পটভূমি : বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণে লক্ষ্যের বিপরীতে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ক্রমহ্রাসমান জমির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত ফসল উৎপাদন আজ সময়ের দাবি। কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণে আগামীর কৃষি সম্প্রসারণ কর্মীর জন্য চাই মাঠ চাহিদাভিত্তিক বিজ্ঞানসম্মত, আধুনিক ও প্রায়োগিক কৃষি শিক্ষা কার্যক্রম। এজন্য কৃষি শিক্ষার আধুনিকায়ন ও হাতেকলমে প্রয়োগিক শিক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় ১৬টি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে কৃষিবিষয়ক তথা ফসল উৎপাদন, মৎস্য চাষ ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক প্রযুক্তিসমূহের তাত্ত্বিক, ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক শিক্ষার পাশাপাশি দেশের কৃষি সম্প্রসারণ কার্যক্রমের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনে মাঠ সংযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কৃষিক্ষেত্রে দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।
শিখি-করি-খাই উদ্যোগের কোঅর্ডিনেটরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং এটিআইয়ের প্রশিক্ষকদের নির্দেশনায় শিক্ষার্থীবৃন্দ ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক কার্যক্রমে শাকসবজি, ফলমূলসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকিবিহীন কৃষি পণ্য উৎপাদন করে আবাসিক হোস্টেল এবং নিজ বাড়িতে তাদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করছে। সেসাথে হোস্টেলের খাদ্য ব্যয় হ্রাস করাসহ শিক্ষার্থীরা শ্রমভিত্তিক কার্যক্রমের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের মাধ্যমে ‘সেমিস্টার টিউশন ফি’ অর্জন করে শিক্ষা ব্যয় হ্রাসের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। কৃষি ডিপ্লোমা পাঠ্যক্রমের আওতায় ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক কার্যক্রমকে আরও গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার্থীদের শ্রমভিত্তিক অংশগ্রহণে আত্মনির্ভরতা অর্থাৎ কৃষি প্রযুক্তি শেখা, হাতেকলমে করা এবং খাদ্য চাহিদা পূরণসহ আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার লক্ষ্যে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ঝিনাইদহতে এক বিশেষ কার্যক্রম ‘শি-ক-খা’ (শিখি-করি-খাই) সাফল্যজনকভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
কার্যক্রমের উদ্দেশ্য
সাধারণ উদ্দেশ্য
কৃষি ডিপ্লোমা পাঠ্যক্রমের আধুনিক প্রযুক্তিগুলোর তত্ত্বীয় জ্ঞান অর্জন, উৎপাদন সম্পর্কিত লব্ধ জ্ঞান হাতেকলমে প্রায়োগিক চর্চার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ঝুঁকিবিহীন কৃষি পণ্য উৎপাদন এবং তা গ্রহণের মাধ্যমে পুষ্টিমান উন্নয়ন, শ্রমভিত্তিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়ে শিক্ষা ব্যয় হ্রাসসহ দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠে আত্মনির্ভরশীল হওয়া।
নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য
১. পাঠ্যক্রমের বিষয়াবলির তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন;
২. লব্ধ জ্ঞানের প্রায়োগিক প্রয়োগে স্বাস্থ্য ঝুঁকিবিহীন কৃষিপণ্য উৎপাদন;
৩. পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও অতিরিক্ত আয় থেকে শিক্ষা ব্যয় পরিশোধ;
৪. দক্ষ জনশক্তি হিসেবে দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হওয়া
শি-ক-খা উদ্যোগ
কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ঝিনাইদহতে অক্টোবর ২০১৩ থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় এবং এ পর্যন্ত তিনটি সেমিস্টারে মোট ২৭২ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। প্রতিটি এটিআইতে তত্ত্বীয় পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীকে ব্যবহারিক বিষয়ে হাতেকলমে কাজ করানো হয়। বিগত অক্টোবর ২০১৪ মাসে অধ্যক্ষ ও মুখ্য প্রশিক্ষকদের যোগদানের পর ‘শি—-ক—-খা’ (শিখি-করি-খাই) উদ্যোগের পরিকল্পনা করা হয় এবং এর উদ্দেশ্য ও উপকারিতা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় এবং মনস্তাত্বিকভাবে উদ্বুদ্ধ করার ফলে তাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ এবং শ্রমভিত্তিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সদিচ্ছা দেখা যায়। ফলশ্রুতিতে এটিআই ঝিনাইদহতে বৃহত্তর আঙ্গিকে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে শিখি-করি-খাই শিরোনামে আত্মনির্ভরতা কার্যক্রম শুরু হয় এবং শিক্ষার্থীরা গ্রুপ ভিত্তিতে বরাদ্দকৃত প্লটে সবজি উৎপাদন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়। গ্রুপভিত্তিক প্লট ছাড়াও হোস্টেলে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরাসহ ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থানকারী উদ্যোগী শিক্ষার্থীরা প্রশিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাণিজ্যিকভাবে সবজি উৎপাদন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে উৎপাদিত ফসল হ্রাসকৃত মূল্যে হোস্টেলের খাদ্য তালিকায় যোগ করাসহ অতিরিক্ত সবজি বাজারজাতকরণের মাধ্যমে শিক্ষা সফর, খেলাধুলা, জ্ঞানচর্চাসহ শিক্ষা ব্যয় হ্রাসের জন্য আয় করছে।
এ রকম আত্মনির্ভরশীল কর্মকাণ্ডের সম্পৃক্ততার কারণে তাদের মনোবল দৃঢ় হচ্ছে। এরই মধ্যে ইনস্টিটিউটের একমাত্র পুকুরটিকে শিক্ষার্থীদের মৎস্য চাষ ব্যবস্থাপনা পাঠ্যক্রমের আওতায় মাছ চাষের ব্যবহারিক ক্ষেত্র হিসেবে কাজে লাগিয়ে সেখানে মনোসেক্স তেলাপিয়াসহ রুই, কাতল ও কার্পজাতীয় মাছের পোনা ছাড়া হয়েছে। প্রশিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণমূলক স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মাছের চাষাবাদ কলাকৌশল শেখা এবং ব্যবহারিক কাজের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে ভবিষ্যতে মাছ চাষের জন্য ক্ষুদ্র-মাঝারি খামার গড়ে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবে। উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিক্রয়ের অর্থ বিধিমোতাবেক স্বেচ্ছাশ্রমে অংশগ্রহণের আনুপাতিক হারে সব শিক্ষার্থীর (সাধারণ উপকারভোগী এবং অংশগ্রহণকারী উপকারভোগী) নামে জমা করা হয়, যা ব্যবহার করে শিক্ষা সফর, খেলাধুলার সামগ্রী ক্রয় এমনকি শিক্ষার্থীদের আংশিক ‘সেমিস্টার টিউশন ফি’ পরিশোধে ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও এ উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে নিজ ক্যাম্পাসে পরিছন্নতা, উন্নয়ন, বৃক্ষরোপণসহ অন্যান্য এলাকায় বৃক্ষরোপণ, সবুজায়ন, সামাজিক বনায়ন ইত্যাদি সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
অর্থ ব্যবহার
শি-ক-খা কার্যক্রমে প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক উপকরণ খাত হতে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। মাছ চাষসহ অন্যান্য কৃষি পণ্য উৎপাদনে অধিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে ইনস্টিটিউটে কর্মরত প্রশিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী যৌথভাবে অর্থ জোগান দিতে সম্মত হয়েছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নিয়মানুযায়ী আবর্তক তহবিল ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে জমি, স্থাপনা বা পুকুর ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়মানুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হবে। এ ধরনের মহতী উদ্যোগে যে কোনো ব্যক্তি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল (ঈঝজ) হতে সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। এছাড়াও ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা নিজস্ব তহবিল গঠন করে তা ব্যবহার করতে পারে। এমনকি নার্সারি কার্যক্রম, উচ্চমূল্য ফসল উৎপাদন ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের চুক্তিভিত্তিক উৎপাদন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেও ব্যয় নির্বাহ করা যেতে পারে।
শি-ক-খা উদ্যোগ পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা
অধ্যক্ষ, এটিআই ঝিনাইদহ জনাব হানিফ মোহাম্মদ পদাধিকার বলে শি—-ক—-খা উদ্যোগের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এ উদ্যোগকে সাফল্যম-িত করার জন্য সার্বিকভাবে পরামর্শ, সহযোগিতা ও বিধি মোতাবেক পৃষ্ঠপোষকতা করেন। ইনস্টিটিউটের মুখ্য প্রশিক্ষক জনাব মাহফুজ হোসেন মিরদাহ এ উদ্যোগের কোঅর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি গৃহীত কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় সাধন ও তা সাফল্যজনকভাবে সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করেন। তিনি এ উদ্যোগের নতুন নতুন কার্যক্রম চিহ্নিতসহ তা একেকটি প্রকল্প হিসেবে শুরুর জন্য পরিকল্পনা প্রণয়নে সার্বিক সহযোগিতা করেন। একেকটি কার্যক্রম প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করা হলে তা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য এটিআইয়ের প্রশিক্ষকদের মধ্য হতে একজনকে দায়িত্ব দেয়া করা হয়। প্রধান পৃষ্ঠপোষকের নেতৃত্বে সব প্রশিক্ষকের সমন্বয়ে একটি ‘শি-ক-খা পরিচালনা পরিষদ’ উদ্যোগটির সব কার্যক্রম পরিচালনার নীতিগত ও অর্থনৈতিক অনুমোদন প্রদান করেন। পরিচালনা পরিষদ একাধিক প্রশিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে কোনো প্রকল্প ব্যবস্থাপনার জন্য দায়িত্ব প্রদান করতে পারবেন। প্রকল্প সমাপ্তের পর প্রকল্পে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশিক্ষক আয়-ব্যয় হিসাবপূর্বক লভ্যাংশ নির্ধারণ করবেন এবং পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত হিসেবে লভ্যাংশের অর্থ বণ্টন করবেন এবং সংশ্লিষ্টদের অবগত করবেন। বিভিন্ন সময়ে ‘শি-ক-খা পরিচালনা পরিষদ’ এর সিদ্ধান্তের আলোকে উদ্যোগটি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা যেতে পারে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
কৃষি ডিপ্লোমা পাঠ্যক্রমের বিন্যাস অনুযায়ী আগামীতে শি-ক-খা কার্যক্রমে পাখি ও মুরগি পালন, গরু মোটাতাজাকরণ, ছাগল পালন, মাশরুম চাষ, নার্সারি স্থাপন, কেঁচো কম্পোস্ট ইত্যাদি কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিটি কার্যক্রমকে একেকটি প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করে ক্লাসের পূর্বে বা পরে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে প্রশিক্ষকদের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাশ্রমে অংশগ্রহণ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে এবং উপকারভোগী হিসেবে মুনাফার একটি অংশ তাদের নামে জমা হতে থাকবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা অভিজ্ঞতা লাভ করে নিজেদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারবে। এভাবে সব শিক্ষার্থী পাঠ্যক্রমের সব বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে পুষ্টিমান উন্নয়ন ও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়ে ‘সেমিস্টার টিউশন ফি’ পরিশোধের প্রয়োজনীয় অর্থের একটি বিরাট অংশ প্রদানে সমর্থ হবে বলে আশা করা যায়। অত্র ইনস্টিটিউটে এ কার্যক্রমের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ডিএইর আওতাধীন অন্যান্য সরকারি এটিআইগুলোতে এ উদ্যোগ চালু করা যেতে পারে। বর্তমানের সীমাবদ্ধতাগুলো অতিক্রমে বৃহত্তর আকারে বিভাগীয় উদ্যোগের পাশাপাশি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ অন্যান্য আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় ‘শি—-ক—-খা’ কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ঝিনাইদহর কৃষি ডিপ্লোমা পাঠ্যক্রমের শিক্ষার্থীদের আত্মনির্ভরতা উদ্যোগকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে যেতে পারে।
* কোঅর্ডিনেটর (শিখি-করি-খাই) এবং মুখ্য প্রশিক্ষক, এটিআই, ডিএই, ঝিনাইদহ, ফোন-০১৫৫২৩৪০১৮৮
জলবায়ু সম্মেলন ‘কপ ২১’ শেষ হয়েছে গত ডিসেম্বরে প্যারিসে। রাজনীতিবিদ, পরিবেশবাদী, বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে ‘প্যারিস চুক্তি ২০১৫’ এর সবল-দুর্বল দিক নিয়ে, সীমাবদ্ধতা ও সম্ভাবনা নিয়ে, অঙ্গীকার ও স্বদিচ্ছা নিয়ে। প্রায় প্রতিদিনই প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে, সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আসন্ন ক্ষতি ও অভিযোজনের বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণ ও আলোচনা চলছে দুনিয়াতে। ১৯৯৫ সনে বার্লিনে শুরু হয়ে এ পর্যন্ত ২১টি সম্মেলন হয়েছে। কপ ৩ সম্মেলনে ১৯৯৭ সনে কিওটা প্রটোকল গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি জলবায়ু সম্মেলনেই পরিকল্পনা করা হয়েছে সুন্দর ও সবুজ পৃথিবীর জন্য। প্রতিটি সম্মেলনেই কার্বন নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকার করা হয়েছে। নবায়নযোগ্য গ্রিন এনার্জি নিয়ে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ কমবেশি কাজ করলেও কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। পূর্বের চুক্তিগুলোতে আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকায় অনেক দেশই চুক্তি মানেনি অথবা চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে।
নানা কারণে ‘কপ-২১’ বিশ্ববাসীর কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত ‘কপ ১৫’ সম্মেলনের হতাশা কাটিয়ে অধিকাংশ দেশ আশার আলো দেখেছে প্যারিস চুক্তিতে। কেউ কেউ আগের যে কোনো জলবায়ু চুক্তির চেয়ে প্যারিস চুক্তি অনেক শক্তিশালী ও উচ্চাভিলাসী আখ্যায়িত করেছে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ অবস্থানে থেকে কার্বন নিঃসরণে অবদান রাখার কথা বলেছে। কৃষিপ্রধান ও ভৌগোলিকভাবে দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশের জন্য এবারের জলবায়ু সম্মেলন অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
সব জলবায়ু সম্মেলনের মূল এজেন্ডা ছিল কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের নিঃসরণ হ্রাস। বায়ুম-লে প্রাক শিল্প যুগে কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব ছিল ০.০২৮০ পিপিএম। বর্তমানে ০.০৩৮৪ পিপিএম। বার্ষিক বৃদ্ধির হার ০.৪ শতাংশ। কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের মাত্রা ১০৪ পিপিএম বৃদ্ধির ফলে প্রকৃতির সার্কিট ও সফ্টওয়ার এলোমেলো হয়ে গেছে। এখন কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস এক আতঙ্কের নাম, বিভীষিকার নাম, ঘুম হারাম করা বিষয়ের নাম।
কার্বন নিঃসরণ এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং নাটকে বাংলাদেশ এক ট্র্যাজিডির নাম, চরম দুর্ভাগা দেশের নাম। মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণ বিশ্বে সর্বনিম্ন হওয়া সত্ত্বেও এর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণ ১৮.৫ টন, জাপানের ৯.৫ টন, মালয়েশিয়ার ৭.৭ টন, ভারতের ০.৮ টন, সেখানে বাংলাদেশের নিঃসরণ মাত্র ০.৩ টন। গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণে আমাদের অবদান অনেক কম হলেও ক্ষতির সবচেয়ে বড় দানব আমাদের ঘাড়ে। ‘কার পাপের প্রায়শ্চিত্ত কে করে’!
