সম্পাদকীয়
মাঘ, হাড়কাপানো শীতের মাস। গ্রামীণ জনপদে কৃষি ও কৃষকের সাথে এ মাসের যোগসূত্র রয়েছে। খনার বচনে রয়েছে ‘পৌষের শেষ আর মাঘের শুরু/এর মধ্যে শাইল বোরো যত পারো।’ এ সময় কৃষক-কৃষাণি ব্যস্ত হয়ে পড়ে বোরো মৌসুমের ফসল চাষাবাদে। মাঘ এর বড় স্বাতন্ত্র্য হচ্ছে প্রকৃতিতে বসন্তের আগমন বার্তা জানায়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশব্যাপী পাল্টে যাচ্ছে প্রকৃতির রূপরেখা। বিরূপ প্রকৃতির পাশাপাশি চলছে আবাদি জমি হ্রাস, বাড়তি জনসংখ্যার চাপ, বৈশ্বিক সংঘাতময় পরিস্থিতিসহ নানামুখী প্রভাব। এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও কৃষিকে সমৃদ্ধ করতে থেমে নেই কৃষক, কৃষিবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক, সম্প্রসারণকর্মীসহ অংশীজনেরা। নতুন বছর ‘২০২৫’ কৃষিভুবনসহ বিশে^ সুস্বাস্থ্য ও দুর্দান্ত সাফল্য বয়ে নিয়ে আসুক।
সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলাদেশ। জনসাধারণের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কৃষির ভূমিকা অপরিসীম। বোরো মৌসুম ধান উৎপাদনে সর্বাধিক জনপ্রিয়। পাশাপাশি বাংলাদেশের আবহাওয়া বিভিন্ন শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদন বেশ উপযোগী। কৃষিপণ্য উৎপাদনে শস্যের তুলনায় সবজিতে ফলন ও আয় দুই-ই বেশি হয়। এছাড়া শাকসবজি ও ফলমূল পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী একজন মানুষের গড়ে প্রতিদিন ৪০০ গ্রাম শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সবজির উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩৪.৫২৭ লাখ মেট্রিক টন এবং উৎপাদন হয়েছে ২৪১.৭৮৭ লাখ মেট্রিক টন, যা চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের রূপকল্প হচ্ছে কৃষিপণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিমুখী করা। শাকসবজি ও ফলমূল রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। রপ্তানি বাড়াতে কৃষি মন্ত্রণালয় উত্তম কৃষি চর্চা অনুসরণ করে ফসল উৎপাদন, রপ্তানি উপযোগী জাতের ব্যবহার, আধুনিক প্যাকিং হাউজ ও অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব বাস্তবায়নসহ নানা কাজ চলমান আছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের কৃষিকথায় “নতুন উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল জাতের টমেটো বারি টমেটো-২২ ও বারি টমেটো-২৩” তথ্যসমৃদ্ধ নিবন্ধটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এ ছাড়াও কৃষি বিশেষজ্ঞদের সময়োপযোগী প্রবন্ধ, মৎস্য ও প্রাণিবিভাগ, আগামীর কৃষি ভাবনা, সফল কৃষকের গল্প ও নিয়মিত বিভাগ দিয়ে সাজানো হয়েছে এ সংখ্যা। কৃষিকথায় এসব মানসম্পন্ন ও তথ্যপ্রযুক্তি লেখা দিয়ে যারা সমৃদ্ধ করেছেন তাদের প্রতি রইল আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আশা করি কৃষিকথার এবারের সংখ্যা নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।
নতুন উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল জাতের টমেটো বারি টমেটো-২২ এবং বারি টমেটো-২৩
ড. এ কে এম কামরুজ্জামান১ ড. লিমু আক্তার২
টমেটো একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি। কাঁচা কিংবা পাকা দুইভাবে টমেটো খাওয়া যায়। খাবারের স্বাদ বাড়াতে টমেটোর জুড়ি মেলা ভার। অনেকে আবার সালাদে টমেটো খেয়ে থাকেন। টমেটো শুধু খাবারে স্বাদই বাড়ায় না, টমেটো থেকে তৈরি হয় নানা রকমের কেচাপ ও সস। এতে আছে এনার্জি ১৮ কিলো ক্যালরি, শর্করা ৩.৯ গ্রাম, প্রোটিন ০.৯ গ্রাম চর্বি (ফ্যাট) ০.২ গ্রাম, ডায়েটারি ফাইবার ১.২ গ্রাম, ফ্লরেটস ১৫ মাইক্রো গ্রাম, নায়াসিন ০.৫৯ মিলি গ্রাম, থায়ামিন ০.০৩৭ মিলি গ্রাম, ভিটামিন এ ৮৩৩ আই ইউ, ভিটামিন সি ১৩ মিলি গ্রাম, ভিটামিন ই ০.৫৪ মিলি গ্রাম, ভিটামিন কে ৭.৯ মাইক্রো গ্রাম, সোডিয়াম ৫ মিলি গ্রাম, পটাশিয়াম ২৩৭ মিলি গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ মিলি গ্রাম, আয়রন ০.৩ মিলি গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১১ মিলি গ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ০.১৫ মিলি গ্রাম, ফসফরাস ২৪ মিলি গ্রাম, জিঙ্ক ০.১৭ মিলি গ্রাম, ক্যারোটিন-বিটা ৪৪৯ মাইক্রো গ্রাম, ক্যারোটিন-আলফা ১০১ মাইক্রো গ্রাম। তাছাড়া অনেকটা পানিও রয়েছে এর মধ্যে।
টমেটো ভক্ষণের উপকারিতা
টমেটোর লাইকোপিন একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট - ইহা ইমিউন সিস্টেমকে প্রভাবিত করে। যেমন- ফুসফুস, পাকস্থলী বা প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দিতে পারে; ডায়বেটিকস ও রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে; কিডনি ভাল রাখে এবং অগ্ন্যাশয়, কোলন, গলা, মুখ, স্তন এবং জরায়ুতেও রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে; চর্মরোগের জন্য টমেটো অত্যন্ত কার্যকর উপাদান। যেমন মুখের সৌন্দর্য ধরে রাখতে এবং বয়সের ছাপ দূর করতে টমেটো বেশ কার্যকর; টমেটোর রস মুখের ত্বক মসৃণ ও কোমল করে।
জলবায়ু ও মাটি
টমেটোর শীতকালীন জাতগুলোর রাত্রির তাপমাত্রা ২৩০ সেন্টিগ্রেট এর নিচে থাকলে তা গাছে ফুল ও ফল ধারণের জন্য বেশি উপযোগী। গড় তাপমাত্রা ২০০-২৫০ সেন্টিগ্রেট টমেটোর ভাল ফলনের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। উচ্চ তাপমাত্রা এবং বাতাসের আর্দ্রতা টমেটো গাছে রোগ বিস্তারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। আবার উচ্চ তাপমাত্রা ও শুষ্ক আবহাওয়ায় ফুল ঝরে পরে। তবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গ্রীষ্মকালে উৎপাদন উপযোগী কয়েকটি টমেটো জাত উদ্ভাবিত করেছে যা গ্রীষ্মকালে কৃষকরা বাণিজ্যিকিভাবে চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছে।
আমাদের দেশের সব রকমের উর্বর মাটিতে টমেটো চাষ করা যায় এবং ভাল ফলন দিয়ে থাকে। তবে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। আলো-বাতাসযুক্ত উর্বর দো-আঁশ মাটি টমেটো চাষের জন্য সবচেয়ে ভাল। তবে উপযুক্ত পরিচর্যায় বেলে দো-আঁশ থেকে এটেল দো-আঁশ সব মাটিতেই টমেটো ভাল জন্মে। বন্যার পানিতে ডুবে যায় এমন জমিতে এর ফলন সবচেয়ে ভাল হয়। মাটির অম্লতা ৬-৭ হলে ভাল হয়। মাটির অম্লতা বেশি হলে জমিতে ডলোচুন প্রয়োগ করা উচিত।
জাত
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর সবজি বিভাগ সম্প্রতি ২টি উচ্চফলনশীল টমেটোর জাত ২০২৪ সালে উদ্ভাবন করেছে। জাত দু’টি জীবনকাল ১২০-১৫০ দিন।
বারি টমেটো-২২ (শীতকালে)
চারা রোপণের ৬০-৬৫ দিন পর প্রথম ফল সংগ্রহ করা যায়। ফল মাঝারি আকারের লম্বাটে-গোলাকৃতির হয়, ফলের ওজন ১১০-১১৫ গ্রাম এবং প্রতি গাছে ৩৫-৪০টি ফল ধরে। মিষ্টতা (টি এস এস): ৪.৫০% ও সংরক্ষণ কাল (শেলফ লাইফ) স্বাভাবিক ঘরের তাপমাত্রায়: ১০-১২ দিন; ফলন ৯০-১০০ টন/হে.।
বারি টমেটো-২৩ (শীতকাল ও গ্রীষ্মকালে)
উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল হওয়ায় সারা বছর চাষ করা যায়; চারা রোপণের ৬২-৬৫ দিন পর প্রথম ফল সংগ্রহ করা যায়; ফল মাঝারি আকারের চ্যাপ্টা-গোলাকৃতির; ফলের ওজন ১২০-১২৫ গ্রাম; প্রতি গাছে ৩৩-৩৬টি ফল ধরে; মিষ্টতা (টি এস এস) ৪.৬০%; সংরক্ষণ কাল (শেলফ লাইফ) স্বাভাবিক ঘরের তাপমাত্রায় ৮-১০ দিন; ফলন ৮৮-৯৫ টন/হে. (শীতকালে); ৪০-৪৫ টন/হে. (গ্রীষ্মকালে)।
বীজের মাত্রা
প্রতি এক গ্রাম প্রায় ২৫০টি বীজ থাকে। অঙ্কুরোদগমের হার ৯০% এবং প্রতিষ্ঠার/বাঁচার হার ৮০% বিবেচনায় বীজের পরিমাণ হলো ২০০ গ্রাম (প্রতি হেক্টরে) এবং ১ গ্রাম (প্রতি শতাংশে)। রোপণ দূরত্ব ৬০ী৪৫ সেমি. হিসাবে এবং ১০ মিটার লম্বা, ১ মিটার প্রস্থ বেড এবং পার্শে ৩০ সেমি. নালা হিসাবে প্রতি বেড এ ৪৪টি চারার প্রয়োজন হয়। এই হিসাবে হেক্টরপ্রতি চারার প্রয়োজন হয় ৩২,২০০টি এবং শতাংশ প্রতি চারার প্রয়োজন হয় ১৩০টি।
বীজ শোধন
ছত্রাকবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য বীজ বপনের পূর্বে ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজকে শোধন করা উচিত। তাহলে বীজ ছত্রাকবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকে। বীজ থেকে উৎপাদিত চারাও ছত্রাকবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকে। চারা রোপণের পর আরও ১৫-২০ দিন চারা ছত্রাকবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকে। ছত্রাকনাশক প্রোভেক্স (মাত্রা হলো ২-৩ গ্রাম/ কেজি বীজ)। অথবা কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশকও ব্যবহার করা যায়।
চারা উৎপাদন
বীজ বপনের সময় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত। চারা উৎপাদন ৩০-১০০ হোল বিশিষ্ট পটিং ট্রেতে চারা উৎপাদন করা অনেক সহজ; পটিং মিডিয়াতে ১:১ অনুপাতে যথাক্রমে মাটি এবং ভার্মিকম্পোস্ট মিশাতে হবে। আজকাল অবশ্য কোকোপিট নামক পটিং মিডিয়া কিনতে পাওয়া যায়, যা ব্যবহার করা চারার জন্য বেশ ভাল; পলিব্যাগ, পলিপট, পটিং ট্রেগুলোতে পানি, সূর্যালোক ও ছায়া প্রয়োজনমাফিক নিশ্চিত করতে হবে; সবসময় চারা সাদা ঘন নেট দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে যেন কোন ধরনের রোগের জীবাণু এবং ভাইরাস এর বাহক পোকা- সাদা মাছি প্রবেশ করতে না পারে; ছত্রাকনাশক (অটোস্টিন) ও কীটনাশক (ইমিটাফ) এর স্প্রে সিডিউল ৭-১০ দিন অন্তর অন্তর প্রয়োগ করতে হবে।
চারার বয়স ও চারা রোপণ : চারার বয়স ২৫-৩০ দিন বা ৪-৬ পাতাবিশিষ্ট হলে জমিতে রোপণ করে গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে।
জমি তৈরি
৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে যাতে জমিতে বড় বড় ঢিলা এবং আগাছা না থাকে; চারার রোপণ দূরত্ব জাতভেদে ভিন্ন হয়; প্রতিটি বেড প্রস্থে’ ১০০ সেমি. এবং লম্বায় দুটি সারিতে ৬০ী৪৫ সেমি. দূরত্বে রোপণ করলে ২২টি চারা সংকুলনের জন্য ১০ মিটার হতে হবে।
আদর্শ বেডের মাপ
বেডের প্রস্থ ১.০ মি. ও বেডের দৈর্ঘ্য জমির দৈর্ঘের উপর নির্ভর করবে। নালার প্রস্থ ৩০ সেমি.।
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ (কেজি/হেক্টর)
টমেটো এমন একটি ফসল সার প্রয়োগ ব্যতীত সন্তোষজনক উৎপাদন চিন্তা করা যায় না; বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে খাদ্যের অভাব হলে গাছ দ্রুত বাড়ে না এবং পরবর্তী পর্যায়ে খাদ্যের স্বল্পতা ফলনের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে (সারণি দ্রষ্টব্য)।
সেচ
চারা রোপণের ৩-৪ দিন পর পর্যন্ত হালকা সেচ ও পরবর্তীতে প্রতি কিস্তি সার প্রয়োগের পর জমিতে সেচ দিতে হয়; টমেটো গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। বেডের দুইপাশের নালা দিয়ে জমিতে সেচ দেয়া সুবিধাজনক; অতিরিক্ত পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য নালা পরিমিত চওড়া (৩০-৪০ সেমি.) এবং এক দিকে মৃদু ঢালু হওয়া বাঞ্ছনীয়; প্রতিটি সেচের পরে মাটির উপরিভাগের চটা ভেঙে দিতে হবে যাতে মাটিতে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে; ড্রিপ সেচ পদ্ধতিতে সেচ দিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না, তদুপরি পানির প্রয়োজন ও কম হয়। অতিরিক্ত পানি বের হওয়ার জন্য সুষ্ঠু নিকাশব্যবস্থা করতে হবে।
আন্তঃপরিচর্যা
খুঁটি : টমেটো গাছ এর ভাল ও গুণগত ফলন পাওয়ার জন্য খুঁটি দিতে হয় যাতে গাছ ফলের ভারে হেলে না পড়ে।
মালচ পেপার ব্যবহার : গাছের সঠিক বৃদ্ধি ও মাটির পানির সঠিক ব্যবহার করার জন্য মালচ পেপার ব্যবহার করা হয়। এটি ব্যবহার করলে আগাছা দমন হয় এবং ফলন বৃদ্ধি পায়। বাজারে ১.২ মিটার ও ১ মিটার প্রস্থ এবং ৫০০-৬০০ মিটার লম্বার মালচ পেপার পাওয়া যায়।
আগাছা দমন : নিড়ানি বা কোদাল দিয়ে প্রয়োজনীয় আগাছা দমন করতে হয়, তবে মালচ পেপার ব্যবহার করে আগাছা দমন এ খরচ কম হয়।
পার্শ্ব কুশি ছাটাই : টমেটো গাছে ১ম ফুলের গোছার ঠিক নীচের কুশিটি ছাড়া সব পার্শ্ব কুশি ছাঁটাই করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ (পরিপক্বতা শনাক্তকরণ) ও ফলন
ফলের ঠিক নিচে ফুল ঝরে যাওয়ার পর যে দাগ থাকে ঐ স্থান থেকে লালচে ভাব শুরু হওয়া মাত্রই ফল সংগ্রহ করলে হবে বাজারজাতকরণের জন্য সুবধিা হয়; এতে ফল অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
জাত ভেদে ফলনের পার্থক্য হয়ে থাকে। যেমনঃ ৯০-১০০ টন/হে. (বারি টমেটো-২২); ৮৮-৯৫ টন/হে. (বারি টমেটো-২৩)।
