বাঙালির রান্নার বিভিন্ন বাহারি মসলার মধ্যে অন্যতম মসলা হচ্ছে গরম মসলা। আর গরম মসলার অন্যতম উপাদান হলো দারুচিনি। বিশেষ সুগন্ধ ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত দারুচিনি যে কোন মাংস রান্নায় অপরিহার্য। মসলা হিসেবে দারুচিনির ব্যবহার সুপ্রাচীন। মসলা হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি দারুচিনির রয়েছে ভেষজ ও ঔষধি গুণ। দারুচিনির বাকলে থাকে ‘সিনামালডিহাইড’ যা এর সুঘ্রাণ সৃষ্টি করে। আর পাতায় থাকে ‘ইউজিনল’। তাছাড়া এতে রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মিনারেল ও ভিটামিন। দারুচিনি গাছের প্রায় প্রতিটি অঙ্গ যেমন- বাকল, পাতা, কুঁড়ি, ফুল, ফল ও শেকড় কোন না কোন কাজে লাগে। এর বাকল উত্তেজক ক্ষুধাবর্ধক এবং বমি নিবারক। তাছাড়া পেটের অসুখ, হার্টের দুর্বলতা, অর্শ, আমবাত, কফ সারতে সাহায্য করে। পাতার তেল সুগন্ধি তৈরিতে ও কৃত্রিম ভ্যানিলা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। মদের স্বাদ ও সুগন্ধ বৃদ্ধিতে, ওষুধ শিল্পে, সাবান ও দাঁতের মাজন তৈরিতে, চকোলেট কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্পে দারুচিনি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
Lauraceae পরিবারের দারুচিনির ইংরেজি নাম Cinnamon, আর বৈজ্ঞানিক নাম Cinnamomum zeylanicum. চির সবুজ মাঝারি আকারের ঝোপালো শাখাযুক্ত এ গাছ ১০ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। দারুচিনির আদি নিবাস শ্রীলংকা। বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ ভালো মানের দারুচিনি শ্রীলংকায় উৎপন্ন হয়। ভারত, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, চীন, মালয়, ওয়েস্টইন্ডিজ, দক্ষিণ আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে বর্তমানে সাফল্যের সাথে বাণিজ্যিকভাবে দারুচিনির চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া দারুচিনি চাষের জন্য উপযুক্ত। দেশের সর্বত্র বিশেষ করে পার্বত্য এলাকার অমøধর্মী মাটি সমৃদ্ধ পাহাড়ের পতিত ঢালে খুব সহজেই দারুচিনির বাণিজ্যিক বাগান করা যেতে পারে। দেশের পার্বত্য অঞ্চলের মোট আয়তন ১৩,২৯,৫০০ হেক্টর বা ১৩,২৮১ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে এ অঞ্চল বাংলাদেশের মোট আয়তনের এক-দশমাংশ হলেও ভূপ্রকৃতিগত কারণে এ অঞ্চলের আবাদি জমির পরিমাণ ১৮১৫৯৪ হেক্টর, যা মোট আয়তনের মাত্র ১৪%। পার্বত্য অঞ্চলে আবাদযোগ্য অনাবাদি জমি আছে প্রায় ৩৭০৮৪ হেক্টর। এসব আবাদযোগ্য অনাবাদি জমিতে পরিকল্পিতভাবে দারুচিনির বাগান গড়ে উঠতে পারে।
জাত ও প্রজাতি : সারা বিশ্বে দারুচিনির বেশ কয়েকটি জাত চাষ হয়ে থাকে। এদের দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে যথা- সিনোল বা প্রকৃত দারুচিনি এবং জংলী বা ঝুটা দারুচিনি। প্রকৃত দারুচিনি বাদমি রঙের, অধিক সুঘ্রাণযুক্ত, পাতলা, মসৃণ, বেশি সুস্বাদু ও মিষ্টি। শ্রীলংকায় প্রকৃত দারুচিনির উৎপাদন বেশি হয়। আর জংলী দারুচিনির মধ্যে চীনা, সায়গন, ইন্দোনেশিয়ান, অস্ট্রেলিয়ান, ভারতীয় প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক সারাদেশে চাষযোগ্য দারুচিনির একটি জাত অবমুক্ত করা হয়েছে, যা বারি দারুচিনি-১ নামে পরিচিত। এ জাতটির বাকলে অতি মাত্রায় সুঘ্রাণযুক্ত উদ্বায়ী তেল রয়েছে এবং জিংক সমৃদ্ধ। খরা ও লবণাক্ততা সহনশীল। আর হেক্টর প্রতি ৩৮৫ কেজি বাকল পাওয়া যেতে পারে।
জলবায়ু ও মাটি : কষ্ট সহিষ্ণু এ গাছ যে কোনো মাটিতে যেমন- লাল ও বেলে মাটিতে চাষ করা যায়। তবে বেলে দোঁআশ মাটিতে চাষ করলে গাছের বাকলের গুণগতমান বাড়ে। দারুচিনি আর্দ্র ও শুষ্ক আবহাওয়ায় ভালো হয় কিন্তু একটানা খরা সহ্য করতে পারে না। এক হাজার মিটার উঁচু পাহাড় ও টিলাতেও সাফল্যজনকভাবে চাষ করা যায়। বছরে ২০০ থেকে ২৫০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত দারুচিনি গাছের জন্য উপযোগী।
চারা তৈরি : সাধারণত বীজ থেকেই দারুচিনির চারা তৈরি করা হয়, তবে গুটিকলম বা কাটিং করেও চারা তৈরি করা যায়। জুলাই-আগস্ট মাসের দিকে ফল পাকলে গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করার সাথে সাথে বীজতলায় বপন করতে হবে। বিলম্ব করলে বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। বীজতলায় চারা গজানোর পর ৫-৬ মাস কৃত্রিম ছায়া দানের ব্যবস্থা করতে হয়। বীজতলায় চারার বয়স ৬ মাস হলেই সেখান থেকে সাবধানে তুলে পলিব্যাগে বা টবে স্থানান্তর করতে হবে। এবপর চারার বয়স ১-২ বছর হলে তা মূল জমিতে লাগানোর উপযুক্ত হয়।
জমি তৈরি ও চারা রোপণ : বর্ষাকালে গাছ থেকে গাছ এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব ২-২.৫ মিটার রেখে গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্তের আকার হবে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতা ৬০ সেমি. করে। তবে পার্বত্য এলাকায় গর্তের গভীরতা একটু বেশি রাখাই উত্তম।
সার ব্যবস্থাপনা : দারুচিনি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ বিধায় সার ব্যবস্থাপনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। চারা লাগানোর ১ সপ্তাহ প্রতি গর্তে ১০ কেজি জৈবসার বা গোবর সার, ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৭৫ গ্রাম এমওপি সার দিতে হবে। ২য় বছর সারের মাত্রা দ্বিগুণ করতে হবে। এভাবে প্রতি বছর সারের মাত্রা বাড়াতে হবে। আর প্রাপ্ত বয়স্ক একটি গাছে (১০ বছর বা তার বেশি) প্রতি বছর ১৫-২০ কেজি জৈবসার, ৪৫০ গ্রাম টিএসপি, ৪০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০০ গ্রাম এমওপি সার দিতে হবে। সব সার সমান দুই কিস্তিতে মে-জুন মাসে একবার এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে আর একবার দিতে হবে। সব সার গাছের গোড়া থেকে কিছুটা দূরে রিং পদ্ধতিতে দিতে হবে।
দারুচিনি গাছের পরিচর্যা : দারুচিনির বাগানে নিয়মিত পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে গাছের গোড়ায় যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাগানের আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করে গাছের গোড়ায় মালচিং বা জাবড়া প্রয়োগ করে খরা মৌসুমে মাটির আর্দ্রতা সংরক্ষণ করা যায়। গাছ ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হলে উপরের কা-গুলো ছেঁটে দিতে হবে। প্রধান কা-গুলো থেকে বের হওয়া পার্শ্ব বিটপগুলো বারবার ছেটে দিতে হবে। এতে ২ মিটার উচ্চতায় ঝোপের সৃষ্টি হবে।
দারুচিনি গাছের রোগবালাই ব্যবস্থাপনা : দারুচিনি গাছের রোগবালাই খুব একটা পরিলক্ষিত হয় না। তবে মাঝে মাঝে ছত্রাকজনিত কিছু কিছু রোগ দেখা দিতে পারে। যেমন- গোলাপি রোগ, চারা ধসা রোগ, মরচে ধরা রোগ, পাতায় দাগ ইত্যাদি। আর পোকামাকড়ের মধ্যে লিফ মাইনর, পাতা খেকো লেদা পোকা, লাল পিপড়া উল্লেখযোগ্য। এসব রোগ বা পেকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে তা সময়মতো দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
দারুচিনির বাকল সংগ্রহ ও শুকানো : গাছের বয়স ৩ বছর পার হলেই গাছের বাকল সংগ্রহ করা যায়। এ সময় গড়ে গাছ ২ মিটার লম্বা হয় ও গাছের গোড়া ১০-১২ সেমি. মোটা হয়। এপ্রিল-মে মাসে একবার এবং নভেম্বর মাসে আর একবার অর্থাৎ বছরে ২ বার বাকল উঠানো যায়। সাধারণত সকাল বেলা ১-৩ সেমি. ব্যাসের এবং ১.৫-২ মিটার পরিমাণ লম্বা করে ডাল কেটে এনে পাতা ও ডগা ছেঁটে ফেলে গোছা বেঁধে স্তূপ করে রাখা হয়। এতে ডালের সংগে লেগে থাকা অবশিষ্ট পাতাগুলোও ঝরে যায়। গোড়া থেকে এভাবে ডাল কেটে ফেললে আবার ডালপালা গজায় এবং পরের বছর আবার বাকল সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়। কর্তিত ডালগুলোর বাকল হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে থেঁতলে বা ঢিলা করে দিলে বাকলের ভেতরের স্তর কাগজের মতো রোল করে উঠে আসবে। আবার বিশেষ ধরনের ছুরি (যার ধারালো ফলার সামনের দিকটা গোল ও অল্প বাঁকানো এবং সামান্য খাঁজ কাটা) দিয়েও ডাল থেকে বাকল ছাড়ানো হয়। বাকলের বাইরের অমসৃণ ছাল ঘষে বা ছাড়িয়ে তুলে দেয়া হয়, তারপর পিতলের দ- দিয়ে ঘষে ঘষে মসৃণ করা হয়। এরপর ডালটির একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত লম্বালম্বিভাবে চিরে দেওয়া হয়। ঐ বিশেষ ধরনের ছুরির সাহায্যে কাষ্ঠল অংশ থেকে বাকল আলাদা করা হয়। ডাল যেদিন কাটতে হবে বাকল সেদিনই উঠাতে হবে। উঠানো বাকলগুলো ছায়াযুক্ত জায়গায় সারারাত গাদা দিয়ে রাখতে হবে। এরপর এগুলোকে একদিন ছায়ায় শুকানোর পরে ৪-৫ দিন বাঁশের চাটাই বা পলিথিনের ওপর রেখে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। বাকলের বাইরের খসখসে স্তর ফেলে দিয়ে রোদে শুকিয়ে নিলে চোঙ্গাকৃতি নলের মতো বা কুইল হয়ে যায়। ছোট নলগুলো বড় নলের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে যৌথ নল বানানো হয় তাতে করে ওগুলো ভেঙ্গে যাবার আশঙ্কা কম থাকে। গাছের মোটা ডাল থেকে চেঁছে নিয়ে ‘চাঁছা দারুচিনি’ এবং বিভিন্ন শ্রেণির দারুচিনি গুঁড়ো করে ‘গুঁড়ো দারুচিনি’ বানানো হয়।
সংরক্ষণ : সংরক্ষণের জন্য ভালো মানের দারুচিনি গ্রেডিং অর্থাৎ আলাদা করতে হবে। পাতলা, মসৃণ ও বাদামি রঙের বাকলকেই ভালো বা উঁচুমানের দারুচিনি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ঘরের ঠাণ্ডা বা শীতলতম এবং শুষ্ক স্থানে বা বড় পাত্রের মুখ এঁটে কয়েক মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। তাছাড়া ফ্রিজে রেখেও দারুচিনি সংরক্ষণ করা যায়। খোলা অবস্থায় বাতাসের সংস্পর্শে রাখলে দারুচিনির ঘ্রাণ সৃষ্টিকারী সিনামালডিহাইড নামক রাসায়নিক পদার্থ আস্তে আস্তে উড়ে যায়।
ফলন : সঠিক পরিচর্যা করলে একটি বাগান থেকে হেক্টরপ্রতি ৩৫০-৪০০ কেজি শুকনা দারুচিনি পাওয়া যায়।
বিপুল সম্ভাবনাময় এ মসলা ফসলটির আবাদ বৃদ্ধি, চাষাবাদ ও উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে আগ্রহী কৃষক ও সম্প্রসারণকর্মীদের জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়ন, সাধারণ কৃষকদের উপকরণ সরবরাহ এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে নতুন প্রকল্প বা কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে। এর ফলে আমদানি নির্ভর এ মসলাটি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে। পরিবেশ সুরক্ষা ও পাহাড় ক্ষয় রোধের পাশাপাশি এলাকার কৃষকদের টেকসই আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
কৃষিবিদ প্রসেনজিৎ মিস্ত্রি
আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিসের আঞ্চলিক কার্যালয়, রাঙ্গামাটি অঞ্চল। ফোন : ০১৭১২৮১৬৩৫২ ই-মেইল : rangamati@ais.gov.bd
ধান আমাদের প্রধান খাদ্য শস্য। এ দেশের মোট ফসলি জমির প্রায় ৭৬ শতাংশ জমিতে ধান চাষ হয় এর প্রায় ৭০ শতাংশ আধুনিক জাতের ধান চাষ হয়। স্থানীয় জাতের তুলনায় এসব আধুনিক জাতের ধানে রোগ বালাইয়ের আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। বিভিন্ন রোগের কারণে ধানের ফলন প্রায় ১০-১৫ শতাংশ কমে যায়। সাধারণত ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, কৃমি ইত্যাদি রোগ জীবাণুুর আক্রমণে ফসলের রোগ হয়ে থাকে। এসব জীবাণুর কিছু বীজবাহিত আবার কিছু জীবাণু বীজ থেকে গাছ আবার গাছ থেকে পুনরায় বীজে ছড়াতে পারে। ধানের খোল পচা রোগের জীবাণু এমন এক প্রকার ছত্রাক যা ধানের বীজ থেকে গাছ আবার গাছ থেকে পুনরায় বীজে ছড়াতে সক্ষম। তাই এ রোগে আক্রান্ত গাছ থেকে কোন অবস্থাতেই বীজ ধান সংগ্রহ করা যাবে না। বীজ ধানের জমিতে খোল পচা রোগাক্রান্ত গাছ শনাক্ত হলে তা অবশ্যই উপড়ে ফেলতে হবে।
রোগের কারণ
Sarocladium oryzae নামক ছত্রাক।
রোগের বিস্তার
¯ এ ছত্রাকের মাধ্যমে জীবাণু ধানের বীজ থেকে গাছ আবার গাছ থেকে পুনরায় বীজে ছড়াতে সক্ষম।
¯ প্রধানত আক্রান্ত গাছের বীজ থেকেই এ রোগের বিস্তার লাভ করে থাকে। তাছাড়া রোগাক্রান্ত খড় বিকল্প পোষক হিসেবে কাজ করে। মভজরা পোকা আক্রান্ত ক্ষতস্থানের মাধ্যমে এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
¯ ভ্যাপসা গরম ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়।
¯ গােেছর থোড় অবস্থায় সব মৌসুমে এ রোগ দেখা যায়।
রোগের লক্ষণ
¯ প্রথমে গাছের শীর্ষ পাতার খোল অর্থাৎ যে খোলে ধানের শীষ থাকে তার উপর গোলাকার বা অনিয়ত দাগ দেখা যায়।
¯ পরে দাগের কেন্দ্র ধূসর ও কিনারা বাদামি বা ধূসর হয়।
¯ ক্রমে দাগগুলো একত্রে মিলে বড় হয়ে সম্পূর্ণ খোলে ছড়াতে পারে।
¯ আক্রমণ বেশি হলে শীষ সম্পূর্ণ বের হতে পারে না।
¯ শীষ পেঁচিয়ে বা আংশিক বের হয়।
¯ শীষে খুব কম সংখ্যক দানা পুষ্ট হয়।
¯ অনেক সময় খোল পচা রোগে আক্রান্ত গাছে মাজরা পোকা আক্রমণের ক্ষত দেখা যায়।
¯ এ রোগ অন্য খোলেও হতে পারে তবে পাতায় হয় না।
প্রতিকার
¯ রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে অর্থাৎ বীজ ধানের জমি খোল পচা রোগ মুক্ত হতে হবে।
¯ পূর্ববর্তী ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
¯ মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে এবং ইউরিয়া সার পরিমাণে কম ব্যবহার করতে হবে।
¯ জমির পানি শুকিয়ে পুনরায় সেচ দিতে হবে।
¯ কার্বেন্ডাজিম/প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিওপি ছত্রাক নাশক প্রতি কেজি বীজ ধানে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করতে হবে।
¯ মাজরা পোকার ক্ষতস্থানের মাধ্যমে খোল পচা রোগের ছত্রাক বিস্তার লাভ করে তাই এ পোকা দমনের জন্য ডায়াজিনন ৬০ ইসি/কার্বোফুরান ৫ জি কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
কৃষিবিদ ড. এনামুল হক সরকার
উপপরিচালক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণ কেন্দ্র, ময়মনসিংহ, মোবাইল : ০১৭২৮ ০৪৩ ০৮১, ই-মেইল : enamulbauec@gmail.com
নিরাপদ খাদ্য ও কীটনাশক
ড. মোঃ আলতাফ হোসেন১
কীটনাশক নাশ করে শুধু মাত্রই পোকা
আমরা যদি ভাবি তাই- খেয়ে যাবো ধোঁকা।
কীটনাশক করলে স্প্রে- কোথায় যাচ্ছে সে?
