর বের হয়। বীজতলায় পচা গোবর সার দিয়ে ঝুরঝুরে করে তৈরি করা হয়। বিভিন্ন ধরনের পোকা ও ক্রিমি দমনের জন্য বীজতলায় ফুরাডান ব্যবহার করাই ভালো। পরে বীজতলায় বীজ সুষমভাবে ছিটিয়ে দিয়ে তার ওপর ০.৪-০.৫ সেমি. ঝুরঝুরে মাটি প্রয়োগ করে কলাগাছ/হাত দিয়ে বীজতলা চাপ দিতে হয়ে। বীজতলায় আগাছা নিড়ানোসহ অন্যান্য পরিচর্যা করা হয়। চারার বয়স ৪০-৪৫ দিন হলে মূল জমিতে লাগানোর উপযোগী হয়। চারা উত্তোলনের পর চারার ওপর থেকে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ছেঁটে ফেলে দিয়ে চারা লাগাতে হয়। এর ফলে লাগানোর পরে চারা থেকে কম পরিমাণে পানি বের হয় এবং চারা জমিতে ভালোভাবে লেগে উঠে। এক হেক্টর জমির জন্য ৬-৬.৫ লক্ষ চারার প্রয়োজন হয়।


জমি তৈরি ও চারা রোপণ
মূল জমিতে ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। চাষের আগে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পচা গোবর সার দিতে হয়। এ প্রজাতির পিয়াজে কুশি উৎপাদনের প্রবণতা বেশি থাকায় সাধারণ বাল্ব পিয়াজের তুলনায় রোপণ দূরত্ব বেশি দিতে হয়। এর চারা বা  কুশি ২০ সেমি. x ১৫ সেমি. অথবা ২০ সেমি. x ২০ সেমি. দূরত্ব বজায় রেখে রোপণ করা হয়। চারা একটু গভীরে লাগানো ভালো।

 

সার প্রয়োগ
জমির উর্বরতার ওপর ভিত্তি করে সারের পরিমাণ নিরূপণ করতে হয়। পাতা পিয়াজ উৎপাদনের জন্য জমিতে পচা গোবর সার ৪০০০-৫০০০, ইউরিয়া ১৫০-২০০, টিএসপি ১৫০-২০০, এমওপি ১০০-২৫০ এবং জিপসাম ১০০-১২০ কেজি/হেক্টর প্রয়োগ করতে হয়। জমি চাষের আগে সম্পূর্ণ পচা গোবর সার এবং শেষ চাষের সময় সম্পূর্ণ টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ও এক-তৃতীয়াংশ ইউরিয়া সার সমানভাবে ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। অবশিষ্ট দুই-তৃতীয়াংশ ইউরিয়া সার সমান দুইভাগ করে চারা রোপণের ৩০ ও ৬০ দিন পর উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের পর প্রয়োজন হলে পানি সেচ দিতে হবে।

 

রোগবালাই দমন
পাতা পিয়াজ পার্পল বøচ ও অন্যান্য বøাইট রোগের প্রতি প্রতিরোধী। তবে কোন রোগ দেখা দিলে রিডোমিল গোল্ড/ডাইথেন এম-৪৫/ রোভরাল এর যে কোনো একটি বা একাধিক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ২-৩ বার ১৫ দিন পরপর স্প্রে করা যেতে পারে। থ্রিপস ও কাটুই পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। এ সমস্ত পোকা দমনের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রয়োগ করা যেতে পারে। থ্রিপস দমনের জন্য এডমায়ার বা টিডো (১ মিলি/লিটার) ১৫ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে। তাছাড়া রোগবালাই ও পোকামাকড় দমনের জন্য আগাছা পরিষ্কার, আবর্জনা আগুনে পোড়া, শস্যাবর্তন ইত্যাদি সমন্বিত ব্যবস্থা করা উত্তম।

 

ফসল সংগ্রহ ও ফলন
পাতা পিয়াজ সংগ্রহকালীন সময় ইহার মাটির উপরের সম্পূর্ণ অংশ সবুজ ও সতেজ থাকতে হবে। চারা রোপণের দুই মাস পরেই প্রথমে পাতা সংগ্রহ করা যায়। ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল মাসে বীজ বপন করলে নভেম্বর পর্যন্ত গাছ থেকে গড়ে ৩-৪ বার পাতা খাওয়ার জন্য সংগ্রহ করা যায় অথবা যেকোন সময় সম্পূর্ণ গাছ উঠিয়ে খাওয়া যায়। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বীজ বপন করলে সেখান থেকে পাতা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। কারণ ডিসেম্বর থেকে ফুল আসা শুরু হয়। প্রথমে সংগ্রহের ২০-২৫ দিন পরপর পাতা সংগ্রহ করা যায়। গাছটি তুলে মূল এবং হলুদ পাতা  কেটে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়। ছোট ছোট আটি বেঁধে বাজারে বিক্রি করা যায়। প্রতি হেক্টর জমিতে ৭.৫-৮.৫ টন পাতা এবং সাদা অংশসহ ১২-১৫ টন ফলন পাওয়া যায়।

 

বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ
ফেব্রæয়ারি থেকে নভেম্বর মাসের যখনই বীজ বপন করা হোক না কেন মূল জমিতে রোপণের পর ডিসেম্বর মাসে পাতা পিয়াজের ফুল আসা শুরু হয়। ইহা পরপরাগায়িত ফসল। তাই জাতের বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য একটি জাতের মাঠ থেকে অন্য জাতের মাঠের দূরত্ব কমপক্ষে ১০০০ মিটার বজায় রাখতে হবে। সকল আম্বেলের (কদম) বীজ একসাথে পরিপক্ব হয় না। তাই কয়েক দিন পরপর পরিপক্ব আম্বেল সংগ্রহ করা হয়। একটি আম্বেলের মধ্যে শতকরা  ১০-১৫টি ফল ফেটে কালো বীজ দেখা গেলে আম্বেলটি কেটে বা ভেঙে সংগ্রহ করতে হবে। মাঠে সমস্ত আম্বেল সংগ্রহ করতে ৪-৫ দিন সময় লাগতে পারে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, সামান্য দেরিতে বীজ সংগ্রহ করলে আম্বেল থেকে সমস্ত বীজ ঝড়ে মাঠিতে পড়ে যায়। পাতা পিয়াজের বীজ সধারণত ফেব্রæয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। বীজ আম্বেল সংগ্রহ করার পর রোদে শুকিয়ে হালকা লাঠি দ্বারা পিটিয়ে বীজ বের করা হয়। পরে বীজ রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে ছিদ্রবিহীন পলিথিন বা টিনের পাত্রে সংরক্ষণ করা উত্তম। হেক্টর প্রতি ৮০০-৯০০ কেজি বীজ উৎপাদন হয়ে থাকে।

 

এ দেশে বাল্ব পিয়াজের যথেষ্ট ঘাটতি থাকার কারণে পিয়াজের সারাবছর চাহিদা মিটানোর লক্ষ্যে বসতভিটাসহ মাঠপর্যায়ে সারাবছর (Year-round) এ জাতের চাষ করা সম্ভব। এ ছাড়াও পাতা পিয়াজ বাসাবাড়ির ছাদসহ বিভিন্ন স্থানে ও টবেও চাষ করা যায়। আশা করা হচ্ছে এ জাতের পাতা পিয়াজ চাষের মাধ্যমে একদিকে সাধারণ বাল্ব পিয়াজের পরিবর্তেও এটি ব্যবহার করা যাবে। পাতা পিয়াজ তরকারিতে ব্যবহার করলে সাধারণ পিয়াজ ব্যবহারের কোনো প্রয়োজনই হয় না। অন্য দিকে সাধারণ বাল্ব পিয়াজের সাথে সংকরায়নের মাধ্যমেও রোগমুক্ত উন্নত জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে। যেহেতু সহজেই সারাবছর বারি পাতা পিয়াজ-১ চাষ করা সম্ভব সেহেতু পিয়াজের বিকল্প হিসেবে এর গুরুত্ব অপরিসীম। বিধায় বাংলাদেশে পিয়াজের ঘাটতি মিটাতে পাতা পিয়াজ চাষের কোনো বিকল্প নেই। এক হেক্টর জমিতে পাতা পিয়াজ উৎপাদন খরচ হয় ৮৫,০০০-৯০,০০০ টাকা এবং খরচ বাদে ১,৫০,০০০-২,০০,০০০ টাকা আয় করা সম্ভব।
 ১ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা,  মোবাইল : ০১৭১১৫৭৩৩৬১, ই-মেইল : khanalauddirsrsc@gmail.com,  ২বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মসলা গবেষণা উপকেন্দ্র, বিএআরআই, ফরিদপুর, মোবাইল : ০১৭২৩৮৭৯৪৫৩৮,  ই-মেইল : musfiqur bari@gmail.com

 

বিস্তারিত
লবণাক্ত এলাকায় ভুট্টা চাষ : ডিবলিং ও চারা রোপণ প্রযুক্তি

কৃষিবিদ শচীন্দ্রনাথ বিশ্বাস১ কৃষিবিদ অমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস২

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ জমি বিভিন্ন মাত্রায় লবণাক্ততায় আক্রান্ত । এই লবণাক্ত এলাকা বর্ষাকালে শুধুমাত্র আমন ধানের উৎপাদন ছাড়া সারা বছর পতিত থাকে, কারণ এলাকায় জমিতে জোঁ আসে ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে, ফলে সেখানে বোরো ধান চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না এবং শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানির স্বল্পতার জন্য চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না। এই পতিত জমিতে বিনা চাষে ডিবলিং এবং চারা রোপণ পদ্ধতিতে ভুট্টা চাষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ফসলের  নিবিড়তা ব্যাপকভাবে  বৃদ্ধি করা সম্ভব। ডিবলিং পদ্ধতিতে নভেম্বর মাসে জমির অপেক্ষাকৃত উঁচু অংশে জমির উপরিভাগ হতে পানি সরে  যাওয়ার পর বিনা চাষে নাড়ার মধ্যে বা নাড়া কেটে নির্দিষ্ট দূরত্বে বীজ পুঁতে দেয়া হয় এবং রোপণ পদ্ধতিতে অন্যত্র  বীজতলায় চারা তৈরি করে নিয়ে  ২০-২৫ দিন বয়সের চারা অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে রোপণ করে দেয়া হয়।


লবণাক্ততা দক্ষিণ বঙ্গের জন্য একটি মারাত্মক সমস্যা, লবণাক্ততা শস্য উৎপাদনের প্রতিক‚ল পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং  এর ফলে সারা বছর গুটি কয়েক ফসল উৎপাদন করা হয়। বিশেষ করে রবি মৌসুমে কৃষি জমি পতিত থাকে লবণাক্ততার জন্য। শুষ্ক মৌসুমে যদি ভুট্টা চাষ করা যায় তবে কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং আমাদের কৃষিতে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে। ভুট্টা একটি অধিক ফলনশীল দানাশস্য। ভুট্টা  Gramineae  গোত্রের ফসল যার বৈজ্ঞানিক নাম তবধ সধুং. ভুট্টার আদি নিবাস মেক্সিকো। ভুট্টার ফল মঞ্জরিকে মোচা বলে। মোচার ভেতরে দানা সৃষ্টি হয়। এই দানা ক্যারিওপসিস জাতীয় ফল, এতে ফলত্বক ও বীজত্বক একসাথে মিশে থাকে তাই ফল ও বীজ আলাদা করে চেনা যায় না। ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমাণ বেশি। ভুট্টার বাজারমূল্যও অনেক বেশি। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভুট্টা একটি সম্ভাবনাময় ফসল বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে যেখানে লবণাক্ততার জন্য চাষিরা ধান ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না।


ডিবলিং ও রোপণ পদ্ধতির গুরুত্ব
ডিবলিং/ চারা রোপণ পদ্ধতি এর প্রধান সুবিধা এটি মাটির ক্ষয় কমাতে সাহায্য করে। এ পদ্ধতিতে সুবিধা হলো সাধারণভাবে চাষ দিয়ে জমি তৈরি করে ভুট্টা চাষের অন্তত ১-১/২ মাস আগেই জমিতে বীজ বপন/রোপণ করা সম্ভব হয়, যার ফলে জমিতে লবণাক্ততা বাড়ার এবং ঝড় বৃষ্টি আসার আগেই ফসল তুলে নেয়া সম্ভব হয়। এ পদ্ধতিতে  চাষাবাদের ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমের পতিত জমিতে অতিরিক্ত একটি ফসল চাষ করে দেশে ভুট্টার আবাদ বাড়ানো  তথা ফসলের নিবিড়তা বাড়ানোর উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তুলনামূলক কম বীজ প্রয়োজন এবং দ্রুত অঙ্কুরোদগমে সাহায্য করে। সঠিক ও একই রকম দূরত্ব বজায় রেখে রোপণ করলে প্রত্যাশিত পরিমাণে ভুট্টার ফলন পাওয়া সম্ভব। কালবৈশাখীর প্রভাব থেকে ফসলকে রক্ষা করে ঘরে তোলার জন্য ডিবলিং/রোপণ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ডিবলি এবং চারা রোপণ পদ্ধতির মাধ্যমে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ার আগে ফসল পাওয়া সম্ভব ।


অর্থনৈতিক অবদান
ভুট্টা একমাত্র উচ্চ উৎপাদনশীল ফসল যার বহুমুখী ব্যবহার আছে। বর্তমানে ভুট্টা উৎপাদন ধান থেকে অনেক বেশি লাভজনক। তুলনামূলক কম খরচে ভুট্টা থেকে আয় বেশি করা যায় যা কৃষকবান্ধব। ভুট্টা গো-খাদ্য, মাছের খাদ্য, পোলট্রি ফিড এবং সর্বোপরি মানুষের খাবার হিসেবে সর্বত্র ব্যবহার করা হচ্ছে।


উপযোগী পরিবেশ : ভুট্টার আদি নিবাস মেক্সিকো হলেও এটি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মে, ভুট্টা মূলত ২১ ডিগ্রি-২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভালো হয়ে থাকে যদিও ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। ভুট্টা চাষের জন্য ৫০ মিলিমিটার থেকে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন।
জীবনকাল ১৩০ থেকে ১৫০ দিন হয়ে থাকে।

 

মাটি : বেলে-দো-আঁশ ও দো-আঁশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। তবে এঁটেল দো-আঁশ ও এঁটেল মাটিতেও ভুট্টা চাষ করা সম্ভব। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জমিতে পানি জমে না থাকে। যে মাটিতে অধিক সময় ‘জোঁ’ রাখা সম্ভব সেখানে ভুট্টা চাষ তুলনামূলক ভালো হয়।


বীজ বপনের সময়
বাংলাদেশে দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকায় মধ্য কার্তিক-মধ্য মাঘ (নভেম্বর-জানুয়ারি) পর্যন্ত বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। বীজ ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে জমিতে বপন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। শুভ্রা, বর্ণালী ও মোহর জাতের ভুট্টার জন্য হেক্টরপ্রতি ২৫-৩০ কেজি, হাইব্রিড ভুট্টার বীজ হেক্টরপ্রতি ২০-২২ কেজি এবং খইভুট্টা জাতের জন্য ১৫-২০ কেজি হারে ভুট্টার বীজ বুনতে হয়। বীজ সারিতে বুনতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৬০ সেমি.। সারিতে ২৫ সেমি. দূরত্বে ১টি অথবা ৫০ সেমি. দূরত্বে ২টি গাছ রাখতে হবে।

 

সারের পরিমাণ ও সার প্রয়োগ পদ্ধতি : সংশ্লিষ্ট জমির মাটি পরীক্ষা করে মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে সারের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। তবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক হাইব্রিড ভুট্টা চাষে বিভিন্ন প্রকার সারের

সারের নাম পরিমাণ/হেক্টর
ইউরিয়া ৪০০-৫০০ কেজি
ডিএপি ২৪০-২৬০ কেজি
এমওপি ১৮০-২২০ কেজি
জিপসাম ২৪০-২৬০ কেজি
জিংক সালফেট ১০-১৫ কেজি
বরিক এসিড (প্রয়োজন বোধে) ৫-৭ কেজি
গোবর ৪-৬ টন