ফসল সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা
স্তূপাকারে না রেখে পাতলা করে ঠা-া ছায়া স্থানে প্লাস্টিকের বাক্সে রাখতে হবে। সম্ভব হলে আর্দ্রতা সংরক্ষণের জন্য ভিজা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে; বাজারজাতকরণের পূর্বে বাছাই ও গ্রেডিং করে তার পর ধুয়ে নিতে হবে; রোগাক্রান্ত, পোকাক্রান্ত, আঘাতপ্রাপ্ত, অতি কচি, বাত্তি ও ভিন্ন রং এর ফলকে বাছাই করতে হবে।
বীজ উৎপাদন
বীজ উৎপাদনের জন্য ফল পুরাপুরি লাল বর্ণ ধারণ করলে তুলতে হবে। সাধারণত ১৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা ও ৪২% বাতাসের আর্দ্র্রতা বিশিষ্ট ঘরের পরিবেশ বীজ সংরক্ষণের জন্য উত্তম; বীজ ফলন ২০০-২৫০ কেজি/হেক্টর (১.০ কেজি /শতাংশ)।
পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা
সাদা মাছি পোকা : আঠালো হলুদ ফাঁদ ব্যবহার করা; স্থানীয়ভাবে সুপারিশকৃত জৈব বালাইনাশক বায়োমাক্স এম ১মিলি/ লিটার, ফাইটোক্লিন, বায়োমক্সে এম, সাকসেস ২.৫ এস সি ১মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত পাতায় স্প্রে করা; আক্রমণের হার অত্যন্ত বেশি হলে ইমিটাক্লোরেপিড গ্রুপ এর অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করে তা দমন করা।
টমেটোর ফলছিদ্রকারী পোকা : পোকাসহ আক্রান্ত ফল হাত বাছাই করে মেরে ফেলা; সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা; স্থানীয়ভাবে সুপারিশকৃত জৈব কীটনাশক (এন্টারিও, বায়োমক্স এম) ব্যবহার করা যেতে পারে।
পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকা
আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংস করা; আঠাল হলুদ ফাঁদ ব্যবহার করে এদেরকে আকৃষ্ট করে মেরে ফেলা; স্থানীয়ভাবে সুপারিশকৃত জৈববালাই নাশক বায়োমাক্স এম ১ মিলি/লিটার, ফাইটোক্লিন, বায়োমক্সে এম ১মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত পাতায় স্প্রে করা; আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে সবশেষ ব্যবস্থা হিসেবে অনুমোদিত কীটনাশক একতারা প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ মিলি স্প্রে করা।
রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনা
ড্যাম্পিং অফ : প্রতিষেধক হিসাবে মাটিতে ক্যাপটান, কপার অক্সিক্লোরাইড বা ডায়থেন এম-৪৫, ১-২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা; বপনের পূর্বে প্রোভাক্স বা ভিটাভেক্স (২.৫ গ্রাম/ কেজি বীজ) দ্বারা বীজ শোধন করা; সরিষার খৈল চারা রোপণের তিন সপ্তাহ পূর্বে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে; পরিবেশ বান্ধব জৈববালাইনাশক ফাইটোম্যাক্স (৫-৭ মিলি/ লিটার) বা লাইকোম্যাক্স (২-৩ গ্রাম/লিটার) পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা; আক্রান্ত জায়গায় রিডোমিল গোল্ড (০.২%) দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দেওয়া।
ঢলেপড়া রোগ : আক্রান্ত গাছ দেখলেই প্রাথমিকভাবে তা তুলে ধ্বংস করা; রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষ করা।
নাবিধসা/মড়ক : আকাশ মেঘাচ্ছন্ন অথবা ঘন কুয়াশা ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ৩-৪ দিনের বেশি চলতে থাকলে দেরি না করে ম্যানকোজেব ছত্রাকনাশক যেমন- রিডোমিল গোল্ড ব্যবহার করা। ২ গ্রাম/ লিটার হারে মিশিয়ে ১ম বার স্প্রে করার ৩ দিন পর ২য় বার স্প্রে করা; আক্রান্ত ফসল সম্পূর্ণ পুড়িয়ে ধ্বংস করে ফেলতে হবে।
হলুদ পাতা কোকড়ানো : চারা লাগানোর দুই সপ্তাহ পর থেকে ৭-১০ দিন পরপর ইন্টিপ্রিড ১০ এস সি অথবা ইমিটাফ ১ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত পাতায় স্প্রে করা। এর ফলে বাহক পোকা যেমন সাদা মাছি পোকা দমন হবে ও হলুদ পাতা কোঁকড়ানো ভাইরাস এর আক্রমণ ও কম হবে; ক্ষুদ্র ছিদ্রযুক্ত (প্রতি বর্গইঞ্চিতে ৫০টি ছিদ্র) সাদা নাইলনের নেট দিয়ে বীজতলা ঢেকে চারা উৎপাদন করতে হবে; ফল সংগ্রহের দুই সপ্তাহ আগেই স্প্রে বন্ধ করতে হবে।
লেখক : ১মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, সবজি বিভাগ, উগকে, বিএআরআই ২ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, সবজি বিভাগ, উগকে, বিএআরআই। মোবাইল : ০১৭৫৪১১২০৫০, ই-মেইল : akmqzs@gmail.com
সবজি চাষে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বায়ো ডিগ্রেডেবল পলি মালচিং পেপার
ড. মোঃ আব্দুল মালেক
বর্তমানে দেশে উৎপাদিত সকল সবজিতেই ব্যবহার করা হচ্ছে মাত্রারিক্ত কীটনাশক, যা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কীটনাশক কম ব্যবহার করে মানবস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ অর্থাৎ বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের জন্য দেশের কৃষিবিদগণ উদ্ভাবন করে চলেছে লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব নানা প্রযুক্তি। ফসল চাষে উদ্ভাবিত নানা পরিবেশ-বান্ধব কৃষি প্রযুক্তির একটি হলো বায়ো ডিগ্রেডেবল পলি মালচিং। এটি সবজি জাতীয় ফসলসহ বিশেষ করে স্ট্রবেরি চাষে বিজ্ঞাননির্ভর একটি আধুনিক চাষ পদ্ধতি। বর্তমানে সবজি চাষে জমি প্রস্তুতকরণে আধুনিক মালচিং পদ্ধতি কাজে লাগাচ্ছে অনেকে। এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত সবজির ফলন ও দাম ভাল পাওয়ায় উৎসাহিত হচ্ছেন দেশের কৃষকগণ। মালচিং করার জন্য সাধারণত যেসব মালচ উপাদান ব্যবহার করা হয় সেগুলো হলো- ধান বা গমের খড়, কচুরিপানা, গাছের পাতা, শুকনা ঘাস, কম্পোস্ট, ভালোভাবে পচানো রান্নাঘরের আবর্জনা ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি সবজি চাষে মালচিং-এ পলিথিনের ব্যবহার দিনদিন বেড়েই চলেছে। আর মালচিং পদ্ধতিতে বা মালচ হিসেবে পলিথিন ব্যবহার করা হলে তাকে পলিথিন মালচিং বলে। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের মালচিং পেপার পাওয়া গেলেও এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পচনশীল অর্থাৎ বায়ো ডিগ্রেডেবল মালচিং পেপার আর তাই নির্বাহিত সবজি/ফল চাষে এ পচনশীল মালচিং পেপার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আধুনিক সবজি চাষে এটি একটি পরিবেশ-বান্ধব পদ্ধতি। এটি মূলত চীন ও জাপানে প্রচলিত পদ্ধতি হলেও বর্তমানে বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। দেশের কৃষি বিভাগ বিশেষ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পাশাপাশি পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর সহায়তায় দেশের কৃষকগণ বিভিন্ন স্থানে এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে ভাল ফলাফল পেয়ে বেশ লাভবান হয়েছেন।
মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষে পরিমাণমতো পুষ্টি উপাদান বা খাবার হিসেবে জৈব ও বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক সার দিয়ে জমি প্রস্তুত করা হয়। জমি প্রস্তুতি শেষে বেড পদ্ধতিতে সারি তৈরি করে সারির প্রস্থ অনুযায়ী বায়ো ডিগ্রেডেবল পলি কেটে (সারির প্রস্থের চেয়ে একটু বেশি) মাটির সারিগুলোর উপরিভাগ সমান করে ঢেকে দেয়া হয় এবং সারির দুই দিকের বায়ো ডিগ্রেডেবল পলিথিনের কিনারাও মাটি দিয়ে ভালভাবে ঢেকে দেয়া হয়। এরপর সারিগুলোর উপর বায়ো ডিগ্রেডেবল পলি নির্দিষ্ট দূরত্বে ফুটো করে চারা রোপণ করা হয়। উল্লেখ্য, সবজির বৃদ্ধিভেদে সারি হতে সারির দূরত্ব এবং সারিতে ফুটো হতে ফুটোর দূরত্ব কমবেশি হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে সবজি চাষের বিশেষ সুবিধা হলো চারা রোপণের পর থেকে আর তেমন কোন পরিচর্যা প্রয়োজন হয় না। সারিগুলো পলি দিয়ে ঢাকা থাকায় আগাছার উপদ্রব হয় না, ফলে ফসলের পুষ্টি উপাদানের অপচয় না হওয়ায় সারের পরিমাণও কম লাগে। তাছাড়া মাটির সারিগুলো বায়ো ডিগ্রেডেবল পলি দিয়ে ঢাকা থাকায় ফসলের জমির আর্দ্রতা সংরক্ষণে মালচিং বিশেষভাবে উপকারী, কারণ এ প্রযুক্তি ব্যবহারে জমির মাটির আর্দ্রতা সূর্যের তাপ ও বাতাসে উড়ে অপচয় হয় না। এভাবে জমিতে রসের ঘাটতি না হওয়ায় সেচেরও তেমন প্রয়োজন হয় না আর সেচ লাগলেও তা অনেক কম পরিমাণে। এ পদ্ধতিতে সবজি চাষে সারের পরিমাণ কম লাগা, জমিতে আগাছা জন্মিতে না পারায় আগাছা নিয়ন্ত্রণে শ্রমিকের তেমন প্রয়োজন হয় না বিধায় উৎপাদন খরচও অনেক কম হয়।
শীতকালে বায়ো ডিগ্রেডেবল পলি মালচ ব্যবহার করলে মাটিতে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা ধরে রাখা সম্ভব হয়, যা ফসলের জন্য বেশ উপকারী এবং গরমকালে মাটি অনেকটা ঠা-া রাখে যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়ক। তাছাড়া বায়ো ডিগ্রেডেবল পলি মালচিং পদ্ধতিতে ফসল চাষে পোকা-মাকড়ের আক্রমণও অনেকটাই রোধ করা যায়। বায়ো ডিগ্রেডেবল পলি মালচিং পেপার ব্যবহার করলে বৃষ্টিতে মাটির ক্ষয় রোধ হয় এবং মাটির পানি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বায়ো ডিগ্রেডেবল পলি মালচিং গরম ও ঠান্ডায় মাটির তাপমাত্রায় নিয়ন্ত্রণে ইনসুলেটর হিসেবে কাজ করে, বাষ্পীভবন হ্রাস পাওয়ায় মাটি অনেকদিন পর্যন্ত পানি ধরে রাখে, উচ্চ তাপমাত্রায় মাটির পৃষ্ঠভাগ ফেটে যাওয়া এবং মাটির উপরিভাগে কঠিন স্তর সৃষ্টিতে বাধা প্রদানের মাধ্যমে মাটির ভঙ্গুরতা রক্ষা করে কর্ষণে সহায়তা করে। তাছাড়া এধরনের মালচিং মাটিতে আলো পৌঁছানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমে আগাছা বীজের অঙ্কুরোদগমে বাঁধার সৃষ্টি করে, ফলে জমিতে আগাছার উপদ্রব হয় না।
দেশের পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর অর্থায়নে সমন্বিত কৃষি ইউনিটের আওতায় ৩৭টি সহযোগী সংস্থার ২১৫টি শাখার মাধ্যমে দেশের মোট ২৬টি কৃষি-পরিবেশ অঞ্চলে ৩৪টি জেলার নির্বাচিত অনেক কৃষক বায়ো ডিগ্রেডেবল পলি মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। আর এর কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছেন সহযোগী সংস্থা নিযুক্ত কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ ও সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ। কম খরচে বেশি ফলনসহ পরিবেশবান্ধব বায়ো ডিগ্রেডেবল পলি মালচিং পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের উচ্চমূল্যের সবজি বিশেষ করে করল্লা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ঢেঁড়স, স্কোয়াশ, ব্রোকলি, শসা, টমেটো, ক্যাপসিকাম, মরিচ, বেগুন, ঝিঙা, ধুন্দল, পটোল, চিচিঙ্গা, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া চাষ এবং ফল বিশেষ করে স্ট্রবেরি চাষে সারাদেশে পদ্ধতিটি দিনদিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
এ পদ্ধতিতে ফসল চাষাবাদে ক্ষতিকর পোকামাকড়ের আক্রমণ খুবই কম হয় বিধায় বালাইনাশক প্রয়োগের তেমন প্রয়োজন না হওয়ায় এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত ফসল হয় অনেকটাই নিরাপদ। তাই আশা করা যায়, আগামী দিনগুলোতে পরিবেশ-বান্ধব মালচিং পদ্ধতিটির বহুল প্রচলনের মাধ্যমে উচ্চমূল্যের সবজিসহ নির্বাচিত কিছু ফলের চাষাবাদ ও ফলন অনেকাংশে বাড়ার পাশাপাশি বাড়বে মোট উৎপাদনও।
লেখক : মহাব্যবস্থাপক, কৃষি ইউনিট, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), আগারগাঁও, ঢাকা-১২০৭, মোবাইল: ০১৭১২-১০৬৬২০
মাশরুম কেন খাবো ও কিভাবে খাবো
ড. আকতার জাহান কাকন
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাশরুম একটি সম্ভাবনাময় ফসল কিন্তু এখনো সেভাবে ভোক্তা তৈরি হয়নি কারণ প্রচলিত অন্যান্য খাবারের মতো মাশরুম মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় এখনো যুক্ত হয়নি। মাশরুমের গুণাগুণ, রন্ধণপ্রণালি, কোথায় পাওয়া যায় এ সম্পর্কে অনেকেই অবগত নয়। তাই ব্যাপক প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে মাশরুম মানুষের দৃষ্টিগোচরে আনা দরকার। অতীতে মাশরুম উৎপাদন নিয়ে কাজ করা হলেও প্রক্রিয়াজাতকরণ, মার্কেট লিংকেজ তৈরি এবং ব্যাপক প্রচার প্রচারণা সময়ের দাবি। বর্তমানে মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ প্রকল্পের আওতায় উদ্যোক্তা তৈরি, তাদেরকে প্রক্রিয়াজাতকরণ, মার্কেট লিংকেজ তৈরি, ভ্যালু চেইন, মাশরুম ও বীজ উৎপাদন বিষয়ে হাতেকলমে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। এ ছাড়াও পুরনো উদ্যোক্তাগণকে এসকল বিষয়ে কারিগরী পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণসম্পন্ন খাবার। এতে আছে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, অ্যামাইনো এসিড, অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। স্বাদ, পুষ্টি ও ঔষধিগুণের কারণে ইতোমধ্যেই এটি সারা দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ওয়েস্টারসহ ঋষি, মিল্কি, কান ও বাটন মাশরুম চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশে চাষকৃত মাশরুমগুলো দিয়ে বিভিন্ন মজার মজার রেসিপি তৈরি করে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাশরুম যুক্ত করা প্রয়োজন।