ভাবতে হবে সবাইকে!
ক্ষতিকারী পোকা মরে যায়, বন্ধু পোকারও রেহাই নাই
গাছ শোষণ করে বিষ, চলে যায় তা শস্যদানায়।
খড়ভুসি গবাদি খায়, দুধ-মাংসেও বিষ যায়
জান্তে-অজান্তে খাচ্ছি বিষ-‘সবারই জানা চাই’।
আবার বৃষ্টিতে ভিজে গাছ, বিষ মিশছে মাটিতে
উপকারী অনুজীব, সে-ও পারছে না বাঁচিতে।
কেঁচো মরে, ব্যাঙ মরে আরও মরে বন্ধু পোকা ও পাখি
সেই সাথে ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের কথাটাও বলে রাখি।
বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে বিষ চলে যায় খাল, বিল ও নদীতে
সেখানে সে বাসা বাঁধে ফাইটোপ্লাঙ্কটন ও শ্যাওলাতে।
ফাইটোপ্লাঙ্কটন মাছের খাদ্য আরও আছে শ্যাওলা
বিষ যাচ্ছে মাছের পেটে শুনুন সবাই ভাইয়েরা!
আমরা মাছ খাই, বিষ তাহলে কোথায় যায়?
ভাবতে হবে কথাটা সবাই।
শাকসবজি ফসলে প্রায় প্রতিদিনই করা হয় স্প্রে
সকাল, বিকাল কিংবা রাত্রিতে।
ক্ষতিকর পর্যায়ে পোকা আছে কিংবা নাই
সেটা বিবেচনার তোয়াক্কা কারো নাই।
করতে হবে স্প্রে, তুলতে হবে ফসল
লাভটাই যেন আসল!
শাকসবজি খাওয়া হয়-কাঁচা অথবা রান্না করে
এর জন্য অধিক সতর্কতা রাখা উচিত ধরে।
কিন্তু দেখা যায় উল্টো চিত্র
সতর্কতার নেই কোন দৃশ্য!
গাছপাকা ফল খেতে ভারি মিষ্টি
টস্টসে রসে ভরা আছে অনেক পুষ্টি।
কিন্তু কাঁচা ফল পাকানো হচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক দিয়ে
নিরাপদ ফলাহারের নিশ্চয়তা দিবে আসলে কে?
কীটনাশক করলে স্প্রে, খাদ্য শৃঙ্খলে মিশছে সে
গাছ, মাছ, গবাদি ও পাখিতে খাদ্যের মাধ্যমে যাচ্ছে সে
আমরা খাচ্ছি সবাইকে, তাহলে শেষ পর্যন্ত কোথায় যাচ্ছে সে?
ভাবতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে।
কীটনাশকের জৈব বিবর্ধন হচ্ছে আমাদের শরীরে
অনেক রোগ ব্যাধি হচ্ছে কীটনাশকের কারণে।
গ্যাস্ট্রিক, আলসার, ক্যান্সারসহ বহুবিধ রোগের-
কারণ হচ্ছে সে ধীরে ধীরে।
কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন আছে কিংবা নাই
বিবেচনা না করে প্রয়োগ হচ্ছে দেদার ভাই।
এগুলো দেখার যেন কেউ নাই
ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমরা আসলে যাচ্ছি কোথায়!
যথেচ্ছা কীটনাশক স্প্রে করাটা হয়েছে এখন এক ম্যানিয়া
সেখান থেকে আমরা বেড়িয়ে আসতে পারব কি না জানি না!
যদিও ইদানীংকালে জৈব কীটনাশকের উদ্ভাবনে-
কিছুটা কমেছে রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার
তবে আরও বাড়াতে হবে জৈব কীটনাশকের সমাহার।
বিজ্ঞানী, নীতিনির্ধারক, রাজনীতিক, প্রশাসক, লেখক ও শিক্ষক
সবাইকে বলে যাই- কীটনাশকের ভয়াবহতা থেকে পরিত্রাণের আরও উপায় খুঁজে দেখবেন ভাই।
পোকামাকড় প্রতি বছর করে নেয় হরণ
ফসলের অন্তত গড়ে প্রায় ২০ ভাগ ফলন।
কাঠুরিয়া ও পথিক
মোঃ মাজাহারুল ইসলাম২
ফসলের কাঙ্খিত ফলন পেতে
প্রয়োজন মতো কীটনাশক হয় দিতে।
কাঠুরিয়া কুঠার হাতে
বৃক্ষ নিধনে যায়
তা দেখে সুবোধ পথিক
বলে হায় হায়!
গাছ কেটো না ভাই
জীবন রক্ষার সবই মোরা
গাছ থেকেই পাই।
সবই! এ কি কথা বলে
কাঠুরিয়া সুধায় পথিকে
চোখ কপালে তোলে।
পথিক বলে, শুনো তবে-
‘মোদের শ^াসের অক্সিজেন
গাছ বাতাসে ছাড়ে,
প্রশ^াসের কার্বন-ডাই অক্সাইড
গাছে গ্রহণ করে।
মাটি ও বায়ুর বাড়তি তাপ
গাছ যে শোষণ করে,
তাপমাত্রা না বাড়িয়ে পরিবেশ
ঠা-া ও নির্মল রাখে।
পানি ও বায়ু মাটি দূষণসহ
ভূমিক্ষয় করে রোধ,
বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় ছাড়াও
বহু প্রাকৃতিক দুর্যোগ করে প্রতিরোধ।
ফুল ফল কাঠ ঔষধ ছাড়াও
গাছ থেকে কত কি পাই!
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়
গাছের জুড়ি নাই।’
সব সমর্থনান্তে পথিককে বলে কাঠুরিয়া
আমার বাসস্থান আসবাব তৈরি করব কি দিয়া?
উত্তরে পথিক বলে-
প্রয়োজনে গাছ কাটো ভাই,
তবে একটি কেটে ঐ স্থানে
দুটি লাগানো চাই।
১প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ডাল গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, ঈশ্বরদী, পাবনা, মোবাইল নং- ০১৭২৫-০৩৪৫৯৫ ২ উপসহকারী কৃষি অফিসার, মুরাদনগর, কুমিল্লা। মোবাইল : ০১৮১৮২৮৮৫১৭, ই-মেইল : mazhar517@gmail.com
কৃষি বিষয়ক
নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য আপনার ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ও রোগ দমনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করুন।
রহিম মিয়া, গ্রাম : ডালিয়া, উপজেলা : ডিমলা, জেলা : নীলফামারী
প্রশ্ন : কামরাঙ্গার বাকল ও ডাল ছিদ্রকারী পোকা দমনের উপায় সম্পর্কে জানাবেন।
উত্তর : কামরাঙ্গার ক্ষতিকর পোকার মধ্যে কামরাঙ্গার বাকল ও ডাল ছিদ্রকারী পোকা অন্যতম। এ পোকা গাছের বাকল ও ডাল ছিদ্র করে ভেতরে ঢুকে পড়ে। এ পোকার উপস্থিতি সহজেই বুঝে যায়। কারণ কামরাঙ্গা গাছের ডালের গায়ে ঝুলে থাকা কাঠের গুঁড়া-মিশ্রিত মলের ছোট ছোট দানা দ্বারা শনাক্ত করা সম্ভব। এ পোকা দিনের বেলা লুকিয়ে থাকে কিন্তু রাতের বেলা সক্রিয় হয়। গাছের যেসব জায়গায় কাঠের গুঁড়া মিশ্রিত মল দেখা যায় সেসব জায়গা পরিষ্কার করে গর্তে লুকিয়ে থাকা পোকাকে হুক দিয়ে খুঁচিয়ে মেরে ফেলা যায়। এছাড়া গর্তের মুখে কেরোসিন বা ন্যাপথোলিন ঢুকিয়ে কাদা দ্বারা গর্তের মুখ বন্ধ করে দেয়া যায়। এসবের পাশাপাশি কার্বোসালফার গ্রুপের মার্শাল-২০ ইসি ২মিলি প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১ সপ্তাহ পর ৩ থেকে ৪ বার স্প্রে করলেও উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও পোকায় খাওয়া বাকল চেছে কপার জাতীয় ছত্রাকনাশকের প্রলেপ দিতে হবে। এ সমস্ত ব্যবস্থাপনা করলে আশাকরি আপনি উপকার পাবেন।
লোকমান আলী, গ্রাম : পূর্ব শ্যামপুর, উপজেলা : শিবগঞ্জ, জেলা : চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রশ্ন : মিষ্টিআলুর পাতা কুঁকড়িয়ে যায়। এ সমস্যায় করণীয় কি?
উত্তর : ভাইরাসের আক্রমণ হলে মিষ্টি আলুর পাতা উপরের দিকে কুঁকড়িয়ে যায় এবং পাতা ছোট আকার ধারণ করে। এ রোগের আক্রমণে ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়। এ রোগটি সাদা মাছি পোকার মাধ্যমে হয়ে থাকে। এ রোগ দমনের জন্য রোগমুক্ত লতা লাগানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া সাদা মাছি পোকা দমনের জন্য ইমিডাক্লোরপ্রিড গ্রুপের যেমন এডমায়ার প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি ভালোভাবে মিশিয়ে সঠিক নিয়মে স্প্রে করলে উপকার পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ১৫ দিন পর স্প্রে করলে সাদা মাছি পোকা দমন করা যায়।
করিম বখশ, গ্রাম : বুন্দুলিতলা, উপজেলা : চৌগাছা, জেলা : যশোর
প্রশ্ন : কাটিংয়ের মাধ্যমে ড্রাগন ফল চাষ সম্পর্কে জানাবেন।
উত্তর : কাটিংয়ের মাধ্যমে ড্রাগন ফলের বংশবিস্তারে সফলতার হার প্রায় শতভাগ এবং ফলও তাড়াতাড়ি ধরে। কাটিং থেকে উৎপাদিত গাছে ফল ধরতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে। সাধারণত ৬ থেকে ১ বছর বয়স্ক গাঢ় সবুজ শাখা হতে ২০ থেকে ৩০ সেমি লম্বা টুকরা কাটিং হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কাটিং ৫০ ভাগ পচা গোবর ও ৫০ ভাগ ভিটি বালুর মিশ্রণ ৮ঢ১০ ইঞ্চি আকারের পলিব্যাগে স্থাপন করে ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দিতে হয়। এভাবে ৩০ থেকে ৪৫ দিন পরে কাটিংয়ের গোড়া থেকে শিকড় এবং কাণ্ডের প্রান্ত থেকে নতুন কুশি বের হলে মাঠে লাগানোর উপযুক্ত হয়।
রমজান আলী, গ্রাম : দক্ষিণ বারপোতা, উপজেলা : সারশা, জেলা : যশোর
প্রশ্ন : ড্রিপ পদ্ধতিতে সার মিশ্রিত সেচ পানির ব্যবহার স¤পর্কে জানতে চাই।
উত্তর : প্রচলিত পদ্ধতিতে সেচ ও সার প্রয়োগ আলাদাভাবে করা হয়। কিন্তু ড্রিপ পদ্ধতিতে সারমিশ্রিত সেচ পানি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এতে সার ও সেচের পানির অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়। বিশেষ করে টমেটো ফসলে এ ধরনের পদ্ধতি বেশ কার্যকর। সেচের পানি ফোঁটায় ফোঁটায় গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করা হয়। যে কারণে সমস্ত জমি ভেজানোর প্রয়োজন হয় না। কম পরিমাণ পানি প্রয়োগের ফলে সারের চোয়ানোজনিত অপচয় হয় না। বরং এ পদ্ধতিতে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে প্রায় ৬০% ইউরিয়া এবং ৩০% এমওপি সার কম লাগে। আর প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় এ পদ্ধতিতে প্রায় ৪৮% পানিসেচ সাশ্রয় হয়। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে একজন কৃষক বেশ লাভবান হতে পারেন। এ প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর।
শরিফ আহমেদ, গ্রাম : তিনিশপুর, উপজেলা : নরসিংদী সদর, জেলা : নরসিংদী
প্রশ্ন : কলাগাছের ৩য় ও ৪র্থ পাতাতে ছোট ছোট হলুদ দাগ পড়ে পাতা পুড়ে যাওয়ার মতো দেখাচ্ছে। এ অবস্থায় কি করণীয়?
উত্তর : কলাগাছের এ ধরনের সমস্যাকে কলার সিগাটোকা রোগ বলে। এ রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত পাতা কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আর পরবর্তীতে প্রপিকোনাজল গ্রুপ যেমন টিল্ট ২৫০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি বা কার্বেনডাজিম গ্রুপের যেমন ব্যাভিস্টিন ১ গ্রাম মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর গাছে ছিটাতে হবে। এসব ব্যবস্থা নিলে আশা করি উপকার পাবেন।
গোলাপজান, গ্রাম : সনগাঁও, উপজেলা : বালিয়াডাঙ্গি, জেলা : ঠাকুরগাঁও
প্রশ্ন : রসুন গাছের পাতাতে বাদামি থেকে হালকা বেগুনি রঙের দাগ পড়ে। পরবর্তীতে হঠাৎ করে পাতা ও কা- ভেঙে পড়ে। এ রোগ দমন সম্পর্কে জানাবেন।
উত্তর : এ ধরনের রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হয়। এছাড়া রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ইপ্রোডিয়ন যেমন-রোভরাল এককভাবে অথবা ২ গ্রাম রোভরাল ও ২গ্রাম রিডোমিল গোল্ড একত্রে মিশিয়ে সঠিক নিয়মে স্প্রে করলে উপকার পাওয়া যাবে।
মৎস্য বিষয়ক
মোছা: সুফিয়া বেগম, গ্রাম : গোপালপুর, উপজেলা : মিঠাপুকুর, জেলা : রংপুর
প্রশ্ন : মাছের আঁইশ উঠে যাচ্ছে কি করব?
উত্তর: ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের কারণে মাছের আঁইশ উঠে যায়। এ রোগের লক্ষণগুলো হলো-মাছের আঁইশের গোড়ায় রস জমে আঁইশ ঢিলে হয়ে যায়। চামড়া থেকে উজ্জ্বলতা হারায় এবং মাছ অলসভাবে চলাফেরা করে। মাছের এ সমস্যা প্রতিকারে চুন বা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পুকুর শোধন করতে হবে। এক কেজি ওজনের মাছে ১০ মিলিগ্রাম হারে সপ্তাহে ২বার ক্লোরোমাইসিন মিশিয়ে প্রতি ৪ দিন পর পর ২৪ ঘণ্টা মাছকে রাখতে হবে। এসব ব্যবস্থা নিলে আপনার উল্লিখিত সমস্যার সমাধান হবে।
মো: ফেরদৌস, গ্রাম : সরদারপাড়া উপজেলা : বাঘা, জেলা: রাজশাহী
প্রশ্ন : পানির রঙ গাঢ় সবুজ, মাছ মরে যাচ্ছে। কী করব?
উত্তর : অতিরিক্ত প্লাংকটন তৈরি হওয়ার কারণে এবং অক্সিজেন এর অভাব হলে এমন হয়। এ ধরনের সমস্যার প্রতিকারে প্রতি শতকে ১ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে। খাবার ও রাসায়নিক সার সাময়িক বন্ধ রাখতে হবে। পানির পরিমাণ বাড়াতে হবে। তুঁতে বা কপার সালফেট ১২-১৪ গ্রাম শতকহারে ছোট পোঁটলায় বেঁধে উপর থেকে ১০-১৫ সেমি নিচে বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে রাখলে ভালো হবে। সিলভার কার্প মাছ ছাড়া যেতে পারে। এছাড়া জিপসাম সার প্রয়োগ করতে পারেন শতক প্রতি ১ কেজি করে। এভাবে ব্যবস্থা নিলে উপকার পাবেন।
প্রাণিসম্পদ বিষয়ক
আবদুস সালাম, গ্রাম : সর্দারপাড়া, উপজেলা : আটওয়ারী, জেলা : পঞ্চগড়
প্রশ্ন : আমার গাভী গরুর বয়স সাড়ে তিন বছর। জরায়ুতে পুঁজ জমে পেট বড় দেখাচ্ছে। এখন কী করব?
উত্তর : ট্রাইসালফা এবং স্ট্রেপটোমাইসিন অথবা অক্সিটেট্রাসাইক্লিন বা ট্রাইজন ভেট ইনজেকশন দিতে হবে। সাথে ডেক্সট্রোস স্যালাইন দিতে হবে। এসব ব্যবস্থা নিলে আশা করি উপকার পাবেন।
মো. সেলিম, গ্রাম : কালের কাঠি, উপজেলা : বাকেরগঞ্জ, জেলা : বরিশাল
প্রশ্ন : আমার কোয়েল পাখি আছে। পাখি খুঁড়িয়ে হাঁটছে এবং এ সময় নখ বাঁকা দেখা যাচ্ছে। কী করব?