প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ২১০০ সন পর্যন্ত পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২০ সেলসিয়াস (সে.) এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। একুশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ‘কার্বন নিউট্রাল’ পৃথিবীর স্বপ্ন দেখা হয়েছে। প্যারিস চুক্তির এই ২০ সে. আবার অনেক ‘যদি’ ‘কিন্তু’ এর ওপর নির্ভরশীল। কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের পূর্ববর্তী কোনো অঙ্গীকারই পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। সব ‘যদি’ , ‘কিন্তু’ উত্তীর্ণ হয়ে যদি আমরা তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২০ সে. এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারি তখন বাংলাদেশের কৃষির অবস্থা কী হবে, আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার অবস্থা কী হবেÑ এসব বিষয় দারুণভাবে ভাবিয়ে তোলে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আমাদের দুশ্চিন্তাটা অন্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি।
আইপিসিসির ৪র্থ সমীক্ষায় দেখা যায়, গত শতাব্দীতে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৭৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ শতাব্দীর শেষ নাগাদ ২.৫০ থেকে ৩.৫০ সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা আছে। বাংলাদেশের গড় বার্ষিক তাপমাত্রা গত ১৪ বছরে (১৯৮৫-১৯৯৮) মে মাসে ১০ সেলসিয়াস এবং নভেম্বর মাসে ০.৫ ০ সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধিতে ৮৩০০০০ হেক্টর জমির ক্ষতি করেছে। ২০৩০ সালে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১০-১৫% এবং ২০৭৫ সাল নাগাদ ২৭% বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে পারে ৪৫ সেমি.।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২০ সে. বাড়লে মৃত্তিকা অনুজীব, মৃত্তিকা রসায়ন ও প্রাণরসায়ন, মাটির বুনটও গঠন, মৃত্তিকা জৈব পদার্থের কি পরিবর্তন হবে। এসব পরিবর্তনের ফলে মাটির উর্বরতা ও উৎপাদনশীলতায় কি প্রভাব পড়বে। এসব ঝুঁকি মোকাবেলায় আমাদের সক্ষমতা কতটুকু, আমাদের আগ্রগতি কতটুকু এসব বিষয় নিয়ে ভাবার সময় এখনই। ২০৫০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা যদি আরও ১০ সেলসিয়াসও বাড়ে তাহলে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে মৃত্তিকা ইকোসিস্টেম, জলজ ইকোসিস্টেম এবং বায়ুম-ল। মৃত্তিকা অনুজীবের কার্যাবলি, আয়ন বিনিময়, পুষ্টি উপাদানের সহজলভ্যতা, মৃত্তিকা পানি চলাচল, মৃত্তিকা অম্লতা, জৈব পদার্থের পচন, শিকড়ের বৃদ্ধি মারাত্মকভাবে বিঘিœত হবে এবং ফলশ্রুতিতে ফসলের উৎপাদন হ্রাস পাবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সালোকসংশ্লেষণ, শ্বসনসহ উদ্ভিদের শরীরবৃত্তীয় সব কার্যাবলি প্রভাবিত হবে এবং ফলন কমে যাবে। ধানের পরাগায়ন, আলুর টিউবারাইজেশন তাপমাত্রা বাড়ার ফলে বিঘিœত হবে। ফসলের স্বাদ, আকার-আকৃতি, গুণগতমান, সংরক্ষণ গুণ অবনমিত হবে। রোগ ও পোকার আক্রমণ বাড়বে। বাংলাদেশের এখন প্রধান শস্য ঋতু রবি। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে উৎপাদিত ফসলের ৭০% উৎপাদিত হয়। শীতকালে তাপমাত্রা বাড়ার ফলে বোরো ধান, গম, আলু, শীতকালীন সবজি, আম, ফুল, ডাল ফসল, তেল ফসলসহ সব অপ্রধান ফসলের ফলন কমে যাবে। আবার বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে গেলে বন্যা ও জলাবদ্ধতার কারণে আউশ ধান, আমনধানসহ বর্ষাকালীন শাকসবজির উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পাবে। আকস্মিক বন্যায় বিঘিœত হবে হাওর এলাকার কৃষি। উপকূল, মোহনা ও নদী অববাহিকার ইকোসিস্টেম ও কৃষি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
২০৫০ সনে বর্তমানের তুলনায় ৬০% বেশি খাদ্য লাগবে। পক্ষান্তরে আবাদি জমি কমে যাবে অন্তত ২০ ভাগ। বর্তমানে হেক্টরপ্রতি ফসল উৎপাদন ৩.৪ টন, ২০৫০ সনে প্রতি হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদন করতে হবে ৬.০ টন। সঠিক অভিযোজন কৌশল বাস্তবায়ন করতে না পারলে দেশ খাদ্য সংকটের কবলে পড়বে।
গত তিন দশকে বাংলাদেশের কৃষিতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হলেও আমাদের কৃষি নানামুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। ক্রমহ্রাসমান আবাদি জমি, উর্বরতা হ্রাস, কৃষিতে জ্বালানির ব্যবহার, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সেচের পানি সঙ্কট, নদীভাঙন, রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ বাংলাদেশের কৃষিকে আরও নাজুক করেছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে কৃষিতে চ্যালেঞ্জসমূহ আরও জটিল হচ্ছে। আমরা দানাশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ফলন হ্রাসের সম্ভাবনা আছে সবজি, ফল ও মসলা ফসলের।
বাংলাদেশের জন্য একটি নিশ্চিত ও কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে পরিবর্তিত জলবায়ুতে আগামীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে লড়াই করতে হবে খরার সাথে, লবণাক্ততার সাথে, বন্যার সাথে, জলাবদ্ধতার সাথে, তাপদাহের সাথে, রোগ ও পোকামাকড়ের সাথে। আর এ লড়াই করতে হবে প্রযুক্তি দিয়ে, প্রজ্ঞা দিয়ে, সাহস আর স্বপ্ন দিয়ে। বৈরী পরিবেশ ও দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলায় সক্ষম ফসলের জাত উদ্ভাবন করতে হবে। ‘ক্লাইমেট স্মার্ট ’ টেকসই প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
প্যারিস চুক্তির ৯ম ধারার ১নং অনুচ্ছেদে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন ও মিটিগেশনের জন্য উন্নত বিশ্বের উন্নয়নশীল বিশ্বকে আর্থিক সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। প্যারিস চুক্তিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন দেশকে ক্ষতিপূরণের কলাকৌশল সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। আমাদের জোর লবিং অব্যাহত রাখতে হবে আর্থিক সহযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য। আমরা কোনো ঋণ চাই না। যাদের বিলাসিতার আগুনে আমার সোনার বাংলার মাটি দগ্ধ হচ্ছে, পানি দূষিত হচ্ছে, বাতাস বিষাক্ত হচ্ছে তাদের কাছে কোনো করুণা বা ঋণ চাই না, আমরা ক্ষতিপূরণ চাই। চুক্তির ১০ম ধারায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের কথা বলা হয়েছে। অভিযোজনের জন্য আমরা প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু পুরস্কার ‘ঈযধসঢ়রড়হ ড়ভ ঃযব ঊধৎঃয’ পাওয়ার পর আমাদের দাবি আরও জোরাল হয়েছে।
পরিবর্তিত জলবায়ুতে অভিযোজনের জন্য বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানী, কৃষিবিদসহ সংশ্লিষ্ট সবাই নিরলস পরিশ্রম করছে। জলাবদ্ধতা, খরা, লবণাক্ততা ও দুর্যোগের বিষয়টি মাথায় রেখেই চলছে কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কাজ। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনের যুগান্তকারী সফলতা দেখিয়েছে। বাংলাদেশের সরকার ও প্রযুক্তিবিদরা দেখিয়ে দিয়েছে কার্বনের উত্তাপে পুড়িয়ে মারতে চাইলেও আমরা বাঁচার পথ উদ্ভাবন করতে জানি। সরকারের সব পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। কৃষি শিক্ষা, কৃষি গবেষণা, কৃষি সম্প্রসারণের সব কার্যক্রমে জলবায়ু ইস্যুটি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে। আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে খরা, জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন করেছে। উন্নত পানি ব্যবস্থাপনা শুরু করা হয়েছে। স্বল্পমেয়াদি ফসলের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় শস্য বহুমুখীকরণ, ক্রপিং প্যাটার্ন পরিবর্তনসহ নানামুখী গবেষণা করা হচ্ছে। নাজিরপুরের ভাসমান সবজি চাষ জাতিসঙ্ঘের এফএও কর্তৃক এষড়নধষষু ওসঢ়ড়ৎঃধহঃ অমৎরপঁষঃঁৎধষ ঐবৎরঃধমব ঝুংঃবস(এওঅঐঝ) স্বীকৃতি লাভ করেছে।
যে কোনো বৈরিতা মানুষকে সাহসী করে, যে কোনো চ্যালেঞ্জ মানুষকে সৃজনশীল ও সক্ষম করে, দুর্যোগ-মহামারী করে আত্মপ্রত্যয়ী। জলবায়ু পরিবর্তনের এ মহাচ্যালেঞ্জ আমাদের সরকারকে সদাজাগ্রত, কৃষি বিজ্ঞানী ও কৃষিবিদদের করেছে উদ্ভাবনী (রহহড়াধঃরাব), কৃষককে করেছে আত্মপ্রত্যয়ী ও সাহসী। আমাদের কৃষকরা এখন ‘ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার’ চর্চা করছে, আমাদের বিজ্ঞানীরা ‘ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট’ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে, আমাদের সরকার ‘গ্রিন ইকোনমি’ নিয়ে কাজ করছে। আমরা এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যাপক সফলতা ও সক্ষমতা দেখিয়ে চলেছি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি পূরণের ন্যায্য হিস্যা পেলে আমাদের নিজস্ব প্রযুক্তি, নিজস্ব জনবল দিয়ে আগামীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে বলে দৃঢ়বিশ্বাস।
সরগম (ঝড়ৎমযঁস নরপড়ষড়ৎ খ. গড়বহপয) আফ্রিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ দানাদার দেশীয় ফসল, যা পৃথিবীব্যাপী জন্মে। বাংলাদেশ এবং ভারতে সরগমের জনপ্রিয় নাম ‘জোয়ার’। বিভিন্ন দানাদার শস্য যেমন- ধান, গম, ভুট্টা, বার্লি, সরগম, মিলেটস, রাই, অট ইত্যাদি শস্যগুলোর মধ্যে আবাদি জমির পরিমাণের দিক থেকে সরগম ৫ম স্থান দখল করে আছে এবং পৃথিবীতে এর বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৬০ মিলিয়ন টন। সরগম মানুষের এবং পশুপাখির খাদ্য হিসেবে পৃথিবীব্যাপী সমাদৃত। বাংলাদেশেও বিক্ষিপ্তভাবে এর চাষ হয়ে থাকে। খরাপীড়িত এলাকায় চাষের ব্যাপক উপযোগিতা থাকায় বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এর ব্যাপক চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। ফসলটি খরাসহিষ্ণু হওয়ায় বাংলাদেশে সাধারণত চরাঞ্চলে অথবা কম উর্বর জমিতে স্বল্প আয়েশে সরগমের চাষ করা যায়। সরগম প্রধান খাদ্যশস্য হিসেবে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে গরিবের খাদ্য হিসেবে ব্যাপকভাবে প্রচলিত এবং এসব এলাকায় ভুট্টার চেয়ে এর পারিবারিক ব্যবহার বেশি এবং এ ফসল খাদ্য নিরাপত্তায় মূল্যবান অবদান রাখছে। প্রতি বছর দক্ষিণ আফ্রিকাতে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টন সরগম উৎপন্ন হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে সরগম আফ্রিকার শুষ্ক পশ্চিম এলাকা থেকে আর্দ্রতাপূর্ণ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে স্থানান্তরিত হচ্ছে। এটি ব্যাপকভাবে প্রায় বৃষ্টিহীন এবং গ্রীষ্মম-লীয় অঞ্চলে জন্মে। বর্তমানে প্রায় ১০০টি দেশে সরগম উৎপন্ন হয় এবং এর প্রায় ৬৬টি প্রজাতি রয়েছে।
সরগম ঘাস পরিবারের (এৎধসবহব) একটি দানাদার ফসল। এর শিকড় মটির নিচের দিকে এবং পাশাপাশি যথাক্রমে ২ মিটার ও ১ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। পাতা সবুজ প্রশস্ত কিন্তু ভুট্টা পাতার মতো তত প্রশস্ত নয়। প্রতি গাছে ৮-২২টি পাতা থাকে। পাতায় পাতলা মোমের আবরণ থাকে। কা- শক্ত এবং শুষ্ক থেকে সরস এবং মিষ্টি। এ গাছ আড়াই থেকে তিন মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। সরগমের বীজ ডিম্বাকৃতি থেকে গোলাকার এবং রঙ লাল, সাদা, হলুদ, বাদামি রঙের হতে পারে। সরগম বীজ শক্ত আবরণ (ঞবংঃধ), ভ্রুণ (ঊসনৎুড়), ঊহফড়ংঢ়বৎস এর সমন্বয়ে গঠিত। পুষ্পদ- সাধারণত সোজা এবং এর দৈর্ঘ্য ৭৫ থেকে ৫০০ মিলিমিটার। প্রতি পুষ্পমঞ্জুরিতে প্রায় ৮০০-৩০০০টি বীজ থাকে।
সরগম সাধারণত কম উর্বর, বেলে দো-আঁশ ও কাদামাটিতে ভালো জন্মে। মূলত এটি গ্রীষ্মম-লী ও উষ্ণ আবহাওয়া পছন্দের একটি ফসল। অঙ্কুরোদগম এবং গাছ বৃদ্ধির জন্য উচ্চ তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। ১৫-১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে ৮০ ভাগ বীজ অঙ্কুরিত হয়। ২৫ থেকে ৩২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সর্বোত্তম বৃদ্ধি এবং উন্নয়ন সাধিত হয়। সরগম স্বল্প দিনের উদ্ভিদ বিধায় এ উদ্ভিদের প্রজননের জন্য স্বল্প দিন এবং দীর্ঘ রাতের প্রয়োজন হয়।
উপযোগী জমি ও মাটি : সরগম প্রধানত উঁচু, মাঝারি উঁচু ও মাঝারি জমি এবং বেলে-দো-আঁশ ও অগভীর কাদামাটিতে ভালো জন্মে। পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা থাকতে হবে। সরগম চাষের জন্য মাটির আদর্শ পিএইচ মান ৬-৭.৫।
বীজ বপনের সময় : রবি ও খরিফ উভয় মৌসুমেই সরগম চাষ করা যায়। রবি মৌসুমে ১৫ অক্টোবর-নভেম্বর (কার্তিক-পৌষ) এবং খরিফ মৌসুমে ১৫ এপ্রিল-মে (ফাল্গুন-চৈত্র) মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
বীজের হার : সাধারণত হেক্টরপ্রতি ৩০-৩৫ কেজি বীজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বীজ গজানোর ক্ষমতা ৮৫% এর বেশি হলে ভালো হয়। বীজ লাইন করে বপন করা উত্তম।
বপন পদ্ধতি : ভিটাভেক্স-২০০ অথবা থিরাম প্রতি কেজি বীজে ৩ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। সারিতে বা ছিটিয়ে সরগম বীজ বপন করা যায়। সারিতে বপনের জন্য জমি তৈরির পর সরু নালা তৈরি করে ২৫-৩০ সেমি. দূরত্বের সারিতে জো অবস্থায় ২-২.৫ সেমি. গভীরে বীজ বপন করতে হয়। ২৫-৩০ সেমি. দূরত্বে সারিতে বপন করা হলে গাছের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২.৫ লাখ এবং হেক্টরপ্রতি ৩ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।
রাসায়নিক সারের মাত্রা : সাধারণত হেক্টরপ্রতি ১৩০ কেজি ইউরিয়া, ২০০ কেজি টিএসপি এবং ৮০ কেজি এমওপি সার ব্যবহার করা হয়। সেচসহ চাষের ক্ষেত্রে জমি তৈরির সময় ৫০ ভাগ ইউরিয়া এবং সম্পূর্ণ টিএসপি এবং এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি ৫০ ভাগ ইউরিয়া ২ কিস্তিতে ১৫ দিন ও ৩০ দিন পর উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। সেচ ছাড়া চাষের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সার অর্থাৎ ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। গন্ধক সারের অভাবজনিত মাটিতে হেক্টরপ্রতি ২৩০-২৫০ কেজি জিপসাম সার এবং ১০-১২ মে.টন জৈবসার ব্যবহার করা হলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এতে শুধু ফলনই বাড়ে না, বীজের পুষ্টিগত মানও উন্নত হয়।
সেচ : সাধারণত সরগম চাষে সেচ প্রয়োজন হয় না। তবে বেশি ফলন পেতে চাইলে কয়েকবার সেচ দিতে হবে। সাধারণত বীজ বোনার ২০-৩০ দিন পর ১ম সেচ (গাছে ফুল আসার আগে ইড়ড়ঃরহম ংঃধমব) এবং ২য় সেচ বীজ বপনের ৫০-৬০ দিন পর প্রদান করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনোক্রমেই জমিতে পানি না জমে।
পরিচর্যা : সারিতে সমান দুরত্বে বীজ বোনা সম্ভব হয় না বিধায় চারা গজানোর পর পাতলা করার প্রয়োজন হতে পারে। বপনের ৩০-৩৫ দিন পর চারাগুলোর দূরত্ব ৬-৮ সেমি. রেখে বাকি চারা উঠিয়ে পাতলা করে দিতে হয়। আগাছা দেখা দিলে নিড়ানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
পোকামাকড় : সরগম সাধারণত পোকামাকড় দ্বারা অন্যান্য ফসলের তুলনায় কম আক্রান্ত হয়।
ঝড়ৎমযঁস গরফমব দেখা দিলে কার্বোফুরান/মেলাথিয়ন গ্রুপের কীটনাশক ১২৫ মি.লি/হে. হারে ব্যবহার করতে হবে।
রোগ ও দমন ব্যবস্থাপনা : সরগম সাধারণত রোগবালাই দ্বারা কম আক্রান্ত হয়। তবে সরগমের বেশ কিছু রোগবালাই রয়েছে।
রোগ প্রতিরোধের জন্য বীজ শোধন করা জরুরি। থিরাম/ভিটাভেক্স-২০০ প্রতি কেজি বীজের জন্য ৩ গ্রাম হারে ব্যবহার করে বীজ শোধন করতে হয়। ফসল এনথ্রাকনোস ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হলে কারবেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। সরগম ফসল পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হলে তা জৈব দমনের মাধ্যমে দমন করা শ্রেয়। রোগবালাইয়ের ব্যাপকতা বেশি হলে অনুমোদিত মাত্রায় কীটনাশক এবং বালাইনাশক প্রয়োগ করে পোকামাকড় ও রোগ দমন করতে হবে।
ফসল কাটা ও মাড়াই : বপনের ৯৫-১১০ দিন পরে গাছের পাতা কিছুটা হলুদ বর্ণ ধারণ করলে ফসল কাটার উপযুক্ত সময় হবে। বীজ দাঁত দিয়ে কাটলে কট করে শব্দ হলে বুঝতে হবে ফসল কাটার উপযুক্ত সময় হয়েছে। ফসল পেকে গেলে দিনের প্রথম ভাগে সরগম কাটা উচিত তা না হলে দানা ঝরে যেতে পারে। ২-৩ দিন শুকানোর পর মাড়াই করে ভালো করে শুকিয়ে ঠা-া করে টিন, ড্রাম অথবা মোটা পলিথিন ব্যাগে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
ফলন : প্রথম সারির ১০টি দেশের গড় ফলন- ১৩৩৬.০ কেজি/হেক্টর। অপর পক্ষে ভারত এবং পাকিস্তানের হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ৮১৮.৬ এবং ৬২০.০ কেজি। ভালো জাতের বীজ ব্যবহার ও উপযুক্ত পরিচর্যা করা হলে গড় ফলন ২০০০ কেজি/হেক্টরের ওপরে পাওয়া যাবে।
সরগমের পুষ্টিমান
সরগম প্রধানত একটি শ্বেতসার সমৃদ্ধ দানাদার ফসল, এতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ, ১১% উঁচু মানের প্রোটিন এবং ৭৪% কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। তাছাড়া খনিজ পদার্থ ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, ফসফরাস এবং প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-বি যেমন- থায়ামিন ও রিবোফ্লাবিন বিদ্যমান,যা দেহ সুস্থ রাখার জন্য অপরিহার্য।
সরগমের ব্যবহার : মানুষের খাদ্য ছাড়াও সরগম পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া সরগম হতে ইথানল, অ্যালকোহল, স্টার্চ, আঠা, কাগজ, জৈব জ্বালানি তৈরি করা যায়। সরগম হতে চাল, আটা, বিস্কুট, কুকিস, বেকড বিনস, পপড সরগম, মোয়া, নাড়ু, পায়েশ ইত্যাদিসহ বিভিন্ন টিনজাত খাদ্য প্রস্তুত করা হয়।
বাংলাদেশে এ ফসলটি দীর্ঘদিন ধরে স্বল্প পরিসরে চাষ হয়ে আসছে। ছোট দানা হিসেবে এ শস্যটি গরিবের খাদ্য হিসেবে পরিগণিত। ক্রমান্বয়ে এ ফসলের চাষাবাদ কমে যাচ্ছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সমগ্র বাংলাদেশে মাত্র ৪০০ হেক্টর জমিতে এ ফসলের চাষ হচ্ছে। সরগম খরা প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং তুলনামূলকভাবে বেশ কম খরচে এর চাষ করা যায়। চাল, গম, ভুট্টার মতোই সরগম পুষ্টি সমৃদ্ধ। খরা সহিষ্ণু হওয়ায় ফসলটি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলসহ দেশের চরাঞ্চল ও অন্যান্য উঁচু ও মাঝারি জমিতে আবাদ বৃদ্ধির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে এ ফসলের উন্নয়ন সম্ভব। য়
রুকোলা (জঁপড়ষধ) হচ্ছে সরিষা পরিবারের (ইৎধংংরপধপবধব) একটি বর্ষজীবী, দুর্বল কা- ও সবুজ পাতাবিশিষ্ট উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে ঊৎঁপধ ংধঃরাব। এ প্রজাতির দেহগত ক্রোমোসোম সংখ্যা ২হ = ২২ এবং বীজই হচ্ছে বংশবিস্তারের একমাত্র মাধ্যম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এটি ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। যেমনÑ ইতালিতে রুকোলা, আমেরিকাতে আরুগুলা, জার্মানিতে সালাট্রুকা, স্পেনে ইরুকা এবং ফ্রান্সে রকেট। রুকোলার উৎপত্তিস্থান হচ্ছে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল। ইতালিতে রুকোলা, রোমান কাল থেকে চাষ করা হচ্ছে, তাই ধারণা করা হয় যে, ইতালিই এর উৎপত্তিস্থান। এ অঞ্চল থেকে পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশ ও মহাদেশে এটি বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে এটি বাণিজ্যিকভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ (ইতালি, ফ্রান্স, পর্তুগাল এবং চেকপ্রজাতন্ত্র), মিসর, তুরস্ক ও আমেরিকাতে (ইন্ডিয়ানা এবং মিডওয়েস্ট) চাষ হচ্ছে। রুকোলা একটি শীত পছন্দকারী উদ্ভিদ। শীতকালে দ্রুত পাতার বৃদ্ধি ঘটে কিন্তু বসন্তকালে গরম আবহাওয়ায় আকাশাভিমুখে ফুলের স্টক তৈরি করে এবং বীজ ধারণ করে। এ উদ্ভিদটি প্রায় ২০-১০০ সেমি. পর্যন্ত উচ্চতা হয়ে থাকে। বীজ বপনের এক মাস পরেই পাতা সংগ্রহ করা যায়। রুকোলার পাতা রসালো, লম্বাটে ও খাঁজযুক্ত। শিকড় ছাড়া এ উদ্ভিদের সব অংশই যেমনÑ পাতা, ফুল, অপরিপক্ব পড ও বীজ খাবার উপযোগী। তবে পাতাই খাদ্য হিসেবে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। রুকোলার সবুজ সতেজ পাতা সরাসরি কাঁচা সালাদ হিসেবে টমেটো, জলপাই ও পনীরের সাথে, পিজা তৈরির পর পরিবেশনের সময় পিজা টপিং হিসেবে, পাস্তার সাথে এবং মাছ ও মাংস দিয়ে তৈরি বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। এছাড়াও এর বীজ থেকে ভোজ্যতেল উৎপাদন করা যায়। কখনও কখনও এটি শাক হিসেবে পালংশাকের মতো রান্না করে খাওয়া যায়।