মাশরুম কেন খাবো
খাদ্যগুণে সমৃদ্ধ মাশরুম অত্যন্ত স্বাস্থ্যপ্রদ একটি খাবার। মাশরুমের পুষ্টিমান তুলনামূলকভাবে অত্যধিক এবং এর প্রোটিন অতি উন্নতমানের এবং মানবদেহের জন্য অতিশয় উপকারী। একটি পরিপূর্ণ প্রোটিনের পূর্বশর্ত হলো মানবদেহের অত্যাবশ্যকীয় ৮টি এমাইনো অ্যাসিডের উপস্থিতি। মাশরুমে অতীব প্রয়োজনীয় ৮টি এমাইনো অ্যাসিডের সবগুলোই বিদ্যমান। অন্যান্য প্রাণিজ আমিষ যেমন-মাছ, গোশত, ডিম অতি নামী-দামি খাবার হলেও এতে অতিমাত্রায় লিপিডের উপস্থিতির কারণে তা গ্রহণ করলে শরীরে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে, যার ফলে মেদ-ভুঁড়ির সৃষ্টি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ প্রভৃতি জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
মাশরুমের প্রোটিনে-ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ অতি স্বল্প এবং কোলেস্টেরল ভাঙার উপাদান-লোভস্ট্রাটিন, এন্টাডেনিন, ইরিটাডেনিন ও নায়াসিন থাকায় শরীরের কোলেস্টেরল জমতে পারে না বরং মাশরুম খেলে শরীরে বহু দিনের জমানো কোলেস্টেরল ধীরে ধীরে বিনষ্ট হয়ে যায়। ১০০ গ্রাম শুকনো মাশরুমে ২৫-৩৫ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে। পক্ষান্তরে আমরা যা অতি নামী-দামি খাবার হিসেবে মাছ, গোশত, ডিম খেয়ে থাকি তার মধ্যে ১০০ গ্রাম মাছ, গোশত ও ডিমে প্রোটিনের পরিমাণ হলো ১৬-২২ গ্রাম, ২২-২৫ গ্রাম ও ১৩ গ্রাম মাত্র।
মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা সৃষ্টি করাই ভিটামিন ও মিনারেলের প্রধান কাজ। শরীরের চাহিদামতো প্রতিদিন ভিটামিন ও মিনারেল খেতে না পারলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা ক্রমশ দুর্বল হয়ে নানারূপ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে হয়। প্রাকৃতিকভাবে মাশরুমেই সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ও মিনারেল বিদ্যমান। মাশরুমে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম ও সেলেনিয়াম। সেলেনিয়াম উপাদানটি শুধু মাছেই পাওয়া যায়। যারা পুরোপুরি নিরামিষ ভোজি তারা মাশরুমের মাধ্যমে এই উপকারী উপাদানটি গ্রহণ করতে পারেন। মাশরুমে আরো আছে এরগোথিওনেইন নামে এক ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা মানবদেহের জন্য ঢালের মতো কাজ করে। মাশরুমে ভিটামিন বি-১২ ও ডি আছে প্রচুর পরিমাণে যা অন্য কোন উদ্ভিজ্জ উৎসে নেই। নিয়মিত মাশরুম খেলে তা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে; ক্যান্সার, জন্ডিস ইত্যাদি প্রতিরোধ করে; হৃদরোগ, টিউমার, যৌন অক্ষমতা, রক্তস্বল্পতা ও মেদভুঁড়ি ইত্যাদি প্রতিরোধ ও নিরাময় করে; হাড় ও দাঁত শক্ত করে এবং চুল পাকা ও চুল পড়া রোধ করে।
মাশরুম কিভাবে খাবো
আমাদের দেশে যে সমস্ত মাশরুম পাওয়া যায় তন্মেধ্যে ওয়েস্টার মাশরুম সহজলভ্য। তাজা, শুকনা ও পাউডার এই তিনভাবে মাশরুম খাওয়া হয়।
তাজা মাশরুম: মাশরুমের চাষকৃত স্পন প্যাকেট থেকে সদ্য তোলা মাশরুমই তাজা মাশরুম। আমরা সাধারণত বাজার থেকে কিনে অথবা নিজে চাষ করে মাশরুম খেয়ে থাকি। তাজা মাশরুম নানাভাবে ব্যবহার করে মজাদার অনেক খাবার তৈরি করা যায়। এটি অন্যান্য সবজির মতো এককভাবেও রান্না করা যায়, আবার যে কোন তরকারি/সবজির সাথে, মাছ, মাংস, ডিম, নুডুলস ইত্যাদির সাথে মিশিয়েও রান্না করা যায়। তাজা মাশরুম প্রথমে অন্যান্য সবজির সাধারণ ঠা-া পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর ছোট ছোট টুকরা করে অথবা হাত দিয়ে চিকন চিকন করে ছিঁড়ে ব্যবহার করা। ফ্রিজের নরমালে ৫ থেকে ৬ দিন রেখে খাওয়া যায়। তাছাড়া অল্প লবণ পানিতে ২-৩ মিনিট সিদ্ধ করে বক্সে ভরে ডিপ ফ্রিজে রেখে অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায়।
শুকনা মাশরুম: তাজা মাশরুম রোদে শুকিয়ে শুকনা মাশরুম তৈরি করা হয়। তাজা মাশরুমের মতই এ মাশরুম ব্যবহার করা যায়, শুধু ব্যবহারের পূর্বে কুসুম গরম পানিতে ৫-১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। এতে মাশরুম নরম হবে ও ব্যবহারের সুবিধা হবে। এ মাশরুম বয়ম/পিপি ব্যাগে বায়ুরোধী অবস্থায় দীর্ঘদিন (প্রায় ৬ মাস) সংরক্ষণ করা যায়। পুষ্টি ও ঔষধীগুণের দিক থেকে তাজা মাশরুম ও শুকনা মাশরুমের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য হয় না।
পাউডার মাশরুম: শুকনা মাশরুম গুঁড়া করে পাউডার মাশরুম তৈরি করা হয়। পাউডার মাশরুম ব্যবহারের সুবিধা অনেক। এটি চা, কফি, হরলিক্স ও দুধের সাথে মিশিয়ে যেমন খাওয়া যায় তেমনি যে কোন তরকারিতে মসলার গুঁড়ার মতো মিশিয়ে রান্না করা যায়। এছাড়াও রুটির খামির সাথে মিশিয়ে, যে কোন পিঠা, কেক, পুডিং এর মতো মজাদার খাবার তৈরি করা যায়। শুকনা মাশরুমের মতোই বায়ুরোধী করে প্যাকেট করে এ মাশরুম দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। বাণিজ্যিকভিত্তিতে বিস্কুট, চানাচুর ইত্যাদি তৈরির জন্য ৩-৫% হারে ব্যবহার করা হয়।
মাশরুম সালাদ
প্রস্তুত প্রণালী : প্রথমে মাশরুমগুলো পছন্দমতো সাইজে কেটে নিয়ে একটু পানিতে হাফ সেদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। এরপর কড়াইয়ে সামান্য অলিভ অয়েল দিয়ে রসুন কুচি দিতে হবে। রসুন থেকে সুন্দর একটি ফ্লেভার বের হলে এরমধ্যে মাশরুম, বাঁধাকপি, পেঁয়াজ কুচি ও কাঁচামরিচ কুচি সব দিয়ে একটু ভেজে নিতে হবে। সাথে দিয়ে দিতে হবে লবণ। ভাজা হয়ে গেলে দিয়ে দিতে হবে গোলমরিচ গুঁড়া। এরপর চুলা বন্ধ করে এরমধ্যে একটু লেবুর রস ও ধনিয়া পাতা কুচি দিয়ে নেড়ে চেড়ে দিতে হবে। ঢেকে রেখে দিতে হবে দুই মিনিটের জন্য। এরপর টমেটো ও শসা কুচি মিশিয়ে নিতে হবে। এভাবেই তৈরি হয়ে যাবে মজাদার ও পুষ্টিকর মাশরুম সালাদ।
ক্রিম অফ মাশরুম স্যুপ
প্রস্তুত প্রণালী : প্রথমে কিছু মাশরুমকে পাতলা পাতলা ¯¬াইস করে নিতে হবে। আর কিছুু ওয়েস্টার মাশরুমকে ছোট কুচি করে কেটে নিতে হবে। তারপর পেঁয়াজ ও রসুন কুচি করে কেটে নিতে হবে। কড়াইতে ১ চা চামচ বাটার দিয়ে মেল্ট হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করব, এরপর পাাতলা ¯¬াইস করে রাখা মাশরুমগুলো ৩-৪ মিনিট ভেজে উঠিয়ে নিতে হবে। ঐ পাত্রে তেল দিয়ে এর মধ্যে রসুন কুচি দিয়ে নাড়াচাড়া করে পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বেশি ভাজা যাবে না। একটু নরম হওয়ার পর কুচি করে রাখা মাশরুম দিয়ে ভালোভাবে ভেজে নিতে হবে। ভাজা হয়ে গেলে এগুলোকে সাইডে সরিয়ে মাঝে ফাঁকা করে নিয়ে ১ চামচ বাটার দিতে হবে ও তাতে ২ চামচ ময়দা দিয়ে ভেজে নিতে হবে। ভাজা হয়ে গেলে সাইডে সরিয়ে রাখা উপকরণগুলো মিশিয়ে নিতে হবে ও লো ফ্লেমে ভাজতে হবে যাতে ময়দা পুড়ে না যায়। এরপর হাফ লিটার দুধ দিয়ে দিয়ে নাড়তে হবে এবং চুলার তাপ বাড়িয়ে দিয়ে ফুটে উঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ঘন হয়ে গেলে চুলা বন্ধ করে দিতে হবে। তারপর একটু ঠা-া করে একটি হ্যান্ড ব্লেন্ডারের সাহায্যে মিশিয়ে নিয়ে নিতে হবে। এরপর চুলা জ্বালিয়ে নিয়ে তারমধ্যে চিনি, লবণ, গোলমরিচ গুঁড়া, ভেজে রাখা ¯¬াইস মাশরুম, ২ চামচ ক্রিম, ১ চামচ বাটার দিয়ে মিশিয়ে সবশেষে একটু অরিগানো দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে।
মাশরুম লাড্ডু
প্রস্তুত প্রণালী : মাশরুমগুলোকে কুচিকুচি করে কেটে নিয়ে ঘি দিয়ে ভাজতে হবে। সিদ্ধ হয়ে যাওয়া ভাজা মাশরুমের সাথে ছোলার ডালের বেসন দিয়ে ভালো করে ভেজে নিতে হবে। এরপর গাজর কুচি দিয়ে ভাজতে হবে। অন্য একটি পাত্রে দুধ খুব ঘন করে জ্বাল দিয়ে তার মধ্যে চিনি, এলাচ গুঁড়া, কিসমিস ও বাদম কুচি দিয়ে দিতে হবে। এবার ভাজা ডাল, মাশরুম ও গাজর কুচির মিশ্রণ ঘন করা দুধের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে অনবরত নাড়তে হবে। নাড়তে নাড়তে আঠালো হয়ে এলে নামিয়ে গরম অবস্থায় লাড্ডু আকার দিলেই তৈরি হয়ে যাবে মাজাদার মাশরুম লাড্ডু।
মাশরুম ভর্তা
প্রস্তুত প্রণালী : ভর্তা বাঙালির প্রিয় খাবার। ওয়েস্টার মাশরুম দিয়ে বিভিন্ন স্বাদের মাশরুম ভর্তা তৈরি করা যায়। যেমন চিংড়ি মাশরুম ভর্তা, মাশরুম- শুঁটকি ভর্তা অথবা ধনে পাতা মাশরুম ভর্তা। শুধু মাশরুম ভর্তা তৈরির জন্য মাশরুম ধুয়ে কুচি করে সিদ্ধ করে নিতে হবে। একটি ফ্রাইপ্যানে মাশরুম দিয়ে তাতে লবণ দিতে হবে, মাশরুম থেকে পানি বের হবে এবং সিদ্ধ হয়ে যাবে। এরপর অল্প তেলে রসুন কুচি, পেঁয়াজ কুচি, কাঁচামরিচ ও সিদ্ধ মাশরুম দিয়ে ভালো করে ভেজে নিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে পাটায় বেটে ভর্তা তৈরি করতে হবে। বৈশাখের পান্তা ইলিশের সাথে মাশরুম ভর্তা এনে দেবে নতুনত্বের ছোঁয়া।
মাশরুম পিঠা
প্রস্তুত প্রণালী: প্রথমে একটি পাত্রে ২৫০ মি.লি পানি ও পরিমাণমতো লবণ দিয়ে ফুটাতে হবে। ফুটানো পানিতে ৩০০ গ্রাম পরিমাণ চালের গুঁড়া দিয়ে নেড়ে দিতে হবে। এই অবস্থায় চুলার আগুন একদম কমিয়ে দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। আটা সিদ্ধ হয়ে গেলে ছোট ছোট রুটি তৈরি করে নিতে হবে। পিঠার পুর তৈরির জন্য ওয়েস্টার মাশরুম কুচি কুচি করে কেটে ধুয়ে ভালোভাবে পানি ঝড়িয়ে নিতে হবে। কড়াইয়ে তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি, কাঁচামরিচ কুচি এবং মাশরুম কুচি একসাথে দিয়ে দিতে হবে। এরপর হালকা হলুদ, জিরা গুঁড়া, আদা ও রসুন বাটা দিয়ে ভেজে নামিয়ে নিতে হবে। গোলাকার রুটিকে দুইভাগে ভাগ করে ত্রিকোণাকৃতির করে ভেতরে মাশরুম পুুর দিয়ে পিঠা তৈরি করতে হবে। পিঠাগুলো গরম তেলে ভেজে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে মুচমুচে মাশরুম পিঠা।
ঋষি মাশরুমের চা
পাতলা টুকরা করে কাটা ঋষি মাশরুম/পাউডার ৫ গ্রাম ১ লিটার পানিতে আধা ঘণ্টা ফুটিয়ে পানিকে আধা লিটারে পরিণত করলে ঋষি মাশরুমের নির্যাস (পলি স্যাকারাইড) পানিতে চলে আসে। এ নির্যাসকে চায়ের মতো খাওয়া যায়। লেবু আর সামান্য লবণ মিশিয়েও এই চা খেতে পারেন। প্রচলিত আছে যে প্রতিদিন এক কাপ ঋষি মাশরুমের চা শরীরের সব বর্জ্য পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। ব¬াড সুগার ও কোলেস্টেরল কমাতে এই চা অনন্য।
লেখক : প্রকল্প পরিচালক, মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ প্রকল্প, সাভার, মোবাইল : ০১৭১৮১৩৭১১৩, ই-মেইল :| kakon.smdp@gmail.com
শীতকালীন সবজির রোগ ও প্রতিকার
ড. মোঃ হাফিজুর রহমান
বাংলাদেশে সারা বছরই সবজি চাষ হলেও বেশির ভাগ সবজি শীতকালে উৎপাদিত হয়। আমাদের দেশে সাধারণত বছরের পর বছর একই জমিতে কৃষকরা সবজি চাষ করেন। একই জমিতে একই ফসল চাষ করলে রোগের ইনোকুলাম বৃদ্ধি পায় যার ফলে অনুকূল পরিস্থিতিতে মহামারি আকারে রোগ বিস্তার লাভ করে। চারাপর্যায় থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত সবজি উৎপাদনের প্রধান প্রতিবন্ধকতা ফসলের রোগবালাই এবং পচন যা মাঠে দাঁড়ানো ফসলে এবং সবজি ট্রানজিট, সংরক্ষণ ও বিপণনের সময় বিভিন্ন অণুজীব দ্বারা ঘটে থাকে। বিভিন্ন পরিবারের শাকসবজির প্রধান প্রধান রোগ ও তার প্রতিকারের ব্যবস্থা নি¤েœ আলোচনা করা হলো।
কপি (ফুলকপি, বাঁধাকপি) জাতীয় সবজির রোগও তার প্রতিকার
রোগের নাম : নেতিয়ে পড়া
রোগের কারণ : Pythium sp, Phytophthora spp., Rhizoctonia solani, Fusarium spp., Sclerotium rolfsii নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণ : চারা অবস্থায় এই রোগ হয়; শিকড় পচতে শুরু করে মাটির উপরের কা-ে সংকোচন দেখা দেয়; চারা গাছ মাটির উপর হেলে পড়ে ও মারা যায়।
