Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কৃষি কথা

কৃষি যান্ত্রিকীকরণের যুগোপযোগী পদ্ধতি সমলয় চাষ

কৃষি যান্ত্রিকীকরণের যুগোপযোগী পদ্ধতি সমলয় চাষ

ড. মো. শাহজাহান কবীর১কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন২

ফসল কাটার সময় শ্রমিক সংকট এখন বাংলাদেশে নিত্যবছরের সমস্যা। শিল্পায়নের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে কয়েক দশক ধরে মানুষ শহরমুখী। তাই প্রতিনিয়ত কমছে কৃষি শ্রমিক। সামনে এ সংকট আরও বাড়বে বৈ কমবে না। এর একটা সমাধান হতে পারে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ। কেননা আধুনিক কৃষি যন্ত্রগুলো অল্প সময়ে অনেক বেশি কাজ করে। আর এগুলো চালনার জন্য লোকও লাগে কম। কিন্তু যান্ত্রিকীকরণের জন্য দরকার বড় জমি, যৌথ খামার বা সমবায়ী   কৃষিব্যবস্থা। উত্তরাধিকার বিভাজনসহ নানা কারণে আমাদের দেশের জমিগুলো ছোট ছোট। কৃষকেরা এগুলো জোড়া লাগানোর ব্যাপারেও খুব একটা উৎসাহী নয়। তাছাড়া কৃষি যান্ত্রিকীকরণের আরেকটি অন্তরায় হলো সকল কৃষক একই সময়ে চাষাবাদ করে না। নানা জাতের ও সময়ের বীজ নির্বাচন করায় সবার বীজতলাও একসময় গজায় না, ফলে চারা রোপণের সময়ও হয় ভিন্ন, ধানও তাই একসময়ে পাকে না। কর্তন কাজের জন্য বিভিন্ন জমিতে আলাদা সময়ে কৃষি যন্ত্রগুলোর ব্যবহার করে তাই অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী হয় না। এ ক্ষেত্রে কৃষিবিজ্ঞানীরা ভাবলেন, কোনো একটি এলাকার কোনো একটি কৃষিপণ্য চাষের পুরো প্রক্রিয়াকে যদি একই সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসা যেত, তাহলে কিন্তু জমির আল বজায় রেখেও  লাভজনকভাবে যন্ত্র ব্যবহার করা যেত। তাই এর একটা কার্যকরি উপায় বের করেছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা। পদ্ধতিটির নাম দিয়েছেন সমলয় চাষাবাদ বা ঝুহপযৎড়হরুব ঈঁষঃরাধঃরড়হ।
বর্তমান সরকার কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে টেকসই যান্ত্রিকীকরণের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার একটি হচ্ছে সমবায়ভিত্তিক সমলয় চাষাবাদ পদ্ধতি। যেখানে একটি মাঠে বা মাঠের একটি অংশের সকল কৃষক সবাই মিলে একসঙ্গে একই জাতের ধান একই সময়ে যন্ত্রের মাধ্যমে রোপণ করবেন। এ পদ্ধতিতে বীজতলা থেকে চারা তোলা, চারা রোপণ ও ধানকর্তন সব প্রক্রিয়া যন্ত্রের সাহায্যে সমসময়ে সম্পাদন করা হবে। সমলয়ে ধান আবাদ করতে হলে চারা তৈরি করতে হবে ট্রেতে। ট্রেতে চারা উৎপাদনে জমির অপচয় কম হয়। রাইস ট্রান্সপ্ল­ান্টার দিয়ে চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়। কৃষক তার ফসল একত্রে মাঠ থেকে ঘরে তুলতে পারেন। কারণ একসঙ্গে রোপণ করায় সব ধান পাকবেও একই সময়ে। তখন ধান কাটার মেশিন দিয়ে একই সঙ্গে সব ধান কর্তন ও মাড়াই করা যাবে। এসব কারণে সমলয় পদ্ধতিতে যন্ত্রের ব্যবহার সহজতর ও বৃদ্ধি হবে। ধান চাষে সময়, শ্রম ও খরচ কম লাগবে। এ ক্ষেত্রে কৃষক লাভবান হবেন এবং কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ পদ্ধতির প্রবর্তন সহজ হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম সমলয়ে চাষাবাদ কার্যক্রম প্রদর্শনী আকারে দেশের ১২টি জেলার ১২টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করে। এটি ব্যাপক সফলতা লাভ করায় ২০২০-২১ অর্থবছরেও কার্যক্রমটি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। চলতি বোরো মওসুমে আরো  বিস্তৃত পরিসরে ৬১টি জেলায় এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। এটি বাস্তবায়নের সরাসরি দায়িত্বে আছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আর বিভিন্নভাবে কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ কার্যক্রম গ্রহণ করার ফলে একদিকে ধানের নতুন নতুন জাত দ্রæত সম্প্রসারণ এবং ধান চাষে যন্ত্রের ব্যবহার বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। সমলয় চাষাবাদ পদ্ধতিতে এক প্লট থেকে অন্য প্লটে কৃষিযন্ত্র পরিবহণে সময়ের অপচয় রোধ করা যাবে। ছোট আকারের জমিতেও লাভজনকভাবে পূর্ণ দক্ষতায় কৃষি যন্ত্র চালানো যাবে। কৃষি যন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হবে।
সম্প্রতি প্রণীত সরকারের সমলয় নীতিমালায় বলা হয়েছে, দেশের প্রতি উপজেলায় সমলয় কৃষক গ্রæপের মাধ্যমে প্রতি জেলায় ন্যূনতম একটি উপজেলায় ০১টি সমলয় চাষাবাদ প্রদর্শনী সম্পন্ন করতে হবে। প্রথম বছর/মওসুমে যে গ্রæপের মাধ্যমে উক্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে পরবর্তী বছর/মওসুমে অন্য গ্রæপের মাধ্যমে তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতি গ্রæপে কৃষক সংখ্যা সর্বোচ্চ ৩৫ জন এবং জমির পরিমাণ ৫০-৬০ একর হতে হবে। প্রতি গ্রæপে কৃষানির সংখ্যা সর্বনি¤œ ৩০% হতে হবে। জাতের জীবনকালের সাথে সমতাবিধান করে এমনভাবে ফসলের জাত নির্বাচন, ম্যাট পদ্ধতিতে ধানের চারা উৎপাদন এবং রোপণ করতে হবে যাতে রাস্তার পাশের ধান আগে কর্তন এবং ভেতরের ফসল পরে কর্তন করা যায়। এতে ফসল উৎপাদনে যন্ত্রের ব্যবহার সহজ হবে।
সমলয় নীতিমালা অনুযায়ী, কৃষক নির্বাচন, তাদের অগ্রাধিকার তালিকা প্রস্তুত ও অনুমোদন, উপকরণ বিতরণ এবং চাষাবাদ কার্যক্রম বাস্তবায়নে গবেষণা প্রতিষ্ঠানের আঞ্চলিক কার্যালয়ের আওতাধীন এলাকায় আঞ্চলিক কার্যালয় এবং অন্যান্য এলাকায় উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর তত্ত¡াবধানে বøকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাগণ সম্পন্ন করবেন। প্রদর্শনী বাস্তবায়নে ব্রি/বিনা/গম-ভুট্টা গবেষণাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নতুন জাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিগত ৫ বছরের মধ্যে ছাড়কৃত/ নিবন্ধনকৃত বিভিন্ন ফসলের জাতসমূহকে প্রাধান্য দিতে হবে। সমলয় চাষাবাদের আওতায় উৎপাদিত মানসম্পন্ন বীজ উপযুক্ত মূল্যে ক্রয় করে পরবর্তী মওসুমে তা সমলয়ভুক্ত নতুন কৃষকের মাঝে বিতরণ করা যেতে পারে। সমলয় চাষাবাদ পদ্ধতিকে টেকসই করার লক্ষ্যে প্রতি উপজেলায় প্রশিক্ষিত দক্ষ আধুনিক কৃষি যন্ত্রচালক গ্রæপ তৈরি করতে হবে যারা স্থানীয়ভাবে যন্ত্র চালনা ও মেরামত কাজে সহায়তা করবে।
সমলয় চাষাবাদে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ট্রেতে ম্যাট টাইপ ধানের চারা উৎপাদন। এ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি না করে পলিথিন অথবা ফ্লেক্সিবল ট্রেতে চারা তৈরি করা হয়। এজন্য রোপণের পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন তারিখে বীজ বপন করতে হয়। এতে ৩ঃ২ অনুপাতে মাটি ও গোবরের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। এরপর বীজ ছিটিয়ে পুনরায় অর্ধেক মাটি ও গোবর মিশ্রণ দিয়ে সমতল জায়গায় রেখে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয়। বীজতলা তৈরির ৩ দিনের মধ্যে অঙ্কুর বের হয়। যদিও ম্যাট টাইপ চারা উৎপাদন কৃষকদের কাছে কিছুটা জটিল বলে মনে হয়। তবে সমন্বিত উদ্যোগে সফলভাবেই ম্যাট টাইপ চারা উৎপাদন করা সম্ভব। বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা ৮০ ভাগের কম হলে প্রয়োজনমতো অতিরিক্ত বীজ ট্রেতে ফেলতে হবে।
ট্রেতে বীজ বপনের পূর্বে অ্যাজোক্সিট্রবিন অথবা পাইরাক্লোস্ট্রবিন গ্রæপের ছত্রাকনাশক যেমন: এমিস্টারটপ অথবা সেলটিমা (প্রতি কেজি বীজের জন্য ২-৩ মিলি/লিটার) দিয়ে ১৮-২০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে জাগ দিতে হবে। প্রতি ট্রেতে জাত অনুসারে ১২০-১৪০ গ্রাম বীজ বপন করতে হবে। বীজ এমনভাবে ফেলতে হবে যাতে প্রতি সেন্টিমিটারে ২-৩টি চারা থাকে। ট্রের চারায় রোগবালাই দেখা দিলে এমিস্টারটপ অথবা সেলটিমা ২-৩ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। স্প্রে করার পর আনুমানিক ০৬ ঘণ্টা ট্রে-তে সেচ দেয়া যাবে না। সমভাবে বীজ ছিটানোর পর হালকাভাবে এক স্তর মাটি দিতে হবে। বেশি পুরু করে মাটি দেয়া যাবে না। বোরো মওসুমে ২৫-৩০ দিনের চারা এবং আউশ ও আমন মওসুমে ১৫-২০ দিনের চারা রোপণ করতে হবে। অর্থাৎ চারার উচ্চতা আনুমানিক ১৫ সেমি হতে হবে। এই পদ্ধতিতে ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে চারা বেড়ে ওঠে। পরে রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টারের মাধ্যমে চারা রোপণ করা হয়। তবে হাতে রোপণ করলেও সারিবদ্ধভাবে চারা রোপণ করতে হবে যেন আন্তঃপরিচর্যা সহজ হয়।
বর্তমানে আমাদের দেশের কৃষকরা অভিযোগ করেন যে ধান চাষ লাভজনক নয়। এটিকে লাভজনক করার অন্যতম উপায় হলো উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করা। আর উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করতে হলে সমলয় চাষের বিকল্প নেই। প্রচলিত পদ্ধতিতে এক হেক্টর জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে এলাকাভেদে খরচ হয় প্রায় ১২-১৬ হাজার টাকা, যেখানে রোপণ যন্ত্র ব্যবহার করলে ব্যয় হয় মাত্র ৩-৩.৫ হাজার টাকা। একইভাবে ধান কর্তনের ক্ষেত্রেও সময় স্বল্পতা এবং সারা দেশে প্রায় পাশাপাশি সময়ে কর্তন কাজ শুরু হওয়ায় শ্রমিকের ব্যাপক ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। এক্ষেত্রে একটি কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ধান কর্তনে যেখানে হেক্টরপ্রতি ৩.৫-৪ হাজার টাকা খরচ হয় সেখানে শ্রমিক দিয়ে কর্তন, পরিবহণ, মাড়াই এবং ঝাড়াই বাবদ এলাকাভেদে প্রায় ১৮-২০ হাজার টাকা খরচ হয়। এই হিসেবে শুধুমাত্র রোপণ এবং কর্তনে যান্ত্রিকীকরণ করা সম্ভব হলে ধান উৎপাদন খরচ হেক্টরপ্রতি প্রায় ২৫-২৮ হাজার টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আবদুর রাজ্জাক এমপি সম্প্র্রতি এক কর্মশালায় বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  নেতৃত্বে বর্তমান সরকার কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে নিরলস কাজ করছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নেয়া হয়েছে ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার প্রকল্প। পাশাপাশি কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ত্বরান্বিত করতে দক্ষ জনবল তৈরিতে এরই মধ্যে মাঠপর্যায়ে কৃষি প্রকৌশলীর ২৮৪টি পদ সৃজন করা হয়েছে। ফলে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের দিকে যাচ্ছে। ‘সমলয়’ পদ্ধতিতে চাষ করলে যন্ত্রের ব্যবহার সহজতর হবে। কৃষকের সময় ও শ্রম খরচ কমবে। কৃষক লাভবান হবেন।’ য়

 

১মহাপরিচালক, ২উর্ধ্বতন যোগাযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, মোবাইল : ০১৭১৬৫৪০৩৮০,  momin80@gmail.com

বিস্তারিত
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাগজি লেবু

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাগজি লেবু

মৃত্যুঞ্জয় রায়

লেবু নামটা এসেছে সংস্কৃত ‘নিম্বু’ থেকে। নিম্বু থেকে নিমু  পরিশেষে হয়েছে লেবু। লেবু নামটা যত সহজ, ফলটা তত সহজ নয়। এদেশে সিলেটেই আছে প্রায় আশি রকমের লেবু। এক এক লেবুর আকার-আকৃতি ও স্বাদ ভিন্ন রকম- কোনটা ভীষণ টক, কোনটা আবার ভীষণ মিষ্টি। সাধারণভাবে টকজাতীয় বা সাইট্রাসজাতীয় ফল বলা হয় লেবুকে। সব লেবু টক নয়। সুইট অরেঞ্জ, মাল্টা, কমলা,  চাইনীজ কমলা-এসব মিষ্টি স্বাদের লেবু। অন্যদিকে কালামুন্সি, কাগজি, এলাচীলেবু- এসব টক স্বাদের। বাতাবি লেবু  টক-মিষ্টি। ঘ্রাণের দিক দিয়েও এক লেবুর ঘ্রাণ এক এক রকম। লেবুতে উপস্থিত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের কারণেই লেবুর এত ভিন্নতা। কাজেই ভেষজ গুণ যে সব লেবুর একই রকম সেটা ভাবার কোন কারণ নেই। কবি কালিদাসের একটা হেঁয়ালী মনে পড়ছে- ‘বন থেকে বেরুলো পেতি, পেতি বলে আমি তোর পাতে মুতি।’ পাতে অর্থাৎ ভাতে মুততে সব লেবু পারে না। কাগজিলেবুর আর এক নাম পাতিলেবু- পাতিলেবুকেই মনে হয় কালিদাস বলেছেন পেতি। পাতে মুতায় কাগজিলেবুর অধিকার অগ্রগণ্য। এখানে তাই কাগজি লেবুকে আমিও অগ্রাধিকার দিলাম আলোচনায়। শুধু আমি কেন, এই করোনাকালে সবাই এখন লেবুকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। নানাভাবে লেবু খাওয়ার অভ্যাস করছেন। এক্ষেত্রেও স্বাদে-গন্ধে-উপকারে কাগজিলেবু সেরা।
গাছের পরিচয়
লেবুর মধ্যে কাগজিলেবু তুলনামূলকভাবে ছোট বলে এর অন্য নাম হয়েছে পাতিলেবু। আবার পাত মানে ভাত খাওয়ার থালায় এর ব্যবহার রয়েছে বলেও এর নাম পাতি লেবু হতে পারে। ছোট হলেও কাগজি লেবুর যে সুঘ্রাণ তা আর কোন লেবুতে নেই। এ লেবুর গাছ খুব বড় হয় না, ডালপালা কিছুটা লতানো ও ঝোপাল, কাঁটাময়। পাতা ডিম্বাকার ও ছোট, চকচকে সবুজ। ফুলের রঙ সাদাটে। কাগজিলেবু লম্বাটে, খোসা মসৃণ ও পাতলা, সবুজ ও চকচকে। খোসায় নখের আঁচড় দিলে কাগজিলেবুর বিশেষ ঘ্রাণ পাওয়া যায়, যা অন্য কোন লেবুতে পাওয়া যায় না। প্রায় সারা বছরই গাছে ফুল ফল ধরে। তবে মে থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে বেশি লেবু ধরে। কাগজিলেবু অ¤øরসযুক্ত। ভেতরের কোষ হালকা সবুজাভ সাদা ও রসে পরিপূর্ণ থাকে। পরিণত হলে বেশি রস হয়। ভেতরে স্বল্প বীজ হয়। বর্তমানে বীজবিহীন জাতও উদ্ভাবন করা হয়েছে।
ভেষজ গুণ
কাগজিলেবুতে উচ্চমাত্রায় অ্যাসকরবিক এসিড বা ভিটামিন সি, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়া রয়েছে অধিক পরিমাণে পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম খনিজ দ্রব্য যা দেহের ¯œœায়ুর চালিকাশক্তি বৃদ্ধি করে। আরও আছে কিছু এসেনসিয়াল অয়েল। এই তিন ধরনের রাসায়নিক যৌগসমূহ এন্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্লাভিনয়েডস, ফেনল, কুমারিনস, ট্যানিন, অ্যালকালয়েড, লাইকোপেন, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, লিপিড ইত্যাদি যৌগগুলোর সাথে মিলে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে থাকে। এসব উপাদানগুলোর কারণে কাগজিলেবু এন্টিসেপটিক, কৃমিনাশক, ছত্রাক জীবাণুনাশক, ব্যাকটেরিয়া জীবাণুনাশক, ভাইরাস  জীবাণুনাশক, এন্টিক্যানসার হিসেবে ও আন্ত্রিক সমস্যা সমাধানে কাজ করে থাকে। কাগজিলেবু বয়স ধরে রাখতে বা দেহের তারুণ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা বিপুল পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট এ দায়িত্ব পালন করে। নিচে কাগজিলেবুর ভেষজ গুণ ও ব্যবহার সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
১. অরুচি ও পেটফাঁপা
কাগজিলেবুর লোকায়ত এ ব্যবহারের কথা জানেন না এমন লোক বোধ হয় খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কোন কিছু দিয়ে ভাত খেতে ইচ্ছে করছে না, খাওয়ায় কোন রুচি নেই। এ অবস্থা হলে খাওয়ার পরেও তা হজম হবে না, পেট ফাঁপবে। তাই অরুচি নিয়ে কোন কিছু না খাওয়া ভাল। অরুচি হলে সেই খাবারে সাথে কাগজিলেবুর রস চিপে মিশিয়ে খেলে দ্রæত খাবারে রুচি ফিরে আসে ও তা হজম হয়। অরুচি হলে একটা লেবুকে দুভাগ করে অর্ধেক সকালে ১ কাপ পানির সাথে ও বিকেলে বাকি অর্ধেক আর ১ কাপ পানির সাথে মিশিয়ে একইভাবে খালি পেটে খাওয়া যেতে পারে। সপ্তাহখানেক এভাবে লেবু-পানি খাওয়ার পর অরুচি চলে যাবে।
২. ক্লান্তিবোধ
খেলাধুলা বা অধিক পরিশ্রমের পর শরীরটা এলিয়ে আসে, ক্লান্তি জড়িয়ে ধরে। একটানা কোন কাজ করলেও ক্লান্তিভাব চলে আসে। এ অবস্থায় এক গøাস পানিতে একটা কাগজিলেবু চিপে তার রস সামান্য লবণ মিশিয়ে শরবত করে খেলে শরীর চাঙ্গা হয়ে ওঠে। এর সাথে ১ চা-চামচ মধু মিশিয়ে খেলে আরও ভালো কাজ হয়।
৩. মেদবৃদ্ধি, কোষ্ঠবদ্ধতা ও গিঁটবাত
ফার্স্ট ফুড আর জাংক ফুডের জামানায় মেদবৃদ্ধি ও স্থ’ূলতা সারা বিশ্বব্যাপী এক সাধারণ সমস্যা। সে সাথে কোষ্ঠবদ্ধতা ও গিঁটবাত বড় সমস্যা। তাই মেদ বৃদ্ধি, সাময়িক কোষ্ঠবদ্ধতা ও গিঁটবাত ঠেকাতে রোজ যেমন আমরা দাঁত ব্রাশ করি, তেমনই লেবু-জল খাওয়াকে একটা অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। রোজ সিকি টুকরো কাগজিলেবু (অন্য লেবু হলেও চলবে) চিপে রস করে তা ১ কাপ পানির সাথে মিশিয়ে রোজ সকালে ও সন্ধ্যায় খেতে হবে। এটা সারা জীবন চালিয়ে যেতে হবে। তাহলে মেদবৃদ্ধি, কোষ্ঠবদ্ধতা অনেকটা ঠেকে যাবে এবং মেদ বৃদ্ধিজনিত অনেক রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। পাশাপাশি ইউরিক এসিডের আধিক্যজনিত কারণে গিঁটে যে ব্যথা হয় তাও চলে যাবে।
৪. কৃমিরোগ
শিশুরা কৃমি রোগে বেশি ভোগে। তাই শিশুদেরও লেবুর রস খাওয়াতে হবে। ৪-৫ বছর বয়সী শিশুদের বেলায় অর্ধেক পরিমাণ কাগজি লেবুর রস ২ কাপ গরম পানির সাথে মিশিয়ে রোজ সকালে খালি পেটে খাওয়াতে হবে। কিশোর-কিশোরীদের বেলায় একই পরিমাণ পানিতে দিতে হবে ১টি লেবু, পূর্ণবয়স্কদের বেলায় ২টি লেবু। মাত্র এক সপ্তাহ এটা খেলে সুতা কৃমি, গোল কৃমি, ফিতা কৃমি- যাই থাকুক না কেন উপদ্রবটা দূর হবে।  
৫. ঠাÐালাগা
ঠাÐা লেগে সর্দি হলে, নাক দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে থাকলে রঙ চায়ের সাথে আধ টুকরো লেবুর রস ও ১ চা-চামচ মধু মিশিয়ে খেলে দ্রæত সুফল পাওয়া যায়। এর সাথে কয়েক টুকরো আদা দেয়া যেতে পারে। একবার খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর আবার খেতে হবে। এই ভাবটা না যাওয়া পর্যন্ত এটা চালিয়ে যেতে হবে। তাহলে এক সময় নাক দিয়ে পানি বা সর্দি ঝরা বন্ধ হবে।
৬. হাঁচি-কাশি ও স্বরভঙ্গ
অ্যাজমা বা হাঁপানি হলে সেই সাথে কাশিটাও হতে পারে। অনেক চেঁচামেচি বা হঠাৎ সর্দিকাশি হলে গলা ভেঙে যায়। এরূপ ক্ষেত্রে একটি কাগজিলেবু মাঝখান বরাবর লম্বালম্বিভাবে দোফালা করে চিরে তার বুকে লবণ মাখাতে হবে। তারপর সেই লেবুর টুকরো হালকা আঁচে আগুনে গরম করতে হবে। লেবু গরম হলে লবণ গলে লেবুর সাথে মিশে যাবে। তখন সেটা নামিয়ে চিপে সহ্যমতো গরম রস জিভের উপর ছাড়তে হবে ও চেটে খেতে হবে। এভাবে সারা দিনে ২ থেকে ৩ বার খেলে এ অসুবিধা চলে যাবে।
৭. পুরনো জ্বর
ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রভৃতি জ্বরে দীর্ঘদিন ভোগার পর মেজাজটা খিটখিটে হয়ে যায়, তখনো মনে হয় জ্বরটা  পুরোপুরি যায়নি, শরীর দুর্বল লাগে, শরীর ম্যাজম্যাজ করে, খিদে কম লাগে, কাজে মন বসে না। এরূপ অবস্থায় সব ওষুধ বন্ধ করে শুধু লেবু চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। রোজ সকালে ও বিকালে হালকা গরম পানিতেলেবুর রস মিশিয়ে এক মাস খেয়ে যেতে হবে। টক বেশি লাগলে এর সাথে সামান্য লবণ মেশানো যেতে পারে। এটা খেলে জন্ডিস রোগেও উপকার পাওয়া যায়।
৮. খুসকি
একটা কাগজিলেবুর রস তার চার গুণ পরিমাণ গরম পানেতে মিশিয়ে গোসলের আগে চুলের গোড়ায় মাখিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকতে হবে। রস শুকিয়ে গেলে গোসল করে স্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। একদিন অন্তর একদিন এভাবে ৩-৪ বার লেবুর রস দিলে চুল ও মাথা খুসকিমুক্ত হবে। না গেলে আরও কয়েক দিন লাগাতে হবে। যে কোন লেবুর রসে এ কাজ হতে পারে।
৯. দাদ
লেবু দিয়ে কত সহজেই না দাদ রোগ সারা যায়! একটা কাগজিলেবু মাঝ বরাবর কেটে বা চিরে সেই টুকরো কিছুক্ষণ দাদের উপরে ঘষতে হবে। এভাবে দিনে ২ থেকে ৩ বার ঘষলে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে দাদরোগ ভালো হয়ে যাবে। একইভাবে লেবু ঘষে মুখের মেছতা ও ছুলি দাগ দূর করা যায়।
১০. দাঁতে পাথর
আধা চা-চামচ খাবার সোডা, একটু লবণ। এর সাথে লেবুর রস দিলে গ্যাজা উঠবে। এর সাথে টুথপেস্ট বা টুথ পাউডার মিশিয়ে ২-৩ মিনিট ব্রাশ করলে দাঁতের লালচে ভাব কেটে সাদা হবে ও দাঁতের ফাঁকে জমা পাথর হলে পরিষ্কার হয়ে যাবে। প্রতি মাসে একবার এটা করলে দাঁত সবসময় সাদা থাকবে।
১১. চুল পাকা
পাকা চুল কালো করার জন্য আমলকি ছেঁচে বেটে মলমের মতো করতে হবে। তার সাথে একটু লেবুর রস মিশিয়ে চুলের গোড়ায় মাখতে হবে। এতে সাদা চুল কালো হবে ও চুল পড়া বন্ধ হবে। রোজ বা সপ্তাহে একদিন এটা করা যায়। রোজ করলে তাড়াতাড়ি চুল কালো হবে। এ ছাড়া আর একভাবে সাদা বা পাকা চুল কালো করা যায়। এজন্য ২ চা-চামচ চা পাতি, ২ চা-চামচ হেনা পাউডার  ও ২ চা-চামচ মধু একসাথে ছোট একটা বাটিতে নিয়ে ভালো করে ফেটতে হবে। এরপর তার মধ্যে একটু লেবুর রস দিয়ে আবারও ভাল করে তা মিশাতে হবে। এর সাথে একটু পানি দিয়ে জ্বাল দিয়ে ফুটাতে হবে। ফুটার পর নামিয়ে ঠাÐা করে তা চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভাল করে মেখে ম্যাসাজ করতে হবে। ব্যবহারের আগে মাথা ভাল করে শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিতে হবে। তালু থেকে চুলের আগা পর্যন্ত ভাল করে মেখে ২০ মিনিট রেখে পরে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। য়