সবুজ শাকসবজির স্বাস্থ্যপকারিতা এখন সর্বজনবিদিত, কারণ এতে স্বাস্থ্য উদ্দীপক রাসায়নিক উপাদানের প্রাচুর্যতা রয়েছে। নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে সবুজ রুকোলা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ ও রক্তনালি সংক্রান্ত রোগের বিরুদ্ধে আমাদের দেহে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি, যা এরই মধ্যে বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত। আমেরিকার ন্যাশনাল নিউট্রিয়েন্ট ডেটাবেস (স্ট্যান্ডার্ড রেফারেন্স) অনুযায়ী প্রতি ১০০ গ্রাম সবুজ রুকোলা পাতাতে শক্তি রয়েছে মাত্র ২৫ কিলোক্যালরি কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে ফলিক অ্যাসিড (৯৭ মাইক্রোগ্রাম), ভিটামিন-এ (২৩৭৩ আইইউ), ভিটামিন-সি (১৫ মিলিগ্রাম), ভিটামিন কে (১০৮.৬ মাইক্রোগ্রাম) এবং ভিটামিন-বি-কমপ্লেক্স। গ্রহণযোগ্য মাত্রায় রয়েছে ফ্লাভোনল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বক, ফুসফুস এবং মুখগহ্বর ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে। রুকোলা পাতাতে প্রচুর পরিমাণে কপার ও আয়রন জাতীয় খনিজ উপাদান রয়েছে। তবে স্বল্প পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ফসফরাস রয়েছে। এছাড়াও এর সবুজ পাতায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যসহায়ক রাসায়নিক উপাদান, যেমন সালফিউরাফ্যান, থায়োসায়ানেটস, আইসো-থায়োসায়ানেটস, ইনডলস ও আলফা-লিপোইক অ্যাসিড। এরা সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার যেমন- প্রোস্টেট, ব্রেস্ট, সারভিক্যাল, কোলন এবং ওভারিয়ান ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে। সালফিউরাফ্যান ‘হিস্টোন ডিঅ্যাসিটাইলেজ’ নামক এনজাইমের কার্যকারিতা ব্যাহত করার মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে। অস্ট্রেলিয়ান রুরাল ইন্ডাস্ট্রিজ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের (আরআইআরডিসি) প্রাক্কলন মতে, সবুজ রুকোলা পাতার ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা সরিষা পরিবারের অন্যান্য শাকসবজি থেকে অনেক বেশি। রুকোলার সবুজ পাতা যেহেতু সরাসরি পিজা এবং সালাদে ব্যবহৃত হয়, সেহেতু সবুজ পাতায় থাকা ক্লোরোফিল, হেটারোসাইক্লিক অ্যামাইনসের (যা সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রায় তেলে ভাজলে বা ঝলসালে নিঃসৃত হয়) কার্সেনোজেনিক প্রভাব থেকে রক্ষা করে। রুকোলাতে বিদ্যমান আলফা-লিপোইক এসিড রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও নিয়মিত রুকোলা পাতা গ্রহণ করলে হৃৎপি- এবং রক্তনালির রোগের ঝুঁকি কমে।
আমাদের দেশে এ পর্যন্ত কোথাও রুকোলা চাষের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে ২০১৪ সনে বাংলাদেশে প্রথম ইতালি থেকে বীজ সংগ্রহ করে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগে এ স্বাস্থ্যপোযোগী উদ্ভিদটি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। গবেষণার প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে যে, এটি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সারা বছর জন্মানো সম্ভব, তবে পাতার বৃদ্ধি ও উৎপাদন শীতকালে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু পাতার মতো সারা বছর বীজ উৎপাদন করা যায় না, শীতের শেষে বসন্তের প্রারম্ভে এ উদ্ভিদটি ফুল ও বীজ উৎপাদন করে। বাংলাদেশে রুকোলার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু সারা বছর পাতা উৎপাদন সম্ভব, সেহেতু গ্রামে বাড়ির আঙিনায় সামান্য একটু জায়গায় এবং শহরে ৪-৫টি টবে বাসার ছাদে কিংবা বেলকোনিতে জন্মিয়ে সারা বছর সতেজ পাতা পাওয়া সম্ভব। য়
‘সস্তায় পস্তা মেলে’ এ প্রবাদটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে অমিল। দামে সস্তা হলেই গুণগতমান খারাপ হয় না। কচুর কথাই বলি- এর প্রতি ১০০ গ্রাম পাতায় ৩৮.৭ মিলিগ্রাম লৌহ রয়েছে, যা অন্য কোনো খাবারে নেই। এছাড়া এতে আছে ১২০০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-এ, ৬৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ৮.১ গ্রাম শর্করা, ৬.৮ গ্রাম আমিষ, ৪৬০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৩৮.৭ মিলিগ্রাম লৌহ। অথচ বহু নামি-দামি সবজিতে পুষ্টির পরিমাণ কচু অপেক্ষা অনেক কম। শুধু তাই নয়, এর আবাদও অত্যন্ত সহজ এবং যে কোনো মাটিতে জন্মে। রোগ-পোকার আক্রমণ হয় না বললেই চলে। এরাসী পরিবারভুক্ত এ উদ্ভিদটি অত্যন্ত কষ্টসহিষ্ণু। খরা কিংবা জলবদ্ধতা সহ্য করার ক্ষমতা রাখে। এদের অন্যতম সদস্য পানিকচু, যার পাতা, কা-, ডাঁটা, লতি, কোনো কিছুই ফেলনা নয়। নিচু জমিতে নভেম্বর-মধ্য ডিসেম্বর আর মাঝারি নিচু হলে ফেব্রুয়ারি-মার্চে চাষের জন্য উপযুক্ত সময়। জাত নির্বাচনে বারি উদ্ভাবিত ‘লতিরাজ’ শ্রেয়। কারণ এর লতি খেলে গলা চুলকানোর আশংকা নেই। বাজারমূল্যও ভালো।
আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে জমিকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন মাটি ঝুরঝুরে হয়। অতঃপর সাকার অথবা বীজতলায় জন্মানো চারা সারি পদ্ধতিতে রোপণ করা উচিত। এক্ষেত্রে লাইন হতে লাইনের দূরত্ব হবে ১৮ ইঞ্চি। এজন্য প্রতি ১০০ বর্গমিটার জায়গার জন্য ৩৭০টি বীজ প্রয়োজন। চারা লাগানোর সময় সব পাতা, শিকড় এবং কা-ের নিম্নাংশ কেটে ফেলতে হবে। রোপণকালীন মাটি পানিসিক্ত না থাকলে পানি দিয়ে ভিজিয়ে নেয়া বাঞ্ছনীয়।
জমিতে হেক্টরপ্রতি যে পরিমাণ সার প্রযোজ্য তা হচ্ছেÑ গোবর ১০ টন, ইউরিয়া ১৫০ কেজি, টিএসপি ১০০ কেজি। গোবর, টিএসপির সবটুকু এবং পটাশের অর্ধেক জমি তৈরির সময় মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। ইউরিয়ার দুই ভাগের এক ভাগ আর পটাশের বাকি অংশ রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর এবং ইউরিয়ার অবশিষ্টাংশ ৮০-৯০ দিন পরে প্রয়োগ করতে হবে।
পরিচর্যার গুরুত্ব কম থাকলেও আশানুরূপ ফলন পেতে কিছু না করলেই নয়। তাই জমিকে সর্বদাই আগাছামুক্ত করে রাখতে হবে। গরু-মহিষ এবং অন্যান্য প্রাণী যেন ঢুকতে না পারে সেজন্য বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পানি কচু দাঁড়ানো পানি পছন্দ করে। তাই প্রয়োজনমতো সেচ দিয়ে পানি ধরে রাখতে হয়। অন্তত ইউরিয়া প্রয়োগের পর এবং লতি বের হওয়ার সময় ক্ষেতে ২-৪ ইঞ্চি পরিমাণ পানি ধরে রাখা ভালো।
সাধারণত কোনো পোকা কচুকে আক্রমণ করে না। তবে পাতার মড়ক রোগ মাঝে মাঝে দেখা দিতে পারে। এ রোগের লক্ষণ হলো পাতার ওপরে বাদামি রঙের গোলাকার দাগ দেখা যায়। পরে দাগগুলো বেড়ে একত্র হয়ে যায়, সেই সাথে পাতাও ঝলসে যায়। পরবর্তীতে কা- এবং কন্দে ছড়িয়ে পড়ে। অধিক তাপমাত্রা, আর্দ্র আবহাওয়া এবং একাধারে ৩-৪ দিন বৃষ্টি হলে রোগের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। প্রতিকার হচ্ছে রোগ দেখা দেয়া মাত্র প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম রিডোমিল এমজেড-৭২ ডব্লিউ কিংবা ডাইথেন-এম ৪৫ পনেরো দিন অন্তর অন্তর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।
পানি কচুরলতি এবং কা- হতে দুই ধরনের সবজি পাওয়া যায়। ‘লতিরাজ’ তিন মাসের মধ্যেই লতি দিতে আরম্ভ করে। কা- না তুললে ৭-৮ মাস পর্যন্ত দেয়া চলতেই থাকে। ৩২-৩৬ ইঞ্চি লম্বা হলে লতি সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। এজন্য সময় লাগে ৮ থেকে ১০ দিন। সময়মতো না উঠালে লতির অগ্রভাগে চারা গজাতে শুরু করে। ফলে এর গুণাগুণ কিছুটা কমে যায়। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ২০-২৪ টন কচু উৎপাদন সম্ভব। অন্যান্য ফসলের মতো কচু উৎপাদনে ঝুঁকি নেই। একটু যতœ নিলেই কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়া যায়। তাই চাষের জন্য জমির পরিমাণ আরও বাড়ানো দরকার। এতে কেবল পুষ্টির চাহিদাই মিটবে না, পাশাপাশি লাভের অংকটাও হবে বড়। য়
ফসলের বাণিজ্যিক উৎপাদনে বালাইনাশকের ব্যবহার কৃষিতে নতুন কোনো বিষয় নয়। বিভিন্ন ধরনের রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে ফসলকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন বালাইনাশকের পরিকল্পিত ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা আছে। আবহাওয়াগত কারণে ও জলবায়ুগত পরিবর্তনের ফলে ফসল উৎপাদনে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে চাষিদের। এর মধ্যে রোগ ও পোকামাকড়ের সমস্যা অন্যতম। আর এ কাজে সহযোগিতা করছেন দেশের অনেক বালাইনাশক কোম্পানি। তাদের লক্ষ্য হলো কৃষকের পাশে থেকে তাদের ফসল উৎপাদনে রোগবালাই দমনে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা এবং দেশের কৃষি উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখা। তবে বর্তমান সময়ে ফল-ফসলে বালাইনাশকের ব্যবহার বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এদেশে উষ্ণ ও অব-উষ্ণ ম-লের আবহাওয়া বিরাজমান এবং জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে রোগবালাই তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যাচ্ছে। উচ্চ তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা অধিকাংশ ক্ষতিকারক পোকামাকড় ও রোগের জীবাণুর প্রজনন ও বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ফলে ফসল উৎপাদনে প্রতিনিয়ত দেখা যাচ্ছে নতুন নতুন সমস্যা। ফল-ফসলের বাণিজ্যিক উৎপাদনে এগুলোর দমন অনেক সময়ই গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি হয়ে পড়ে। আর এর দমনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন আমাদের চাষিরা। প্রায় সব ফল-ফসলে বালাইনাশকের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু কিছু সবজি উৎপাদনে প্রায় প্রতি দিনই কীটনাশক ¯েপ্র করা হচ্ছে এবং দেশের জনগণ তা খাচ্ছে প্রতিনিয়ত। যদি আমের কথাই ধরা যায়, আম এদেশে চাষযোগ্য প্রধান অর্থকরী ফসল ও জনপ্রিয় একটি ফল। ছোট-বড় সব মানুষের কাছে এটি একটি পছন্দনীয় ফল। তবে সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হলো পছন্দনীয় এ ফলটি উৎপাদনের জন্য বহুবার (১৫-৬২ বার) বালাইনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। এক দশক আগেও এসব আমবাগানে ২-৩ বার বালাইনাশক ব্যবহার করে আশানুরূপ ফলন পাওয়া গেছে। তবে গত কয়েক বছরের প্রচার-প্রচারণা এবং ব্যাগিং প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে স্প্রের পরিমাণ এখন কমে দাঁড়িয়েছে ২০-৩০ বারে। এখানে একটি কথা বলে রাখা দরকার ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাত্র সাড়ে তিনবার ¯েপ্র করেই রপ্তানিযোগ্য আমের উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। আমের মৌসুম শুরুর আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় আম গাছে ¯েপ্র করা। কেউ শুরু করেন দেখে দেখে, কেউবা শুনে শুনে আর কিছু সংখ্যক চাষি করেন প্রয়োজনে। এছাড়াও আর একটি কারণ হলো আমবাগান হাতবদল হয় ৪-৫ বার বা আরও বেশি এবং প্রত্যেক ক্রেতাই প্রত্যাশা করেন অধিক মুনাফা লাভের জন্য। এসব কারণে বাড়তে থাকে আম বাগানে বালাইনাশকের স্প্রের পরিমাণ। আপনারা জেনে অবাক হবেন ককটেলের ব্যবহার এখন শুরু হয়েছে আমবাগানে। তবে এ ককটেল বলতে একাধিক কীটনাশক, ছত্রাকনাশক ও হরমোনের একত্রে নিম্নমাত্রার মিশ্রণকে বুঝানো হয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্ট গবেষকদের মতে, এ ককটেল কখনও কার্যকরী হতে পারে না। তাদের মতে যে কোনো বালাইনাশকে যদি পরিমিত মাত্রায় কার্যকরী উপাদান থাকে এবং সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করা হয় তাহলে নির্দিষ্ট বালাইনাশক নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য যথেষ্ট। তবে চাষিদের মতে, একটি কীটনাশক, ছত্রাকনাশক ও মাকড়নাশক নির্দিষ্ট পোকামাকড় এবং রোগ দমনে কার্যকরী না হওয়ায় তারা ককটেল ব্যবহার করে থাকেন। যদিও বালাইনাশকে কার্যকরী উপাদানের উপস্থিতি নিশ্চিত করার দায়িত্ব কৃষকের নয় বরং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন এবং করে থাকেন বলে আমরা মনে করি। তাহলে সমস্যাটি কোথায়? সব কিছু ঠিক থাকলে বালাইনাশক ব্যবহার করে কাক্সিক্ষত ফলাফল পেতে অবশ্যই ¯েপ্রর মূলনীতি ভালোভাবে অনুসরণ করা উচিত।
স্প্রের মূলনীতি
স্প্রের সুফল পেতে হলে যে কোনো বালাইনাশক স্প্রে করতে ৪টি মূলনীতি অবশ্যই মেনে চলা উচিত। এগুলো হলো সঠিক বালাইনাশক নির্বাচন, সঠিক ডোজ বা মাত্রা নির্ধারণ, সঠিক সময় নির্বাচন এবং সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ।
বালাইনাশক নির্বাচন
নির্বাচন মাত্রা নির্ধারণ
সময় নির্বাচন
পদ্ধতি অনুসরণ
সঠিক বালাইনাশক নির্বাচন
আমের রোগ বা ক্ষতিকর পোকা লাভজনকভাবে ও কম খরচে দমন করতে সঠিক ওষুধ নির্বাচন করা একটি অতীব গুরুত্বপূর্র্ণ পদক্ষেপ। ওষুধ নির্বাচনে কোনো ভুল হয়ে থাকলে স্প্রে কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে ভেস্তে যায়। এতে শ্রম, সময় ও অর্থের অপচয় ঘটে উপরস্তু আসল উদ্দেশ্য সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত হয়। অনেক কৃষক কীটনাশক ডিলারদের জিজ্ঞাসা করেন কি ওষুধ স্প্রে করতে হবে, এটা মোটেই ঠিক নয়। এ ব্যাপারে সঠিক পরামর্শের জন্য স্থানীয় কৃষিকর্মী, কৃষি কর্মকর্তা অথবা আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রে (আম গবেযণা কেন্দ্রে) যোগাযোগ করা উচিত। একই কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক বার বার স্প্রে না করে মাঝে মাঝে পরিবর্তন করা উচিত। কারণ একই ওষুধ বার বার স্প্রে করলে পোকা বা রোগের জীবাণুর প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যেতে পারে এবং পরবর্তীতে ওষুধ কাজ নাও করতে পারে।
সঠিক মাত্রা নির্ধারণ
সঠিক বালাইনাশক সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে। বালাইনাশকের মাত্রা কম বা বেশি না হওয়ায় উত্তম। উপযুক্ত মাত্রা না হলে রোগ বা পোকামাকড় ভালোভাবে দমন করা সম্ভব হয় না। উপরন্তু রোগের জীবাণু বা পোকার মধ্যে বালাইনাশক প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। আবার অধিক মাত্রায় বালাইনাশকের ব্যবহার অর্থের অপচয় হয় এবং ফলগাছের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই বালাইনাশকের মাত্রার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এজন্য বোতল বা প্যাকেটের গায়ে লিখিত নির্দেশনা, কৃষি বিজ্ঞানীদের, কৃষি কর্মকর্তা এবং কৃষিকর্মীর পরামর্শমতো কাজ করা উচিত।
সঠিক সময় নির্বাচন
কথায় বলে, সময়ের এক ফোড় অসময়ের দশ ফোড়। এ কথা সত্য যেকোনো কাজ সঠিক সময়ে সমাধা করতে পারলে বাড়তি শ্রম ও বাড়তি খরচের অপচয় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আমগাছে মুকুল আসার পর থেকে ফলধারণ পর্যন্ত সময়টুকু বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে রোগ বা পোকার আক্রমণ হলে গাফিলতি করা মোটেই ঠিক নয়। এ সময়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হলে আমগাছে ফলধারণ নাও হতে পারে। আমগাছে মুকুল আসার ১৫-২০ দিন আগে প্রথমবার, আমের মুকুল ১০-১২ সেমি. হলেই দ্বিতীয়বার এবং আম মটরের দানার সমান হলে তৃতীয়বার স্প্রে করা উচিত। মুকুলের ফুল ফোটার পর কোনো অবস্থাতেই স্প্রে করা যাবে না। আমের পরাগায়ন প্রধানত বিভিন্ন প্রজাতির মাছি ও মৌমাছি দ্বারা হয়ে থাকে। তাই ফুল ফোটার সময় কীটনাশক স্প্রে করলে মাছি মারা যেতে পারে এবং আমের পরাগায়ন ও ফলধারণ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। গাছ থেকে ফল পাড়ার ১৫-২০ দিন আগ থেকে গাছে কোনো বালাইনাশক স্প্রে করা উচিত নয়। গাছে মুকুল বের হওয়ার আগেই অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে প্রয়োজনীয় অর্থ, শ্রমিক, স্প্রে যন্ত্রপাতি, ওষুধ ইত্যাদি মজুদ রাখতে হবে।
সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ
সঠিক ওষুধ, সঠিক মাত্রা, সঠিক সময় ইত্যাদি নির্ধারণের পর সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ একান্ত প্রয়োজন। স্প্রে কার্যক্রম থেকে পরিপূর্ণ ফল লাভ করতে হলে অবশ্যই সঠিক পদ্ধতিতে স্প্রে করতে হবে। ফলের মধ্যে বা ডালের মধ্যে ছিদ্রকারী পোকা অবস্থান করলে বাইরে কীটনাশক স্প্রে করলে কোনো লাভ হয় না। আমের হপার পোকা সুষ্ঠুভাবে দমন করতে হলে পাতায় স্প্রে করার সাথে সাথে গাছের গুঁড়িতেও স্প্রে করা প্রয়োজন। তাই সুষ্ঠুভাবে রোগ বা পোকা দমনের জন্য স্থানীয় কৃষি অফিস বা আম গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীদের সাথে আলাপ করে পরামর্শ নেয়া উচিত।
স্প্রে করার সময়ে সতর্কতা
যিনি স্প্রে করবেন তার যেন স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি না হয় সেইদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন। এ্যাপ্রোন, মাস্ক, চোখে চশমা, মাথায় হেলমেট বা গামছা দ্বারা আবৃত করে ¯েপ্র করা উচিত। স্প্রে করার সময় কোনো কিছু না খাওয়ায় উত্তম। প্রখর সূর্যালোকে স্প্রে না করাই ভালো। স্প্রে কার শেষ হলে পরিষ্কার পানিতে হাত, মুখসহ অন্যান্য অংশগুলো ভালভাবে সাবান দিয়ে ধৌত করতে হবে। সম্ভব হলে গোসল করা উত্তম।
পোকামাকড় ও রোগ দমনে প্রথমে সমন্বিত বালাইব্যবস্থাপনা পদ্ধতির প্রয়োগ করা উচিত। অতিরিক্ত বালাইনাশকের ব্যবহার যেমন ফসলের উৎপাদনকে ব্যয়বহুল করে তেমনি সময় ও শ্রমের অপচয় ঘটায়। এছাড়াও আমাদের প্রকৃতিতে বিদ্যমান উপকারী ও বন্ধু পোকাকে ধ্বংস করে ফলে শত্রু পোকার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে বিভিন্ন ফলে পরাগায়নের সহায়কের অভাবে ফলধারণ ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। অধিক বালাইনাশক ব্যবহার করে উৎপাদিত ফল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যে হুমকিস্বরূপ। এ অবস্থায় রোগ ও পোকামাকড় দমনে স্প্রের নিয়মনীতি অনুসরণ করে বালাইনাশক ব্যবহার করবেন চাষিরা এমনটাই প্রত্যাশা। আমরা আশা করি কৃষি উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় দেশে উৎপাদিত হবে গুণগত মানসম্পন্ন ফল-ফসল যা নিশ্চিন্তে ভোগ করবেন দেশের সাধারণ জনগণ এটিই আমাদের প্রত্যাশা। য়
প্রচলিত প্রবাদ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। কিন্তু এখন কি আর এ কথাটি জোর দিয়ে বলা যায়? এর কারণ অনেক। তবে আমাদের সম্মিলিত হেয়ালিপনা আমাদের এ পর্যন্ত টেনে নিয়ে এসেছে। কোথায় হারিয়ে গেছে আমাদের শোল, গজার, ভেটকি, পাবদা, টাকি, বউমাছ, তাপসি, গুলশা, কাচকি, খৈশা, কৈ, চিতল, বোয়াল, টেংরা, আইড়, বাইন, পুঁটি, শিং, পলি, মাগুর এসব। আমাদের এসব দেশি মাছ সংরক্ষণ জরুরি। তাছাড়া এ দেশের নদী-নালা, খাল বিল হাওরে ও সমুদ্রে যে পরিমাণ মাছ উৎপন্ন হয় তার মধ্যে অনেকখানি নষ্ট হয়ে যায় পরিবহন সংরক্ষণের অভাবে। মাছ ধরার পর শতকরা ৩০ ভাগ মাছ ক্রেতার হাতে পৌঁছার আগেই পচে নষ্ট হয়ে যায়। এ ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা।
তাহলে দেশি মাছ সংরক্ষণে আমাদের কী কী করণীয়?