উত্তর : ভিটামিন বি-২ যুক্ত প্রাকৃতিক খাদ্য যেমন প্রাণীর যকৃত, সবুজ কচি ঘাস, প্রাণীর কিডনি বা মাছের গুঁড়া ইত্যাদি অথবা ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স খাওয়াতে হবে। তাহলে আপনার কোয়েল পাখির উল্লিখিত সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
(মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক প্রশ্ন কৃষি কল সেন্টার হতে প্রাপ্ত)
কৃষিবিদ মো. তৌফিক আরেফীন
উপপ্রধান তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫, মোবাইল ০১৭১১১১৬০৩২, ই-মেইল : taufiquedae25@gmail.com
বাংলাদেশের প্রাণিজ আমিষের অন্যতম প্রধান উৎস হলো মাছ। কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়টি অনুধাবন করেই স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে এক জনসভায় ঘোষণা দিয়েছিলেন- ‘মাছ হবে দ্বিতীয় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ’। মৎস্য সেক্টরের গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে গণভবন লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন।
মৎস্য খাতের বহুমুখী কর্মকা-কে অধিকতর গতিশীল করার লক্ষ্যে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার এ সেক্টরের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সর্বপ্রথম জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের কার্যক্রম ১৯৯৩ সাল থেকে শুরু হলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর নেতৃত্বে ১৯৯৬ সাল হতে দেশব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণভাবে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন করা হচ্ছে।
১৯৯৮ সালে মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে উল্লেখ করেন ‘জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে মৎস্য চাষ ও সংরক্ষণ কার্যক্রমকে একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করার মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে জাতির জনকের সোনার বাংলা করার ক্ষেত্রে মৎস্য সপ্তাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’
এরই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং গণভবন লেকে মাছের পোনা অবুমক্ত করেন। মৎস্য সেক্টরের উন্নয়নের ইপ্সিত এ গতির অন্যতম নিয়ামক হলো- ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন’। ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা, লাগসই মৎস্য প্রযুক্তি সম্প্রসারণ তথা জনগণের সচেতনতা ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে টেকসই মৎস্য উন্নয়নের জন্যই প্রতি বছর জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন করা হয়।
প্রাণিজ আমিষের জোগান বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও নিরাপদ মৎস্য সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপনকালে, গণসচেতনতা সৃষ্টি ও উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি বিভিন্ন মৎস্য উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়।
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমসমূহ নিম্নরূপ-
*সড়ক র্যালি, প্রেস ব্রিফিং, মৎস্য মেলা, সভা/সেমিনার;
*মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক জাতীয় মৎস্য পুরস্কার প্রদান;
*মৎস্য সেক্টরের সাফল্য নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র;
*মাছের পোনা অবমুক্তকরণ;
*দৈনিক পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ;
*বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে আলোচনা, প্রচারণা;
*মৎস্য আইন বাস্তবায়ন অভিযান, ইত্যাদি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে এ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি দেশব্যাপী ৭ সাত দিন পালিত হয়। মৎস্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের অংশগ্রহণে এ কর্মসূচি পালিত হয়। কেন্দ্রীয় এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদাভাবে কর্মসূচি পালিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগের দিন অর্থাৎ প্রথম দিন কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সাধারণত মৎস্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি আয়োজন করা হয়। র্যালি শেষে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী এর উপস্থিতিতে একটি প্রেস ব্রিফিং হয়।
দ্বিতীয় দিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে গণভবন লেকে পোনামাছ অবমুক্তকরণ করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মৎস্য সেক্টরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গৌরবময় ও উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সফল মৎস্যচাষি/মৎস্যজীবী/উদ্যোক্তা/ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান/গবেষক এর মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক জাতীয় মৎস্য পুরস্কার প্রদান করা হয়ে থাকে।
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ অনুষ্ঠানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বঙ্গভবন পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা হয়ে থাকে।
এ ছাড়া জাতীয় সংসদ ভবন লেক এ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার/ডেপুটি স্পিকার/চিফ হুইপের উপস্থিতিতে এবং ধানমণ্ডি লেকে স্থানীয় মাননীয় সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ করা হয়ে থাকে।
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপনের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম হিসেবে সাধারণত পাঁচ দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় মৎস্য মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এ মেলায় মৎস্য অধিদপ্তরের পাশাপাশি বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনসহ মৎস্য সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থা/প্রতিষ্ঠান স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া জেলা পর্যায়ে তিনদিন ব্যাপি মৎস্য মেলা আয়োজন করা হয়ে থাকে। এ সপ্তাহে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ আলাদাভাবে মৎস্য প্রযুক্তি মেলার আয়োজন করে থাকে।
কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ/ জনবহুল স্থান ও মাছের আড়তে আলোচনা সভা/ ভিডিও প্রদর্শনী করা হয়। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংবাদ সম্মেলন, র্যালি, উদ্বোধন অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, মাছের পোনা অবমুক্তি কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি নিম্নবর্ণিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়ে থাকে-
*ফরমালিনবিরোধী অভিযান
*মৎস্যবিষয়ক আইন বাস্তবায়নে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা
*বিভিন্ন স্কুল-কলেজে মৎস্যচাষ বিষয়ক আলোচনা/বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন
*হাটবাজার/জনবহুল স্থানে মৎস্য চাষ বিষয়ক উদ্বুদ্ধকরণ সভা ও ভিডিও/প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন।
*জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ শেষে এর মূল্যায়ন, সাংস্কৃতিক ও সমাপনী অনুষ্ঠান করা হয়।
*জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপনের নিমিত্ত প্রতি বছরই একটি সেøাগান/প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এ বছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে-
‘মাছ চাষে গড়বো দেশ
বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’
মো. জুয়েল শেখ
প্রধান মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য ভবন, রমনা, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১৩৪০৫১৯৫, ই-মেইল : jewel_shaik@yahoo.com
ক্ষুধা পেলে মানুষ খাদ্য গ্রহণ করে। খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে দেহের পুষ্টি সাধিত হয় ও স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তাই সুস্থ জীবনের জন্য মানুষের স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশ্বজুড়ে মানুষের ‘বিশৃঙ্খল’ খাদ্যাভ্যাসের কারণে অচিরেই মানবসভ্যতা ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়বে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসাশাস্ত্র বিষয়ক সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট’- এ সম্প্রতি গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে।
সুস্থ থাকার জন্য খাদ্যাভ্যাসের কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০০ কোটি লোক প্রয়োজনীয় খাবার পায় না এবং ২০০ কোটি লোক প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খাবার খায় বলে গবেষণা নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। সেসবের বেশির ভাগ অস্বাস্থ্যকর খাবার বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকেরা দাবি করেছেন, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় এক কোটি দশ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং কয়েক ধরনের ক্যান্সারে উন্নত দেশের মানুষের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ। তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে সেই হার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। গবেষণা নিবন্ধের অন্যতম সহলেখক ও যুক্তরাজ্যের লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টিম ল্যাং বলেন, বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যা ৭৭০ কোটি। ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে এক হাজার কোটি, যা কিনা বাড়তেই থাকবে। এখনই সবার খাদ্যাভ্যাস না বদলালে এত বিপুলসংখ্যক লোককে স্বাস্থ্যসম্মত ও টেকসই খাবারের জোগান দেওয়া তখন অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই খাদ্যাভ্যাসের দিক দিয়ে দুনিয়াজুড়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে।
বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় এক-চতুর্থাংশের জন্য দায়ী খাদ্য উৎপাদন ও বনের জন্য জমি ব্যবহার। এছাড়া বিদ্যুৎ ও তাপ উৎপন্নের জন্যও যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হয় সেটা বিশ্বের সব রেলগাড়ি, উড়োজাহাজ বা অন্যান্য যানবাহনের চাইতেও অনেক বেশি। খাদ্য উৎপাদন খাতের পরিবেশগত প্রভাব যদি আরও কাছ থেকে বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে, মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবারের উৎপাদন পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশ্বব্যাপী গবাদিপশুর কারণে ১৪% থেকে ১৮% গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হয়ে থাকে। এছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ী অন্যান্য গ্যাস যেমন মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইডের নির্গমন সবচেয়ে বেশি হয় কৃষি উৎপাদনের কারণে। বায়ু দূষণের একটি প্রধান কারণ এই কৃষিজমি। কেননা এসব খামার থেকে অ্যামোনিয়ার সৃষ্টি হয়। যেটাকে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) । একইভাবে পানির ক্ষেত্রেও বড় ধরনের হুমকি এই কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন খাত। কেননা বিশ্বের ৭০% পরিষ্কার পানি ব্যবহার হয়ে যায় কৃষিজমি সেচের কাজে।
পৃথিবীকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি নিয়ে একটি ডায়েট (খাদ্য তালিকা) প্রস্তুত করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা দিয়ে সামনের দশকগুলোতে একশ’ কোটিরও বেশি মানুষকে খাওয়ানো যাবে। আর এটা সম্ভব হবে আমাদের গ্রহের কোনো ক্ষতি না করেই। সামনের দশকগুলোতে কোটি কোটি মানুষের খাদ্য সরবরাহ কিভাবে করা যাবে সেটা নিয়েই এতদিন গবেষণা করছিলেন বিজ্ঞানীরা। আমরা যেসব খাবারে আমাদের প্লেট ভরিয়ে রাখি, সেখানে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা দরকার বলে মনে করেন তারা। অবশেষে গবেষকরা একটি আদর্শ ডায়েট (স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য তালিকা) তৈরি করে দিয়েছেন। ১নং সারণিতে একজন পূর্ণবয়স্ক লোকের স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য তালিকা (আদর্শ ডায়েট) দেয়া হয়েছে।
এই ডায়েটটি (খাদ্য তালিকা) তৈরি করা হয়েছে মাংস এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার বাদ না দিয়েই। তবে প্রোটিনের চাহিদার একটা বড় অংশ মেটাতে সেখানে বাদাম, বিভিন্ন ধরনের ডাল আর দানাশস্য যুক্ত করা হয়েছে। বিজ্ঞানীদের পরামর্শ হলো ডায়েট থেকে মাংসের পরিমাণ কমিয়ে বিকল্প প্রোটিনের উৎস খোঁজা। যেসব পুষ্টিকর খাবার আমরা এড়িয়ে যেতে চাই সেগুলোর প্রতি আগ্রহ জন্মানোর ওপরও তারা জোর দেন। আপনি যদি প্রতিদিন মাংস খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার ডায়েটে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা জরুরি। তার মানে এই নয় যে, আর মাংসই খাবেন না। মাংস খাবেন, তবে পরিমিত হারে। যেমন- লাল মাংসের কোনো খাবার যেমন বার্গার যদি খেতেই হয় তাহলে সেটা সপ্তাহে একদিন খাবেন। এছাড়া সপ্তাহের অন্য আরেক দিন মাছ বা মুরগির মাংস দিয়ে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পারেন। আর বাকি দিনগুলোতে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে হবে বিভিন্ন উদ্ভিদজাত খাবার খেয়ে। এক্ষেত্রে গবেষকরা প্রতিদিন বাদাম, দানাশস্য বা ডাল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া নানা ধরনের ফল এবং সবজি খাওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধির কথাও জানান তারা। শ্বেতসারযুক্ত খাবার যেমন- আলু বা কাসাভাও যুক্ত করা যেতে পারে।