নির্ধারিত সাধারণ মাত্রা সারণি-১ দেওয়া হলো।
ডিবলিং/চারা রোপণের ২-৩ দিন পূর্বে নির্ধারিত ইউরিয়ার এক তৃতীয়াংশ, টিএসপি এর অর্ধাংশ এবং অন্যান্য সারের সবটুকু জমিতে ছিটিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সারের এক-তৃতীয়াংশ ডিবলিং-এর ক্ষেত্রে ৩০ দিন পর এবং চারা রোপণের ক্ষেত্রে ১৫ দিন পর উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সারের অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ এবং ফসফরাসের অর্ধাংশ ডিবলিংয়ের ৩০ দিন এবং চারা রোপণের ১৫ দিন পর হতে ১৫ দিন পরপর ৬ কিস্তিতে ডিএপি সার গুলিয়ে গোড়ায় প্রয়োগ করতে হবে।
পরবর্তী পরিচর্যা
উচ্চফলনশীল জাতের ভুট্টার আশানুরূপ ফলন পেতে হলে রবি মৌসুমে সেচ প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। উদ্ভাবিত জাতে ২টি সেচ দেয়া যায়। প্রথম সেচ বীজ বপনের ৪০-৫০ দিনের মধ্যে এবং দ্বিতীয় সেচ বীজ বপনের ৭০-৮০ দিনের মধ্যে।
গাছের বয়স এক মাস না হওয়া পর্যন্ত জমি অবশ্যই আগাছামুক্ত রাখতে হবে। ডিবলিংয়ের পর চারা গজানোর ৩০ দিনের মধ্যে  এবং চারা রোপণের ১৫ দিন পর জমি থেকে অতিরিক্ত চারা তুলে ফেলতে হবে। চারার বয়স ৩০-৩৫ দিন হলে দুই সারির মাঝের মাটি কুপিয়ে ভুট্টা গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হবে।
রোগবালাই দমন
সুস্থ, সবল ও ক্ষতমুক্ত বীজ এবং ভুট্টার বীজ পচা রোগ প্রতিরোধি জাত ব্যবহার করতে হবে। থিরাম বা ভিটাভেক্স (০.২৫%) প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করলে ভুট্টার বীজ পচা রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়। ভুট্টার কাÐ পচা রোগ দমনের জন্য ছত্রাকনাশক ভিটাভেক্স-২০০ দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
ভুট্টা সংগ্রহ
দানার জন্য ভুট্টা সংগ্রহের ক্ষেত্রে মোচা চকচকে খড়ের রং ধারণ করলে এবং পাতা কিছুটা হলদে হলে সংগ্রহের ক্ষেত্রে উপযুক্ত হয়। এ অবস্থায় মোচা থেকে ছাড়ানো বীজের গোড়ায় কালো দাগ দেখা যাবে। ভুট্টা গাছের মোচা ৭৫-৮০% পরিপক্ব হলে ভুট্টা সংগ্রহ করা যাবে।
ডিবলিং পদ্ধতি ছাড়া চারা রোপণের মাধ্যমেও আমরা ভুট্টা চাষ করতে পারি। এজন্য প্রথমে বীজতলা তৈরি করে বীজ ফেলতে হবে এবং নির্দিষ্ট বয়সি চারা নিয়ে জমিতে রোপণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে  ১৫ দিন, ২০ দিন অথবা ২৫ দিন বয়সি চারা রোপণ করা যায়। চারা রোপণের মাধ্যমে ভুট্টা চাষ করলে নানামুখী সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার আগেই কাক্সিক্ষত ফসল উত্তোলন সম্ভব।

১প্রকল্প পরিচালক, পিরোজপুর-গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প, এসআরডিআই, খুলনা, মোবাইল : ০১৭১৮-৬৯১৬৬৬,  
 ই-মেইল :sachinb_srdi@yahoo.com, ২ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্র, বটিয়াঘাটা, খুলনা

বিস্তারিত
শিম ফসলের বালাই ব্যবস্থাপনার আধুনিক প্রযুক্তি

ড. মোঃ জুলফিকার হায়দার প্রধান
শিম বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ সবজি জাতীয় ফসল। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, আঁশ, ভিটামিন এবং মিনারেল রয়েছে। বসতবাড়ি থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে দেশের সর্বত্র শিম চাষ করা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে শিমের আওতায় জমির পরিমাণ ২০৮৭২ হেক্টর এবং মোট উৎপাদন  ১৪৪০৫০ মেট্রিক টন (কৃষি পরিসংখ্যান বর্ষগ্রন্থ ২০১৯)। বিভিন্ন প্রকার পোকামাকড় এবং রোগ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শিম উৎপাদনে প্রভাব বিস্তার করে এবং এদের আক্রমণে ফসলের উল্লেখযোগ্য অংশ নষ্ট হয়ে যায়। এমতাবস্থায় বিভিন্ন পোকামাকড় ও রোগ হতে ফসল রক্ষার জন্য এদের আক্রমণের ধরন এবং ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা অত্যন্ত জরুরি। নিম্নে শিম ফসলে প্রধান প্রধান পোকা মাকড় ও রোগের আক্রমণ এবং ব্যবস্থাপনা স¤পর্কে আলোচনা করা হলো।

 

পোকামাকড়
ফল ছিদ্রকারী পোকা (
Pod borer) : পোকার লার্ভা ফুল, ফুলের কুঁড়ি এবং ফল ছিদ্র করে ভেতরের অংশ খায়। এদের আক্রমণে প্রচুর পরিমাণে ফল নষ্ট হয় এবং বাজারে বিক্রির অনুপযোগী হয়ে যায়। একটি লার্ভা একাধিক ফুল নষ্ট করতে পারে। আক্রান্ত ফলে পোকার খাওয়ার চিহ্ন ও মল দেখা যায়। অত্যধিক আক্রমণে ফল ঝরে পড়ে এবং ফলন কমে যায়।
 

ব্যবস্থাপনা
পোকার লার্ভা প্রথমে ফুলের ভেতরে অবস্থান করে। আক্রান্ত ফুল ও ফল পোকার লার্ভাসহ সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে। জমিতে উপকারী পোকা ব্রাকন হেবিটর অবমুক্ত করতে হবে। এক হেক্টর জমির জন্য প্রতি সপ্তাহে ১ ব্যাংকার ব্রাকন (৮০০- ১০০০টি পোকা) অবমুক্ত করতে হবে। জৈব বালাইনাশক (এমএনপিভি @ ০.২ গ্রাম/লিটার) প্রয়োগ করতে হবে। অত্যধিক আক্রান্ত এলাকায় আক্রমণ দেখার সঙ্গে সঙ্গে স্পাইনোসেড (ট্রেসার ৪৫ এসসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৪০ মিলি অথবা সাকসেস ১.২ মিলি) স্প্রে করতে হবে।


জাবপোকা (Aphid) : পূর্ণ বয়স্ক পোকা ও নিম্ফ উভয়েই গাছের নতুন ডগা, কচি পাতা, ফুলের কুঁড়ি, ফুল ও ফল থেকে রস চুষে খায়। কচি গাছে পোকার সংখ্যা বেশি হলে গাছ মারা যেতে পারে। বয়স্ক গাছে এদের আক্রমণে পাতা কুচড়ে যায়, হলদে রঙ ধারণ করে, গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। গাছে ফুল ও ফল অবস্থায় আক্রমণ হলে ফুলের কুঁড়ি ও কচি ফল ঝরে পড়ে, কচি ডগা মরে যায়। এরা গাছে মোজাইক ভাইরাস রোগ ছড়ায়।
 

ব্যবস্থাপনা
পোকাগুলো প্রাথমিক অবস্থায় ডগা এবং পাতায় দলবদ্ধভাবে অবস্থান করে। এই অবস্থায় এদেরকে হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলতে হবে। নিম বীজের দ্রবণ (১ কেজি অর্ধভাঙা নিমবীজ ২০ লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে) স্প্রে করতে হবে। অত্যধিক আক্রমণে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি অথবা ল্যাম্বডা সাইহেলোথ্রিন (সাইক্লোন ২.৫ ইসি বা ক্যারাটে ২.৫ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।


পাতা সুরঙ্গকারী পোকা (Leaf miner) : সদ্য জাত লার্ভা পাতা ছিদ্র করে ভেতরে ঢুকে এবং পাতার দুই এপিডার্মাল স্তরের মাঝে সবুজ অংশ আঁকাবাঁকা সুড়ঙ্গ করে খায়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে পাতার সমস্ত অংশে সুড়ঙ্গ দেখা যায় এবং দূর থেকে সমস্ত ক্ষেত পুড়ে যাওয়ার মতো মনে হয়। পাতার সবুজ অংশ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গাছে খাদ্য তৈরি ব্যাহত হয় এবং ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়। লার্ভার খাওয়া অংশটুকু স্বচ্ছ পর্দার মতো দেখায় এবং আক্রান্ত পাতা শুকিয়ে যায়।
 

ব্যবস্থাপনা
বিভিন্ন অপোষক ফসলের সহিত শস্যপর্যায় অবলম্বন করতে হবে। ফসলের জমি এবং আশপাশ আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। পূর্ণ বয়স্ক পোকা ধরার জন্য আঠালো হলুদ ফাঁদ (
Yellow sticky trap) প্রয়োগ করতে হবে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে  
 

এসিফেট (এসাটাফ ৭৫ এসপি, টিডফেট ৭৫ এসপি, ফরচুনেট ৭৫ এসপি, হেসিফেট ৭৫ এসপি) প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। তবে কীটনাশক প্রয়োগের ১৫ দিনের মধ্যে শিম উত্তোলন করা যাবে না।
বিছাপোকা (
Hairy Caterpillar): পোকার লার্ভা গাছের পাতায় আক্রমণ করে ফসলের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে। লার্ভাগুলো প্রাথমিক অবস্থায় দলবদ্ধভাবে পাতার নিচের অংশ থেকে খাওয়া শুরু করে এবং সমস্ত গাছ ঝাঝরা করে দেয়। অধিক আক্রমণে গাছ পাতাশূন্য হয়ে পড়ে, গাছের বৃদ্ধি ও ফলন কমে যায়।
 

ব্যবস্থাপনা
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ ও আগাছা দমন করতে হবে। আলোর ফাঁদ দিয়ে মথকে আকৃষ্ট করে ধরে মারা যায়। কীড়া প্রাথমিক অবস্থায় পাতায় বা গাছে দলবদ্ধভাবে অবস্থান করে। এ সময় পোকাসহ পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে ল্যাম্বডা সাইহেলোথ্রিন (ক্যারাটে ২.৫ ইসি বা রিভা ২.৫ ইসি বা জুবাস ২.৫ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।

 

ক্ষুদ্র লালমাকড় (Red Mite) : এরা পাতা থেকে রস চুষে খায়। ফলে পাতার উপরের অংশে ফ্যাকাশে রং ধারণ করে এবং গাছের খাদ্য তৈরি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। অত্যধিক আক্রান্ত পাতা লালচে হয়ে যায়। গাছের বৃদ্ধি, ফুল ও ফল ধারণ বিঘ্ন হয় এবং ফলন কমে যায়।
 

ব্যবস্থাপনা
নিম বীজের দ্রবণ (১ কেজি অর্ধ ভাঙ্গা নিম বীজ ২০ লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে) স্প্রে করতে হবে। এবামেকটিন (ভার্টিমেক ১.৮ ইসি বা সানমেকটিন ১.৮ ইসি বা এমবুশ ১.৮ ইসি বা লাকাদ ১.৮ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ১.২ মিলি হারে অত্যধিক আক্রমণে মাকড়নাশক স্প্রে করতে হবে।

 

রোগ
অ্যানথ্রাকনোজ বা ফল পচা (
Anthracnose) : পাতায় বৃত্তাকার বাদামি দাগ ও তার চারপাশে হলুদাভ বলয় দেখা যায়। ফলে প্রথমে ছোট গোলাকার গভীর কালো দাগ পড়ে এবং দাগ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। দাগের কিনারা বরাবর চারপাশে কালো রঙের বেস্টনি দেখা যায়। পরবর্তীতে ফলে রোগের আক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে, আক্রান্ত ফলে গভীর কালো দাগ দেখা যায়। ফল খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায় এবং বাজারমূল্য কমে যায়।
ব্যবস্থাপনা
রোগ মুক্ত গাছ থেকে ভালো বীজ সংগ্রহ করে লাগাতে হবে। বপনের পূর্বে বীজ প্রভেক্স (২.৫ গ্রাম/কেজি) দিয়ে শোধন করে লাগাতে হবে। অতিরিক্ত আক্রমণে ডায়থেন এম-৪৫ (২ গ্রাম/লিটার) অথবা টিল্ট (০.৫ মিলি/লিটার) স্প্রে করতে হবে।

 

মোজাইক (Mosaic)) : এ রোগের ফলে পাতায় হলুদ-সবুজ ছোপ ছোপ মোজাইকের মতো দাগ দেখা যায়। আক্রান্ত পাতা ছোট, বিবর্ণ, বিকৃত হয়। শিরা ও উপশিরা হলুদ হয়ে যায়। লতার পর্বমধ্য খাটো হয়ে আসে। ফলে গাছ খাটো হয়ে যায়। গাছে সাধারণত ফল ধরে না, ফুল কম আসে, কচি ফল খসখসে, ছোট ও দাগ যুক্ত হয়।
ব্যবস্থাপনা
ক্ষেত আগাছামুক্ত রাখতে হবে। আক্রান্ত গাছ দেখলেই প্রাথমিকভাবে তা তুলে নষ্ট করে ফেলতে হবে। ক্ষেতে বাহক পোকার উপস্থিতি দেখা দিলে জাব পোকার অনুমোদিত  কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছ থেকে কোন বীজ সংগ্রহ করা যাবে না।
সাদা ছত্রাক (
Sclerotinia blight) : প্রাথমিক অবস্থায় কাÐে পানি ভেজা সাদা তুলার মতো ছত্রাকের উপস্থিতি দেখা যায়। পরবর্তীতে কাÐের উপরের দিকে অগ্রসর হয়ে পাতা, ফুল ও ফলে বিস্তার লাভ করে। আক্রান্ত অংশ সাদা ধূসর হতে বাদামি রঙের হয়ে মারা যায়।
 

ব্যবস্থাপনা
রোগ মুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। বপনের পূর্বে বীজ প্রভেক্স (২.৫ গ্রাম/কেজি) দিয়ে শোধন করে লাগাতে হবে। আক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় প্রতি লিটার পানিতে রোভরাল (২ গ্রাম/লিটার) অথবা ফলিকুর বা কন্টাফ (২ মিলি/লিটার) স্প্রে করতে হবে।
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (কীটতত্ত¡), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, সেউজগাড়ী, বগুড়া, মোবা : ০১৭১৬০৭১৭৬৪
ই-মেইল :Zulfikarhaider@yahoo.com

বিস্তারিত
বামিস (BAMIS) পোর্টাল : স্মার্ট কৃষির নব ডাইমেনশন

কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
মাঠে সোনালি পাকা ধান, মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠেছে চারদিক, কৃষকের চোখে মুখে আনন্দের শিহরণ কিন্তু হঠাৎ ঈষান কোণে কালো মেঘ, নিমিষেই হাসিমাখা মুখ অজানা শংকায় মলীন হয়ে যাবে। আবহাওয়ার এই লুকোচুরি খেলায় হাজারো কৃষকের স্বপ্ন প্রতিনিয়ত ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। ঘাম ঝরানো ফসল ঘরে তুলতে না পারায় বাড়ছে দেনার বোঝা; কর্জ করে কিনা সার, বীজ, বালাইনাশকের মূল্য পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় মহাজনদের কাছে অপমাণিত হওয়া, চক্ষুলজ্জার ভয়ে লুকিয়ে থাকা। ভেঙে যায় মেয়েকে লাল টুকটুকে শাড়ি পরিয়ে শ্বশুর বাড়ি পাঠানোর স্বপ্ন, ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে লাটাই কিনে রঙিন আকাশে পেখম মেলার আহ্লাদ কিংবা অসুস্থ মায়ের দু ফোঁটা ওষুধ কেনার অভিলাষ।