এ ক্ষেত্রে প্রথমেই আমাদের বেশ কিছু বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। সেগুলো হলো মৎস্য আইন মেনে চলা, কারেন্ট জালের ব্যবহার বন্ধ করা, জেলে পরিবারের আর্থসামাজিক নিশ্চয়তা, দেশব্যাপী মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তোলা, পুরনো জলাশয়গুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কারসাধন, ছোট মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয় সংরক্ষণ, প্লাবনভূমির বেহাত হওয়া রোধ করা, দেশি পোনা উৎপাদন ও প্লাবন ভূমিতে মজুদকরণ, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, সমাজভিত্তিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ছোট মাছ চাষ ও সংরক্ষণ এবং জাটকা মাছ সংরক্ষণ।
দেশি মাছ সংরক্ষণে করণীয় বিষয়গুলোর মধ্যে যেগুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়গুলো কী?
এ বিষয়গুলোর মধ্যে সবার আগে আমাদের ভাবতে হবে প্রাকৃতিক জলাশয়, প্লাবনভূমি, জাটকা মাছ সংরক্ষণ এবং মৎস্য পরিবেশবান্ধব নীতি ও অবকাঠামো সম্পর্কে। কারণ বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মোট ২৬০ প্রজাতির মিঠাপানির মধ্যে ১২টি চরম বিপন্ন এবং ১৪টি সংকটাপন্ন। যদিও আমাদের আছে চিংড়িসহ ২৯৬টি মিঠাপানির মাছ এবং ৫১১টি সামুদ্রিক মাছ। এসব বিষয় বিশ্লেষণ করলে মাছের যে প্রাকৃতিক জলাশয়, মুক্ত জলাশয় এবং প্লাবনভূমি রয়েছে তা আমাদের অযাচিত ও অনৈতিক ব্যবহারের কারণে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন ও বংশবিস্তারকে হুমকির সম্মুখীন করেছে। মাছের জাটকা সংরক্ষণে সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং মৎস্য অধিদপ্তর বেশ প্রচার প্রচারণা করছে কিন্তু সে বিষয়টি এখনও সাড়া জাগানো সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হয়নি। জাটকা মাছ অবশ্যই সংরক্ষণ ও প্লাবনভূমি, মুক্ত জলাশয়ে তা অবাধে বিচরণ করার ব্যবস্থা করতে হবে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ বা পোল্ডার এবং গ্রাম পর্যায়ে অপরিকল্পিত কাঁচা রাস্তা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে করে মাছের চলাচল, প্রজনন ব্যাহত না হয়। আর প্রয়োজন এ বিষয়ে আমাদের সামাজিক আন্দোলন। সেক্ষেত্রে আমরা মাছ ধরার ক্ষেত্রে কখনোই বিষ, রোটেননসহ অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করব না। বরং দেশি মাছ সংরক্ষণ ও চাষের মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক চেহারাটাই পাল্টে দেয়া সম্ভব। সেজন্য প্রয়োজন মৎস্যবান্ধব পরিবেশনীতি ও অবকাঠামোর সফল বাস্তবায়ন।
দেশি মাছ সংরক্ষণ ও চাষ করলে আমাদের কী লাভ?
কথায় আছে মাছের পোনা, দেশের সোনা। আর দেশি মাছ পুষ্টির আঁধার। দেশি এ মাছগুলোতে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ ও আয়োডিনের মতো খনিজ উপাদান এবং ভিটামিন। তাছাড়া দেশি মাছের আছে অন্ধত্ব, রক্তশূন্যতা, গলগ- প্রতিরোধ ক্ষমতা। বিশেষ করে গর্ভবতী মা ও শিশুদের ছোট ছোট মাছ খাওয়া ভীষণ প্রয়োজন। দেশি মাছের এসব পুষ্টিগুণ আমিষের নিরাপত্তা গড়ে তুলতে অতুলনীয়। এ কারণেই দেশি মাছ সংরক্ষণ ও চাষ করলে আমাদের অনেক লাভ।
মাছ চাষের মাধ্যমে আমরা কিভাবে দেশি মাছ সংরক্ষণ করতে পারি?
দেশি মাছগুলোকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষের আওতায় আনতে হবে। বদ্ধ জলাশয়ে দেশি প্রজাতির মাছ যাতে বেশি পাওয়া যায় সেজন্য বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন আমরা করতে পারি। সেগুলো হলো ধান ক্ষেতে ছোট প্রজাতির মাছ চাষের ব্যবস্থা করা এবং এ ধরনের মাছ সারা বছর পাওয়ার জন্য ধানক্ষেতে মিনি পুকুর তৈরি; মাছের প্রজনন মৌসুমে মাছ না ধরা, ফাঁস জাল ব্যবহার না করা, রাক্ষুসে মাছ কমানোর জন্য বিষ প্রয়োগ না করা, রুই জাতীয় মাছের সাথে ছোট প্রজাতির মাছের মিশ্র চাষ, জলাশয় প্লাবনভূমি এবং পুকুরে দেশি মাছের চাষাবাদের জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা।
দেশি মাছ চাষে সামাজিক আন্দোলন এ বিষয়টি কিভাবে বিশ্লেষণ করা যায়
বর্তমানে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন ক্ষেত্র, চলাচল অনেকখানি হুমকির মুখে। আমরা না জেনে, না বুঝে জাটকা নিধন করি। তাছাড়া জমিতে অতি মাত্রায় বালাইনাশক প্রয়োগ, অপরিকল্পিত বাঁধ দেয়া, পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধন এবং মাছের প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা থেকে বিরত না থাকার কারণে এখন আর পরিচিত অনেক দেশি মাছের সন্ধান মেলে না। কিন্তু এ বিষয়গুলো যদি আমরা সবাই জানি এবং সচেতন হই তাহলে আমরা কিন্তু সারাবছর দেশি মাছের স্বাদ ও পুষ্টি পেতাম। বর্তমান এ অনাকাক্সিক্ষত অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে দরকার সবার আন্তরিকতা। আর এটিই হলো সামাজিক আন্দোলন।
মাছ বিক্রির সময় পরিবহনজনিত কারণে যে মাছ নষ্ট হয়, সে কারণেও তো আমাদের দেশি মাছ বেশি ধরা হয়। কিন্তু যদি তা ভালোভাবে সংরক্ষণ করে পরিবহন করা যেত তাহলে তো দেশি মাছ আমরা আরও বেশি পেতাম। মাছ পরিবহনে লাগসই প্রযুক্তি হলো সস্তা অথচ কার্যকরী বরফ বাক্স। এতে মাছ পরিবহন কৌশলটিতে বহুল ব্যবহৃত বাঁশের ঝুড়ির উন্নয়ন ঘটিয়ে তাপ চলাচল প্রতিরোধী বরফ বাক্সে পরিণত করা হয়েছে। পরিবর্তিত ঝুড়িতে মাছ ঝুড়ির সংস্পর্শে আসে না। তাই বাঁশের চটির ফাঁকফোকর থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে না। এমনকি পলিথিন দিয়ে আগাগোড়া মোড়া থাকে বলে বার বার পরিষ্কার করে একই ঝুড়ি ব্যবহারেও সমস্যা হয় না। ২৫ থেকে ৩০ কেজি মাছ ধরে এমন একটি বাঁশের ঝুড়ির ভেতরের দিকটা হোগলা পাটি দিয়ে মুড়ে দিতে হয়।
হোগলার ওপর দুই স্তর প্লাস্টিকের শিট দিয়ে সেলাই করে দিতে হয়। শিটের কিছু অংশ বাড়তি থাকবে। সেলাই করা প্লাস্টিকের শিটের ওপর আর একটি পাতলা স্বচ্ছ পলিথিন শিট বিছিয়ে বরফ দেয়া মাছ পরিবহন করতে হবে। প্রথমে পলিথিন শিটের ওপর এক স্তর বরফ রেখে মাছ সাজিয়ে দিতে হয়। এরপর ভাঁজে ভাঁজে বরফ ও মাছের স্তর সাজিয়ে ওপরে জাম বরফ দিয়ে বাড়তি চট, হোগলা ও পলিথিন শিট একসাথে মুড়ে ঝুড়ির ওপরে বেঁধে নিতে হয়। ঝুড়ির মুখ সব সময় বেঁধে রেখে মাছ পরিবহন করতে হয়। এভাবে বরফ দেয়া মাছ ২৪ ঘণ্টা পুনরায় বরফ না দিয়ে গুণাগুণ সঠিক রেখে সংরক্ষণ করা যায়। ২৪ ঘণ্টা পর পর মাছের ওপর সামান্য জাম বরফ দিয়ে প্রায় ৫-৬ দিন পর্যন্ত খুব ভালোভাবে মাছকে সংরক্ষণ করা যায়। হোগলাপাতা, ছেঁড়াজাল বা নাইলন কাপড় চমৎকার তাপ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। আর এ কৌশলটি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রফেসর ড. নওশাদ আলম এ কার্যকরী বরফ বাক্স উদ্ভাবন করেছেন। বরফ বাক্সটি মাঠপর্যায়ে মৎস্যজীবী, মৎস্য ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র প্রক্রিয়াজাতকারী ও মৎস্য পরিবহনকারীদের দ্বারা সফলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তারপরও যদি কোনো সমস্যা ও জানার থাকলে উপজেলা মৎস্য অফিস এবং ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ ও দেশি পোনা সংগ্রহ করা যেতে পারে।
মাছ সংরক্ষণের অভাবে বছরে ৬ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়, এ ক্ষেত্রে দেশি মাছ সংরক্ষণের কী কোনো ব্যবস্থাই নেই?
বেশ কিছু দিন আগেও আমাদের কাছে এ সমস্যার কার্যকরী কোনো সমাধান ছিল না। কিন্তু বর্তমানে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ও মাছচাষিদের উপযুক্ত মূল্য পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রফেসর ড. নওশাদ আলম সহজ ও কম খরচে মাছ পরিবহনের জন্য একটি কার্যকরী বরফ বাক্স উদ্ভাবন করেছেন। বরফ বাক্সটি মাঠ পর্যায়ে মৎস্যজীবী, মৎস্য ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র প্রক্রিয়াজাতকারী ও মৎস্য পরিবহনকারীদের দ্বারা সফলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আমাদের সে মাছ সংরক্ষণের কার্যকর কৌশল তাহলে কেমন হবে?
সস্তা অথচ কার্যকরী বরফ বাক্সে মাছ পরিবহন কৌশলটিতে বহুল ব্যবহৃত বাঁশের ঝুড়ির উন্নয়ন ঘটিয়ে তাপ চলাচল প্রতিরোধী বরফ বাক্সে পরিণত করা হয়েছে। পরিবর্তিত ঝুড়িতে মাছ ঝুড়ির সংস্পর্শে আসে না। তাই বাঁশের চটির ফাঁকফোকর থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে না। এমনকি পলিথিন দিয়ে আগাগোড়া মোড়া থাকে বলে বার বার পরিষ্কার করে একই ঝুড়ি ব্যবহারেও সমস্যা হয় না। ২৫ থেকে ৩০ কেজি মাছ ধরে এমন একটি বাঁশের ঝুড়ির ভেতরের দিকটা হোগলা পাটি দিয়ে মুড়ে দিতে হয়। হোগলার ওপর দুই স্তর প্লাস্টিকের শিট দিয়ে সেলাই করে দিতে হয়। শিটের কিছু অংশ বাড়তি থাকবে। সেলাই করা প্লাস্টিকের শিটের ওপর আর একটি পাতলা স্বচ্ছ পলিথিন শিট বিছিয়ে বরফ দেয়া মাছ পরিবহন করতে হবে। প্রথমে পলিথিন শিটের ওপর একস্তর বরফ রেখে মাছ সাজিয়ে দিতে হয়। এরপর ভাঁজে ভাঁজে বরফ ও মাছের স্তর সাজিয়ে ওপরে জাম বরফ দিয়ে বাড়তি চট, হোগলা ও পলিথিন শিট একসাথে মুড়ে ঝুড়ির ওপরে বেঁধে নিতে হয়। ঝুড়ির মুখ সব সময় বেঁধে রেখে মাছ পরিবহন করতে হয়। এভাবে বরফ দেয়া মাছ ২৪ ঘণ্টা পুনরায় বরফ না দিয়ে গুণাগুণ সঠিক রেখে সংরক্ষণ করা যায়। ২৪ ঘণ্টা পর পর মাছের ওপর সামান্য জাম বরফ দিয়ে প্রায় ৫-৬ দিন পর্যন্ত খুব ভালোভাবে মাছকে সংরক্ষণ করা যায়। হোগলাপাতা, ছেঁড়াজাল, বা নাইলন কাপড় চমৎকার তাপ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
বরফ দিয়ে সংরক্ষণ করা ছাড়াও আর কিভাবে আমরা দেশি মাছ সংরক্ষণ করতে পারি?