প্রতিকার ব্যবস্থা : বীজতলার মাটি ৪.০% ফরমালিন অথবা শুকনা করাতের গুঁড়া দ্বারা শোধন করতে হবে; বপনের পূর্বে ০.২৫% ভিটাভেক্স ২০০ নামক ছত্রাক নাশক দ্বারা বীজ শোধন করতে হবে; আর্দ্র ও স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে বীজতলা তৈরি করা যাবে না; রোগ দেখা দিলে রিডোমিল গোল্ড এম জেড-৭২ নামক ছত্রাকনাশক ০.২% হিসেবে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার বীজতলায় ঢেলে দিতে হবে; সরিষার খৈল বীজ বপনের ১৫ দিন পূর্বে ৩০০ কেজি/হে. হিসাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে; মুরগির বিষ্ঠা বীজ বপনের ৩ সপ্তাহ আগে ৩ টন/হে. হিসেবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
রোগের নাম : মূল পচা
রোগের কারণ : Sclerotium rolfsii নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণ : মাটি বরাবর গাছের গোড়ার টিস্যু পচে যায় এবং সাদা মাইসেলিয়াম দেখা যায় ও পরে গাছ মরে যায়।
প্রতিকার ব্যবস্থা : ভিটাভেক্স-২০০ বা ব্যাভিস্টিন /নোইন ০.২% অথবা স্যাভলন ০.৫% হারে পানিতে মিশিয়ে স্টেম বেসের চারপাশে স্প্রে করলে অত্যন্ত কার্যকর ফল পাওয়া যায়
রোগের নাম : ব্লাকলেগ
রোগের কারণ : Phoma lingam নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণ : জমিতে অধিক রস থাকলে ফসলের যে কোন বয়সে আক্রমণ হতে পারে; আক্রান্ত গাছ ফ্যাকাশে সবুজ বা হলুদ হয়ে ঢলে পড়ে মারা যায়; আক্রান্ত গাছে কা-ে মাটির উপরে ও নিচে কালো দাগ দেখা যায়; পচা অংশ এক ধরনের উগ্র, বিদঘুটে গন্ধ ছড়ায়।
প্রতিকার ব্যবস্থা : ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ৩০ মিনিটের জন্য গরম পানিতে বীজ শোধন ; দুই থেকে তিন বছর ফসল আবর্তন ভিটাভেক্স-২০০ বা ব্যাভিস্টিন /নোইন ০.২% অথবা স্যাভলন ০.৫% হারে পানিতে মিশিয়ে স্টেম বেসের চারপাশে স্প্রে করলে অত্যন্ত কার্যকর ফল পাওয়া যায়।
রোগের নাম : ফুলকপির কার্ড রট/ কার্ডপচা
রোগের কারণ : : Fusarium equisiti, Alternaria spp নামক ছত্রাক Ges Erwinia carotovora এবং নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণ : Gurd এর উপর প্রথমে ডিম্বাকৃতি বাদামি দাগ দেখা যায়; দাগ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে কার্ডের সর্বাদিক অংশে ছড়িয়ে পড়ে; পচা কার্ড বীজের জন্য ফুল ফোটাতে ব্যর্থ হয়।
প্রতিকার ব্যবস্থা
ভিটাভেক্স-২০০ দিয়ে বীজ শোধন; কপি জাতীয় ফসল ছাড়া অন্য ফসলের সাথে শস্য আবর্তন ; রোগ দেখা দিলে রোভরাল এবং ব্যাভিস্টিন নামক ছত্রাক নাশক ০.২% হিসাবে র্পযায়ক্রমে ৫ বার ১০ দিনের ব্যবধানে স্প্রে করতে হবে।
রোগের নাম : বাঁধাকপির টিপবার্ন
বাতাসের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, মাটির আর্দ্রতার অভাব বা মাটির অতিরিক্ত আর্দ্রতা টিপবার্নের প্রবণতা বাড়িয়ে তোলে; টিপবার্ন সাধারণত তরুণ, দ্রুত বর্ধনশীল পাতার টিস্যুতে বিশেষত কার্ড বৃদ্ধিও সময় ঘটে; অধিক নাইট্রোজেন সার প্রয়োগের কারণে ফুলকপি ও বাঁধাকপিতে টিপবার্নের প্রবণতা বাড়ে।
রোগের নাম : অল্টারনারিয়া লিফ ব্লাইট
রোগের কারণ : Alternaria brassicicola, A. brassicae নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণ :
পাতায় ছোট ছোট বাদামি দাগ দেখা যায় এবং দাগগুলো একত্র হয়ে অনিয়মিত বড় দাগের সৃষ্টি হয় ও পাতার টিস্যু মারা যায়
প্রতিকার ব্যবস্থা : রোগ দেখা দিলে ১০ থেকে ১৫ দিনের ব্যবধানে ৪ বার রোভরাল ৫০ ডব্লিউপি বা ইমপ্রোসাম নামক ছত্রাকনাশক ০.২% হারে পানিতে মিশিয়ে পর্যায়ক্রমে ফলিয়ার স্প্রে করতে হবে।
আলু, বেগুন, টমেটোর রোগও তার প্রতিকার
রোগের নাম : বেগুনের ফোমোপসিস ব্লাইট রোগ
রোগের কারণ :Phomopsis vexans নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণ : ফল পচে যায় তবে পাতা এবং কা-কে সংক্রামিত করতে পারে, পাতা হলুদ হয়ে যায় এবং ঝরে পড়ে; মাটি সংলগ্ন কা-ের ত্বক পচে অভ্যন্তরীণ টিস্যুগুলো উন্মুক্ত হয়ে যায়; ফলে প্রবল বাতাসে এ ধরনের গাছ মূল কা- ভেঙে নিচে পড়ে যায়।
প্রতিকার ব্যবস্থা : সুস্থ ও রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করা; চারা লাগানোর তিন সপ্তাহ আগে হেক্টর প্রতি আধাপচা মুরগীর বিষ্ঠা ৫ টন বা সরিষার খৈল ৬০০ কেজি বা ট্রাইকো-কম্পোস্ট ২.৫ টন জমিতে প্রয়োগ করে দমন করা যায়; ট্রাইকো-লিচেট প্রতি লিটার পানিতে ২০ মিলি মিশিয়ে সব্জির বাড়ন্ত অবস্থা থেকে ১০/১৫ দিন অন্তর ¯েপ্র করা; ব্যাভিস্টিন (১ গ্রাম ১ লিটার পানিতে) পানির সাথে মিশিয়ে ¯েপ্র করা।
রোগের নাম : আলু, বেগুন, টমেটোর ঢলে পড়া বা ব্যাকটেরিয়াল উইল্ট
রোগের কারণ : Ralstonia solanacearum নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণ : যে কোন বয়সে এ রোগ হতে পারে; প্রথমে যে কোন পাতা বা একটি শাখার পাতা আংশিকভাবে ঢলে পড়ে; উচ্চ তাপমাত্রা (৩০-৩৫ সে.) উক্ত ঢলে পড়াকে খুবই ত্বরান্বিত করে এবং অকালে গাছ মরে যায়; কর্তিত কা- পরিষ্কার পানিতে স্বচ্ছকাচের গ্লাসে আধা ঘণ্টা ডুবিয়ে রাখলে ব্যাকটেরিয়ার সাদা দুধের মতো ধারা বেরিয়ে আসে; কর্তিত কা- দুই আঙুলে চাপ দিলে ব্যাকটেরিয়ার পুঁজ বেরিয়ে আসে।
প্রতিকার ব্যবস্থা : চারা লাগানোর ২ সপ্তাহ আগে হে: প্রতি আধা পচা মুরগির বিষ্ঠা ৫ টন বা সরিষার খৈল ৬০০ কেজি বা ট্রাইকো-কম্পোস্ট ২.৫ টন জমিতে প্রয়োগ করা; রোগ মুক্ত বীজ ব্যবহার; পর্যাপ্ত মাত্রায় জৈব ও সুষম রাসায়নিক সার প্রয়োগ; রোগ দেখা দেয়া মাত্র সেচ বন্ধ রাখা; প্রতি বছর কমপক্ষ ৪-৫ মাস পানির নিচে থাকে এরূপ জমি ভাল; আক্রান্ত জমিতে কমপক্ষে ৪ বছর শস্যপর্যায় অবলম্বন করতে হবে; লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলা; প্রতি হেক্টরে ২০-২৫ কেজি স্টাবল ব্লিচিং পাউডার দ্বারা মাটি শোধন করা।
রোগের নাম : টমেটো ও আলুরআগাম ব্লাইট
রোগের কারণ :Alternaria solani নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণ : সাধারণত : একটু বয়স্ক গাছে এ রোগ দেখা দেয়; এ রোগ পাতার উপরে ছোট ও বড় এক বা একাধিক বলয় আকারের (ঈড়হপবহঃৎরপ ৎরহম) বাদামি রঙের দাগ পড়ে; রোগের প্রকোপ বেশি হলে একাধিক দাগ মিলে বড় বাঁকাতেড়া আকারের দাগ বা ক্ষতের সৃষ্টি করে, এ অবস্থায় আক্রান্ত গাছের পাতা ঝলসে শুকিয়ে কুঁকড়ে যায়।
রোগের প্রতিকার : সুস্থ ও রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে; সুষম সার প্রয়োগ এবং সময়মতো সেচ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম রোভরাল মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর প্রয়োগ করতে হবে। আক্রমণের পূর্বে ডাইথেন এম-৪৫ ০.২% হারে স্প্রে করলে এ রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
রোগের নাম : আলুর লেট ব্লাইট
রোগের কারণ :Phytophthorainfestans নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
অনুকূল আবহাওয়া : ১০ সে: থেকে ২৫ সে: তাপমাত্রায়, ঘন কুয়াশায়, মেঘলা আবহাওয়া ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি ঘটে; পাতা সবসময় ভিজা থাকলে রাতের তাপমাত্রা ১৫-২৪০ সে. এবং দিনের তাপমাত্রায় ৩৫০ সে. হলেও এ রোগের বিস্তার ঘটে।
রোগের বিস্তার : প্রধান উৎস হলো আক্রান্ত বীজ। সাধারণত এক হেক্টর জমিতে একটি রোগাক্রান্ত বীজ আলু থাকলে সেটাই অনুকূল পরিবেশে ঐ পরিমাণ জমির ফসল মড়ক রোগে নষ্ট করে ফেলতে পারে; বাতাস, বৃষ্টিপাত, সেচের পানি বিভিন্ন উপকরণ ইত্যাদির সাহায্যে এ রোগের জীবাণু আক্রান্ত গাছ থেকে সুস্থ গাছে বিস্তার লাভ করে; বিকল্প পোষক যেমন টমেটো গাছ থেকেও এ রোগ বিস্তার লাভ করতে পারে। হিমাগারে রাখা আলুতে এই রোগজীবাণু সুপ্ত অবস্থায় থাকে এবং গাছ গজানোর ৪৫-৫০ দিন পর অনুকূল পরিবেশে রোগের সূচনা করে।
গাছে রোগের লক্ষণ : পাতার উপরের দিকে ফিকে সবুজ বা হালকা হলুদ রং এর দাগ পরে, দাগের ভেতরের অংশ প্রথমে পানি ভেজা বাদামি থেকে কালো বর্ণ ধারণ করে; আক্রান্ত পাতার নিচের দাগের চারিদিকে সাদা পাউডারের মতো ছত্রাক দেখা যায় ।
টিউবারেও রোগের আক্রমণ দেখা যায়
পাতা থেকে স্পোরানজিয়া মাটিতে ধুয়ে গেলে জমিতে আলুর কন্দ সংক্রমিত হয়। সংক্রমণ সাধারণত কন্দের ফাটল, চোখ বা লেন্টিসেলে শুরু হয়; বেগুনি বা বাদামি রঙ্গের দাগগুলো জল-ভেজানো, গাঢ়, কিছুটা লালচে বাদামি টিস্যু (মাংসে ৫ থেকে ১৫ মিমি) কন্দের উপর লক্ষ্য করা যায়; পরে আক্রান্ত স্থানগুলো শক্ত ও শুষ্ক হয়ে কিছুটা ডুবে (ংঁহশবহ) যায়; ক্ষতগুলো ছোট হতে পারে বা কন্দের প্রায় পুরো পৃষ্ঠকে জড়িয়ে থাকতে পারে; স্টোরেজে সংক্রমিত কন্দের পৃষ্ঠে বা বাছাই স্তূপগুলোতে স্পেরুলেশন হতে পারে। সংক্রমিত কন্দগুলো প্রায়ই ংড়ভঃ ৎড়ঃ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়, যা দ্রুত সংলগ্ন ভালো আলুগুলোকে দুর্গন্ধযুক্ত এবং পচে যেতে পারে।
রোগের প্রতিকার : মনে রাখতে হবে, লেট ব্লাইট রোগ দমনের জন্য প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয় তাই; আক্রান্ত বীজ আলুর জমি থেকে বীজ রাখা যাবে না, ভালো প্রতিষ্ঠানের বীজ রোপণ করতে হবে; প্রোভেক্স ২০০ ডব্লিউপি দ্বারা বীজ শোধন করে নিলে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে; নিয়মিতভাবে ৭-১০দিন অন্তর ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন-পেনকোজেব/ডায়াথেন এম ৪৫/এগ্রিজেব/ এন্ডোফিল ৪ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে দিয়ে ফসলটি স্প্রে করে এ রোগের আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়; আবহাওয়া খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তার আগে ও পরে ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাক নাশক প্রয়োগ করতে হবে; এ রোগ দেখা দিলে বা আক্রমণের সময় জমিতে সেচ ও সার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। এসময় সেচ ও সার প্রয়োগ করতে হলে তার আগে ও পরে অবশ্যই ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে; আগাম জাতের আলু চাষ করতে হবে এবং আগাম সংগ্রহ করতে হবে (১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত); সারিতে ভালভাবে মাটি উঁচু করে দিতে হবে; রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হলে আরো ঘন ঘন ঔষধ ছিটানোর প্রয়োজন পড়তে পারে। ছত্রাকনাশক ভালোভাবে ছিটাতে হবে যাতে পাতার নিচের অংশও ছত্রাকনাশকের পানিতে ভিজে যায়। রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে নিম্নের যে কোন একটি ছত্রাকনাশক বা ছত্রাকনাশকের মিশ্রণ ৭ দিন পর পর পাতার উপরে ও নিচে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে।
এক্রোভেট এম জেড ২ গ্রাম +ডাইথেন এম-৪৫/এন্ডোফিল এম জেড ২ গ্রাম + প্রোভেক্স ২০০ ডব্লিউপি ১ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে অথবা; সিকিউর ২ গ্রাম + ডাইথেন এম-৪৫/এন্ডোফিল এম জেড ২ গ্রাম + প্রোভেক্স ২০০ ডব্লিউপি ১ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে অথবা; মেলোডি ডুও ২ গ্রাম +ডাইথেন এম-৪৫/এন্ডোফিল এম জেড ২ গ্রাম + প্রোভেক্স ২০০ ডব্লিউপি ১ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে এ রোগের আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায় ।
রোপণের ৮০ দিন পর আলু গাছের উপরের অংশ সম্পূর্ণ উপড়ে ফেলে আলু মাটির নিচে কয়েকদিনের জন্য রেখে দিতে হবে (হাম পুলিং); মাটি ভেজা অবস্থায় কিংবা বৃষ্টির পর পর আলু না তুলে শুকনা অবস্থায় মাটিতে জো এলে আলু তুলতে হবে; রোগাক্রান্ত গাছ দিয়ে আলুর স্তূপ বা সংগৃহীত আলু ঢেকে রাখা থেকে বিরত থাকতে হবে; ফসল তোলার৭-১০ দিন আগে পাতা ধ্বংস করা উচিত; হিমাগারে আলু রাখার আাগে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বীজ বাছাই করতে হবে, যাতে কোনোভাবে আক্রান্ত আলুবীজের সাথে না থাকে।
শিমজাতীয় ফসলের রোগও তার প্রতিকার
রোগের নাম : এনথ্রাকনোজ
রোগের কারণ :Colletotrichum lindemuthianum নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
গাছে রোগের লক্ষণ : শিমের উপর কালো, নিমজ্জিত ক্ষতের সাথে দাগের কেন্দ্রে হালকা বা ধূসর রঙের এরিয়া দেখা যায়; কা-ের উপর লম্বালম্বি ভাবে ডার্ক বাদামি আইস্পট পড়ে; কচি চারাগুলোর কা-ে আইস্পট বড় হয় এবং কা- ভেঙে যেতে পারে।
রোগের প্রতিকার : রোগমুক্ত ভালো বীজ ব্যবহার করতে হবে; রোপণের পূবে ২.৫ গ্রাম ভিটাভ্যাক্স ২০০ প্রতি কেজি বীজের সাথে মিশিয়ে দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে; অনুমোদিত ছত্রাকনাশক টিল্ট ২৫০ ইসি ০.০৫% হিসেবে বা ব্যাভিস্টিন নোইন/২০ গ্রাম ১০ লি: পানিতে মিশিয়ে ১২-১৫ দিন অন্তর ৩ বার স্প্রে করতে হবে। অথবা একোনাজল আক্রমণের শুরুতেই প্রয়োগ করতে হবে। অথবা ডাইথেন এম-৪৫ ২ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে এ রোগের আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায় ।