 

প্রকল্প পরিচালক, আইএফএমসি-২ প্রকল্প, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১৮২০৯১০৭
ই-মেইল : kbdmrityur@yahoo.com

 

বিস্তারিত
আউশ মৌসুমে ধানে সম্ভাব্য পোকামাকড়ের আক্রমণ ও প্রতিকার

আউশ মৌসুমে ধানে সম্ভাব্য পোকামাকড়ের আক্রমণ ও প্রতিকার

ড. শেখ শামিউল হক

ধান আমাদের দেশের প্রধান খাদ্যশস্য। উফশী ধান নিবিড় ও উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদের কারণে পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। এ পর্যন্ত ধানের ২৩২ প্রজাতির ক্ষতিকর পোকা শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২০-৩৩ প্রজাতিকে প্রধান অনিষ্টকারী পোকা হিসেবে গণ্য করা হয়। ক্ষতির মাত্রা সাধারণত পোকার প্রজাতি, পোকার সংখ্যা, উপদ্রæত এলাকার  সামগ্রিক পরিবেশ, উপদ্রæত ক্ষেতের বা তার আশপাশের অবস্থা, ধানের জাত, ধান গাছের বয়স, উপকারী পরভোজী ও পরজীবী পোকামাকড়ের সংখ্যা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। দেখা গেছে, প্রধান প্রধান ক্ষতিকর পোকার আক্রমণের জন্য আউশ মৌসুমে শতকরা প্রায় ২৪ ভাগ ধানের ফলন নষ্ট হয়। আউশ ধানে সাধারণত মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, গান্ধি পোকা, ছাতরা পোকা, ঘাসফড়িং এবং শীষকাটা লেদা পোকার আক্রমণ হয়ে থাকে।
মাজরা পোকা
বাংলাদেশে তিন ধরনের মাজরা পোকা ধানের ক্ষতি করে থাকে, যেমনÑ হলুদ মাজরা, কালো মাথা মাজরা এবং গোলাপি মাজরা পোকা। এ পোকাগুলোর কীড়ার রং অনুযায়ী এদের নামকরণ করা হয়েছে। এদের আকৃতি ও জীবন বৃত্তান্তে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও ক্ষতির ধরন এবং দমন পদ্ধতি একই রকম। হলুদ মাজরা পোকা সাধারণত বেশি আক্রমণ করে থাকে। পূর্ণবয়স্ক হলুদ মাজরা পোকা এক ধরনের মথ। স্ত্রী পোকার পাখার উপরে দুটো কালো ফোঁটা আছে। পুরুষ মথের পাখার মাঝখানের ফোঁটা দুটো স্পষ্ট নয় তবে পাখার পিছন দিকে ৭-৮ টা অস্পষ্ট ফোঁটা আছে। হলুদ মাজরা পোকার স্ত্রী মথ ধান গাছের পাতার আগার দিকে গাদা করে ডিম পাড়ে। এক সপ্তাহের মধ্যে ডিম ফুটে কীড়া বের হয়। কীড়ার রং সাদাটে হলুদ। কীড়াগুলো কাÐের ভেতরে প্রবেশ করে ৩ থেকে ৪  সপ্তাহে পুত্তলিতে পরিণত হয়। তবে শীতকালে কীড়ার স্থিতিকাল ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত হতে পারে। পুত্তলিগুলো এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে বয়স্ক পোকায় পরিণত হয় এবং কাÐের ভেতর থেকে বের  হয়ে আসে।
ক্ষতির ধরন : মাজরা পোকা শুধু কীড়া অবস্থায় ধান গাছের ক্ষতি করে থাকে। সদ্য ফোঁটা কীড়াগুলো দু’চার দিন খোল পাতার ভিতরের অংশ খাওয়ার পর ধান গাছের কাÐের ভেতর প্রবেশ করে। কাÐের ভেতর থেকে খাওয়ার সময় এক পর্যায়ে মাঝখানের ডিগ কেটে ফেলে। ফলে মরা ডিগের সৃষ্টি হয়। গাছের শীষ আসার আগে এরকম ক্ষতি হলে তাকে ‘মরাডিগ’ বলে। আর গাছে থোর হওয়ার পর বা শীষ আসার সময় ডিগ কাটলে শীষ মারা যায় বলে একে ‘সাদাশীষ’ বলে। ‘সাদাশীষে’ ধান চিটা হয়ে যায়। বোরো, আউশ এবং রোপা আমন তিন মৌসুমেই পোকার আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়।
দমন ব্যবস্থাপনা
মাজরা পোকার ডিমের গাদা সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলা। ক্ষেতে ডাল-পালা পুঁতে দিয়ে পোকা খেকো পাখির সাহায্যে পোকার সংখ্যা কমানো যায়। সন্ধ্যার সময় আলোক ফাঁদের সাহায্যে মথ আকৃষ্ট করে মেরে ফেলা সম্ভব। হাতজাল ব্যবহার করে পোকা ধরে মেরে ফেলা যায়। রোপা আমন ধান কাটার পর নাড়া চাষ বা পুড়িয়ে মাজরা পোকার ৮০% কীড়া ও পুত্তলি নষ্ট করা যায়। উপর্যুক্ত উপায়সমূহে দমন করা সম্ভব না হলে প্রতি বর্গমিটারে ২-৩টি স্ত্রী মথ বা ডিমের গাদা, অথবা গাছ মাঝ কুশি অবস্থায় ১০-১৫% মরাডিগ অথবা ৫% মরা শীষ দেখা গেলে কীটনাশক ফ্লুবেনডিয়ামাইড ২৪ ডবিøউজি (২০০ গ্রাম/হেক্টর), কার্টাপ ৫০ পাউডার (১.৪ কেজি/হেক্টর), ক্লোরানট্রানিলিপ্রোল + থায়ামেথোক্সাম  ৪০ ডবিøউজি (৭৫ গ্রাম/হেক্টর), ক্লোরানট্রানিলিপ্রোল + থায়ামেথোক্সাম ০.৬ দানাদার (৫.০ কেজি/হেক্টর), কার্বোসালফান ২০ তরল (১.৫ লিটার/হেক্টর), ফিপ্রোনিল ৩ দানাদার (১০.০ কেজি/হেক্টর), ফিপ্রোনিল ৫০পানিতে দ্র্রবণীয় (০.৫ লিটার/হেক্টর),    ক্লোরপাইরিফস ২০ তরল (১.০ লিটার/হেক্টর) অথবা অনুমোদিত যে কোনো কীটনাশক বোতলে বা প্যাকেটে উল্লিখিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। তবে ক্ষেতে মাকড়সা, পরজীবী পোকার সংখ্যা বেশি হলে কীটনাশক ব্যবহার না করলেও চলে।                                                                                                   
পাতা মোড়ানো পোকা
পূর্ণবয়স্ক পাতা মোড়ানো পোকা এক ধরনের মথ। গায়ের রং বাদামি এবং পাখায় আড়াআড়িভাবে ২-৩টি দাগ থাকে। এ পোকার জীবনচক্রে চারটি স্তর থাকে (ডিম, কীড়া, পুত্তলি এবং পূর্ণবয়স্ক মথ)। পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী মথ পাতার মধ্যশিরার কাছে একটা একটা করে ডিম পাড়ে এবং ৫-৭ দিনের মধ্যে ডিম থেকে কীড়া বের হয়। কীড়াগুলো মোড়ানো পাতার মধ্যেই জীবন কাটায়। তিন থেকে চার সপ্তাহে কীড়া পুত্তলিতে পরিণত হয়। পুত্তলির জীবনকাল এক সপ্তাহ এবং পূর্ণবয়স্ক মথ ৭-১০ দিন বেঁচে থাকতে পারে।                                                                     
ক্ষতির ধরন : ডিম থেকে ফোটার পর কীড়াগুলো গাছের মাঝখানের দিকের পাতার একেবারে মাথায় দু-একদিন কুরে কুরে খায়। তারপর আস্তে আস্তে মুখের লালা দিয়ে পাতাকে লম্বালম্বিভাবে মুড়িয়ে নলাকার করে ফেলে এবং মোড়ানো পাতার মধ্যে থেকে পাতার সবুজ অংশ কুরে কুরে খায়। ক্ষতিগ্রস্ত পাতায় প্রথম দিকে সাদা লম্বা দাগ দেখা যায়। খুব বেশি ক্ষতি করলে পাতাগুলো পুড়ে যাওয়ার মত দেখায়। আক্রমণ বেশি হলে ফসলের শতভাগ ক্ষতি হতে পারে।
দমন ব্যবস্থাপনা  
সন্ধ্যার সময় আলোক ফাঁদের সাহায্যে মথ আকৃষ্ট করে মেরে ফেলা। হাতজালের সাহায্যে পূর্ণবয়স্ক পোকা ধরে মেরে ফেলা। ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে (পার্চিং) পোকা খেকো পাখির সাহায্যে দমন করা। শতকরা ২৫ ভাগ পাতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে কীটনাশক স্পিনোস্যাড ৪৫ এসসি (০.৫ লিটার/হেক্টর), স্পিনোস্যাড ২.৫ এসসি (০.৭৫ লিটার/হেক্টর), কার্বারিল ৮৫ পাউডার (১.৭ কেজি/হেক্টর), ক্লোরোপাইরিফস ২০ তরল (১.০ লিটার/হেক্টর), আইসোপ্রোকার্ব/এমআইপিসি ৭৫     পাউডার (১.১২ কেজি/হেক্টর) অথবা অনুমোদিত যে কোনো কীটনাশক বোতলে বা প্যাকেটে উল্লিখিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
গান্ধি পোকা
পূর্ণবয়স্ক গান্ধি পোকা ধূসর রংয়ের এবং কিছুটা সরু   আকৃতির। পা এবং শুঁড় দু’টো লম্বা। গান্ধি পোকা ধানের পাতা ও শীষের উপর সারি করে ডিম পাড়ে। সবুজ রংয়ের বাচ্চা ও পূর্ণবয়স্ক গান্ধি পোকার গা থেকে বিশ্রী গন্ধ বের হয়।
ক্ষতির ধরন : বাচ্চা ও পূর্ণবয়স্ক উভয়ই ধান গাছের দানা থেকে রস শুষে খায়। সব মৌসুমেই এ পোকা আক্রমণ করে। তবে একই এলাকায় আগে বা পরে লাগানো জমিতে এর প্রকোপ বেশি দেখা যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা
আলোক ফাঁদ ব্যবহার করা। এলাকায় একই সময়ে জমিতে ধান রোপণ করে এ পোকার আক্রমণ কমানো যেতে পারে। ধান ক্ষেতের অধিকাংশে যদি প্রতি গোছায় ২-৩টি গান্ধি পোকা দেখা যায় তবে কীটনাশক ক্লোরোপাইরিফস ২০ তরল (১.০ লিটার/হেক্টর), এমআইপিসি/আইসোপ্রোকার্ব ৭৫ পাউডার (১.১২ কেজি/হেক্টর), কার্বারিল ৮৫ পাউডার (১.৭০ কেজি/হেক্টর), ম্যালাথিয়ন ৫৭ তরল  (১.১২ লিটার/হেক্টর) অথবা অনুমোদিত যে কোনো কীটনাশক বোতলে বা প্যাকেটে উল্লিখিত মাত্রায় প্রয়োগ করা যায়। কীটনাশক দুপুরের পর প্রয়োগ করতে হবে।
ছাতরা পোকা
স্ত্রী ছাতরা পোকা খুব ছোট, ২-৩  মিলিমিটার লম্বা, দেহ নরম এবং গায়ের রং গোলাপি। এদের গায়ের উপর সাদা মোম জাতীয় পদার্থ থাকে। এদের কোনো পাখা নেই। এরাই গাছের ক্ষতি করে। পুরুষ পোকা স্ত্রী পোকার অনুপাতে সংখ্যায় খুবই কম, ফলে বিশেষ ক্ষতি করতে পারে না। পুরুষ পোকার দুটো পাখা আছে। স্ত্রী পোকা গাছের কাÐ ও খোল পাতার মধ্যবর্তী স্থানে মোমজাতীয় পদার্থের কুÐলির মধ্যে ডিম পারে। তিন থেকে ছ’ঘন্টার মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। বাচ্চা থেকে পূর্ণবয়স্ক ছাতরা পোকায় পরিণত হতে ১২-১৮ দিন সময় লাগে। পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী ছাতরা পোকাগুলো ৯-২৯ দিন বেঁচে থাকতে পারে। অনুক‚ল আবহাওয়ায় ছাতরা পোকা ১২-১৮ দিনে একটি জীবনচক্র শেষ করতে পারে এবং বছরে ১১ বার প্রজন্ম বা বংশবিস্তার করতে পারে।
গোলাপি রঙের পোকাগুলো গাছের কাÐ ও খোল পাতার মধ্যবর্তী স্থানে সাদা মোম জাতীয় পদার্থের মধ্যে থাকে। পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী ছাতরা পোকা ও বাচ্চাদের কোনো পাখা থাকে না। বাচ্চা ও পূর্ণবয়স্ক উভয়ই ধান গাছের ক্ষতি করে থাকে। আউশ মৌসুমে এর প্রকোপ বেশি, তবে অন্যান্য মৌসুমেও হতে পারে।
ক্ষতির ধরন : বাচ্চা ও পূর্ণবয়স্ক ছাতরা পোকা এক সাথে অনেক সংখ্যায় থাকে এবং গাছের রস শুষে খায়। আক্রান্ত গাছের খোল পাতায় সাদা মোম জাতীয় পদার্থ দেখা যায়। আক্রান্ত গাছ খাটো ও হলদে হয়ে যায়। আক্রমণ তীব্র হলে গাছের শিষ বের হয় না।
দমন ব্যবস্থাপনা
আক্রান্ত গাছ উপড়িয়ে মাটিতে পুতে ফেলা বা আগুনে পুড়িয়ে নষ্ট করা। ছাতরা পোকার আক্রমণ যেহেতু বিক্ষিপ্তভাবে ক্ষেতের এখানে সেখানে হয়, সেহেতু সম্পূর্ণ ক্ষেতের পরিবর্তে শুধু আক্রান্ত জায়গায় ভালো করে কীটনাশক ছিটালে দমন খরচ অনেক কমে যায়। আক্রান্ত ধান গাছে কীটনাশক যেমন- ম্যালাথিয়ন ৫৭ তরল (১.১২ লিটার/হেক্টর), কার্বোসালফান ২০ তরল (১.১২ লিটার/হেক্টর), এমআইপিসি ৭৫ পাউডার (১.৩ কেজি/হেক্টর) এর যেকোনো একটি অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
ঘাসফড়িং
পূর্ণবয়স্ক ঘাসফড়িং ৩-৪ সেন্টিমিটার লম্বা। পিছনের পা দুটো লম্বা হওয়ায় এরা লাফিয়ে লাফিয়ে চলে। এদের গায়ের রং হালকা সবুজ অথবা হলদে বাদামি রংয়ের হয়ে থাকে। স্ত্রী ফড়িং মাটির মধ্যে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বাচ্চা ফুঁটতে ১৫-১৮ দিন লাগে। আবহাওয়া ভেদে বাচ্চা আড়াই থেকে তিন মাস এবং পূর্ণবয়স্ক ফড়িং দেড় থেকে দুই মাস বেঁচে থাকে। এদের জীবন চক্র শেষ হতে প্রায় তিন মাস লাগে।
ক্ষতির ধরন : বাচ্চা এবং পূর্ণবয়স্ক ঘাসফড়িং উভয়েই ধান গাছের ক্ষতি করে। এরা গাছের পাতার কিনারা থেকে কেটে কেটে খায়। আক্রমণ বেশি হলে এরা পাতার মধ্যশিরা বাদে সম্পূর্ণ পাতা খেয়ে ফেলতে পারে। এ ধরনের ক্ষতির ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ফলন কমে যায়। আউশ মৌসুমে এ পোকার প্রাদূর্ভাব বেশি হলেও বোরো ও রোপা আমন ফসলেও এর আক্রমণ দেখতে পাওয়া যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা
হাতজাল দিয়ে পোকা ধরে মেরে ফেলা। ডালপালা পুঁতে পোকা খেকো পাখি বসার ব্যবস্থা করা। শতকরা ২৫ ভাগ পাতা ক্ষতিগ্রস্থ হলে কীটনাশক কার্বোসালফান ২০ তরল (১.৫ লিটার/হেক্টর), এমআইপিসি/আইসোপ্রোকার্ব (১.০০ লিটার/ হেক্টর), কুইনালফস ২৫ তরল (১.৫ লিটার/হেক্টর) অথবা অনুমোদিত যে কোনো কীটনাশক বোতলে বা প্যাকেটে উল্লিখিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
শীষকাটা লেদা পোকা
শীষকাটা লেদা পোকার পূর্ণবয়স্ক পোকা একটি মথ। শুধু কীড়াই ধান গাছের ক্ষতিসাধন করে থাকে। বোনা ও রোপা আমন ফসলের এটি অত্যন্ত ক্ষতিকর পোকা।
ক্ষতির ধরন : কীড়াগুলো প্রথম দিকে গাছের পাতার পাশ থেকে কেটে খায়। কীড়াগুলো বড় হলে আধা পাকা বা পাকা ধানের শীষগুলো কেটে দেয়। কীড়াগুলো রাতে তৎপর থাকে এবং দিনের বেলায় গাছের গোড়ায় বা জমির ফাটলে লুকিয়ে থাকে।
দমন ব্যবস্থাপনা
ধান কাটার পর জমি চাষ বা নাড়া পুড়িয়ে দিলে ক্ষেতে লুকিয়ে থাকা কীড়া ও পুত্তলি মারা যায় ফলে পরবর্তী মৌসুমে এর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। ডালপালা পুঁতে পোকা খেকো পাখির সাহায্যে দমন করা। আক্রান্ত জমিতে সেচ দিয়ে মাটিতে থাকা কীড়া মেরে ফেলুন। আক্রমণ বেশি হলে কার্বারিল ৮৫ পাউডার (১.৭০ কেজি/হেক্টর) কীটনাশক বা অনুমোদিত যে কোনো কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করা যায়। দিনের আলোতে লুকিয়ে থাকা পোকাগুলো সন্ধ্যার সময় যখন ধান গাছে দেখা যায় তখন কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, ধানের পোকামাকড় দমন করার জন্য ব্যবহারোপযোগী বিভিন্ন দমন পদ্ধতি রয়েছে। কিন্তু কোথায় কোন দমন পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে এবং তা দ্বারা কেমন সুফল পাওয়া যাবে তা নির্ভর করে সমস্যার ক্ষেত্র ও তার প্রকৃতির উপর-অর্থাৎ যে এলাকায় বা ক্ষেতে পোকার আক্রমণ হয়েছে তার সামগ্রিক পরিবেশ ও অবস্থানের উপর, আক্রমণকারী পোকার সংখ্যা, আক্রমণের প্রকৃতি ও ব্যাপকতা এবং পোকার জীবনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর এবং আক্রান্ত ফসলের সামগ্রিক অবস্থার উপর। অন্য কথায়, নিয়মিতভাবে ক্ষেত পর্যবেক্ষণের ফলাফলই বলে দেবে কোন পদ্ধতি কোন ক্ষেতে কার্যকরী হবে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে শুধু একটি মাত্র পদ্ধতিই কোন ক্ষেতে পোকা দমনের ব্যাপারে যথেষ্ট হবে, তা নয়। দরকার হলে একটিরও বেশি পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। য়

মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং প্রধান, কীটতত্ত¡ বিভাগ, ব্রি, গাজীপুর, মোবাইল : ০১৫৫২৪৯৫৫১৪; ই-মেইল :shamiulent@gmail.com

বিস্তারিত
ভোজ্যতেল হিসেবে সম্ভাবনাময় ফসল পেরিলা

ভোজ্যতেল হিসেবে সম্ভাবনাময় ফসল পেরিলা

কৃষিবিদ মো. জাহিদুল আমিন১, কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান২

বাংলাদেশে মোট ভোজ্যতেলের চাহিদা ৫১.২৭ লাখ মেট্রিক টন, যার মধ্যে ৪৬.২১ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করতে হয়। এর মূল্য ৩.২০ বিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় ২৭ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। আমাদের দেশে তেলফসলের মধ্যে সরিষা, চীনাবাদাম, তিল, তিসি, সয়াবিন ও সূর্যমুখী প্রভৃতি চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে সরিষা, তিল এবং সূর্যমুখী থেকেই সাধারণত তেল বানানো হয়। বর্তমানে দেশে আবাদি জমির মাত্র ৪ ভাগ তেল ফসলের আবাদ হয়। দেশে মোট ৪.৪৪ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়, যা থেকে ৬.৫ লাখ মেট্রিক টন সরিষা এবং সরিষা থেকে ২.৫০ লাখ টন তেল উৎপন্ন হয়। (সূত্র : এআইএস)
দেশে দিন দিন বাড়ছে ভোজ্যতেলের চাহিদা। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় বাড়ছে আমদানি ব্যয়। আমদানি নির্ভরতা কমাতে এবং মানসম্মত ভোজ্যতেলের ফলন বৃদ্ধিতে দেশে নতুন তেলফসল ‘গোল্ডেন পেরিলা’ নিয়ে এসেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) একদল গবেষক। দীর্ঘদিন গবেষণা করে পেরিলাকে দেশীয় আবহাওয়ায় অভিযোজন করাতে সক্ষম হয়েছেন এ গবেষক দল। পেরিলা (চবৎরষষধ) ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডসমৃদ্ধ একটি ভোজ্যতেলের জাত। সাউ পেরিলা-১ (গোল্ডেন পেরিলা বিডি) বাংলাদেশে অভিযোজিত পেরিলার একটি জাত। বাংলাদেশে জাতটি সম্প্রসারণের জন্য কাজ করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত¡ বিভাগের প্রফেসর ড. এইচ এম এম তারিক হাসান, উদ্যানতত্ত¡ বিভাগের প্রফেসর ড. আ ফ ম জামালউদ্দিন এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ২৭তম বিসিএস (সৃষি) ক্যাডারের অফিসার মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম মজুমদার। ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘদিন গবেষণার ফলে ফসলটি বাংলাদেশের প্রচলিত কৃষি মৌসুমে চাষের উপযোগিতা নির্ধারণ করত ৪টি ফসলসহ ফসল বিন্যাসের উপযোগী চাষাবাদ পদ্ধতি নির্ধারণ সম্ভব হয়। এর ফলে ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি ফসলটি সাউ পেরিলা-১ (গোল্ডেন পেরিলা বিডি) জাত হিসেবে নামকরণপূর্বক কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বীজ বোর্ড (ঘঝই) কর্তৃক অবমুক্ত। ইতোমধ্যে দেশের ১২টি জেলায় এ ফসলটি পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করা হচ্ছে এবং এর বাম্পার ফলন আশা করা যাচ্ছে। এ ফসলটির বিশেষত্ব হলো এর বীজ থেকে প্রাপ্ত তেল এ ৫০-৫৫% লিনোলিনিক এসিড (ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের প্রধান উৎস) যা মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী। এর বীজ থেকে ৪০% তেল আহরণ করা যায়, যার প্রায় ৯১% অসম্পৃক্ত ফ্যাটিএসিড। দেশীয় প্রদ্ধতির প্রচলিত ঘানিতে এ বীজের তেল আহরণ করা যায়।
জাতের বৈশিষ্ট্য
সাউ পেরিলা-১ (গোল্ডেন পেরিলা বিডি) জাতটি  লেমিয়াসি (মিন্ট ক্রপ) পরিবারভুক্ত। এ জাতের গাছের উচ্চতা ৯০-১০০ সেমি. পর্যন্ত হয়। বীজ সাদা, ধূসর, গাঢ় বাদামি হতে পারে এবং হাজার বীজের ওজন ৩.৫-৪.০০ গ্রাম। জাতটি খরাসহনশীল। খরিফ-২ তে চাষ করা যায়, যা শীতকালীন চাষনির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে।
পেরিলার ঔষুধি গুণ : এর তেল আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী বিশেষত হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক ও ত্বকসহ ডায়াবেটিস রোগে এটি কার্যকর ভ‚মিকা রাখে। এতে শতকরা ৫০-৫৫ ভাগ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে যা হার্টের জন্য খুব উপকারী। মোট ফ্যাটের শতকরা ৯১ ভাগ অসম্পৃক্ত। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। এটি চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
সাউ পেরিলা-১ তেলের ব্যবহার : বীজ থেকে প্রাপ্ত তেল পরিশোধন করে এবং পরিশোধন ছাড়া দুইভাবেই খাওয়া যায়। এ তেল নানা কাজে ব্যবহার করা হয়। যেমন- বিভিন্ন ধরনের রান্নার কাজে। সালাদের সাথে মিশিয়ে। বিভিন্ন ধরনের ভর্তা তৈরিতে। আচার এবং চাটনি তৈরিতে। বিভিন্ন খাবারের সুগন্ধি বৃদ্ধিতে।
সাউ পেরিলা-১ (গোল্ডেন পেরিলা বিডি) এর উৎপাদন প্রযুক্তি পানি জমে না এমন প্রায় সব ধরনের মাটি ফসল চাষের জন্য উপযোগী। তবে বেলে দো-আঁশ ও দো-আঁশ মাটি পেরিলা চাষের জন্য বেশি উপযোগী। খরিফ-২ মৌসুমে চাষ করা হয়। প্রতি হেক্টরে ১.০-১.৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ১৫ জুলাই থেকে ২৫ জুলাই। মোট উৎপাদনকাল ১০০-১০৫ দিন (বীজতলায় ৩০ দিন এবং রোপণ পরবর্তী ৭০-৭৫ দিন)।
বীজতলা তৈরি : বীজতলার প্রস্থ ১.০-১.৫ মিটার দৈর্ঘ্য জমির আকার অনুযায়ী যে কোনো পরিমাণ নেওয়া যাবে। বীজতলায় জৈবসারের ব্যবস্থা করলে স্বাস্থ্যবান চারা পাওয়া যাবে। বীজতলায় দুই বেডের মাঝে নালার ব্যবস্থা থাকতে হবে যেন বৃষ্টি হওয়ার পর অতিরিক্ত পানি জমে না থাকতে পারে। বীজের আকার ছোট হওয়ায় মাটি যথাসম্ভব ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। পিঁপড়ার আক্রমণ যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মৌসুমী বৃষ্টির কারণে চারা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় বীজ বপনের প্রথম ১৫ দিন পর্যন্ত বীজতলার চারপাশে খুঁটি দিয়ে উঁচু করে পলিথিনে ছাউনি দেয়া যেতে পারে।
বীজবপন : বীজতলার মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। আধাইঞ্চি গভীর লাইন করে বীজ বপন করলে বীজের অঙ্কুর ক্ষমতা বাড়ে। লাইন ছাড়া বীজ বপন করলে বীজ বপনের পর ঝুরঝুরে মাটি বীজের উপর ছিটিয়ে দিতে হবে। বীজ বপনের পর বীজতলায় হালকা করে পানি দিতে হবে। বীজতলা যেন একেবারে শুকিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
জমি তৈরি : চার-পাঁচটি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে জমি তৈরি করতে হবে। জমির চারপাশে নালার ব্যবস্থা করলে পানি নিষ্কাশনের জন্য সুবিধা হবে।
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি
চারা রোপণ : বীজ বপনের ২৫-৩০ দিন পর চারা রোপণের উপযোগী হয়। এই সময় প্রতিটি চারায় ৫-৬টি পাতা হয়। চারা উত্তোলনের সাথে সাথে রোপণ করতে হবে। চারা উত্তোলনের পর চারার আঁটি বাঁধার সময় শিকড়ে মাটি রেখে দিলে রোপণের পর গাছের দ্রæত বৃদ্ধিতে উপকার হয়। চারা রোপণের পরপরই হালকা সেচ দিতে হবে। চারা রোপণের দূরত্ব গাছ থেকে গাছের ৪০-৫০ সেন্টিমিটার এবং লাইন থেকে লাইনের ৩০-৫০ সেন্টিমিটার।
সেচ ও নিষ্কাশন : খরিফ-২ মৌসুমে পেরিলার চাষ হওয়ায় সাধারণত সেচের প্রয়োজন হয় না। তবে একটানা ১৫-২০ দিন বৃষ্টি না হলে ফুল আসার সময হালকা সম্পূরক সেচের প্রয়োজন হতে পারে। জমিতে যেন পানি জমে না থাকে সেজন্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা : চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর একবার এবং ২৫-৩০ দিন পর দ্বিতীয়বার নিড়ানি দিতে হবে। ফসলের সাধারণত রোগ এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ খুবই কম। তবে নিম্নের পোকাগুলোর আক্রমণ দেখা দিতে পারে।
১. কাটুই পোকা : এ পোকা দিনের বেলায় মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে এবং রাতের বেলায় চারা গাছ কেটে দেয়।
প্রতিকার : আক্রান্ত কাটা গাছ দেখে তার কাছাকাটি মাটি উল্টে-পাল্টে কীড়া খুঁজে সংগ্রহ করে মেরে ফেলা উচিত। এ পোকার উপদ্রব বেশি হলে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ মোতাবেক কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
২. হক মথ : এ মথের ক্রীড়া গাছের কচি পাতা, কাÐ, ফুল ও ফল পেটুকের মতো খেয়ে গাছের ক্ষতি করে। ফলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ফুল ধারণ বাধাগ্রস্ত হয়। গাছের বৃদ্ধির প্রাথমিক অবস্থায় এ পোকা বেশি আক্রমণ করে।
প্রতিকার : সকালে ও বিকেলে ক্রীড়া হাত দিয়ে সংগ্রহ করে মেরে দমন করা যায়। জমির মাটি গভীরভাবে উলটপালটের মাধ্যমে ক্রীড়া ধ্বংস করা যায়। এ পোকার উপদ্রব বেশি হলে  স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ মোতাবেক কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
৩. বিছা পোকা : গাছের অঙ্গজবৃদ্ধি থেকে শুরু করে পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত এদের আক্রমণ দেখা যায়। তবে ফল ধরার সময় আক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। আক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় ছোট ছোট কীড়া ১-২টি পাতা খেয়ে জালিকা সৃষ্টি করে। বয়ষ্ক কীড়াগুলো জমিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং পাতা, কাÐ, ফুল ও ফল খেয়ে ক্ষতি সাধন করে।
প্রতিকার : রাতে আলোর ফাঁদ দ্বারা মথ আকৃষ্ট করে মারা যেতে পারে। কীড়াসহ আক্রান্ত পাতা হাত দিয়ে ছিঁড়ে মাটিতে পুঁতে ধ্বংস করা। এ ব্যাপারে উপদ্রব বেশি হলে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ মোতাবেক কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
ফলন : হেক্টরপ্রতি ১.৩-১.৫ টন ফলন পাওয়া যায়। য়

১অতিরিক্তপরিচালক, ডিএই, যশোর অঞ্চল, মোবা : ০১৭১১১১৭৬০৮, ২প্রশিক্ষক, কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ঝিনাইদহ, মোবা : ০১৭৩৬৬০২৬৩১, ই-মেইল : nomansau69@gmail.com

 

বিস্তারিত
বাড়ির পাশে খালি জায়গায় সবজি চাষে কৃষানির করণীয়

বাড়ির পাশে খালি জায়গায় সবজি চাষে কৃষানির করণীয়

কৃষিবিদ জাকিয়া বেগম১, কৃষিবিদ সাবিনা ইয়াসমিন২

বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ হলেও এদেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা মিটাতে বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী পদক্ষেপ ও কর্মসূচি গ্রহণ করায় এদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বর্তমানে করোনা নামক ভয়াবহ ভাইরাসের আক্রমণে পৃথিবীতে নেমে আসে এক সংকট। এ সংকটকালীন সময়ে বিশ্বের সর্বত্রই দেখা দিতে শুরু করেছে অর্থনৈতিক এবং খাদ্য ঘাটতি। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশে এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে, সে নির্দেশনা অনুসারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনায় কৃৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এবং তা বাস্তবায়নে অত্র অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারী কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। যদিও জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিপরীতভাবে চাষের জমি প্রতি বছরে প্রায় ১ শতাংশ হারে কমছে, এক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার পথ দেখাতে পারে পতিত জমি এবং বসতবাড়ির বিভিন্ন অংশ, যা মোট জমির প্রায় ৫ শতাংশ। বাংলাদেশের প্রায় মোট আবাদি জমির (৮৫৮৬.৮৬৪ হেক্টর) ৫% বসতবাড়ির আওতায় রয়েছে (সূত্র : কার্তিক ১৪২৬, কৃষিকথা, বিবিএস ২০১৯, কৃষি উইং ২০১৬-২০১৭)। কিন্তু সব বসতবাড়ির আঙিনার জমি সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। অধিক জনসংখ্যার পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য বাড়ির কৃষানিরাই পারে সারা বছর সবজি চাষ করে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে। পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদিত সবজি বাজারে বিক্রি করে অর্থ আয় করতে। তাতে তার অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আসবে। শাকসবজি পরিমিত পরিমাণে নিয়মিত খেলে পুষ্টিজনিত সমস্যা দূর করা যাবে এবং দেশে মহিলাসহ পারিবারিক স্বকর্মসংস্থান বাড়বে।
বসতবাড়ির আঙিনায় সবজি চাষের সুবিধা
অল্প পরিমাণ জমিতে অনেক ধরনের সবজি ও ফল আবাদ করা যায়। সবজি আবাদে অপেক্ষাকৃত কম সময় লাগে। একই জমিতে বছরে কয়েকবার সবজি চাষ করা সম্ভব। পুষ্টির দিক থেকে প্রায় সব শাকসবজি উন্নতমান সম্পন্ন হয়ে থাকে। ফলে বছরব্যাপী উপযুক্ত পরিমাণ সবজি খেয়ে পুষ্টিহীনতা দূর করা এবং রোগমুক্ত থাকা সম্ভব হয়। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি সবজি বিক্রি করে পরিবারের জন্য বাড়তি আয়ের সংস্থান করা যায়। বসতবাড়ির আঙিনায় পরিবারের মহিলা ও ছেলেমেয়েদের অবসর সময়ে সবজি চাষের কাজে লাগিয়ে পারিবারিক শ্রমের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।
সবজি চাষে কৃৃষানির প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা
বসতবাড়ির যে জায়গায় দিনের বেশির ভাগ সময় রোদ লাগে এমন জায়গায় নিবিড় সবজি আবাদের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। আঙিনায় আলো আসার পথে বাধা দেওয়া বাড়ির আশেপাশের বড় গাছের ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে। ভবিষ্যতে বড় হয়ে ছায়া সৃষ্টি করতে পারে এমন গাছও জন্মাতে দেয়া যাবে না। এমন রৌদ্রোজ্জ্বল জায়গায় সারা বছর অর্থাৎ শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে সব ধরনের সবজি কৃষানিরা চাষ করতে পারবেন। আবার ছায়া পছন্দ করে এমন সবজি ও মসলা ফসল ছায়াযুক্ত স্থানে চাষ করে জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে কৃষানিরা পারিবারিক পুষ্টি চাহিদাও মিটাতে পারেন। আর এজন্য কৃষানি বোনদেরকে উচ্চফলনশীল জাতের বীজ সংগ্রহে রাখতে হবে ও মৌসুমের একটি তালিকা করে রাখতে হবে অথবা এ বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে বা দক্ষদের কাছ থেকে  জেনে নিয়ে চাষাবাদের বিষয়ে সচেষ্ট থাকতে হবে।
বাড়ির পাশে খালি জায়গায় সবজি চাষের নকশা
সবজি ফসলের অন্তর্র্বর্তীকালীন পরিচর্যার সুবিধার জন্য প্রতিটি প্লট প্রস্থে সর্বোচ্চ ১ মিটার এবং দুই প্লটের মাঝে ও তার চারদিকে ২৫-৫০ সেমি. জায়গা নালা হিসেবে ব্যবহারের জন্য এবং সেচনালার জন্য আরও ১ মিটার জায়গা রাখতে হবে। যাতে সেচের বা বর্ষার অতিরিক্ত পানি বাগান থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। তবে বাগানের যে দিকটা লম্বা সে দিকটি প্লটের দৈর্ঘ্য হিসেবে রাখতে হবে। সেচের সুবিধার জন্য বাগানের উঁচু অংশে হস্তচালিত নলক‚প, রোয়ার পাম্প বা ট্রেডেল পাম্প বসালে সহজে বাগানে পানি দেয়া যায়।
সবজি বাগানের জন্য সুপারিশকৃত শস্যবিন্যাস
সবজি বাগানের চারটি বেডে সারা বছর উৎপাদনের জন্য নিম্নেবর্ণিত চারটি সবজি বিন্যাস অনুসরণ করার জন্য  কৃষানিদেরকে সুপারিশ করা হচ্ছে- প্রথম বেড : টমেটো/  মুলা-ডাঁটা-গীমাকলমি; দ্বিতীয় বেড : লালশাক/বাঁধাকপি-ডাঁটা-ঢেঁড়স; তৃতীয় বেড : বেগুন/লালশাক-পুঁইশাক- গীমাকলমি; চতুর্থ বেড : ঝাড় শিম-লালশাক- পুঁইশাক/বরবটি।
বাড়ির স্থানভিত্তিক ফসল নির্বাচন
ঘরের ছাদে বা চালে চালকুমড়া, লাউ, মিষ্টিকুমড়া বা লতাজাতীয় সবজি ফলানো যায়। নারিকেল গাছ, পেঁপে, ডালিম গাছ ইত্যাদি বাড়ির গেটে, বাড়ির সীমানা বেড়ায় লতাজাতীয় সবজি যেমন ধুন্দুল, ঝিঙা চাষ করা যায় এবং নারিকেল গাছ, লেবুগাছ, কম প্রচলিত সবজি যেমন কাঁচকলা, সজিনা, বকফুল ও পেঁপে ইত্যাদি বাড়ির সীমানায় চাষ করা যায়। কলপাড়ে বা টিউবওয়েলের (স্যাঁতসে্যঁতে স্থানে) পাড়ে, পানির ড্রেনেও লতিকচু, মুখীকচু, মানকচু, দুধকচু ইত্যাদি চাষ করা যাবে। মসলার মধ্যে আছে আদা ও হলুদ, বিলাতী ধনিয়া ইত্যাদি বড় গাছের ছায়ায়, মাচার নিচের জায়গায় চাষ করা যাবে। লতাজাতীয় ফসল যেমন- পান, গোলমরিচ ও মেটে/গাছ আলু বাড়ির কৃৃষানি খুব সহজেই চাষ করতে পারেন। বাড়ির আঙিনায় মাচা করে লতাজাতীয় সবজির মধ্যে শিম, বরবটি, লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, শসা, চিচিংগা, ঝিঙা, ধুন্দুল ও করলা ইত্যাদি সবজি চাষ করা যায়। বাড়ির পাশের পুকুরের পাড়ে নারিকেল, সুপারি, পেঁপে পুকুরের ঘেরে চাষ করা যায় এবং পুকুরের পানির ওপরে মাচা করে মিষ্টিকুমড়া, লাউ, শসা, তরমুজ, বাঙ্গি ইত্যাদি চাষ করা যায়। এ ছাড়াও মৌসুমভিত্তিক শাকসবজি চাষের বর্ষপঞ্জি ছক দ্রষ্টব্য।
সবজির আন্তঃপরিচর্যা
অধিক ফলনের জন্য কৃষানিকে মাদায় ও জমিতে কম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ, মালচিং, আগাছা পরিষ্কার, সেচ প্রয়োগ, রোগবালাই ও পোকামাকড় সমন্বিত পদ্ধতিতে দমন করতে হবে। য়