মাছ শুঁটকি করেও সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু পোকামাকড়ের আক্রমণ রোধ করতে অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য উৎপাদিত বেশির ভাগ শুঁটকিতে ব্যবসায়ীরা ডিডিটি, নগসসহ নানাবিদ দ্রব্য ব্যবহার করে থাকে। যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। অনেক দিন ধরে এসব শুঁটকি খেলে মানুষের কিডনি ও লিভার পুরোপুরি অকেজো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। শুঁটকিতে কীটনাশকের ব্যবহার জনস্বাস্থ্য আইনে দ-নীয় অপরাধ। পোকামাকড়ের আক্রমণ ও ধুলোবালি প্রতিরোধ করে কীটনাশকমুক্ত শুঁটকি তৈরির জন্য ড. নওশাদ আলম স্বল্পমূল্যে সহজে পাওয়া যায় বস্তু দিয়ে তৈরি বক্স ও রিং টানেল উদ্ভাবন করেছেন, যা খুব কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এই যে স্বল্পমূল্যে সহজে পাওয়া যায় এমন বস্তু দিয়ে তৈরি বক্স ও রিং টানেল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে নিতে হবে
জালে ঢাকা বক্স টানেল তৈরিতে বাঁশের বা কাঠের খুঁটির ওপর ৩ ফুট উচ্চতায় চার ফুট চওড়া ও ২০ ফুট লম্বা একটি বাঁশের আয়তাকার মাচা তৈরি করে মাচার ওপর সামনের দিকে ক্রমাগত ঢালু হয়ে আসা একটি আয়তাকার টানেল বসিয়ে দিতে হয়। ঢালু করার জন্য টানেলটির পেছনের খাঁড়া পা দু’টির উচ্চতা ২.৫ ফুট এবং সামনের খাঁড়া পা দুটি ২ ফুট দূরে রাখতে হয়। এবার টানেলের ওপর থেকে সারি সারি মাছ ঝুলিয়ে দেয়ার জন্য ছাদের এক প্রান্ত থেকে অপরপ্রান্ত পর্যন্ত লম্বালম্বিভাবে নির্দিষ্ট দূরত্বে পর পর সমান্তরাল করে কতগুলো বাঁশ বেঁধে দিতে হবে।
ছাদ ঢালু করার ফলে টানেলের ভেতরে ঝুলে থাকা প্রতিটি মাছ সমানহারে সূর্যের আলো পায়। ভেতরের মাছ ঝুলানোর পরিসর বেড়ে যাবে। তাছাড়া টানেলের উপরিস্তরের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বেশি সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে। টানেলে মাছ ঝুলিয়ে দেয়ার পর পুরো টানেলটি আগাগোড়া নিচ্ছিদ্রভাবে মশারি জাল দিয়ে ঢেকে দিয়ে রাতে বা ভোর হওয়ার আগে টানেলে মাছ ঝুলিয়ে দিতে হবে। অন্ধকারে মাছির দৃষ্টিশক্তি কমে যায় বলে মাছি চলাচল করে না। টানেলের ভেতর ঝুলানো থাকে বলে দিনের বেলা মাছ উল্টিয়ে এপিঠওপিঠ করে দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তাই মাছি ও অন্যান্য পোকামাকড় মাছের কাছে আসতে পারে না। এভাবে আমরা খুব সহজে মাছ সংরক্ষণ করতে পারি। এ ব্যাপারে আরও তথ্য বা পরামর্শের প্রয়োজন হলে আপনার কাছের উপজেলা বা অন্য কোনো মৎস্য অফিসের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আশা করি তারা আপনার প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে পারবেন।
কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম*
মানুষের শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য দুধ ও মাংসের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির জন্য দৈনিক ২৫০ মিলিলিটার দুধ ও ১২০ গ্রাম মাংসের প্রয়োজন। তার বিপরীতে আমরা পাচ্ছি ৫১ মিলিলিটার ও ২০ গ্রাম মাংস। দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে দুধ ও মাংসের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে দুধ ও মাংসের ব্যাপক চাহিদা পূরণ করতে হলে আরও অনেক গাভীর খামার স্থাপন করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ব্যাপক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
দুগ্ধ খামার বর্তমানে একটি লাভজনক শিল্প। গাভীর খামার বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র্যবিমোচন, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দেশে দুধের চাহিদা পূরণে বিশাল ভূমিকা রাখছে।
একটি পারিবারিক গাভীর খামার স্থাপন করতে বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। বাড়ির ভেতরেই একটি আধা-পাকা শেড তৈরি করলেই চলে। গাভীর খামার স্থাপনে তেমন কোনো ঝুঁকি নেই। প্রয়োজনে দেশি ঘাস সংগ্রহ করে খাওয়ালেও চলে। অল্প পুঁজি দিয়ে গাভীর খামার শুরু করা যেতে পারে। একটি পারিবারিক গাভীর খামার দেখাশোনা করার জন্য আলাদা শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না।
গাভীর খামার স্থাপনের গুরুত্ব-
১. মানুষের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য দুধ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি করা;
২.খামার থেকে অধিক মুনাফা অর্জন করা;
৩. শ্রম ও পুঁজির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা;
৪. গাভী দ্বারা আঁশজাতীয় খাদ্য এবং মানুষের খাদ্যের উচ্ছিষ্টাংশকে যথাযথ ব্যবহার করা যায়;
৫. ভূমির উর্বরতা সংরক্ষণ ও বৃদ্ধিতে গাভীর খামারের গুরুত্ব অপরিসীম;
৬. গাভীর খামার সারা বছরের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে;
৭. গাভীর খামার মোটামুটি স্থায়ী ব্যবসা, অন্য যে কোনো কাজ অপেক্ষা শ্রেয়;
৮. পর্যাপ্ত দ্রব্য সামগ্রী যেমন- দই, ঘি, মিষ্টি ইত্যাদি উৎপাদনের ফলে দুগ্ধ খামার স্থায়ী ভালো বাজার সৃষ্টি করতে পারে;
৯. গোবর দ্বারা বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করে জ্বালানি ও আলোর ব্যবস্থা করা যায়;
১০. ষাঁড় বিক্রি করে আয় বৃদ্ধি করা যায়।
তিনটি সংকর গাভী পালন খামারের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব
১. স্থায়ী মূলধন বিনিয়োগ
ক. জমি- নিজস্ব
খ. শেড/ঘর- নিজস্ব
গ. গাভী ক্রয় ৩টিী৬০,০০০/- =১,৮০,০০০/-
২. আনুষঙ্গিক ব্যয়
ক. ঘাস- নিজস্ব
খ. খড়- নিজস্ব
গ. দানাদার খাদ্য (৬ কেজি/৩/দিন)
(৬ী৩ী৩৬৫ী২০) = ১,৩১,১৪০/-
ঘ. লেবার- নিজস্ব
ঙ. ওষুধ, টিকা ইত্যাদি = ৩,০০০/-
মোট ব্যয় = ৩,১৪,৪০০/-টাকা
৩. আয়-
ক. দুধ বিক্রি থেকে- ১২ লিটার/গাভী/ দিন
(১২ী৩ী২৮০ী৩৫) = ৩,৫২,৮০০/-
খ. বছর শেষে ৩টি বাছুর বিক্রি থেকে আয়
(৩ী২০০০০)----------= ৬০,০০০/-
প্রথম বছর শেষে মোট আয় = ৪,১২,৮০০/-
প্রথম বছরে মুনাফা = মোট আয়-মোট ব্যয়
৪,১২,৮০০- ৩,১৪,৪০০=৯৮,৪০০/- টাকা
দ্বিতীয় বছরে মুনাফা= ৯৮,৪০০ী১.৫ গুণ= ১,৪৭,৬০০/- টাকা
খামার স্থাপন পদ্ধতি
আদর্শ ব্যবস্থাপনার কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও সঠিকভাবে পরিচালনার মাধ্যমেই দুধ, মাংস উৎপাদন তথা গাভীর খামারকে লাভজনক করা সম্ভব।
১. খামারের সঠিক স্থান নির্বাচন যেমন-
- শুষ্ক ও উঁচু ভূমি -পারিপার্শ্বিক অবস্থা ভালো হতে হবে
- সুষ্ঠু যাতায়াত ব্যবস্থা - প্রয়োজনীয় জমির প্রাপ্যতা
- সুষ্ঠু নিষ্কাশন ব্যবস্থা- পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ
- মাটির প্রকৃতি ভালো হতে হবে- আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকা।
- জনবসতি থেকে দূরে
- রাস্তা থেকে দূরে
২. আধুনিক স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান তৈরি,
৩. উপযোগী জাত ও গাভী বাছাই করা,
৪. নিয়মিত টিকা প্রদান, কৃমিনাশক এবং প্রজনন সমস্যাজনিত চিকিৎসা প্রদান,
৫. প্রজননের সঠিক সময় নির্ধারণ,
৬. নির্ধারিত রেশন মোতাবেক খাদ্য প্রদান করা,
৭. কাঁচা ঘাস ব্যবস্থাপনা,
৮. গর্ভবর্তী গাভী ব্যবস্থাপনা,
৯. বাছুর ব্যবস্থাপনা,
১০. সঠিক দুধ দোহন পদ্ধতি
১১. বাছুরের মোটাতাজাকরণ কার্যক্রম বিশেষ করে এঁড়ে বাছুর,
১২. বাজার ব্যবস্থাপনা।
গাভী পালনের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। যে কোনো পরামর্শের জন্য নিকটস্থ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে। য়
কৃষি সম্প্রসারণ সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কৃষকের জানালা এরই মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষি সম্প্রসারণ টুলস হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ফসলের নানা সমস্যার সমাধান সংক্রান্ত কৃষি তথ্য ও পরামর্শের জন্য সরকারি বেসরকারি অনেক কৃষি সম্প্রসারণ কর্মী ও অগ্রসর কৃষক কৃষকের জানালা ব্যবহার করছেন। ব্যবহারকারীদের নানা প্রশ্নের উত্তর থাকছে প্রশ্নোত্তরে কৃষকের জানালা শীর্ষক এ নিবন্ধে।
কৃষকের জানালার বিষয়ে সচরাচর যেসব প্রশ্ন করা হয়
প্রশ্ন : কৃষকের জানালা কী?
উত্তর : কৃষকের জানালা কৃষকদের বিভিন্ন ফসলের ফসলভিত্তিক নানা সমস্যার চিত্র যৌক্তিকভাবে সাজিয়ে তৈরি করা একটি তথ্যভা-ার। এখানে ছবি দেখে কৃষক নিজেই তার সমস্যাটি চিহ্নিত করতে পারেন এবং চিহ্নিত ছবিতে ক্লিক করলেই সমস্যার সমাধান মনিটরে ভেসে উঠবে। এখানে মাঠ ফসল, শাকসবজি, ফলমূল ও অন্যান্য গাছের রোগবালাই, পোকামাকড়, সারের ঘাটতি বা অন্যান্য কারণে যেসব সমস্যা হয়, সেসব সমস্যা ও তার সমাধান যুক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি সমস্যার একাধিক ছবি এবং কমপক্ষে একটি প্রতিনিধিত্বপূর্ণ ছবি যুক্ত করা হয়েছে, যাতে কৃষক সহজেই তার সমস্যাটি চিহ্নিত করতে পারেন।
প্রশ্ন : কৃষকের জানালার শুরুটা হয় কিভাবে?
উত্তর : জনাব মো. আব্দুল মালেক, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার (তৎকালীন), ফুলবাড়ীয়া, ময়মনসিংহয়ের একটি উদ্ভাবনী উদ্যোগ হলো ডিজিটাল সিস্টেম অব প্লাণ্টস প্রবলেম আইডেনটিফিকেশন (ডিপিপিআইএস)। কৃষি পরামর্শ সেবা নিতে এসে যেসব কৃষক তাদের ফসলের সমস্যাটি ভালোভাবে বলতে পারেন না, তাদের তাদের ফসলের সমস্যা বলতে সহযোগিতা করার জন্য মাঠে সচরাচর হয় এমন কিছু সমস্যার ছবি তুলে কম্পিউটারে রাখা হয়। এরপর কৃষক কোনো সমস্যা নিয়ে এলে যারা সমস্যার কোনো নমুনা নিয়ে আসেন না, তাদের সে ছবিগুলো দেখানো হয়। দেখা গেল এটি খুব ভালো কাজ করেছে। কৃষক ছবি দেখে নিজেই তার ফসলের সমস্যাটি চিহ্নিত করতে পারছেন। এরপর ছবিগুলোর সাথে সমস্যার সমাধান যুক্ত করা হলো। এবার এটি ফসলের সমস্যার সমাধান দেয়ার ক্ষেত্রে কৃষক ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মী উভয়ের জন্যই সহায়ক হলো। কৃষকদের মতামত নেয়ার জন্য একাধিক জরিপ পরিচালনা করা হয়। এতে দেখা যায় যেসব কৃষক তখনও এ পদ্ধতিতে সেবা নেননি তাদের মধ্যে ৭৬% এবং যারা এ পদ্ধতিতে সেবা নিয়েছেন তাদের মধ্যে ১০০% কৃষক মনে করেন পদ্ধতিটি তাদের জন্য সহায়ক। পরবর্তীতে এ ধারণাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম পরিচালিত ‘পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন বাংলাদেশ’ নামক ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করা হয়। এতে উৎসাহব্যঞ্জক সাড়া পাওয়া যায়। অসংখ্য মন্তব্য ও পরামর্শ আসে বিশিষ্টজনদের কাছ থেকে। পরামর্শ আসে ডিপিপিআইএসের একটি বাংলা নাম দিয়ে তা কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় করার। সে আলোকেই ডিপিপিআইএস এর নামকরণ করা হয় ‘কৃষকের জানালা’। জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে যেমন কৃষক তার ক্ষেত/ফসল দেখতে পায়, তেমনি এ কৃষকের জানালায় উঁকি দিয়েও কৃষক তার ক্ষেতের বা ফসলের সমস্যা ও তার সমাধান দেখতে পাবে। কৃষেকের জানালাকে পূর্ণাঙ্গরূপে তৈরি করতে এবং বিশেষজ্ঞদের দ্বারা প্রমিতকরণের জন্য এটুআই প্রোগ্রামের সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ডে ডিজিটালি কমপ্লিশন অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন অব প্লান্টস প্রবলেম আইডেনটিফিকেশন সিস্টেম (ডিপিপিআইএস) নামে একটি প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেয়া হয়। অনেক যাচাই বাছাই শেষে প্রকল্পটি পুরস্কৃত হয়।
প্রশ্ন : কৃষকের জানালা কিভাবে তৈরি করা হয়?
উত্তর : প্রায় দুই বছর ধরে সারা দেশ থেকে বিভিন্ন ফসলের নানা সমস্যার ছবি তোলা হয় এবং সমস্যাগুলো প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করার পর তা ডাটাবেজে যুক্ত করা হয়। প্রায় ৮০ হাজার ছবি থেকে বাছাই করে ১২০টি ফসলের ১০০০ এর বেশি সমস্যার ছবি সমাধানসহ পর্যায়ক্রমে যুক্ত করে কৃষকের জানালা তৈরি করা হয়।
প্রশ্ন : কৃষকের জানালার তথ্য কিভাবে ভেলিডেশন করা হয়?
উত্তর : কৃষকের জানালার ক্ষেত্রে ভেলিডেশনের চেয়ে বেশি কিছু করা হয়েছে। সেটি হলোÑ তথ্য যাচাই করার পাশাপাশি কোন কোন তথ্য কোথায় কিভাবে কতটুকু সন্নিবেশিত হবে তাও নিশ্চিত করা হয়েছে। কৃষকের জানালাকে একটি প্রমিত তথ্যভা-ার হিসাবে তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে।
কৃষকের জানালা প্রমিতকরণ : প্রতি ১০০টি সমস্যা কৃষকের জানালায় যুক্ত হলে টেকনিক্যাল এক্সপার্ট কমিটির মিটিং আহ্বান করে তা পর্যালোচনা করা হয়। এভাবে ১১টি মিটিংয়ে ১০০০ এর বেশি সমস্যা ও তার সমাধান পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর তা চূড়ান্ত করা হয়।
প্রশ্ন : কৃষকের জানালার তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু?
উত্তর : এটি একটি প্রমিত কৃষি সম্প্রসারণ টুলস। কৃষকের জানালার সব তথ্য ও তত্ত্ব দেশের কৃষি গবেষণা, কৃষি সম্প্রসারণ ও কৃষি শিক্ষার সাথে জড়িত বিশেষজ্ঞগণের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট কমিটি কর্তৃক প্রমিত (ংঃধহফবৎফরুবফ) করা হয়েছে।
প্রশ্ন : এ উদ্যোগটির যৌক্তিকতা কী?
উত্তর : কৃষকের জানালা ব্যবহার করে সেবা গ্রহীতা ও সেবা প্রদানকারী উভয়েই উপকৃত হচ্ছেন। সেবা গ্রহীতা দ্রুত ও সঠিক সেবা পাচ্ছেন আর সেবা প্রদানকারী কৃষকের জানালা ব্যবহার করে যেকোনো সমস্যার খুব সহজেই দ্রুত ও নির্ভুল সমাধান দিতে পারছেন। কৃষকের জানালা ব্যবহার করলে সেবা গ্রহীতা ও সেবা প্রদানকারী মধ্যকার সম্ভাব্য কমিউনিকেশন নয়েজ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা যায়। কৃষকের জানালা আসলে কৃষককে তার সমস্যাটি সম্প্রসারণ কর্মীর কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতে সহায়তা করে। এটি ব্যবহার করে একজন অগ্রসর কৃষক নিজেও তার ফসলের সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
প্রশ্ন : কৃষকের জানালার পাইলটিংয়ের ফলাফল কি :
উত্তর : সেবা পেতে/ দিতে ৬৬.৬৬% পর্যন্ত সময় সাশ্রয় হয়েছে;
# সেবা পেতে/ দিতে ৮৬.০০% পর্যন্ত খরচ সাশ্রয় হয়েছে;
# সেবা পেতে/ দিতে ৬৬.৬৬% পর্যন্ত যাতায়াত সাশ্রয় হয়েছে;
# কৃষক বিশেষজ্ঞ কর্তৃক প্রমিত সঠিক পরামর্শ সেবা পাচ্ছেন;
# কৃষকের দোরগোড়ায় সেবা : ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, ফিয়াক ও এআইসিসির মাধ্যমে বাড়ির কাছেই কৃষক সেবা পাচ্ছেন;
# কৃষকের হাতের মুঠোয় সেবা : অনেক অগ্রসর কৃষক মোবাইলে কৃষকের জানালা ব্যবহার করে তাৎক্ষণিক সেবা পাচ্ছেন।
প্রশ্ন : কৃষকের জানালার মোবাইলে কিভাবে ব্যবহার করা যায়?
উত্তর : কৃষকের জানালা ডিভাইস রেসপনসিভ, তাই এটি খুব সহজেই এনড্রোয়েড মোবাইলেও ব্যবহার করা যায়। এজন্য কৃষকের জানালা ফোল্ডারটি আপনার মোবাইলে কপি করুন বা শেয়ার ইটের মাধ্যমে অন্য মোবাইল থেকে রিসিভ করুন।
# যড়সব.যঃসষ ফাইলটি ‘যঃসষ ারববিৎ’ বা অন্য ব্রাউজার দ্বারা লঁংঃ ড়হপব সিলেক্ট করে ওপেন করুন।
# যে ব্রাউজারটিতে কৃষকের জানালা দেখতে সুবিধে হয় সেটি সিলেক্ট করে ধষধিুং সিলেক্ট করে আবার ওপেন করুন।
# নির্দেশনা অনুসরণ করে কৃষকের জানালা ব্যবহার করুন।
# আপনার মোবাইলে কৃষকের জানালা দেখতে সমস্যা হলে যে কোনো ড়ভভষরহব যঃসষ ারববিৎ যেমন : ঁপ নৎড়ংিবৎ ইন্টারনেট থেকে আপনার মোবাইলে নামিয়ে নিন অথবা শেয়ার ইটের মাধ্যমে অন্য মোবাইল থেকে রিসিভ করে ইনস্টল করে নিন।
# যড়সব.যঃসষ ফাইলটি ড়ভভষরহব যঃসষ দ্বারা ওপেন করুন।
# মূল পাতায় প্রবেশ করুন এবং নির্দেশনা অনুস্মরণ করুন।
প্রশ্ন : কৃষকের জানালা মোবাইলে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অসুবিধাগুলো দূর করা যায় কিভাবে?
উত্তর : কৃষকের জানালা মোবাইলে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ছোট স্ক্রিনের মোবাইলের ক্ষেত্রে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছবি দেখে সমস্যা চেনা কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য করণীয় হলোÑ
# মোবাইলে অটোরোটেশন অপশনটি অন রাখুন এবং মোবাইলটি ঘুরিয়ে ছবিগুলো বড় করে দেখুন।
# ছবির ওপর ডাবল ক্লিক করেও ছবি বড় করে দেখা যায়।
# মোবাইলের ডিসপ্লে সেটিংসে গিয়ে ব্রাইটনেস বাড়িয়ে নিন, তাহলে ছবি আরও স্পষ্ট দেখা যাবে।
# আপনার মোবাইলে কৃষকের জানালা দেখতে সমস্যা হলে যে কোনো ড়ভভষরহব যঃসষ ারববিৎ যেমন ঃ ঁপ নৎড়ংিবৎ ইন্টারনেট থেকে আপনার মোবাইলে নামিয়ে নিন অথবা শেয়ার ইটের মাধ্যমে অন্য মোবাইল থেকে রিসিভ করে ইনস্টল করে নিন।
# যড়সব.যঃসষ ফাইলটি ড়ভভষরহব যঃসষ দ্বারা ওপেন করুন।
# মূল পাতায় প্রবেশ করুন এবং নির্দেশনা অনুসরণ করুন।
প্রশ্ন : ফসলের বালাইব্যবস্থাপনায় পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমাতে কৃষকের জানালার ভূমিকা কী?
উত্তর : কৃষকের জানালা একটি পরিবেশবান্ধব কৃষি সম্প্রসারণ টুলস। এতে বালাই ব্যবস্থাপনায় পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিগুলোকে (যেমন : আইপিএম পদ্ধতি) বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং কৃষকের আচরণগত পরিবর্তন যোগাযোগ বা ফার্মার্স বিহেভিয়ারাল চেঞ্জ কমিউনিকেশন (এফবিসিসি) শিরোনামে এমন কিছু বার্তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা পালন করলে কৃষকদের মধ্যে এমন কিছু আচরণগত পরিবর্তন আসবে যার ফলে পরবর্তী সময়ে একই সমস্যার পুনরাবৃত্তি কমে আসবে এবং রাসায়নিক বালাইনাশকের ব্যবহারও কমে আসবে। একই সাথে এতে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে, যা এলোপাতাড়ি রাসায়নিক বালাইনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আনবে বলে আশা করা যায়।
প্রশ্ন : এনড্রোয়েড ছাড়া অন্যান্য মোবাইলেও কৃষকের জানালার ব্যবহার করা যায় কী?