‘ল্যানসেট’-এ প্রায় ৩৬ জন বিজ্ঞানীর একটি দল (যেখানে কৃষি থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন এবং সেইসঙ্গে পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা ছিলেন) টানা দু’বছর গবেষণার পর তারা এই খাদ্য তালিকা তৈরি করেছেন। যা পরবর্তীতে ‘ল্যানসেট’-এ প্রকাশ করা হয়। বাড়তি জনগোষ্ঠীর খাবার জোগান নিশ্চিত করতে তারা এই গবেষণাটি করেন। এখন তাদের লক্ষ্য বিভিন্ন দেশের সরকার এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডঐঙ) মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এই গবেষণা ফলাফল পাঠানো। যেন সব জায়গায় এই খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আনা যায়।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গেলে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। বিশেষ করে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় লাল মাংস খাওয়ার হার ব্যাপকভাবে কমাতে হবে। পূর্ব এশিয়ায় মাছের ওপর নির্ভরতা এবং আফ্রিকায় শ্বেতসার জাতীয় সবজি খাওয়ার পরিমাণ কমানো প্রয়োজন। স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টকহোম রেসিলিয়েন্স সেন্টারের পরিচালক লাইন গর্ডন বলেন, ‘আগে কখনোই এই হারে এবং এই গতিতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়নি।’ লাল মাংসের ওপর কর বাড়ানো ডায়েটে পরিবর্তন আনার একটা উপায় হতে পারে বলে মনে করেন গবেষকরা।
গবেষকদের লক্ষ্য হলো সামনের দশকগুলোয় বিশ্বের বাড়তি জনসংখ্যার সবার খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করা সেটা পরিবেশের ক্ষতি না করেই। বরং এতে কমে যাবে গ্রিনহাউসের মতো ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ এবং সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা জীববৈচিত্র্য। এতে কৃষি জমি আর বাড়াতে হবে না এবং পানি সংরক্ষণ করা যাবে। তবে শুধু খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনাই যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে খাদ্যের ফলে সৃষ্ট বর্জ্যরে হার কমিয়ে আনা, সেই সঙ্গে বিদ্যমান জমিতে বাড়াতে হবে খাদ্যের উৎপাদন এবং কমাতে হবে খাবারের অপচয়ও।
মোঃ আবদুর রহমান
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি অফিস, রূপসা, খুলনা, মোবাইল নং : ০১৯২৩৫৮৭২৫৬, ইমেইল : mayerkantha@gmail.com
লটকন এক প্রকার দেশীয় ও অপ্রচলিত ফল, যা অত্যন্ত পুষ্টি ও ঔষধিগুণে ভরপুর। যার ইংরেজি নাম হলো Burmese grape ও বৈজ্ঞানিক নাম- Baccaurea sapidaএটি মাঝারি আকারের চির সবুজ বৃক্ষ। ফল গোলাকার ক্যাপসুল, পাকলে এর ফল হলুদ বর্ণ ধারণ করে। ফলের খোসা ছাড়ালে ৩/৪টি রসালো অম্লমধুর স্বাদের বীজ পাওয়া যায়। ফল হিসেবেই ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে চাষ হচ্ছে যেমন- নরসিংদী, সিলেট, গাজীপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ জেলা উল্লেখযোগ্য এলাকা। তার মধ্যে নরসিংদী জেলার সদর, শিবপুর, রায়পুরা ও বেলাব উপজেলায় সবচেয়ে বেশি লটকন চাষ হচ্ছে। নরসিংদীর লটকনের স¦াদ অত্যন্ত বেশি এবং সারাদেশ ব্যাপী এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
লটকনের পুষ্টিগুণ
লটকন অত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু একটি ফল। পরিপক্ব লটকনের প্রতি ১০০ গ্রাম শাঁসে আছে ১.৪২ গ্রাম আমিষ, ০.৪৫ গ্রাম চর্বি, ০.৯ গ্রাম মোট খনিজ পদার্থ, ০.৩ গ্রাম লৌহ এবং ৯১ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি। (লৌহ যা শরীরের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে থাকে) এছাড়াও লটকনে রয়েছে ০.০৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১ এবং ০.১৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি২। সাধারণত লটকনকে ভিটামিন বি২ সমৃদ্ধ ফল বলা হয়ে থাকে। ভিটামিন বি২ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, যা শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয় উপাদান। এই ফলে চর্বি অত্যন্ত কম থাকায় ও কোন শর্করা নেই বিধায় সকল বয়সের মানুষ নিশ্চিন্তে খেতে পারেন।
লটকনের ঔষধিগুণ
লটকনের যেমন পুষ্টিগুণ রয়েছে তেমনি তার ঔষধিগুণও রয়েছে। এই ফল খেলে বমি বমি ভাব দূর হয় ও তৃষ্ণা নিবারণ হয়। এছাড়াও লটকনের পাতা শুকনো করে গুঁড়া করে খেলে ডায়রিয়া ও মানসিক চাপ কমে। লটকন অম্ল মধুর ফল তাই এই ফল খেলে আমাদের মুখের স্বাদ বৃদ্ধি পায় এবং খাবারের রুচি বাড়ে। এছাড়াও তাতে পর্যাপ্ত আয়রন বা লৌহ উপাদান থাকায় দেহের রক্তশূন্যতা দূর হয়।
লটকনের উন্নত জাত, মাটি ও রোপণের মৌসুম
ভালো ও উন্নত জাতের চারা বা কলম লাগাতে হবে। বারি লটকন-১ সবচেয়ে ভালো জাতের লটকন এবং এ জাতটি সারা দেশে চাষোপযোগী। এছাড়াও আছে বাউ লটকন-১। লটকনের চারা সংগ্রহ করে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে রোপণ করা উত্তম তবে বর্ষার শেষের দিকে অর্থাৎ ভাদ্র-আশ্বিন মাসেও চারা লাগানো যাবে। লটকন স্যাঁতসেঁতে ও আংশিক ছায়াযুক্ত পরিবেশে যেমন আম বা কাঁঠালের মতো বড় গাছের নিচেও ভালো জন্মে কিন্তু জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। ৮-১০ দিন পানি জমে থাকলে গাছ মরে যেতে পারে। এজন্য পানি দাঁড়ায় না অথচ বৃষ্টিপাত বেশি হয় এমন এলাকায় বেলে-দো-আঁশ মাটি লটকন চাষের জন্য বেশি উপযোগী।
বাগান ব্যবস্থাপনা
*প্রথমেই লটকনের বাগানে কয়েকটি পুরুষ ও অধিকাংশ স্ত্রী কলম সংগ্রহ করে লাগানো উচিত। তাতে পরাগায়নের সুবিধা হবে ও অধিক লাভবান হওয়া যাবে। লটকনের কেবলমাত্র ফুল আসার পরই স্ত্রী ও পুরুষ গাছ চেনা যায়। তখনই বাগানে শতকরা ২০ ভাগ পুরুষ গাছ রেখে বাকি পুরুষ গাছগুলো কেটে ফেলতে হবে। সেখানে আবার নতুন চারা লাগাতে হবে। তবে এই সমস্যা দূর করতে হলে প্রথমেই বাগানে লটকনের স্ত্রী কলম লাগানো উচিত।
*বর্ষার প্রারম্ভে চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পূর্বে ৭ী৭ মিটার দূরত্বে ১x১x১ মিটার আকারের গর্ত করতে হবে। গর্ত প্রতি গোবর ১৫-২০ কেজি, টিএসপি ৫০০ গ্রাম এবং এমওপি ২৫০ গ্রাম সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে রেখে দিতে হবে। মাটি শুকনো হলে গর্তে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। গর্ত করার ১০-১৫ দিন পর ভালভাবে আবার কুপিয়ে চারা বা কলম লাগাতে হবে।
*চারা লাগানোর পরপরই পানি ও খুঁটি দিতে হবে। প্রয়োজনে বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
*চারা রোপণের প্রথম দিকে ঘন ঘন সেচ দেয়া দরকার।
ফল ধরার পর দু-একটা সেচ দিতে পারলে ফল বড় হয় এবং ফলন বেড়ে যায়।
*একটি থোকায় বেশি ফল থাকলে পাতলা করে দিতে হবে। ফল আহরণের পর গাছের মরা, রোগাক্রান্ত ও কীটাক্রান্ত ডাল ছাঁটাই করে দিতে হবে।
*প্রতি বছর পূর্ণ বয়স্ক গাছে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হবে:
*উপর্যুক্ত সার গাছের গোড়া থেকে ১ মিটার দূরে যতটুকু জায়গায় দুপুরবেলা ছায়া পড়ে ততটুকু জায়গা কুপিয়ে মাটি আলগা করে সারগুলো ছিটিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
রোগবালাই দমন ব্যবস্থা :
অ্যানথ্রাকনোজ : কলেটোট্রিকাম সিডি নামক ছত্রাক লটকনের অ্যানথ্রাকনোজ রোগের কারণ। গাছের পাতা, কা-, শাখা-প্রশাখা ও ফল এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। ফলের গায়ে ছোট ছোট কাল দাগই এ রোগের প্রধান লক্ষণ। তাছাড়া ফল শক্ত, ছোট ও বিকৃত আকারের হতে পারে। ফল পাকা শুরু হলে দাগ দ্রুত বিস্তৃত হতে থাকে এবং ফল ফেটে বা পচে যেতে পারে।
প্রতিকার : গাছের নিচে ঝরে পড়া পাতা ও ফল সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। গাছে ফল ধরার পর টপসিন-এম অথবা নোইন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম অথবা টিল্ট-২৫০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর অন্তর ২-৩ বার ভালোভাবে স্প্রে করে এ রোগ দমন করা যায়।
ঢলে পড়া : ফিউজেরিয়াম নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। প্রথমে পাতা হলুদ হয়ে আসে এবং পরে শুকিয়ে যায়। এভাবে পাতার পর প্রশাখা-শাখা এবং ধীরে ধীরে সমস্ত গাছই ৮-১০ দিনের মধ্যে নেতিয়ে পড়ে ও মারা যায়।
প্রতিকার : এ রোগের কোন প্রতিকার নেই। তবে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলো নেয়া হলে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় বর্দোমিক্সার অথবা কুপ্রাভিট/কপার অক্সিক্লোরাইড প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে। বাগানের মাটির অম্লত্ব কমানোর জন্য জমিতে ডুলোচুন প্রয়োগ করতে হবে (২৫০-৫০০ গ্রাম/গাছ)। রোগ প্রতিরোধী আদিজোড়ের উপর কলম করতে হবে।
ফল ঝরে যাওয়া : পরাগায়নের অভাব, অধিক খরা বা শীত মৌসুমে এবং ফুল ধরার সময় মাটিতে সেচ না দেয়া, মাটিতে বোরনের অভাব, রোগ বা পোকার আক্রমণ ইত্যাদি অনেক কারণে ফল ঝরে যেতে পারে।
প্রতিকার : শীত বা খরা মৌসুমে নিয়মিত সেচ প্রদান করতে হবে। গাছে ফুল ফোটার পর বৃষ্টি না হলে অবশ্যই সেচ প্রদান করতে হবে। নিয়মিত সার ব্যবহার করতে হবে। বাগানে বা আশপাশে পুরুষ গাছ লাগাতে হবে।
পোকামাকড় দমন ব্যবস্থা :
ফল ছিদ্রকারী পোকা : ফল ছোট অবস্থায় যখন খোসা নরম থাকে তখন এই পোকা ফলের খোসা ছিদ্র করে ডিম পাড়ে। পরবর্তী সময়ে ডিম থেকে কীড়া উৎপন্ন হয় এবং ফলের নরম শাঁস খেয়ে থাকে।
প্রতিকার : আক্রান্ত ফল পোকাসহ মাটির গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে ২ মি.লি. হারে পারফেকথিয়ন বা লেবাসিড ৫০ ইসি মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার ফল ছোট অবস্থায় গাছে স্প্রে করতে হবে।
মিলিবাগ ও সাদা মাছি পোকা : সাধারণত শীতকালে এদের আক্রমণে পাতায় সাদা সাদা তুলার মতো দাগ দেখা যায়। এরা পাতার রস শুষে গাছকে দুর্বল করে। রস শোষণের সময় পাতায় বিষ্ঠা ত্যাগ করে এবং সেই বিষ্ঠার উপর শুটিমোল্ড নামক ছত্রাক জন্মে পাতার খাদ্য উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস করে।
প্রতিকার : আক্রান্ত পাতা ও ডগা পোকাসহ কেটে ধ্বংস করতে হবে। রগর/রক্সিয়ন ৪০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি. হারে মিশিয়ে আক্রান্ত পাতা ও গাছের ডালপালা প্রতি ১০ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করে ভিজিয়ে দিতে হবে।
চেফার বিটল : পূর্ণাঙ্গ পাতা খেয়ে ছিদ্র করে ফেলে। আস্তে আস্তে সমস্তপাতা খেয়ে জালের মতো করে ফেলে।
প্রতিকার : সুমি-আলফা/ডেবিকুইন ৪০ ইসি প্রতিলিটার পানিতে ১.৫ মি.লি. হারে মিশিয়ে স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়।
ফল সংগ্রহের সময় ও ফলন : শীতের শেষে অর্থাৎ ফাল্গুন মাসে গাছে ফুল আসে। আষাঢ়- শ্রাবণ মাসে (জুলাই-আগস্ট) মাসে ফল পাকে। ফলের রং হালকা হলুদ হতে ধূসর বর্ণ ধারণ করলে ফল সংগ্রহ করতে হবে। কলমের গাছে সাধারণত ৪ বছর বয়সে ফল আসা শুরু হয় তবে চারার ক্ষেত্রে ফল আসতে ৮-৯ বছর সময় লাগে। অবস্থাভেদে গাছের বয়সের উপর ভিত্তি করে গাছপ্রতি ৪ কেজি হতে ১২০/১৩০ কেজি পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে। লটকন চাষের ক্ষেত্রে যেকোন পরামর্শের জন্য নিকটস্থ উপজেলা কৃষি অফিস অথবা কৃষি কল সেন্টার ১৬১২৩-এ যোগাযোগ করুন।
কৃষিবিদ সাবিনা ইয়াসমিন
উপজেলা কৃষি অফিসার, সংযুক্ত: হর্টিকালচার উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা, মোবাইল : ০১৬৮৮০৫৪৭৮৬, ই-মেইল : Sabina 31st@gmail.com
পাট বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। পাটকে বলা হয় সোনালি আঁশ। এই সোনালি আঁশ বিদেশে রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রতি বছর ৫-৬ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া পাট চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এ কারণে উন্নত মানের পাট একমাত্র বাংলাদেশে জন্মে। পাট ফসল উৎপাদনের একটি বড় উপাদান হলো উন্নত মানের পাট বীজ। আমাদের দেশে প্রতি বছর আঁশ উৎপাদনের জন্য প্রায় ৩৫০০-৪০০০ মেঃ টন পাট বীজের প্রয়োজন হয়। এই প্রয়োজনীয় বীজের মাত্র ৮-১০% বীজ বিএডিসি সরবরাহ করে থাকে। বাকি বীজ কৃষকরা স্থানীয় বাজার বা প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে থাকেন। কেউ কেউ আবার নিজেদের উদ্যোগে বীজ উৎপাদনও করে থাকেন। কাজেই যে সকল কৃষক ভাইয়েরা নিজেদের উদ্যোগে বীজ উৎপাদন করে থাকেন তার সাথে সাথী ফসল হিসেবে সবজি চাষ করেও আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন।
সাথী ফসল
কোন জমিতে এক মৌসুমে এক সাথে বা পর্যায়ক্রমিক ভাবে দুটি বা তার বেশি ফসল উৎপাদন করাকে সাথী ফসল বা রিলে ক্রপিং বলে। অর্থাৎ কোন মৌসুমে পাট বীজ ফসল যখন লালশাক, পুঁইশাক, মুলা, ঢেঁড়স, মরিচ ইত্যাদি ফসলের সাথে উৎপাদন করা হয় তখন তাকে সাথী ফসল বা রিলে ক্রপিং বলে।
নাবী পাট বীজ উৎপাদন পদ্ধতি
নাবী মৌসুমে অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে তিন পদ্ধতিতে পাট বীজ উৎপাদন করা যায়। পদ্ধতিগুলো হলো- ক) সরাসরি বীজ বপণ পদ্ধতি, খ) কা- ও ডগা রোপণ পদ্ধতি এবং গ) চারা রোপণ পদ্ধতি। এদের মধ্যে সরাসরি বীজ বপন পদ্ধতি এবং কা- ও ডগা রোপণ পদ্ধতি দুটিই পাট বীজের সাথে সাথী ফসল হিসেবে সবজি উৎপাদন এর জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী।
সরাসরি বীজ বপন পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে ভালো বীজ পেতে হলে দেশি পাট বীজ শ্রাবণ মাস অর্থাৎ মধ্য জুলাই থেকে মধ্য আগস্ট এবং তোষা পাটের বীজ ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি অর্থাৎ ৩০ আগস্ট এর মধ্যে বপন করতে হবে। সারিতে বপন করলে প্রতি শতাংশ জমিতে ১৬ গ্রাম তোষা এবং ২০ গ্রাম দেশি বীজ বপন করতে হবে। আর ছিটিয়ে বপন করলে শতাংশে ২০ গ্রাম তোষা এবং ২৪ গ্রাম দেশি পাটের বীজ বপন করতে হবে।
কা- ও ডগা রোপণ পদ্ধতি