১অতিরিক্ত পরিচালক, হর্টিকালচার উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা, মোবাইল : ০১৭৪০৫৯৩১৪৮, ২উপজেলা কৃষি অফিসার, সংযুক্ত : হর্টিকালচার উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা, মোবাইল : ০১৬৮৮০৫৪৭৮৬

 

বিস্তারিত
ডালবীজ সংরক্ষণে শুসরী পোকার দমন ব্যবস্থাপনা ড. মোঃ আলতাফ হোসেন

ডালবীজ সংরক্ষণে শুসরী পোকার দমন ব্যবস্থাপনা

ড. মোঃ আলতাফ হোসেন

ডাল ফসল আমাদের পুষ্টি নিরাপত্তায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডালের আমিষ (চৎড়ঃবরহ) বাংলাদেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর নিকট সহজলভ্য একটি পুষ্টি উপাদান। আমাদের দেশে ডালের মোট চাহিদার প্রায় ৪০ ভাগ আমরা উৎপাদন করে থাকি। ৬০ ভাগ ঘাটতির মধ্যে  ৩০-৩৫ ভাগ আমদানি করা হয় এবং বাকিটা ঘাটতিই রয়ে যায়। ডালের আমদানি নির্ভরতা কমানোর জন্য গবেষণার মাধ্যমে উচ্চফলনশীল জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হচ্ছে এবং ফলনও বাড়ছে কিন্তু কৃষক পর্যায়ে ডাল ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অন্যতম একটি বাধা হচ্ছে ডালবীজ সংরক্ষণে শুসরী পোকার আক্রমণ। শুসরী পোকা (ঈধষষড়ংড়নৎঁপযঁং ংঢ়ঢ়., পরিবার: ইৎঁপযরফধব, বর্গ: ঈড়ষবড়ঢ়ঃবৎধ),          ডালবীজ সংরক্ষণের অন্যতম প্রধান অন্তরায়। সবধরনের ডালবীজই (খেসারি, মসুর, ছোলা, মটর, গোমটর, মুগ, মাসকলাই, অড়হর ইত্যাদি) গুদামে  সংরক্ষিত অবস্থায় শুসরী পোকার আক্রমণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষকপর্যায়ে ডালবীজ সংরক্ষণের সবচেয়ে বড় সমস্যাই হচ্ছে শুসরী পোকার আক্রমণ। এদের আক্রমণ থেকে  ডালবীজকে সুরক্ষা করার কৌশল না জানার কারণে কৃষকদের মাঝে  বীজ সংরক্ষণের অনাগ্রহ দেখা যায় এবং বীজ সংগ্রহের পরপরই সেটা, যে দামেই হোক কৃষক বিক্রি করে দেন। যার ফলশ্রæতিতে বপনকালীন সময়ে কৃষকপর্যায়ে বীজের যথেষ্ট সংকট পরিলক্ষিত হয় এবং ডাল ফসলের উৎপাদন এলাকা কমে যায়। শুসরী পোকা এবং তার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কৃষকদের যদি সম্যক ধারণা থাকলে কৃষকগণ অবশ্যই বীজ সংরক্ষণে আগ্রহী হবেন, এতে করে বীজের সহজপ্রাপ্যতা ও সহজলভ্যতা বেড়ে যাবে এবং বপন মৌসুমে কৃষক সহজে নিজের সংরক্ষিত বীজ দিয়েই ফসল বপন করতে পারবেন। এর ফলে ডাল ফসলের উৎপাদন এলাকা বেড়ে যাবে এবং পুষ্টি নিরাপত্তায় ডালের ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
পোকা পরিচিতি
পূর্ণবয়স্ক শুসরী পোকা ছোট ডিম্বাকৃতির বাদামি রঙের বিটল, লম্বায় ৩.০-৪.৫ মিমি.। এদের ঘারে এবং পাখার মাঝখানে ও শেষ প্রান্তে কালো দাগ আছে। পাখা পেটের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ঢাকতে পারে না বিধায় পেট পেছনের দিকে অনাবৃত থাকে। এদের মাথায় দুটি করাত সদৃশ্য লম্বা এ্যান্টেনা বা শুং আছে। পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী পোকা ডালবীজের গায়ে সাদা রঙের ছোট ছোট একাধিক ডিম পাড়ে। একটি স্ত্রী পোকা ৫০-২০০টি পর্যন্ত ডিম পাড়তে পারে। ডিম থেকে ৩-৬ দিনের মধ্যে কীড়া বের হয়েই বীজ ছিদ্র করে ভেতরে প্রবেশ করে খেতে শুরু করে। কীড়া ধাপটি হচ্ছে এ পোকার ক্ষতিকর ধাপ। কীড়াগুলো  দৈর্ঘ্য প্রায় ৫-৬ মিমি. লম্বাটে এবং হলুদাভ সাদা, বাদামি মাথাযুক্ত। কীড়া ধাপ ১২-২০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং পুত্তলী ধাপও বীজের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে থাকে। জীবনচক্র সম্পন্ন হতে ২৮-৪০ দিন লাগে। এরা বছরে ৬-৮ বার বংশবৃদ্ধি করতে পারে।  
ক্ষতির ধরন, প্রকৃতি ও মাত্রা ডাল ফসলে শুসরী পোকার আক্রমণ ফসল সংগ্রহের আগেই মাঠ থেকেই শুরু হয়ে থাকে। ফসল পাকা শুরু করলে স্ত্রী পোকা ঘরবাড়ি ও বীজ সংরক্ষণাগার থেকে মাঠে উড়ে গিয়ে পাকা ফলের গায়ে ডিম পাড়তে শুরু করে। এরপর ফসল সংগ্রহ এবং পরবর্তীতে মাড়াই, ঝাড়াই, শুকানো ও ঠাÐাকরণ ইত্যাদি কার্যক্রমের মধ্যেও স্ত্রীপোকা বীজের গায়ে ডিম পাড়া অব্যাহত রাখে এবং স্ত্রী ও পুরুষ উভয় পোকা বীজের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। এভাবে লুকিয়ে থাকা পূর্ণবয়স্ক পোকা ও ডিমযুক্ত বীজ গুদামজাত করলে বীজের গায়ে লেগে থাকা ডিম ফুটে কীড়া বের হয়েই বীজ ছিদ্র করে ভেতরে ঢুকে বীজের শাঁস খায়। বীজের গায়ে সাদা সাদা ডিমের উপস্থিতি ও গোলাকার ছিদ্র দেখে এদের আক্রমণ শনাক্ত করা যায়। আক্রান্ত বীজ অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং ডাল হিসেবেও খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে বীজ পাউডারের মতো গুঁড়ায় পরিণত হয়। সংরক্ষণকালে বীজের আর্দ্রতা যদি ১২% এর বেশি থাকে এবং তাপমাত্রা ২৫-৩০০ সেলসিয়াস এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৬০% এর বেশি থাকে তাহলে শুসরী পোকার দ্রæত বংশবৃদ্ধি ঘটে এবং আক্রমণের মাত্রাও বেড়ে যায়। এ পোকার আক্রমণে সাধারণত গড়ে ১২-৩০% পর্যন্ত ডালবীজ নষ্ট হয়ে থাকে তবে মারাত্মক আক্রমণে ১০০% বীজই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বীজের মধ্যে শুসরী পোকার ক্রমাগত ডিমপাড়া এবং বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে ৩-৪ মাসের মধ্যে সমস্ত বীজকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে। তবে বিভিন্ন ধরনের ডাল বীজে শুসরী পোকা আক্রান্ত হওয়ার মাত্রা বীজের আবরণের পুরুতা, শক্ততা ও অমসৃণতা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। স্ত্রী পোকা অমসৃণ বীজাবরণের চাইতে মসৃণ বীজাবরণের বীজে ডিম পাড়তে বেশি পছন্দ করে। এছাড়া বীজের আকার, আকৃতি, দৃঢ়তা এবং রংয়ের উপরও ডিম পাড়ার পছন্দক্রম নির্ভর করে আক্রমণের মাত্রা কম-বেশি হয়। গবেষণায় দেখা যায় যে, মুগের বীজ শুসরী পোকার আক্রমণের প্রতি অধিক সংবেদনশীল, অপরদিকে মটরের বীজ অধিক প্রতিরোধী। সুতরাং ডালবীজে শুসরী পোকার আক্রমণের সংবেদনশীলতার কথা চিন্তা করে একই জায়গায় সবধরনের ডালবীজ সংরক্ষণ না করাই শ্রেয়।
আদর্শ বীজ সংরক্ষণাগারের আবশ্যিক সুযোগ সুবিধা
বীজকে পোকামুক্ত রাখতে এবং বীজের সজীবতা বজায় রাখার জন্য বীজ সংরক্ষণাগার বা গুদামে নি¤েœাক্ত সুযোগ সুবিধাদি আবশ্যকীয়।
বীজ সংরক্ষণাগারে যেন মাটি থেকে রস উঠে না আসে বা বৃষ্টির পানি না ঢোকে এবং পোকামাকড়, ইঁদুর, পাখি ইত্যাদি প্রবেশ না করতে পারে সেসব দিক থেকে সুরক্ষিত থাকতে হবে। বীজ সংরক্ষণাগারে বীজ পরিদর্শন, নির্বীজন, লোডিং, আনলোডিং, পরিষ্কারকরণ ইত্যাদির প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে। বীজ সংরক্ষণাগারটি বীজকে অতিরিক্ত আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা থেকে সুরক্ষিত রাখে এমন হতে হবে কেননা এরা পোকার বংশবৃদ্ধিতে অনুক‚ল অবস্থা তৈরি করে।
ব্যবস্থাপনা কৌশল
বীজ সংরক্ষণের আগেই বীজ সংরক্ষণের পাত্র এবং সংরক্ষণাগারের ভেতরে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। বিশেষ করে পূর্ববর্তী বছরের সংরক্ষণকৃত কোনো কিছুর অবশিষ্টাংশ যেন না থাকে। প্রয়োজনে ভ্যাকিউম ক্লিনার ব্যবহার করতে হবে এবং সংগৃহীত ময়লা আবর্জনাসহ পোকামাকড় মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। পুরাতন বস্তাগুলোকে ১০% ম্যালাথিয়ন দ্রবণে ডুবাতে হবে অথবা ফুটন্ত পানিতে ১৫ মিনিট ডুবিয়ে রেখে বস্তাগুলোকে পোকামুক্ত করতে হবে। বীজ সংরক্ষণের আগে ভালোভাবে ঝাড়াইকৃত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বীজ পলিথিন বা ত্রিপলের উপর অথবা পাকা মেঝেতে ২-৩টি রোদ দিয়ে কট্কটে করে শুকাতে হবে যেন বীজের আর্দ্রতা ১২% এর নিচে থাকে। কোনক্রমেই বীজ শুধু মাটির ওপর শুকানো যাবে না। মাটিতে বীজ শুকালে কখনোই সবগুলো বীজ শুকনো কট্কটে হবে না। বীজের আর্দ্রতা বেশি থাকলে সহজেই শুসরী পোকা দ্বারা আক্রান্ত হবে। এ জন্য বীজ সংরক্ষণের অন্যতম প্রধান শর্তই হলো বীজকে উত্তমভাবে শুকানো। শুকনো বীজ ঠাÐা করে বায়ুরোধীপাত্রে যেমন- প্লাস্টিক বা ধাতব ড্রাম, পলিথিন লাইনিং বস্তা ইত্যাদিতে সংরক্ষণ করতে হবে। অল্প পরিমাণ বীজ সংরক্ষণের জন্য বীজের গায়ে উদ্ভিদজাত তেল যেমন- অলিভ অয়েল বা নিমের তেল প্রতি কেজি বীজের জন্য ৫-৭ মিলি হারে মিশিয়ে ছোট প্লাস্টিক পাত্রে সংরক্ষণ করা যায়। বীজের বস্তায় বা পাত্রের উপর ৩-৫ সেমি শুকনো বালির স্তর দিয়ে ঢেকে রাখা যেতে পারে।  বীজের বস্তা বা পাত্র ফেটে বা ভেঙে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মাঝেমধ্যে বীজকে  ৪-৬ ঘণ্টা ৩৭-৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রোদে শুকিয়ে পোকার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। উল্লেখ্য, এভাবে বীজ শুকানোর ফলে বীজের সজীবতা নষ্ট হবে না। বেশি পরিমাণ বীজ গুদামে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রতি টন বীজের জন্য   ৪-৬টি এ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড বড়ি ব্যবহার করে বীজকে পোকামুক্ত রাখা যায়। এক্ষেত্রে অবশ্যই বায়ুরোধী করে রাখতে হবে। কৃষক পর্যায়ে বীজ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ কেজি বীজের পাত্রে বা বস্তার মধ্যে একটি করে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড বড়ি (গ্যাস ট্যাবলেট) ন্যাকড়ার পুঁটলিতে বেঁধে ঢুকিয়ে রাখলে শুসরী পোকার আক্রমণ হতে ডাল বীজকে সহজেই এবং লাভজনকভাবে সুরক্ষিত রাখা যায়। য়

 

প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, কীটতত্ত¡ বিভাগ, ডাল গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঈশ্বরদী, পাবনা। মোবাইল নম্বর: ০১৭২৫-০৩৪৫৯৫ ই-মেইল :  hossain.draltaf@gmail.com

 

বিস্তারিত
নিরাপদ আম বাগানের যত্ন ও আম ভক্ষণে সচেতনতা

নিরাপদ আম বাগানের যত্ন ও আম ভক্ষণে সচেতনতা

কৃষিবিদ মোঃ আব্দুল্লাহ-হিল-কাফি

বাংলাদেশ বিগত ১০-১২ বছরে ফল আবাদে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আম উৎপাদনে আমাদের এই ছোট আয়তনের দেশটি সপ্তম আর মোট ফল উৎপাদনে ২৮তম। আমগাছ হতে আম সংগ্রহের পর হতে শুরু করে পরবর্তী ফুল আসা পর্যন্ত বিভিন্ন পরিচর্যা প্রয়োজন হয়। আম সবার কাছে পছন্দনীয় এবং জনপ্রিয় একটি ফল।
কিন্তু আমাদের দেশে আম গাছের ফলন তুলনামূলকভাবে কম অর্থাৎ প্রতি একক জমির গড় ফলনও কম। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ফলনের ব্যাপক তারতম্য দেখা যায়। যেমন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে আমের ফলন অন্য যে কোনো এলাকার চেয়ে অনেক বেশি। উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে একটু যতœবান হলেই আমের ফলন কয়েকগুণ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
অন্যান্য ফসলের মতো আমগাছের সুষম বৃদ্ধি এবং অধিক ফলনের জন্য প্রতি বছর সার ব্যবহার একান্ত দরকার। গাছের বয়স, আকৃতি এবং মাটির উর্বরতার ভিত্তিতে আমগাছের সারের মাত্রা নিরূপণ করতে হয়। চারাগাছ ও ফলবান গাছে বিভিন্ন মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হয়। মাটিতে জৈবসার দেয়া ভালো কারণ এতে মাটির গুণগত মান বৃদ্ধি পায় এবং গাছের ফলধারণ ক্ষমতা বাড়ে। বিভিন্ন বয়সের গাছে কি মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে তা সারণি-দ্রষ্টব্য।
সমস্ত সার ২ কিস্তিতে প্রয়োগ করা ভালো। তবে সম্পূর্ণ সার একবারেও দেয়া যেতে পারে। প্রথম কিস্তিতে অর্ধেক সার বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে এবং দ্বিতীয় কিস্তিতে বাকি সার আশ্বিন মাসে প্রয়োগ করতে হবে। মাটিতে রসের অভাব থাকলে সার দেয়ার সাথে সাথে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। গাছের খাদ্য আহরণকারী শিকড়গুলো গাছের কাÐ বা গোড়া থেকে দূরে থাকে তাই গাছের একেবারে গোড়ায় সার প্রয়োগ করা উচিত নয়। সার দুইভাবে দেয়া যেতে পারে। প্রথমত রিং পদ্ধতিতে ও দ্বিতীয়ত মাটির উপরে ছিটিয়ে। রিং পদ্ধতিতে প্রয়োগের ক্ষেত্রে গাছের  গোড়া থেকে প্রায় ২ মিটার দূরে যেখানে খাদ্য আহরণকারী শিকড় রয়েছে সেখানে  ৩০ সেমি. প্রশস্থ ও ১৫-২০ সেমি. গভীর একটি চক্রাকার নালা কেটে সেই নালার ভেতর জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে নালাটি মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। অপরপক্ষে মাটিতে ছিটিয়ে সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে দুপুরে মাটির যতটুকু স্থানে গাছের ছায়া পড়ে ঠিক ততটুক স্থানে সব ধরনের সার ছিটিয়ে কোদাল দ্বারা মাটি কুপিয়ে বা চাষ দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
আমের চারা রোপণের পর পরই চারার গোড়ায় নিয়মিত পানি সেচ দেয়া প্রয়োজন। চারা গাছে বর্ষাকাল ছাড়া সব ঋতুতেই পানি সেচ দেয়া যায়। এ ছাড়া ফলবান গাছেও খরা মৌসমে অন্তত দুইবার সেচ দেয়া প্রয়োজন। আমের পূর্ণ মুকুল অবস্থায় একবার ও আম গুটি অবস্থায় আরেকবার পানি সেচ দেয়া প্রয়োজন। এসময় সেচ দিলে আমের গুটি ধারণ বৃদ্ধি পায় ও গুটি ঝরা রোধ হয়। এ ছাড়াও আমের বৃদ্ধি অবস্থায় মাটিতে রসের অভাব দেখা দিলে পানির সেচ দেয়া প্রয়োজন। সুযোগ বুঝে চাষের মাধ্যমে আগাছা দমনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আম সংগ্রহ শেষ হলে আমগাছ হতে রোগাক্রান্ত বা মরা ডালপালা  একটু ভালো অংশসহ কেঁটে ফেলতে হবে। আমগাছে পরগাছা থাকলে সেগুলো কেটে অপসারণ করতে হবে।
দমন পদ্ধতি
আম বাগান হতে ভালো ফলন পাওয়ার জন্য এই সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাঝেমাঝে আম বাগান পরিদর্শন করতে হবে। সঠিক সময়ে রোগ ও পোকামাকড় দমন করতে ব্যর্থ হলে আমের ফলন মারাত্মকভাবে হ্রাস পেতে পারে। এসব রোগ ও পোকামাকড় দমনের জন্য সঠিক বালাইনাশক নির্বাচন করে নির্দিষ্ট মাত্রায় বা ডোজে সঠিক সময়ে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যবহার করলে আমের আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে। যেমনÑ ১. হপার পোকা অন্ধকার বা বেশি ছায়াযুক্ত স্থান পছন্দ করে তাই নিয়মিতভাবে গাছের ডালপালা ছাঁটাই করতে হবে যাতে গাছের মধ্যে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে। ২. আমের মুকুল যখন ১০-২৫ সেন্টিমিটার হয় অর্থাৎ ফুল ফোটার আগে তখন একবার এবং আম যখন মটর দানাকৃতি হয় তখন আর একবার সাইপারমেথ্রিন, কার্বারিল অথবা ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রæপের কীটনাশক নির্দেশিত মাত্রায় মিশিয়ে সম্পূর্ণ গাছ স্প্রে করতে হবে। ৩. আমের হপার পোকার কারণে যেহেতু শুঁটিমোল্ড বা ঝুল রোগের আক্রমণ ঘটে সুতরাং এই রোগ দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক হপার পোকা দমনের জন্য ব্যবহার্য কীটনাশকের সাথে নির্দেশিত মাত্রায় মিশিয়ে ¯েপ্র করতে হবে। এই হপার বা ফুদকি পোকাটি আমের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারে। সুতরাং এই পোকাটিকে আমবাগান হতে তাড়ানোর জন্য সকল ধরনের ব্যবস্থাপনা সময়মতো গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় আমের ফলন একবারে কমে যেতে পারে।
পাউডারি মিলডিউ রোগের আক্রমণ প্রধানত আমের মুকুল ও কচি আমে দেখা যায়। প্রথমে আমের মুকুলের শীর্ষ প্রান্তে সাদা বা ধূসর বর্ণের পাউডারের আবরণ দেখা যায়। অনুক‚ল আবহাওয়ায় এই পাউডার সম্পূর্র্ণ মুকুলে দ্রæত ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত মুকুলের সমস্ত ফুল নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থায় শুধুমাত্র মুকুলের দÐটি দাঁড়ায়ে থাকে। আক্রমণ বেশি হলে সমস্ত মুকুল নষ্ট হওয়ায় গাছে কোনো ফলধারণ হয় না। রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই সালফার গ্রæপের ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিনের ব্যবধানে দুই বার ভালোভাবে ¯েপ্র্র করতে হবে।
দাঁদ রোগ আম মটরদানার মতো হলেই শুরু হতে পারে। আক্রান্ত আমের শরীর বাদামি রং ধারণ করে, খোসা ফেটে যায় ও খসখসে হয়ে উঠে। আক্রান্ত আমের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং কয়েক দিনের মধ্যে তা ঝরে পড়ে। রোগের আক্রমণে বাড়ন্ত আমের শরীরে বাদামি দাগের সৃষ্টি হয়। অনুক‚ল    আবহাওয়ায় দাগগুলো বাড়তে থাকে এবং সম্পূর্ণ আমের শরীর ঢেকে ফেলে। আক্রান্ত স্থানের চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। আমের শরীর খসখসে অমসৃণ হওয়ার কারণে আমের বাজার দর কমে যায়। রোগের আক্রমণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে রোভরাল (প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম) অথবা ব্যাভিস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে অথবা ক্যাবরিওটপ প্রতি লিটার পানিতে ৩ গ্রাম হারে           ৭-১০ দিন পর পর ৩-৪ বার ¯েপ্র্র করে গাছ রোগমুক্ত রাখা যায়।
আমে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার
অসাধু ব্যবসায়ীরা কিছু কিছু সময় আমে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে।
কার্বাইড দিয়ে পাকানো ফল চেনার উপায় : মৌসুমের আগে বাজারে আসা কোন ফল কিনে খাওয়া উচিত নয়।  যেসব ফলের গায়ের রঙ সর্বত্রই একই রকমের, দেখতে অনেকটা টকটকে কাঁচা হলুদ রঙের মতো। বুঝতে হবে তা  কৃত্রিম উপায়ে ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে পাকানো ফল। কৃত্রিম উপায়ে কলা পাকানো হলে কলার রঙ হলুদ এবং কলার বোঁটা, কাঁধি গাঢ় সবুজ থেকে যাবে। টমেটোর রঙ ও চামড়া সমানভাবে টকটকে গাঢ় লাল হয়ে যাবে। আম ও পেঁপের রঙ কমলার মতো রঙ হয়ে যাবে। সুতরাং ফল কিনতে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
কালটার (প্যাকলোবিউট্রাজল) : কিছু কিছু আম ব্যবসায়ী বেশি ফলনের আশায় আমগাছে কালটার বা প্যাকলোবিউট্রাজল ব্যবহার করেন। বাংলাদেশে এ রাসায়নিক দ্রব্যটি এখনও ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়নি। এটি পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে আম বাগানে ব্যবহার করা হয় তবে তা দশ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের বাগানে। ধারাবাহিকভাবে এ রাসায়নিক দ্রব্যটি আমগাছে ব্যবহারের ফলে সমস্যা দেখা যায় যেমন : গাছের নতুন ডগা/শাখা-প্রশাখা খাটো হয়ে যায় এবং পাতার আকার ছোট হয়ে যায়। গাছের আকার আকৃতি রোগাক্রান্ত অথবা প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি রয়েছে বলে মনে হয়। গাছের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যায় ও বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমণ দেখা যায়। আগাম ফুল আসার প্রবণতা দেখা যায়,  ফলের  আকৃতি ছোট ও ওজন কম হয়। আঠা ঝরা বা গামোসিস ও ডাইব্যাকসহ অন্যান্য রোগে গাছ মারা যায়।

আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, রাজশাহী। ফোন : ০৭২১-৭৭৩২৭৭, ই-মেইল : rajshahi@ais.gov.bd

বিস্তারিত
সম্ভাবনাময় ভুট্টার তেল

সম্ভাবনাময় ভুট্টার তেল

কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
বাংলাদেশে ভুট্টা নতুন সম্ভাবনাময় ফসল। বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু ভুট্টা চাষের অনুক‚ল। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত জমিতেও ভুট্টার ভালো ফলন হচ্ছে।   কৃষকদের কাছেও ভুট্টা চাষ জনপ্রিয়তা লাভ করছে। ফলে ভুট্টার উৎপাদন ক্রমশ বাড়ছে। ভুট্টার ক্রমবর্ধমান সম্প্রসারণ একটি পরিসংখ্যান থেকে সহজেই বোঝা যায়।  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০০২-০৩ সালে এ দেশে মোট ভুট্টার উৎপাদন ছিল মাত্র ১৭৫ লাখ টন। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে ভুট্টার মোট আবাদি জমি ও উৎপাদনের পরিমাণ ১৭৪ লাখ হেক্টর এবং ১১৩৭ লাখ মেট্রিক টন ছিলো। যা বেড়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে যথাক্রমে ৫৫৪৪ লাখ হেক্টর জমিতে ৫৪০২৫ লাখ মেট্রিক টন এ দাঁড়িয়েছে এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭৭৫৪৭ লক্ষ হেক্টর জমিতে ৫৬৯২৯ লক্ষ মেট্রিক টন (সূত্র : ডিএই ওয়েবসাইট)।
উন্নত দেশে ভুট্টার বহুমুখী ব্যবহার থাকলেও দেশে শুধু প্রাণি, পোল্ট্রি ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহƒত হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত ভুট্টার অধিকাংশই (৯৫%) প্রাণি, হাঁস-মুরগির ফিড ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহƒত হয়। তবে, ইদানীং খই ভুট্টা, মিষ্টিভুট্টা (৫%) হিসেবেও মানুষের খাদ্য হিসেবে বেশ গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। উন্নত বিশ্বে ভুট্টা থেকে স্টার্চ, ইথানল, জৈব জ্বালানি, তেল উৎপাদনসহ রয়েছে আরো বহুমুখী ব্যবহার। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৫২টি দেশে ভুট্টা থেকে উৎকৃষ্ট মানের ভোজ্যতেল উৎপাদিত ও ব্যবহƒত হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশের টাংগাইল জেলায় স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান ভুট্টার তেল উৎপাদনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
ভুট্টার তেল বা (ঈড়ৎহ ঙরষ )
ভুট্টার দানা থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় উন্নত নিষ্কাশন যন্ত্রে রিফাইনিং করে হালকা হলুদ বর্ণের ভুট্টার তেল সংগ্রহ করা হয়।
ভুট্টার দানা থেকে তেল নিষ্কাশন করার প্রক্রিয়া
সর্বপ্রথম ১৮৯৮-৯৯ সালে ইবহলধসরহ ঐঁফহঁঃ ধহফ ঞযবড়ফড়ৎব ঐঁফহঁঃ নামে দুইজন বিজ্ঞানী বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদনের জন্য ভুট্টার তেল নিষ্কাশন যন্ত্র উদ্ভাবন করেন এবং সে বছরই প্রথম   বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হয়।
মোচা থেকে দানা আলাদা করার পর সাধারণত ০৩ টি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দানা থেকে তেল নিষ্কাশন করা হয়।
১. হেক্সেন নিষ্কাশন (ঐবীধহব বীঃৎধপঃরড়হ) ভুট্টা থেকে তেল নিষ্কাশন করতে হেক্সেন মিশ্রিত দ্র্রবণে দানাগুলোকে ধৌত করা হয়। ফলে হেক্সেনের প্রভাবে দানা থেকে তেল বের হয়।
২. দুর্গন্ধ দূরীকরণ (উবড়ফড়ৎরুধঃরড়হ) প্রক্রিয়া : অনাকাক্সিক্ষত গন্ধ ও স্বাদ ভুট্টার তেল থেকে দূর করার জন্য কিছু স্বাস্থ্যকর উপাদান মিশ্রিত করা হয়।
৩. শীতলীকরণ (ডরহঃবৎরুধঃরড়হ) প্রক্রিয়া : মোম এবং দানা জাতীয় সম্পৃক্ত ফ্যাট (ডধীবং ধহফ ংধঃঁৎধঃবফ ংড়ষরফ ভধঃং) দূর করার জন্য রিহঃবৎরুধঃরড়হ করা হয়, যাতে নিম্ন তাপমাত্রাতেও এই তেল তরল থাকে কোনোরূপ জমাট বাধতে যেন না পারে।
এই তিনটি ধাপ সম্পন্ন করে প্যাকেট বা বোতল জাত করা হয় ঈড়ৎহ ঙরষ বা ভুট্টা তেল।
ভুট্টার তেলের পুষ্টিগুণ
মোট চর্বি (লিপিড) ১৩.৬ গ্রাম (৩৮.৮৬%), ভিটামিন ই (আলফা টকোফেরল) ১৯.৪ মিগ্রাম ( ১২.৯৩%), ভিটামিন কে (ফাইলোকুইনোন) ০.৩ মাইক্রোগ্রাম (০.২৫%)। ০১ চা চামচ (১৩৬ গ্রাম) ভুট্টার তেলে ক্যালরি আছে ১২২ কিলোক্যালরি। বিজ্ঞানী মার্ক ২০১৫ সালে তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, ভুট্টার তেলে ফ্যাটি এসিড বিদ্যমান আছে। যেমন: মাইরিস্টিক এসিড ০.১-১.৭%, পালমিটিক এসিড    ৮-১২%, স্টিয়ারিক এসিড-২.৫-৪.৫%, হেক্সাডেসোনিক এসিড           ০.২-১.৬%, ওলিক এসিড ১.৯-৪.৯% এবং লিনোলেয়িক এসিড ৩.৪-৬.২% আছে।
ভুট্টার তেলের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
ভুট্টার তেলে কোনো আমিষ বা শর্করা নেই, শতকরা ১০০ ভাগই চর্বি আছে। যার পুষ্টিমান অন্যান্য তেলের চেয়ে বেশি। ভুট্টা তেলের সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড ও অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলের সমপরিমাণ। ভুট্টা তেলে ভিটামিন ই (টোকোফেরল) এর পরিমাণ সূর্যমুখী তেলের চেয়ে বেশি। বিশেষ করে ভুট্টা তেলে ভিটামিন কে (১.৯ মাইক্রো গ্রাম) রয়েছে যেখানে সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলে তা অনুপস্থিত। এছাড়াও যেহেতু ভুট্টার তেলে দুই ধরনের অস্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড (গড়হড়ঁহংধঃঁৎধঃবফ ভধঃঃু ধপরফং ধহফ ঢ়ড়ষুঁহংধঃঁৎধঃবফ ভধঃঃু ধপরফং) থাকে, যা হার্টজনিত অসুখের ঝুঁকি কমায়।
এছাড়াও ভুট্টার তেলে ফাইটোস্টেরল (ঢ়যুঃড়ংঃবৎড়ষ) উপাদান থাকে, যা কোলেস্টেরলের কম শোষণে (ধনংড়ৎন) সাহায্য করে।
ভুট্টার তেলে ৫৫% পলি-অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড ও ৩০% মনো-অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড থাকে। উচ্চ মাত্রার পলি-অস্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড থাকায় তা হাইপারটেনশনজনিত রোগীদের রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে করে। গবেষণা বলছে, ভুট্টার তেল রক্ত চাপ (নষড়ড়ফ ঢ়ৎবংংঁৎব) ১০ কমিয়ে আনে। এইটা খউখ (ইধফ  পযড়ষবংঃবৎড়ষ)  মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ভুট্টার তেলে  ভিটামিন ই ও লিনোলিয়িক এসিড (ষরহড়ষবরপ ধপরফ) থাকায় এই তেল ম্যাসেজ ওয়েল (সবংংধমব ড়রষ) হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ৫৯% (ষরহড়ষবরপ ধপরফ) থাকায় এ তেল খুব সহজেই ত্বক কোষে প্রবেশ করে। ভিটামিন-ই ধহঃর-রহভষধসসধঃড়ৎু ধহঃরড়ীরফধহঃ  হিসেবে কাজ করে।
সপ্তাহে ১-২ বার ভুট্টার তেল চুলে ব্যবহার করলে চুল উজ্জ¦ল, মজবুত ও শক্ত হয়, এমনকি খুশকি দূর করতেও সাহায্য করে।
এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন পশু পাখির চিকিৎসায় ভুট্টার তেল ব্যবহার করা যায়।
ভুট্টার তেলের ব্যবহার
মার্জারিন (সধৎমধৎরহব) এর একটি উপাদান হিসেবে এই তেল ব্যবহার করা হয়। বেশি ফ্রাই যুক্ত রেসিপি যেমন- ফ্রেন্স ফ্রাই (ঋৎবহপয ভৎরবং) তৈরিতে এই তেল ব্যবহার করা হয়। বিস্কুট, চানাচুর, কেক, মাখন, বেকিং পাউডার বা পাউরুটি  তৈরিতে ভুট্টার তেল ব্যবহার করা হয়। সালাদ ও ম্যাইনোজ (ংধষধফ ধহফ সধুড়হহধরংব) তৈরিতেও ভুট্টার তেল ব্যবহƒত হচ্ছে। কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। লোহা জাতীয় পদার্থের ক্ষয়রোধে এই তেল ব্যবহার করা হয়। নাইট্রোগিøসারিন তৈরিতে, সাবান, স্যাম্পু, লুব্রিক্যান্ট, গ্যাসোনিল শিল্পে ভুট্টার তেল ব্যবহার করা হয়। সাবান, কালি, পেইন্ট, ইরেজার তৈরিতেও ভুট্টার তেল ব্যবহƒত হয়। বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস প্রোডাক্ট উৎপাদনেও ভুট্টার তেল ব্যবহার করা হয়। এমনকি বায়োডিজেল উৎপাদন প্রযুক্তিতেও এই তেল ব্যবহƒত হয়।
ভুট্টার তেল ব্যবহারে সতর্কতা
ভুট্টার তেলে উচ্চ মাত্রার লিনোলেয়িক এসিড (ষরহড়ষবরপ ধপরফ) আছে, সেই তুলনায় খুব কম পরিমাণে ওমেগা-৩ উপাদান আছে। গবেষণা বলে, উচ্চ মাত্রার ওমেগা-৬ ও কম মাত্রার ওমেগা-৩ শরীরে বিভিন্ন রকম প্রদাহ (রহভষধসসধঃরড়হ) যেমন- ব্রণ (ধপহব), হাড়ে ব্যাথা (ধৎঃযৎরঃরং) সৃষ্টি করতে পারে। স্বাভাবিক সুস্থ মানব শরীরে ওমেগা-৬ ও ওমেগা-৩ এর অনুপাত থাকা উচিত ৪ঃ১, সেখানে ভুট্টার তেলে আছে ৪৬ঃ১। অতিরিক্ত পরিমাণ ভুট্টার তেল সেবন করলে পরিপাকতন্ত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রার ভুট্টার তেল লিভার ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী হতে পারে। যেসমস্ত মহিলাদের মাসিকজনিত (ঢ়ড়ংঃসবহড়ঢ়ধঁংধষ) সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই তেল সমস্যা হতে পারে।  উচ্চ মাত্রার ভুট্টার তেল সেবন মহিলাদের স্তন ক্যান্সার (নৎবধংঃ পধহপবৎ) এর সম্ভবনাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। ভুট্টার তেল উচ্চমাত্রায় রিফাইনিং করে উৎপাদন করা হয় তাই অনেক সময় অধিক তাপে ক্ষতিকর অ্যাক্রিলামাইড (ধপৎুষধসরফব) উৎপাদিত হতে পারে, তাই সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। ৪৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ২৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পড়ৎহ ড়রষ সাধারণত নঁৎহ হয় (ংসড়শরহম ঢ়ড়রহঃ) তাই বিষয়টাও ভোক্তা পর্যায়ে ব্যবহারের আগে গবেষকদের ভাবনায় রয়েছে।
পরিশেষে বলতে চাই, দেশে বর্তমানে উৎপাদিত ৫৪ লাখ টন ভুট্টা থেকে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টন ভুট্টাতেল প্রতি বছর আহরণ করা সম্ভব যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। তাই ভূট্টার তেলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দূরীভূত করে সুন্দর হায়াজেনিক (যুমরবহরপ) প্রক্রিয়ায় তেল উৎপাদন করতে পারলে তা আমাদের দেশের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনবে এবং বিশাল তেলের ঘাটতি থেকে আমাদের মুক্তি দিবে।


কৃৃষি সম্প্রসারণ অফিসার, বাঘা, রাজশাহী, মোবাইল : ০১৭৬৭০০৭২৮০, ই-মেইল : kamrulgepb13@gmail.com

 

বিস্তারিত
সোলার সেচ ব্যবস্থায় নতুন সংযোজন ডুয়েল পাম্পিং সিস্টেম

সোলার সেচ ব্যবস্থায়
নতুন সংযোজন ডুয়েল
পাম্পিং সিস্টেম

প্রকৌশলী এস এম শহীদুল আলম

কৃষি প্রধান বাংলাদেশের খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের অবদান অপরিসীম। ফসল উৎপাদনে সেচ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। ভ‚গর্ভস্থ পানির ভারসাম্য রক্ষা করে ভূপরিস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদার যোগান দেয়ার লক্ষ্যে কৃষিতে আধুনিক ও টেকসই প্রযুক্তির ব্যবহার করে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ ও সংযোজনের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন অঞ্চলভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী ভ‚পরিস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিএডিসি কর্তৃক ‘বৃহত্তর বগুড়া ও দিনাজপুর জেলা ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন’ শীর্ষকপ্রকল্প গ্রহণ করা হয় এবং বগুড়া, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় ৪ বছর মেয়াদে বাস্তবায়ন হচ্ছে।
প্রকল্প এলাকায় ৮৫টি বৈদ্যুতিক এলএলপি ও ১০টি সৌরচালিত সেচযন্ত্র স্থাপন, ১২১ কিমি. ভ‚গর্ভস্থ সেচনালা নির্মাণ, ২৫০ কিমি. খাল পুনঃখনন/সংস্কার, ১৮৫টি বিভিন্ন আকারের হাইড্রোলিক স্ট্রাকচার নির্মাণ এবং ৪৫০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে প্রকল্পের আওতায় মূল উদ্দেশ্যসমূহ অর্জন হবে। যেমন-
সেচ অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিক সেচ প্রযুক্তি প্রয়োগ করে  ১৮৩৪৩.১০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় ৮২৫৪৩.৯৫ মে. টন খাদ্যশস্য উৎপাদন; প্রকল্প এলাকায় খাল/নালা খনন/পুনঃখননের মাধ্যমে ভ‚পরিস্থ পানি নির্ভর সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পানি নিষ্কাশন ত্বরান্বিতকরণ। ভ‚পরিস্থ পানির সাহায্যে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, সেচ খরচ হ্রাস, পতিত জমি সেচের আওতায় আনা, জলাবদ্ধতা হ্রাস, কৃষকের বার্ষিক আয় বৃদ্ধি ও পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে যা দারিদ্র্য বিমোচনে প্রকল্পের কার্যক্রম ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখছে। এছাড়া পুনঃখননকৃত খালে হাইড্রোলিক স্ট্রাকচার নির্মাণের ফলে খালে পানি ধারণ বৃদ্ধি পাবে ও খালের পাড়ে বৃক্ষরোপন করায় পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হওয়ায় উৎপাদিত শস্য সহজেই পারাপার, কৃষি উপকরণ মাঠে আনা নেয়া সম্ভব হচ্ছে।
প্যারিস চুক্তি অনুসারে, ২১০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনতেই হবে। এতে অদূর ভবিষ্যতে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক সেচযন্ত্র এবং জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দ্বারা পরিচালিত সেচযন্ত্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য জ্বালানি দ্বারা পরিচালিত সেচযন্ত্র কৃষি খাতে এনে দিতে পারে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বৃহত্তর বগুড়া ও দিনাজপুর জেলা ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১০টি ০.৫ কিউসেক সোলার এলএলপি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সৌরশক্তি ব্যবহার করে নদী থেকে সেচ দেয়া ভ‚পরিস্থ’ পানি ব্যবহারের উত্তম উপায়। এলক্ষ্যে এ অঙ্গটি বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প এলাকায় পর্যবেক্ষণ করা হয়। ভ‚পরিস্থ পানি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নদ-নদী, খাল-নালা, বিলে অবস্থান করে অর্থাৎ বর্ষা মৌসুম (জুন-সেপ্টেম্বর) এবং পরবর্তী সময়ে সাগর মহাসাগরে পতিত হয়। ফলে ভ‚পরিস্থ জায়গায় কৃষি ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি প্রায় তলানীতে চলে যায়। এতে এলএলপি চালনা সম্ভব হয় না। তখন সোলার স্থাপনা সম্পূর্ণভাবে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকবে এবং জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হবে না এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ সমস্যার সমাধানের জন্য এবং সৌরশক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের লক্ষ্যে প্রকল্পে সোলার এলএলপিতে ডুয়েল সিস্টেম পাম্প সংযোজনের নতুন একটি আইডিয়া আসে। প্রকল্প এলাকার ০৮টি স্থানে ডুয়েল পাম্পিং সিস্টেমযুক্ত সোলার পাম্প এবং ০২টি স্থানে সৌরশক্তি সম্পন্ন ডাগওয়েল স্থাপনের কাজ এ সম্পন্ন করা হয়েছে।
সৌরশক্তির একটি সাধারণ মডিউল লম্বায় এক মিটার ও চওড়ায় ১.৬৫ মিটার। সৌরশক্তির এক সারি মডিউল স্থাপন করে দুই সারির মাঝখানে জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছে। অর্থাৎ এক সারি মডিউল বসানোর পর জায়গা ফাঁকা রেখে আবার এক সারি মডিউল বসানো হয়েছে। এর ফলে মাঠের ফসল পর্যাপ্ত আলো পাবে এবং মডিউল স্থাপনে ব্যবহৃত জমির ফসল উৎপাদন ক্ষমতা গড়ে ৭০ শতাংশ অক্ষুণœ থাকবে। এছাড়া কৃষিবান্ধব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর জন্য উক্ত জমির মালিকদেরকে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করে প্রণোদনা হিসেবে বিভিন্ন জাতের বিএডিসির সবজি বীজ প্রদান করা হয়েছে।
সেচ ব্যবস্থাপনা : ফসল উৎপাদনে সামগ্রিকভাবে সেচ ব্যবস্থাপনা একটি সমন্বিত কার্যক্রম। সেচ ব্যবস্থাপনা সেচের পানির উৎস, সেচযন্ত্র, পানির পরিবহণ ও বিতরণ, সঠিক সময় এবং যথাযথ প্রয়োগ পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে। তন্মধ্যে পানির পরিবহণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তাই পরিবহণ ও যথাযথ প্রয়োগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে সেচ খরচ অনেকাংশে কমানো সম্ভব। বর্তমানে দেশের অধিকাংশ সেচযন্ত্র মাঠ পর্যায়ে কাঁচা সেচনালার মাধ্যমে পানি পরিবহণ করা হয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে সেচযন্ত্রের কাঁচা সেচনালায় পরিবহণ অপচয় প্রায় ৪৭% এবং শাখা ও উপশাখা সেচনালায় অপচয় প্রায় ২৩%। ফলে কাঁচা সেচনালায় পানি পরিবহণের কারণে কমান্ড এরিয়ায় মোট অপচয় ৫০-৭০% (বারি বুকলেট-১৯৯৭)। কাঁচা সেচনালায় সাধারণত বাষ্পীয়ভবন (ঊাধঢ়ড়ৎধঃরড়হ), অনুস্রাবণ (চবৎপড়ষধঃরড়হ), চোয়ানো (ঝববঢ়ধমব) এবং আগাছা এর মাধ্যমে অপচয় হয়ে থাকে। ফলে সেচের পরিবহণ দক্ষতা কমে যায়। অপরদিকে, কাঁচা সেচনালায় তৈরিতে মোট কমান্ড এরিয়ার প্রায় ২-৪% আবাদী জমি অপচয় হয় (অ.গ. গরপযধবষ, ওৎৎরমধঃরড়হ ঞযবড়ৎু ধহফ চৎধপঃরপব)। (সূত্র : মো. জিয়াউল হক, প্রধান প্রকৌশলী (ক্ষুদ্রসেচ), বিএডিসি, ঢাকা)। সৌরশক্তি চালিত সেচযন্ত্রে জ্বালানি খরচ না থাকলেও সেচের পানির অপচয় রোধ করা অত্যাবশ্যক। পানি ও আবাদি জমির অপচয় রোধের লক্ষ্যে প্রতিটি সৌরশক্তি চালিত সেচযন্ত্রে ৬০০ মিটার করে    ভ‚গর্ভস্থ সেচনালা নির্মাণ করা হয়েছে।
একসেট সৌর প্যানেল দ্বারা চলবে পর্যায়ক্রমে দুই পানির সোর্সের দু’টি পাম্প। এলক্ষ্যে এক স্থানে স্থাপন করা হয়েছে ভার্টিক্যাল সারফেস পাম্প ও সাব-মার্জড পাম্প। প্রতিটি পাম্প চালনার জন্য কন্ট্রোল পযধহমব সিস্টেম ও ডবষষ ঢ়ৎড়নব ংবহংড়ৎ ভড়ৎ ফৎু ৎঁহ সংযোজন করা হয়েছে। এতে নদীতে যতদিন পানি থাকবে ততদিন ভ‚পরিস্থ পানি ব্যবহারের জন্য সারফেস পাম্প চলবে এবং একেবারে শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি তলানীতে চলে গেলে অটোমেটিক সিস্টেমে সাব-মার্জড পাম্প দ্বারা পানি উত্তোলন হবে। অর্থাৎ যখন ভ‚পরিস্থ পানি পর্যাপ্ত থাকবে তখন ব্যবহৃত হবে সারফেস পাম্প আর যখন ভ‚পরিস্থ পানি থাকবে না তখন ব্যবহৃত হবে সাবমার্জড পাম্প। এতে   কৃষকের ফসলের জমিতে সেচ প্রদান অব্যাহত থাকবে।
সৌরশক্তি চালিত পাম্পগুলো পরিচালনার জন্য দু’টি পদ্ধতি সংযোজন রয়েছে। একটি সরাসরি সরেজমিন উপস্থিত হয়ে পাম্প পরিচালনা এবং আর একটি রিমোট সিস্টেম সেন্সরের মাধ্যমে পরিচালনা করা। সিস্টেমে লগইন করে রিমোট সিস্টেম সেন্সরের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোন স্থান হতে পাম্পটি পরিচালনা করা এবং সোলার ওপাম্প পরিচালনা সংক্রান্ত যাবতীয় ডাটা পাওয়া সম্ভব। এজন্য প্রতিটি স্কিমে চঝ ঈড়সসঁহরপধঃরড়হ ্ চঁসঢ় গধহধমবৎ এর জন্য সংযোজন করা হয়েছে জবসড়ঃব ঈড়সসঁহরপধঃরড়হ উবারপব ্ ঈষড়ঁফ গধহধমবসবহঃ.
ডুয়েল পাম্প সংযোজন সেচ ব্যবস্থাপনায় একটি সম্পূর্ণ নতুন আইডিয়া এবং এটি ‘বৃহত্তর বগুড়া ও দিনাজপুর জেলা ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন প্রকল্প’ এর একটি উদ্ভাবন। সকলের সহযোগিতায় প্রকল্প এলাকার সংশ্লিষ্ট সকল প্রকৌশলীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এ নতুন আইডিয়াটি বাস্তবায়ন হয়েছে। যা ব্যবহৃত হবে কৃষি ও কৃষকের কল্যাণে। য়

তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক, বিএডিসি, বগুড়া। মোবাইল : ০১৭১৮৭৮১৯৭৯, ই-মেইল : aeirrigation2badc@gmail.com

বিস্তারিত
চুইঝালের চারা উৎপাদনে সাফল্য রূপসার আদর্শ কৃষক মহব্বত আলী

চুইঝালের চারা উৎপাদনে সাফল্য রূপসার আদর্শ কৃষক মহব্বত আলী

মোঃ আবদুর রহমান

রূপসী রূপসা খুলনা জেলার একটি কৃষি প্রধান উপজেলা। রূপসা নদীর নাম অনুসারে এ উপজেলার নামকরণ হয়েছে। রূপসা উপজেলার শতকরা ৮০ ভাগ লোকই কৃষির সাথে সম্পৃক্ত। এর আয়তন ১২০.১৫ বর্গকিমি. এবং আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৭০৫৮ হেক্টর। ফসলের নিবিড়তা ১৫৭%। ধান রূপসা উপজেলার প্রধান ফসল। এছাড়া বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি, তরমুজ, বাঙ্গি, ডাল, তেল, মসলা ও ফল জাতীয় ফসল এ উপজেলায় চাষ হয়ে থাকে। রূপসা উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া মসলাজাতীয় ফসল বিশেষ করে চুইঝাল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা শৃঙ্খলহীন হয়ে উঠতে পারে। দেখা দিতে পারে খাদ্য সংকট। আর সে প্রভাব বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশেও এসে পড়ার আশঙ্কা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এমন পরিস্থিতি মাথায় রেখে  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত দূরদর্শী ঘোষণা প্রদান করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার আলোকে রূপসা উপজেলার আলাইপুর গ্রামের আদর্শ কৃষক মহব্বত আলী শেখ এ বছর বসতবাড়ির আঙিনায় চুইঝালের চারা (কাটিং) উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন। তার বাড়িতে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে পলিথিনের শেডের নিচে সারি সারি সাজানো পলিব্যাগে চুইঝালের সবুজ চারা।
মহব্বত আলী শেখ হতে জানা যায়, গত বছর মহামারি করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে হতাশার জীবন নিয়ে বাড়িতে কর্মহীন সময় কাটছিল তার। কী করবেন তা ভেবে পাচ্ছিলেন না। শেষে উপজেলা কৃষি অফিস তার পথ খুলে দেয়। এ সময় তিনি কৃষি অফিস থেকে চুইঝাল চাষের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর এর কাটিং থেকে চারা উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ হন। তারপর বাজার থেকে পেন্সিল ও আঙুলের মতো মোটা চুইঝালের লতা সংগ্রহ করে তা তেরছাভাবে কেটে এর কাটিং (দুই গিঁটসহ) বৈশাখ মাসের প্রথম দিকে পলিব্যাগে রোপণ করেন। ১৫ সেমি. লম্বা ও ১০ সেমি. প্রস্থ মাপের পলিব্যাগে অর্ধেক জৈবসার ও অর্ধেক ঝুরঝুরে উর্বর মাটি ভরে তাতে একটি করে কাটিং রোপণ করা হয়। কাটিং এর তেরছা অংশ (একটি গিঁটসহ) পলিব্যাগের মাটির নিচে রাখা হয়। আর মাটির ওপরের অংশে ১ বা ২টি গিঁট দেয়া হয়। কাটিং পলিব্যাগে রোপণের পর এর গোড়ার মাটি ভালোভাবে চেপে দিতে হয় যেন ভেতরে ফাঁকা না থাকে। তারপর হালকা পানি সেচ দিয়ে গোড়ার মাটি ভালোভাবে ভিজিয়ে দিয়ে থাকে। এছাড়া বর্ষা থেকে রক্ষার জন্য পলিথিনের শেড দিয়ে পলিব্যাগের চারা ঢেকে রাখা হয়। পলিব্যাগের মাটি বেশি শুকিয়ে গেলে মাঝে মাঝে ঝাঁঝরি দিয়ে হালকা সেচ দিতে হয়। পানি সেচের ফলে পলিব্যাগে যাতে পানি জমে যেতে না পারে সেজন্য পলিব্যাগের তলা থেকে ৩ সেমি. ওপরে চারদিকে বেশ কয়েকটি ছিদ্র করে দেয়া হয়।
কাটিং রোপণের ৩০-৪৫ দিন পর কুঁড়ি ও পাতা এবং ৫৫-৬০ দিন পর শিকড় গজায়। চারার পাতা পচা রোগ প্রতিকারের জন্য রিডোমিল গোল্ড এম জেড ৬৮ ডবিøউজি (প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম) নামক ছত্রাকনাশক চুইঝালের চারার পাতায় নিয়মিত স্প্রে করা হয়। এভাবে তিনি পলিব্যাগে চুইঝালের চারাগুলোর পরম যতœ করেছেন। এতে কাটিং থেকে কুঁড়ি ও ধীরে ধীরে সবুজ পাতা বের হয়ে ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
বসতবাড়ির আঙিনায় মোট ৪ শতক জমিতে শেডের নিচে পলিব্যাগে তিনি প্রায় আড়াই হাজার চুইঝালের চারা উৎপাদন করেছেন। লতা ও পলিব্যাগ ক্রয়, জৈবসার ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে এতে প্রায় ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পলিব্যাগে কাটিং রোপণের দুই থেকে আড়াই মাস পর থেকে তিনি চুইঝালের চারা বিক্রি শুরু করেছেন। প্রতিটি চারা ৪০ টাকা হিসেবে এ পর্যন্ত সাড়ে চারশ’ চারা ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন এবং আরও প্রায় ২৮-৩০ হাজার টাকার চারা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, কাজদিয়া শাখা থেকে ৩০ হাজার টাকা পুঁজি হিসেবে ঋণ নিয়ে চারা উৎপাদন শুরু করেন। চুইঝালের চারায় ভালো দাম পাওয়ায় মহব্বত আলীর পরিবার অনেক খুশি। এ সাফল্য দেখে এলাকার অনেক কৃষক এর চারা উৎপাদনে উৎসাহিত হয়েছেন। তিনি এখন চুইঝালের চারা উৎপাদনের একজন সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে রূপসা উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চুইঝালের চারা উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি অফিস থেকে মহব্বত আলীকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও ব্যাংক খেকে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অধিকন্তু, চুইঝালের চারা সম্প্র্রসারণের লক্ষ্যে উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে মহব্বত আলীর কাছ থেকে কিছু চারা ক্রয় করে এ উপজেলার আগ্রহী  কৃষকদের মাঝে তা বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। উল্লেখ্য, চুইঝালের চারা উৎপাদন ও এর চাষ খুবই লাভজনক। এ ফসল চাষের জন্য খুব বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। অল্প পুঁজি ও কম সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় গত তিন বছর ধরে রূপসা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চুইঝালের চাষ বেড়েছে।  
চুই মসলাজাতীয় ফসল। এর কাÐ, শিকড় ও শাখা-প্রশাখা সবই মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর কাÐ বা লতা কেটে টুকরো টুকরো করে মাছ বা মাংস রান্নায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। রান্নার পর গলে যাওয়া সেসব টুকরো চুষে বা চিবিয়ে খাওয়া হয়। খুব ঝাল হলেও এর একটা অপূর্ব স্বাদ ও ঘ্রাণ আছে। বিভিন্ন সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানসহ ঈদ পার্বণে চুইঝালের কদর অনেকগুণ বেড়ে যায়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জেলা খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল এবং যশোর এলাকায় চুইঝাল মসলা হিসেবে খুব  জনপ্রিয়।
চুইঝালে ০.৭ শতাংশ সুগন্ধি তেল রয়েছে। অ্যালকালয়েড ও পিপালারটিন আছে ৫ শতাংশ। তাছাড়া পরিমাণ মতো গøুকোজ, ফ্রুক্টোজ, গøাইকোসাইডস, সিজামিন ও পিপলাসটেরল রয়েছে। এর কাÐ, পাতা, শিকড়, ফুল ও ফল সবই ওষুধি গুণসম্পন্ন। চ্ইুঝাল গ্যাস্ট্রিক সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। খাবারের রুচি বাড়াতে ও ক্ষুধামন্দা দূর করতে এটি কার্যকর ভ‚মিকা রাখে। পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহ দূর করতে এবং œায়ুবিক উত্তেজনা ও মানসিক অস্থিরতা প্রশমনে চুইঝাল বেশ উপকারী। এছাড়া শ্বাসকষ্ট, কফ, কাশি, ডায়রিয়া, শারীরিক দুর্বলতা ও গায়ের ব্যথা দূর করতে চুই  ভালো কাজ করে।
চুইঝাল লতা জাতীয় অর্থকরী ফসল। এর কাÐ ধূসর এবং পাতা পান পাতার মতো সবুজ রঙের। চুইয়ের উদ্ভিদতাত্তি¡ক নাম চরঢ়বৎ ঈযধনধ। পরিবার পিপারেসি (চরঢ়বৎধপবধব)। চুই সাধারণত দুই প্রকার। একটির কাÐ বেশ মোটা ২০-২৫ সেমি., অন্যটির কাÐ চিকন, আকারে ২.৫-৫ সেমি. পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর গাছ ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি এবং পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত ও ছায়াময় উচুঁ জমিতে সাধারণত চুই চাষ করা হয়। সাধারণ ফলবাগান বা বৃক্ষ বাগানের মাটি এফসল চাষের জন্য উপযোগী।
নার্সারিতে পলিব্যাগে কাটিং থেকে উৎপন্ন দুই মাস বয়সের চুইঝালের চারা বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ (এপ্রিল-মে) এবং আশ্বিন-কার্তিক (অক্টোবর-নভেম্বর) মাসে রোপণ করতে হবে। এজন্য আম, নারিকেল, সুপারি, মেহগনি এজাতীয় গাছের গোড়া থেকে   ২৫-৩০ সেমি. দূরে ৪৫ সেমি. লম্বা, ৪৫ সেমি. চওড়া ও ৪৫ সেমি. গভীর করে গর্ত তৈরি করতে হয়। তারপর প্রতিটি গর্তের ওপরের স্তরের মাটির সাথে পচা গোবর বা আবর্জনা পচা সার ৫ কেজি, ১০০ গ্রাম টিএসপি ও ১২৫ গ্রাম এমওপি সার ভালোভাবে মিশিয়ে গর্তটি পুনরায় ভরাট করতে হবে। সার মেশানো মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট করে ৮-১০ দিন পর গর্তের ঠিক মাঝখানে চুইঝালের চারা (কাটিং) রোপণ করে চারপাশের মাটি হাত দিয়ে হালকাভাবে চেপে বসিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনবোধে গোড়ায় আরও কিছু শুকনো মাটি দিয়ে চেপে বসিয়ে দিতে হবে। যাতে চারার চারপাশের মাটি জমির সমতল থেকে একটু উচুঁ ও ঢালু অবস্থায় থাকে। চুই রোপণের এক বছরের মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হয়। তবে ভালো ফলনের জন্য ৫-৬ বছরের গাছ উত্তম। এ বয়সের একটি গাছ থেকে ১০-১৫ কেজি চুই পাওয়া যায়। একজন সাধারণ কৃষক মাত্র ২-৪টি চুই গাছের চাষ করে নিজের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি চুই বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। চুই শিকড় থেকে কাÐ পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। বাজারে প্রতি কেজি চুই বর্তমানে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
এখন চুই দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। চুইয়ের চাষ করে দারিদ্র্য বিমোচন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব। তাই সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল চুইঝাল চাষের ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া একান্ত প্রয়োজন। য়

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি অফিস, রূপসা, খুলনা। মোবাইল : ০১৯২৩-৫৮৭২৫৬, ইমেইল :rahman.rupsha@gmail.com

 

 

বিস্তারিত
লাভজনক কবুতর পালন

লাভজনক কবুতর পালন

কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ

 

পোল্ট্রির মধ্যে কবুতরের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন রকম। কবুতর প্রাচীনকাল থেকে পত্রবাহক ও শখ হিসেবে পালন করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে পালন করা হয়। অন্য পোল্ট্রির চেয়ে কবুতর পালনে পুঁজি কম লাগে, ঝুঁকি কম, পালন সহজ ও লাভ বেশি। পৃথিবীতে ১২০ জাতের কবুতর পাওয়া যায়। এর মধ্যে বাংলাদেশে ২০ প্রকার রয়েছে।
কবুতর পালনের গুরুত্ব
এক জোড়া কবুতর থেকে বছরে ১২ জোড়া বাচ্চা পাওয়া যায়। যার দাম ৩০০০ টাকা। কবুতরের বাচ্চা (২৮-৩০দিন) ও বড় কবুতরের চাহিদা ও দাম বেশি। কবুতর পালনে খরচ কম। বাইরের খাবার বেশি খায়। বাসস্থান খরচ কম। জায়গা কম লাগে। অতিরিক্ত জমি বা জায়গার প্রয়োজন হয় না। বাড়ির আঙিনা, শহরের উঁচু দালানের ছাদে, বারান্দায়, বেলকোনি ও সানশেডে পালন করা যায়। অতিরিক্ত শ্রমিক লাগে না। কাজের অবসরে পালন করা যায়। কবুতর ৪-৫ মাস বয়সে ডিম দেয়া শুরু করে। ১০- ১২ বছর বাঁচে। কবুতরের মাংস সুস্বাদু ও রোগীদের পথ্য। কবুতর পালন সহজ বলে ছাত্রছাত্রী, দুঃস্থ মহিলাসহ সব পেশার মানুষ পালন করতে পারে। কবুতর পালন করে বেকারত্ব দূর, আত্মকর্মসংস্থান বাড়তি আয় ও দারিদ্র্য বিমোচন হয়। কবুতরের বিষ্ঠা জৈবসার হিসেবে জমিতে ব্যবহার করা যায়। পুঁজি কম লাগে, দ্রæত বিনিয়োগ ফেরত পাওয়া যায়। কবুতরের রোগবালাই কম হয়। ১৮ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। কবুতর পালন আনন্দদায়ক। অনেকে শখ করে পালন করে। কবুতরের পালক শিল্প কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়। কবুতর উচ্ছিষ্ট খাদ্য ও পোকামাকড় খেয়ে বাড়িঘর পরিষ্কার রাখে।  এক হিসেবে দেখা গেছে, ৩০ জোড়া উন্নত জাতের কবুতর পালন করে প্রায় এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করে প্রথম বছর প্রায় ৮০ হাজার টাকার বাচ্চা বিক্রি করা যায়। দেশি জাতের ৩০ জোড়া কবুতর পালন করলে ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে প্রথম বছর ৫০ হাজার টাকার বাচ্চা বিক্রি  করা যায়।
 পালন পদ্ধতি
কবুতর পালন করা সহজ। ঘর নির্মাণ, খাদ্য ও রোগ ব্যবস্থাপনা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কবুতর মুক্ত পদ্ধতি, আবদ্ধ পদ্ধতি ও অর্ধআবদ্ধ পদ্ধতিতে পালন করা যায়।
মুক্ত পদ্ধতিতে পালন : সকালে কবুতর বাসা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সারাদিন এদিক সেদিক উড়ে বেড়ায় এবং খাদ্য খায়। মাঝে মাঝে ঘরে আসে। সন্ধ্যায় ঘরে আসে।
আবদ্ধ পদ্ধতিতে পালন : ঘরের মধ্যে আবদ্ধ করে কবুতর পালন করা হয়। ঘরের ভেতর কবুতরের বাসা বা খোপ তৈরি করে দিতে হয়। বহুতল খাঁচায় পালন করা যায়।
অর্ধআবদ্ধ পদ্ধতিতে পালন : বহুতল ঘর তৈরি করতে হয়। বড় আঙিনায় থাকে। দূরে যেতে পারে না।
আবাসস্থল
কবুতরের ঘর উঁচু স্থানে নির্মাণ করতে হয়। যাতে কুকুর বিড়ালসহ বিভিন্ন প্রাণী আক্রমণ করতে না পারে। ঘরে প্রচুর আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বৃষ্টির পানি, ঝড়ো বাতাস ও শৈত্যপ্রবাহ যাতে না ঢুকে সেদিকে খেয়াল রাখা। হাল্কা কাঠ, পাতলা টিন, বাঁশ বা প্যাকিং বাক্স দিয়ে ও রডের নেট দিয়ে খাঁচা করে ঘর তৈরি করা যায়। প্রতি জোড়া কবুতরের জন্য  ৩০ সেমি. লম্বা, ৩০ সেমি চওড়া এবং ৩০ সেমি উচ্চতা বিশিষ্ট ঘর তৈরি করতে হবে। কবুতরের ঘর পাশাপাশি এবং বহুতল বিশিষ্ট হতে পারে। প্রতি তলার ঘরের সামনে ১২ সেমি. বারান্দা এবং প্রতি ঘরে ১০ সেমি.ঢ১০ সেমি. মাপের একটি দরজা রাখতে হবে। ঘর দক্ষিণমুখী হলে ভালো হয়। ঘরের সামনে খাদ্য ও পানি পাত্র রাখতে হবে। ঘরের সামনে খড়কুটো ও শুকনো ঘাস রাখতে হবে। যাতে কবুতর ডিম পাড়ার স্থান তৈরি করতে পারে।
কবুতরের জাত
কবুতরের জাত দুই রকম। যথাÑ
ক. স্কোয়াব বা মাংস উৎপাদন জাত : হোয়াইট কিং, টেক্সোনা, সিলভার কিং, হাম কাচ্ছা, কাউরা, ডাউকা, গোলা, হোমার ইত্যাদি।
খ. চিত্তবিনোদন জাত : ময়ূরপঙ্খী, সিরাজি, লাহোরি, ফ্যানটেইল, গিরিবাজ, জালালি, লোটন ইত্যাদি অত্যন্ত জনপ্রিয় জাত। গিরিবাজ কবুতর উড়ন্ত অবস্থায় শূন্যে ডিগবাজি খেয়ে মানুষের চিত্তাকর্ষণ করে।
কবুতর চেনা    
পুরুষ কবুতর (পায়রা), স্ত্রী কবুতর (পায়রী) ও কবুতরের জাত চেনা প্রয়োজন। একই জাতের একই বয়সের পায়রার চেয়ে পায়রী একটু ছোট। পায়রার মাথায় একটু মুকুট থাকতে পারে। পায়রা ডাকে। পায়রা কে পায়রীর কাছে নিলে পায়রা ঘাড়ের ও দেহের লোম ফোলায়, ডাকে ও পায়রীকে আকৃষ্ট করে। পায়রী সবসময় শান্ত থাকে। পায়রীর পায়ুপথ ডিম¦াকার ও প্রশস্ত থাকে। পায়রা ও পায়রীর পাখার নতুন পালক ঝরে ৮-১০টি নতুন পালক গজালে প্রজনন ও ডিম পাড়ার সময় (বয়স ৪-৫ মাস) হয়। একে রানিং কবুতর বলে। উন্নত জাতের কবুতর আকারে বড় হয়। পায়ে সাধারণত পালক থাকে যা দেখতে সুন্দর।
প্রাপ্তিস্থান ও দাম
সরকারি-বেসরকারি খামার, হাট-বাজার ও দোকান থেকে কবুতর  কেনা যায়। সুস্থ, সবল, বয়স (৪-৫ মাস), জাত ও রঙ দেখে কবুতর কেনা উচিত। গ্রামের হাটে দেশি জাতের রানিং কবুতরের জোড়া ৫০০-৬০০ টাকা। উন্নত জাতের জোড়া ৮০০-১৫০০ টাকা। বিদেশি জাতের জোড়া ১৫০০-৩০০০ টাকা। রেসিংসহ বিভিন্ন শখের কবুতরের জোড়া ১৫০০-১ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
কবুতরের খাদ্য
কবুতর সাধারণত ধান, গম, মটর, খেসারি, ভুট্টা ভাঙা, সরিষা, কলাই, চাল, কাউন, জোয়ার ইত্যাদি খায়। প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক কবুতর দৈনিক গড়ে ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম দানাদার খাদ্য খেয়ে থাকে। ছোট কবুতরের জন্য ২০-৩০ গ্রাম ও মাঝারি কবুতরের জন্য ৩০-৩৫ গ্রাম খাদ্য প্রয়োজন। স্বাস্থ্য রক্ষা, দৈহিক বৃদ্ধি ও বংশবৃদ্ধির জন্য খাবারে ১৫% থেকে ১৬% আমিষ থাকা প্রয়োজন। কবুতর বাচ্চার দ্রæত বৃদ্ধি, হাড়শক্ত ও পুষ্টি এবং বয়স্ক কবুতরের সুস্বাস্থ্য এবং ডিমের খোসা শক্ত হওয়ার জন্য ঝিনুকের খোসা চ‚র্ণ, চুনা পাথর, ইটের গুঁড়ো,  হাড়ের গুঁড়ো, লবণ এসব মিশিয়ে গ্রিট মিকচার তৈরি করে খাওয়ানো প্রয়োজন। এ ছাড়াও প্রতিদিন কিছু কাঁচা শাকসবজি কবুতরকে খেতে দেয়া ভালো। প্রতি দুই সপ্তাহে ১ দিন বা ২ দিন যে কোন ধরনের ভিটামিন মিক্সচার খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়ালে কবুতরের রোগবালাই কম হয়। কবুতরকে প্রচুর পানি পান করাতে হবে। কবুতরের ৪ ধরনের সম্পূরক খাদ্য উপাদানের পরিমাণ টেবিল দ্রষ্টব্য।
এ খাদ্য উপাদানগুলো মিশিয়ে নিচের যে কোন এক বা একাধিক খাদ্য মিশ্রণ খাওয়ানো যেতে পারে। প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে খাদ্য দিতে হয়।
বাচ্চা উৎপাদন
পুরুষ ও স্ত্রী কবুতর একসাথে জোড়ায় বসে। প্রাকৃতিকভাবে এদের প্রজনন হয়। খুড়কুটো দিয়ে নিজেরাই বাসা তৈরি করে ডিম পাড়ে। ৪-৫ মাস বয়সে স্ত্রী কবুতর ২৮ দিন পর পর ২ দিন ব্যবধানে ২টি করে ডিম পাড়ে। নতুন জোড়া তৈরি করতে হলে পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ও স্ত্রী কবুতর এক ঘরে খাদ্য পানি দিয়ে ৭-১৪ দিন আবদ্ধ করে রাখতে হয়। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে ১৮ দিন সময় লাগে। স্ত্রী ও পুরুষ কবুতর পালাক্রমে ডিমে ‘তা’ দেয়। বাচ্চার দ্রুত বৃদ্ধির জন্য আলো বাতাসের ব্যবস্থা করতে হয়। কবুতরের ডিম থেকে কৃত্রিমভাবে বাচ্চা ফুটানো যায় না।
বাচ্চার খাদ্য
বাচ্চার বয়স ১০ দিন পর্যন্ত কোনো বাইরের খাদ্য খায় না। এ সময় মা-বাবার খাদ্যথলি থেকে দুধজাতীয় খাদ্য পরস্পরের মুখ লাগিয়ে গ্রহণ করে। বাচ্চার বয়স ২৮ দিন পর্যন্ত ঠোঁট দিয়ে খাদ্য দানা খেতে পারে না। মা-বাবা দানাদার খাদ্য ছোট টুকরা করে বাচ্চার মুখে তুলে খাওয়ে দেয়। ২৮ দিন পর বাচ্চার পাখা গজায়।
রোগ ব্যবস্থাপনা
কবুতরের খাদ্য ও পানির মাধ্যমে জীবাণু দেহের ভেতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন রকম রোগ হয়। জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা। যেকোন প্রাণী থেকে কবুতর দূরে রাখা। প্রতিদিন ঘর পরিষ্কার করা। টাটকা সুষম খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি দেয়া। অসুস্থ কবুতর পৃথক রাখা। সুস্থ কবুতরকে টিকা দেয়া। প্রয়োজনে প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপযোগী ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। য়