উত্তর : কৃষকের জানালা অফলাইনে শুধু স্মার্টফোন/ এনড্রোয়েড মোবাইলেই ব্যবহার করা যায়। তবে ইন্টারনেট সাপোর্ট করে এমন যে কোনো মোবাইলেই অনলাইনে কৃষকের জানালা ব্যবহার করা যায়। এজন্য এ লিংকটি ভিজিট করতে হবে : িি.িরহভড়শড়ংয.মড়া.নফ/শৎরংযড়শবৎলধহধষধ/যড়সব.যঃসষ
প্রশ্ন : কৃষকের জানালার কার্যক্রম কবে থেকে শুরু হয়?
উত্তর : ভাবনাটি শুরু হয় ২০১১ এর শুরুর দিকে। পরীক্ষামূলকভাবে কাজ শুরু হয় ২০১৩ এর মাঝামাঝি সময়ে। এটুআই প্রোগ্রাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহযোগিতায় আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয় ১৫ জুন ২০১৪ থেকে।
প্রশ্ন : কৃষকের জানালার বৈশিষ্ট্য কি কি?
উত্তর :
১. কৃষকের জানালা ব্যবহার করা সহজ ও ব্যবহারকারী বান্ধব;
২. এটি কৃষকবান্ধব : কৃষকের জানালায় ব্যবহৃত প্রতিটি ছবি মাঠ থেকে তোলা এবং কৃষক মাঠে সমস্যাটি ঠিক যেমন দেখতে পান ঠিক সে রকম ছবিই ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে কৃষক সঠিকভাবে সমস্যাটি চিনতে পারেন। (গবেষণায় দেখা গেছে, ঝকমকে ও ফটোশপে কাজ করা ছবি কৃষকদের বিভ্রান্ত করে। মাঠের অবস্থার সাথে মিল না পেলে কৃষক সমস্যাটি চিনতে পারেন না।)
৩. এটি পরিবেশবান্ধব : এতে বালাই ব্যবস্থাপনায় পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং কৃষকের আচরণগত পরিবর্তন যোগাযোগ (এফবিসিসি) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা কৃষকদের মধ্যে এমন কিছু আচরণগত পরিবর্তন আনবে যার ফলে পরবর্তী সময়ে একই সমস্যার পুনরাবৃত্তি কমে আসবে এবং রাসায়নিক বালাইনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আনবে।
৪. অংশগ্রহণমূলক : কৃষকের জানালায় ছবি দেখে কৃষক নিজেই তার সমস্যাটি চিহ্নিত করছেন ফলে তিনি সমাধান পাওয়ার সাথে সাথে বিষয়টি নিজেও শিখছেন।
৫. ডিভাইস রেসপনসিভ : কৃষকের জানালা যে কোনো কম্পিউটার, ল্যাপটব, ট্যাব ও স্মার্টফোন বা এন্ড্রোয়েড মোবাইলে ব্যবহার করা যায়।
৬. প্রমিত কৃষি সম্প্রসারণ টুস : কৃষকের জানালাকে দেশের কৃষি গবেষণা, কৃষি সম্প্রসারণ ও কৃষি শিক্ষার সাথে জড়িত বিশেষজ্ঞগণের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট কমিটি কর্তৃক প্রমিত করা হয়েছে।
প্রশ্ন: কৃষকের জানালা কি কৃষি বিশেষজ্ঞের বিকল্প?
উত্তর : মোটেই না। কৃষকের জানালা কৃষকদের ফসলের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান দেয়ার সহায়ক উপকরণ মাত্র। সমস্যা সমাধানে বিশেষজ্ঞগণের পরামর্শই চূড়ান্ত। তবে কৃষকের জানালা বিশেষজ্ঞগণের মতামতকেই বহন করছে। য়
কৃষি ও কৃষকের পুঁথি
মো. মোশাররফ হোসেন*
শোনেন শোনেন সুধীজন শোনেন দিয়া মন
কৃষি ও কৃষকের কথা করিব বর্ণন।
মুসলমান সবাইকে জানাই সালাম,
হিন্দু ভাইদের প্রতি রইল প্রণাম।
শুনি গোয়াল ভরা ছিল গরু গোলা ভরা ধান,
পুকুর ভরা ছিল মাছ খাদ্য অফুরান।
সে সব অতীত কথা নেই সেই দিন,
জনসংখ্যার চাপে সব হয়েছে বিলীন।
দিনে দিনে বাড়ছে লোক কমছে জমাজমি,
তবু ফসলের ফলন ভাই যায়নি তো কমি।
কৃষিপ্রধান এই দেশ কৃষক তার প্রাণ,
ফসল ফলিয়ে মাঠে রাখছে অবদান।
কৃষকের শ্রম আর মোদের গবেষণা,
এই দুয়ে মিলে দেখি মোরা মাঠ ভরা সোনা।
নতুন নতুন জাত আর কলাকৌশল,
মাঠে তাই দেখি কেবল ফসল আর ফসল।
হাইব্রিড আর উফশী ধান চাষ করে চাষি
চালের অভাব তারা ঘুঁচায় বারো মাসই।
ধান গবেষণা দেয় নতুন ধানের জাত,
তিন বেলা তাই মোরা খেতে পাই ভাত।
কত শত শাকসবজি আর ফলমূল,
নয়ন জুড়ায় কত রকমারি ফুল,
কৃষি গবেষণা করে এসব উদ্ভাবন,
বৃদ্ধি করে কৃষকের আয়-উপার্জন।
এ কথা কারো আজ অজানা নয়,
মাটির স্বাস্থ্য ভালো হলে ভালো ফসল হয়,
মাটি ছাড়া হয় না ফসল জানেন সবাই,
এই মাটির উন্নয়ন করে এসআরডিআই।
রুই, কাতলা, তেলাপিয়া আরো কত মাছ,
কই, মাগুর, চিংড়ি, পুঁটি আর পাঙ্গাশ,
খামারেতে খামারি করে এসব চাষ,
তাই মাছের বাজারে মাছ পাই বারোমাস।
দুধ হলো স্বর্গ-সুধা জানেন সকলে,
আদর্শ পানীয় তাকে অনেকে বলে,
এই ডিম, দুধ, মাংসের কভু হবে না সংকট,
পাশে আছে আমাদের প্রাণিসম্পদ।
যদি পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে চাও,
বেশি বেশি করে গাছের চারা লাগাও,
সুজলা শ্যামলা মোদের এই বাংলাদেশ,
বন গবেষণা ঠিক রাখে এই পরিবেশ।
শীতের পিঠা বড় মজা চিনির প্রয়োজন,
ইক্ষু গবেষণা করে সেই চিনির আয়োজন।
বাংলাদেশের সোনার আঁশের বিশ্বজোড়া নাম,
অতীত কাল থেকে এর রয়েছে সুনাম,
একই গাছে খড়ি আঁশ দুই-ই আমরা পাই,
এই পাট নিয়ে কাজ করে বিজেআরআই।
যে তুলার বালিশে করো আরামে শয়ন,
না থাকলে হতো না তা তুলা উন্নয়ন।
সিল্কের কাপড় ভাই সবার প্রিয়,
তাই রেশম গবেষণার কথা স্মরণ রাখিও।
অনেকে জানি তাকে নাম তার বিনা,
বাংলায় সে পরমাণু কৃষি গবেষণা,
কৃষিতে পরমাণুর সফল ব্যবহার,
দিয়েছে নতুন নতুন ফসলের সম্ভার।
এই এগারোটি প্রতিষ্ঠান সদা সর্বক্ষণ,
কৃষির উন্নয়নে সদা নিবেদিত মন।
কৃষি অতি মহান পেশা তুচ্ছ করো নাকো,
কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে এটা মনে রেখো।
এই পর্যন্ত পুঁথি আমি শেষ করিলামÑ
সবাইকে জানাই আবার সালাম ও প্রণাম।।
মো. নাজমুল সাকিব রেজা
রংপুর
প্রশ্ন : আম গাছের কচি পাতা ও পুষ্প মঞ্জরিতে সাদা পাউডারের মতো গুঁড়া দেখা যায়। এর জন্য কী করণীয়?
উত্তর : এটি একটি আম গাছের ছত্রাকজনিত রোগ। এ রোগের আক্রমণে কচি পাতা ও পুষ্প মঞ্জরিতে সাদা পাউডারের মতো গুঁড়া দেখা যায়। যার ফলে ফুল ও ফল ঝরে পড়ে। এ রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য বাগান সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ফুল আসার আগে একবার এবং ফুল ধরার পর একবার ৮০% সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন- কুমুলাস অথবা থিওভিট ২ গ্রাম এবং টিল্ট ০.৫ মিলি. প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
বজলুল রশিদ
ঠাকুরগাঁও
প্রশ্ন : গমের শিষে কচি দানার রস চুষে খায়। শিষ কালো হয়ে ঝরে পড়ে, কী করলে উপকার হবে।
উত্তর : পূর্ণবয়স্ক ও বাচ্চা জাবপোকা উভয়ই গমের পাতা, কা- ও শিষের কচি দানা থেকে রস চুষে খায়। জাবপোকা এক ধরনের রস নিঃসরণ করে ফলে তাতে শুঁটিমোল্ড ছত্রাক জন্মে এবং আক্রান্ত অংশ কালো দেখায়। জমিতে আক্রমণ বেশি হলে ইমিডাক্লোরপিড জাতীয় কীটনাশক (এডফায়ার, কনফিডর) ১ মিলি. লিটার পানি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
পান্না
দিনাজপুর
প্রশ্ন : আমার টমেটো ক্ষেতে ফুল ফল ধরার পর গাছ মরে যায়। প্রতিকার জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর : আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনার টমেটো ক্ষেতের সম্পূর্ণ গাছ একবারে নেতিয়ে পড়ে বা ঢলে পড়ে মরে যায়, নাকি পাতা শুকিয়ে মরে যায় তা উল্লেখ করলে ভালো হতো। টমেটো গাছে ফুল-ফল আসার পর ঢলে পড়া রোগে গাছ মরে যেতে পারে। এ রোগ ছত্রাকজনিত ও ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে হতে পারে। ছত্রাকজনিত ঢলে পড়া রোগ নিয়ন্ত্রণে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলে বাকি গাছগুলোতে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক গাছ ও মাটি ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। অন্যদিকে শিকড়সহ গাছের মাটিসংলগ্ন স্থান যদি ভেজা ভেজা থাকে বা চাপ দিলে যদি পিচ্ছিল পদার্থ বের হয় বা পিচ্ছিল লাগে তাহলে আক্রান্ত গাছ শিকড় ও আক্রান্ত স্থানের মাটিসহ তুলে গভীর গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে। বাকি গাছগুলোতে ব্যাকটেরিয়ানাশক ক্রোসিন-এজি ১০ এসপি নির্ধারিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।
রাকিব
বরিশাল
প্রশ্ন : দিনের কোন সময় ফসলে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
উত্তর : আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। সকালে বা বিকালে ভালো আবহাওয়ায় বাতাসের অনুকূলে স্প্রে করতে হয়। এ সময়ে রোদের তাপ কম থাকে। বৃষ্টির আগে বা পরে বা কড়া রোদে, বিশেষ করে দুপুরে এবং প্রবল বাতাস বয়ে যাওয়ার সময় কীটনাশক স্প্রে করা উচিত নয়।
পল্লব রায়
দিনাজপুর
প্রশ্ন : ধানক্ষেতের বৃদ্ধি কম। ধান গাছ বসে যায়। কী করণীয়?
উত্তর : ধানক্ষেতে পর্যাপ্ত পরিমাণ সুষম সারের অভাবে এ লক্ষণ দেখা দেয়। সাধারণত দস্তা সারের অভাবে এ ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায়। ধান গাছের কুশি কম হয় ও গাছ খাটো হয় এবং বসে যায়। পুরনো পাতায় মরিচার মতো দেখা যায় এবং কচি পাতা সাদা হয়ে যায়। এ লক্ষণ দেখা গেলে করণীয়Ñ
০ ক্ষেতের পানি সরিয়ে দিতে হবে এবং বিঘাপ্রতি ১৫ কেজি দস্তা সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।
অথবা
০ জিঙ্ক সালফেট ০.৫% হারে অর্থাৎ প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম জিংক সালফেট মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
সবুজ
দিনাজপুর
প্রশ্ন : কাঁঠালের মুচি কালো হয়ে ঝরে যায়। কী করণীয়?
উত্তর : ছত্রাকের কারণে এ ধরনের পচন রোগ দেখা যায়। এ রোগের কারণে কচি ফলের গায়ে বাদামি রঙের দাগ সৃষ্টি হয় এবং শেষ পর্যন্ত পচে যায়। বাতাসের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে।
করণীয়Ñ
০ গাছের নিচে ঝরে পড়া পুরুষ ও স্ত্রী পুষ্প মঞ্জরি সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
০ মুচি ধরার আগে ও পরে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার ব্যাভিস্টিন/ ইন্ডোফিল এম-৪৫ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
তাহের হোসেন
মানিকগঞ্জ
প্রশ্ন : প্রতি শতাংশে কতগুলো মাছ দেয়া যাবে?
উত্তর : চাষ পদ্ধতি ও মাছের প্রজাতির ওপর সংখ্যা নির্ভর করে। নিচে শতাংশপ্রতি মাছের সংখ্যা উল্লেখ করা হলো।
১. সাধারণ মিশ্র চাষ : কাতলা ও সিলভার কার্প ২০টি, মৃগেল ১০টি, রুই ১০টি। অথবা কার্প ও গলদা চিংড়ি মিশ্র চাষে কার্প ৩৫টি এবং চিংড়ি ১৫টি।
২. আধা নিবিড় পদ্ধতিতে কার্প মিশ্র চাষ : কাতলা ১০টি, সিলভার কার্প ১৫টি, রুই ১০টি, মৃগেল ১০টি, সরপুঁটি ২০টি ও গ্রাস কার্প ২টি।
৩. মনোসেক্স তেলাপিয়ার একক চাষ : ২০০-২৫০টি।
৪. থাই কৈ একক চাষ : ৩০০-৩৫০টি।
৫. পাঙ্গাশ মিশ্র চাষ : ৬০-১০০টি পাঙ্গাশ, ২টি সিলভার কার্প, ২০টি শিং এবং ২৫টি মাগুর।
৬. পাঙ্গাশ একক চাষ : ১২৫-১৫০টি। মাছ চাষে লাভবান হতে হলে অবশ্যই সুষম খাবার ব্যবহার করতে হবে।
হাপান উদ্দিন
পঞ্চগড়
প্রশ্ন : আমার পুকুরের মাছের গায়ে ঘা দেখা যাচ্ছে। আমি মিশ্র চাষ করি। কিছু ঘাযুক্ত মাছ মরে যাচ্ছে। এখন আমি কী করতে পারি?
উত্তর : ১. যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মরা মাছগুলো তুলে ফেলে মাটিতে পুঁতে দিতে হবে।
২. আক্রান্ত মাছগুলো এক চা চামচ পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ২-৩ মিনিট গোসল করিয়ে নিতে হবে।
৩. প্রতি শতাংশ পুকুরে আধা কেজি চুন ও আধা কেজি লবণ দিতে হবে। মাছের ক্ষতরোগ বেশি হলে পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট শতাংশপ্রতি ১৫ গ্রাম দিতে হবে।
৪. মাছের ক্ষত থাকা অবস্থায় পুকুরে সার প্রয়োগ করা যাবে না।
৫. প্রতি কেজি খাবারের সাথে ৩ গ্রাম রেনামাইসিন এবং ৫ গ্রাম ভিটামিন সি দিতে হবে।
আইনুল হক
বগুড়া
প্রশ্ন : গরুর পায়ে ঘা হয়েছে। কী করণীয়?
উত্তর : সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে বোঝা যাবে গরুর পা পচা রোগ হয়েছে।
লক্ষণ : ১. আক্রান্ত পশুর পায়ের করোনেট ফুলে যায় এবং পশু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে।
২. পশুর দেহ তাপমাত্রা ১০৩০ ফা.-১০৪০ ফা. পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। দুগ্ধবতী গাভীর উৎপাদন ও দৈহিক ওজন হ্রাস পায়।
৩. রোগ জটিল হলে বা একাধিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে আর্থ্রাইটিস, সাইনোভাইটিস, টেন্ডোনাইটিস হয় এবং এক পর্যায়ে পশু শুয়ে পড়ে। যথাসময়ে চিকিৎসা না হলে ক্ষুর খসে পড়ে এবং পশু স্থায়ীভাবে খোঁড়া হয়ে যেতে পারে।
৪. অনেক সময় পশুর পায়ে পুঁজ হয় এবং আক্রান্ত স্থান থেকে দুর্গন্ধ বের হয়।
রোগ প্রতিরোধ
পশুর পায়ে ক্ষত হওয়ার কারণগুলো বন্ধ করতে হবে। ৫% কপার সালফেট সলুশন ফুট বাথ হিসেবে প্রতিদিন ২ বার ব্যবহার করে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। এ ক্ষেত্রে কপার সালফেট ২৪ ঘণ্টা অন্তর অন্তর পরিবর্তন করতে হবে। গরুর খাদ্যে স্কয়ার সিটিসি ১৫% ২৮ দিন ব্যবহার করে এবং টিকার মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
চিকিৎসা :
আক্রান্ত পশুকে জীবাণুমুক্ত শুকনা প্ররিবেশে রাখতে হবে। অতঃপর নিম্নলিখিত উপায়ে চিকিৎসা করা যায়।
১. ইরঢ়বহ ঠবঃজ রহলবপঃরড়হ/ড়ঃবঃৎধ-ঠবঃজ খঅ
ওহলবপঃরড়হ
২. অপব- ঠবঃ ইড়ষঁং/ কড়ঢ়-ঠবঃ জ ওহলবপঃরড়হ
৩. ঝঁসরফ- ঠবঃ চড়ফিবৎ.
রুবেল
নাটোর
প্রশ্ন : ছাগলের পি.পি.আর হয়েছে। কী করণীয়?
উত্তর : পি.পি.আর রোগের প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পশুর খাদ্য গ্রহণে অনীহা, উচ্চ তাপমাত্রা (১০৭০ ফা.-১০৮০ ফা.), নাক, চোখ দিয়ে তরল পদার্থ নিঃসরণ এবং ঠোঁট, জিহ্বা ও মুখম-লে ঘা হয়।
অনবরত রক্ত মিশ্রিত ও দুর্গন্ধমুক্ত ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হয়। লক্ষণ প্রকাশের ৪-৫ দিন পর চোখনাক দিয়ে পুঁজযুক্ত তরল পদার্থ নিঃসৃত হয় এবং এক পর্যায়ে শরীরে প্রচ- পানি শূন্যতা দেখা দেয়। এ ছাড়া কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং লক্ষণ প্রকাশের ৭-১০ দিনের মধ্যে আক্রান্ত পশু মারা যায়।
প্রতিরোধের উপায়
দুইভাবে প্রতিরোধ করা যায়।
১. আক্রান্ত পশুকে জবাই করে পুড়ে ফেলে বা পশুর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে।
২. টিকার মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। নিকটস্থ পশু হাসপাতালে প্রাপ্ত পশুসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উৎপাদিত পিপিআর টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
চিকিৎসা :
১. ঝঁসরফ-ঠবঃ চড়ফিবৎ+ উড়ীধপরহ ঠবঃ চড়ফিবৎ ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন ২ বার প্রয়োগ করতে হবে।
২. কড়ঢ়-ঠবঃ ওহলবপঃরড়হ.
অপব ঠবঃ ইড়ষঁং.
৩. অহঃরযরংঃধ-ঠবঃ ওহলবপঃরড়হ.
৪. এবহধপুহ-ঠবঃ ১০ ওহলবপঃরড়হ.