রোগের নাম : সারকোসপোরা লিফ স্পট
রোগের কারণ : Cercospora cruenta,Cercospora নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
গাছে রোগের লক্ষণ : পাতার ওপর গোলাকার থেকে কৌনিক দাগ দেখা যায়; কয়েকটি দাগ একত্র হয়ে বড় দাগ তৈরি হাত পারে; দাগের কেন্দ্রটি ধূসর হয়ে যায় এবং বোর্ডারটি হয় লালচে বা গাঢ় বাদামি; পাতার দাগের কেন্দ্রটি শুকিয়ে ঝরে পড়ে ছিদ্রযুক্ত পাতায় পরিণত হয়।
রোগের প্রতিকার : রোগমুক্ত ভালো বীজ ব্যবহার করতে হবে; রোপণের পূর্বে ২.৫ গ্রাম ভিটাভ্যাক্স ২০০ প্রতি কেজি বীজের সাথে মিশিয়ে দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে; অনুমোদিত ছত্রাকনাশক টিল্ট ২৫০ ইসি ০.০৫% হিসাবে বা ব্যাভিস্টিন নোইন /২০ গ্রাম ১০ লি: পানিতে মিশিয়ে ১২-১৫ দিন অন্তর ৩ বার স্প্রে করতে হবে।
সবজির ভাইরাস রোগ দমন ব্যবস্থাপনা
রোগাক্রান্ত গাছ দেখামাত্র তুলে নষ্ট করা; সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা; ইমিডাক্লোপ্রিড কীটনাশক দিয়ে পোকা যেমন- এফিড, সাদা মাছি দমন করা। এডমায়ার নামক কীটনাশক ০.২৫ মিলি. প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর গাছে স্প্রে করতে হবে অথবা ১-২ মি.লি. নিম/সরিষার তেল প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর গাছে স্প্রে করতে হবে। সাদা বা হলুদ ট্রাপ ব্যবহার করে বাহক পোকা দমন।
লেখক : ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, শিবপুর, নরসিংদী, মোবাইল : ০১৭২০৬৪৫৬২৯
কিশোর কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি
ড. যাকীয়াহ রহমান মনি১ মোঃ মাহফুজুর রহমান২
বয়ঃসন্ধিকাল একটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনধারা, যেখানে কিশোর-কিশোরীরা শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক দিক থেকে বড় পরিবর্তনের সম্মুখীন হয়। এই পরিবর্তনগুলো তাদের শারীরিক বৃদ্ধি, পুষ্টির চাহিদা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। বয়ঃসন্ধিকাল সাধারণত ১০ থেকে ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং এই সময়ে সঠিক পুষ্টি ও স্বাস্থ্য শিক্ষা কিশোর-কিশোরীদের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। অপুষ্টি বা অতিরিক্ত পুষ্টির কারণে এই সময় নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন- পুষ্টির অভাব কিশোর-কিশোরীদের শরীরে আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিনের ঘাটতি, যা হাড়ের গঠন, পেশি শক্তি, এবং সামগ্রিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ করে। অপরদিকে, অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ স্থ’ূলতা, ডায়াবেটিস, এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এই সময়ে শারীরিক ব্যায়াম কিশোর-কিশোরীদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শারীরিক ব্যায়াম শুধু শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে না, এটি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি, হাড় ও পেশির শক্তি বৃদ্ধি এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতেও সহায়ক। সঠিক পুষ্টি, ব্যায়াম এবং সামাজিক সমর্থনের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীরা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সফল হতে পারে।
শারীরিক বৃদ্ধি ও পুষ্টি চাহিদা
বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক বৃদ্ধি দ্রুতগতিতে ঘটে, যার জন্য কিশোর-কিশোরীদের খাদ্য চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এই সময় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে শরীরের চর্বি ও পেশীর বণ্টন পরিবর্তিত হয়। যেমন- মেয়ে কিশোরীদের ক্ষেত্রে শারিরীক গঠন এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে পেশির বৃদ্ধির হার বাড়ে। এ ধরনের শারীরিক পরিবর্তনের জন্য বাড়তি পুষ্টির প্রয়োজন হয়, যা তাদের দৈহিক বৃদ্ধি এবং বিকাশকে সহায়তা করে।
ক্যালোরির চাহিদা : বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীদের দৈনিক ক্যালোরির চাহিদা বেড়ে যায়, যা তাদের শরীরের বৃদ্ধি ও সক্রিয়তার ওপর নির্ভর করে। সাধারণত, কিশোরদের দৈনিক ২২০০ থেকে ৩২০০ ক্যালোরি প্রয়োজন হয় এবং কিশোরীদের ক্ষেত্রে ১৮০০ থেকে ২৪০০ ক্যালোরি প্রয়োজন হয়। ক্যালোরির সঠিক পরিমাণ গ্রহণ না করলে বা অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ করলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন- ওজনাধিক্য বা অপুষ্টি দেখা দিতে পারে।
প্রোটিন : প্রোটিন কিশোর-কিশোরীদের পেশি ও টিস্যুর বৃদ্ধি এবং মেরামতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিনের উৎস হিসেবে মাংস, মাছ, ডিম, ডাল, বাদাম এবং দুধ জাতীয় খাবার রয়েছে। বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরদের দৈনিক ৫২ গ্রাম এবং কিশোরীদের ৪৬ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন হয়।
ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ : বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীদের জন্য ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠন ও শক্তির জন্য, আয়রন রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনের জন্য, এবং ভিটামিন ডি ক্যালসিয়ামের শোষণ ও হাড়ের বৃদ্ধির জন্য জরুরি। বয়ঃসন্ধিকালে আয়রনের চাহিদা বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি হয়, কারণ এই সময়ে মাসিক ঋতুস্রাব শুরু হয়, যা রক্তের আয়রন কমিয়ে দেয়।
মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের গুরুত্ব : মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যেমন- জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, এবং ফোলেটের চাহিদাও বয়ঃসন্ধিকালে বেড়ে যায়। এগুলো শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে যা ডিএনএ সংশ্লেষণ, ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা, এবং স্নায়ুতন্ত্রের উন্নত করে।
পুষ্টি সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ : বয়ঃসন্ধিকালের সময় কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তিত হতে দেখা যায়। প্রক্রিয়াজাত খাবার, উচ্চ চিনি, এবং ফাস্ট ফুডের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায়, যা অপুষ্টি এবং স্থ’ূলতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। উপরন্তু এই সময়ে ডায়েটিং, শরীরের ওজন নিয়ে উদ্বেগ এবং সামাজিক চাপের কারণে অনেক কিশোর-কিশোরী ভুল পুষ্টি অভ্যাস গ্রহণ করে।
ঋতুস্রাব ও পুষ্টি : মেয়েদের মাসিক ঋতুস্রাবের শুরুতে শরীরে আয়রন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে। এটি ক্লান্তি, অবসাদ এবং শরীরের অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই মেয়েদের জন্য আয়রন-সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন- পালংশাক, লাল মাংস, ডাল এবং ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফলমূল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মানসিক স্বাস্থ্য ও পুষ্টি : বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক স্বাস্থ্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় কিশোর-কিশোরীরা মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং আত্মমর্যাদা সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। পুষ্টির অভাব বা অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন- ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ও কার্যকারিতা উন্নত করে এবং ভিটামিন বি গ্রুপ মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে।
ব্যায়াম ও শারীরিক কার্যক্রম : শারীরিক ব্যায়াম ও কার্যক্রম কিশোর-কিশোরীদের শরীর ও মানসিক স্বাস্থ্য উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম শরীরে ক্যালোরি খরচ, পেশি শক্তিশালীকরণ এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। তাছাড়া, ব্যায়াম ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে এবং হাড়ের গঠন উন্নত করে।
বয়ঃসন্ধিকালে শরীর দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং পেশীগুলি আরও শক্তিশালী হয়। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম যেমন সাইক্লিং, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা এবং অন্যান্য অ্যারোবিক ব্যায়াম পেশীর বিকাশে সহায়ক হয়। বিশেষত হাই ইম্প্যাক্ট ব্যায়াম যেমন দৌড়াানো এবং জাম্পিং, হাড়ের শক্তি বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত উপকারী।
শারীরিক ব্যায়াাম ব্রেইনে এন্ডোরফিন নিঃসরণ করে, যা প্রাকৃতিক মুড বুস্টার হিসেবে কাজ করে। ফলে, কিশোর-কিশোরীরা উদ্বেগ এবং বিষণœতা থেকে মুক্ত থাকতে পারে। বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক ব্যায়াম হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং পরবর্তী জীবনে সুস্থ হার্টের জন্য ভিত্তি স্থাপন করে।
ব্যায়ামের ধরন ও সময়
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) অনুযায়ী ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ মিনিটের মাঝারি থেকে তীব্র শারীরিক কার্যকলাপ করা উচিত। এর মধ্যে সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন পেশি ও হাড় শক্তিশালী করার ব্যায়াম অর্ন্তভুক্ত করা উচিত।
সমাজ ও সংস্কৃতির প্রভাব
সমাজ ও সংস্কৃতি বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীদের খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। অনেক সময় পরিবার, বন্ধু এবং মিডিয়ার প্রভাব তাদের খাদ্যাভ্যাস ও শরীরের প্রতি ধারণা পরিবর্তন করে। তাই পুষ্টি শিক্ষার মাধ্যমে তাদের সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
বয়ঃসন্ধিকালে সঠিক পুষ্টি শিক্ষা : বয়ঃসন্ধিকালের সময় কিশোর-কিশোরীদের সঠিক পুষ্টি শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের খাদ্যাভ্যাস, শরীরের পরিবর্তন, এবং পুষ্টির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করা উচিত। পুষ্টি শিক্ষা তাদের খাদ্যাভ্যাস উন্নত করতে সহায়তা করে এবং তাদের স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালে সতর্কতা
ধূমপান ও মাদকাসক্তি কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বয়ঃসন্ধিকালে কৌতূহল, সামাজিক চাপ, এবং সঙ্গীদের প্রভাবের কারণে অনেক কিশোর-কিশোরী ধূমপান, মদ্যপান বা মাদকের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এ ধরনের অভ্যাস শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ধূমপান ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি বাড়ায়, অন্যদিকে মাদকাসক্তি মানসিক সমস্যার পাশাপাশি সামাজিক ও একাডেমিক জীবনে ব্যাঘাত ঘটায়।
বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীদের ঘুমের প্রয়োজনীয়তা বেশি থাকে, কারণ এই সময়ে শরীর ও মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে। তবে প্রযুক্তির প্রতি আসক্তি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার যেমন- স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, দীর্ঘ সময় ধরে স্ক্রিনের সামনে থাকা চোখের সমস্যা এবং স্থ’ূলতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় এবং ভিডিও গেমের অতিরিক্ত ব্যবহার কিশোর-কিশোরীদের সামাজিক এবং মানসিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটায় এবং একাডেমিক চাপের কারণে অনেক কিশোর-কিশোরী পর্যাপ্ত ঘুম পায় না। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, ফলে মনোযোগের অভাব, মেজাজের পরিবর্তন এবং শিক্ষা বা খেলার ক্ষেত্রে পারদর্শিতার হার কমে যাওয়া। এছাড়াও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করলে সাইবার বুলিং, আত্মবিশ্বাসের সংকট, এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা তৈরি হতে পারে। যদিও শারীরিক ব্যায়াম কিশোর-কিশোরীদের জন্য উপকারী, তবে অনিয়মিত বা অতিরিক্ত ব্যায়াম তাদের স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীরকে ক্লান্ত করে ফেলে, পেশী এবং জয়েন্টের ক্ষতি ঘটায় এবং হাড়ের গঠন ব্যাহত করতে পারে। অন্যদিকে ব্যায়ামের সম্পূর্ণ অভাবও শরীরের ওজন বৃদ্ধি, স্থ’ূলতা এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালে সঠিক পুষ্টি ও স্বাস্থ্য শিক্ষা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য। এই সময়ে পুষ্টির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি। সঠিক পুষ্টি শিক্ষা এবং সামাজিক সমর্থনের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীরা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারবে, যা তাদের পরবর্তী জীবনে সুস্থ ও সুখী জীবনযাপনের জন্য সহায়ক হবে। এছাড়াও বয়ঃসন্ধিকালের সময় শারীরিক ব্যায়াম কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত ব্যায়াম তাদের শরীরকে শক্তিশালী, সুস্থ এবং সক্রিয় রাখে, যা তাদের পরবর্তী জীবনে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করে। (তথ্যসূত্র : ডড়ৎষফ ঐবধষঃয ঙৎমধহরুধঃরড়হ ২০২০.)