 

 

সহকারী অধ্যাপক, কৃষিশিক্ষা, শহীদ জিয়া মহিলা কলেজ, ভ‚ঞাপুর, টাঙ্গাইল, মোবাইল: ০১৭১১-৯৫৪১৪৩

 

বিস্তারিত
বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন শিং মাছের নিবিড় চাষ

বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন শিং মাছের নিবিড় চাষ

ড. এ এইচ এম কোহিনুর
আমাদের দেশে শিং অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মাছ। এ মাছে ফ্যাট/তেলের পরিমাণ কম এবং সহজপাচ্য উচ্চমানের প্রচুর আমিষ থাকায় সবার মধ্যে বিশেষ করে রোগীদের মধ্যে এ মাছের প্রচুর চাহিদা ও কদর রয়েছে। তা ছাড়া শিংকে জিয়ল মাছ বলা হয়ে থাকে আর জিয়ল মাছের চাহিদা অন্য সব মাছের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি। তাই রুইজাতীয় মাছের চেয়ে এদের বাজারমূল্যও অনেক বেশি। সাধারণত মৎস্য চাষিরা আধা নিবিড় চাষ পদ্ধতিতে শিং মাছ চাষ করে থাকে, সেক্ষেত্রে তারা তুলনামূলকভাবে বেশি   মুনাফা লাভ করে। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় যে, শিং মাছ মিশ্র চাষের চেয়ে নিবিড় চাষ বেশি লাভজনক। ময়মনসিংহ অঞ্চলের অনেক চাষি বিএফআরআই এর কারিগরি সহযোগিতায় শিং মাছের নিবিড় চাষ করে অধিক লাভবান হয়েছেন। এ প্রবন্ধে শিং মাছের নিবিড় চাষ পদ্ধতির প্রযুক্তি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি
শিং মাছের নিবিড় চাষের জন্য ২০-৬০ শতাংশ আয়তনের ছায়াযুক্ত পুকুর নির্বাচন করা যেতে পারে, যেখানে বছরে কমপক্ষে ৭-৮ মাস ১ থেকে ১.৫ মিটার পানি থাকে। শিং মাছ নিবিড় চাষের জন্য প্রথমত পুকুর ভালোমতো শুকাতে হবে। শুকানোর পর তলদেশের পচা কাদা অপসারণ করতে হবে এবং পাড় ভালোভাবে মেরামত করতে হবে। অতঃপর তলদেশ ৭ দিন রৌদ্রে শুকাতে হবে। পরে তলা থেকে ক্ষতিকারক        জীবাণু ধ্বংস করার জন্য প্রতি শতাংশে ১৫-২০ গ্রাম বিøচিং পাউডার ভালোভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। বিøচিং পাউডার প্রয়োগের ৩-৫ দিন পরে পুকুর বিশুদ্ধ পানি দিয়ে  ১.০ মিটার পরিমাণ পূর্ণ করতে হবে। পানি পূর্ণ করার পর শতাংশ প্রতি ০.৫-১.০ কেজি কলিচুন পানিতে মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করে পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। চুন প্রয়োগের ৩ দিন পরে পোনা মজুদের ব্যবস্থা নিতে হবে।        
পোনা আহরণ ও পোনা পরিবহণ
গুণগত মানসম্পন্ন সুস্থসবল পোনা সংগ্রহ এবং পরিবহণ শিং মাছ চাষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সাধারণত শিং মাছের পোনা হ্যাচারি হতে সংগ্রহ করা হয়। শিং মাছের পোনা পরিবহণকালে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে সেক্ষেত্রে পোনা পরিবহণের সময় প্লাস্টিক ড্রাম ব্যবহার করাই উত্তম। দূরত্ব অনুযায়ী প্রতি ড্রামে ৭-৯ সেমি. আকারের          ২-৩ কেজি পোনা অথবা ১০০০-১৫০০টি পোনা পরিবহণ করা যায়। এরূপভাবে ৫-৬ ঘণ্টা সময় দূরত্বে নির্বিঘেœ পোনা পরিবহণ করা যেতে পারে।
পোনা মজুদ
শিং মাছের নিবিড় চাষ ব্যবস্থাপনায় প্রতি শতাংশে ৩৫০০-৪০০০টি সুস্থসবল ও গুণগত মানসম্পন্ন পোনা   প্রস্তুতকৃত পুকুরে মজুদ করা যেতে পারে। পুকুরে পোনা মজুদকালীন সময় খুব সতর্কতার সাথে করতে হবে। পোনা পুকুরে মজুদের সময় অবশ্যই পোনা ভর্তি পাত্রের পানির তাপমাত্রা ও পুকুরের পানির তাপমাত্রা সমতায় এনে ভালোভাবে অভ্যস্থকরণ বা কন্ডিশনিং করতে হবে। সাধারণত কম তাপমাত্রায় সকালে বা সন্ধ্যায় পোনা মজুদ করাই উত্তম।
সম্পূরক খাদ্য
পোনা মজুদের পরের দিন থেকে প্রাণিজ প্রোটিন (৩২-৩৫%) সমৃদ্ধ সম্পূরক খাদ্য মাছের দেহ ওজনের শতকরা ১৫-৫% হারে প্রয়োগ করা যেতে পারে। সম্পূরক খাদ্য দুই ভাগ করে সন্ধ্যায় ও সূর্য উদিত হওয়ার আগে প্রয়োগ করতে হয়।
পানির গুণাগুণ
শিং মাছ চাষের জন্য পানির গুণাগুণ উপযোগী মাত্রায় থাকা বাঞ্ছনীয়। এ জন্য নিয়মিতভাবে পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করা আবশ্যক। অধিক উৎপাদন পেতে হলে পানির গুণাগুণ উপযোগী মাত্রায় রাখার জন্য কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে। যেমন-নিয়মিতভাবে পুকুরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে; পানির গভীরতা ৪-৫ ফুটের মধ্যে অবশ্যই রাখতে হবে; পানির  ঢ়ঐ সবসময় ৭.০ -৮.০ এর মধ্যে রাখা আবশ্যক; পানির স্বচ্ছতা ৩০ সেমি. এর ওপরে থাকতে হবে; অ্যামোনিয়ার মাত্রা ০.১ এর নিচে রাখতে হবে।
মজুদোত্তর ব্যবস্থাপনা
প্রতি  ১৫ দিন পরপর শিং মাছের নমুনায়ন করে সম্পূরক খাদ্যের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে; পোনা মজুদের এক মাস পর হতে প্রতি ১৫ দিন অন্তর শতাংশ প্রতি ১০০ গ্রাম চুন ও পরবর্তী ১৫ দিন পর ৪০০ গ্রাম লবণ প্রয়োগ করতে হবে; সপ্তাহে কমপক্ষে ০৩ দিন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে; পুকুরের আয়তন অনুসারে এক বা একাধিক স্থানে কচুরীপানার বেষ্টনী স্থাপন করতে হবে, পানির তাপমাত্রা বেড়ে গেলে এ বেষ্টনীর নিচে মাছ আশ্রয় নিতে পারবে; ক্ষতিকর প্রাণির প্রবেশরোধে পুকুরে জাল দিয়ে বেষ্টনী দিতে হবে;  
মাছ আহরণ ও উৎপাদন
সাধারণত পোনা মজুদের সাত মাস পর মাছ আহরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সময়ে মাছের গড় ওজন ৫৫-৬৫ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। পুকুর শুকিয়ে শিং মাছ আহরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ পদ্ধতিতে অনুসরণে পঞ্চাশ শতাংশ পুকুর হতে ৭ মাসে ৮০০০-৯০০০ কেজি শিং উৎপাদন করা যায়। এ পদ্ধতিতে ৭-৮ মাসে শিং মাছের নিবিড় চাষে ৫০ শতাংশ পুকুরে             ৩.৫-৪.০ লাখ টাকা ব্যয় করে এক ফসলে ০৮-০৯ লাখ  টাকা মুনাফা অর্জন করা সম্ভব (সারণি দ্রষ্টব্য)।
পরামর্শ
সফলভাবে শিং মাছের নিবিড় চাষ করার নিমিত্ত নি¤েœর বিষয়গুলো বিশেষভাবে অনুসরণ করতে হবে। বড় (৩-৪ গ্রাম) এবং একই আকারের শিং মাছের স্ত্রী পোনা মজুদ করতে হবে; নিয়মিত খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে কিন্তু সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না; নিয়মিত পানি পরিবর্তনের ব্যবস্থা থাকতে হবে; জাল টেনে মাছের নমুনায়ন না করাই উত্তম; উন্নতমানের ৩২-৩৫% প্রোটিনসমৃদ্ধ সম্পূরক খাবার সরবরাহ করতে হবে; নিয়মিত পানির গুণাগুণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং পানির পিএইচ সবসময় ক্ষারীয় মাত্রায় রাখতে হবে; পুকুরের গভীরতা তুলনামূলক বেশি রাখতে হবে; সর্বদা পুকুরের পরিচর্যা বা যতœ নিতে হবে। য়

মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বিএফআরআই, মোবাইল : ০১৭১১৩৮৫০০৫, ই-মেইল : kohinoor41@gmail.com

 

বিস্তারিত
কবিতা (১৪২৮)

জৈব মাটি খাঁটি

ড. খান মোঃ মনিরুজ্জামান

মাটিরে বেসে ভালো,
ঘুচাও মনের কালো।
উর্ব্বর মাটির আলো,
বিকচ কুসুম ফুটালো।
মৃত্তিকা জাত ফসল,
সন্তানে তা সমুজ্জ্বল।
মৃত্তিকার মোহনায়,
মহিয়ানেরা জন্মায়।
মানুষ বাড়ে নিত্যদিন,
মাটির কাছে বাড়ে ঋণ।
মাটিতে চাষ অবিরত,
ভরসা ফলে শত শত।
সর্বাংসহা মা গরিয়সী,
চাষি পটন পটিয়সী।
অটুট মৃত্তিকা বন্ধন,
ধন্য জীবন স্পন্দন।
চাষাবাদ বিরামহীন,
মৃত্তিকা ক্রমশ ক্ষীণ।
এর জৈবশক্তি কম,
স্বাস্থ্য মার নয় উত্তম।
মাটি মার এ ভগ্নদশা,
মৃত্তিকা চাষির কষা।
জৈব যৌগ মাটি প্রাণ,
প্রাণেই প্রাণের ঘ্রাণ।
প্রাণ হীনে মাটি ধন,
নয় প্রাণের সঞ্চারণ।
জড় প্রাণের স্পন্দন,
অচল তটিনী যেমন।
মাটি চিরে শস্যদানা,
জীব জগতের খানা।
মৃত্তিকায় জৈবক্ষীণ,
জমির ফসল বিলীন।

ধন্য কৃষক
মো: মাসুদ রানা (বাদল)

বারো মাসের তেরো পার্বণ
ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশ
নানান রঙের মায়ায় জড়ানো
রূপের নেইতো শেষ।

একেক ঋতু একেক কৃষি
এই নিয়মে সারাটা বছর
কৃষক ফুটায় সকলের মুখে হাসি।
ধন্য কৃষক ধন্য তোমার কৃষি

তোমার হাতেই গড়া বাংলাদেশের সুখ ও সমৃদ্ধি।
রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে
কালবৈশাখীটাকে সামলে নিয়ে
সবার মুখে অন্ন দিচ্ছ তুলে
হাড়কাঁপানো শীতের মাঝেও
থেমে নেই সে চলছে অদম্য গতিতে।
           
ধন্য কৃষক ধন্য তোমার কৃষি
তোমার হাতেই গড়া বাংলাদেশের সুখ ও সমৃদ্ধি।
প্লাবণে ভাস ঝড়েতে উড়
রোদেতে পুড় বৃষ্টিতে ভিজ
তবুও তোমার নিরন্তন চলা
থেমে নেই একটু ক্ষণের জন্য।
                        
সবার চেয়ে মহৎ তুমি
তবুও নেই হিংসা অহংকার
দুহাত ভরে দিলেই শুধু
বিনিময়ে আর কিই বা পেলে।

সময় এখন তোমাদের দেবার
তোমরা জাতির সেরা সন্তান।
ধন্য কৃষক ধন্য তোমার কৃষি
তোমার হাতেই গড়া বাংলাদেশের সুখ ও সমৃদ্ধি। য়

১ পরিচালক (উপসচিব) আইএমইডি, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, মোবাইল : ০১৭১২৮২২৭৪৯ ২ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, দুর্গাপুর, নেত্রকোনা, মোবাইল: ০১৯১৬-৪২২৭২০ ই-মেইল:  badolmyn@gmil.com, মোবাইল : ০১৭৭৭-০১৭৮২৫।

বিস্তারিত
প্রশ্নোত্তর জ্যৈষ্ঠ (১৪২৮)