উল্লিখিত চিকিৎসা অবশ্যই স্থানীয় পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করতে হবে। য়
সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। বৈশাখ বাংলা বছরের প্রথম মাস অর্থাৎ আর একটি নতুন বছরের সূচনা। গত বছরের দুঃখ, বেদনা, যন্ত্রণা, কষ্ট, অসফলতা সব দূর করে আমাদের প্রত্যাশা নতুন বছরটি যেন সবার জীবনে হাসি, আনন্দ, সফলতা, উচ্ছ্বাস আর সমৃদ্ধি বয়ে আনে। এ মাসে চলতে থাকে আমাদের ঐতিহ্যবাহী মেলা, পার্বন, উৎসব, আদর, আপ্যায়ন। নতুন আবাহন আর প্রত্যাশার মাঝে সুজন কৃষক ফিরে তাকায় দিগন্তের মাঠে। প্রিয় পাঠক আসুন এক পলকে জেনে নেই বৈশাখে কৃষির করণীয় দিকগুলো-
বোরো ধান
ি দেরিতে রোপণ করা বোরো ধানের জমিতে চারার বয়স ৫০-৫৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের শেষ কিস্তি উপরিপ্রয়োগ করতে হবে;
ি জমিতে আগাছা পরিষ্কার করা, সেচ দেয়া, বালাই দমন এসব কাজ সঠিকভাবে করতে হবে;
ি থোড় আসা শুরু হলে জমিতে পানির পরিমাণ দ্বিগুণ বাড়াতে হবে;
ি ধানের দানা শক্ত হলে জমি থেকে পানি বের করে দিতে হবে;
ি এ মাসে বোরো ধানে মাজরা পোকা, বাদামি গাছফড়িং, সবুজ পাতাফড়িং, গান্ধি পোকা, লেদা পোকা, ছাতরা পোকা, শীষকাটা লেদা পোকা, ছাতরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ হতে পারে;
ি পোকা দমনের জন্য নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শন করতে হবে এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পোকার আক্রমণ রোধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আলোর ফাঁদ পেতে, পোকা ধরার জাল ব্যবহার করে, ক্ষতিকর পোকার ডিমের গাদা নষ্ট করে, উপকারী পোকা সংরক্ষণ করে, ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ধানক্ষেত বালাইমুক্ত করা দরকার;
ি এসব উপায়ে পোকার আক্রমণ প্রতিহত করা না গেলে শেষ উপায় হিসেবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায়, সঠিক নিয়মে প্রয়োগ করতে হবে;
ি এ সময় ধান ক্ষেতে উফরা, বাদামি দাগ রোগ, ব্লাস্ট, পাতাপোড়া ও টুংরো রোগসহ অন্যান্য রোগ হতে পারে। জমিতে উফরা রোগ দেখা দিলে যে কোনো কৃমিনাশক যেমন ফুরাডান ৫ জি বা কিউরেটার ৫ জি প্রয়োগ করতে হবে;
ি ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রেখে হেক্টরপ্রতি ৪০০ গ্রাম ট্রুপার বা জিল বা নেটিভ ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে দুইবার প্রয়োগ করতে হবে;
ি জমিতে পাতাপোড়া রোগ হলে অতিরিক্ত ৫ কেজি/বিঘা হারে পটাশ সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে এবং জমির পানি শুকিয়ে ৭-১০ দিন পর আবার সেচ দিতে হবে;
ি টুংরো রোগ দমনের জন্য এর বাহক পোকা সবুজ পাতাফড়িং দমন করতে হবে।
গম ও ভুট্টা (রবি)
ি মাঠ থেকে কাটার পর এ দুটি দানাদার ফসল ইতোমধ্যে বাড়ির আঙিনায় চলে আসার কথা। ভালোভাবে সংরক্ষণ করা না হলে ক্ষতি হয়ে যাবে অনেক।
ি সংরক্ষণ কৌশলে ভালোভাবে বীজ শুকানো, উপযুক্ত পাত্র নির্বাচন, বায়ুরোধী করে সংরক্ষণ, বীজ পাত্রকে মাটি বা মেঝে থেকে আলাদাভাবে রেখে সংরক্ষণ করতে হবে।
ি সংরক্ষণ পাত্রে শুকনো নিমপাতা, বিষকাটালি পাতা রেখে দিলে সহজেই পোকার আক্রমণ রোধ করা যাবে।
ভুট্টা (খরিফ)
ি খরিফ ভুট্টার বয়স ২০-২৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ করতে হবে;
ি মাটিতে রসের ঘাটতি থাকলে হালকা সেচ দিতে হবে;
ি জমিতে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং একই সাথে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে;
পাট
ি বৈশাখ মাস তোষা পাটের বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। ও-৪ বা ফাল্গুনী তোষা ভালো জাত;
ি দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটিতে তোষা পাট ভালো হয়;
ি বীজ বপনের আগে প্রতি কেজি বীজ ৪ গ্রাম ভিটাভেক্স বা ১৫০ গ্রাম রসুন পিষে বীজের সাথে মিশিয়ে শুকিয়ে নিয়ে জমিতে সারিতে বা ছিটিয়ে বুনতে হবে;
ি সারিতে বুনলে প্রতি শতাংশে ২৫-৩০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। তবে ছিটিয়ে বুনলে ৩৫-৪০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়;
ি ভালো ফলনের জন্য শতাংশপ্রতি ৮০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি সার শেষ চাষের সময় মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে;
ি জমিতে সালফার ও জিংকের অভাব থাকলে জমিতে সার দেয়ার সময় শতাংশপ্রতি ৪০০ গ্রাম জিপসাম ও ৫০ কেজি দস্তা সার দিতে হবে;
ি শতাংশপ্রতি ২০ কেজি গোবর সার ব্যবহার করলে রাসায়নিক সারের পরিমাণ অনেক কম লাগে;
ি আগে বোনা পাটের জমিতে আগাছা পরিষ্কার, ঘন চারা তুলে পাতলা করা, সেচ এসব কাজগুলো যথাযথভাবে করতে হবে;
ি এ সময় পাটের জমিতে উড়চুঙ্গা ও চেলা পোকার আক্রমণ হতে পারে;
ি সেচ দিয়ে মাটির উপযোগী কীটনাশক দিয়ে উড়চুঙ্গা দমন করতে হবে;
ি চেলা পোকা আক্রান্ত গাছগুলো তুলে ফেলে দিতে হবে এবং জমি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে;
ি পাটের জমিতে কা- পচা, কালপট্টি, নরম পচা, শিকড় গিঁট, হলদে সবুজ পাতা এসব রোগ দেখা দিতে পারে। নিড়ানি, আক্রান্ত গাছ বাছাই, বালাইনাশকের যৌক্তিক ব্যবহার করলে এসব রোগ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়।
শাকসবজি
ি বসতবাড়ির বাগানে জমি তৈরি করে ডাঁটা, কলমিশাক, পুঁইশাক, করলা, ঢেঁড়স, বেগুন, পটোল চাষের উদ্যোগ নিতে হবে;
ি মাদা তৈরি করে চিচিঙ্গা, ঝিঙা, ধুন্দুল, শসা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়ার বীজ বুনে দিতে পারেন;
ি আগের তৈরি করা চারা থাকলে ৩০-৩৫ দিনের সুস্থ সবল চারাও রোপণ করতে পারেন;
ি লতানো সবজির জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাচা তৈরি করে নিতে হবে;
ি লতানো সবজির দৈহিক বৃদ্ধি যত বেশি হবে তার ফুল ফল ধারণক্ষমতা তত কমে যায়। সেজন্য গাছের বাড়বাড়তি বেশি হলে লতার/গাছের ১৫-২০ শতাংশের পাতা লতা কেটে দিতে হবে। এতে গাছে তাড়াতাড়ি ফুল ও ফল ধরবে;
ি কুমড়া জাতীয় সব সবজিতে হাত পরাগায়ন বা কৃত্রিম পরাগায়ন অধিক ফলনে দারুণভাবে সহায়তা করবে। গাছে ফুল ধরা শুরু হলে প্রতিদিন ভোরবেলা সদ্য ফোটা পুরুষ ফুল সংগ্রহ করে পাঁপড়িগুলো ফেলে দিয়ে পরাগমু-টি স্ত্রী ফুলের গর্ভমু-ে ঘষে হাতপরাগায়ন নিশ্চিত করলে ফলন অনেক বেড়ে যাবে;
ি এ মাসে কুমড়া জাতীয় ফসলে মাছি পোকা দারুণভাবে ক্ষতি করে থাকে। এক্ষেত্রে জমিতে খুঁটি বসিয়ে খুঁটির মাথায় বিষটোপ ফাঁদ দিলে বেশ উপকার হয়। এছাড়া সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করেও এ পোকার আক্রমণ রোধ করা যায়।
ি গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করতে চাইলে বারি টমেটো ৪, বারি টমেটো ৫, বারি টমেটো ৬, বারি টমেটো ১০, বারি টমেটো ১১, বারি হাইব্রিড টমেটো ৪, বারি হাইব্রিড টমেটো ৫ বা বিনা টমেটো ১, বিনা টমেটো ২-এর চাষ করতে পারেন;
ি গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করতে হলে পলিথিনের ছাউনির ব্যবস্থা করতে হবে সে সাথে এ ফসলটি সফলভাবে চাষের জন্য টমেটোটোন নামক হরমোন প্রয়োগ করতে হবে। স্প্রেয়ারের সাহায্যে প্রতি লিটার পানিতে ২০ মিলি টমেটোটোন মিশিয়ে ফুল আসার পর ফুলের গায়ে ৫-৭ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে;
গাছপালা
ি এ মাসে আমের মাছি পোকাসহ অন্যান্য পোকার জন্য সতর্ক থাকতে হবে। মাছি পোকা দমনের জন্য সবজি খেতে যে রকম বিষটোপ ব্যবহার করা হয় সে ধরনের বিষটোপ বেশ কার্যকর। ডিপটরেক্স, ডারসবান, ডেনকাভেপন সামান্য পরিমাণ দিলে উপকার পাওয়া যায়;
ি এ সময় কাঁঠালের নরম পচা রোগ দেখা দেয়। এলাকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব থাকলে ফলে রোগ দেখা দেয়ার আগেই ফলিকুল ০.০৫% হারে বা ইন্ডোফিল এম-৪৫ বা রিডোমিল এম জেড-৭৫ প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৩ বার স্প্রে করতে হবে;
ি নারিকেলের চারা এখন লাগাতে পারেন। ভালো জাতের সুস্থ সবল চারা ৬-৮ মিটার দূরে লাগানো যায়। গর্ত হতে হবে দৈর্ঘ্যে ১ ফুট, প্রস্থে ১ ফুট এবং গভীরতায় ১ ফুট। নারিকেলের চারা রোপণের ৫-৭ দিন আগে প্রতি গর্তে জৈবসার ১০ কেজি, টিএসপি ৭৫০ গ্রাম, এমওপি ৫৫০ গ্রাম এবং জিপসাম ৫০০ গ্রাম ভালোভাবে গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বীজতলা থেকে যেদিন চারা উঠানো হবে সেদিনই জমিতে চারা রোপণ করা সবচেয়ে ভালো। অন্যথায় যতদ্রুত সম্ভব চারা রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের সময় চারাটিকে এমনভাবে গর্তে বসিয়ে মাটি চাপা দিতে হবে যাতে নারিকেলের পিঠের কেবল ইঞ্চি খানেক মাটির ওপরে ভেসে থাকে এবং বাকিটা মাটির নিচে থাকে;
ি গ্রামের রাস্তার পাশে পরিকল্পিতভাবে খেজুর ও তালের চারা এখন লাগাতে পারেন। যতœ, পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারলে ২-৩ বছরেই গাছগুলো অনেক বড় হয়ে যাবে;
ি ভালো ফলনের জন্য এ সময় বৃক্ষজাতীয় গাছের বিশেষ করে ফল গাছের প্রয়োজনীয় যতœ নিতে হবে;
ি মাতৃগাছের পরিচর্যা, আগাছা দমন, প্রয়োজনীয় সেচ দিলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে;
ি বৃষ্টি হয়ে গেলে পুরাতন বাঁশ ঝাড় পরিষ্কার করে কম্পোস্ট সার দিতে হবে এবং এখনই নতুন বাঁশ ঝাড় তৈরি করার কাজ হাতে নিতে হবে;
ি যারা সামনের মৌসুমে গাছ লাগাতে চান তাদের এখনই জমি নির্বাচন, বাগানের নকশা প্রস্তুত এবং অন্যান্য প্রাথমিক কাজগুলো সেরে রাখতে হবে।
প্রাণিসম্পদ
ি গরমকালে মুরগি পালনে যেসব সমস্যা দেখা দেয় তাহলো-খাদ্য গ্রহণ, ব্রয়লারের দৈহিক ওজন বৃদ্ধির হার, লেয়ার ও ব্রিডারের ডিম উৎপাদনসহ ডিমের খোসার গুণগতমান কমে যায় এবং খামারে মুরগি মারা যাওয়ার হার বেড়ে যায়;
ি ব্রুডার হাউসের শেডে বাচ্চা তোলার সাথে সাথে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ও গ্লুকোজ খাওয়াতে হবে;
ি লেয়ার হাউস ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে শেডের চাল বা ছাদে তাপ বিকিরণ করতে পারে এমন সাদা, অ্যালুমিনিয়াম রঙ দেয়া প্রয়োজন;
ি অতিরিক্ত গরমে পাইপ বা ঝর্ণার মাধ্যমে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ক্ষুদ্র খামারের ক্ষেত্রে চালের ওপরে পাটের চট দিয়ে পানি ছিটাতে হবে। প্রচ- গরমে খাবারের পানির সাথে বরফ মেশানো দরকার;
ি হাঁস-মুরগির রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত ভ্যাকসিন বা টিকা দেয়া জরুরি। সেজন্য মুরগির রানীক্ষেত, ব্রংকাইটিস, ফাউলপক্স, ফাউল কলেরা, ম্যারেক্স এবং হাঁসের প্লেগ ও কলেরা রোগের টিকা দেয়ার জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;
ি গোখাদ্যের জন্য নেপিয়ার, বাজরা, প্যারা, ভুট্টা, ইপিল ইপিল এর চাষ করার ভালো সময় এখন। বাড়ির আশপাশে, পুকুর পাড়ে, রাস্তার ধারে, পতিত জায়গায় গোখাদ্যের চাষ করে লাভবান হওয়া যায়;
ি গ্রীষ্মের তাপদাহে গবাদিপশুর জন্য অতিরিক্ত খাবার, বিশ্রাম, ঘরে আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা, বেশি পানি খাওয়ানোসহ অন্যান্য কার্যক্রম সঠিকভাবে করতে হবে;
ি এ সময় গবাদিপশুর তড়কা ও গলাফুলা রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য টিকা প্রদানসহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে।
মৎস্যসম্পদ
ি বৈশাখ মাস পুকুরে মাছ ছাড়ার উপযুক্ত সময়;
ি ভালোভাবে পুকুর তৈরি করে অর্থাৎ সেচ, কাদা সরিয়ে, চুন প্রয়োগ করে, আগাছা পরিষ্কার, পানি দেয়া, পানি পরীক্ষা, পুকুর পাড়ে নিত্য পাতা ঝরা গাছ ছাঁটাই বা কেটে ফেলাসহ অন্যান্য কাজগুলো করতে হবে। এরপর প্রতি শতকে মিশ্রচাষের জন্য ৩০-৪০টি ৪-৫ ইঞ্চি বড় সুস্থ সবল পোনা ছাড়তে হবে;
ি পানির ৩ স্তরের কথা বিবেচনা করে তেলাপিয়া, সরপুঁটি, নাইলোটিকা, কার্পজাতীয় মাছ, রুই, কাতল, মৃগেল, কালো বাউস এবং সম্ভব হলে চিংড়ি পোনাও ছাড়া যাবে;
ি পোনা সংগ্রহের সময় বিশ্বস্ত উৎস থেকে পোনা সংগ্রহ করতে হবে।
প্রিয় পাঠক, বৈশাখ আসে আমাদের জন্য নতুন আবাহনের সৌরভ নিয়ে। সাথে আঁচলে বেঁধে নিয়ে আসে কালবৈশাখীকে। কালবৈশাখীর থাবা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে কৃষিতে আগাম বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সুবিবেচিত লাগসই কৌশল আর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সব বাধা ডিঙিয়ে আমরা কৃষিকে নিয়ে যেতে পারব সমৃদ্ধির ভুবনে। আবার কথা হবে আগামী মাসের কৃষিকথায়। আপনাদের সবার জন্য আবারও নতুন বছরের শুভ কামনা। য়
বিষয় লেখক মাস পৃষ্ঠা
* দানাজাতীয় ফসল
০ ব্রি ধান৬২ : জিঙ্কসমৃদ্ধ স্বল্প জীবনকালীন আমন ধানের জাত ড. পার্থ সারথী বিশ্ব ভাদ্র ৩
০ সরগম : একটি সম্ভাবনাময় দানাদার শস্য কৃষিবিদ মো. রফিকুল হাসান চৈত্র ৯
* সবজি জাতীয় ফসল
০ ভাসমান পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন ও শাকসবজি চাষ কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম শ্রাবণ ৩
০ মুলার বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি মো. রফি উদ্দিন অগ্রহায়ণ ১৮
০ পুষ্টি নিরাপত্তা ও দারিদ্র্য দূরীকরণে সবজি চাষ ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া ফাল্গুন ৩
০ গ্রীষ্মকালীন সবজি গুরুত্ব ও চাষাবাদ কৌশল মো. সাহারুজ্জামান ফাল্গুন ২২
০ ভেষজগুণে সমৃদ্ধ শাক-রুকোলা ড. মো. আব্দুর রহিম চৈত্র ১১
* অর্থকরী ফসল
০ বাংলাদেশের বিশেষ অঞ্চলে তুলা চাষ ড. মো. ফরিদ উদ্দিন আশ্বিন ১৬
০ দারিদ্র্য বিমোচনে আখ চাষ ড. সমজিৎ কুমার পাল অগ্রহায়ণ ১১
* তেলবীজ ফসল
০ বিনাচীনাবাদাম-৪ চাষাবাদ পদ্ধতি ড. এম মঞ্জুরুল আলম ম-ল মাঘ ১২
* কন্দাল ফসল
০ বাংলাদেশ থেকে আলু রপ্তানি ড. মো. শাফায়েত হোসেন মাঘ ১৪
* ফল
০ জামের নানান কথা কৃষিবিদ মোহাম্মদ গোলাম মাওলা জ্যৈষ্ঠ ৩
০ ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি এবং নিরাপদ ফল উৎপাদন কৃষিবিদ ড. মো. শরফ উদ্দিন জ্যৈষ্ঠ ৬
০ বাংলাদেশের আম শিল্প : সমস্যা ও সম্ভাবনা মো. আবদুল মানিক জ্যৈষ্ঠ ৮
০ ফলের উৎপাদন বাড়াতে ক্রপজোনিং সিস্টেম অনুসরণ এ জেড এম মমতাজুল করিম আষাঢ় ৯ ০ আম উৎপাদন, সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণ এম এনামুল হক ও সামিনা হক আষাঢ় ১২
০ দৈনন্দিন পুষ্টি পূরণে দেশি ফল মু. ফজলুল হক রিকাবদার আষাঢ় ১৬
০ বিলুপ্তপ্রায় ফল গবেষণা সংরক্ষণ এবং বাউ-জার্মপ্লাজম সেন্টার ড. এম এ রহিম
ড. মো. শামছুল আলম মিঠু আষাঢ় ১৮
০ রফতানি বৃদ্ধিতে মানসম্পন্ন ফলের উৎপাদন নিশ্চিতকরণ ড. মো. আব্দুল জলিল ভূঁঞা
মিটুল কুমার সাহা আষাঢ় ২৩
০ দেশি ফলের জাত উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ ড. মদন গোপাল সাহা
ড. বাবুল চন্দ্র সরকার আষাঢ় ২৭
০ ফলের সালতামামি কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম আষাঢ় ৩২
০ দেশি ফলের চাষ সম্প্রসারণে নার্সারির ভূমিকা সুনীল চন্দ্র ধর আষাঢ় ৩৬
০ খাটো জাতের হাইব্রিড নারিকেল চাষে করণীয় হর্টিকালচার উইং, ডিএই আষাঢ় ৩৮
০ আম ধৌতকরণ ও শোধনে হট ওয়াটার প্রযুক্তি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট আষাঢ় ৪০
০ রফতানি বৃদ্ধিতে মানসম্পন্ন ফলের উৎপাদন নিশ্চিতকরণ ড. মো. আব্দুল জলিল ভূঁইয়া
মিটুল কুমার সরকার শ্রাবণ ৮