 

আবহাওয়া পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব এভাবেই কৃষি ও কৃষকের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আবহাওয়া, কৃষি, কৃষক যেন এক ত্রিমাত্রিক সেতুবন্ধন। এই তিনের সমন্বয়ে কৃষি হয়ে উঠতে পারে সমৃদ্ধ, কৃষকের ফিরে আসতে পারে প্রাণোচ্ছলতা।


সদা পরিবর্তনশীল এই আবহাওয়ার পূর্বাভাস, যদি কৃষকদের কাছে অতি সহজে সময়মতো পৌঁছানো যায়, তাহলে বাংলার  কৃষকের গোলা আবার ধানে ভরে উঠবে, বসবে ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসবের পসরা। কৃষকের এই সুখানুভূতি দেখার জন্যই বাংলাদেশের সম্প্ররসারণ বিভাগে নিয়োজিত কৃষি বিশেষজ্ঞগণ স্মার্ট কৃষি প্রবর্তনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। আর সেই স্মার্ট কৃষির নব ডাইমেনশন হচ্ছে কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রদানের মাধ্যম বামিস পোর্টাল (BAMIS)।
 

বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত দেশ। জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম সারিতে। লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, ল্যাইলা কনার্স পিটারসন, চাক ক্যাসেলবেরি এবং ব্রায়ান গার্বারের তৈরি করা ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের পরিবেশভিত্তিক তথ্যচিত্র (Documentary film) “দ্য ইলেভেন্থ আওয়ার”-এ (The 11th Hour) দেখানো হয় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিজনিত কারণে বাংলাদেশে প্রায় ৬৩০ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


দুর্যোগপূর্ণ দেশ হওয়া সত্তে¡ও আবহাওয়া ও জলবায়ু, নদ-নদীর পানির অবস্থা, আগাম সতর্কীকরণ সম্পর্কিত তথ্যাদি কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এ দেশ অনেক পিছিয়ে আছে। এ বিষয়ে কারিগরি দিক থেকে উন্নত মানের এবং নির্ভরযোগ্য কৃষি আবহাওয়া বিষয়ক তথ্য  কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। টেকসই কৃষি উৎপাদনের জন্য কৃষি আবহাওয়া বিষয়ক তথ্য কৃষকদের কাছে তাদের উপযোগী ভাষায় সরবরাহ করা একান্ত প্রয়োজন। উক্ত তথ্যাদি কৃষি উৎপাদনে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের কাছে কৃষকের ভাষায় আবহাওয়ার পূর্বাভাস পৌঁছিয়ে দেয়ার জন্য নিয়েছে নানা পদক্ষেপ। এ রকমই একটা পদক্ষেপ “বামিস পোর্টাল” ওয়েব সাইট। কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প ((Agro-Meteorological Information Systems Development Project)” এর আওতায় এই ওয়েব পোর্টাল তৈরি করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক ঝাঁক মেধাবী কৃষি স¤প্রসারণবিদ। আবহাওয়াবিদ ও কৃষিবিদদের সমন্বয়ে কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস প্রদান করা হয় এই ওয়েব পোর্টাল থেকে। প্রান্তিক পর্যায়ে পূর্বাভাস প্রদান করার জন্য ইউনিয়নভিত্তিক স্থাপন করা হয়েছে ৪০৫১টি কৃষি আবহাওয়া ডিসপ্লে বোর্ড ও অটোমেটিক রেইনগজ মিটার, ৪৮৭টি উপজেলায় কিওস্ক মেসিন, ৩০০০০ কৃষক প্রতিনিধির কাছে এডভাইজরি পূর্বাভাস। ইতোমধ্যেই বামিস পোর্টাল থেকে তথ্য নিয়ে বিভিন্ন উপজেলা কৃষি অফিসের অফিসিয়াল ফেসবুক আইডিও মেসেঞ্জার গ্রুপ থেকে দেওয়া হচ্ছে সপ্তাহভিত্তিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস, যা কৃষক ও সচেতনমহলে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। বøক পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসের ব্যাপারে বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়েছে বহুগুণ।


আসুন জেনে নিই বামিস পোর্টাল সম্পর্কে। যে কেউ গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে ইঅগওঝ লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন এ্যাপস। ইনস্টল করে পেয়ে যাবেন কাক্সিক্ষত আবহাওয়ার পূর্বাভাস।
বাংলাদেশ কৃষি আবহাওয়া তথ্য পোর্টাল (ইঅগওঝ) কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প (কম্পোনেন্ট সি: বিডবাব্লিউসিএসআরপি) এর আওতায় তৈরি একটি ডায়নামিক ওয়েব পোর্টাল যেখানে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রাপ্ত নদ-নদীর তথ্য উপাত্ত সন্নিবেশিত হয়। তথ্য-উপাত্ত সমূহ একটি কারিগরি কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই এবং অনুবাদ করে কৃষকের কাছে তাদের উপযোগী করে সরবরাহ করা হয়। এই পোর্টাল অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে সংযুক্ত রয়েছে। এ ছাড়াও এর মাধ্যমে কৃষি সম্প্ররসারণ অধিপ্তরের কর্মকর্তা থেকে কৃষক পর্যায় পর্যন্ত সংযোগ রক্ষা করা হয়।


বাংলাদেশ কৃষি আবহাওয়া তথ্য পোর্টালের আওতায় আরও রয়েছে: ১) সারা বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর তথ্য।
২) হালনাগাদকৃত কৃষি আবহাওয়া বুলেটিন যা সপ্তাহে দুই দিন ৬৪ জেলার জন্য এবং সপ্তাহে একদিন জাতীয় পর্যায়ের জন্য প্রস্তুত করা হয়। ৩) কৃষি আবহাওয়া সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য যেমন- ফসলের আবহাওয়া সংবেদনশীলতা, আবহাওয়ার সাথে রোগ-পোকামাকড় আক্রমণের সম্পর্ক ও নিয়ন্ত্রণের উপায়, ফসল আবহাওয়া পঞ্জিকা প্রভৃতি। ৪) কৃষি আবহাওয়ার তথ্য সেই সাথে ভূউপগ্রহ হতে প্রাপ্ত তথ্য, যা বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবহারকারীদের কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। ৫) কৃষি আবহাওয়া এবং নদ-নদীর তথ্য-উপাত্ত, পূর্বাভাসসহ কৃষকদের সমস্যাসমূহের সম্ভাব্য সমাধান কৃষকের কাছে তাদের উপযোগী করে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর এবং কৃষি তথ্য সার্ভিসের বিভিন্ন সম্প্রসারণ পদ্ধতির মাধ্যমে নিয়মিত সরবরাহ করা। ৬) চরম আবহাওয়ার তথ্য। ৭) গবাদিপশু, হাঁসমুরগি ও মাছের জন্য বিশেষ কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ ৮) এসএমএস এর মাধ্যমে কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস পাবার সহজলভ্যতা ৯) রয়েছে কৃষকদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার সুযোগসহ নানাবিধ বিষয়।


কোনো দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সত্যিই পড়ছে কি না, তা চারটি মানদণ্ডে বিবেচনা করা হয়। ১. জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ২. কোথায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি হচ্ছে ৩. সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা কোথায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ৪. ক্ষতিগ্রস্থ দেশটি ক্ষতি মোকাবেলায় বা অভিযোজনের জন্য এরই মধ্যে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে। (সূত্রঃ উইকিপিডিয়া) এই মানদণ্ড বিচারে বাংলাদেশের কৃষি রয়েছে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে।


বাংলাদেশে একাধারে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা সমস্যা, হিমালয়ের বরফ গলার কারণে নদীর দিক পরিবর্তন, বন্যা, ঝড়,বজ্রপাত, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি সবগুলো প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের কৃষির সম্ভাবনাকে করছে বাধাগ্রস্ত, ভেঙে দিচ্ছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। সেই জন্য ৪নং মানদÐের জন্য অভিযোজন কৌশলের অংশ হিসেবে প্রযুক্তির সমন্বয়ে এই বামিস পোর্টাল চালু করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, যা স্মার্ট কৃষি প্রবর্তনের নতুন এক মাইলফলক।
কৃষি স¤প্রসারণ অফিসার, পুঠিয়া, রাজশাহী, মোবাইল : ০১৭৬৭০০৭২৮০, ই-মেইল :  kamrulgepb13@gmail.com  

 

 

বিস্তারিত
দেশীয় আবহাওয়া উপযোগী মাংস উৎপাদনকারী মুরগির জাত

ড. নাথুরাম সরকার১ ড. মোঃ রাকিবুল হাসান২
সুস্থ-সবল, মেধাবি জাতি গঠনে প্রাণিজ আমিষের কোন বিকল্প নেই। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত হওয়ায় ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসেরও পরিবর্তন হয়েছে। তাই, প্রাণিজ আমিষের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দেশে মোট মাংসের চাহিদার শতকরা ৪০-৪৫ শতাংশ আসে পোলট্রি থেকে। প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে সরকারের   ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের জন্য দৈনিক ৩৫-৪০ হাজার মেট্রিক টন মুরগির মাংস উৎপাদন করা প্রয়োজন। বর্তমানে মুরগির মাংসের অর্ধেকের বেশি আসে বাণিজ্যিক ব্রয়লার থেকে যার পুরোটাই আমদানি নির্ভর। কিন্তু বৈশ্বিক আবহাওয়া ও জলবায়ুর ক্রমাগত পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব পোলট্রি শিল্পের উপর দৃশ্যমান। ফলে, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় দেশি আবহাওয়া উপযোগী অধিক মাংস উৎপাদনকারী মুরগির জাত উদ্ভাবন করা জরুরি। সেই বিবেচনায়, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পোলট্রি উৎপাদন গবেষণা বিভাগের বিজ্ঞানীবৃন্দ দেশীয় আবহাওয়া উপযোগী জার্মপ্লাজম ব্যবহার করে ধারাবাহিক সিলেকশন ও ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে সম্প্রতি একটি অধিক মাংস উৎপাদনকারী মুরগির জাত উদ্ভাবন করেছে। দেশীয় পরিবর্তনশীল আবহাওয়া উপযোগী মুরগির এই জাতটির নামকরণ করা হয়েছে “মাল্টি কালার টেবিল চিকেন (এমসিটিসি)”।

 

মুরগির বৈশিষ্ট্য
উদ্ভাবিত মাংসল জাতের এ মুরগিগুলো একদিন বয়সে হালকা হলুদ থেকে হলুদাভ, কালো বা ধূসর রঙের পালক দেখা যায় যা পরবর্তীতে দেশি মুরগির মতো মিশ্র রংয়ের (
Multi- colors) হয়ে থাকে। তবে, গাঢ় বাদামি, সোনালী, সাদা-কালো, সাদা-কালোর মিশ্রণ পালকবিশিষ্ট মুরগির উপস্থিতি লক্ষণীয়। এগুলোর ঝুঁটির রং গাঢ় লাল এবং একক (Single comb) ধরনের। চামড়ার রং সাদাটে (Off white) এবং গলার পালক স্বাভাবিকভাবে বিন্যস্ত। নতুন এ জাতের মুরগিগুলোর পায়ের নলার রং হালকা হলুদ বা কালো রংয়ের হয়ে থাকে।
 

ঘরের আকার
এমসিটিসি জাতের ১০০০টি মুরগি পালনের জন্য পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল করতে পারে এমন জায়গায় উত্তর-দক্ষিণমুখী করে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের দোচালা ঘর নির্মাণ করতে হবে। ঘরের দরজা সংলগ্ন কিছু অংশ আলাদাভাবে বেষ্টনী দিয়ে খাবার, জীবাণুনাশকসহ অন্যান্য উপকরণ রাখার জন্য ব্যবহার করতে হবে। মেঝে থেকে ১০ফুট উচ্চতার ঘরের চালা ৩-৪ ফুট বাড়তি রাখতে হবে যেন বৃষ্টির পানির ঝাঁপটা না লাগে। ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে ঘরের পর্দা দুই অংশে ভাগ করতে হবে; উপরের অংশটি প্রাথমিক বায়ু চলাচলের জন্য ব্যবহার করতে হবে, ঠাÐার সময় মুরগিকে সরাসরি বাতাসের হাত থেকে রক্ষা করতে নিচের অংশের অন্য পর্দাটি আবহাওয়া ও তাপমাত্রাভেদে উঠানামা করতে হবে।

 

খামার ব্যবস্থাপনা
এমসিটিসি জাতের মুরগি পালনে জায়গার পরিমাণ, ব্রæডিং তাপমাত্রা, আলো ও বায়ু ব্যবস্থাপনা অনান্য মুরগির মতোই। মুরগির ঘরে বিশুদ্ধ বাতাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা ত্রæটির কারণে ঘরের ভেতর আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও দূষিত বাতাসের পরিমাণ বেড়ে গেলে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তাই, এমসিটিসি মুরগির জন্য ঘরের ভেতরে সর্বদা পর্যাপ্ত অক্সিজেন (>১৯.৬০%), ন্যূনতম কার্বন-ডাই অক্সাইড (<৩০০০ পিপিএম), কার্বন-মনো অক্সাইড (<১০ পিপিএম), অ্যামোনিয়া (<১০  পিপিএম) এবং দূষিত পদার্থ (<৩.৪ মিলিগ্রাম/ঘনমিটার) নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এ ছাড়াও ঘরের ভেতরের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৪৫-৬৫% এর মধ্যে রাখতে হবে।

 

খাদ্য ব্যবস্থাপনা
সাধারণত, মুরগি পালনে মোট ব্যয়ের শতকরা ৬০-৭০ ভাগই খরচ হয় খাদ্য বাবদ। তাই খাদ্য অপচয় রোধে যথাসম্ভব সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে হবে। বাচ্চা উঠানোর কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত লিটারের উপর পেপার বিছিয়ে খাদ্য ছিটিয়ে দিতে হবে। ৩-৪ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত চিক ফিডারের এক-তৃতীয়াংশ পূর্ণ করে দিনে ৩-৪ বার খাবার দিতে হবে। পরবর্তী সময়ে বড় খাবার পাত্রে দিনে ৩-৪ খাবার দেওয়া যেতে পারে। খাবার পাত্রের সংখ্যা, উচ্চতা অবশ্যই মুরগির সংখ্যা ও বয়সের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এমসিটিসি মুরগি থেকে সর্বোত্তম ফলাফল পেতে সারণি-১ ও সারণি-২ মোতাবেক খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

 

পুষ্টি উপাদান এমসিটিসি স্টার্টার
(১-২১ দিন পর্যন্ত)
এমসিটিসি গ্রোয়ার
(২২-৩৫ দিন পর্যন্ত)
এমসিটিসি ফিনিসার
(৩৬ দিন-বিক্রয় পর্যন্ত)
খাদ্যের আর্দ্রতা,% (সর্বোচ্চ) ১১ ১১ ১১
ক্রুড প্রোটিন,% (সর্বনিম্ন) ২২ ২১ ১৯
বিপাকীয় শক্তি, কিলোক্যালরি/কেজি (সর্বনিম্ন) ৩০৫০ ৩১০০ ৩২০০
ক্রুড ফাইবার,% (সর্বোচ্চ) ৩.৫ ৩.৫
চর্বি,% (সর্বনিম্ন) ৪-৫ ৫-৬ ৬-৮
ক্যালসিয়াম,% (সর্বনিম্ন) ১.০৫ ০.৯৫
ফসফরাস,% (সর্বনিম্নœ) ০.৫০ ০.৪৬ ০.৪৩
লাইসিন,% (সর্বনিম্ন) ১.২৫ ১.২০ ১.০৭
মিথিওনিন,% (সর্বনিম্ন) ০.৫০ ০.৪৬ ০.৪৩
ভিটামিন, মিনারেল সর্বোৎকৃষ্ট পরিমাণ সর্বোৎকৃষ্ট পরিমাণ সর্বোৎকৃষ্ট পরিমাণ

 