কৃষকের হাতে নাবীতে বপনের জন্য যখন কোন বীজ না থাকে সে বছর আঁশ ফসল থেকে বেছে কা- ও ডগা কেটে নিয়ে বীজ উৎপাদন করা যায়। আঁশ ফসলের জমি থেকে গাছের বয়স ১০০ দিনের মতো হলে সুস্থ সবল গাছ বেছে নিতে হবে। বাছাই করা গাছের কা- ও ডগাগুলো ধারালো চাকু, ব্লেড বা বঁটির সাহায্যে কাটতে হবে যাতে প্রতিটি টুকরার দৈর্ঘ্য ২০-২৫ সেমি. বা ৮-১০ ইঞ্চি হয় অর্থাৎ প্রতি খ-ে কমপক্ষে ২-৩টি পর্ব বা গিট থাকে। টুকরাগুলো গোড়ার দিকে তেরছা করে কাটতে হবে যাতে বাকল থেঁতলে না যায়। টুকরার তেরছা অংশ যেদিন ডগা সংগ্রহ করা হবে সে দিনই রোপণ করা ভালো। তবে মেঘলা দিনে বা পড়ন্ত রোদে ডগা রোপণ করা উত্তম। দেড় ফুট দূরত্বে উত্তর-দক্ষিণে সারি করে এবং উত্তর দিকে ৪৫ ডিগ্রি কাত করে সেই টুকরাগুলো রোপণ করতে হবে। অতঃপর যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে উভয় পদ্ধতির বীজ যথাসময়ে সংগ্রহ করতে হবে।
পাট বীজের সাথে সাথী ফসল হিসেবে সবজি উৎপাদন
পাট বীজ সাথে লালশাক, পুঁইশাক, বাটিশাক, চীনাশাক, মূলা, গাজর, ঢেঁড়স, ডাঁটাশাক, কলমিশাক, পালংশাক, মরিচ, টমেটো জাতীয় বিভিন্ন রবি ফসলের সাথে বা ক্ষেতের আইলে অথবা নতুন সুপারির বাগান বা আম, লিচু এ জাতীয় বিভিন্ন নতুন বাগানে সাথী ফসল হিসেবে উৎপাদন করা যায়। এই সমস্ত ফসল সারিতে বপন বা রোপণ করে দুটি সারির মাঝখানে সারি করে পাট বীজ বপন করতে হবে।
নাবী পদ্ধতিতে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে পাট বীজ উৎপাদনের জন্য সময় লাগে প্রায় ১২০ দিন। তবে আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে এই সময় কম বেশি হতে পারে। লালশাক, বাটিশাক, চীনাশাক, ডাঁটাশাক, কলমিশাক, পালংশাক, পুঁইশাক ইত্যাদি ফসল আলাদাভাবে প্রয়োজনীয় দূরত্বে সারি করে বীজ বপন করতে হবে এবং সারির মাঝ দিয়ে আবার সারিতে সরাসরি পাট বীজ বপন করে অথবা কা- বা ডগা রোপণ করে পাটবীজ উৎপাদন করা যাবে। পাট বীজ সংগ্রহ করার আগেই এই সমস্ত শাক সংগ্রহ করে খাওয়া বা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা যাবে। আবার পাট বীজ সংগ্রহ করার কিছু আগেই সেই জমিতে সারিতে ঢেঁড়স এর বীজ গর্ত করে লাগানো যাবে, পাট বীজ সংগ্রহ করার পর সেই ঢেঁড়স গাছ বড় হয়ে পরবর্তীতে ফলবান হবে। একই ভাবে টমেটো বা এ জাতীয় অন্যান্য ফসলও চাষ করা যাবে।
পাট বীজ ফসলের সাথে শাকসবজি চাষ পদ্ধতি
-রবি মৌসুমেও বীজ ফসলের সাথে সাথী ফসল হিসেবে শাকসবজি চাষ করা যায়। একই জমিতে পাট বীজ ফসলের সাথে শাকসবজি চাষ করে কৃষকের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও পাটের চাহিদা মেটানো যায়। এতে জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি করা যায়। শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি (আগস্টের প্রথম) থেকে পুরো ভাদ্র মাস চাষ (১৫ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত উঁচু জমিতে এ পদ্ধতি ব্যবহার উপযোগী।
-শীতকালে অর্থাৎ রবি মৌসুমে আগাম শাকসবজির (লালশাক, মুলা, পালংশাক, টমেটো, বেগুন ইত্যাদি) সাথে জমিতে পাট বীজ একই সাথে সারিতে চাষ করা যায়।
-শতাংশ প্রতি ২ কেজি জৈবসার বীজ বপনের ২০-২১ দিন আগে প্রথম চাষের সময় প্রয়োগ করে ভালো ভাবে জমি চাষ করতে হবে। জমির শেষ চাষের সময় রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়।
-শতাংশ প্রতি ইউরিয়া ৯০০ গ্রাম, টিএসপি ৬০০ গ্রাম, এমওপি ৩৭৫ গ্রাম, জিপসাম ৬০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। বীজ বপনের দিন প্রয়োজনীয় পরিমাণ ইউরিয়া (অর্থাৎ অর্ধেক ইউরিয়া), টিএসপি, এমপি, জিপসাম এবং জিংক সালফেট সার জমিতে শেষ চাষে প্রয়োগ করে মই দিয়ে ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
-দ্বিতীয় কিস্তির ইউরিয়া সার বীজ বপনের ২০-২৫ দিন পর লালশাক সম্পূর্ণভাবে তুলে এবং আগাছা তুলে জমিতে উপরিপ্রয়োগের সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ রস থাকে।
- প্রথমে ক্ষেতের চার পাশে মুলা/পালংশাকের বীজ ক্ষেতের সীমানা থেকে ১০ সেমি. ভেতরে লাইনে বপন করতে হবে। তারপর মূলা/পালং শাকের ১৫ সেমি. ভেতরে প্রথমে দুই লাইন পাট এরপর দুই লাইন সবজি এবং প্রতি দুই লাইন ফসলের মাঝে এক লাইন করে লালশাক বপন করতে হবে।
এ ছাড়া উপযুক্ত সময়ের সাথে সমন্বয় করে মুলা, গাজর, মরিচ এর বিভিন্ন জাতের বীজ সারিতে বপন করে সারির মাঝ দিয়ে পাট বীজ বপন করা যাবে। এ প্রক্রিয়ায় ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, জমি যেন সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে। পোকামাকড়, রোগজীবাণু থেকে ফসলকে মুক্ত রাখার জন্য সঠিকভাবে আন্তঃপরিচর্যা ও আগাছা দমন করতে হবে।
আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হওয়ার জন্য কোন জমিতে শুধু পাট বীজ উৎপাদন না করে এর সাথে সাথী ফসল হিসেবে এক বা একাধিক শাক বা সবজি জাতীয় ফসল উৎপাদন করে অনেক বেশি লাভবান হওয়া যায়।
কৃষিবিদ জান্নাতুল ফেরদৌস
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, কৃষিতত্ত্ব বিভাগ, বিজেআরআই, ঢাকা, মোবাইল : ০১৫৫২৯৯৯১৪৯, ই-মেইল :tanny.jannat92@gmail.com
মরিচ একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। আমাদের দেশে মূলত মরিচ মসলা ফসল হিসেবে পরিচিত। কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতেই এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। পুষ্টিমানে কাঁচা মরিচ ভিটামিন এ ও সি সমৃদ্ধ। দৈনন্দিন রান্নায় রঙ, রুচি ও স্বাদে ভিন্নতা আনার জন্য মরিচ একটি অপরিহার্য উপাদান। আমাদের দেশে সাধারণত মরিচ ছাড়া কোন তরকারির রান্না চিন্তা করা যায় না। এছাড়া বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য মরিচের সসের অনেক চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া এর ঔষধি গুণাগুণও রয়েছে। প্রায় সব অঞ্চলেই এর চাষাবাদ হয়। তবে চরাঞ্চালে মরিচের উৎপাদন বেশি হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন চর এলাকায় মরিচ প্রধান কৃষি ফসল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাছাড়া উত্তরবঙ্গ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মরিচের চাষ হয়ে থাকে। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, এদেশে রবি এবং খরিফ মৌসুমে মোট ১.০২ লাখ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয় এবং উৎপাদন হয় ১.০৩ লাখ মে.টন (শুকনা মরিচ)। গড় ফলন ১.২৭ টন/হে. (শুকনা মরিচ)। বাংলাদেশের অনেক কৃষক শুধুমাত্র মরিচ উৎপাদন করে জীবন নির্বাহ করে থাকে। বাংলাদেশে দুই ধরনের মরিচ চাষ হয়। যথা কম ঝাল বা ঝালবিহীন এবং ঝাল মরিচ। ঝালবিহীন মরিচ আচার, সবুজ সবজি এবং সালাদ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ঝালযুক্ত মরিচ মূলত প্রধান মসলা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটা সরু ও লম্বা হয়। কেপসাইসিন নামক রাসায়নিক পদার্থের জন্য মরিচ ঝাঁঝালো হয় এবং কেপসানথিন নামক একটি রঞ্জক পদার্থের জন্য মরিচ উজ্জ্বল ও লাল হয়।
মরিচের বিভিন্ন জাতের পরিচিতি
মরিচের অনেক স্থানীয় জাত আছে, কৃষকরা বাজারের চাহিদা ও স্থানীয় জাতের ফলনের ওপর জাত নির্বাচন করে থাকে। তবে মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি মরিচ-১ (বাংলা লংকা), বারি মরিচ-২ ও বারি মরিচ-৩ নামে রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধী উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে (মাগুরা, ফরিদপুর, বগুড়া, রংপুর, গাইবান্ধা, কুমিল্লা, রাজশাহী, নীলফামারী, ডোমার, পঞ্চগড়, পাবনা, জামালপুর ও লালমনিরহাটে) স্থানীয় জাতের পাশাপাশি সারা বছর ব্যাপকভাবে চাষাবাদ হয়। এছাড়াও দেশে বিভিন্ন হাইব্রিড মরিচ বীজ যেমন ঝিলিক, বিজলী ইত্যাদি নামে বাজারে পাওয়া যায়।
মসলা গবেষণা কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি মরিচ-২ এর বৈশিষ্ট্য
গাছ লম্বা, ঝোপালো ও প্রচুর শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট। গাছ লম্বায় ৮০-১১০ সেমি. এবং পাতার রং হালকা সবুজ। প্রতি মরিচের ফলের দৈর্ঘ্য ৭.০-৭.৫ সেমি. ও ব্যাস ০.৭-১.০ সেমি, ওজন গড়ে ২.৫ গ্রাম, ১০০০ বীজের ওজন ৪.৫ গ্রাম, প্রতি গাছে মরিচের সংখ্যা ৪৫০-৫০০টি এবং ওজন ১১০০-১২০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। এ জাতের গাছের মরিচের ত্বক পুরো, এটি গ্রীষ্মকালে চাষ উপযোগী জাত তবে সারা বছর চাষ করা যায়। এ জাতটি মাঠে ২৪০ দিন পর্যন্ত (মার্চ-অক্টোবর) থাকে। তুলনামূলকভাবে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয়। কচি অবস্থায় ফল হালকা সবুজ রঙের এবং পাকা অবস্থায় চকচকে লাল রঙের হয়। হেক্টর প্রতি সবুজ অবস্থায় ফলন ২০-২২ টন।
উৎপাদন প্রযুক্তি
মাটি ও আবহাওয়া
মরিচ উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ভালো জন্মে। সাধারণত ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা মরিচ চাষের জন্য উপযোগী। সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এবং সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা মরিচের গাছের বৃদ্ধিতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলে মরিচ গাছের পাতা ঝরে যায় এবং গাছ পচে যায়। পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত বেলে-দো-আঁশ থেকে এঁটেল-দো-আঁশ মাটিতে মরিচ চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো-আঁশ বা পলি দো-আঁশ মাটি চাষাবাদের জন্য উত্তম। মাটি অতিরিক্ত ভেজা থাকলে ফুল ও ফল ঝরে পরে। মাটির ঢ়ঐ ৬-৭ হলে মরিচের ফলন ভালো হয়।
জমি তৈরি
শীতকালীন মরিচের জন্য প্রথমে জমিকে চারিদিক দিয়ে আইলের অতিরিক্ত অংশ কেটে নিতে হবে । তারপর ৪-৬টি এবং ট্রাক্টর গভীর চাষ দিতে হবে। জমিতে শেষ চাষের আগে একবার মই দিয়ে সমান করে আগাছা বেছে ফেলে দিতে হবে। মাটির ঢেলা ভেঙে মাটি ঝুরঝুর ও সমতল করে নিতে হবে। জমি তৈরিতে শেষ চাষের আগে জৈব এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। এরপর বেড তৈরি করতে হবে। বেড চওড়ায় ১ মিটার হলে ভালো হয়। তবে দৈর্ঘ্য জমির আকার অনুসারে হলে ভালো হয়। বেডের উচ্চতা ১০-১৫ সেমি. হতে হয়। পাশাপাশি দুটো বেডের মাঝখানে ৫০ সেমি. প্রশস্ত এবং ১০ সেমি. গভীরতা বিশিষ্ট নালা পানি সেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধার্থে রাখতে হয়।
মাটির অম্লতা দূর করা
ঢ়ঐ মান ৫.৮-৬.৫ এর চাইতে কম হলে মাটি বেশি অম্লিয় হয়ে যায় ফলে মরিচের ফলন কমে যাবে। এক্ষেত্রে প্রতি শতাংশ জমিতে ১-২ কেজি হারে চুন মিশিয়ে মাটির অম্লতা দূর করতে হবে।
উৎপাদন মৌসুম
বারি মরিচ-২ সারা বছর চাষ করা যায়। তবে রবি মৌসুমের জন্য ১-৩০ সেপ্টেম্বর ও খরিফ মৌসুমের জন্য ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ মরিচ উৎপাদনের উপযুক্ত সময়।
বীজহার ও রোপণ পদ্ধতি
মরিচ সাধারণত দুই পদ্ধতিতে চাষ করা যায়। যথা ঃ ১. সরাসরি ক্ষেতে বীজ বপন ২. বীজ হতে চারা তৈরি করে। রবি ও খরিফ উভয় মৌসুমে বীজতলায় চারা তৈরি করলে ১-১.৫ কেজি/হে. বীজের প্রয়োজন হয়। আবার সরাসরি ছিটিয়ে মরিচ চাষাবাদ করলে হেক্টরপ্রতি ৬-৭ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। তবে এ পদ্ধতি শুধু মাত্র রবি মৌসুমে অবলম্বন করা উচিত।
মরিচের বীজ শোধন
বীজতলায় বীজ বপনের আগে মরিচের বীজকে শোধন করে নিতে হবে এতে করে চারা অবস্থায় রোগ-বালাই কম হবে।
প্রোভেক্স জাতীয় ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করা যায়। প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম প্রভেক্স-২০০ দ্বারা বীজ শোধন করতে হবে
বীজ বপনের পূর্বে মরিচ বীজ ওপরে উল্লেখিত ছত্রাকনাশক দ্বারা ৩০ (ত্রিশ) মিনিট ভিজিয়ে রেখে ছায়াযুক্ত স্থানে ১০-১৫ মিনিট শুকাতে হবে
বীজশোধনের কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি ও শোধিত বীজ ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
বীজ শোধনের ফলে বীজ বাহিত রোগ সংক্রমণ থেকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
বীজ বপন
রোপণ পদ্ধতি : জমিতে বীজ বপনের আগে ১২ ঘণ্টা পনিতে ভিজিয়ে রেখে, পানি থেকে উঠিয়ে হালকা ছায়াতে ২ গ্রাম/কেজি হারে প্রভেক্স মিশিয়ে শুকিয়ে ঝরঝরা করে মূল জমিতে ছিটিয়ে দিতে হবে। মনে রাখা দরকার বীজ কোনো ক্রমেই ১-১.৫ সেমি. মাটির গভীরে যেন না যায়। বপনের সময় জমিতে পর্যপ্ত পরিমাণ আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে। প্রয়োজনে বীজ বপনের ২-৩ দিন পর হালকা করে সেচ দিতে হবে এতে বীজ তাড়াতাড়ি গজাবে। সরাসরি ছিটিয়ে বপন করলে ১৫-২০সেমি. পরপর গাছ রেখে পাতলা করতে হবে।
চারা রোপণ
৩৫-৪০ দিন বয়সের সুস্থ চারা, ৫০-৬০ সেন্টিমিটার (সারি-সারি) দূরত্বে, ও ৫০-৬০ সেন্টিমিটার (চারা-চারা) পরপর, ৩-৪ সেন্টিমিটার গভীর গর্তে ১টি করে রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের পর ২-৩ দিন চারার গোড়ায় হালকা পরিমাণে পানি দিতে হবে।
সার ব্যবস্থপনা ও প্রয়োগ পদ্ধতি : নিম্নোক্ত হারে জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে-
চারা রোপণের ২৫, ৫০ এবং ৭০ দিন পর পর্যায়ক্রমে ১ম, ২য় ও ৩য় কিস্তিতে হেক্টরপ্রতি সার গাছের গোড়া থেকে ১০-১৫ সেন্টিমিটার দূরে ছিটিয়ে ভিটির মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
শেষ চাষের সময় সম্পূর্ণ গোবর বা কম্পোস্ট, টিএসপি, জিপসাম, জিংক, বোরন এবং ১২৫ কেজি প্রয়োগ করতে হবে। বাকি এমওপি এবং ইউরিয়া সার তিন কিস্তিতে বীজ গজানোর ২৫, ৫০ এবং ৭৫ দিন পর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণত সকাল বেলা কিংবা বিকাল বেলা জমিতে সার প্রয়োগ করতে হয়। প্রতি কিস্তি সার জমিতে সেচ দেওয়ার পর পানি বের করে দিয়ে অর্থাৎ জমিতে সেচ দেওয়ার পর যখন কোনো পানি জমিতে জমে না থাকে সে সময় সার প্রয়োগ করতে হবে। কারণ সেচের পর জমিতে সার প্রয়োগ করলে সার তাড়াতাড়ি মাটির সাথে মিশে যায়। এভাবে সার প্রয়োগ করলে সারের অপচয় কম হয়।
হরমোন প্রয়োগ
প্ল্যানোফিক্স নামক হরমোন প্রয়োগে দেখা গেছে মরিচের ফুল কম ঝরে এবং ফলন বাড়ে। এক মিলিলিটার প্ল্যানোফিক্স ৪.৫ লিটার পানিতে মিশিয়ে সব গাছের ওপর ছিটিয়ে দিতে হবে। ফুল আসলে প্রথমবার এবং ২০-২৫ দিন পর দ্বিতীয়বার প্রয়োগ করতে হবে। এক হেক্টর জমিতে প্রায় ৫০০ লিটার মিশ্রণের প্রয়োজন হয়।