লেখক : ১প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (পুষ্টি), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। ২এক্সিকিউটিভ (পুষ্টিবিদ), রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট, আকিজ ফুড এন্ড বেভারেজ, বারোবাড়িয়া,ধামরাই, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১২৬৩৪৩৫২
উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে ‘নাপ্পি’
মোঃ মাসুদ রানা (পলাশ)
আমরা মাছে ভাতে বাঙালি, আমাদের প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৭০% আসে মাছ থেকে। মাছে আমিষের পাশাপাশি রয়েছে অনন্য কিছু পুষ্টি উপাদান যা মানব শরীরে দৈহিক বৃদ্ধি ও শারীরবৃত্তীয় কর্মকা-ে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এসব গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের মধ্যে চর্বি, শর্করা, আঁশ ও মিনারেলস অন্যতম। আমাদের দেশে প্রায় ২৬০ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ ও ৪৭৫ প্রজাতির লোনাপানির বা সামুদ্রিক মাছ রয়েছে (সূত্র: মৎস্য অধিদতপ্তর)। আমরা মাছকে বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ করে সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ করে থাকি। আমাদের দেশে উপকূলীয় অঞ্চলের মাছ সংরক্ষণের প্রচলিত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে শুঁটকি সর্বাধিক পরিচিত। উপকূলীয় অঞ্চল যেমন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, মহেষখালী, দুবলার চর, সোনাদিয়া, টেকনাফসহ বিভিন্ন এলাকায় যেসব মাছ শুঁটকি উৎপাদনে ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে চিংড়ি, লইট্যা, ছুরি, ফাঁইশা, রুপচান্দা, কোরাল, লাক্ষা, কামিলা, লাল পোয়া, সুন্দরী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। দেশের সর্ববৃহৎ শুঁটকি পল্লীখ্যাত কক্সবাজারস্থ নাজিরারটেক হতে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ শুঁটকি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ করা হয়ে থাকে, এসব এলাকার মানুষের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম হলো শুঁটকি মাছ উৎপাদন ও বিপণন। সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারের নাজিরারটেক, চৌফলদ-ী, মহেষখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘নাপ্পি’ নামক একটি মূল্য সংযোজিত পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে, যা পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিও করা হচ্ছে। ‘নাপ্পি’ পাহাড়ি আধিবাসীদের একটি জনপ্রিয় খাবার। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার বাসিন্দা বিশেষ করে চাকমাদের খাবারের মেনুতে ‘নাপ্পি’ না থাকলে যেন চলেই না। বর্তমানে পণ্যটি দেশের গ-ি পেরিয়ে বিভিন্নভাবে দেশের বাইরে যাচ্ছে এবং দেখা দিয়েছে রপ্তানি সম্ভাবনা। ‘নাপ্পি’ উৎপাদনের জন্য যে সকল কাঁচামাল (গুঁড়া চিংড়ি মাছ, সামুদ্রিক অন্যান্য ছোট মাছ যেগুলো সাধারণত বাজারে বিক্রি যোগ্য নয় ও লবন) প্রয়োজন তার প্রত্যেকটি উপকূলীয় অঞ্চলে খুবই সস্তায় পাওয়া যায়। আমাদের জেলেরা যে সকল গুঁড়া মাছ জাল থেকে ফেলে দেয় সেগুলো ব্যবহার করেও নাপ্পি উৎপাদন করা সম্ভব।
নাপ্পির পুষ্টিমান : পুষ্টিগুণে ভরপুর ‘নাপ্পি’ দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তথা চাকমা, মারমা, গরো সমাজের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে আদিকাল থেকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। নাপ্পিতে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যেমন-আমিষ শতকরা ৩৫-৪০; চর্বি শতকরা ০৮-১০; শর্করা শতকরা ০৩-০৫; অ্যাশ শতকরা ১৫-১৮; মিনারেলস শতকরা ০১-০২। (সধংঁফবঃধষ-২০১৬)
নাপ্পি উৎপাদন ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়া : নাপ্পি একটি মূল্য সংযোজিত মৎস্য পণ্য যার উৎপাদন প্রক্রিয়া একেবারেই সহজ, নাপ্পি উৎপাদনের জন্য তেমন কোন যন্ত্রপাতি বা মিল প্রয়োজন হয় না। নাপ্পি তৈরিতে সাধারণত বাড়ির মহিলারাই বেশি যুক্ত থাকেন অথবা তুলনামূলক কম মূল্যের লেবার দিয়ে নাপ্পি উৎপাদন করা হয়। প্রথমে নাপ্পি উৎপাদনের জন্য গুঁড়া চিংড়ি ও অনান্য ছোট মাছ যেগুলোর বাজারমূল্য খুবই কম সেগুলো সংগ্রহ করা হয়। গুঁড়া চিংড়ি/গুঁড়া মাছগুলোকে ফারমেন্টেশন করেই মূলত নাপ্পি উৎপাদন করা হয়। নাপ্পি তৈরি করার জন্য প্রথমে গুঁড়া চিংড়িগুলোকে নির্দিষ্ট পরিমাণ লবণ দিয়ে স্তূপ করে কালো বা রঙিন মোটা পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে ১৮-২৫ ঘণ্টা রাখা হয় জো আসার জন্য। এরপর লবণ মেশানো মাছগুলোকে রোদে শুকানো হয় ৮-১০ ঘণ্টা রোদে শুকানোর পর মাছগুলোকে দুই উপায়ে পেস্ট বানানো হয়। প্রচলিতভাবে মাছ গুলোকে চাটাইয়ের উপর নিয়ে বুট জুতা পরে ২-৩ জন খুঁচিয়ে পেস্ট বা মিহি করে থাকেন, আবার অনেকে কাঠের গুলি দিয়ে তৈরি এক ধরনের হামান দিস্তা যা স্থানীয় আধিবাসিদের নিকট চ্যাং নামে পরিচিত তা ব্যবহার করে এই পেস্ট বা মিহিকরণের কাজটি করে থাকেন। এভাবে ৭-৮ দিন সারাদিন রোদে শুকানো হয় আবার পেস্ট করা হয়। পুরো প্রক্রিয়াজাতকরণের সময়টা পেস্টগুলোকে রাতের বেলা পলিথিনে মুড়িয়ে রাখা হয়। প্রক্রিয়াটি ৭-৮ বার পুনরাবৃত্তির পর একটি ঘন আঠাঁলো পেস্ট তৈরি হয় যা দেখতে কিছুটা কালচে-বাদামি রংয়ের হয়ে থাকে। পরবর্তীতে ঘন আঁঠালো মাছের পেস্টগুলোকে নেওয়া হয় উঠানে সেখানে ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার আকৃতি দেওয়া হয়, কিছু করা হয় বল, কিছু করা হয় বিস্কিট সেইপ আবার কিছু করা হয় বাটির মত। কাঁচা নাপ্পি সাধারণত কলাপাতায় মুড়িয়েও রাখা হয় এবং বাজারজাতকরণের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করা হয় অন্যদিকে কিছু নাপ্পি ছোট ছোট বিস্কিট আকৃতির করে কড়া রোদে শুকানো হয় যেন দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। নাপ্পির গুণগত মান ঠিক রাখার জন্য তারা পরবর্তীতে প্রস্তুতকৃত নাপ্পিকে বাঁশের খাঁচায় একটির পর আরেকটি করে সাজিয়ে উপরটা পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে রাখেন বাজারজাত করার আগ অবধি। সাধারণত প্রক্রিয়াজাতকারকদের মতে এক থেকে দেড় মাস সংরক্ষণ করলে ভাল মানের নাপ্পি উৎপাদন করা সম্ভব তবে তারা কাঁচা নাপ্পিই বেশি বাজারজাতকরণ করে থাকেন।
নাপ্পির বাজার ব্যবস্থাপনা : নাপ্পি একটি অপ্রচলিত মৎস্য পণ্য, যা আমাদের দেশে সাধারণত পার্বত্য চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও সিলেট এলাকায় বসবাসরত চাকমা, মারমা, গারো ও অনান্য আধিবাসী সম্প্রদায়ের কাছে একটি প্রসিদ্ধ খাবার হিসেবে প্রচলিত। পার্বত্য এলাকার বাজারগুলোতে এবং চাকমা, মারমা ও গারো অধ্যুষিত এলাকার বাজারগুলোতে নাপ্পির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কাঁচা নাপ্পি প্রতি কেজি গুণগত মান বিবেচনায় ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে তবে শুকনো নাপ্পির বাজার কয়েকগুণ বেশি। নাপ্পি বাংলাদেশের আধিবাসী জনগোষ্ঠীর খাবার হলেও এটি এখন দেশের গ-ি পেরিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। ভারত, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, চীনসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের এই নাপ্পির চাহিদা বাড়ছে প্রতিনিয়ত, কিন্তু সঠিক উৎপাদন প্রক্রিয়া, গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের উৎপাদিত এই পণ্যটি বিদেশে রপ্তানি করতে পারছি না। অপ্রচলিত এই মৎস্য পণ্যটি যদি সঠিকভাবে উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা যায় তাহলে এটি দেশের রপ্তানি বাজারে বৃহৎ অবদান রাখার সম্ভাবনা আছে।
পরিশেষে সরকারি-বেসরকারিভাবে উদ্যোক্তা তৈরি করে সঠিক প্রশিক্ষণ প্রদান ও বাজার ব্যবস্থাপনায় নজর দিলে পরিবেশে নাপ্পি অপ্রচলিত মৎস্য পণ্যটি আধিবাসীদের পুষ্টি চাহিদা চাহিদা পূরণের পাশাপাশি উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর বেকারত্ব দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। যেহেতু দেশের বাইরে নাপ্পির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সেহেতু পণ্যটির রপ্তানি করার পদক্ষেপ গ্রহণ করলে মৎস্য পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ফিশিং এন্ড পোস্ট হারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-১২০৭ , মোবাইল: ০১৭৪৫-৬২৬১৫৩। ই-মেইল:ranadof.bd@gmail.com
প্রাণিজ খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তর
বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট
কৃষিবিদ ডক্টর এস. এম. রাজিউর রহমানবাংলাদেশে খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তর বর্তমান অর্থনৈতিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে প্রাণিসম্পদ খাত এই পরিবর্তনের কেন্দ্রে রয়েছে, কারণ এটি দেশের পুষ্টি নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং গ্রামীণ জীবিকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়ন শুধুমাত্র খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি দুধ, মাংস, ডিম এবং অন্যান্য প্রাণিসম্পদজাত পণ্যের মান উন্নত করে জনগণের পুষ্টি চাহিদা পূরণে অবদান রাখছে। তবে এই খাতের অগ্রগতির জন্য খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাণিস্বাস্থ্য, সঠিক খামার ব্যবস্থাপনা, এবং পরিবেশ বান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা অপরিহার্য। দেশের দারিদ্র্য হ্রাস, পুষ্টি উন্নয়ন এবং পরিবেশগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, জাতিসংঘের তিনটি প্রধান লক্ষ্য জিরো হাঙ্গার (ক্ষুধামুক্তি), জিরো প্রভার্টি (দারিদ্র্যমুক্তি) এবং জিরো নিঃসরণ (শূন্য কার্বন নিঃসরণ) বাংলাদেশের খাদ্য ব্যবস্থায় একটি কার্যকর নীতি ও পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে। তিন জিরো তত্ত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের খাদ্য ব্যবস্থার পরিবর্তনকে টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ক্ষুধামুক্তির জন্য কৃষি পণ্য ও প্রাণিসম্পদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা, দারিদ্র্যমুক্তির জন্য কৃষকদের আয় বাড়ানো এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্যক্রম সীমিত করা প্রয়োজন। এর ফলে, বাংলাদেশে খাদ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই নয়, বরং সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়নেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবে কাজ করবে।