উৎপাদন দক্ষতা
গবেষণা খামার ও মাঠ পর্যায়ের প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, আট সপ্তাহে এমসিটিসি মুরগির গড় দৈহিক ওজন ৯০০-১০০০ গ্রাম, মোট খাদ্য গ্রহণ ২২০০-২৪০০ গ্রাম/মুরগি ও গড় খাদ্য রূপান্তর হার ২.২০-২.৪০ এবং গড় মৃত্যুহার ১-১.৫%। এ জাতের ১০০০টি মুরগি পালনের জন্য  উত্তর-দক্ষিণমুখী করে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের দোচালা ঘর নির্মাণ করতে হবে। এমসিটিসি জাতের মুরগিগুলো মাংসের স্বাদ ও পালকের রং দেশি মুরগির ন্যায় মিশ্র বর্ণের হওয়ায় খামারিগণ এর বাজারমূল্যও বাজারে প্রচলিত সোনালী বা অন্যান্য ককরেল মুরগির তুলনায় বেশি পাচ্ছেন।

 

বয়স (সপ্তাহ)
 
গড় সাপ্তাহিক ওজন (গ্রাম/ মুরগি)

মোট খাদ্যগ্রহণ
(গ্রাম/ মুরগি/সপ্তাহ)

 

দৈনিক পানির গ্রহণের পরিমাণ

(মিলি/মুরগি/দিন)


খাদ্য রূপান্তর হার
৮০-৮৫ ৫০-৭০ ২০-২৫ ১.৩২-১.৩৫
১৩৫-১৫৫ ৯৫-১১০ ৩৫-৪৫ ১.৬৭-১.৭৫
২৪৬-২৬৫ ২০০-২২০ ৬৫-৭৫
 
১.৮০-২.০০
৩৬২-৩৮২ ২৫৫-২৭০ ৭৫-৯৫
 
২.২-২.৩০
৪৯৫-৫১৫ ৩২৫-৩৪০ ৯৫-১২০ ২.৪-২.৫৫
৬৩৫-৬৫২ ৩৮৫-৪০০ ১২০-১৪৫ ২.৭৫-২.৮২
৭৮০-৮১৫ ৪০১-৪৭৫ ১২৫-১৫০ ২.৭৬-২.৯১
৯৭৫-১০০০ ৫৪৫-৫৫০ ১৪০-১৭৫ ২.৭৯-২.৯৭
০-৮ সপ্তাহ ৯৭৫ গ্রাম-১.০ কেজি ২.২০-২.৪০ কেজি   ২.২২-২.৩৫

টিকাদান কর্মসূচি
এমসিটিসি জাতের মুরগিগুলোর মৃত্যুর হার খুবই কম। বিএলআরআই পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণায় সর্বোচ্চ ১.৫% মৃত্যুহার পাওয়া গেছে। এই জাতের মুরগিগুলো অধিক রোগ প্রতিরোধক্ষম এবং দেশীয় আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় সঠিক বায়োসিকিউরিটি বা জীব-নিরাপত্তা এবং প্রতিপালন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারলে রোগবালাই হয় না বললেই চলে। রোগ বালাই হতে নিরাপত্তার লক্ষ্যে বয়সভেদে রানীক্ষেত ও গামবুরো রোগের টিকা প্রদান করতে হবে। এমটিসি মুরগির টিকাদান কর্মসূচি সারণি-৩ দ্রষ্টব্য।

 

বয়স (দিন) টিকার নাম যে রোগের জন্য মাত্রা
 
প্রয়োগ-স্থান
৫-৬ আইবি ও রানীক্ষেতের জীবন্ত টিকা [IB+ND(Live)] আইবি ও রানীক্ষেত ১ ফোঁটা
 
চোখে
৯-১২ গামবুরো রোগের জীবন্ত টিকা [IBD (live)] গামবুরো ১ ফোঁটা চোখে
১৬-১৮ গামবুরো রোগের জীবন্ত টিকা [গামবুরো রোগের জীবন্ত টিকা [IBD (live))] গামবুরো
 
১ ফোঁটা চোখে/ খাবার পানিতে
২১-২৩ আইবি ও রানীক্ষেতের জীবন্ত টিকা [IB+ND(Live))] আইবি ও রানীক্ষেত ১ ফোঁটা চোখে/ খাবার পানিতে
৩২-৩৫ ফাউল পক্স জীবন্ত টিকা [AE+Pox (Live))] ফাউল পক্স
 
প্রদত্ত কাঁটা একবার ডুবিয়ে পালকের নিচে  
৪০-৪২ রানীক্ষেতের জীবন্ত টিকা [[ND (live] রানীক্ষেত ১ ফোঁটা খাবার পানিতে

আর্থসামাজিক প্রভাব/আয় ও ব্যয়ের হিসাব
বিএলআরআই-এ পরিচালিত গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, আট সপ্তাহ পর্যন্ত ১০০০ টি এমসিটিসি জাতের মুরগি এক ব্যাচ লালন-পালন করে বাজার মূল্যভেদে প্রায় ৪৫-৬০ হাজার টাকা তথা বছরে অন্তত ৪টি ব্যাচ পালন করলে ১ লক্ষ ৮০ হাজার থেকে ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। এ ছাড়াও, এমসিটিসি জাতের মুরগিগুলো মাংসের স্বাদ ও পালকের রং দেশি মুরগির ন্যায় মিশ্র বর্ণের হওয়ায় খামারিগণ বাজারমূল্যও প্রচলিত সোনালী বা অন্যান্য ককরেল মুরগির তুলনায় বেশি পাবেন।

 

পরিবেশের উপর প্রভাব
বৈশ্বিক তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তালিকার প্রথম দিকে। প্রতিনিয়ত পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রভাব কমবেশি সব খাতের উপরই দৃশ্যমান। অন্যান্য প্রাণিকুলের তুলনায় পোল্ট্রি প্রজাতি পরিবেশের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। অন্যদিকে, দেশের ব্রয়লার-লেয়ারের সব জাতই বিদেশ থেকে আমদানিকৃত হওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে সেগুলোর কাক্সিক্ষত উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সেই দিক বিবেচনায় বিএলআরআই উদ্ভাবিত মাস উৎপাদনকারী জাতটি (এমসিটিসি) পরিবর্তনশীল আবহাওয়া উপযোগী এবং উৎপাদনের উপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব নেই। তাছাড়া খামারের বিষ্ঠা দিয়ে বায়োগ্যাস করা যেতে পারে এবং বায়োগ্যাসের উপজাত জৈব সার হিসেবে বিভিন্ন ফসল, খাদ্যশস্য ও ঘাস উৎপাদনে ব্যবহার করা যেতে পারে। ফলে, খামারিগণ অধিক লাভবান হবেন।

 

এমসিটিসি মুরগির বাণিজ্যিক উৎপাদন
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) কর্তৃক উদ্ভাবিত মাল্টি কালার টেবিল চিকেন (এমসিটিসি) বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেড কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। ইতোমধ্যে আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেড কোম্পানির সহিত যৌথ গবেষণা চলমান রয়েছে। প্যারেন্ট লাইনের ডিম উৎপাদন, ডিমের আকার, অভিযোজন ক্ষমতা, রোগবালাইসহ সামগ্রিক বিষয় বিএলআরআই এর গাইড লাইন ও কারিগরি পরামর্শে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে এমসিটিসি বাচ্চা উৎপাদন শুরু হয়েছে এবং খামারি পর্যায়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে। সফলভাবে খামারি পর্যায়ে সম্প্রসারণ করলে মুরগির বাচ্চা ও মাংসের বাজারমূল্যের উত্থান পতন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এছাড়া দুর্যোগ ও মহামারীতে বিদেশী জাত আমদানির পরিবর্তে দেশের উদ্ভাবিত জাত মাংসের চাহিদা পূরণে অগ্রণী ভ‚মিকা রাখতে পারে।


নতুন উদ্ভাবিত মাংসল জাতের মুরগি খামারি পর্যায়ে সম্প্রসারণ সঠিকভাবে করতে পারলে একদিকে স্বল্পমূল্যে প্রান্তিক খামারিগণ অধিক মাংস উৎপাদনকারী জাতের বাচ্চা পাবেন, অন্যদিকে আমদানি নির্ভরশীলতা অনেকাংশেই হ্রাস পাবে। এ প্রযুক্তিটি দেশের সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় প্রাণিজ আমিষসহ অন্যান্য পুষ্টির চাহিদা পূরণে এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়ায় যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।

১মহাপরিচালক, ২ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কমকর্তা,পোলট্রি উৎপাদন গবেষণা বিভাগ, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, সাভার, ঢাকা-১৩৪১, মোবাইলঃ ০১৭১২৫১১১৮৩, ই-মেইলঃ mdrakibulhassan@gmail.com, 

বিস্তারিত
শীতে মাছ চাষে সমস্যা ও প্রতিকার

কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ

শীতকালে পুকুরে মাছ চাষে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। কারণ পানি দূষিত হয়, অক্সিজেন কমে যায়, গ্যাস সৃষ্টি হওয়াসহ নানা সমস্যার জন্য মাছের বিভিন্ন রোগ ও মড়ক দেখা যায়। ফলে মাছের উৎপাদন কমে যায়। এসব সমস্যা হওয়ার আগেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিলে মাছের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।
 

১. খাবি খাওয়া : অক্সিজেনের অভাবে মাছ পানিতে খাবি খায়। পানির ওপর ভেসে ওঠে। মাছ খুব ক্লান্ত হয়, মুখ খুলে থাকে ও ফুলকা ফাটে। মাছ মারা যায়।
প্রতিকার : পানিতে সাঁতারকাটা, বাঁশ দিয়ে পানির ওপর পেটানো, হররা টেনে তলের গ্যাস বের করে দেয়া, পুকুরে পাম্প বসিয়ে ঢেউয়ের সৃষ্টি করা। নতুন পানি সরবরাহ করেও অক্সিজেন বাড়ানো যায়। প্রতি শতাংশে   ১ কেজি চুন ও প্রতি শতাংশে ২-২.৫ গ্রাম কৃত্রিম অক্সিজেন দেয়া যেতে পারে।
২. কার্বন-ডাই-অক্সাইডজনিত পানি দূষণ :  পানিতে কার্বন ডাই অক্সাইড বেড়ে গেলে মাছের দেহে বিষক্রিয়া হয় এবং শ্বাসকষ্ট হয়।
প্রতিকার :  খাবি খাওয়া প্রতিকারের মতো। তবে মাছ ছাড়ার আগে পুকুর তৈরির সময় অতিরিক্ত কাদা সরাতে হবে। উদ্ভিদ কণা বাড়াতে হবে।
৩. অ্যামোনিয়াজনিত সমস্যা :  অ্যামোনিয়া বেড়ে গেলে পানির রঙ তামাটে অথবা কালচে রঙের হয়। মাছের ছোটাছুটি বেড়ে যায়। মাছ মারা যায়।
প্রতিকার :  মাছের মজুদ ঘনত্ব কমাতে হবে। সার ও খাদ্য প্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে। নতুন পানি সরবরাহ করতে হবে। প্রতি শতাংশে ২০০-২৫০ গ্রাম জিওলাইট দিতে হয়। প্রতি শতাংশে ১-২ কেজি লবণ দিতে হয়।
৪. নাইট্রোজেনজনিত সমস্যা :  নাইট্রাইটের পরিমাণ বেড়ে গেলে মাছের দেহে অক্সিজেন সঞ্চালন বাধা প্রদান করে। বিষাক্ততার সৃষ্টি করে। এতে মাছের দেহ বাদামি রঙ ধারণ করে। মাছ খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়।
প্রতিকার :  মাছের ঘনত্ব কমাতে হবে। পুকুরে ২৫০ মিলিগ্রাম/ লিটার হারে লবণ দিতে হবে।
৫. পিএইচজনিত সমস্যা :  পানিতে পিএইচ বা অ¤øমান কমে গেলে মাছের দেহ থেকে প্রচুর পিচ্ছিল পদার্থ বের হয়। মাছ খাদ্য কম খায়। পিএইচ বেশি হলে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন কমে যায় এবং মাছের খাদ্য চাহিদা কমে যায়। দেহ খসখসে হয়। মাছ রোগাক্রান্ত হয়।  
প্রতিকার :  পিএইচ কম হলে চুন, ডলোমাইট বা জিপসাম ১ থেকে ২ কেজি/শতাংশ প্রয়োগ করতে হবে। পিএইচ বেশি হলে পুকুরে তেঁতুল বা সাজনা গাছের ডাল তিন-চার দিন ভিজিয়ে রেখে পরে তুলে ফেলতে হবে। তেঁতুল পানিতে গুলে দেয়া যেতে পারে।
৬. পানির ওপর সবুজ স্তর :  পুকুরের পানির রঙ ঘন সবুজ হয়ে গেলে বা পানির ওপর শ্যাওলা পড়লে খাদ্য ও সার প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। মাছ খাবি খায়। মাছ মারা যায়।
প্রতিকার :  প্রতি শতাংশে ১২ থেকে ১৫ গ্রাম তুঁতে বা কপার সালফেট অনেক ভাগ করে ছোট ছোট পোঁটলায় বেঁধে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পানির নিচে বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে রাখতে হবে। শতাংশপ্রতি ৮০০ থেকে ১২০০ গ্রাম চুন প্রয়োগ করতে হবে।
৭.পানির ওপর লাল স্তর :  পুকুরের পানির ওপর লাল স্তর পড়লে ধানের খড়ের বিচালি বা কলাগাছের শুকনো পাতা পেঁচিয়ে দড়ি তৈরি করে পানির ওপর দিয়ে ভাসিয়ে নিলে পরিষ্কার হয়। প্রতি শতাংশে ১০০ গ্রাম করে  ফিটকিরি ও ইউরিয়া দিতে হয়।  
৮. পানির ঘোলাত্ব :  পানি ঘোলা হলে মাছ খাদ্য কম খায়, চোখে দেখে না, প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয় না, প্রজননে সমস্যা হয় ও রোগবালাই বেশি হয়।
প্রতিকার :  প্রতি শতাংশে ৮০ থেকে ১৬০ গ্রাম ফিটকিরি দিতে হবে। পুকুর তৈরির সময় জৈবসার বেশি দিলে স্থায়ীভাবে ঘোলা দূর হয়। কলাপাতা ও কুচরিপানা রাখলেও ঘোলা কমে।
৯. পানির ক্ষারত্ব :  পানি ক্ষারীয় হলে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি কম হয়। মাছের দৈহিক বৃদ্ধি কমে যায়।
প্রতিকার :  পুকুর তৈরির সময় ও পরে শতাংশ প্রতি ১ থেকে ২ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হয়। এ ছাড়াও ছাই ব্যবহার করলেও পানির ক্ষারত্ব নিয়ন্ত্রণ থাকে।
১০. রোগবালাই
পানির পরিবেশ খারাপ হলে ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী দ্বারা রোগ হতে পারে। নিচে এগুলো বর্ণনা করা হলো :

 

ফুলকা পচা রোগ ও প্রতিকার
ছত্রাক সংক্রমণে এ রোগ হয়। আক্রান্ত মাছের শ্বাসপ্রশ্বাস বেড়ে যায়। দেহের বর্ণ ফ্যাকাশে হয়। ফুলকায় রক্তক্ষরণ হয়। ফুলকা পচে ও ফুলে যায়। মাছ দ্রæত মারা যায়। মাছ লাফালাফি করে।
মাছের ঘনত্ব কমাতে হবে। পুকুরে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে পাথর চুন ৩ মাস পর পর দিতে হবে। জৈবসার ও সম্পূরক খাদ্য কম দিতে হয়। আক্রান্ত মাছ ২০০ পিপিএম লবণ দ্রবণে সপ্তাহে একবার হিসেবে মোট দুইবার গোসল করাতে হবে। অথবা ৫০ পিপিএম ফরমালিনে আক্রান্ত মাছকে ১ ঘণ্টা ডুবিয়ে ছেড়ে দিতে হয়।

 