নিড়ানি
জমিতে আগাছার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে নিড়ানি দিতে হবে। যদি আগাছা বেশি থাকে তাহলে নিড়ানি বেশি দিতে হবে। অর্থাৎ জমিতে কোনক্রমেই আগাছা রাখা যাবে না।
পাতলাকরণ
বুনা মরিচের ক্ষেত্রে মরিচ গজানোর ২৫-৩০ দিন পর ২-৩ ধাপে পাতলা করতে হবে। প্রতি মিটার এ ১২-১৫টি গাছ রেখে পাতলা করতে হবে।
সেচ
মাটিতে অতিরিক্ত আর্দ্রতা মরিচ সহ্য করতে পারে না আবার বেশি সেচ প্রয়োগ করলে গাছ লম্বা হয় ও ফুল ঝড়ে যায়। জমির আর্দ্রতার ওপর নির্ভর করে ৩/৪টি সেচ দিতে হবে। ফুল আসার সময় এবং ফল বড় হওয়ার সময় জমিতে পরিমাণমতো আর্দ্রতা রাখতে হবে।
মালচিং
সেচের পর মাটিতে চটা বাঁধলে নিড়ানি দিয়ে ভেঙে দিতে হবে তাতে শিকড় প্রয়োজনীয় বাতাস পায় এবং গাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
ফসল সংগ্রহ
মরিচের ফুল ফোটা, ফল ধরা ও রঙ ধারণ তাপমাত্রা, মাটির উর্বরতা এবং ভালো জাতের ওপর নির্ভর করে। উষ্ণ তাপমাত্রায় ফল তাড়াতাড়ি পাকে এবং ঠা-া তাপমাত্রায় ফল দেরিতে পাকে। মরিচ বীজ বপনের ৬০-৬৫ দিন পর ফুল আসা শুরু করে। ফুল ধরার ১৫-২০ দিন পর ফল ধরা শুরু করে। ফল আসার ২০-২৫ দিন পর ফল পাকতে শুরু করে। চারা লাগানোর ক্ষেত্রে, চারা লাগানোর ৩৫-৪০ দিন পর গাছে ফুল ধরতে শুরু করে, ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে ফল ধরে এবং ৭৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে ফল পাকতে আরম্ভ করে। কাঁচা অথবা পাকা অবস্থায় মরিচ তোলা হয়। মরিচ বীজের জন্য গাছের মাঝামাঝি অংশ থেকে মরিচ সংগ্রহ করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে পাকা ফল সংগ্রহ করা যায়। শুকনো মরিচের জন্য আধাপাকা মরিচ তুললে মরিচের রঙ ও গুণগতমান নষ্ট হয়ে যায়। তাই ফল লাল টকটকে হয়ে পাকলে সংগ্রহ করতে হবে। মরিচ সাধারণত রৌদ্রজ্জ্বল দিনে উত্তোলন করলে মরিচের গুণগতমান ভালো থাকে তাতে বাজার মূল্য বেশি পাওয়া যায়। ফল উঠানোর সময় বোঁটার ওপরের অংশ এবং ফলের ওপরের অংশ অর্থাৎ বোঁটার কাছের অংশ ধরে ফল তুলতে হবে।
সংগ্রহ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা
জমি থেকে ফসল সংগ্রহের পর সংগৃহীত মরিচ হতে আঘাত প্রাপ্ত, রোগাক্রান্ত, বিকৃত, কাঁচা, অর্ধপাকা ও সম্পূর্ণ পাকা মরিচগুলোকে আলাদা করে ছায়াযুক্ত স্থানে ৮-১০ ঘণ্টা হালকা ছড়িয়ে রাখতে হবে। কোনো ক্রমেই মরিচের বোঁটা ছাড়ানো যাবে না তাতে মরিচ অল্প সময়ের মধ্যেই তার সজীবতা হারিয়ে ফেলে ও পচে যায়। সূর্যালোকের সাহায্যে ফল শুকানো দেশের একটি প্রচলিত পদ্ধতি। কিন্তু সতর্ক না হলে অতিরিক্ত সূর্য তাপে ফল সাদাটে রং এবং সংগ্রহকৃত ফলে বৃষ্টি বা শিশির পড়লে ফল পচা রোগ দেখা দেয়। এর পরে পাকা মরিচ পলিথিনে বা চাতালে বা পাকা মেঝেতে রৌদ্রজ্জ্বল পরিবেশে শুকাতে হবে। শুকানোর সময় মরিচ পাতলা করে বিছিয়ে দিতে হবে। মরিচের আর্দ্রতা ১০-১২% এ পৌঁছলে উক্ত মরিচ সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত হবে। শুকানো মরিচ ঝাকি দিলে ভেতরের বীজগুলো ঝনঝন শব্দ করলে বুঝতে হবে মরিচ ভালোভাবে শুকিয়েছে। সাধারণত সূর্যের আলোতে মরিচ শুকাতে ১০-১৫ দিন সময় লাগে।
বীজ সংরক্ষণ
সাধারণত জাতভেদে পাতলা ত্বক ও শুষ্ক পদার্থের পরিমাণ কম এই জাতীয় মরিচ তাড়াতাড়ি শুকানো যায় কিন্তু পুরু মাংসল ত্বক বিশিষ্ট মরিচ শুকানো বেশ সময়সাপেক্ষ এবং কঠিন। মরিচ শুকানোর পরে ছায়াযুক্ত স্থানে ঠা-া করে সংরক্ষণ করতে হবে। ছয় মাস হতে এক বছর সময় পর্যন্ত মরিচ সংরক্ষণের জন্য টিনের পাত্র, পলিথিন ব্যাগ, মাটির পাত্র, ডুলি বা ছালার ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। তবে দ্বিস্তর বিশিষ্ট পলিথিন ব্যাগ ও টিনের পাত্রের মধ্যে পলিথিন দিয়ে তার ভেতর মরিচ রাখলে মরিচের রঙ ও গুণগতমান ভালো থাকে। সংরক্ষিত মরিচ মাঝে মাঝে রৌদ্রে দিলে ভালো থাকে। মরিচ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে মরিচের বোটা যেন মরিচ থেকে পৃথক না হয়ে যায় সে দিকে সর্তক দৃষ্টি রাখতে হবে। বোঁটা মরিচ থেকে পৃথক হয়ে গেলে মরিচের বীজ বের হয়ে যায়। ফলে মরিচের ওজন ও ঝাঁঝ দুইই কমে যায় এবং মরিচের বীজের গুণগতমান হ্রাস পায়। সংরক্ষিত মরিচের মধ্যে কয়েক টুকরা চারকোল /কাঠের কয়লা রেখে দিলে মরিচ ভালো থাকে। এ ক্ষেত্রে চারকোল/কাঠের কয়লা অতিরিক্ত আর্দ্রতা শোষণ করে নেয়। ফলে সহজে রোগ বা পোকার আক্রমণ হয় না।
রোগ ব্যবস্থাপনা
সাধারণত মরিচের রোগগুলোর জন্য দায়ী হল মাটি ও বীজের মধ্যে বসবাসকারী বিভিন্ন জীবাণু। নিম্নে মরিচের বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
ড্যাম্পিং অফ/গোড়া পচা/মূল পচা
আক্রান্ত হওয়ার পর্যায়- চারা অবস্থায় এই রোগ হয়।
রোগের কারণ - পিথিয়াম ও রাইজোকটোনিয়া (চযুঃযরঁস ধহফ জযরুড়পঃড়হরধ) নামক ছত্রাক দ্বারা ঘটে থাকে ।
রোগের লক্ষণ- বীজ বপনের পর পরই বীজ পচে যেতে পারে অথবা চারা মাটি থেকে উঠার পরে চারা গাছ ফ্যাকাশে, লিকলিকে ও দুর্বল হয়। কচি চারায় গোড়ায় পানিভেজা দাগ পড়ে ও চারা ঢলে পড়ে মারা যায়।
দমন ব্যবস্থা- মরিচ বীজ প্রোভেক্স অথবা রিডোমিল গোল্ড @ ২.৫ গ্রাম/কেজি বীজ দ্বারা শোধন করে বপন করতে হবে অথবা মরিচ বীজ ৫২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় গরম পানিতে ৩০ মিনিট রেখে শোধন করে নিয়ে বপন করতে হবে। কুপ্রাভিট অথবা অটোস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে আক্রান্ত গাছের গোড়ার মাটিতে ¯েপ্র করতে হবে।
ঢলে পড়া (ঋঁংধৎরঁস রিষঃ)
আক্রান্ত হওয়ার পর্যায় - মূল জমিতে চারা রোপণের পর মরিচ গাছের দৈহিক বৃদ্ধি অবস্থায় এই রোগ দেখা যায়।
রোগের কারণ-ফিউজারিয়াম অক্সিস্পোরাম (ঋঁংধৎরঁস ড়ীুংঢ়ড়ৎঁস ভ.ংঢ়. পধঢ়ংরপর) নামক ছত্রাক দ্বারা এই রোগ হয়ে থাকে ।
রোগের লক্ষণ - প্রথমে গাছের নিচের দিকের কা-ে আক্রমণ করে এবং গাঢ় বাদামি ক্যাংকার সৃষ্টি করে কা-ের গোড়াকে চর্তুদিক হতে বেষ্টন করে। ধীরে ধীরে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়। অনেক সময় মাটির উপরিভাগ বরাবর গাছের কা- কালো হয়ে ঢলে পড়ে। কা- লম্বালম্বিভাবে ফাটালে ভাসকুলার বান্ডল বিবর্ণ দেখা যাবে। রোগাক্রান্ত গাছ ১০-১৫ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে ঢলে পড়ে।
দমন ব্যবস্থা-
প্রতি কেজি বীজের জন্য ২.৫ গ্রাম হারে প্রোভেক্স অথবা অটোস্টিন মিশিয়ে বীজ শোধন করে বপন করতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম অটোস্টিন মিশিয়ে আক্রান্ত গাছের গোড়ার মাটিতে ¯েপ্র করতে হবে।
অ্যানথ্রাকনোজ/ ফল পচা - এ রোগ বীজের মধ্যে বসবাসকারী জীবাণু দ্বারা ঘটে থাকে।
আক্রান্ত হওয়ার পর্যায় - এই রোগ সাধারণত বয়স্ক গাছে অর্থাৎ পাতা, ফল ও কা-ে আক্রমণ করে।
রোগের কারণ-কলিটোট্রিকাম ক্যাপসিসি(ঈড়ষষবঃড়ঃৎরপযঁস পধঢ়ংরপর) নামক ছত্রাক এই রোগের জন্য দায়ী।
রোগের লক্ষণ - এ রোগে আক্রান্ত হলে গাছের পাতা, কা- ও ফল ক্রমশ ওপর হতে মরতে থাকে এবং গাছ ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে। ফল ও কা-ে গোল গোল কালো দাগ দেখা যায়। ফলের ওপর গোলাকার কালো বলয় বিশিষ্ট গাঢ় ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং ইহা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে ফলকে পচিয়ে দেয়। আক্রান্ত ফল ঝরে পড়ে। ব্যাপকভাবে আক্রান্ত গাছ দ্রুত মরে যায়।
দমন ব্যবস্থা
প্রতি কেজি বীজ ২.৫ গ্রাম অটোস্টিন দ্বারা শোধন করে বপন করতে হবে। রোগের লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে টিল্ট ২৫০ ইসি @০.৫ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার ¯েপ্র করতে হবে
পোকা ব্যবস্থাপনা
মরিচ গাছ প্রধান প্রধান ক্ষতিকর পোকামাকড় সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-
এফিড বা জাব পোকা
আক্রান্ত হওয়ার পর্যায়- মরিচ গাছের কচি ও বয়স্ক পাতা
ক্ষতির ধরন- সব ধরনের পাতার নিচের দিকে বসে রস শুষে খায় ফলে পাতা নিচের দিকে কুকড়ে যায় এমনকি এরা গাছের কা-েও আক্রমণ করে থাকে ফলে কা- শুকিয়ে মারা যায়।
দমন ব্যবস্থা
আঠালো হলুদ/সাদা ফাঁদ ব্যবহার করে এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
সাবান-পানি ব্যবহার (প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ডিটারজেন্ট) ¯েপ্র করে আক্রমণ কমানো সম্ভব। আক্রমণ বেশি হলে স্বল্পমেয়াদি বিষক্রিয়ার ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি (ফাইফানন/সাইফানন) ১০ মিলি অথবা কুইনালফস ২৫ ইসি (করলাক্স/ একালাক্স/কিনালাক্স/ অন্য নামের) বা ডাইমেথয়েট (বিস্টারথোয়েট/টাফগর) বা কেরাতে ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি হারে বা ট্রেসার ১০ লিটার পানিতে ০.৪ মিলি হারে ¯েপ্র করে এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
সাদা মাছি
আক্রান্ত হওয়ার পর্যায়- সাধারণত কচি চারা গাছ আক্রমণ করে।
ক্ষতির ধরন- কচি পাতার নিচে বসে রস শুষে খায় ফলে পাতা কুঁকড়ে যায়।
দমন ব্যবস্থা-
আঠালো হলুদ/সাদা ফাঁদ ব্যবহার করে এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সাবান-পানি ব্যবহার (প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ডিটারজেন্ট) ¯েপ্র করে আক্রমণ কমানো সম্ভব। নিম বীজের নির্যাস (আধা ভাঙ্গা ৫০ গ্রাম নিম বীজ ১ লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে) ¯েপ্র করা। আক্রমণ বেশি হলে প্যাগাসাস অথবা ইনট্রিপিড (১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি হারে) অথবা এডমায়ার ২০০ এসএল (১০ লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে) ¯েপ্র করা ।
মাইট
আক্রান্ত হওয়ার পর্যায়- মাইট মরিচ গাছের কচি ও বয়স্ক পাতা
ক্ষতির ধরন- সাধারণত পাতার নিচের দিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিরার মধ্যকার এলাকা বাদামি রঙ ধারণ করে ও শুকিয়ে যায় এবং মারাত্মকভাবে আক্রান্ত পাতা সহজেই ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়। কচি পাতা মাকড় দ্বারা আক্রান্ড হলে পাতা নিচের দিকে মুড়ে গিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে নরম হয়ে যায়।
দমন ব্যবস্থা
আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে মাকড়নাশক ওমাইট ৫৭ ইসি (প্রতি পানিতে ২.০ মিলি হারে) বা ভার্টিমেক ১৮ ইসি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১৫ মিলি হারে পাতা ভিজিয়ে ¯েপ্র করে মাকড়ের আক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব। মাকড়নাশক পাওয়া না গেলে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক (কুমুলাক্স, থিওভিট ইত্যাদি) ¯েপ্র করে মাকড়ের আক্রমণ কমানো সম্ভব। মাকড়ের সাথে অন্য পোকার আক্রমণ দেখা দিলে প্রথমে মাকড়নাশক ব্যবহার করে অতঃপর কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
ড. মোঃ নুর আলম চৌধুরী
ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মসলা গবেষণা কেন্দ্র, শিবগঞ্জ, বগুড়া, মোবা : ০১৭১১২৪৬৩৫২, মেইল : dmnalam@yahoo.com
ধান চাষে পানি সাশ্রয়ী সেচ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমানো যায় এবং সঠিক পদ্ধতির সেচ ব্যবস্থাপনা অনুসরণের মাধ্যমে ধানের ফলনের ক্ষতি এড়ানো যায়। সমীক্ষায় দেখা গেছে, কেবল আমন মৌসুমেই সম্পূরক সেচ প্রয়োগের মাধ্যমে খরা মোকাবেলা করে দশ লাখ টন বাড়তি ধান উৎপাদন করা সম্ভব। এ দেশে মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ, ৮৫ লাখ ৮৫ হাজার ২০৭ দশমিক ৪ হেক্টর। আর মোট সেচকৃত জমির পরিমাণ ৭৬ লাখ ১৪ হাজার ৫৭২ হেক্টর। এর মধ্যে আমন মৌসুমে ২০ লাখ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন পর্যায়ে সেচের প্রয়োজন হয়। আমাদের দেশে আউশ, আমন ও বোরো তিন মৌসুমেই কমবেশি সেচের প্রয়োজন হয়। তবে বোরো মৌসুমে সেচের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। এজন্য বোরোর আবাদ এলাকা আর না বাড়িয়ে আউশ এবং বৃষ্টিনির্ভর আমন ধানের আবাদ এলাকা বাড়ানোর জন্য সরকারি প্রচেষ্টা জোরদার করা হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে বোরো চাষে সেচ কাজে পানির চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায় যা মেটাতে ভূ-গর্ভস্থ পানি অধিক পরিমাণে উত্তোলন করা হয়। ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর ব্যাপক চাপ পড়ে এবং পরিবেশগত ভারসাম্য বিঘিœত হয়।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে ১৫০০-২০০০ লিটার পানির প্রয়োজন হয় যা সেচের মাধ্যমে পূরণ করা ব্যয়বহুল। এই বাস্তবতায় বৃষ্টি নির্ভর আমন ধানের আবাদ এলাকা বাড়ানোর বিষয়টি সরকারি-বেসরকারি কর্মপ্রয়াসে এখন অগ্রাধিকার পাচ্ছে। আমন মৌসুমে বিশেষ করে ধান রোপণের সময়টাতে এবং ধানের ফুল আসা পর্যায়ে যখন খরা দেখা দেয় তখন সম্পূরক সেচ প্রয়োগ করা অতীব প্রয়োজন। আমন আমন মৌসুমে বিশেষ করে ধান রোপণের সময়টাতে এবং ধানের ফুল আসা পর্যায়ে যখন খরা দেখা দেয় তখন সম্পূরক সেচ প্রয়োগ করা অতীব প্রয়োজন। এছাড়াও আউশ মৌসুমে ধান চাষে সম্পূরক সেচ প্রয়োগের মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধি করা যায়। অনুরূপভাবে বিভিন্ন সেচ প্রযুক্তি যেমন বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে রবি ফসল উৎপাদন, অগভীর নলকূপে চেক ভাল্ব সংযোজনের মাধ্যমে প্রাইমিং সমস্যা দূরীকরণ, গভীর নলকূপে পিভিসি পাইপের মাধ্যমে পানি বিতরণ পদ্ধতি, এডব্লিউডি পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে আউশ-আমনের পাশাপাশি বোরো ধান চাষে পানি সাশ্রয় এবং ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব। ব্রি থেকে প্রকাশিত ‘আধুনিক ধানের চাষ’ শীর্ষক বইটিতে এসব প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, ধানের জমিতে সব সময় দাঁড়ানো পানি রাখার প্রয়োজন নেই। ধানের চারা রোপণের পর জমিতে ১০-১২ দিন পর্যন্ত ছিপছিপে পানি রাখতে হবে, যাতে রোপণকৃত চারায় সহজে নতুন শিকড় গজাতে পারে। এরপর কম পানি রাখলেও চলবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, ধানগাছ যেন পানির স্বল্পতায় না পড়ে। বৃষ্টিনির্ভর রোপা আমন এলাকায় জমির আইল ১৫ সেন্টিমিটার উঁচু ও ফাটলবিহীন রাখলে অনেকাংশে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা যায়, যা খরা থেকে ফসলকে কিছুটা হলেও রক্ষা করে। এরপরও যদি ফসল খরা কবলিত হয় তাহলে প্রয়োজন মাফিক যথাসময়ে সম্পূরক সেচ দিতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, খরা কবলিত ধানের চেয়ে সম্পূরক সেচযুক্ত ধানের ফলন হেক্টরে প্রায় এক টন বেশি হয়।