প্রশ্নোত্তর
কৃষিবিদ মো. তৌফিক আরেফীন

কৃষি বিষয়ক
নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য আপনার ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ও রোগ দমনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা
অনুসরণ করুন।
মো. তাহেরুল হক, গ্রাম: তাহেরপুর, উপজেলা: বাগমারা, জেলা: রাজশাহী
প্রশ্ন: লাউ গাছের কাÐ ফেটে আঠা বের হচ্ছে, কী করব?
উত্তর: লাউ গাছের কাÐ ফেটে গিয়ে আঠা বের হওয়া এ রোগকে গ্যামোসিস বা আঠাঝরা রোগ বলে। এ রোগ দমনে বোর্দোমিকশ্চার ব্যবহার করলে সুফল মিলে। এটি তৈরির জন্য ১০ গ্রাম তুঁতে, ১০ গ্রাম চুন ও ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে তৈরি করতে হয়। এ মিকশ্চারটি তৈরির পদ্ধতিটি হচ্ছে। প্রথমে মাটি বা প্লাস্টিকের একটি পাত্রে ১০ গ্রাম চুন ভালোভাবে গুড়ো করে নিতে হবে। এরপর আরেকটি পাত্রে ১০ গ্রাম তুঁতে ভালোভাবে গুড়ো করে নিতে হবে। তারপর প্রত্যেকটি পাত্রে ৫০০ মিলি পানি মিশিয়ে ভালো করে দ্রবণ তৈরি করতে হবে। তারপর দুটো পাত্রের দ্রবণটিকে আরেকটি পাত্রে ঢেলে একটা কাঠের কাঠি দিয়ে ভালো করে নাড়াচাড়া করে বিকেল বেলায় নিয়মমাফিক স্প্রে করতে হয়। বোর্দোমিকশ্চার তৈরির ১২ ঘন্টার
মধ্যে ব্যবহার করতে হয়। নাহলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না। বোর্দোমিকশ্চার ব্যবহার করা ছাড়াও আপনি সানভিট/ বিøটক্স প্রতি লিটার পানিতে ৪ গ্রাম ভালোভাবে মিশিয়ে রোগাক্রান্ত লাউ গাছে সঠিক নিয়মে স্প্রে করতে পারেন। তবেই আপনি কাক্সিক্ষত পানের ফলন পাবেন।
মো: সাইফুল হোসেন, গ্রাম: খাটুরিয়া, উপজেলা: গোবিন্দগঞ্জ, জেলা: গাইবান্ধা
প্রশ্ন: বেগুন গাছের ফল ও কাÐ পচে যাচ্ছে। কী করবো?
উত্তর: বেগুন গাছে এ ধরনের সমস্যাটি ফমোপসিস নামক প্রজাতির ছত্রাকের আক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। এ রোগে বেগুন গাছ আক্রান্ত হলে বেগুন গাছের কাÐ পচে যায় এবং ফলে কালো ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং ফল পচে যায়। এ রোগ প্রতিরোধে কার্বেনডাজিম গ্রæপের ছত্রাকনাশক ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে বেগুন গাছে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া বেগুন ক্ষেত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং একই জমিতে প্রতি বছর বেগুন চাষ না করা। এসব বিষয় মেনে চললে আপনি লাভবান হবেন।
মো. আলআমিন মৃধা, গ্রাম: তাম্বুলখানা, উপজেলা: ফরিদপুর সদর, জেলা: ফরিদপুর
প্রশ্ন: নতুন লিচু গাছ লাগালে অনেকে বলে পুরাতন গাছের নিচের মাটি এনে নতুন গাছের গোড়ায় দিতে। এর কি কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে?
উত্তর: নতুন লিচু কলমের চারা লাগালে পুরাতন গাছের গোড়া থেকে মাটি এনে নতুন গাছের গোড়াতে দিলে উপকার হয়। কারণ পুরাতন লিচু গাছের গোড়ার মাটিতে মাইকোরাইজা নামে এক ধরনের ছত্রাক থাকে। এরা লিচু গাছের শিকড়ের সাথে যুক্ত হয়ে মিথোজীবিতার মাধ্যমে মাটি থেকে পুষ্টি উপাদান
সংগ্রহ করে শিকড়ের মাধ্যমে লিচু গাছে সরবরাহ করে। মাটিতে মাইকোরাইজা থাকলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়। এসব বৈজ্ঞানিক কারণেই পুরাতন গাছের গোড়ার মাটি নতুন লাগানো লিচু গাছের গোড়াতে দিতে হয়।
মোঃ আকরাম হোসেন, গ্রাম: তিনিশপুর, উপজেলা: নরসিংদী সদর, জেলা: নরসিংদী
প্রশ্ন: ভুট্টার কাÐ পচারোধে কী করতে হবে?
উত্তর: খরিফ মৌসুমে এ রোগ বেশী হয়। এছাড়া জমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেশি ও পটাশের পরিমাণ কম হলে এ রোগের সম্ভাবনা বাড়ে। এ রোগে কাÐের নিচের দিকে নরম ও পানি ভেজা দাগ পড়ে পাশাপাশি রোগের আক্রমণে গাছের কাÐ পচে যায় এবং গাছ মাটিতে ভেঙে পড়ে। সুস্থ ও সবল বীজ বপন এবং সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করতে হবে। আক্রমণ মাত্রা বাড়লে কার্বেন্ডাজিম গ্রæপের ছত্রাকনাশক যেমন
অটোস্টিন অথবা কার্বোক্সিন ও থিরাম গ্রæপের প্রোভ্যাক্স ২০০ ডবিøউপি প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করলে এ রোগ দমন করা যায়। এছাড়া ডাইফেনোকোনাজল গ্রæপের স্কোর ২৫০ ইসি এক লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করলে আপনি সুফল পাবেন।
মোঃ রবিউল ইসলাম, গ্রাম: পাটগা মুন্সিপাড়া, উপজেলা: রানীশংঙ্কৈর, জেলা: ঠাকুরগাঁও
প্রশ্ন: পানিকচু গাছের করম পচে যায়। এ সমস্যায় করণীয় কী?
উত্তর: পানি কচু গাছের করম পচে গেলে গাছের পাতা হলুদ এবং গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। এছাড়া এক রকম কোনো ধরনের ফলন পাওয়া যায় না বললেই চলে। এ রোগ দমনে রোগমুক্ত এলাকা হতে চারা বা করম সংগ্রহ করতে হবে। পরিষ্কার চাষাবাদ ও শস্যাবর্তন করার পাশাপাশি ফসল কাটার পর ফসলের অবশিষ্টাংশ ধ্বংস করে ফেলতে হবে। আক্রমণের মাত্রা বেশি মনে হলে মেনকোজেব ও মেটালেক্সিল গ্রæপের যেকোন ছত্রাকনাশক যেমন রিডোমিল গোল্ড ২ গ্রাম লিটারপ্রতি ভালোভাবে মিশিয়ে স্প্রে করা হলে সুফল পাওয়া যায়। খেয়াল
রাখতে হবে উল্লিখিত ছত্রাকনাশকটি যেন ফসলের গোড়ার মাটি ভালোভাবে ভিজিয়ে দেয়। তবে মাটি ভিজানোর ১ দিন পর আবার পানি দেয়া যাবে। আরেকটি কথা মনে রাখতে হবে সেটি হলো ছত্রাকনাশক ছিটানোর সময় ডিটারজেন্ট যেমন সার্ফ বা হুইল পাউডার ৫ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে
স্প্রে করতে হবে নাহলে ছিটানো ছত্রাকনাশক পাতা থেকে গড়িয়ে পড়ে যাবে। এতে করে ছত্রাকনাশক ছিটানোর কাক্সিক্ষত সফলতা পাওয়া যাবে না। এসব ব্যবস্থা নিলে আপনার উপকার হবে।
মোঃ চান মিয়া, গ্রাম: করোলিয়া, উপজেলা: তেরখাদা, জেলা: খুলনা
প্রশ্ন: করলা গাছের কচি পাতায় এক ধরনের পোকা পাতার রস চুষে খায়। ফলে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়। কী করবো?
উত্তর: সাধারণত করলার জাব/জ্যাসিড পোকার আক্রমণ হলে এ সমস্যা হয়ে থাকে। এ পোকা দমনের জন্য জৈব বালাইনাশক যেমন বাইকাও ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া পোকার আক্রমণ বেশি হলে ইমিডাক্লোরপ্রিড গ্রæপের এমিটাফ বা টিডো বা এডমায়ার ০.৫ মিলি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে সঠিক নিয়মে স্প্রে করলে উপকার পাবেন।
মৎস্য বিষয়ক
মোঃ মাহবুবুর রহমান, গ্রাম: ফুলবাড়ি, উপজেলা: গোবিন্দগঞ্জ, জেলা: গাইবান্ধা
প্রশ্ন: কাতলা মাছের ফুলকার উপর বাদামি গুঁটি দেখা যাচ্ছে ও ফুলকা পচে যাচ্ছে। কিছু মাছ মারাও যাচ্ছে। কী করবো?
উত্তর: এ রোগের নাম মিক্সোবলিয়াসিস। মিক্সোবলাস প্রজাতির এক ধরনের এককোষী প্রাণী রুইজাতীয় মাছের বিশেষ করে কাতলা মাছের ফুলকার উপর সাদা বাদামি গুঁটি তৈরি করে। এতে করে ঐ গুঁটির প্রভাবে ফুলকায় ঘা দেখা যায় ও ফুলকা খসে পড়ে। শ^াস-প্রশ^াসের ব্যাঘাত ঘটার কারণে মাছ অস্থিরভাবে ঘোরাফেরা করে ও শেষ রাতের দিকে ব্যাপক মড়ক দেখা যায়। অদ্যাবধি এ রোগের কোন চিকিৎসা সরাসরি
আবিষ্কৃত হয় নি। তারপরও শতকপ্রতি ১ কেজি হারে চুন দিলে পানির অ¤øত্ব দূর হয়ে পরজীবীগুলো অদৃশ্য হয়ে যায় ও মাছ নিষ্কৃতি লাভ করে।
মোঃ আতাউর রহমান, গ্রাম: লখাইডাঙ্গা, উপজেলা: মণিরামপুর, জেলা: যশোর
প্রশ্ন: রুই মাছে সাদা দাগ রোগ হয়েছে। কী করলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবো?
উত্তর: এ রোগে মাছের পাখনা, কানকো ও দেহের উপর সাদা দাগ দেখা যায়। মাছের ক্ষুধামন্দা এবং দেহের স্বাভাবিক পিচ্ছিলতা লোপ পেয়ে খসখসে হয়ে যায়। ইকথায়োপথেরিয়াস প্রজাতি এ রোগের কারণ। এ রোগ প্রতিকারে ১ পিপিএম তুঁতে পানিতে গোসল দেয়া কিংবা শতকরা ২.৫ ভাগ লবণ পানিতে কয়েক মিনিটের জন্য রাখা যতক্ষণ পর্যন্ত মাছ লাফিয়ে না পড়ে। এছাড়া এ ধরনের রোগ যাতে না হয় সেজন্য শামুকজাতীয় প্রাণী পুকুর থেকে সরিয়ে ফেলা। শতকরা ২.৫ ভাগ লবণ পানিতে ৫-৭ মিনিট গোসল দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে পোনা মজুদ করতে হয়। তাছাড়া রোদে শুকনা জাল পুকুরে ব্যবহার করাও দরকার। আরেকটি বিষয় অনুসরণীয় সেটি হলো মাছের স্বাভাবিক সংখ্যা বজায় রেখে অতিরিক্ত মাছ সরিয়ে নেয়া।
প্রাণিসম্পদ বিষয়ক
সাধন কুমার সরকার গ্রাম: কেওয়াপূর্বখÐ, উপজেলা: উল্লাপাড়া, জেলা: সিরাজগঞ্জ
প্রশ্ন: আমার ছাগলের বয়স আড়াই বছর। বিভিন্ন জায়গার মাংস শক্ত হয়ে গেছে। দাঁতে কপাট লাগে এবং খিঁচুনি দেখা দেয়। কোন শব্দ শুনলে চমকে উঠে। এমতাবস্থায় কি করণীয়?
উত্তর: সাধারণত এ রোগের চিকিৎসায় তেমন ফল হয় না। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করতে পারলে ক্ষতস্থান অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে এবং মাংসে এটিএম ইনজেকশন দিতে হবে। এছাড়া উচ্চমাত্রায় পেনিসিলিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। মাংসপেশি শিথিল করার জন্য ক্লোরাল হাইড্রেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ইনজেকশন দিতে হবে। খাসি করানো বা অন্য কোন অস্ত্রোপচারের আগে ধনুষ্টংকার রোগের টিকা দিতে হবে। তাছাড়া স্বাস্থ্যসম্মতভাবে যে কোন অস্ত্রোপচার করতে হবে।
সেজুতি রাণী, গ্রাম: সুরগ্রাম, উপজেলা: গোপালগঞ্জ সদর, জেলা: গোপালগঞ্জ
প্রশ্ন: আমার বাছুরের বয়স ২ মাস। মুখ ফুলে গেছে। কিছু খেতে চাচ্ছে না। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। কিছু চাবাতে পারছে না। কী করণীয়?
উত্তর: আক্রান্ত বাছুরকে দ্রæত আলাদা ঘরে সরিয়ে ফেলতে হবে। বাছুরের খাবারপাত্র, পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। বাছুরের মুখে কোন কাটাছেঁড়া আছে কিনা দেখতে হবে। কোট্টিম ভেট বোলাস খাওয়াতে হবে অথবা জেন্টামাইসিন অথবা অক্সিটেট সাইক্লন গ্রæপের ইনজেকশন দিতে হবে পাশাপাশি এন্টিহিস্টামিনিক ইনজেকশন দিতে হবে। আশা করি আপনি উপকৃত হবেন। য়
(মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক প্রশ্ন কৃষি কল সেন্টার হতে প্রাপ্ত)

উপপ্রধান তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫, ফোন নং: ০২-৫৫০২৮৪০০, ই-মেইল:taufiquedae25@gmail.com

বিস্তারিত
আষাঢ় মাসের কৃষি (১৫ জুন-১৫ জুলাই)

আষাঢ় মাসের কৃষি
(১৫ জুন-১৫ জুলাই)

কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম

আষাঢ় মাস। বর্ষা ঋতু আগমন। খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর, ডোবা ভরে ওঠে নতুন পানির জোয়ারে। গাছপালা ধুয়ে মুছে সবুজ প্রকৃতি মন ভালো করে দেয় প্রতিটি বাঙালির। সাথে আমাদের কৃষিকাজে নিয়ে আসে ব্যাপক ব্যস্ততা। প্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন আসুন আমরা সংক্ষিপ্ত আকারে জেনে নেই আষাঢ় মাসে কৃষির করণীয় আবশ্যকীয় কাজগুলো।
আউশ ধান
আউশ ধানের ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য যতœ নিতে হবে। সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রোগ ও পোকামাকড় দমন করতে হবে। বন্যার আশঙ্কা হলে আগাম রোপণ করা আউশ ধান শতকরা ৮০ ভাগ পাকলেই কেটে মাড়াই-ঝাড়াই করে শুকিয়ে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
আমন ধান
আমন ধানের বীজতলা তৈরির সময় এখন। পানিতে ডুবে না এমন উঁচু খোলা জমিতে বীজতলা তৈরি করতে হবে। বন্যার কারণে রোপা আমনের বীজতলা করার মতো জায়গা না থাকলে ভাসমান বীজতলা বা দাপগ পদ্ধতিতে বীজতলা করে চারা উৎপাদন করা যায়।
বীজতলায় বীজ বপন করার আগে ভালো জাতের মানসম্পন্ন বীজ নির্বাচন করতে হবে। রোপা আমনের অনুক‚ল পরিবেশ উপযোগী উন্নত জাত, যেমন বিআর১০, ব্রি ধান৩০, ব্রি ধান৩২, ব্রি ধান৩৩, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৩৮, ব্রি ধান৩৯, ব্রি ধান৬২, ব্রি ধান৭১, ব্রি ধান৭২, ব্রি ধান৭৫, ব্রি ধান৭৯, ব্রি ধান৮০, ব্রি ধান৮৭, ব্রি ধান৯০, ব্রি ধান৯১, ব্রি ধান৯৩, ব্রি ধান৯৪, ব্রি ধান৯৫, ব্রি হাইব্রিড ধান৪, ব্রি হাইব্রিড ধান৬, বিনা ধান৭, বিনা ধান১১, বিনা ধান১৬, বিনা ধান১৭, বিনা ধান২২, বিনা ধান২৩ প্রতিক‚ল পরিবেশ উপযোগী উন্নত জাত চাষ করতে পারেন;
খরাপ্রবণ এলাকাতে নাবি রোপার পরিবর্তে যথাসম্ভব আগাম রোপা আমনের (ব্রি ধান৩৩, ব্রি ধান৩৯, ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৫৭, ব্রি ধান৬৬, ব্রি ধান৭১ এসব), লবণাক্ত ও লবণাক্ত জোয়ারভাটা অঞ্চলে ব্রি ধান৭৩, ব্রি ধান৭৮, অলবণাক্ত জোয়ারভাটা অঞ্চলে ব্রি ধান৭৬, ব্রি ধান৭৭ এবং জলাবদ্ধতা সহনশীল জাত ব্রি ধান৭৯ চাষ করা যেতে পারে;
ভালো চারা পেতে প্রতি বর্গমিটার বীজতলার জন্য ২ কেজি গোবর, ১০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ১০ গ্রাম জিপসাম সার প্রয়োগ করা যায়।
আষাঢ় মাসে রোপা আমন ধানের চারা রোপণ শুরু করা যায়;
মূল জমিতে শেষ চাষের সময় হেক্টরপ্রতি ৯০ কেজি টিএসপি, ৭০ কেজি এমওপি, ১১ কেজি দস্তা এবং ৬০ কেজি জিপসাম  দেয়া প্রয়োজন; জমির এক কোণে মিনিপুকুর খনন করে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন যেন পরবর্তীতে সম্পূরক সেচ নিশ্চিত করা যায়।
ভুট্টা
পরিপক্ব হওয়ার পর বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ার আগে মোচা সংগ্রহ করে  ঘরের বারান্দায় সংগ্রহ করতে পারেন। রোদ হলে শুকিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মোচা পাকতে দেরি হলে মোচার আগা চাপ দিয়ে নি¤œমুখী করে দিতে হবে, এতে বৃষ্টিতে মোচা নষ্ট হবে না।
পাট
পাট গাছের বয়স চারমাস হলে ক্ষেতের গাছ কেটে নিতে হবে। পাট গাছ কাটার পর চিকন ও মোটা গাছ আলাদা করে আঁটি বেঁধে দুই/তিন দিন দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে। পাতা ঝরে গেলে ৩/৪ দিন পাট গাছগুলোর গোড়া একফুট পানিতে ডুবিয়ে রাখার পর পরিষ্কার পানিতে জাগ দিতে হবে।
পাট পচে গেলে পানিতে আঁটি ভাসিয়ে আঁশ ছাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে পাটের আঁশের গুণাগুণ ভালো থাকবে। ছাড়ানো আঁশ পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে বাঁশের আড়ে শুকাতে হবে। যেসব জায়গায় জাগ দেয়ার পানির অভাব সেখানে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচাতে পারেন। এতে আঁশের মান ভালো হয় এবং পচন সময় কমে যায়।    
পাটের বীজ উৎপাদনের জন্য ১০০ দিন বয়সের পাট গাছের এক থেকে দেড় ফুট ডগা কেটে নিয়ে দুটি গিঁটসহ ৩/৪ টুকরা করে ভেজা জমিতে দক্ষিণমুখী কাত করে রোপণ করতে হবে। রোপণ করা টুকরোগুলো থেকে ডালপালা বের হয়ে নতুন চারা হবে। পরবর্তীতে এসব চারায় প্রচুর ফল ধরবে এবং তা থেকে বীজ পাওয়া যাবে।
শাকসবজি
এ সময়ে উৎপাদিত শাকসবজির মধ্যে আছে ডাঁটা, গিমাকলমি, পুঁইশাক, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, ঝিঙা, শসা, ঢেঁড়স, বেগুন। এসব সবজির গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং প্রয়োজনে মাটি তুলে দিতে হবে। এছাড়া বন্যার পানি সহনশীল লতিরাজ কচুর আবাদ করতে পারেন; উপক‚লীয় অঞ্চলে ঘেরের পাড়ে গিমাকলমি ও অন্যান্য ফসল আবাদ করতে পারেন; সবজি ক্ষেতে পানি জমতে দেয়া যাবে না। পানি জমে গেলে সরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে; তাড়াতাড়ি ফুল ও ফল ধরার জন্য বেশি বৃদ্ধি সমৃদ্ধ লতাজাতীয় গাছের ১৫-২০ শতাংশের লতাপাতা কেটে দিতে হবে। কুমড়াজাতীয় সব সবজিতে হাত পরাগায়ন বা কৃত্রিম পরাগায়ন করতে হবে। গাছে ফুল ধরা শুরু হলে প্রতিদিন ভোরবেলা হাতপরাগায়ন নিশ্চিত করলে ফলন অনেক বেড়ে যাবে।
আগাম জাতের শিম এবং লাউয়ের জন্য প্রায় ৩ ফুট দূরে দূরে ১ ফুট চওড়া ও ১ ফুট গভীর করে মাদা তৈরি করতে হবে। মাদা তৈরির সময় গর্তপ্রতি ১০ কেজি গোবর, ২০০ গ্রাম সরিষার খৈল, ২ কেজি ছাই, ১০০ গ্রাম টিএসপি ভালোভাবে মাদার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর প্রতি গাদায় ৩/৪টি ভালো সবল বীজ রোপণ করতে হবে।
এছাড়াও আগাম শীতকালীন সবজি উৎপাদনে টানেল টেকনোলজি ব্যবহার করা যেতে পারে।
গাছপালা
এ সময়টা গাছের চারা রোপণের জন্য খুবই উপযুক্ত। বসতবাড়ির আশপাশে, খোলা জায়গায়, চাষাবাদের অনুপযোগী পতিত জমিতে, রাস্তাঘাটের পাশে, পুকুর পাড়ে, নদীর তীরে গাছের চারা বা কলম রোপণের উদ্যোগ নিতে হবে; এ সময় বনজ গাছের চারা ছাড়াও ফল ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করতে পারেন; ফলের চারা রোপণের আগে গর্ত তৈরি করতে হবে; সাধারণ হিসাব অনুযায়ী এক ফুট চওড়া ও এক ফুট গভীর গর্ত করে গর্তের মাটির সাথে ১০০ গ্রাম করে টিএসপি ও এমওপি সার মিশিয়ে, দিন দশের পরে চারা বা কলম লাগাতে হবে; বৃক্ষ রোপণের ক্ষেত্রে উন্নত জাতের রোগমুক্ত সুস্থ-সবল চারা বা কলম রোপণ করতে হবে; চারা শুধু রোপণ করলেই হবে না। এগুলোকে টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। চারা রোপণের পর শক্ত খুঁটি দিয়ে চারা বেঁধে দিতে হবে। এরপর বেড়া বা খাঁচা দিয়ে চারা রক্ষা করা, গোড়ায় মাটি দেয়া, আগাছা পরিষ্কার, সেচনিকাশ নিশ্চিত করতে হবে; নার্সারি মালিক যারা তাদের মাতৃগাছ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি খুব জরুরি। সার প্রয়োগ, আগাছা পরিষ্কার, দুর্বল রোগাক্রান্ত ডালপালা কাটা বা ছেঁটে দেয়ার কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে হবে।
প্রাণিসম্পদ
বর্ষাকালে হাঁসমুরগির ঘর যাতে জীবাণুমুক্ত ও আলো-বাতাসপূর্ণ থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে; এ মাসে হাঁস- মুরগির কৃমি, কলেরা, রক্ত আমাশায়, পুলরাম রোগ, সংক্রমণ সর্দি দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রæত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে; বর্ষাকালে গবাদিপশুকে সংরক্ষণ করা খড়, শুকনো ঘাস, ভুসি, কুঁড়া খেতে দিতে হবে। সে সাথে কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে। মাঠ থেকে সংগৃহীত সবুজ ঘাস ভালোভাবে পরিষ্কার না করে খাওয়ানো যাবে না; বর্ষাকালে গবাদিপশুর গলাফোলা, তড়কা, বাদলা, ক্ষুরারোগ মহামারী আকারে দেখা দিতে পারে। এ জন্য প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে; এ সময় ডাইরিয়া এবং নিউমোনিয়া রোগে গবাদিপশুকে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। তাই গবাদিপশুকে ঠাÐামুক্ত ও শুষ্ক জায়গায় রাখতে হবে। হাল চাষের পর গরুকে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে; এছাড়াও যেকোনো পরামর্শের জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।
মৎস্য সম্পদ
বর্ষা মৌসুমে পুকুরের পাড় উঁচু করে দিতে হবে; বন্যার সময় পুকুরে মাছ আটকানোর জন্য জাল, বাঁশের চাটাই দিয়ে ঘেরা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে; আষাঢ় মাস মাছের পোনা ছাড়ার উপযুক্ত সময়। মাছ চাষের জন্য মিশ্র পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন; পুকুরে নিয়মিত খাবার দিতে হবে এবং জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে; বড় পুকুরে, হাওরে, বিলে, নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ করতে পারেন;  মাছ চাষের যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য উপজেলা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।
সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, আপনাদের আগাম প্রস্তুতির জন্য আগামী মাসে উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর বিষয়ে সংক্ষিপ্তভাবে জানিয়ে দেয়া হয়। বিস্তারিত জানার জন্য স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, কৃষি-মৎস্য-প্রাণী বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন। আর একটি কথা এ সময় বীজ ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় কৃষি উপকরণগুলো বন্যামুক্ত উঁচু বা নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।  য়

সম্পাদক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা, টেলিফোন : ০২৫৫০২৮৪০৪; ই-মেইল : fardousi30@gmail.com

 

বিস্তারিত