মাছের উকুন লক্ষণ ও প্রতিকার
আরগুলাস নামক বহিঃপরজীবী দ্বারা মাছ আক্রান্ত হয়। মাছের দেহের রক্ত চুষে ক্ষত সৃষ্টি করে। দেহপৃষ্ঠ ও পাখনায় উকুন লেগে থাকে। শক্ত কিছু পেলে মাছ দেহ ঘষে। মাছ লাফালাফি করে। দেহ থেকে রক্তক্ষরণ হয়। পরজীবী খালি চোখে দেখা যায়। মাছ ক্লান্তহীনভাবে সাঁতার কাটে। আক্রান্ত স্থানের চারপাশ লালচে বর্ণ হয়।
পুকুর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন দেয়া। জৈবসার প্রয়োগ কমিয়ে দেয়া। আক্রান্ত মাছ পুকুর থেকে সরানো। ডিপটারেক্স (ডাইলকস, নেগুভন, টেগুভন) ০.৫   পিপিএম হারে পুকুরে প্রয়োগ করা। সপ্তাহে একবার ও পরপর ৫ বার। অথবা, ০.৮ পিপিএম হারে সুমিথিয়ন প্রয়োগ করা। প্রতি সপ্তাহে একবার ও পরপর ৫ বার। অথবা, ০.২৫ পিপিএম পটাশ দ্রবণে ৫-৬ মিনিট গোসল করাতে হবে।

 

ক্ষতরোগ লক্ষণ ও প্রতিকার
বাংলাদেশে প্রায় ৩২ প্রজাতির মাছ এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়। এ রোগে আক্রান্ত মাছের গায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। অঢ়যধহড়সুপবং নামক ছত্রাক সংক্রমণে এ রোগ হয়। পরে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগ সৃষ্টি হয়। মাছের গায়ে ছোট ছোট লাল দাগ দেখা যায়। লাল দাগের স্থানে গভীর ক্ষত হয়। মাছ দ্রæত মারা যায়। চোখ নষ্ট হতে পারে। ক্ষতস্থান থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। মাছ খাদ্য গ্রহণ করে না। ক্ষতে চাপ দিলে দুর্গন্ধ ও পুঁজ বের হয়। মাছ দুর্বল হয় এবং ভারসাম্যহীনভাবে চলাফেরা করে। আক্রান্ত বেশি হলে লেজ ও পাখনা পচে খসে পড়ে।

 

প্রতিরোধ ও প্রতিকার
শুকনো মৌসুমে পুকুরের তলা শুকাতে হবে। শীতের শুরুতে প্রতি শতাংশে ১ কেজি চুন ও ১ কেজি লবণ একত্রে প্রয়োগ করতে হবে। পোনা মজুদের আগে ২-৩% লবণ পানিতে পোনা গোসল করানো। জৈবসার প্রয়োগ সীমিত করা। জাল রোদে শুকিয়ে পুকুরে ব্যবহার করা। প্রতি কেজি খাবারের সাথে ৬০-১০০ মি.গ্রা. টেরামাইসিন বা ১ গ্রাম ক্লোরোমাইসিটিন ওষুধ মিশিয়ে পরপর ৭-১০ দিন প্রয়োগ করতে হবে। আক্রান্ত মাছকে ৫ পিপিএম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণে ১ ঘণ্টা অথবা ১ পিপিএম তুঁতের দ্রবণে ১০-১৫ মিনিট গোসল করাতে হয়।

 

ড্রপসি/উদরফোলা/শোঁথরোগ লক্ষণ ও প্রতিকার
ব্যাকটেরিয়া দিয়ে এ রোগ হয়। মাছের পেটে তরল পদার্থ জমে পেট ফুলে যায়। মাছ চিৎ হয়ে ভেসে ওঠে। ভারসাম্যহীন চলাফেরা করে। হলুদ বা সবুজ রঙের পিচ্ছিল তরল পদার্থ বের হয়। দেহের পিচ্ছিল পদার্থ থাকে না। হাত দিয়ে পেট চেপে তরল পদার্থ বের করা। জৈব সার প্রয়োগ করা। চুন প্রয়োগ করা। টেরামাইসিন গ্রæপের ওষুধ খাদ্যের সাথে খাওয়াতে হবে অথবা ইনজেকশন দিতে হবে।
লেজ ও পাখনা পচা রোগ লক্ষণ ও প্রতিকার
অ্যারোমোনাস ও মিক্সো ব্যাকটেরিয়া দিয়ে এ রোগ হয়। দেহের পিচ্ছিল পদার্থ কমে যায়। লেজ ও পাখনায় সাদাটে দাগ দেখা যায়। লেজ ও পাখনায় পচন ধরে। লেজ ও পাখনার পর্দা ছিড়ে যায়। লেজ ও পাখনা খসে পড়ে। রক্তশূন্যতা দেখা দেয় ও রঙ ফ্যাকাশে হয়। মাছ দেহের ভারসাম্য হারায়। মাছ ঝাঁকুনি দিয়ে চলাফেরা করে। আক্রান্ত স্থানে তুলার মতো ছত্রাক জন্মায়।

 

প্রতিরোধ ও প্রতিকার
পুকুরে জৈবসার প্রয়োগ কমাতে হবে। নিয়মিত হররা বা জাল টেনে পুকুরের তলার বিষাক্ত গ্যাস কমাতে হবে। মজুদকৃত মাছের ঘনত্ব কমাতে হবে। পুকুরে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা। প্রতি কেজি খাদ্যের সাথে ২৫ মি.গ্রা. টেট্রাসাইক্লিন মিশিয়ে পর পর ৭ দিন দিতে হবে। পোনা মাছে ১ পিপিএম তুঁত দ্রবণে সপ্তাহে ২ দিন চুবিয়ে জীবাণুমুক্ত করে পরিষ্কার পানিতে ছেড়ে দিতে হবে।

 

আঁইশ ওঠা রোগ লক্ষণ ও প্রতিকার
অ্যারোমোনাস ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে হয়। মাছের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়। আঁইশ বাঁকা হয়। সামান্য ঘষা বা আঘাতেই আঁইশ উঠে যায়। লেজ অবস হয়। মাছ ভারসাম্যহীনভাবে চলাফেরা করে। মাছ খাদ্য গ্রহণ করে না।
পুকুরে জৈবসার প্রয়োগ কমাতে হবে। প্রতি শতাংশে ১ কেজি চুন নিয়মিত প্রয়োগ করা। জাল রোদে শুকিয়ে পুকুরে ব্যবহার করা। এক লিটার পানিতে ২-৩ মিলি গ্রাম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট অথবা ১ লিটার পানিতে ১ মিলিগ্রাম তুঁত মিশিয়ে মাছকে গোসল করালে এ রোগ ভালো হয়। প্রতি কেজি খাদ্যে ১ গ্রাম ক্লোরোমাইসিটিন মিশিয়ে মাছকে কমপক্ষে ৭ দিন খাওয়াতে হবে।


মাছের রোগবালাই প্রতিরোধের জন্য যেসব ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন তা হলো- ১. পুকুরের পরিবেশ ও পানির গুণাগুণ ঠিক রাখা, ২. জলজ আগাছামুক্ত রাখা, ৩. পুকুরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ার ব্যবস্থা করা, ৪. অনাকাক্সিক্ষত জলজ প্রাণী অপসারণ করা, ৫.  অতিরিক্ত কাদা সরানো, ৬. দুই-তিন বছর পর পর পুকুর শুকানো, ৭. চুন প্রয়োগ করা, ৮. মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, ৯. প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা করা, ১০. হররা টানা, ১১. পাখি বসতে না দেয়া, ১২. জাল শোধন করে ব্যবহার করা, ১৩. রোগাক্রান্ত মাছ অপসারণ করা, ১৪. সব সময় ঢেউয়ের ব্যবস্থা করা। য়

কৃষি প্রাবন্ধিক, সহকারী অধ্যাপক, কৃষিশিক্ষা, শহীদ জিয়া মহিলা কলেজ, ভ‚ঞাপুর, টাঙ্গাইল,  মোবাইল : ০১৭১১-৯৫৪১৪৩

বিস্তারিত
কবিতা (পৌষ- ১৪২৭)

বঙ্গবন্ধুর অবদান ও কৃষি উন্নয়ন       

ড. মোঃ আলতাফ হোসেন১

উন্নয়ন করতে হলে প্রথমে দরকার ক্ষুধামুক্ত দেশ
বঙ্গবন্ধুর মেধাবী মাথায় খেলে গেল আইডিয়াটা বেশ।
বঙ্গবন্ধুর অবদানে কৃষিবিদরা হলেন ক্লাশওয়ান
কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের বীজবপন করলো তাঁর এই আহ্বান।
কৃষিবিদরা বীরদর্পে নেমে পড়লেন স্ব স্ব কাজে
মেধাবীমুূখ বেড়ে যেতে লাগলো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
ডিগ্রি নিয়ে কৃষিবিদরা ছুটে পড়লেন নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে
একাগ্র হয়ে কাজ করলেন সবাই আনন্দ চিত্তে।
তৈরি হতে লাগলো উচ্চফলনশীল জাত ও প্রযুক্তি
কৃষি উন্নয়নের শুরুটাই তখন- যা বলাটা হবে না অত্যুক্তি।
কৃষি বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করতে শুরু করলেন উচ্চফলনশীল জাত
উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে- এটাই হলো প্রথম ধাপ।
উদ্ভাবিত হতে লাগলো জাত- খরা, জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা প্রতিরোধী
ফসল বিন্যাসে নতুন মাত্রা যোগ করল জাত “স্বল্পমেয়াদি”।
কৃষক কুল ব্যস্ত হয়ে উঠলেন ফলাতে ফসল অবিরত
সম্প্রসারণবিদগণ ও সম্প্রসারিত করলেন প্রযুক্তি শত শত।
ধান চাষ এখন করা যায় সারাবছর জুড়ে
উঁচু, নিচু ও লবণাক্ত জমি কোনটাই থাকে না পড়ে।
ফলন এখন বেড়েছে প্রায় ৩-৪ গুণ বেশি
উচ্চফলনশীল জাত প্রতিস্থাপিত করেছে- “জাত দেশী”।
গমের ছিল না উন্নত জাত, চাষ করত সবাই খেরী
এখন এসেছে উচ্চফলনশীল জাত- বøাস্ট রোগ প্রতিরোধী।
ভুট্টা এখন চাষ হচ্ছে বিস্তৃত এলাকায় বিলে
সম্প্রসারণ হয়নি আগে- বাজারজাতকরণ ছিল না বলে।
শীতের সবজি ও গ্রীষ্মে এখন সফলভাবে চাষ করা যায়
স্ট্রবেরি, ড্রাগন, কমলা ও মাল্টা- কৃষক এখন দেশের মাটিতেই পায়।
নদীর পাঙ্গাশ ব্যাপকভাবে এখন পুকুরেই চাষ হয়
মাছে-ভাতে ভালোই আছি- “জনগণে এখন কয়”।
লেয়ার, ব্রয়লার মুরগি এখন প্রোটিনের সহজলভ্য উৎস
পশু খামার স্থাপন করে সহজেই পাওয়া যাচ্ছে- দুধ ও মাংস।
বঙ্গবন্ধুর অবদানে কৃষিবিদরা হয়েছেন ক্লাসওয়ান
বিনিময়ে কৃষিবিদরা দিয়েছেন তাঁকে যথাযোগ্য সম্মান।
কৃষি উন্নয়নে সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছেন এখন ‘বঙ্গবন্ধুর কন্যা’
যাঁর সুদক্ষ দিকনির্দেশনায় বয়ে চলেছে কৃষি উন্নয়নের বন্যা।


লাল সবুজ পতাকা যেন : দেশ
আবু হেনা ইকবাল আহমেদ২

ক.
মায়ের বুকের মতো   মাটির উষ্ণতা
অনুভব করি রোজ    দেহে-অভ্যন্তরে
কেটে যায় সারাক্ষণ   তারই গতরে
দিবা- রাত্রি গড়ে তুলি   পরম সখ্যতা।
যখনি মাটির বুকে     বীজ বুনে আসি
জলে-তাপে মায়ামেখে    টেনে নেয় কাছে
একদিন বীজ ফুঁড়ে    ক্রমশঃ আকাশে
নবীন পাতা ও শাখা   মেলে রাশি রাশি

মাটির গভীর থেকে    জীবনের রসে
বেঁচে রই বৃক্ষ প্রাণী    অক্লেশে সবাই
স্বর্ণাভ সে মাটিকণা     সর্বাঙ্গে জড়াই
তারে নিয়ে খেলা করি     রাতে কি দিবসে।

রক্তিম সূর্যের আলো    পাতাদের ফাঁকে
লাল সবুজ পতাকা     নিত্য দিন আঁকে।
খ.
বলিষ্ঠ হাতের মুঠি     মাটির গভীরে
নেড়েচেড়ে তুলে আনি    সোনালি ফসল
যে নদী চলছে বয়ে    কলো ছলো ছল
পর্ণকুঠি গড়ে তুলি    তার বালু তীরে।
চাঁদ সওদাগর সে     কবে চলে গেছে
আবার আসবে নিতে       দেশজ ফসল
আধোঘুমে ধ্বনি শুনি     জলে কল কল
ডিঙি চলে পণ্যভরে     ভিন কোনো দেশে

দিগন্তে তাকিয়ে দেখি    রাঙা একাত্তর
আকাশে সূর্যের লাল      মাঠের সবুজ
কামরাঙা কাঁঠাল কি      বট তরমুজ
পাখিদের কোলাহলে      প্রকৃতি বিভোর।
    
বিজয় পতাকা যেন    অপরূপ সাজে
লাল সবুজের দেশ,   নানা কারু কাজে।

১প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, কীটতত্ত¡ বিভাগ, ডাল গবেষণা কেন্দ্র, ঈশ্বরদী, পাবনা। মোবাইলন : ০১৭২৫-০৩৪৫৯৫, ই-মেইল: hossain.draltaf@gmail.com
২পরিচালক(অব.), বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি, কৃষি মন্ত্রণালয়, সেল: ০১৬১৪৪৪৬১১১, 01614446111, ahiqbal.ahmed@yahoo.com

 