বৃষ্টির পানি পুকুরে সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ
ব্রির সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগ উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টির পানি পুকুরে সংরক্ষণ করে তার মাধ্যমে সেচ প্রয়োগ করে সফলভাবে রবি ফসল উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, রবি মৌসুমের শুরুতে পুকুরের ৮০ ভাগ পানি দ্বারা পূর্ণ থাকে। যা দিয়ে রবি ফসলে তিনটি সেচ দেয়া সম্ভব হয়। এ ক্ষেত্রে জমির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় । এ ক্ষেত্রে ধান ছাড়া অন্যান্য ফসল যেমন সবজি, সরিষা, সূর্যমুখী চাষ করা যায়।
অগভীর নলকূপে চেক ভাল্ব সংযোজনের মাধ্যমে সেচ সহজীকরণ
বাংলাদেশের মোট সেচকৃত জমির শতকরা ৮০ ভাগে সেচ প্রদান করা হয় অগভীর নলকূপের মাধ্যমে। বর্তমানে প্রায় ১৬ লক্ষ অগভীর নলকূপ সেচ কাজে নিয়োজিত আছে। অগভীর নলকূপের পাম্প চালানোর সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো প্রাইমিং। প্রাইমিংয়ের মাধ্যমে মাটির নিচে নলকূপের ভেতরে থাকা পানিকে সেচ পাম্পের ডেলিভারির মুখ পর্যন্ত তুলে আনতে হয়। অগভীর নলকূপের পাম্প যখনই চালু করা হয় তখনই প্রাইমিংয়ের প্রয়োজন হয়। প্রাইমিং কাজটি অত্যন্ত বিরক্তিকর এবং এ কাজের জন্য সময় অপচয় ও অতিরিক্ত শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। বার বার প্রাইমিংয়ের বিড়ম্বনা দূর করার জন্য ব্রির সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগ একটি চেক ভাল্ব প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এই চেক ভাল্ব ব্যবহার করলে মৌসুমের শুরুতে একবার প্রাইমিং করলে সারা মৌসুমে আর এর প্রয়োজন হবে না।
প্রযুক্তির সুবিধা : এ প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য বিশেষ কোনো কারিগরি দক্ষতার প্রয়োজন নেই। অতি সহজেই চেক ভাল্বটি অগভীর নলকূপের সাথে সংযোজন করা যায়। এটি সহজে বহনযোগ্য। যে কোনো স্থানীয় ওয়ার্কশপে এটি তৈরি করা যায়। সেচ মৌসুম শেষে চেকভাল্ব খুলে বাড়িতে রাখা যায়। পাম্প চালানোর জন্য শুধু সুইচ (বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে) টিপ দেওয়া এবং হাতল (ডিজেল চালিত ক্ষেত্রে) ঘুরানোই যথেষ্ট। এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ নাই বললেই চলে। তবে ৮-১০ বছর পর পর রাবারের ভাল্বটি নতুন করে লাগাতে হবে।
অসুবিধা : সেটিং সঠিক না হলে চেক ভাল্ব ঠিকমতো কাজ করে না।
গভীর নলকূপে পিভিসি পাইপের মাধ্যমে পানি বিতরণ
বাংলাদেশে সেচকৃত জমির পরিমাণ আবাদি জমির শতকরা ৬০ ভাগ। সেচকৃত জমির শতকরা ১৫ ভাগে ভূ-উপরিস্থ পানি এবং শতকরা ৮৫ ভাগে ভূ-গর্ভস্থ পানি দিয়ে সেচ প্রদান করা হয়। ভূ-উপরিস্থ পানি প্রদানের জন্য লো লিফ্ট পাম্প ও বিভিন্ন প্রকার বাঁধ (ড্যাম) ব্যবহার করা হয়। আবার ভূ-গর্ভস্থ পানি প্রদানের জন্য গভীর নলকূপ, অগভীর নলকূপ, সাবমার্সিবল পাম্প ইত্যাদি সেচযন্ত্র ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে দেশে প্রায় ৩৬ হাজার গভীর নলকূপ এবং ১৬ লক্ষ অগভীর নলকূপ সেচ কাজে নিয়োজিত আছে। এ ধরনের সেচ যন্ত্রে পানি উত্তোলন এবং ডিসচার্জ ক্ষমতা সন্তোষজনক থাকলেও মাঠে পানি বণ্টনের পদ্ধতি অনেক ক্ষেত্রে সন্তোষজনক হয় না। বিশেষ করে গভীর নলকূপের ক্ষেত্রে যখন কাঁচা, আধা পাকা, ভাঙা পাকা নালার মাধ্যমে মাঠে পানি বণ্টন করা হয় তখন সরবরাহকৃত পানির শতকরা ২৫-৩০ ভাগ অপচয় হয় শুধু নালাতেই, যাকে বড় ধরনের পরিবহন অপচয় বলা যায়। আবার যে সকল জমির উচ্চতা পানির উৎস থেকে উপরে অবস্থিত সে সকল জমিতে উল্লিখিত পদ্ধতিতে পানি পৌঁছানো সম্ভব হয় না। ব্রির সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগ গভীর নলকূপে পিভিসি পাইপের মাধ্যমে পানি বিতরণ পদ্ধতি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এ ক্ষেত্রে পিভিসি পাইপ, ক্রস, টি, বেন্ড ও ক্যাপ ব্যবহার করে সেচ যন্ত্রের পানি বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানোর বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। এ পদ্ধতিতে পানি সাশ্রয়ের মাধ্যমে সেচ এলাকা বৃদ্ধি ও সেচ খরচ কমানো সম্ভব।
সুবিধা : এ প্রযুক্তিতে পানি পরিবহন অপচয় প্রায় শূন্য। অতি দ্রুত উৎস থেকে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পানি পৌঁছে, ফলে কাঁচা নালার তুলনায় শতকরা ৩১.৬ ভাগ সময় সাশ্রয় হয়। উঁচ-নিচু জমিতে সহজেই পানি বিতরণ সম্ভব। উৎস থেকে উঁচু জমিতেও পানি সরববাহ করা যায়। তাছাড়া প্রধান অথবা শাখা নালা ঝোপ-ঝাড়ের ভেতর দিয়ে কিংবা খাল ও নর্দমার উপর দিয়ে স্থাপন করা যায়। পানি ব্যবহার দক্ষতা বৃদ্ধি ও অপচয় রোধের মাধ্যমে পানি সাশ্রয়ের ফলে সেচ এলাকা বৃদ্ধি করা (শতকরা ৩০ ভাগ বা তার বেশি) সম্ভব। প্রযুক্তিটির রক্ষণাবেক্ষণ খরচ খুবই কম।
এডব্লিউডি পদ্ধতি
বোরো মৌসুমে ধান আবাদে পানি সাশ্রয়ী আর একটি পদ্ধতির নাম অলটারনেট ওয়েটিং এন্ড ড্রায়িং (পর্যায়ক্রমে ভেজানো-শুকানো) বা এডব্লিউডি। এ পদ্ধতির জন্য প্রয়োজন হয় একটি ৭-১০ সেন্টিমিটার ব্যাস ও ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা ছিদ্রযুক্ত পিভিসি পাইপ বা চোঙ্গ। পাইপটির নিচের দিকের ১৫ সেন্টিমিটার জুড়ে ছোট-ছোট ছিদ্র থাকে। এটি চারা রোপণের ১০-১৫ দিনের মধ্যে জমিতে আইলের কাছে চারটি ধানের গোছার মাঝে খাঁড়াভাবে স্থাপন করতে হবে যেন এর ছিদ্রবিহীন ১০ সেন্টিমিটার মাটির উপরে এবং ছিদ্রযুক্ত ১৫ সেন্টিমিটার মাটির নিচে থাকে। এবার পাইপের তলা পর্যন্ত ভিতর থেকে মাটি উঠিয়ে নিতে হবে। মাটি শক্ত হলে গর্ত করে পাইপটি মাটিতে বসানো যেতে পারে। যখন পানির স্তর পাইপের তলায় নেমে যাবে তখন জমিতে এমনভাবে সেচ দিতে হবে যেন দাঁড়ানো পানির পরিমাণ ৫-৭ সেন্টিমিটার হয়। আবার ক্ষেতের দাঁড়ানো পানি শুকিয়ে পাইপের তলায় নেমে গেলে পুনরায় সেচ দিতে হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে ভিজানো ও শুকানো পদ্ধতিতে সেচ চলবে জাতভেদে ৪০-৫০ দিন পর্যন্ত। যখনই গাছে থোড় দেখা দেবে তখন থেকে দানা শক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ক্ষেতে স্বাভাবিক ২-৫ সেন্টিমিটার পানি রাখতে হবে। দেখা গেছে, এডব্লিউডি পদ্ধতিতে বোরো ধানে সেচ দিলে দাঁড়ানো পানি রাখার চেয়ে ৪-৫টি সেচ কম লাগে এবং ফলনও কমে না। ফলে সেচের পানি, জ্বালানি ও সময় সাশ্রয় হয় এবং উৎপাদন খরচও হ্রাস পায়। তবে এ পদ্ধতি প্রয়োগের একটি নেতিবাচক দিক হলো, এর ফলে সেচ ব্যবস্থা অনুসরণ করলে ব্লাস্ট রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে।
শস্যবিন্যাসের মাধ্যমে খরা মোকাবেলা
ব্রির সেচ ও পানি ব্যবস্থপনা বিভাগ শস্যবিন্যাসে সামান্য পরিবর্তন এনে দেশের উত্তরাঞ্চলে খরা মোকাবেলার একটি নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। বোরো ও আউশের মধ্যবর্তী সময়ে ধান রোপণ করা হলে সেটিকে ব্রাউশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বোরোর জাত ব্রাউশে আবাদ করা হলে জীবনকাল কিছুটা কমে। পক্ষান্তরে আউশের জাত ব্রাউশে আবাদ করা হলে জীবনকাল কিছুটা বাড়ে। দীর্ঘ জীবনকালের জাত দিয়ে বোরো-পতিত-আমন শস্যক্রমের পরিবর্তে স্বল্প জীবনকালের আউশ-আমনের জাত দিয়ে আলু-ব্রাউশ-আমন শস্যক্রম অনুসরণ করলে সেচের পানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি ভালো ফলন পাওয়া যায়। স্বল্প জীবনকালের ধানের জাত যেমন- ব্রি ধান২৮ বা ব্রি ধান৪৮ ব্রাউশে রবি শস্য আবাদের সুযোগ সৃষ্টি করে। ব্রাউশ মৌসুমে ব্রি ধান৪৮ তুলনামূলকভাবে ব্রি ধান২৮ এর চেয়ে বেশি ফলন দেয়। রবি শস্য হিসেবে বারি আলু-৭ বা বারি আলু-২৫ আবাদ করা যেতে পারে। এ প্রযুক্তির (আলু-ব্রাউশ-আমন) ধান-সমতুল্য ফলন (১৮ টন/হেক্টর) আমন-বোরো-পতিত শস্যক্রমের (১২.৩ টন/হেক্টর) তুলনায় অধিক এবং এটি শতকরা ৩২ ভাগ সেচের পানি সাশ্রয় করে। এ প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার সেচের খরচ কমাবে এবং সেচের জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাবে। দেশের উত্তরাঞ্চলে ব্রাউশ ধান স্বাভাবিক বোরোর মতোই ফলন দেয়। প্রযুক্তিটি রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষকের মাঠে পরীক্ষা করে ভালো ফল পাওয়া গেছে।
প্রযুক্তির সুবিধা
-বৃষ্টির পানি অধিক ব্যবহারের ফলে সেচের পানির সাশ্রয় করে।
-আমন (ব্রি ধান৪৯)-বোরো (ব্রি ধান২৯)-পতিত শস্যক্রমের তুলনায় এ প্রযুক্তি শতকরা ৩২ ভাগ কম সেচের পানি ব্যবহার করে এবং শতকরা ৪৬ ভাগ অধিক ধান-সমতুল্য ফলন দেয়।
-জ্বালানি তেল, সেচের খরচ সাশ্রয় করার মাধ্যমে প্রযুক্তিটি গ্রীনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস করে।
-শস্য আবর্তনের মাধ্যমে মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
-ভূ-গর্ভস্থ পানির তলের অবনমন হ্রাস করে।
সেচ খরচ
বোরো মৌসুমে ধান চাষাবাদে খরচের অন্যতম প্রধান খাত হলো সেচ। ব্রির সেচ ও পানি ব্যবস্থপনা বিভাগের সমীক্ষায় দেখা গেছে, বর্তমানে বোরো মৌসুমে ধান চাষে সেচের জন্য প্রতি বিঘায় খরচ হয় ২০০০ টাকার বেশি। আর সেচ খরচ বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৩১ সালে প্রতি হেক্টরে এ খরচ ১৬,৭১২ টাকায় দাঁড়াতে পারে। কাজেই উৎপাদন খরচ কম রাখতে হলে মাঠ পর্যায়ে যথাযথ সেচ ব্যবস্থাপনা এবং সেচ প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে খরচ সীমিত করার উদ্যোগ নেয়া একান্ত আবশ্যক।
এম এ কাসেম
প্রযুক্তি সম্পাদক ও প্রধান, প্রকাশনা ও জনসংযোগ বিভাগ, ব্রি গাজীপুর ১৭০১, সেল: ০১৭১২৮৪১৯৭০,mkashem62@gmail.com
বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারী উদ্যোগে ধান, গম, ভুট্টা, সবজি ও আলু বীজ মোটামুটিভাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সরবরাহ হলেও ডাল ও তেলের বীজ সরবরাহ অত্যন্ত কম, প্রায় ৭% (বিএডিসি)। বলা যায় বাংলাদেশে এই ফসলগুলোর যে বীজ ব্যবহৃত হয় তার প্রায় সব বীজই কৃষকের বীজ। ভালো ফসল ফলাতে ভালো বীজের প্রয়োজন। সুতরাং ভালো বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ সম্পর্কে কৃষকের পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে এবং এর উৎপাদন ও সংরক্ষণ পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে।
ভালো বীজ
ঝকঝকে, পরিপুষ্ট বীজ হলেই তাকে ভালো বীজ বলা যাবে না। ভালো বীজের নি¤œলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো অবশ্যই থাকতে হবে।
ভালো জাতের বিশুদ্ধ বীজ হতে হবে বীজ আকারে বড়, পুষ্ট ও সব বীজ প্রায় এক আকারের হবে। বীজ পোকা কাটা হবে না, রোগাক্রান্ত হবে না, দাগযুক্ত হবে না ও উজ্জ্বল রঙের হবে। ভালো বীজে পানির পরিমাণ ১০% এর বেশি হবে না। বীজে অন্য ফসলের/জাতের বীজ, আগাছার বীজ, জড় পদার্থ, খড় কুটা বা ভাঙ্গা বীজ থাকবে না। সর্বোপরি সুষ্ঠু ও স্বাস্থ্যবান চারা গজানোর উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন হতে হবে।
দেশে ৪ ধাপে বীজ বর্ধন হয়ে থাকে, যথা মৌলবীজ (ব্রিডার বীজ), ভিত্তি বীজ, প্রত্যায়িত বীজ ও মানঘোষিত বীজ (ঞখঝ) এবং এগুলোর সাথে সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জড়িত। এগুলোর মধ্যে মানঘোষিত বীজ এবং প্রত্যায়িত বীজ কৃষকের মাঝে ফসল ফলানোর জন্য অথবা আরও একবার বীজ তৈরি করার জন্য সরবরাহ হয়ে থাকে। তবে কৃষকগণ প্রত্যায়িত বীজ ও মানঘোষিত বীজ উৎপাদন করতে পারেন। এই সব বীজের গুণগত মান বজায় রাখার জন্য সরকার নির্ধারিত নির্দিষ্ট মানদ- মেনে চলা হয়।
বীজের গুণগত মান রক্ষণে করণীয় : বীজের গুণগত মান অর্থাৎ কৃষক পর্যায়ে বীজের মান রক্ষা করার জন্য বীজ ফসলে যে সমস্ত কাজ করার প্রয়োজন হয় সাধারণ ফসল চাষে সেগুলোর প্রয়োজন পড়ে না। বীজ মান বজায় রাখতে নি¤œলিখিত ধাপগুলো একটু বিস্তারিতভাবে জানা প্রয়োজন।
১) ভালো জাতের শনাক্তকরণ চিহ্ন জানা এবং বীজ সংগ্রহ : ভালো ফসল উৎপাদনের জন্য ভালো জাত নির্বাচন পূর্বশর্ত। সুতরাং ভালো বীজ উৎপাদনের জন্য উচ্চফলনশীল ভালো জাতের বিশুদ্ধ বীজ সংগ্রহ করতে হবে। বীজ উৎপাদনকালীন সময়ে জমি থেকে অন্য জাতের গাছের মিশ্রণ বাছাই (রগিং) করার জন্য অবশ্যই নির্বচিত জাতের এক বা একাধিক শনাক্তকরণ চিহ্ন জানা প্রয়োজন। তাই বিশ্বস্ত সূত্র থেকে বীজ সংগ্রহ করা উচিত।
২) মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন পদ্ধতি : বীজ উৎপাদন পদ্ধতিতে অনেকগুলো ধাপ জড়িত, যেমনÑ উপযুক্ত জমি নির্বাচন, সুষম সার প্রয়োগ, আগাম সময়ে বপন, লাইনে বপন, ফসলের পরিচর্যা (রোগ, পোকামাকড় ও আগাছা দমন), রগিং, ফসল কর্তন, মাড়াই, ইত্যাদি। প্রত্যেকটি পদক্ষেপই গুরুত্বপূর্ণ। তবে
নি¤œলিখিত কাজগুলোর দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে-
জমি নির্বাচন : সেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত উঁচু-মাঝারি উঁচু জমি দো-আঁশ-এঁটেলদোয়াঁশ মাটি মসুর ও মুগডালের জন্য উপযোগী। তবে স্মরণ রাখতে হবে যেন পূর্ববর্তী মৌসুমে ঐ জমিতে একই ফসলের চাষ না করা হয়ে থাকে। কারণ তাতে জমিতে অবাঞ্ছিত গাছ (ঠড়ষঁহঃববৎ ঢ়ষধহঃ) গজিয়ে বীজে মিশ্রণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আগাম বপন : উপযুক্ত সময়ের শুরুতে বপন করলে বীজ পুষ্ট হওয়ার জন্য গাছ বেশি সময় পায় এবং রোগবালাইয়ের প্রভাবমুক্ত থাকে এবং শুষ্ক সময়ে ফসল কর্তন, মাড়াই ইত্যাদি সহজ হয় এবং বীজের গুণগত মান বজায় থাকে।