বৈশ্বিকভাবে ৬৯০ মিলিয়ন মানুষ এখনও অপুষ্টিতে ভুগছে, প্রায় ২ বিলিয়ন মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নেই এবং প্রায় ৩ বিলিয়ন মানুষ সুষম খাবার থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশে অপুষ্টি এখনও একটি বড় সমস্যা, বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০২২ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর উচ্চমাত্রায় অপুষ্টির চিত্র হলো খর্বতা ২৪%, কৃশতা ১১%, কম ওজন ২২%। যা প্রধানত প্রোটিন এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতির কারণে হয়ে থাকে। প্রাণিজ আমিষ যেমন দুধ, মাংস, এবং ডিম, অপুষ্টি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, কারণ এগুলো উচ্চ মানের প্রোটিন, আয়রন, জিঙ্ক, এবং ভিটামিন এ-এর চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। অপুষ্টির সমস্যাকেও সমাধান করতে হলে প্রাণিজ উৎস খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বাংলাদেশে প্রাণিজ খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তরের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিতে আর্থিক প্রণোদনা, খাদ্য ও সার রপ্তানির বিধি-নিষেধগুলো তুলে নেওয়া, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ফুড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, প্রযুক্তি বিনিময়, খাদ্য অপচয় রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা, ইত্যাদি বহুমুখী পদ্ধতির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ প্রয়োজন। এখানে বাংলাদেশে প্রাণিজ খাদ্য ব্যবস্থার পরিবর্তনের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
সাপ্লাই চেইন এবং অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ
প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে সাপ্লাই চেইন এবং অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা লক্ষ্য করা যায় যে জীবন্ত মুরগির মার্কেট/কসাইয়ের দোকানে অপর্যাপ্ত স্যানিটারি পরিদর্শন করা হয় এবং প্রাণিচিকিৎসক বা অন্যান্য পরিদর্শকদের এই বিষয়ে পরিদর্শন পদ্ধতিতে ভূমিকা রাখার খুব কম সুযোগ রয়েছে। লাইভ বার্ড মার্কেট এবং কসাইয়ের দোকানে পরিচ্ছন্নতা এবং কার্যকরী জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত কার্যকরী পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা প্রয়োজন; যা একটি নিয়ন্ত্রক কাঠামো বাস্তবায়নের মাধ্যমে হতে পারে। তাই বাংলাদেশে দুধ, মাংস, এবং ডিমের সরবরাহ শৃঙ্খল এখনও সঠিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা ও খাদ্য নিরাপত্তা মানদ- অনুসরণ না করায় খাদ্যপণ্যে ক্ষতিকর জীবাণু, রাসায়নিক পদার্থ, ও অ্যান্টিবায়োটিকের অবশিষ্টাংশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বিশেষত দুধ ও মাংসের ক্ষেত্রে চেইন অবকাঠামো যেমন খামার থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ, ট্রান্সপোর্টেশন ব্যবস্থা, এবং বাজারজাতকরণে উত্তম অনুশীলনের অভাব; সংক্রামক রোগ এবং খাদ্যবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এই কারণে বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নতি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন জরুরি যাতে ভোক্তারা নিরাপদ এবং পুষ্টিকর পণ্য গ্রহণ করতে পারে।
কোল্ড চেইন লজিস্টিকসের বিকাশ বিশেষত হিমাগার সুবিধার প্রাপ্যতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি, পচনশীল পণ্য যেমন- মাংস ও দুগ্ধজাত দ্রব্য, সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এর ফলে খাদ্য বর্জ্য কমবে এবং খাদ্য পণ্যের গুণমান ও নিরাপদতা উন্নত হবে। এ ছাড়া রেফ্রিজারেটর ভ্যান, কসাই এবং মিষ্টির দোকানের জন্য ডিসপ্লে রেফ্রিজারেটরসহ অন্যান্য কোল্ড চেইন সরঞ্জামের সহজলভ্যতা খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। গরু, হাঁস-মুরগির মাংসের জন্য আধুনিক কসাইখানা স্থাপন এবং হিমায়িত মাংস ও দুধের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এ ছাড়া ভোক্তাদের মধ্যে হিমায়িত খাবারের নিরাপদতা ও উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এর পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকায় উন্নত অবকাঠামো ও দ্রুত পরিবহন সুবিধার মাধ্যমে খামার উৎপাদনের এবং সংগ্রহের পরে ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে বাজারে পণ্য পৌঁছানো সহজতর করতে হবে। বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে সঠিক অবকাঠামো ও কোল্ড চেইন প্রযুক্তির উন্নতি খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং কৃষকের আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
টেকসই প্রাণিপালনকে উৎসাহিত করা
টেকসই কৃষিকে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক এবং পরিবেশবান্ধব অনুশীলনের প্রয়োজন রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কৃষকদের খরা, লবণাক্ততা এবং বন্যা-প্রতিরোধী ফসল ও সবুজ ঘাস চাষে উৎসাহিত করা জরুরি। একইসঙ্গে, জল-দক্ষ সেচ ব্যবস্থা এবং জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক প্রাণিশেড উন্নয়নের মাধ্যমে প্রাণি উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। কৃষি বনায়ন প্রযুক্তির প্রবর্তনও গুরুত্বপূর্ণ, যা মাটির উর্বরতা ও বায়ুম-লের কার্বন শোষণে ভূমিকা রাখতে পারে। সমন্বিত কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির মাধ্যমে কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার হ্রাস করা সম্ভব, যেখানে জৈবিক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে টেকসই কৃষি অনুশীলন প্রচার করা হয়। জলবায়ু-স্মার্ট পদ্ধতিতে প্রাণিসম্পদের খাদ্য, স্বাস্থ্য এবং আবাসনের উন্নয়ন করা হয়, পাশাপাশি জলবায়ু-স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রাণিসম্পদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষকরা টেকসইভাবে বেশি দুধ, মাংস এবং ডিম উৎপাদন করতে সক্ষম হন, যা জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় সহায়ক হয় এবং খাদ্য ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করে।
প্রাণি খাদ্যে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি প্রোটিন বেশি মিথেন তৈরি করে যা গ্রিনহাউজ গ্যাসের কারণ হয়। তাই মিথেন নির্গমন কমাতে গবাদি পশুদের জন্য ব্যালেন্স খাদ্যে সরবরাহ করতে হবে। বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, এই ধরনের পদ্ধতিগুলো খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, প্রাণিসম্পদের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব কমায়। এর মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা আরও টেকসই ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপখাওয়াতে সহায়ক।
খাদ্য নিরাপদতা এবং ট্র্যাসেবিলিটি উন্নত করা
খাদ্য নিরাপদতা নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করা এবং উত্তম কৃষি অনুশীলন (এঅচ), ভাল প্রাণিপালন চর্চা (এঅঐচ), এবং ভাল উৎপাদন অনুশীলন (এগচ) মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। প্রাণিজ খাদ্যের ক্ষেত্রে, যেমন (দুগ্ধ ও মাংস) ট্র্যাসেবিলিটি সিস্টেমের বাস্তবায়ন অপরিহার্য। এর মাধ্যমে খামার থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়, যা দূষণ ও সংক্রমণের উৎস দ্রুত শনাক্ত করতে এবং পণ্যের গুণমান বজায় রাখতে সহায়ক। বিশেষত, বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা নির্দেশ করে যে ভালো মানের প্রাণিপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের অভ্যাসগুলো অনুসরণ করলে ভোক্তার আস্থা বৃদ্ধি পায় এবং জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমে। উদাহরণস্বরূপ, দুগ্ধ ও মাংস শিল্পে শীতলীকরণ শৃঙ্খল, সঠিক লেবেলিং এবং উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখসহ ট্র্যাসেবিলিটি ব্যবস্থা চালু করা ভোক্তাদের সুরক্ষায় সহায়ক হতে পারে।
বৈচিত্র্যময় এবং পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদনের প্রচার
সরকার, বেসরকারি খাত এবং এনজিওগুলো একসাথে কাজ করে কৃষকদের উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন ফসল চাষে ও পশুপালনে উৎসাহিত করছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। বৈচিত্র্যময় খাদ্য উৎপাদনের প্রদর্শনী প্লট বা খামার এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের প্রচারাভিযান খাদ্য ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য একটি সমাধান হতে পারে। টেকসই প্রাণিসম্পদ ও হাঁস-মুরগির পালন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা অত্যন্ত জরুরি। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে যে, কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং বায়োসিকিউরিটি পদ্ধতি অনুসরণ করে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আসছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায়ও প্রমাণিত হয়েছে যে নিয়মিত টিকা এবং ডি-ওয়ার্মিং, উন্নত হাউজিং ও স্যানিটেশনের অভাবে দুগ্ধজাত পণ্যের মান ও নিরাপদতা কমে যায়, যা কৃষকদের পণ্যের বাজারমূল্যও প্রভাবিত করে। এ ছাড়াও অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, গ্রামাঞ্চলে মহিষ ও গবাদিপ্রাণির খামারগুলোতে নিবন্ধন ও পর্যবেক্ষণের অভাবের কারণে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সুতরাং উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ও নীতি বাস্তবায়ন, বায়োসিকিউরিটি ব্যবস্থার প্রয়োগ এবং সরকারি সহযোগিতা কৃষি উৎপাদন এবং প্রাণিজ খাদ্য নিরাপত্তা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ।
সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণ
ক্ষুদ্র কৃষক ও কৃষি ব্যবসায়িক উদ্যোক্তাদের আধুনিক কৃষি পদ্ধতি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং ব্যবসা ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করলে তাদের উৎপাদনশীলতা ও পণ্যের গুণমানের উন্নয়ন সাধন করে এবং বাজারে তাদের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে শক্তিশালী করে। আধুনিক প্রশিক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষকদের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং তাদের উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটের শ্রমিক এবং মালিকদের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা, লেবেলিং এবং নিরাপদ খাদ্য হ্যান্ডলিংয়ের ওপর শিক্ষামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, সঠিক লেবেলিংয়ের মাধ্যমে পণ্যের উৎস, উপাদান, উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ জানা যায়, যা ভোক্তাদের সচেতনতা বাড়ায়। খামারের কর্মীদের স্বাস্থ্য সার্টিফিকেট নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে কোনও জুনোটিক রোগ, প্রাণী ও মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে না পারে। খামারের শ্রমিক ও মালিকদেরকে প্রাণী কল্যাণ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং তাদের কল্যাণ সুনিশ্চিত করতে হবে। প্রাণীদের সঠিকভাবে পরিচর্যা না করলে তাদের স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়তে পারে, যা খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করতে পারে। স্বাস্থ্য সচেতনতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে খামার কর্মীদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমানো এবং খাদ্য সুরক্ষার মান বৃদ্ধি সম্ভব। এই উদ্যোগগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে সঠিক প্রশিক্ষণ এবং স্বাস্থ্য নিরাপত্তার মাধ্যমে খামার ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটগুলো আরও দক্ষ ও নিরাপদ হতে পারে।
বাজারব্যবস্থা এবং কৃষকের প্রবেশাধিকার উন্নত করা