বিস্তারিত
প্রশ্নোত্তর

কৃষিবিদ মো. তৌফিক আরেফীন

কৃষি বিষয়ক
নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য আপনার ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ও রোগ দমনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করুন।
মো. মাইদুল ইসলাম, গ্রাম: তাম্বুলখানা, উপজেলা: ফরিদপুর সদর, জেলা: ফরিদপুর
প্রশ্ন: ভুট্টা পাতায় ছোট ছোট দাগ পড়ে। পরে বাদামি হয়। এ সমস্যা দূরীকরণে কী করব ?
উত্তর : এ ধরনের সমস্যাকে ভুট্টা পাতায় দাগ বা কারভুলারিয়া লিফ স্পট বলা হয়। বেশি আর্দ্রতা ও তাপমাত্রায় আক্রমণ বাড়ে। আর এ রোগের জীবাণু মাটিতে এবং আক্রান্ত গাছে  থাকে। পরে বাতাস ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। প্রথমে ভুট্টার পাতায় ছোট ছোট গোল অথবা ডি¤¦াকৃতির হলুদাভ দাগ পড়ে। পরবর্তীতে এ দাগগুলো বাদামি রঙ ধারণ করে এবং আকারে বড়  হয়ে কখনো কখনো প্রায় ১ সেমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ সমস্যা রোধে রোগমুক্ত বীজ সংগ্রহ করার সাথে সাথে ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আগাম বীজ বপনও রোগের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত ফসলে কার্বেন্ডাজিম+ম্যানকোজেব গ্রæপের ছত্রাকনাশক যেমন কমপ্যানিয়ন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ৩ বার ¯েপ্র করতে হবে। আশা করি উপকার পাবেন।
মো: ইমতিয়াজ আহমেদ, গ্রাম: ধল্লাপারা, উপজেলা: ঘাটাইল, জেলা: টাঙ্গাইল
প্রশ্ন: আমন ফসলে বøাস্ট রোগের দমনে কী করণীয় ?
উত্তর :  আমন মওসুমে সুগন্ধি জাতে এ রোগটি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বেশি বৃষ্টি হলে এবং তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে কম থাকলে প্রথমে পাতায় পাতাবøাস্ট দেখা যায়। পরবর্তীতে শীষ বের হলে শীষ বøাস্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যে সব জমিতে পাতাবøাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে সে সব জমিতে ছত্রাকনাশক যেমন ট্রুপার ৫৪ গ্রাম প্রতি বিঘাতে অথবা নেটিভো ৩৩ গ্রাম প্রতি বিঘাতে অথবা ট্রাইসাইক্লাজোল গ্রæপের অনুমোদিত  ছত্রাকনাশক পরিমাণ মতো ৫ থেকে ৭ দিন পরপর দু’বার স্প্রে করতে হবে। রোগটি পাতা থেকে শীষেও যেতে পারে তাই শীষ বের হওয়ার সাথে সাথেই শেষ বিকেলে এসব ছত্রাকনাশক একই নিয়মে আগেভাগেই স্প্রে করতে হবে। আশা করি ভালো ফলাফল পাবেন।
মো. খাদেমুল ইসলাম, গ্রাম: খাটুরিয়া, উপজেলা: ডোমার, জেলা: নীলফামারী
প্রশ্ন: আলু গাছের গোড়ার দিকে কালো দাগ পড়ে। আলু গাছ শক্ত ও মট করে ভেঙে যায়। এমনকি আলু গাছের কাÐের সাথে ছোট সবুজ আলু দেখা যায়। এ অবস্থায় কী করণীয়। জানাবেন।
উত্তর : আক্রান্ত গাছগুলোকে তুলে পুড়ে ফেলতে হবে। সুস্থ বীজআলু বপন করতে হবে পাশাপশি সুষম সার প্রয়োগ করাও প্রয়োজন। কার্বেন্ডাজিম গ্রæপের অটোস্টিন অথবা কার্বোক্সিন ও থিরাম  সমৃদ্ধ গ্রæপ প্রোভ্যাক্স ২০০ ডবিøউপি প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করতে হবে।  মেনকোজেব গ্রæপের ডাইথেন এম ৪৫ প্রতি ১ লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে। তাহলে আপনার উল্লিখিত এ সমস্যার সমাধান পাবেন।
মো: রঞ্জু মিয়া, গ্রাম: সাকোয়া  উপজেলা: বোদা, জেলা: পঞ্চগড়
প্রশ্ন :  শুদ্ধ/বিশুদ্ধ/ভেজালমুক্ত বোরন সার চিনব কিভাবে ?
উত্তর : বোরন সার চেনার উপায় ১ গøাস পানিতে ১ চা চামচ বোরন সার বা বোরিক এসিড বা সলুবর মিশাতে হবে। যদি স্বচ্ছ দ্রবণ তৈরি হয় এবং কোনো তলানি না পড়ে তাহলে বুঝা যাবে বোরন সারটি ভালো। তবে নিশ্চিত হবার জন্য ১ চিমটি বেরিয়াম ক্লোরাইড বোরন সারের দ্রবণে মিশালে যদি পরিষ্কার দ্রবণ তৈরি হয়। তবে সারটিতে ভেজাল নেই। আর যদি সারটি সোডিয়াম সালফেট দিয়ে তৈরি হয় সেক্ষেত্রে দ্রবণটি দুধের মতো সাদা হয়ে যাবে। তার মানে বোরন সারটি ভেজাল। আশা করি বোরন সার ভেজাল কি না সে পরীক্ষাটি এখন করতে পারবেন।
মো. জহুরুল ইসলাম গ্রাম:  তৈলটুপি, উপজেলা: হরিণাকুÐু, জেলা: ঝিনাইদহ
প্রশ্ন : সজিনা গাছের সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর : সজিনা গাছ লাগানোর পরের বছরে প্রতি গাছের জন্য ৪০ থেকে ৫০ কেজি পচা গোবর, ৫০০ গ্রাম করে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি এবং জিপসাম, বোরাক্স ও জিঙ্ক সালফেট ৫০ গ্রাম করে সার প্রয়োগ করতে হয়। সেক্ষেত্রে দুপুর বেলায় সূর্যের আলো গাছের উপর পড়লে, গাছ যে পরিমাণ জায়গায় ছায়া প্রদান করে, সেই পরিমাণ জায়গা নির্বাচন করতে হয়। পরবর্তীতে গাছের চতুর্দিকে সে পরিমাণ জায়গায় মাটি কোদাল দিয়ে ভালোভাবে কুপিয়ে সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর প্রতি বছরে প্রতি গাছের জন্য ৪০-৫০ কেজি পচা গোবর ঠিক রেখে ৫০০ গ্রাম করে ইউরিয়া, টিএসপি. ও এমওপি সার এবং জিপসাম, বোরাক্স ও জিঙ্ক সালফেট সার ২০ গ্রাম করে বর্ধিত হারে প্রয়োগ করতে হবে। মনে রাখতে হবে সজনে গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। সে কারণে উঁচু জায়গাতে সজনে গাছ লাগানো দরকার। বর্ষাকালে পানি নিকাশ ও খরা মৌসুমে সেচ প্রদান করাও প্রয়োজন।
মো.  মিজানুর রহমান, গ্রাম: ফুলগাছ, উপজেলা: লালমনিরহাট সদর, জেলা: লালমনিরহাট
প্রশ্ন :  মুগডালের পাতা কেমন জানি ছোট ছোট দাগ পড়েছে এবং পাতাগুলোতে ছিদ্র দেখা যাচ্ছে। এ সমস্যার সমাধান জানাবেন।  
উত্তর :  সারকোস্পোরা ক্রয়েন্টা নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়। পাতায় ছোট ছোট লালচে বাদামি বর্ণের গোলাকৃতি হতে   ডিম্বাকৃতির দাগ পড়ে। এমনকি আক্রান্ত পাতা ছিদ্র হয়ে যায়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে সম্পূর্ণ পাতা ঝলসে যায়। পরিত্যক্ত ফসলের অংশ, বায়ু ও বৃষ্টির মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। বেশি আর্দ্রতা (৮০%) এবং উচ্চ তাপে (২৮ ডিগ্রি সে.) এ রোগ দ্রæত বিস্তার লাভ করে। সে  কারণে এ রোগ প্রতিকারে অটোস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে ১২ থেকে ১৫ দিন অন্তর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে। এছাড়া রোগ প্রতিরোধী জাত বারি মুগ-২, ৩, ৪ এবং ৫ ব্যবহার করতে হবে। আশা করি উপকার পাবেন।
মৎস্য বিষয়
শেফালী বেগম, গ্রাম: আগমাড়াই, উপজেলা: রাজবাড়ী সদর, জেলা: রাজবাড়ী
প্রশ্ন : চিংড়ি মাছের খোলস কালো হয়ে গেছে কী করব ?
উত্তর : আক্রান্ত চিংড়ির খোলসে কালো দাগ পড়লে চিংড়ির খোলস ভেঙে যায়। আক্রান্ত চিংড়ি ধীর গতিতে চলাফেরা করে এবং আহার বন্ধ করে দেয়। এ রোগ প্রতিরোধে ০.৫ থেকে ১০০ পিপিএম ম্যালাকাইট গ্রীন এবং ২০ থেকে ৭৫ পিপিএম ফরমালিন মিশ্রিত করে ব্যবহার করলে এ রোগ সেরে যাবে। এছাড়া খাবারের সাথে ০.৫ থেকে ১০০ পিপিএম অক্সিটেট্রাসাইক্লিন বা ডক্সাসিলিন ব্যবহার করা হলে এ রোগ সেরে যাবে।
মোঃ হাফিজুর রহমান, গ্রাম: নলুয়া, উপজেলা: কচুয়া, জেলা: চাঁদপুর
প্রশ্ন : মাছের  পেট ফোলা বা শোথ রোগ হয়েছে কী করব ?
উত্তর : এ্যারোমোনাস ব্যাকটেরিযা নামক জীবাণুর সংক্রমণের দ্বারা কার্প ও শিং জাতীয় মাছে এর রোগ হয়। এ রোগ সাধারণত বড় মাছে হয়। মাছের দেহ অভ্যন্তরে এক বা একাধিক অঙ্গে তরল পদার্থ জমে যায়। দেহের ভেতরে সবুজ বা হলুদ তরল পদার্থ দেখা যায়। পেট ফুলে উঠে। চোখ  বের হয়ে আসে। আইশ ঢিলা হয়ে যায় ও ফুলে ওঠে। পেটে চাপ দিলে মলদ্বার দিয়ে পানি বের হয়ে আসে দেহের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। মাছ উল্টো হয়ে ভেসে ওঠে। অল্প খাবার খায়। তরল পিচ্ছিল পদার্থ বের হয়। দেহের পিচ্ছিলতা কমে যায়। এ রোগে আক্রান্ত মাছ সাধারণত ভালো হয় না। প্রাথমিক অবস্থায় পুকুরে প্রতি ঘনমিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। মাছের দেহের জমাকৃত তরল সিরিঞ্জের সাহায্যে বের করে প্রতি ৪ কেজি ওজনের জন্য ১০ মিলিগ্রাম হারে অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ইনজেকশন সপ্তাহে দু’বার দিতে হবে বা প্রতি কেজি খাবারের সাথে ১০০ মিলিগ্রাম রেনামাইসিন  পাউডার মিশিয়ে ৭ দিন খাওয়াতে হবে। আর এ রোগ যাতে করে না হয় সেজন্য পুকুর প্রস্ততির সময় শতাংশ প্রতি ১ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে।   
প্রাণিসম্পদ বিষয়ক
মোঃ রহমত আলী,  গ্রাম: দূর্গাপুর, উপজেলা: সাভার, জেলা: ঢাকা
প্রশ্ন : কবুতরের মুখে ঘা, গায়ে বসন্তের মতো গুটি উঠেছে। কী করব ?
উত্তর :  কবুতরের বসন্ত রোগের জন্য টিকা দিতে হয়। তাহলে এ রোগ হওয়ার আশক্সক্ষা থাকে না। পরবর্তীকালে কবুতরের বাচ্চাকে বসন্তের টিকা দিবেন। আর বর্তমানে আপনি ফ্রা সি ১২ পাউডার ২ গ্রাম ১ লিটার পানিতে, রেনামাইসিন ট্যাবলেট ১ টা ৩ লিটার পানিতে এবং রেনা সি পাউডার ১ গ্রাম ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৩ থেকে ৫ দিন খাওয়াবেন। আশা করি উপকার পাবেন।
মোঃ আশরাফুল ইসলাম, গ্রাম: ভরতের কান্দি, উপজেলা:   শিবপুর, জেলা: নরসিংদীী
প্রশ্ন : মুরগির সর্দি লেগেছে। নাক দিয়ে পানি পড়ে। ঘড় ঘড় শব্দ করে। কখনো ব্যঙের মতো করে ডাকে। কী করব ?
উত্তর : মুরগির মাইকো প্লাজমোলাইসিস  রোগ এর লক্ষণ। এ রোগ হলে মুরগির ভেতরে কফ জমে গিয়ে নিঃশ^াস নিতে পারে না। তাই ঘড় ঘড় শব্দ করে বা কখনো ব্যাঙের মতো ডাকে। এ রোগের প্রতিকার হিসেবে ১ লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম টাইলোসেফ পাউডার, ১ গ্রাম ডক্সিভেট পাউডার ও ১ গ্রাম নিউএক্সেল পাউডার মিশিয়ে ২ বেলা করে খাওয়াতে হবে।
(মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক প্রশ্ন কৃষি কল সেন্টার হতে প্রাপ্ত)

উপপ্রধান তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫, ফোন নং: ০২-৫৫০২৮৪০০, ই-মেইল:taufiquedae25@gmail.com

বিস্তারিত
মাঘ মাসের কৃষি

(১৫ জানুয়ারি- ১৩ ফেব্রæয়ারি)

কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম

মাঘ হাড়কাঁপানো শীতের মাস। কথায় আছে মাঘের শীতে বাঘ পালায়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শৈত্যপ্রবাহ শীতের তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি চলছে বৈশ্বিক মহামারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। এ প্রতিক‚লতার মধ্যেও আমাদের কৃষিজীবীদের মাঠে কাজ করতে হয়। কেননা এ সময়টা কৃষির এক ব্যস্ততম সময়। আর তাই আসুন আমরা সংক্ষেপে জেনে নেই মাঘ মাসে কৃষিতে করণীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো :
বোরো ধান
ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। ধানের চারা রোপণের  ১৫-২০ দিন পর প্রথম কিস্তি, ৩০-৪০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি এবং ৫০-৫৫ দিন পর শেষ কিস্তি হিসেবে ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। বোরো ধানে নিয়মিত সেচ প্রদান, আগাছা দমন, বালাই ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে। রোগ ও পোকা থেকে ধান গাছকে বাঁচাতে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ, আন্তঃপরিচর্যা, যান্ত্রিক দমন, উপকারী পোকা সংরক্ষণ, ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করা, আলোর ফাঁদ এসবের মাধ্যমে ধানক্ষেত বালাই মুক্ত করতে পারেন। এভাবে রোগ ও পোকার আক্রমণ প্রতিহত করা না গেলে শেষ উপায় হিসেবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
গম
গমের জমিতে যেখানে ঘনচারা রয়েছে তা পাতলা করে দিতে হবে। গম গাছ থেকে যদি শিষ বেড় হয় বা গম গাছের বয়স ৫৫-৬০ দিন হয় তবে জরুরিভাবে গম ক্ষেতে একটি সেচ দিতে হবে। এতে গমের ফলন বৃদ্ধি পাবে। ভালো ফলনের জন্য দানা গঠনের সময় আরেকবার সেচ দিতে হবে। গম ক্ষেতে ইঁদুর দমনের কাজটি সকলে মিলে একসাথে করতে হবে।
ভুট্টা
ভুট্টা ক্ষেতে গাছের গোড়ার মাটি তুলে দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য কারণে এসময় ভুট্টা ফসলে আর্মিওয়ার্ম, ফল আর্মিওয়ার্ম ইত্যাদি পোকার আক্রমণ দেখা যায়। আক্রান্ত গাছ থেকে লার্ভাগুলো হাত দ্বারা সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে স্পেনোসেড (ট্রেসার ৪৫এসসি@ ০.৪ মিলি./ লিটার) বা এবামেকটিন বেনজোয়েট ( প্রোক্লেম ৫ এসজি বা সাহাম ৫ এসজি @ ১ গ্রাম/ লিটার) বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
আলু
আলু ফসলে নাবি ধসা রোগ দেখা দিতে পারে। সে কারণে ¯েপ্রয়িং শিডিউল মেনে চলতে হবে। মড়ক রোগ দমনে দেরি না করে ২ গ্রাম এক্সট্রামিল অথবা ডাইথেন এম ৪৫ অথবা সিকিউর অথবা মেলুডি ডুও প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে নিয়মিত ¯েপ্র করতে হবে। মড়ক লাগা জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া আলু ফসলে মালচিং, সেচ প্রয়োগ, আগাছা দমনের কাজগুলোও করতে হবে। আলু  গাছের বয়স ৮০ দিন হলে মাটির  সমান করে গাছ কেটে দিতে হবে এবং ১০ দিন পর আলু তুলে ফেলতে হবে। আলু তোলার পর  ভালো করে শুকিয়ে বাছাই করতে হবে এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
তুলা
তুলা সংগ্রহের কাজ এ মাস থেকেই শুরু করতে হবে। তুলা সাধারণত ৩ পর্যায়ে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। শুরুতে ৫০% বোল ফাটলে প্রথম বার, বাকি ফলের ৩০% পরিপক্ব হলে দ্বিতীয় বার এবং অবশিষ্ট ফসল পরিপক্ব হলে শেষ অংশের তুলা সংগ্রহ করতে হবে। রৌদ্রময় শুকনা দিনে বীজ তুলা উঠাতে হয়। ভালো তুলার সাথে যেন খারাপ তুলা (পোকায় খাওয়া, রোগাক্রান্ত) কখনো না মেশে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভালো তুলা আলাদাভাবে তুলে ৩-৪ বার রোদে শুকিয়ে বস্তায় ভরে মাচা বা দানেস এর উপর সংরক্ষণ করতে হবে। ইঁদুর নষ্ট করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল করতে হবে।
ডাল ও তেল ফসল
মসুর, ছোলা, মটর, মাসকালাই, মুগ, তিসি এ সময় পাকে। সরিষা, তিসি বেশি পাকলে রোদের তাপে ফেটে গিয়ে বীজ পড়ে যেতে পারে, তাই এগুলো ৮০ ভাগ পাকলেই সংগ্রহের ব্যবস্থা নিতে হবে। ডাল ফসলের ক্ষেত্রে গাছ গোড়াসহ না উঠিয়ে মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি রেখে ফসল সংগ্রহ করতে হবে। এতে জমির উর্বরতা এবং নাইট্রোজেন সরবরাহ বাড়বে। এ সময় চর অঞ্চলে পেঁয়াজের সাথে বিলে ফসল হিসেবে বাদাম চাষ করতে পারেন।
শাকসবজি
বেশি ফলন পেতে  শীতকালীন শাকসবজি যেমন ফুলকপি,  বাঁধাকপি,
টমেটো, বেগুন, ওলকপি, শালগম, গাজর, শিম, লাউ, কুমড়া, মটরশুঁটি এসবের নিয়মিত যতœ নিতে হবে। টমেটো ফসলের মারাত্মক পোকা হলো ফলছিদ্রকারী পোকা। সমন্বিত বালাই দমন পদ্ধতিতে এ পোকা দমন করতে হবে। শীতকালে মাটিতে রস কমে যায় বলে সবজি ক্ষেতে চাহিদামাফিক সেচ দিতে হবে।
গাছপালা
শীতে গাছের গোড়ায় নিয়মিত সেচ দিতে হবে। গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে এবং আগাছামুক্ত রাখতে হবে। সাধারণত এ সময় আমগাছে মুকুল আসে। গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগে টিল্ট-২৫০ইসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি অথবা ১ মিলি কন্জা প্লাস অথবা ২ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ¯েপ্র করতে হবে। এসময় প্রতিটি মুকুলে অসংখ্য হপার নিম্ফ দেখা যায়। আম গাছে মুকুল আসার ১০ দিনের মধ্যে কিন্তু ফুল ফোটার পূর্বেই একবার এবং এর একমাস পর আর একবার প্রতি লিটার পানির সাথে ১.০ মিলি সিমবুস/ফেনম/ডেসিস ২.৫ ইসি মিশিয়ে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপাল ভালোভাবে ভিজিয়ে ¯েপ্র করতে হবে।
প্রাণিসম্পদ
শীতকালে পোল্ট্রিতে অপুষ্টি, রানীক্ষেত, মাইকোপ্লাজমোসিস, ফাউল টাইফয়েড, পেটে পানি জমা এসব সমস্যা দেখা যায়। মোরগ-মুরগীর অপুষ্টিজনিত সমস্যা সমাধানে প্রাণিচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন এ, সি, ডি, ই, কে ও ফলিক এসিড সরবরাহ করতে হবে। শীতের তীব্রতা বেশি হলে পোল্ট্রি শেডে অবশ্যই মোটা চটের পর্দা লাগাতে হবে এবং বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। পোল্ট্রি লিটারে অ্যামোনিয়া গ্যাস রোধে ১ বর্গফুট জায়গায় ১ কেজি হারে অ্যামোনিল পাউডার মিশাতে হবে। গোখামারে শীতকালে মোটা চটের ব্যবস্থা করা খুব জরুরি।  নাহলে গাভীগুলো তাড়াতাড়ি অসুস্থ হয়ে যাবে।
মৎস্যসম্পদ
পুকুরে পানি কমে দূষিত হয়ে যায় বলে শীতকালে মাছের বিশেষ যতœ নিতে হবে। কার্প ও শিং জাতীয় মাছে ড্রপসি বা উদর ফোলা রোগ দেখা দেয়। মাছের ক্ষত রোগ যাতে না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। আর এ রোগের প্রতিকারে প্রতি কেজি খাদ্যের সাথে ১০০ মিলিগ্রাম টেরামাইসিন বা স্ট্রেপটোমাইসিন পর পর ৭ দিন খাওয়াতে হবে। মাছ চাষ বিষয়ে যে কোন পরামর্শের জন্য কাছের উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
সুপ্রিয় পাঠক, অত্যন্ত সংক্ষেপে মাঘ মাসে কৃষিতে করণীয় কাজগুলোর উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরা হলো। আপনারা আপনাদের অভিজ্ঞতা ও পরিবেশের গ্রহণযোগ্যতার সমন্বয়ে কাজ করলে সফলতা আসবেই। কৃষির যে কোনো সমস্যায় উপজেলা কৃষি অফিস, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ও উপজেলা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করে অথবা কৃষি কল সেন্টারের ১৬১২৩ নম্বরে কল করে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারেন। য়

সম্পাদক ,কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা।  টেলিফোন:০২৫৫০২৮৪০৪, মেইল: editor@ais.gov.bd

 

বিস্তারিত
বাংলাদেশের পুষ্টি নিরাপত্তায় মিষ্টিআলু

ড. হরিদাস চন্দ্র মোহন্ত
মিষ্টিআলু একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্করা প্রধান কন্দালজাতীয় ফসল। এটি উষ্ণ ও অবউষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের ফসল হলেও বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই কম বেশি এর চাষাবাদ হয়। খাদ্য ও কৃষিসংস্থা (২০১৯) এর তথ্য মতে, বর্তমানে বিশে^র প্রায়  ১১৯টি দেশে  মিষ্টিআলুর চাষাবাদ হয়ে থাকে। পর্তুগিজ বণিকদের মাধ্যমে এটি ভারতবর্ষসহ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। মধ্য আমেরিকায় উৎপত্তি হলেও বর্তমানে এর সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী দেশ চীন।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে খাদ্যের পুষ্টিমান সরবরাহ বৃদ্ধিকে একটি অন্যতম জনস্বাস্থ্য কৌশল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে রঙিন শাঁসযুক্ত মিষ্টিআলু খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় একটি সম্ভাবনাময় ফসল। কেননা কৃষক এটি খুব সহজে অল্পখরচে চাষাবাদ করতে পারে। এর রোগবালাই তুলনামূলক অনেক কম। এর ভক্ষণযোগ্য মূলসিদ্ধ করে, বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন চিপস, আটা, ময়দা ইত্যাদি প্রস্তুতকরণে, কনফেকশনারি দ্রব্যাদি তৈরিতে, অ্যালকোহল শিল্পে ব্যবহার করা হয়। এমনকি এর পাতা সবজি হিসেবে ব্যবহার হয় এবং গোখাদ্য তৈরিতে ও ব্যবহার যোগ্য। মিষ্টিআলুতে শুষ্ক বস্তুর পরিমাণ আলুর থেকে বেশী (প্রায়>৩০%) হওয়ায় প্রক্রিয়াজাত শিল্পে এটিকে ব্যবহারের সুযোগ তুলনামূলক বেশি।


বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই মিষ্টিআলুর চাষ হয়। স্থানীয় জাতগুলোর গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ১০ টনের কম কিন্তু উচ্চফলনশীল মিষ্টিআলুর জাতের ফলন প্রায় ৩০-৪৫টন/হেক্টর। গত ২০ বছরে মিষ্টিআলুর চাষের জমির পরিমাণ ও উৎপাদন ক্রমাগত কমছে কিন্তু ২০০৪-০৫ সাল থেকে উচ্চফলনশীল জাত ব্যবহারের কারণে  এর গড় ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২০১৮-১৯ মৌসুমে ২৭১০০ হেক্টরে মোট ২,৮৪,৭০২ টন মিষ্টিআলু উৎপাদিত হয় যার একক ফলন ছিল প্রতি হেক্টরে প্রায় ১০.৪৭ টন (বিবিএস, ২০১৯)।


মিষ্টিআলুতে প্রচুর পরিমাণ শর্করা, খনিজ,  ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-ই থাকে। বিশেষ করে কমলা ও বেগুনি শাঁসযুক্ত মিষ্টিআলুতে বিটা ক্যারোটিন ও এন্থোসায়ানিন রয়েছে। আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার শিশু রাতকানা রোগে আক্রান্ত হয়। রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সরকারি উদ্যোগে প্রতি বছর শিশুদের ভিটামিন-এ ক্যাম্পেইন করে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। এতে দেশের প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। অথচ কমলা শাঁসযুক্ত মিষ্টিআলু খেয়ে আমরা অতিসহজেই  ভিটামিন এ এর অভাব পূরণ করতে পারি।


পুষ্টি গুণাগুণ
এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, রঙিন শাঁস যুক্ত মিষ্টিআলু প্রতিদিন ১২৫ গ্রাম করে  খেলে একটি ৫-৬ বছরের শিশুর ভিটামিন-এ এর চাহিদা পূরণ হয়। একজন পূর্ণবয়স্ক লোকের জন্য মাঝারি আকারের (১৫০-২০০ গ্রাম) একটি  মিষ্টিআলুই যথেষ্ট। এর গøাইসেমিক ইনডেক্স অন্য ফসলের তুলনায় কম হওয়ায় ডায়াবেটিক আক্রান্তরা শর্করা জাতীয় খাবারের পরিবর্তে  মিষ্টিআলু খেতে পারেন। এছাড়াও মিষ্টিআলুতে বিদ্যমান বিটা ক্যারোটিন ও এন্থোসায়ানিন নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং এন্টি কারসিনোজেনিক উপাদান বিভিন্ন ধরনের  ক্যান্সার নিরাময়ে কার্যকরি ভূমিকা রাখতে পারে। মিষ্টিআলুর ভিটামিন ই৬ রক্তনালীকে স্বাভাবিক রেখে হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।


জাতীয় পুষ্টি নিরাপত্তায় মিষ্টিআলুর গুরুত্ব
উন্নত ও পুষ্টিসমৃদ্ধ জাতের চাষ : জাতীয় পুষ্টি নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখার স্বার্থে মিষ্টিআলুর চাষাবাদ ও ব্যবহার ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন, যা ভোক্তার  চাহিদা বৃদ্ধির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মিষ্টিআলুর পুষ্টি গুণাগুণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, খাদ্যের বহুবিধ ব্যবহার, বীজের প্রাপ্যতা, দ্রæত বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া ও প্রক্রিয়াজাতকরণ সুবিধা, সংরক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যমে ভোক্তার চাহিদা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এ সম্বন্ধীয় প্রশিক্ষণ ও প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে এর দ্রæত সম্প্রসারণ করা সম্ভব।


শাক হিসেবে : বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় মিষ্টিআলুর কচি ডগা শাক বা পাকোড়া/বড়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কমবেশি সব জাত-ই শাক হিসেবে ব্যবহার উপযোগী। তবে বারি মিষ্টিআলু-৪, বারি মিষ্টি আলু-৮, বারি মিষ্টিআলু-১০, বারি মিষ্টিআলু-১১ ও বারি মিষ্টিআলু-১২ জাতসমূহ খুবই সুস্বাদু ও উপাদেয় সবজি হিসেব ব্যবহার করা যেতে পারে। কচি ডগার শাকে ভিটামিন-এ ও ফলিক এসিড পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার শিশুর স্বাভাবিক বুদ্ধি বিকাশে গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই উপকারী।


বসতবাড়িতে চাষ : বসতবাড়ির পাশে মিষ্টিআলুর লতা রোপণ করলে সারা বছর সবজি/শাক হিসেবে মিষ্টিআলু ব্যবহার করা যাবে। এর ফলে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে মিষ্টিআলুর লতা বর্ধন ও শাক বিক্রি করেও বাড়তি উপার্জন করা যেতে পারে।


শস্যবিন্যাস পরিবর্তনে : আমাদের দেশের আবহাওয়ায় রবি মৌসুম তথা অক্টোবর-নভেম্বর মাসে মিষ্টিআলুর লতা রোপণ করে ফেব্রæয়ারি-মার্চ মাসে কন্দ উত্তোলন করা হয়। এক একক জমি থেকে মিষ্টিআলু যে পরিমাণ শর্করা, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান উৎপন্ন করে তা অন্যান্য ফসল থেকে অনেক বেশি হওয়ায় এবং এর বাজারমূল্যও তুলনামূলক বেশি হওয়ায় এর চাষাবাদ অত্যন্ত লাভজনক। যে কারণে কৃষক খুব সহজেই রবি মৌসুমে মিষ্টি আলুচাষে আগ্রহী হবে।  এ ছাড়া লবণাক্ত এলাকা ও চরাঞ্চলেও এটি জন্মাতে পারে।


সারণি ১ : মিষ্টিআলু উৎপাদনে আয় ও ব্যয়ের প্রাক্কলন

ব্যয়ের বিবরণ ব্যয়(টাকা/হেক্টর)
শ্রমিক মজুরি ২৭০ জন (৫০০/-টাকা হারে) ১,৩৫,০০০/-
জমি তৈরী বাবদ ৭,০০০/-
সারের মূল্য  (গোবর, ইউরিয়া, এমওপি ও টিএসপি) ২০,০০০/-
বীজের কাটিং ক্রয় (প্রতি হাজার ২৫০ টাকা) ১৪,০০০/-
পানি সেচ বাবদ ৬,০০০/-
বালাইনাশক ওষধ ক্রয় ২,০০০/-
জমি ভাড়া (দুই ফসলি হিসাবে এক ফসলের) ৫,০০০/-
বিবিধ ২,০০০/০
মোটব্যয় ১,৯১,০০০/-
মূলধনের উপর ১২% হারে ৬ মাসের সুদ ১১,৪৬০/-
সর্বমোট ব্যয় ২,০২,৪৬০/-
আয়ের বিবরণ আয়(টাকা/হেক্টর)
বিক্রয় থেকে আয়- মিষ্টিআলুর গড় ফলন ৩০ টন এবং কৃষকের মাঠে টন প্রতিমূল্য ২০,০০০/- হারে ৬,০০,০০০/-
নিটলাভ (১১-১০) ৩,৯৭,৫৪০/-

আয় ব্যয়ের অনুপাত (BCR) ১ ঃ ৩.১৪ (প্রতি এক টাকা ব্যয়ে ৩.১৪ টাকা লাভ)
 

* জমি ভাড়া ও শ্রমিকের মজুরী এলাকাভিত্তিতে কম বেশি হতে পারে।
প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে : আমাদের দেশে মিষ্টিআলুকে লাভজনক ফসল করার নিমিত্তে মিষ্টিআলুর প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে এর ব্যবহার বাড়ানো জরুরি। যেহেতু মিষ্টি আলুকে উত্তোলনের পর স্বাভাবিক তাপমাত্রায় মাত্র ১-১.৫ মাস সংরক্ষণ করা যায়। ফলে মিষ্টিআলুর প্রাপ্যতা সারা বছর নিশ্চিত করতে হলে প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্য হিসেবে এর ব্যবহার জরুরি। উন্নত বিশে^ও বিশেষ করে চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, আফ্রিকা মহাদেশের কিছু দেশ যেমন- মোজাম্বিক, ঘানা, উগান্ডা, রোয়ান্ডাতে প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্য হিসেবে এটি সারা বছর ব্যবহৃত হয়। উল্লেখ্য যে, রান্নার পরেও রঙিন শাঁসযুক্ত মিষ্টিআলুতে ৭০% এর বেশি বিটাক্যারোটিন অবশিষ্ট থাকে (লরি ও অন্যান্য, ২০১৫)। যে কারণে প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবারের মাধ্যমে সারাবছর ভিটামিন-এ এর চাহিদা নিশ্চিত করা সম্ভব। কমলা ও বেগুনি শাঁস যুক্ত মিষ্টিআলু হতে উন্নত মানের চিপস্, ফ্রেন্স ফাই, আটা-ময়দা, কনফেকশনারি দ্রব্যাদি তথা কেক, বিস্কিট, পাউরুটি, হালুয়া, পায়েস, পরাটা, রসগোল্লা,  ক্ষীর, পুরি, নিমকি ও জুস ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার খাদ্য তৈরি করা যেতে পারে।