লাইনে বপন : যদিও ডাল ফসল উৎপাদনের জন্য লাইনে বপন অতি জরুরি নয় কিন্তু বীজ উৎপাদনের জন্য লাইনে বপন অত্যন্ত আবশ্যক। কারণ এতে গাছ পর্যবেক্ষণ ও বাছাই (রগিং), আগাছা দমন, ফসল পরিচর্যা অনেক সহজ হয় এবং এগুলোভালো বীজ উৎপাদনের জন্য বিশেষ প্রয়োজন।
রগিং : গাছের বৃদ্ধি থেকে শুরু করে কর্তন পর্যন্ত একাধিকবার গাছ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে অবাঞ্ছিত গাছ সমূলে উপড়ে ফেলতে হবে, নতুবা কয়েকটি গাছই আপনার বীজে মিশ্রণের জন্য যথেষ্ট।
ফসলের পরিচর্যা : ফসল যাতে রোগমুক্ত, পোকামাকড়মুক্ত ও আগাছামুক্তভাবে উৎপাদন করা যায় সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ কতকগুলো রোগ আছে যা বীজবাহী (যেমন- মসুরের স্টেমফাইলিয়াম ব্লাইট)। পোকামাকড় বীজের গুণগতমান নষ্ট করে, ফলন কমে যায়। আবার আগাছা বীজ ও বীজের গুণগত মান নষ্ট করে পাশাপাশি ফলনও মারাত্মকভাবে কমিয়ে দেয়। তেমনি ফুল বা ফল ধরার সময় জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে ফুল ও ফল পড়ে যায়, দানা ঠিকমতো পুষ্ট হতে পারে না এবং বীজের গুণগত মান কমে যায় (বিশেষ করে মুগের ক্ষেত্রে)। সেজন্য বীজ ক্ষেতে সেচ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
৩) প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ : মাড়াই থেকে শুরু করে সংরক্ষণ পর্যন্ত কাজগুলোকে এককথায় প্রক্রিয়াজাতকরণ বলে। এখানে নিম্নলিখিত কাজগুলোর প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হতে হবে।
মাড়াই : থ্রেসিং ফ্লোরে একই ফসলের অন্য কোনো জাত আগে মাড়াই করে থাকলে তা সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার করে নিতে হবে। অনুরূপভাবে একই থ্রেসারে ঐ ফসলের অন্য জাত মাড়াই করে থাকলে থ্রেসারটিও সম্পূর্ণভাবে বীজমুক্ত করতে হবে। এছাড়াও থ্রেসারে বীজ ভেঙে যাচ্ছে কি না সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
পরিষ্কার করা : মাড়াই এর পরে ঝেড়ে খড়কুটা, চিটা ও ছোট দানা আলাদা করার পর চালনি দ্বারা চেলে ছোট দানা ও আগাছা বীজ ফেলে দিতে হবে (গ্রেডিং করা)।
বীজ শুকানো : বীজের পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বীজ ভেজা হলে পোকামাকড় আক্রমণ করে, ছত্রাক জন্মায় এবং তাপ বেড়ে বীজ মরে যায়। সুতরাং বীজ ভালো রাখতে হলে বীজ কটকটে করে শুকাতে হবে (আর্দ্রতা ১০% এর নিচে আনতে হবে যেন দাঁতের নিচে কট করে বীজ ভেঙে যায়) তবে গ্রীষ্মকালে ভর দুপুরে প্রখর রৌদ্রে বীজ শুকানো ঠিক না। শুকানো বীজ ঠা-া করে পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে। শুকানো বীজ এমন পাত্রে রাখতে হবে যাতে তা বাতাসের সংস্পর্শে না আসতে পারে, অর্থাৎ পাত্রটি অবশ্যই বায়ুরোধক হতে হবে।
গুদামজাতকরণ : বীজ ভালোভাবে শুকিয়ে বায়ুরোধী পাত্রে (যেমন-ধাতব বা প্লাস্টিক ড্রাম, পলিথিন লাইনিং বস্তা বা মটকা ইত্যাদি) সংরক্ষণ করতে হবে। বীজ ভালোভাবে শুকিয়ে বায়ুরোধী পাত্রে (যেমন-ধাতব বা প্লাস্টিক ড্রাম, পলিথিন লাইনিং বস্তা বা মটকা ইত্যাদি) সংরক্ষণ করতে হবে।
সংরক্ষিত বীজ মনিটরিং করা : সংরক্ষিত বীজ মাঝে মধ্যে (বিশেষ করে বর্ষাকালে) খুলে দেখতে হবে পোকামুক্ত আছে কি না। বীজের মধ্যে হাত দিয়ে দেখতে হবে গরম লাগে কি না। যদি এমন হয় তাহলে পুনরায় শুকিয়ে এবং পোকা থাকলে প্রয়োজনে ওষুধ দিয়ে পোকা মেরে সংরক্ষণ করতে হবে।
অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা নির্ণয় করা : বীজ বপন বা বিক্রয়ের আগে বীজের গজানোর ক্ষমতা পরীক্ষা করা উচিত। এ জন্য ৪০০টি বিশুদ্ধ বীজ নিতে হবে এবং ৪টি থালায় বালু বা চোষ কাগজ (টিস্যু পেপার) এর উপর ১০০টি করে বীজ লাগিয়ে দিয়ে ভিজিয়ে ঘরে রেখে দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যেন পানি না শুকিয়ে যায়। ডালের জন্য সাধারণত ৮ দিন পর চারা গণনা করে গজানোর ক্ষমতা নির্ণয় করা হয়। মনে রাখতে হবে যে, শুধু বীজের মুখ ফাটলেই চারা বের হয়েছে বলে ধরা যাবে না। প্রতিটা থালা থেকে সুস্থ চারা, বিকলাঙ্গ চারা, অগজানো ডাল বীজ, মৃত বীজ এবং শক্ত বীজ আলাদা করে গণনা করতে হবে। মৃত বীজ হলে আঙুলের চাপে গলে পচা গন্ধ পাওয়া যাবে। এভাবে গণনা করে ৪টি থালা থেকে প্রাপ্ত সুস্থ চারার গড় হারকে গজনোর ক্ষমতা বলা হয়।
মো: ওমর আলী
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ডাল গবেষণা উপ-কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, জয়দেবপুর, গাজীপুর। মোবাইল : ০১৭১২৫৪৩৭২০ ই-মেইল : omaralipre@gmail.com
বায়োচার এক ধরনের চারকোল বা কয়লা যা পাইরোলাইসিস (সীমিত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বা অক্সিজেনবিহীন তাপের) পদ্ধতির সাহায্যে বিভিন্ন জৈব পদার্থ, যেমন- ধানের তুষ, কাঠের গুঁড়া, কাঠ, মুরগির বিষ্ঠা এমনকি নালা-নর্দমার বর্জ্য পদার্থ, আবর্জনা থেকে তৈরি করা হয়। বায়োচার পানি বিশুদ্ধকরণ এবং মাটির লবণাক্ততা কমাতেও ভূমিকা রাখে। মাটির স্বাস্থ্যরক্ষায় বায়োচার একটি অদ্বিতীয় অনুষঙ্গ। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বায়োচার জমিতে একবার ব্যবহার করলেই দীর্ঘ সময় আর ব্যবহার করতে হয় না। বায়োচার কার্বনকে বছরের পর বছর মাটিতে ধরে রাখে, ফলে মাটির স্বাস্থ্যের স্থায়ী উন্নয়ন ঘটে। বায়োচার মাটিতে প্রায় ১০০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। আর শতবর্ষ ধরে এটি মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করে নানাভাবে।
কৃষিতে বায়োচারের ভূমিকা
সময়ের সাথে সাথে কৃষি বিজ্ঞানেরও ক্রমাগত ব্যাপক উন্নতি দেখা যাচ্ছে। বায়োচার তার একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। ক্ষুদ্র অংশ হওয়া সত্ত্বেও বায়োচার কৃষিজ পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে পরিবেশের ভারসাম্যরক্ষায় সমান ভূমিকা পালন করছে। বায়োচার ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি, পানির ধারণক্ষমতা, সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। বায়োচার মাটিতে গাছের খাদ্য উপাদানগুলো ধরে রাখে, মাটিতে লবণাক্ততা ও খরার প্রভাব এবং মাটির অম্লত্ব দূর করে। মাটিকে সংশোধন করে বায়োচার মাটিতে অবস্থানকারী ছোট-ছোট অণুজীবকে সক্রিয় করে তোলে। পরিবেশবান্ধব এই বায়োচার পদ্ধতি ব্যবহারে জমির ফলনও দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। বায়োচার ব্যবহারে রাসায়নিক সার ও পানি সেচ কম দিতে হয়; ফলে কৃষকের খরচ কমে যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্তির জন্য মাটিতে বায়োচার ব্যবহার করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে আবাদি জমিতে পরিবেশবান্ধব বায়োচার পদ্ধতি ব্যবহার করে ধানের চারা রোপণ করা হচ্ছে। বায়োচার আলু, সবজি চাষেও ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষকরা অধিক লাভবান হওয়ার জন্য এবং মাটির গুণাগুণ অক্ষুন্ন রাখতে বায়োচার পদ্ধতি ব্যবহার করতে আগ্রহী হচ্ছেন। ঢাকাসহ অন্যান্য শহরের আবর্জনা ব্যবহার করে যদি বায়োচার উৎপন্ন করা যায়, তবে একদিকে যেমন আবর্জনা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, অন্যদিকে এটি সার হিসেবে জমিতে ব্যবহার করা যাবে। আশা করা যাচ্ছে যে, বায়োচার প্রযুক্তিটি দেশের কৃষিতে এক অনন্য মাত্রা যোগ করবে।
কোথায় পাওয়া যাবে এই বায়োচার?
কৃষক এবং কৃষাণীদের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে বেসরকারি সংস্থা খ্রিস্টিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (সিসিডিবি)। যেখানে মাটিতে জৈব উপাদান থাকার কথা শতকরা ৫ ভাগ, সেখানে শিবালয়ের ১২ জন কৃষকের মাটি পরীক্ষা করে তা পাওয়া গেছে শতকরা এক ভাগ, কোথাও এক ভাগের কম আবার কোথাও এক ভাগের সামান্য কিছু বেশি (দুই ভাগের কম)। মাটির এই জীর্ণদশা ফিরিয়ে আনতে চিন্তা, চেতনা ও নিরলস পরিশ্রম দ্বারা সিসিডিবির ডেভেলপমেন্ট পলিসি অ্যাডভাইজার এবং বায়োচার প্রজেক্ট-এর টিম লিডার এম মাহাবুবুল ইসলাম এবং সমীরণ বিশ^াস (কানাডিয়ান বিজ্ঞানী জুলিয়ান-এর সমন্বয়ে) উদ্ভাবন করেছেন ‘আখা’ (কৃষিবান্ধব চুলা)। এতে রান্নার পাশাপাশি উৎপাদিত হয় বায়োচার, যা পৃথিবীর আর কোনো দেশে হয় না। আখা (গ্যাসোফায়ার) এমন একটি রান্নার চুলা, যাতে কাঠ, খড়-কুটা, ডাল-পাতা, ধানের তুষ, কাঠের গুঁড়া, কচুরিপানা, গোবর ইত্যাদি ব্যবহার করে পাইরোলাইসিস পদ্ধতিতে বায়োচার তৈরি করা হয়। ‘আখা’ বা বিশেষ ধরনের এক চুলায় পোড়ানো কাঠ-কয়লা নিয়ে গুঁড়া করে ক্ষেতে ছিটিয়ে দিতে হয়। বিশেষ ধরনের এই কাঠ কয়লা পোড়ানো চুলা এখন সিসিডিবি বিক্রি করে অল্প দামে। এই চুলা কিনে রান্নার কাজ করা যাবে এবং প্রাপ্ত পোড়ানো কয়লা দিয়ে বায়োচার হিসেবে কাজে লাগাতে পারবে। ১ কেজি কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে ৮০০ গ্রাম কয়লা পাওয়া যায়। আখা বা বিশেষ ধরনের চুলায় পোড়ানো কাঠ কয়লা বায়োচার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আখা চুলায় বায়োমাস ব্যবহার করে বায়োচার উৎপাদন করা হয়। তাই আখা ব্যবহারকারীরা কম কাঠ ব্যবহার করে কার্বন নিঃসরণে ভূমিকা রাখছেন; আবার বাই-প্রডাক্ট হিসেবে বায়োচার তৈরি করে কার্বন স্টোর করাসহ আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। সেই সাথে তারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায়ও ভূমিকা রেখে চলেছেন। আখা চুলায় বায়ো মাস কম লাগে বিধায় আখা ব্যবহারে বায়ুম-লে কার্বন/গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কম হয়। আখায় ধোঁয়া নির্গত না হওয়ায়Ñ ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হয় না। তাছাড়া আখা ব্যবহারকারীগণ বায়োচার বিক্রি করে আর্থিক লাভবান হচ্ছেন।
এই আখা ব্যবহার করলে শতকরা ৩০ ভাগ জ¦ালানি সাশ্রয়ী হবে ও ৯৫ ভাগ ধোঁয়ামুক্ত পরিবেশে রান্না করা যাবে। আখার জ¦ালানি হিসেবে ব্যবহার করতে হবে কাঠ। রান্নাশেষে যে কয়লা পাওয়া যাবে, সেটি মিহি করে যে উপাদান পাওয়া যাবে, সেটিই হবে বিশেষ জাতীয় মাটির খাদ্য। যে খাদ্য মাটিতে ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি পাবে ও ফসল উৎপাদন বাড়বে।
মানিকগঞ্জে বায়োচার ব্যবহারে কৃষকদের অভাবনীয় সাফল্য
মানিকগঞ্জের ছোট কুষ্টিয়া গ্রামের আদর্শ কৃষক মো. খোরশেদ। গত মৌসুমে তিনি ৫৬ শতাংশ জমিতে বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি ও পেঁপে চাষ করেছিলেন। চাষের সময় বেগুনের ২ শতাংশ, বাঁধাকপির এক শতাংশ, ফুলকপির এক শতাংশ এবং পেঁপের এক শতাংশ জমিতে তিনি ব্যবহার করেছিলেন বায়োচার। তিনি জানান, বায়োচার ব্যবহৃত জমিতে সার ও কীটনাশক যেমন খুবই কম লেগেছে, তেমনি সেচও দিতে হয়েছে আগের চেয়ে প্রায় অর্ধেক। এ থেকে একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ কমেছে, তেমনি ফসলও পেয়েছেন আগের তুলনায় বেশি। আগামী মৌসুমে তিনি তার সকল ধরনের ফসলে বায়োচার ব্যবহার করবেন বলে জানিয়েছেন। উপজেলার দশচিড়া গ্রামের কৃষাণী ভানু বেগম তার বাড়ির উঠানের এক শতাংশ জমিতে ৫টি মাদা তৈরি করে ৪টিতে বায়োচার এবং একটিতে বায়োচার ছাড়া ধুন্দল চাষ করেছেন। চারিপাড়া গ্রামের কৃষানি বাসনা রানী ১.৫ শতাংশ জমিতে ৫টি মাদা তৈরি করে ৪টিতে বায়োচার এবং একটিতে বায়োচার ছাড়া লাউ চাষ করেছেন। একই গ্রামের শিউলি আক্তার টমেটো, শসা ও সরিষার এক শতাংশ করে জমিতে বায়োচার ব্যবহার করে আগের তুলনায় বেশি ফসল পেয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। আমডালা গ্রামের রেনু দত্ত তার বাড়ির পাশে ৪ শতাংশ জমিতে ৬০টি মাদা তৈরি করে ৩০টিতে বায়োচার এবং ৩০টিতে বায়োচার ছাড়া ধুন্দল চাষ করেছেন। শ্রীবাড়িতে অবস্থিত বহুমুখী কৃষি খামারের মালিক জাহান এ. নিজাম ২০০টি মাদা তৈরি করে ১০টিতে পরীক্ষামূলকভাবে বায়োচার ব্যবহার করে ধুন্দল চাষ করেছেন। কৃষক ও কিষানিরা জানান, যে অংশে বায়োচার ব্যবহার করেছেন, সেই অংশের লাউ ও ধুন্দলের সাইজ বড় ও গাছ সবুজ ও তরতাজা হয়ে আছে।
মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলায় বায়োচার ব্যবহার করে অভাবনীয় সাফল্যের দেখা পাচ্ছেন এই উপজেলার কৃষক এবং কিষানিরা। বায়োচার ব্যবহার করে কৃষক এবং কিষানিরা আগের তুলনায় এখন কম খরচে বেশি ফসল ঘরে তুলছেন এবং সফলতার মুখ দেখছেন।
বায়োচার ব্যবহার করে আরো সফলতার দেখা পেয়েছেন উপজেলার দশচিড়া গ্রামের মোজাফফর মোল্লা ও সুশীল কুমার ম-ল। মোজাফফর মোল্লা তার ২৭ শতাংশ জমির মধ্যে এক শতাংশ জমিতে বায়োচার ব্যবহার করে ভুট্টা চাষ করেছেন। মোজাফফর জানান, তিনি বায়োচার ব্যবহৃত এক শতাংশ জমিতে সাধারণভাবে চাষ করে ৩৫ কেজি ভুট্টা পেয়ে থাকেন। অপরদিকে জমি বায়োচার ব্যবহার করলে এর পরিমাণ ৫ কেজি বেড়ে শতাংশে ৪০ কেজিতে দাঁড়ায়। সুশীল কুমার জানান, তিনি বায়োচার ব্যবহৃত অংশে বায়োচার ছাড়া জমির চেয়ে তুলনামূলকভাবে ধান বেশি পেয়েছেন।
আখার গুণাবলি : আখায় তাড়াতাড়ি রান্না হয়, খড়ি কম লাগে, একবার খড়ি সাজিয়ে দিলে রান্না হয়ে যায়, তাপ কম বেশি করা যায়, ধোঁয়া হয় না, হাঁড়ি-পাতিল কালি হয় না এবং যে জ¦ালানি পোড়ানো হয়, রান্নাশেষে তার ৪ ভাগের এক ভাগ বায়োচার পাওয়া যায়। বায়োচার বিক্রি করেও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। এছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ^বিদ্যালয় ও হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় বায়োচার নিয়ে গবেষণা করছে।
আমাদের এই মাটির প্রাণ হচ্ছে জৈব পদার্থ। আর এই জৈব পদার্থের পরিমাণ আমাদের দেশের মাটি থেকে দিন-দিন ভয়ানকভাবে কমে যাচ্ছে! তাই মাটির দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যরক্ষায় এবং মাটির জৈব পদার্থ বৃদ্ধিতে বায়োচার একটি অদ্বিতীয় অনুষঙ্গ।
সমীরণ বিশ্বাস
কো-অর্ডিনেটর, কৃষি ও বীজ কর্মসূচি, সিসিডিবি, ঢাকা, মোবাইল : ০১৭৪১১২২৭৫৫, ই-মেইল :srb-eedbseed@yahoo.com