উন্নত বাজারব্যবস্থা কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সাথে যুক্ত হতে সাহায্য করে, যার ফলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ে। এর মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কৃষকের আয় বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে ক্ষুদ্র কৃষকদের প্রান্তিক অবস্থান থেকে মূলধারায় আনা সম্ভব হয় যা সার্বিকভাবে প্রাণিসম্পদ খাতের স্থায়িত্ব ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে। কৃষিখাতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এনজিওগুলোর কার্যক্রম এবং ফিল্ড ভিজিটের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, সমবায় গঠনের মাধ্যমে কৃষকদের সংগঠিত করে তারা তাদের উৎপাদিত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, দর কষাকষির ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বাজারে সহজ প্রবেশের সুবিধা পাচ্ছে। প্রোডাকশন গ্রুপ গঠন এবং গ্রাম পর্যায়ে সম্মিলিতভাবে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এ ছাড়া, কৃষক আউটলেট তৈরি করে কৃষি পণ্যের সরাসরি বিপণন নিশ্চিত করা হচ্ছে। আধুনিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বাজারের তথ্য এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস সহজলভ্য করার মাধ্যমে কৃষকরা আরো সঠিক এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারছে, যা খাদ্য নিরাপত্তা এবং উৎপাদনশীলতার উন্নয়নে সহায়ক। মাঠ অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, বাজার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং কৃষকদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ তাদের জীবিকা ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
নীতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার সুবিধা
খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তর করতে অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার গুরুত্ব অপরিসীম, বিশেষ করে প্রাণিসম্পদ খাতে। ক্ষুদ্র কৃষক, মহিলা এবং যুবকদের কৃষি ও কৃষি ব্যবসায় আরও অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ভর্তুকি এবং আর্থিক প্রণোদনা প্রদানকারী নীতিমালা বাস্তবায়ন একটি কার্যকর পদক্ষেপ। এটি তাদের উৎপাদনশীলতা এবং বাজারে প্রবেশাধিকারের সুযোগ বাড়ায়। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সরকারি, বেসরকারি খাত, এনজিও এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান একযোগে কাজ করে উদ্ভাবন ও বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করতে পারে, যা প্রাণিজ খাদ্য খাতের প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক। আঞ্চলিক সহযোগিতা যেমন- ফুডব্যাঙ্ক স্থাপন, নদীর পানি বণ্টন, বন্যার পানি ব্যবস্থাপনা এবং কৃষি আবহাওয়ার তথ্য আদান-প্রদান, কৃষকদের জন্য টেকসই সমাধান প্রদান করতে পারে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে সঙ্গতি রেখে প্রাণিসম্পদ শিক্ষা ও গবেষণায়; ন্যানো-টেকনোলজি, বায়ো-ইনফরমেটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডাটা ব্যবহার এবং উন্নত প্রাণিসম্পদ প্রযুক্তিকে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। এই পদক্ষেপগুলো একত্রে প্রাণিসম্পদ খাতের খাদ্য ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তর ঘটাতে পারে, যা নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এবং সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
পরিবেশগত স্থায়িত্বকে সম্বোধন করা
প্রাণিসম্পদ খাতে পরিবেশগত স্থায়িত্ব অর্জনের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। প্রথমত, কৃষিতে কার্বন ফুটপ্রিন্ট হ্রাস করার জন্য প্রাণি খাদ্য ব্যবস্থাপনা, চারণভূমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং গবাদি প্রাণির উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে অনেক খামারেই বর্জ্য, যেমন গোবর বা অন্যান্য উৎপন্ন বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপিত হয় না যার ফলে মাটি এবং পানির দূষণ ঘটে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে সঠিক গোবর ব্যবস্থাপনা, যেমন- বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের মাধ্যমে বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করা, পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদনের পাশাপাশি সার উৎপাদনে সাহায্য করতে পারে, যা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি খামারগুলোর উৎপাদনশীলতাও বাড়ানো সম্ভব।
সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে, প্রাণিজ খাদ্য ব্যবস্থার এ ধরনের রূপান্তর কেবলমাত্র উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করবে না, বরং খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত করবে। এটি দেশের কৃষি খাতকে আরও স্থিতিশীল ও টেকসই করে তুলবে যা জলবায়ু পরিবর্তন ও অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হবে।
লেখক : পরামর্শক (প্রাণিসম্পদ ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ), আইআরজি- বিশ্বব্যাংক গ্রুপ, কুল চেইন প্রকল্প। মোবাইল : ০১৭১৭৯৭৯৬৯৭, ই-মেইল :smrajiurrahman@yahoo.com
ফাল্গুন মাসের কৃষি
(১৪ ফেব্রুয়ারি-১৪ মার্চ)
কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম
ফাল্গুন মাস। বাংলাদেশের ঋতুচক্রে বসন্তের আগমনে প্রকৃতি তার জীর্ণতা মুছতে শুরু করে । শীতের পাতাঝরা বৃক্ষের ডালগুলোতে নতুন পাতার আশীর্বাদ হয়ে আসে । গ্রামবাংলার প্রকৃতি সবুজের ঢেউ খেলে। ঋতু পরিবর্তনের সাথে আমাদের কৃষক-কৃষাণী উদ্যমী হয়ে নতুন চাষাবাদে আগ্রহী হয়। কৃষিজীবী ভাইবোনেরা আসুন জেনে নেই ফাল্গুন মাসের কৃষিতে করণীয় যা আছে।
বোরো ধান
ধানের চারার বয়স ৫০-৫৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের শেষ কিস্তি উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। সার দেয়ার আগে উইডার দিয়ে জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে। ধানের কাইচ থোড় আসা থেকে শুরু করে ধানের দুধ আসা পর্যন্ত ক্ষেতে ৩/৪ ইঞ্চি পানি ধরে রাখতে হবে। পোকা দমনের জন্য নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শন করতে হবে এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে (আলোর ফাঁদ পেতে, পোকা ধরার জাল ব্যবহার করে, ক্ষতিকর পোকার ডিমের গাদা নষ্ট করে, উপকারী পোকা সংরক্ষণ করে, ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করে) ধানক্ষেত বালাইমুক্ত রাখতে হবে। এ সময় ধানক্ষেতে উফরা, ব্লাস্ট, পাতাপোড়া ও টুংরো রোগ দেখা দেয়। জমিতে উফরা রোগ দেখা দিলে যেকোন কৃমিনাশক যেমন-ফুরাডান ৫ জি বা কিউরেটার ৫ জি প্রয়োগ করতে হবে। ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে এবং একরপ্রতি ১৬০ গ্রাম ট্রুপার বা ন্যাটিভো বা ব্যাবিস্টিন ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে দু’বার প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে পাতাপোড়া রোগ হলে অতিরিক্ত ৫ কেজি/বিঘা হারে পটাশ সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে এবং জমির পানি শুকিয়ে ৭-১০ দিন পর আবার সেচ দিতে হবে। টুংরো রোগ দমনের জন্য এর বাহক পোকা সবুজ পাতাফড়িং দমন করতে হবে।
গম
এ মাসের দ্বিতীয় পক্ষ থেকে গম পাকা শুরু হয়। গম শীষের শক্ত দানা দাঁত দিয়ে কাটলে যদি কট কট শব্দ হয় তবে বুঝতে হবে গম কাটার সময় হয়েছে। কম্বাইন হারভেস্টার এর মাধ্যমে সকালে অথবা পড়ন্ত বিকেলে ফসল কাটা উচিত। বীজ ফসল কাটার পর রোদে শুকিয়ে সংগ্রহ করা বীজ ভালো করে ঠা-া করে সংরক্ষণ করতে হবে।
ভুট্টা (রবি)
জমিতে শতকরা ৭০-৮০ ভাগ গাছের মোচা খড়ের রঙ ধারণ করলে এবং পাতার রঙ কিছুটা হলদে হলে মোচা সংগ্রহ করতে হবে। বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে শুকনো আবহাওয়ায় মোচা সংগ্রহ করে ফেলতে হবে। সংগ্রহ করা মোচা ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। মোচা সংগ্রহের পর উঠানে পাটি বিছিয়ে তার উপর শুকানো যায় অথবা জোড়া জোড়া বেঁধে দড়ি বা বাঁশের সাথে অথবা টিনের চাল বা ঘরের বারান্দায় ঝুলিয়ে শুকানোর কাজটি করা যায়। মোচা থেকে দানা সংগ্রহ করতে প্রয়োজনে ভুট্টা মাড়াইযন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে।
ভুট্টা (খরিপ)
খরিপ মৌসুমে ভুট্টা চাষ করতে চাইলে এখনই বীজ বপন করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় যত্ন নিতে হবে। বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৪, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৫, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৭, বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড বেবি কর্ণ ১ প্রভৃতি ভুট্টার উন্নত জাত।
পাট
ফাল্গুনের মাঝামাঝি থেকে চৈত্রের শেষ পর্যন্ত পাটের বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। ফাল্গুন মাসে বপন উপযোগী পাটের ভালো জাতগুলো হলো সিসি-৪৫, বিজেআরআই দেশী পাটশাক-১ (বিজেসি-৩৯০), ফাল্গুনী তোষা (ও-৯৮৯৭), বিজেআরআই তোষা পাট-৪ (ও-৭২), বিজেআরআই তোষা পাট-৯, বিজেআরআই তোষা পাট-৬, বিজেআরআই তোষা পাট-৭, বিজেআরআই তোষা পাট-৮, বিজেআরআই তোষা পাট-৯ । পাট চাষের জন্য উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করে আড়াআড়িভাবে ৫-৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। সারিতে বুনলে প্রতি শতাংশে ২৫ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। তবে ছিটিয়ে বুনলে আরেকটু বেশি অর্থাৎ ৩০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। পাটের জমিতে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেন্টিমিটার (প্রায় ১ ফুট) এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৭ সেন্টিমিটার (প্রায় ৩ ইঞ্চি) রাখা ভালো। ভালো ফলনের জন্য প্রতি একরে ৭০ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি টিএসপি, ১২ কেজি এমওপি, ১৮ কেজি জিপসাম এবং প্রায় ৪.৫ কেজি জিংকসালফেট সার প্রয়োগ করতে হবে।
শাকসবজি
এ মাসে বসতবাড়ির বাগানে জমি তৈরি করে ডাঁটা, কলমিশাক, পুঁইশাক, করলা, ঢেঁড়স, বেগুন, পটোল চাষের উদ্যোগ নিতে হবে। মাদা তৈরি করে চিচিঙ্গা, ঝিঙা, ধুন্দুল, শসা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, চালকুমড়ার বীজ বুনে দিতে পারেন। সবজি চাষে পর্যাপ্ত জৈবসার ব্যবহার করতে হবে। পরিকল্পিতভাবে জৈবসার ব্যবহার করলে সবজি ক্ষেতে রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। নিরাপদ সবজি উৎপাদনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা ও উত্তম কৃষি চর্চা মেনে শাকসবজি আবাদ করতে হবে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক সম্প্রতি উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল জাতসমূহ বারি ডাটা-৪, বারি হাইব্রিড ধুন্দল-২, বারি হাইব্রিড শঁসা-১, বারি লাউ-৬ প্রভৃতি।
গাছপালা
আমের হপার পোকা ও অ্যানথ্রাকনোজ রোগ এ সময় দেখা দেয়। এ রোগ দমনে গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার পূর্ব পর্যন্ত আক্রান্ত গাছে প্রোপিকোনাজল অথবা মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক পানিতে মিশিয়ে ¯েপ্র করতে হবে। এ ছাড়া আমের আকার মটর দানার মতো হলে গাছে ২য় বার ¯েপ্র করতে হবে। এ সময় প্রতিটি মুকুলে অসংখ্য হপার নিম্ফ দেখা যায়। আমগাছে মুকুল আসার ১০ দিনের মধ্যে কিন্তু ফুল ফোটার আগেই একবার এবং এর এক মাস পর আর একবার সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক পানির সাথে মিশিয়ে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপালা ভালোভাবে ভিজিয়ে ¯েপ্র করতে হবে।
কাঁঠালের ফল পচা বা মুচি ঝরা সমস্যা এখন দেখা দিতে পারে। কাঁঠাল গাছ এবং নিচের জমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আক্রান্ত ফল ভেজা বস্তা জড়িয়ে তুলে মাটিতে পুঁতে ধ্বংস করতে হবে। মুচি ধরার আগে ও পরে ১০ দিন পর পর ২/৩ বার বোর্দো মিশ্রণ বা মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
গ্রাফটিং পদ্ধতিতে বরই গাছের কলম করতে পারেন। এজন্য প্রথমে বরই গাছ ছাঁটাই করতে হবে এবং পরে উন্নত বরই গাছের বাডিং বা চোখ, দেশি জাতের গাছে সংযোজন করতে হবে।
সুপ্রিয় পাঠক, কৃষিকথায় প্রতি বাংলা মাসে কৃষি কাজে অনুসরণীয় কাজগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়। এগুলোর বিস্তারিত ও তথ্যবহুল বিশ্লেষণের জন্য আপনার কাছের কৃষি বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে জেনে নিতে হবে। এ ছাড়াও কৃষি তথ্য সার্ভিসের কৃষি কল সেন্টার ১৬১২৩ নম্বরে কল করে জেনে নিতে পারেন। আমাদের সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা কৃষিকে নিয়ে যাবে সাফল্যের শীর্ষে। আপনাদের সবার জন্য শুভ কামনা।
লেখক : সম্পাদক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা, টেলিফোন : ০২৫৫০২৮৪০৪, মেইল: editor@ais.gov.bd