মিষ্টিআলুর উন্নত জাতসমূহ
কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, দীর্ঘ দিন যাবৎ এ ফসলের উন্নয়নের জন্য কাজ করে আসছে। দীর্ঘ দিন গবেষণার পর এ পর্যন্ত ১৬টি উচ্চফলনশীল ও গুণাগুণ সমৃদ্ধ মিষ্টিআলুর জাত উদ্ভাবন করেছে। মিষ্টিআলু রবি মৌসুমে করা হয়ে থাকে। এ লক্ষ্যে বারি উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল মিষ্টি আলুর জাত যেমন- বারি মিষ্টিআলু-২, বারি মিষ্টিআলু-৪, বারি মিষ্টিআলু-৮, বারি মিষ্টিআলু-১২, বারি মিষ্টিআলু-১৪ ও বারি মিষ্টিআলু-১৬ চাষ করা যেতে পারে। তবে জাত নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোক্তার পছন্দকে   অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে।        
মিষ্টিআলুর প্রাপ্তিকাল
চারা রোপণের ১০০ থেকে ১২০ দিন পর কন্দমূল উত্তোলন উপযোগী হয়, তবে ১৪০ দিনের বেশি রাখলে শাঁস আঁশযুক্ত হয় এবং উইভিল পোকার আক্রমণ বেড়ে যায়। আমাদের দেশে মার্চ-এপ্রিল মাস মিষ্টিআলুর বাজারে প্রাপ্যতা বেশি থাকে। মাটির সাধারণ জো অবস্থায় কোদাল দ্বারা কুপিয়ে মিষ্টিআলু উত্তোলন করা হয়। উত্তম ব্যবস্থাপনায় উচ্চফলনশীল মিষ্টিআলুর জাতগুলোর ফলন ৩০-৪৫ টন/হেক্টর হয়ে থাকে।  
বহুবিধ ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুষ্টি নিরাপত্তায় মিষ্টিআলু উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে, বিশেষ করে ভিটামিন-এ এর অভাব পূরণে। উন্নত জাতের মিষ্টিআলুর প্রতি একক জমিতে ভিটামিন-এ উৎপাদন ক্ষমতা অন্যান্য ফসলের তুলনায় অনেক বেশি। এ ফসলটিকে দেশব্যাপী জনপ্রিয় করতে ফসল সম্পর্কে নিবিড় জ্ঞান ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। পাশাপাশি বছরব্যাপী প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দীর্ঘসময় সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে মিষ্টিআলুর ব্যবহার বৃদ্ধি অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্য, গ্রামীণ ও সামাজিক উন্নয়ন এবং কৃষি উৎপাদন সম্পর্কিত সরকারি-বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগসমূহ জাতীয়স্তরে মিষ্টিআলু খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায়  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। য়

মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত¡ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মোবাইল : ০১৭৮৩৩২৯৯৭৫,  ই-মেইল :  hmohantatere@gmail.com

 

বিস্তারিত
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নোবেল জয় ও খাদ্য নিরাপত্তা

ড. মনসুর আলম খান

এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেল জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। গত ৯ অক্টোবর ২০২০ নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি ডব্লিউএফপির শান্তি পুরস্কার প্রাপ্তি সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন। কমিটি বৈশ্বিক শান্তি বজায় রাখতে ডবিøউএফপির অবদানের কথা তুলে ধরেছেন। তাঁরা বলেছেন, সংস্থাটির ক্ষুধা নিবারণের প্রয়াসের জন্য, সংঘাতপূর্ণ এলাকায় শান্তির অবস্থা উন্নতিতে অবদান রাখার জন্য এবং যুদ্ধ ও সংঘর্ষের অস্ত্র হিসাবে ক্ষুধার ব্যবহার প্রতিরোধ করার প্রয়াসের জন্য বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিকে ২০২০ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।


ডব্লিউএফপি বাংলাদেশের দুঃসময়ের বন্ধু হিসেবে পরিচিত। বন্যা, খরা, ঝড়, নদীভাঙন ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের পাশে সব সময়ই থাকে জাতিসংঘের এই সংস্থা।
এ প্রসঙ্গে নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান বেরিট রিস-অ্যান্ডারসন বলেছেন, ডব্লিউএফপি করোনাকালে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ক্ষুধার্ত মানুষের দিকে ফেরাতে সক্ষম হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তাকে শান্তির উপকরণ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে’। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সংস্থাটিকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন। অভিনন্দন জানিয়েছেন মাননীয় কৃষিমন্ত্রী  ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। অভিনন্দন বার্তায় মাননীয় কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রয়াসে নিয়োজিত ডব্লিউএফপিকে এ পুরস্কার প্রাপ্তি দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করবে। বিশেষ করে মহামারি করোনার প্রভাবে যখন বিশ্বের অনেক দেশে খাদ্য নিরাপত্তা চরম ঝুঁকিতে রয়েছে তখন এ পুরস্কার প্রাপ্তি সংস্থাটিকে তাদের উদ্যোগ আরও জোরালো করতে উৎসাহ দেবে। পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তায় বিশ্বকে একযোগে কাজ করার বার্তাকে আরও শক্তিশালী করবে। জাতিসংঘের  মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও অভিনন্দন জানিয়েছেন। ‘ক্ষুধার্ত পৃথিবীতে শান্তির আলাপ বেমানান উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ডবিøউএফপি বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রথম সারির যোদ্ধা।


বিশ্ব নেতৃবৃন্দের এসব অভিনন্দন বাণী এবং নোবেল কমিটির মূল্যায়ন থেকে একথা স্পষ্ট যে, পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে বিশ্ব শান্তিকে এ বছর দেখা হয়েছে ক্ষুধাহীনতার আঙ্গিক থেকে এবং খাদ্য নিরাপত্তাকে বিবেচনা করা হয়েছে বৈশ্বিক নিরাপত্তার ঢাল হিসেবে। খাদ্য নিরাপত্তার সহিত সম্মিলন ঘটানো হয়েছে শান্তির সূচককে। এ প্রসঙ্গে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রসচিব হিলারি ক্লিনটনের মন্তব্য স্মরণ করা যেতে পারে। ২০০১ সালের ৬ মে এফএওতে দেয়া ভাষণে সে সময় খাদ্য দ্রব্যের উচ্চমূল্যের প্রভাবে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে সংঘটিত দাঙ্গার প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেছিলেন, খাদ্য নিরাপত্তা কেবলমাত্র তিন বেলা খাবার গ্রহণের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। খাদ্য নিরাপত্তা বরং একটি দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, এমনকি জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সংশ্লিষ্ট। হিলারি ক্লিনটন আরও বলেছেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির মূল উপাদান’। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, খাদ্য নিরাপত্তা কেবলমাত্র জাতীয় নিরাপত্তা নয়, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির নিয়ামকও বটে।


বর্তমান করোনাকালে খাদ্য নিরাপত্তা প্রসঙ্গ অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে অধিকতর সংবেদনশীল। করোনার কারণে বিশ্বে এখন বিরাজ করছে অভূতপূর্ব সংকট। কোভিড-১৯ বিশ্ব জুড়ে শুধু মহামারী ঘটিয়েই থামছে না, বিশ্ব সভ্যতাকে দাঁড় করিয়েছে এক সীমাহীন  অনিশ্চয়তার মুখে। আশঙ্কা করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী চরম খাদ্যঘাটতিজনিত ব্যাপক প্রাণহানির। ডবিøউএফপি এবছর গত এপ্রিলে আশঙ্কা করেছিল যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হলে সারা বিশ্বে অপুষ্টি, অনাহারে। প্রায় তিন কোটি লোকের প্রাণহানি হতে পারে।


এই আশঙ্কাকে সামনে রেখে বিশ্বের নীতিনির্ধারকেরা আশুকরণীয় নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন। বিভিন্ন দেশ তাদের নিজেদের মতো করে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রও নিরূপণ করেছেন। এরই মাঝে জি-২০ এর কৃষি মন্ত্রীগণ, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ), বিশ্ব ব্যাংক এবং ডবিøউএফপির এর প্রতিনিধিগণ। গত ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত  অনলাইন সভায় যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশের কৃষিবান্ধব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিশ্বব্যাপী আসন্ন খাদ্য ঘাটতি সম্পর্কে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নেতাদের সাথে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তিতে খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলা করার প্রস্তাব রেখেছেন বিশ্ব নেতৃত্বের কাছে। দেশের অভ্যন্তরে বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৩১ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছেন তন্মধ্যে কৃষি সংক্রান্ত প্রধান নির্দেশনাটি হচ্ছে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে, অধিক প্রকার ফসল উৎপাদন করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার করতে হবে। সুতরাং কোভিড-১৯ এর প্রভাব মোকাবেলা করে বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ব শান্তির নবতর প্রতীক ‘খাদ্য নিরাপত্তা’র তত্ত¡ীয় ভাষা পড়তে পাড়াও জরুরি।


‘খাদ্য নিরাপত্তা’ এর  তত্ত¡ীয় সংজ্ঞা বুঝার জন্য আমাদের চোখ রাখতে হবে ১৯৯৬ সালের নভেম্বরে রোমে অনুষ্ঠিত বিশ্ব খাদ্য শীর্ষ সম্মিলন এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে। সেখানে উল্লেখ্য করা হয়েছে, ‘কোন সমাজে সকলের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সব সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার প্রাপ্তির শারীরিক এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা বিদ্যমান থাকলে তবেই উক্ত সমাজে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জিত হয়েছে বলা যাবে। এই সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে এফএও প্রাপ্যতা, প্রবেশাধিকার, খাদ্যের সঠিক ব্যবহার এবং টেকসই খাদ্য ব্যবস্থাপনা এই চারটি আঙ্গিককে খাদ্য নিরাপত্তার স্তম্ভ হিসেবে গ্রহণ করেছে।


করোনাভাইরাসের প্রভাবে ইতোমধ্যেই খাদ্য নিরাপত্তার প্রথম স্তম্ভ খাদ্যের প্রাপ্যতা হুমকিতে পড়েছে। অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক চলাচলে বিধিনিষেধের কারণে ব্যাহত হচ্ছে খাদ্য সরবরাহ চেইন। কিছু দিন আগেও একদিকে ফসল নিয়ে বিপাকে ছিল কৃষক, অন্যদিকে ভোক্তাপর্যায়ে বিরাজ করেছিল অপ্রতুলতা। আন্তর্জাতিক বাজারব্যবস্থা ছিল আরও সংকটাপন্ন। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫২.০৫৯ লাখ টন গম আমদানি করেছে এবং রফতানি করেছে ০.৫৮৭ লাখ টন সবজি। করোনা পরিস্থিতিতে আমদানি-রফতানি দু’ই আছে হুমকিতে। আগামী দিনের বীজ, সার, বালাইনাশক, শ্রমিকের চলাচল, সংগ্রহ ইত্যাদি কারণে খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ বিঘœ ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় উৎপাদন ব্যাহত আমদানির মাধ্যমে সমাজে খাদ্য উপাদান যোগান দেয়ার চিরকালীন রীতি করোনাকালে হুমকিতে পড়েছে। এসব কারণে করোনা পরবর্তী সময়ে দেশের ১৬ কোটি লোকের জন্য খাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় হবে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। আর এ কারণেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান, ‘কোন জমি যেন পতিত না থাকে’ খুবই সময়োচিত, খাদ্য নিরাপত্তার প্রাপ্যতা স্তম্ভ নিশ্চিতকরণের এক দৃঢ় পদক্ষেপ।


খাদ্য নিরাপত্তার দ্বিতীয় স্তম্ভ হলো খাদ্যে প্রবেশাধিকার। পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন অথবা আমদানির মধ্য দিয়ে পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলেও খাদ্যে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হয় না। খাদ্যে প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণের জন্য দরকার অর্থনৈতিক সক্ষমতা। পরিবারের সকলের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিকর খাদ্য সংস্থান করা নির্ভর করে খাদ্যমূল্য এবং আর্থিক সামর্থ্যরে উপর। সরবরাহ পর্যাপ্ত হলে মূল্য নাগালে থাকে, আবার ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে উচ্চমূল্য দিয়েও খাবার কেনা যায়। করোনাকালে খাদ্য সরবরাহের ঘাটতি এবং উচ্চমূল্য দুটোই বিরাট চ্যালেঞ্জ। ডব্লিউএফপি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলছে। ডবিøউএফপি ২০১৯ সালে ৮৮টি দেশে তাদের ৫৬০০টি ট্রাক এবং ৩০টি জাহাজের মাধ্যমে নয় কোটি সত্তর লক্ষ পরিবারের মাঝে ৯.১৫ বিলিয়ন ডলারের খাদ্যসহায়তা প্রদান করেছে।


খাদ্যের সঠিক ব্যবহার খাদ্য নিরাপত্তার তৃতীয় স্তম্ভ। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য দরকার সঠিক পুষ্টিজ্ঞান এবং খাদ্যাভ্যাস। পারিবারিক পর্যায়ে খাদ্য বাছাই, পুষ্টিমান বজায় রেখে প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ, সামাজিক পর্যায়ে পুষ্টিকর খাবার সহজলভ্যকরণ এবং বৈচিত্র্যানয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে পারে খাদ্য নিরাপত্তার তৃতীয় এই স্তম্ভ। ভাতে বাঙালির খাদ্য তালিকায় শর্করার আধিক্য ছিল চিরকালের। অর্থনীতি আর  জীবনমান উন্নয়নের সাথে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে খাদ্যাভ্যাসেও। শস্য বহুমুখীকরণ, বছরব্যাপী ফল উৎপাদন, দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথ ধরে আমিষজাত খাদ্যে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এগোচ্ছে সঠিক পথেই। এই উন্নয়ন যাত্রায় ডব্লিউএফপি বাংলাদেশের অন্যতম অংশীদার। ডব্লিউএফপি খাদ্য সম্পর্কিত  অর্জিত জ্ঞান এবং প্রযুক্তি পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।


টেকসই খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা খাদ্য নিরাপত্তার চতুর্থ স্তম্ভ। যেকোন মহামারীর ন্যায় করোনা সংক্রমণও আঘাত এনেছে টেকসই খাদ্য ব্যবস্থার উপর। করোনার প্রাদুর্ভাবের একেবারে শুরুর দিকে গত এপ্রিলে এক নিবন্ধে ডবিøউএফপি আশঙ্কা করেছিল, করোনার প্রভাবে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা উন্নয়নশীল অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে, যা দেশগুলোর টেকসই খাদ্য ব্যবস্থাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে। কৃষি ও শিল্প খাতে বরাদ্দকৃত প্রণোদনার সুষ্ঠু বণ্টন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে শ্রমঘন শিল্প স্থাপনের কার্যক্রম দ্রæত বাস্তবায়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ন্যায় বাহ্যিক ঝুঁকি হ্রাসকরণ, জমি, মাটি এবং জলের মতো প্রাকৃতিক সম্পদের  যথাযথ ব্যবহারই নিশ্চিত করতে পারে টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা। বাংলাদেশ তথা বিশ্বের প্রতিটি খাদ্য সংকটাপন্ন এলাকায় কাজ করে যাচ্ছে ডবিøউএফপি। বছরের পর বছর ধরে।


১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জাতিসংঘের এই সংস্থা ক্ষুধাকে জয় করার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। যুদ্ধ-সংঘর্ষিত অঞ্চলে নিরীহ ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে থেকে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ে খাদ্য সরবরাহের মাধ্যমে শিশুদেরকে বিদ্যালয়ে ধরে রাখার মতো অভিনব কর্মসূচি তাঁদেরই সৃষ্টি। সর্বোপরি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাকে যুদ্ধ ও সংঘাতের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে না দিয়ে বিশ্বে শান্তি স্থাপনে তাদের অবদান অনন্য, অতুলনীয়। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন তাঁদের অবদানকে মহিমান্বিত করেছে। ২০২০ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ায় জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিকে অনেক অনেক অভিনন্দন। য়    

জেলা প্রশাসক, মেহেরপুর, মোবাইল : ০১৮২০৮১০৫৭১, ই-মেইল :  monsuralamkhan@gmail.com

বিস্তারিত