০ চাঁপাইনাবগঞ্জে আমভিত্তিক সংস্কৃতি এম এনামুল হক ভাদ্র ৭
০ ফলের বাণিজ্যিক চাষ পদ্ধতি ও বাগান ব্যবস্থাপনা ড. মো. মসিউর রহমান অগ্রহায়ণ ২১
০ আধুনিক উপায়ে কলা চাষ কৃষিবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম
০ নারিকেল পরিচিতি ও চাষ পদ্ধতি এম এনামুল হক মাঘ ৭
০ আমের ভালো ফলন নিশ্চিত করতে করণীয় কৃষিবিদ এম এ মজিদ মাঘ ১৭
* খাদ্য পুষ্টি
০ পরিবেশবান্ধব কৃষি ও স্বাস্থ্যবান্ধব খাদ্য চাই কৃষিবিদ খুরশীদ আলম শ্রাবণ ১২
০ পুষ্টিহীন এক শিশুর আত্মকথা মো. আবদুর রহমান ভাদ্র ১৭
০ মিষ্টিআলুর পুষ্টি ও তুষ্টি কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম অগ্রহায়ণ ৩
০ মধুর উপকারিতা ড. কে এম খালেকুজ্জামান অগ্রহায়ণ ২০
০ বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য প্রফেসর ড. এম এ রহিম
ড. মো. শামছুল আলম (মিঠু) ফাল্গুন ১৩
০ পুষ্টিকর খাবার হিসেবে পানিকচুর আবাদ নাহিদ বিন রফিক চৈত্র ১২
* সার ও মাটি
০ মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের উপায় অরুন কুমার বিশ্বাস মাঘ ১৫
* পোকামাকড়/রোগবালাই
০ পানের রোগ ও তার প্রতিকার ড. কে এম খালেকুজ্জামান শ্রাবণ ১৬
০ পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ফল ও সবজির মাছি পোকা দমন মো. মোসারফ হোসেন পৌষ ১৫
০ মরিচের রোগ ও তার প্রতিকার ড. কে এম খালেকুজ্জামান পৌষ ১৭
০ ছাতরা পোকার আক্রমণ ও দমন ব্যবস্থাপনা ড. সৈয়দ নূরুল আলম পৌষ ২১
০ ঢলে পড়া রোগ নিয়ন্ত্রণে বেগুনের গ্রাফটিং প্রযুক্তি মোহাইমিনুর রশিদ মাঘ ১৯
০ বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনে জৈবিক বালাই ব্যবস্থাপনা কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম ফাল্গুন ৯
* বিবিধ
০ কৃষিকথা : অতীত বর্তমান ও ভবিষৎ মু. ফজলুল হক রিকাবদার বৈশাখ ৩
০ কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে বর্তমান সরকার ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বৈশাখ ৭
০ কৃষি কথা : কিছু কথা কৃষিবিদ মঈন উদ্দিন আহমেদ বৈশাখ ১০
০ খামারবাড়ির কথা কৃষিবিদ মানজুমুল হক বৈশাখ ১৪
০ কৃষি উন্নয়নে কৃষিকথা কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম বৈশাখ ১৭
০ কৃষি ও কৃষিকথার জন্য শুভাশিস মো. ওসমান গনী বৈশাখ ২১
০ ই-কৃষির বিস্তারে কৃষিকথার অবদান কৃষিবিদ মোহাম্মদ জাকির হাসনাৎ বৈশাখ ২৪
০ কৃষিকথার আত্মকথা মো. মতিয়ার রহমান বৈশাখ ২৭
০ ব্রি উদ্ভাবিত নতুন জাত ও প্রযুক্তি এম এ কাসেম বৈশাখ ৩০
০ কৃষিকথার ৭৫ বছর এবং প্রাণিসম্পদ তথ্য সেবা কৃষিবিদ ডা. এম এ সবুর বৈশাখ ৩৪
০ বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের ভূমিকা সৈয়দ আরিফ আজাদ বৈশাখ ৩৬
০ অপার সম্ভাবনার প্রতিশ্রুতি দিগন্ত আমাদের হাওর কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম জ্যৈষ্ঠ ১২
০ কৃষি তথ্য ও পরামর্শ সেবায় কৃষকের জানালা কৃষিবিদ মো. আবদুল মালেক জ্যৈষ্ঠ ১৬
০ বন্যাকবলিত এলাকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয় কৃষিবিদ মো. মাহমুদুল হাসান খান ভাদ্র ৫
০ ভাত খাবো, তবে খানিকটা কম খাবো ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া ভাদ্র ১০
০ খাদ্যে বিষ : ঠিক যেন নীরবে গণহত্যা মো. আরিফুর রহমান ভাদ্র ১৩
০ বদলে যাচ্ছে কৃষিজ সংস্কৃতি মো. আনোয়ার হোসেন ভাদ্র ১৯
০ জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃষি অভিযোজন : লবণাক্ত পতিত
জমিতে যব চাষের সম্ভাবনা ইসলামিক রিলিফ, বাংলাদেশ ভাদ্র ২৬
০ ইঁদুর নিধন অভিযান ২০১৫ মো. আবুল কালাম আজাদ আশ্বিন ৩
০ ইঁদুরের অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও সম্ভাব্য দমন ব্যবস্থাপনা ড. নূর আহাম্মদ
মো. মোফাজ্জল হোসেন আশ্বিন ৫
০ গম ক্ষেতে সমন্বিত পদ্ধতিতে ইঁদুর দমন ড. গোবিন্দ চন্দ্র বিশ্বাস
ড. মো. শাহ আলম আশ্বিন ৯
০ ইঁদুরের প্রাদুর্ভাব ও দমন ব্যবস্থাপনা ড. সন্তোষ কুমার সরকার আশ্বিন ১২
০ ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের নতুন ফসল অ্যাসপারাগাস ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম আশ্বিন ১৯
০ কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা প্রকৌশলী মো. শোয়েব হাসাব আশ্বিন ২০
০ ইসলাম ও কৃষি মোহাইমিনুর রশিদ আশ্বিন ২৪
০ জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিযোজন : হাওরে সরিষা চাষের সম্ভাবনা ইসলামিক রিলিফ, বাংলাদেশ আশ্বিন ২৭
০ কৃষিকথার ৭৫তম বছরে পদার্পন : একটি পর্যালোচনা মো. মতিয়ার রহমান কার্তিক ২৪
০ জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিযোজন : হাওরে মিষ্টিকুমড়ার চাষ ইসলামিক রিলিফ, বাংলাদেশ কার্তিক ২৭
০ সাগর উপকূলে সি-উইড চাষ ড. মো. ইনামুল হক অগ্রহায়ণ ৭
০ লজ্জাবতীর উপকারিতা ও চাষ এম এনামুল হক অগ্রহায়ণ ৯
০ কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য কৃষিবিদ মো. আবু সায়েম অগ্রহায়ণ ১৫
০ পার্বত্য জেলায় ফসল চাষ এম এনামুল হক পৌষ ৩
০ পরিবেশবান্ধব জৈব কৃষি : সময়ের আবশ্যকীয় দাবি কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম পৌষ ৭
০ বায়ো-পল্লী এবং সমবায় কৃষিবিদ খুরশীদ আলম পৌষ ১৩
০ জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃষির ওপর প্রভাব ড. মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার ফাল্গুন ১৭
০ উৎপাদনশীলতা বাড়াতে ফসলধারা অনুসরণ ড. মো. রফিকুল ইসলাম ম-ল
ড. ফেরদৌসী বেগম
ড. মো. আব্দুল আজিজ
মো. মাহমুদুল হাসান খান ফাল্গুন ২০
০ শিখি.....করি........খাই মাহফুজ হোসেন মিরদাহ চৈত্র ৩
০ প্যারিস চুক্তি ও বাংলাদেশের কৃষি কৃষিবিদ রওশন জামাল জুয়েল চৈত্র ৬
০ ফসলের বাণিজ্যিক উৎপাদনে বালাইনাশকের ব্যবহার ও করণীয় কৃষিবিদ ড. মো. শরফ উদ্দিন চৈত্র ১৩
০ প্রশ্নোত্তরে কৃষকের জানালা কৃষিবিদ মো. আব্দুল মালেক চৈত্র ১৯
* বৃক্ষ ও পরিবেশ
০ পরিবেশ দূষণরোধে বৃক্ষের ভূমিকা ও আমাদের করণীয় কৃষিবিদ এস এইচ এম গোলাম সরওয়ার ভাদ্র ২১
০ নিম বহুমুখী উপকারী একুশ শতকের ভেষজ বৃক্ষ কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম মাঘ ৩
* মৎস্য সম্পদ
০ বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের ভূমিকা সৈয়দ আরিফ আজাদ জ্যৈষ্ঠ ১৭
০ দেশি মাছ চাষ ও সংরক্ষণ কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম চৈত্র ১৫
০ পরিত্যক্ত পুকুর-ডোবায় বিদেশি প্রজাতির মাছের চাষ দলিল উদ্দিন আহমদ শ্রাবণ ২২
০ পতিত পুকুরে মৎস্য চাষ : দারিদ্র্য মোচনে সহায়ক আফতাব চৌধুরী পৌষ ২৩
০ গলদা চিংড়ির ব্রুড ও পোনা উৎপাদনে করণীয় দলিল উদ্দিন আহমদ মাঘ ২১
০ অ্যাকোয়াপনিক্স পদ্ধতিতে মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষ দলিল উদ্দিন আহমদ ফাল্গুন ২৫
০ দেশি মাছ চাষ ও সংরক্ষণ কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম চৈত্র ১৫
* প্রাণিসম্পদ
০ গাভীর দুধ উৎপাদন বাড়ানোর উপায় মো. মোস্তাফিজুর রহমান জ্যৈষ্ঠ ১২
০ প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন ও আধুনিক প্রযুক্তি অজয় কুমার রায় শ্রাবণ ১৮
০ গবাদিপশুর ক্ষুরারোগ মো. মোস্তাফিজুর রহমান ভাদ্র ২৭
০ মুরগির কিছু বদঅভ্যাস ও তার প্রতিকার মো. মোস্তাফিজুর রহমান অগ্রহায়ণ ২৫
০ গাভী বার বার গরম হওয়ার কারণ ও চিকিৎসা ডা. মনোজিৎ কুমার সরকার পৌষ ২৫
০ প্রাণিদেহে বিভিন্ন ধরনের বিষক্রিয়া ও করণীয় মো. আখতার হোসেন মাঘ ২৩
০ গাভীর এনাপ্লাজমোসিস রোগ ও প্রতিকার ডা. মনোজিৎ কুমার সরকার ফাল্গুন ২৪
০ দুগ্ধ খামার স্থাপনের গুরুত্ব ও পদ্ধতি ডা. মনোজিৎ কুমার সরকার চৈত্র ১৮
* বিশ্ব খাদ্য দিবস
০ গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক সুরক্ষায় কৃষি কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান কার্তিক ৩
০ গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচন ও পুষ্টি নিরাপত্তায় প্রাণিসম্পদ অজয় কুমার রায় কার্তিক ৭
০ গ্রামীণ দারিদ্র্য নিরসনে সমবায় আন্দোলন মো. মফিজুল ইসলাম কার্তিক ১০
০ খাদ্য নিরাপত্তা ও আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে ইক্ষু চাষের গুরুত্ব ড. খন্দকার মহিউল আলম
ড. মু. খলিলুর রহমান কার্তিক ১৩
০ গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনে সামাজিক নিরাপত্তা ও কৃষি কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম কার্তিক ১৫
০ আগামী দিনের কৃষি ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া কার্তিক ১৮
০ গ্রামীণ দারিদ্র্য চক্রের অবসানে মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের ভূমিকা ড. মো. আলতাফ হোসেন কার্তিক ২১
* কবিতা
০ কৃষিকথার ৭৫ বর্ষে নিবেদিত চতুর্দশপদী পঙ্ক্তিমালা কৃষিবিদ এ এইচ ইকবাল আহমেদ বৈশাখ ৩৯
০ আশা নূর-ই-ফাতিমা জ্যৈষ্ঠ ২৬
০ দখিনের চাষি কৃষিবিদ মো. ফরহাদ হোসেন জ্যৈষ্ঠ ২৬
০ দূষণ সন্দেহে খাদ্য মো. জুন্নুন আলী প্রামানিক জ্যৈষ্ঠ ২৬
০ বৃক্ষ রোপণ করি আবুল হোসেন আজাদ শ্রাবণ ২৩
০ গাছেই ধন কৃষিবিদ এ কে এম এনামুল হক শ্রাবণ ২৩
০ সোনার মাটি নাহিদ বিন রফিক শ্রাবণ ২৩
০ হ্যামিলনের বংশীবাদক মুনশী আবদুল মোমেন আশ্বিন ২৮
০ ইঁদুর মো. দুলা মিঞা আশ্বিন ২৮
০ কৃষি মোর অলংকার-কৃষি মোর অহংকার কৃষিবিদ এ এইচ ইকবাল আহমেদ কার্তিক ২৮
০ পেঁপের কথা কৃষিবিদ আহমেদ হাছিব মোল্লা পৌষ ২৬
০ মৌসুম যখন শান্ত মো. জুন্নুন আলী প্রামানিক পৌষ ২৬
০ আমি কৃষকের সন্তান এস এম মোশরাফুজ্জামান মুকুল পৌষ ২৬
০ নিম বিষয়ক কথকতা কৃষিবিদ এ এইচ ইকবাল আহমেদ মাঘ ২৭
০ দেখতে যদি চাও মো. ফরহাদ হোসেন ফাল্গুন ২৭
০ শেষ সম্বল কৃষি মো. জুন্নুন আলী প্রামানিক ফাল্গুন ২৭
০ আদর্শ চাষি মোহাম্মদ নূর আলম গন্ধী ফাল্গুন ২৭
০ কৃষি ও কৃষকের পুঁথি মো. মোশাররফ হোসেন চৈত্র ২২
* বই পরিচিতি
০ কৃষিকথা বলছি ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া জ্যৈষ্ঠ ৩২
০ ১. কৃষি উৎপাদন প্রযুক্তি ২. কৃষির আধুনিক প্রযুক্তি
৩. হাঁস মুরগি মাছ-গবাদিপশুর খামার মো. মতিয়ার রহমান শ্রাবণ ২৮
* মুখোমুখি
০ কুল চাষে নারায়ণ চন্দ্র হালদারের সাফল্য মো. রুহুল আমিন জ্যৈষ্ঠ ২৪
০ নাম তার ভুট্টা রফিক কাজী গোলাম মাহবুব পৌষ ২৭
* প্রশ্নোত্তর
০ প্রশ্নোত্তর কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ জ্যৈষ্ঠ ২৭
০ প্রশ্নোত্তর কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ শ্রাবণ ২৪
০ প্রশ্নোত্তর কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ ভাদ্র ২৯
০ প্রশ্নোত্তর কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ আশ্বিন ২৯
০ প্রশ্নোত্তর কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ কার্তিক ২৯
০ প্রশ্নোত্তর কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ অগ্রহায়ণ ২৮
০ প্রশ্নোত্তর কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ পৌষ ২৯
০ প্রশ্নোত্তর কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ মাঘ ২৮
০ প্রশ্নোত্তর কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ ফাল্গুন ২৮
০ প্রশ্নোত্তর কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ চৈত্র ২৩
* মাসের কৃষি
০ আষাঢ় মাসের কৃষি কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন জ্যৈষ্ঠ ২৯
০ ভাদ্র মাসের কৃষি কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন শ্রাবণ ২৬
০ আশ্বিন মাসের কৃষি কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন ভাদ্র ৩১
০ কার্তিক মাসের কৃষি কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন আশ্বিন ৩১
০ অগ্রহায়ণ মাসের কৃষি কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন কার্তিক ৩১
০ পৌষ মাসের কৃষি কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন অগ্রহায়ণ ৩০
০ মাঘ মাসের কৃষি কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন পৌষ ৩১
০ ফাল্গুন মাসের কৃষি কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন মাঘ ৩০
০ চৈত্র মাসের কৃষি কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন ফাল্গুন ৩১
০ বৈশাখ মাসের কৃষি কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন চৈত্র ২৫
* রচনা প্রতিযোগিতা
০ দিন বদলের বাংলাদেশ- ফল বৃক্ষে ভরবো দেশ কাদির হাসান শ্রাবণ ২৯
০ দিন বদলের বাংলাদেশ- ফল বৃক্ষে ভরবো দেশ মো. সৈকত রায়হান শ্রাবণ ৩২
* বর্ষসূচি
০ বর্ষসূচি ১৪২২ মো. মতিয়ার রহমান চৈত্র ২৮
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এ দেশ ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ। এক সময় শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন ফসলের সমারোহ শুধু ওই সব ঋতুতেই দেখা যেত। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এখন সারা বছরই বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করা হয়। আইপিসিসির ৪র্থ সমীক্ষায় দেখা যায়, গত শতাব্দীতে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৭৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ শতাব্দীর শেষ নাগাদ ২.৫ ডিগ্রি থেকে ৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা আছে। বাংলাদেশের গড় বার্ষিক তাপমাত্রা গত ১৪ বছরে (১৯৮৫-১৯৯৮) মে মাসে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং নভেম্বর মাসে ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়লে মাটির উর্বরতা ও উৎপাদনশীলতায় যে প্রভাব পড়বে সে বিষয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনার সময় এখনই। কারণ ২০৫০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা যদি আরও ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসও বাড়ে তাহলে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে মৃত্তিকা ইকোসিস্টেম, জলজ ইকোসিস্টেম এবং বায়ুম-ল। শীতকালে তাপমাত্রা বাড়ার ফলে বোরো ধান, গম, আলু, শীতকালীন সবজি, আম, ফুল, ডাল ফসল, তেল ফসলসহ সব অপ্রধান ফসলের ফলন কমে যাবে। আবার বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে গেলে বন্যা ও জলাবদ্ধতার কারণে আউশ ধান, আমন ধানসহ বর্ষাকালীন শাকসবজির উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পাবে। আকস্মিক বন্যায় বিঘিœত হবে হাওর এলাকার কৃষি। এটি মোটেই কাম্য নয়।
সুপ্রিয় পাঠক ও চাষি ভাইয়েরা, পরিবর্তিত জলবায়ু ও নানা রকম প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বর্তমানে দানাশস্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়েছি। আমাদের এ সক্ষমতা সময়ের সাথে তালমিলিয়ে আরো বাড়াতে হবে। কারণ খাদ্যশস্যের উৎপাদন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য বর্ধিত উৎপাদন প্রয়োজন। তবে একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য দানাশস্যের পাশাপাশি ডাল ফসল, তেল ফসল, শাকসবজি, ফলমূল এসবেরও উৎপাদন সমানতালে বাড়াতে হবে। উল্লেখ্য, এ বিষয়টি বিবেচনা করে কৃষি মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছে। আমরা আশা করি বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সৃষ্ট নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেই দেশ এগিয়ে যাবে।